নীলরতন সরকার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ইংরেজি নাম থাকার কোনো আবশ্যকতা নেই।
৭০ নং লাইন: ৭০ নং লাইন:
| box_width =
| box_width =
}}
}}
স্যার '''নীলরতন সরকার''' (১ অক্টোবর ১৮৬১ - ১৮ মে ১৯৪৩ ) ({{lang-en|Nil Ratan Sircar}}) একজন বিখ্যাত চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ । তিনি বহু শিক্ষাসংস্থা এবং গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এগুলি স্থাপনে সহযোগিতা করেছিলেন । তিনি একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং শিল্পস্থাপনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন । ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে নীলরতন পূর্ববঙ্গের এক [[ব্রাহ্ম]] ধর্মপ্রচারক গিরিশচন্দ্র মজুমদারের মেয়ে নির্মলাকে বিবাহ করেন।
স্যার '''নীলরতন সরকার''' (১ অক্টোবর ১৮৬১ - ১৮ মে ১৯৪৩ ) একজন বিখ্যাত চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ । তিনি বহু শিক্ষাসংস্থা এবং গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এগুলি স্থাপনে সহযোগিতা করেছিলেন । তিনি একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং শিল্পস্থাপনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন । ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে নীলরতন পূর্ববঙ্গের এক [[ব্রাহ্ম]] ধর্মপ্রচারক গিরিশচন্দ্র মজুমদারের মেয়ে নির্মলাকে বিবাহ করেন।


== জন্ম ও পরিবার ==
== জন্ম ও পরিবার ==
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার নেতড়াতে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন । তার আদি নিবাস [[যশোর জেলা|যশোহর]]। তার পিতার নাম নন্দলাল সরকার । নন্দলাল সরকার যশোরের একটি দরিদ্র কায়স্থ পরিবারের মানুষ ছিলেন। তিনি পরবর্তী কালে [[দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা]] জেলার [[জয়নগর|জয়নগরে]] থাকতে আরম্ভ করেন। বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক [[যোগীন্দ্রনাথ সরকার]] নীলরতন সরকারের ভাই । <ref name=ss>সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান - প্রথম খণ্ড - সাহিত্য সংসদ {{আইএসবিএন|81-85626-65-0}}</ref>
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার নেতড়াতে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস [[যশোর জেলা|যশোহর]]। তার পিতার নাম নন্দলাল সরকার। নন্দলাল সরকার যশোরের একটি দরিদ্র কায়স্থ পরিবারের মানুষ ছিলেন। তিনি পরবর্তী কালে [[দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা]] জেলার [[জয়নগর|জয়নগরে]] থাকতে আরম্ভ করেন। বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক [[যোগীন্দ্রনাথ সরকার]] নীলরতন সরকারের ভাই।<ref name=ss>সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান - প্রথম খণ্ড - সাহিত্য সংসদ {{আইএসবিএন|81-85626-65-0}}</ref>


== শিক্ষা ==
== শিক্ষা ==
নীলরতন সরকার ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে [[জয়নগর]] থেকে এন্ট্রান্স ও [[নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল|ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল]] থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। এর পর তিনি মেট্রোপলিটান কলেজ থেকে এলএ ও বিএ পাস করেন। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে [[কলকাতা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল|কলকাতা মেডিকেল কলেজে]] প্রবেশ করে তিনি ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে এমবি হন। এরপর ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দ এমএ এবং এমডি উপাধি পান । <ref name=ss/><ref name="চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস">চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস - উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব - বিনয় ভুষণ রায়, প্রথম সম্পাদনা, {{আইএসবিএন|81-89646-00-4}}</ref><ref name=nn>[http://banglapedia.search.com.bd/HT/S_0114.htm বাংলাপিডিয়ায় নীলরতন সরকার]</ref>
নীলরতন সরকার ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে [[জয়নগর]] থেকে এন্ট্রান্স ও [[নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল|ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল]] থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। এর পর তিনি মেট্রোপলিটান কলেজ থেকে এলএ ও বিএ পাস করেন। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে [[কলকাতা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল|কলকাতা মেডিকেল কলেজে]] প্রবেশ করে তিনি ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে এমবি হন। এরপর ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দ এমএ এবং এমডি উপাধি পান। <ref name=ss/><ref name="চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস">চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস - উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব - বিনয় ভুষণ রায়, প্রথম সম্পাদনা, {{আইএসবিএন|81-89646-00-4}}</ref><ref name=nn>[http://banglapedia.search.com.bd/HT/S_0114.htm বাংলাপিডিয়ায় নীলরতন সরকার]</ref>


