২০২১-এ বাংলাদেশে মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
[অপরীক্ষিত সংশোধন][পরীক্ষিত সংশোধন]
"২০২১-এ বাংলাদেশে মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ" সুরক্ষিত করা হয়েছে: অতিরিক্ত ধ্বংসপ্রবণতা ([সম্পাদনা=শুধুমাত্র স্বয়ংনিশ্চিতকৃত ব্যবহারকারীদের জন্য] (অসীম) [স্থানান্তর=শুধুমাত্র স্বয়ংনিশ্চিতকৃত ব্যবহারকারীদের জন্য] (অসীম))
"২০২১-এ বাংলাদেশে মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ"-এর জন্য স্থিতিশীল সংস্করণের সেটিং নির্ধারণ করেছেন: অতিরিক্ত ধ্বংসপ্রবণতা [স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনার জন্য "autoconfirmed" অনুমতির প্রয়োজন]
(কোনও পার্থক্য নেই)

১১:০৯, ৩ এপ্রিল ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

২০২১ সালে বাংলাদেশে মোদী বিরোধী বিক্ষোভ
বাংলাদেশে ইসলামী উগ্রবাদ-এর অংশ
তারিখ১৯ মার্চ, ২৯২১- বর্তমান
অবস্থান
কারণবাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন
লক্ষ্যসমূহনরেন্দ্র মোদীর সফর বাতিল
প্রক্রিয়াসমূহবিক্ষোভ, পাথর নিক্ষেপ
অবস্থাচলছে
নাগরিক সংঘাতের দলসমূহ
নেতৃত্ব দানকারীগণ
ক্ষয়ক্ষতি
নিহত১৭ জন নিহত; ৫০০+ আহত

২০২১ সালের মার্চের শেষ দিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে সারা বাংলাদেশ জুড়ে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়। অনেকেই এটিকে ২১ এর মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ বলে আখ্যায়িত করেছেন। গুজরাট সহিংসতা, বাবরি মসজিদ ইস্যুর পাশাপাশি ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর নির্যাতন এবং হিন্দুবাদী দৃৃষ্টিভঙ্গির জন্য মোদীকে অভিযুক্ত করে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে আসছিল হেফাজতে ইসলাম ও এর সমর্থক গোষ্ঠীরা। শুক্রবার ২৬ মার্চ, ২০২১ তারিখে বাংলাদেশের ৫১তম স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় পৌছান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার ঢাকায় আগমন উপলক্ষ্যে সেদিন জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ও সহিংসতা দেখা দেয় যা পরে সারা দেশে ছড়িয়ে পরে।

আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভকারীদের থামানোর চেষ্টা করছিল তখনই মূল সংঘাতটি শুরু হয়। এর ফলে উভয় পক্ষের মধ্যেই সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। এই ঘটনার পর দেশের বেশ কিছু জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পরে।[১][২][৩] অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২৬ মার্চ এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিবাদকারীদের উপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগের সমালোচনা করে "সমাবেশ করার স্বাধীনতার অধিকারকে সম্মান জানাতে এবং শান্তিপুর্ণ প্রতিবাদকারীদের রক্ষ করতে" আহবান জানায়।[৪]

প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের নিকট হতে স্বাধীনতা অর্জন করে। আর যুদ্ধের ঘোষণা তথা স্বাধীনতার ডাক দেওয়া হয় একই বছর ২৬ মার্চে। স্বাধীনতার ৫০ বছরের এই স্মৃৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী নামে বছরব্যাপী একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব যা মুজিব চিরন্তন নামে খ্যাত; মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃৃক আয়োজিত বিশেষ এই অনুষ্ঠানে পাঁচটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানদের নিমন্ত্রণ করা হয়। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সোলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসা, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এবং নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারীর আগমনের পর ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানের শেষ ও চূড়ান্ত দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনের কথা ছিল। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম ও এর সমর্থকেরা নরেন্দ্র মোদীর আগমনের বিরোধীতা করে আসছিল। মোদী সরকারের হিন্দুপন্থী মনোভাব এবং ভারতের মুসলমানদের প্রতি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলো মোদীর আগমনকে দেশ, জাতি ও মুসলমানদের জন্য অপমানজনক মনে করে। মুজিব চিরন্তন অনুষ্ঠানটি ২০২০ সালেই হওয়ার কথা ছিল এবং নরেন্দ্র মোদীও সেইবারই বাংলাদেশে আসতেন। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারীর কারণে সেইবারের অনুষ্ঠান ও নরেন্দ্র মোদীসহ অন্যান্য বিদেশী অতিথিদের আগমন স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তী বছর ১৭ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠানের সময়সূচী ধার্য করা হয়। ২০২০ সাল থেকেই হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সল্প পরিসরে মোদী সফরের বিরোধীতা আন্দোলন করে আসছিল। ২০২১ এর ২৬ মার্চ সফর চূড়ান্ত হয়ে গেলে এই বিতর্ক পুনরায় শুরু হয়।

