বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Anupamdutta73 (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
পরিষ্কারকরণ / সংশোধন, বানান সংশোধন: । → । (20) অউব্রা ব্যবহার করে
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
'''বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায়''' (১৮৪০-১৯০১) ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি অভিনেতা, নাট্যকার এবং মঞ্চাধ্যক্ষ । তিনি ইংরাজি শিখে ব্রিটিশ কোম্পানি এবং রেল বিভাগে চাকরি করেছিলেন ।
'''বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায়''' (১৮৪০-১৯০১) ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি অভিনেতা, নাট্যকার এবং মঞ্চাধ্যক্ষ। তিনি ইংরাজি শিখে ব্রিটিশ কোম্পানি এবং রেল বিভাগে চাকরি করেছিলেন।


== অভিনয় জীবন ==
== অভিনয় জীবন ==
প্রথম দিকে বিহারীলাল কলকাতার ধনী বাঙালি বাড়িগুলিতে শৌখিন নাট্যশালাগুলিতে নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন । ১৮৫৭ সালে জয়রাম বসাকের বাড়িতে কুলীনকুলসর্বস্ব নাটকের অভিনয়ে একজন মহিলার চরিত্রে এবং ১৮৫৯ সালে মেট্রোপলিটান থিয়েটারে [[কেশবচন্দ্র সেন|কেশবচন্দ্র সেনের]] উদ্যোগে অভিনীত উমেশচন্দ্র মিত্রের বিধবা বিবাহ নাটকে সুলোচনার ভূমিকায় অভিনয় করেন ।
প্রথম দিকে বিহারীলাল কলকাতার ধনী বাঙালি বাড়িগুলিতে শৌখিন নাট্যশালাগুলিতে নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। ১৮৫৭ সালে জয়রাম বসাকের বাড়িতে কুলীনকুলসর্বস্ব নাটকের অভিনয়ে একজন মহিলার চরিত্রে এবং ১৮৫৯ সালে মেট্রোপলিটান থিয়েটারে [[কেশবচন্দ্র সেন|কেশবচন্দ্র সেনের]] উদ্যোগে অভিনীত উমেশচন্দ্র মিত্রের বিধবা বিবাহ নাটকে সুলোচনার ভূমিকায় অভিনয় করেন।
এরপর ১৮৬৭ সালে শোভাবাজার নাট্যশালায় [[কৃষ্ণকুমারী]] নাটকে তিনি প্রথম পুরুষ চরিত্র ভীমসিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেন । তার সুলোচনা এবং ভীমসিংহের ভূমিকায় অভিনয় [[গিরিশচন্দ্র ঘোষ|গিরিশচন্দ্র ঘোষের]] প্রশংসা পেয়েছিল ।
এরপর ১৮৬৭ সালে শোভাবাজার নাট্যশালায় [[কৃষ্ণকুমারী]] নাটকে তিনি প্রথম পুরুষ চরিত্র ভীমসিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তার সুলোচনা এবং ভীমসিংহের ভূমিকায় অভিনয় [[গিরিশচন্দ্র ঘোষ|গিরিশচন্দ্র ঘোষের]] প্রশংসা পেয়েছিল।