== কর্মজীবন ==
== কর্মজীবন ==
মেট্রোপলিটান কলেজ থেকে এলএ ও বিএ পাস করে কিছুদিন তিনি চাতরা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। [[কলকাতা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল|কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে]] থেকে এমবি হয়ে তিনি মেয়ো নেটিভ হাসপাতালে হাউস সার্জেনের পদে যোগ দেন।
মেট্রোপলিটান কলেজ থেকে এলএ ও বিএ পাস করে কিছুদিন তিনি চাতরা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। [[কলকাতা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল|কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে]] থেকে এমবি হয়ে তিনি মেয়ো নেটিভ হাসপাতালে হাউস সার্জেনের পদে যোগ দেন।
নীলরতন সরকার অল্প সময়ের মধ্যেই চিকিৎসক হিসাবে বিখ্যাত হন । তার পারিশ্রমিক দুই টাকায় আরম্ভ হয়ে আস্তে আস্তে ৬৪ টাকা অবধি হয় ।<ref name=ss/><ref name=nn/> তিনি দরিদ্র রোগীদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতেন এবং তাদের বিনামূল্যে ওষুধ ও খাবার দিতেন ।
নীলরতন সরকার অল্প সময়ের মধ্যেই চিকিৎসক হিসাবে বিখ্যাত হন। তার পারিশ্রমিক দুই টাকায় আরম্ভ হয়ে আস্তে আস্তে ৬৪ টাকা অবধি হয়।<ref name=ss/><ref name=nn/> তিনি দরিদ্র রোগীদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতেন এবং তাদের বিনামূল্যে ওষুধ ও খাবার দিতেন।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং এরপর ফ্যাকাল্টি অফ সায়েন্স ও ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিনের ডিন হন । তিনি স্নাতকোত্তর কলা (১৯২৪ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত) ও বিজ্ঞান শিক্ষা বিভাগের (১৯২৪ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত) সভাপতিও হয়েছিলেন ।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং এরপর ফ্যাকাল্টি অফ সায়েন্স ও ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিনের ডিন হন। তিনি স্নাতকোত্তর কলা (১৯২৪ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত) ও বিজ্ঞান শিক্ষা বিভাগের (১৯২৪ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত) সভাপতিও হয়েছিলেন।


১৮৯৫ সালে তিনি একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করেন। ১৯১৬ সালে কলেজের নাম হয় ''কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ'' যা পরবর্তীতে ''আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল'' নামাঙ্কিত হয় । ১৯১৮ সালে ''মেডিকেল এডুকেশন সোসাইটি'' গঠিত হয় ''কারমাইকেল মেডিকেল কলেজের'' বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করার জন্য । নীলরতন ১৯২২ সালে এর সভাপতি হন । এবং ১৯৪১ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন ।
১৮৯৫ সালে তিনি একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করেন। ১৯১৬ সালে কলেজের নাম হয় ''কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ'' যা পরবর্তীতে ''আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল'' নামাঙ্কিত হয়। ১৯১৮ সালে ''মেডিকেল এডুকেশন সোসাইটি'' গঠিত হয় ''কারমাইকেল মেডিকেল কলেজের'' বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করার জন্য। নীলরতন ১৯২২ সালে এর সভাপতি হন। এবং ১৯৪১ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।


নীলরতন ১৯০৮ সালে ''বুট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট'' এর নির্দেশক হয়েছিলেন । ''[[বসু বিজ্ঞান মন্দির]]'', ''বিশ্বভারতী'' এবং ''[[ভারতীয় যাদুঘরে|ভারতীয় যাদুঘরের]]'' ট্রাস্টি ছিলেন । ১৯১২ থেকে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন ।
নীলরতন ১৯০৮ সালে ''বুট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট'' এর নির্দেশক হয়েছিলেন। ''[[বসু বিজ্ঞান মন্দির]]'', ''বিশ্বভারতী'' এবং ''[[ভারতীয় যাদুঘরে|ভারতীয় যাদুঘরের]]'' ট্রাস্টি ছিলেন । ১৯১২ থেকে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন।