ঘটনাপ্রবাহ

১৯ মার্চ

  • বিক্ষোভকারীরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন স্থগিত করার জন্য বিক্ষোভ করে।
  • প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সমাবেশ করে এবং মোদিকে বাংলাদেশে আসতে "না" করে।

২৩ মার্চ

  • নরেন্দ্র মোদির কাগজের প্রতিকৃতি পুড়ায় ছাত্র ফেডারেশন।
  • ছাত্রলীগ এতে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ব্যপক সহিংসতা শুরু হয়। ২০ জন বিক্ষোভকারীদে মারধর করা হয়।
  • সাংবাদিকরা এই ঘটনাটি প্রতক্ষ করতে গেলে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে একজন সাংবাদিক আহত হন।

২৬ মার্চ

  • সকাল ১১টায় ঢাকায় নরেন্দ্র মোদীর আগমন; জাতীয় স্মৃতিসৌধতে ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।
  • হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে সেদিন (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে মোদী-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিশাল সমাবেশ। ছাত্রলীগ এই সমাবেশে হস্তক্ষেপ করতে গেলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ব্যপক সংঘর্ষ; পুলিশ এসে সংঘর্ষটিকে সামাল দিতে গিয়ে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। ১৫০+ বিক্ষোভকারী ও নেতাকর্মী এতে আহত হন।
  • চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা বায়তুল মোকাররমের এই সহিংসতার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ভূমি অফিসের সামনে সমাবেশ করে। পুলিশ এতে হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি বিগড়ে যায়।
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রথম এক আন্দোলনকারীর মৃত্যু।
  • মধ্যরাতে সরকারি নির্দেশে সারাদেশে বিজিবির টহল।
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভকারী নিহতের ঘটনায় ২৮ তারিখে সারাদেশে হেফাজতে ইসলাম হরতালের ডাক দেয়।

২৭ মার্চ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত কর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ আন্দোলন অনুষ্ঠিত।
  • হেফাজত কর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহাসড়ক অবরোধ করতে গিয়ে পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে চার গ্রামবাসী নিহত।
  • মোদী-বিরোধী বিক্ষোভকারীরা ফরিদপুর সদর থানায় হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল মোদীর গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন রোধ করা। এই হামলায় ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন।
  • ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ ত্যাগ।

২৮ মার্চ

  • রোববার হেফাজতের ডাকা হরতালে সারাদেশ জুড়ে তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম ও এর সমর্থকেরা। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
  • সহিংসতায় রূপ নেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের হরতাল। বিক্ষোভকারীরা ট্রেন স্টেশন ও সরকারি অফিসসমূহে হামলা চালায়। পুলিশ ও বিজিবি বিক্ষোভ সামলানোর চেষ্টা করে। সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয় এবং ২০০+ আহত হয়। কিছু সূত্রমতে হিন্দু মন্দিরেও হামলা চালানো হয়েছিল সেদিন। এই হামলাকে "ব্রাহ্মণবাড়িয়া দহন বলে আখ্যা দেয় রয়টার্স।

২৯ মার্চ

  • বিএনপি এর প্রতিবাদে সারা দেশ জুড়ে হরতালের ডাক দেয় ৩০ তারিখ।
  • পুলিশের আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ঘটনার তদন্ত শুরু। পিবিআই এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিদর্শন।

৩০ মার্চ

  • সারাদেশে বিএনপির বিক্ষোভ ও হরতাল অনুষ্ঠিত। কিছু স্থানে সহিংসতা।
  • একটি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর "হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নেই", এই বিষয়টি পরিষ্কার করে।

২ এপ্রিল

  • শুক্রবারে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ।
  • গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় হেফাজতে ইসলাম ও এর সমর্থক গোষ্ঠীদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যপক সংঘর্ষ; ১৫ জন বিক্ষোভকারী আহত।

প্রতিক্রিয়া

২৮ মার্চ রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু ফেইসবুক ব্যবহারকারী বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশি জুলুমকে "দ্বিতীয় অপারেশন সার্চলাইট", "স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলাদেশে ধর্মীয় নির্যাতন", "গৃহযুদ্ধ", "ভয়াবহ রক্তপাত", "ভারতীয় বাহিনীর অবৈধ অনুপ্রবেশ" বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে।

আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়াকে "রক্তাক্ত ক্র‍্যাকডাউন" বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, "বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকারকে সম্মান করতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের সুরক্ষা দিতে হবে"।

তদন্ত

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Four killed in Bangladesh during protests against Modi visit"www.aljazeera.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৮ 
  2. "Three killed in Hefazat mayhem during hartal"Dhaka Tribune। ২০২১-০৩-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৮ 
  3. Desk, NH Web (২০২১-০৩-২৬)। "Bangladesh: 4 killed in Chittagong as radicals protest Modi visit, mosque area in Dhaka turns battleground"National Herald (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৮ 
  4. "Bangladesh: Authorities must respect right to peaceful protest following bloody crackdowns"Amnesty International। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২১