১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে [[শরৎচন্দ্র ঘোষ]] [[বেঙ্গল থিয়েটার]] প্রতিষ্ঠা করলে বিহারীলাল সেখানে যুক্ত হন । শুরুর দিকে তিনি এই থিয়েটারে অভিনেতা এবং সহকারী ম্যানেজার হিসাবে কাজ করেন । এই থিয়েটারে বিহারীলালের উল্লেখযোগ্য অভিনয় গুলির মধ্যে ছিল শর্মিষ্ঠা নাটকে শুক্রাচার্য, মৃণালিনী নাটকে মাধবাচার্য, কপালকুণ্ডলা নাটকে কাপালিক, মোহান্তের এই কি কাজ নাটকে মোহান্ত [[চন্দ্রশেখর]] নাটকে চন্দ্রশেখর, দুর্গেশনন্দিনী নাটকে অভিরাম স্বামী প্রভৃতি । অভিনেত্রী [[বিনোদিনী]] তার আত্মজীবনীতে বিহারীলালের কাপালিক চরিত্রের অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন ।
১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে [[শরৎচন্দ্র ঘোষ]] [[বেঙ্গল থিয়েটার]] প্রতিষ্ঠা করলে বিহারীলাল সেখানে যুক্ত হন। শুরুর দিকে তিনি এই থিয়েটারে অভিনেতা এবং সহকারী ম্যানেজার হিসাবে কাজ করেন। এই থিয়েটারে বিহারীলালের উল্লেখযোগ্য অভিনয় গুলির মধ্যে ছিল শর্মিষ্ঠা নাটকে শুক্রাচার্য, মৃণালিনী নাটকে মাধবাচার্য, কপালকুণ্ডলা নাটকে কাপালিক, মোহান্তের এই কি কাজ নাটকে মোহান্ত [[চন্দ্রশেখর]] নাটকে চন্দ্রশেখর, দুর্গেশনন্দিনী নাটকে অভিরাম স্বামী প্রভৃতি। অভিনেত্রী [[বিনোদিনী]] তার আত্মজীবনীতে বিহারীলালের কাপালিক চরিত্রের অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন।
১৮৮০ খ্রীষ্টাব্দে [[শরৎচন্দ্র ঘোষ|শরৎচন্দ্র ঘোষের]] মৃত্যু হলে বিহারীলাল [[বেঙ্গল থিয়েটার|বেঙ্গল থিয়েটারের]] কর্ণধার হয়েছিলেন । এরপর বিহারীলালের মৃত্যু ১৯০১ অবধি প্রায় কুড়ি বছর বিহারীলাল বেঙ্গল থিয়েটারের অভিনয় সহ সমস্ত কাজই দক্ষতার সাথে করেছিলেন।
১৮৮০ খ্রীষ্টাব্দে [[শরৎচন্দ্র ঘোষ|শরৎচন্দ্র ঘোষের]] মৃত্যু হলে বিহারীলাল [[বেঙ্গল থিয়েটার|বেঙ্গল থিয়েটারের]] কর্ণধার হয়েছিলেন। এরপর বিহারীলালের মৃত্যু ১৯০১ অবধি প্রায় কুড়ি বছর বিহারীলাল বেঙ্গল থিয়েটারের অভিনয় সহ সমস্ত কাজই দক্ষতার সাথে করেছিলেন।


== সাহিত্য কর্ম ==
== সাহিত্য কর্ম ==
বেঙ্গল থিয়েটারের সর্বেসর্বা হবার পর তিনি নাটক রচনায় মনোযোগী হন । আগে [[বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের]] [[দুর্গেশনন্দিনী]] উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছিলেন । এরপর তিনি বঙ্কিমচন্দ্র রমেশচন্দ্র প্রমুখ লেখকের উপন্যাসের নবীনচন্দ্রের পলাশীর যুদ্ধ কাব্যের নাট্যরূপ দেন ।
বেঙ্গল থিয়েটারের সর্বেসর্বা হবার পর তিনি নাটক রচনায় মনোযোগী হন। আগে [[বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের]] [[দুর্গেশনন্দিনী]] উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি বঙ্কিমচন্দ্র রমেশচন্দ্র প্রমুখ লেখকের উপন্যাসের নবীনচন্দ্রের পলাশীর যুদ্ধ কাব্যের নাট্যরূপ দেন।
তিনি নিজে রচনা করেন সুভদ্রাহরন, রাবণবধ, পাণ্ডব নির্বাসন, শ্রীবৎসচিন্তা, প্রভাসমিলন, নন্দবিদায়, জন্মাষ্টমী, দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর প্রভৃতি নাটক ও গীতিনাট্য । সবকটি নাটকই বেঙ্গল থিয়েটারে অভিনীত হয়েছিল ।
তিনি নিজে রচনা করেন সুভদ্রাহরন, রাবণবধ, পাণ্ডব নির্বাসন, শ্রীবৎসচিন্তা, প্রভাসমিলন, নন্দবিদায়, জন্মাষ্টমী, দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর প্রভৃতি নাটক ও গীতিনাট্য। সবকটি নাটকই বেঙ্গল থিয়েটারে অভিনীত হয়েছিল।


অভিনেতা হিসাবে বিহারীলাল শান্ত, সংযত, আদর্শ ও ধর্মপ্রান চরিত্রে সফলে হয়েছিলেন । নাট্যকার হিসাবে তিনি পৌরানিক নাটকে সফল ছিলেন । নাটক পরিচালক হিসাবে তিনি খুব একটা কৃতিত্ব দেখাতে পারেন নি । রঙ্গমঞ্চ পরিচালনা, এবং অধ্যক্ষের নানা কাজে তিনি পারদর্শী ছিলেন ।
অভিনেতা হিসাবে বিহারীলাল শান্ত, সংযত, আদর্শ ও ধর্মপ্রান চরিত্রে সফলে হয়েছিলেন। নাট্যকার হিসাবে তিনি পৌরানিক নাটকে সফল ছিলেন। নাটক পরিচালক হিসাবে তিনি খুব একটা কৃতিত্ব দেখাতে পারেন নি। রঙ্গমঞ্চ পরিচালনা, এবং অধ্যক্ষের নানা কাজে তিনি পারদর্শী ছিলেন।