তিনি ''সায়েন্স কলেজ অফ দ্য ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি'' এবং ''ন্যাশন্যাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনের'' (জাতীয় শিক্ষা পরিষদ) স্থপতিদের মধ্যে ছিলেন । তিনি [[ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স]] এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন । জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সম্পাদক হিসাবে তিনি এদেশে বৃত্তিগত প্রশিক্ষনের চেষ্টা করেছিলেন । ''বেঙ্গল টেকনিক্যাল স্কুল'', ''যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ'' প্রভৃতি স্থাপনেও তার ভূমিকা ছিল । ''যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতাল'' (বর্তমানে ''কুমুদশঙ্কর রায় যক্ষা হাসপাতাল'') প্রতিষ্ঠায় তিনি সহযোগিতা করেছিলেন ।
তিনি ''সায়েন্স কলেজ অফ দ্য ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি'' এবং ''ন্যাশন্যাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনের'' (জাতীয় শিক্ষা পরিষদ) স্থপতিদের মধ্যে ছিলেন। তিনি [[ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স]] এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সম্পাদক হিসাবে তিনি এদেশে বৃত্তিগত প্রশিক্ষনের চেষ্টা করেছিলেন। ''বেঙ্গল টেকনিক্যাল স্কুল'', ''যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ'' প্রভৃতি স্থাপনেও তার ভূমিকা ছিল। ''যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতাল'' (বর্তমানে ''কুমুদশঙ্কর রায় যক্ষা হাসপাতাল'') প্রতিষ্ঠায় তিনি সহযোগিতা করেছিলেন।


১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন । ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় সম্মেলনে যোগদান করেন । [[অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়]] তাকে ডিসিএল এবং [[কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়]] তাকে এলএলডি উপাধি প্রধান করেছিল । <ref name=ss/><ref name=nn/>
১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় সম্মেলনে যোগদান করেন। [[অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়]] তাঁকে ডিসিএল এবং [[কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়]] তাঁকে এলএলডি উপাধি প্রধান করেছিল। <ref name=ss/><ref name=nn/>


নীলরতন সরকারের দেশের সামগ্রিক উন্নতির প্রতি আগ্রহ তাকে বিভিন্ন শিল্প স্থাপনের দিকে উৎসাহিত করেছিল । তিনি ''রাঙামাটি চা কম্পানি'' (পরবর্তী কালে ইস্টার্ন টি কম্পানি), ''ন্যাশন্যাল সোপ ফ্যাক্টরি'' এবং ''ন্যাশন্যাল ট্যানারি কম্পানি''তে তার টাকা নিয়োগ করেছিলেন । নীলরতন সরকার রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় ছিলেন । তিনি ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত [[ভারতের জাতীয় কংগ্রেস|ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের]] সদস্য ছিলেন । <ref name=nn/>
নীলরতন সরকারের দেশের সামগ্রিক উন্নতির প্রতি আগ্রহ তাঁকে বিভিন্ন শিল্প স্থাপনের দিকে উৎসাহিত করেছিল। তিনি ''রাঙামাটি চা কম্পানি'' (পরবর্তী কালে ইস্টার্ন টি কম্পানি), ''ন্যাশন্যাল সোপ ফ্যাক্টরি'' এবং ''ন্যাশন্যাল ট্যানারি কম্পানি''তে তার টাকা নিয়োগ করেছিলেন। নীলরতন সরকার রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত [[ভারতের জাতীয় কংগ্রেস|ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের]] সদস্য ছিলেন। <ref name=nn/>


''ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুল'' কলেজে রূপান্তরিত হয়ে তার নামে ''নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল'' নামাঙ্কিত হয় ।
''ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুল'' কলেজে রূপান্তরিত হয়ে তার নামে ''নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল'' নামাঙ্কিত হয় ।

০৬:০৯, ৮ মে ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

নীলরতন সরকার
স্যার নীলরতন সরকার
জন্ম(১৮৬১-১০-০১)১ অক্টোবর ১৮৬১
মৃত্যু১৮ মে ১৯৪৩(1943-05-18) (বয়স ৮১)
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
পেশাচিকিৎসক
দাম্পত্য সঙ্গীনির্মলা দেবী

স্যার নীলরতন সরকার (১ অক্টোবর ১৮৬১ - ১৮ মে ১৯৪৩ ) একজন বিখ্যাত চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ । তিনি বহু শিক্ষাসংস্থা এবং গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এগুলি স্থাপনে সহযোগিতা করেছিলেন । তিনি একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং শিল্পস্থাপনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন । ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে নীলরতন পূর্ববঙ্গের এক ব্রাহ্ম ধর্মপ্রচারক গিরিশচন্দ্র মজুমদারের মেয়ে নির্মলাকে বিবাহ করেন।

জন্ম ও পরিবার

দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার নেতড়াতে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস যশোহর। তার পিতার নাম নন্দলাল সরকার। নন্দলাল সরকার যশোরের একটি দরিদ্র কায়স্থ পরিবারের মানুষ ছিলেন। তিনি পরবর্তী কালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে থাকতে আরম্ভ করেন। বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক যোগীন্দ্রনাথ সরকার নীলরতন সরকারের ভাই।[১]

শিক্ষা

নীলরতন সরকার ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জয়নগর থেকে এন্ট্রান্স ও ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। এর পর তিনি মেট্রোপলিটান কলেজ থেকে এলএ ও বিএ পাস করেন। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রবেশ করে তিনি ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে এমবি হন। এরপর ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দ এমএ এবং এমডি উপাধি পান। [১][২][৩]

কর্মজীবন

মেট্রোপলিটান কলেজ থেকে এলএ ও বিএ পাস করে কিছুদিন তিনি চাতরা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে থেকে এমবি হয়ে তিনি মেয়ো নেটিভ হাসপাতালে হাউস সার্জেনের পদে যোগ দেন। নীলরতন সরকার অল্প সময়ের মধ্যেই চিকিৎসক হিসাবে বিখ্যাত হন। তার পারিশ্রমিক দুই টাকায় আরম্ভ হয়ে আস্তে আস্তে ৬৪ টাকা অবধি হয়।[১][৩] তিনি দরিদ্র রোগীদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতেন এবং তাদের বিনামূল্যে ওষুধ ও খাবার দিতেন। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং এরপর ফ্যাকাল্টি অফ সায়েন্স ও ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিনের ডিন হন। তিনি স্নাতকোত্তর কলা (১৯২৪ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত) ও বিজ্ঞান শিক্ষা বিভাগের (১৯২৪ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত) সভাপতিও হয়েছিলেন।

১৮৯৫ সালে তিনি একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করেন। ১৯১৬ সালে কলেজের নাম হয় কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ যা পরবর্তীতে আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নামাঙ্কিত হয়। ১৯১৮ সালে মেডিকেল এডুকেশন সোসাইটি গঠিত হয় কারমাইকেল মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করার জন্য। নীলরতন ১৯২২ সালে এর সভাপতি হন। এবং ১৯৪১ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।

নীলরতন ১৯০৮ সালে বুট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট এর নির্দেশক হয়েছিলেন। বসু বিজ্ঞান মন্দির, বিশ্বভারতী এবং ভারতীয় যাদুঘরের ট্রাস্টি ছিলেন । ১৯১২ থেকে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন।

তিনি সায়েন্স কলেজ অফ দ্য ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি এবং ন্যাশন্যাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনের (জাতীয় শিক্ষা পরিষদ) স্থপতিদের মধ্যে ছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সম্পাদক হিসাবে তিনি এদেশে বৃত্তিগত প্রশিক্ষনের চেষ্টা করেছিলেন। বেঙ্গল টেকনিক্যাল স্কুল, যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রভৃতি স্থাপনেও তার ভূমিকা ছিল। যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতাল (বর্তমানে কুমুদশঙ্কর রায় যক্ষা হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠায় তিনি সহযোগিতা করেছিলেন।

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় সম্মেলনে যোগদান করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিসিএল এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে এলএলডি উপাধি প্রধান করেছিল। [১][৩]

নীলরতন সরকারের দেশের সামগ্রিক উন্নতির প্রতি আগ্রহ তাঁকে বিভিন্ন শিল্প স্থাপনের দিকে উৎসাহিত করেছিল। তিনি রাঙামাটি চা কম্পানি (পরবর্তী কালে ইস্টার্ন টি কম্পানি), ন্যাশন্যাল সোপ ফ্যাক্টরি এবং ন্যাশন্যাল ট্যানারি কম্পানিতে তার টাকা নিয়োগ করেছিলেন। নীলরতন সরকার রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। [৩]

ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুল কলেজে রূপান্তরিত হয়ে তার নামে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নামাঙ্কিত হয় ।

তথ্যসূত্র

  1. সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান - প্রথম খণ্ড - সাহিত্য সংসদ আইএসবিএন ৮১-৮৫৬২৬-৬৫-০
  2. চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস - উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব - বিনয় ভুষণ রায়, প্রথম সম্পাদনা, আইএসবিএন ৮১-৮৯৬৪৬-০০-৪ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম
  3. বাংলাপিডিয়ায় নীলরতন সরকার