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==

১৩:১৭, ১৮ এপ্রিল ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায় (১৮৪০-১৯০১) ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি অভিনেতা, নাট্যকার এবং মঞ্চাধ্যক্ষ। তিনি ইংরাজি শিখে ব্রিটিশ কোম্পানি এবং রেল বিভাগে চাকরি করেছিলেন।

অভিনয় জীবন

প্রথম দিকে বিহারীলাল কলকাতার ধনী বাঙালি বাড়িগুলিতে শৌখিন নাট্যশালাগুলিতে নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। ১৮৫৭ সালে জয়রাম বসাকের বাড়িতে কুলীনকুলসর্বস্ব নাটকের অভিনয়ে একজন মহিলার চরিত্রে এবং ১৮৫৯ সালে মেট্রোপলিটান থিয়েটারে কেশবচন্দ্র সেনের উদ্যোগে অভিনীত উমেশচন্দ্র মিত্রের বিধবা বিবাহ নাটকে সুলোচনার ভূমিকায় অভিনয় করেন। এরপর ১৮৬৭ সালে শোভাবাজার নাট্যশালায় কৃষ্ণকুমারী নাটকে তিনি প্রথম পুরুষ চরিত্র ভীমসিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তার সুলোচনা এবং ভীমসিংহের ভূমিকায় অভিনয় গিরিশচন্দ্র ঘোষের প্রশংসা পেয়েছিল।

১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে শরৎচন্দ্র ঘোষ বেঙ্গল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করলে বিহারীলাল সেখানে যুক্ত হন। শুরুর দিকে তিনি এই থিয়েটারে অভিনেতা এবং সহকারী ম্যানেজার হিসাবে কাজ করেন। এই থিয়েটারে বিহারীলালের উল্লেখযোগ্য অভিনয় গুলির মধ্যে ছিল শর্মিষ্ঠা নাটকে শুক্রাচার্য, মৃণালিনী নাটকে মাধবাচার্য, কপালকুণ্ডলা নাটকে কাপালিক, মোহান্তের এই কি কাজ নাটকে মোহান্ত চন্দ্রশেখর নাটকে চন্দ্রশেখর, দুর্গেশনন্দিনী নাটকে অভিরাম স্বামী প্রভৃতি। অভিনেত্রী বিনোদিনী তার আত্মজীবনীতে বিহারীলালের কাপালিক চরিত্রের অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন। ১৮৮০ খ্রীষ্টাব্দে শরৎচন্দ্র ঘোষের মৃত্যু হলে বিহারীলাল বেঙ্গল থিয়েটারের কর্ণধার হয়েছিলেন। এরপর বিহারীলালের মৃত্যু ১৯০১ অবধি প্রায় কুড়ি বছর বিহারীলাল বেঙ্গল থিয়েটারের অভিনয় সহ সমস্ত কাজই দক্ষতার সাথে করেছিলেন।

সাহিত্য কর্ম

বেঙ্গল থিয়েটারের সর্বেসর্বা হবার পর তিনি নাটক রচনায় মনোযোগী হন। আগে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি বঙ্কিমচন্দ্র রমেশচন্দ্র প্রমুখ লেখকের উপন্যাসের নবীনচন্দ্রের পলাশীর যুদ্ধ কাব্যের নাট্যরূপ দেন। তিনি নিজে রচনা করেন সুভদ্রাহরন, রাবণবধ, পাণ্ডব নির্বাসন, শ্রীবৎসচিন্তা, প্রভাসমিলন, নন্দবিদায়, জন্মাষ্টমী, দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর প্রভৃতি নাটক ও গীতিনাট্য। সবকটি নাটকই বেঙ্গল থিয়েটারে অভিনীত হয়েছিল।

অভিনেতা হিসাবে বিহারীলাল শান্ত, সংযত, আদর্শ ও ধর্মপ্রান চরিত্রে সফলে হয়েছিলেন। নাট্যকার হিসাবে তিনি পৌরানিক নাটকে সফল ছিলেন। নাটক পরিচালক হিসাবে তিনি খুব একটা কৃতিত্ব দেখাতে পারেন নি। রঙ্গমঞ্চ পরিচালনা, এবং অধ্যক্ষের নানা কাজে তিনি পারদর্শী ছিলেন।

তথ্যসূত্র

বাংলা থিয়েটারের ইতিহাস - দর্শন চৌধুরী - পুস্তক বিপণী কলকাতা