বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
[অপরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Miad I Mahbub BD (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
পূর্বের তথ্যসূত্রে পরিষ্কারভাবে শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কথা উল্লেখ আছে।
৩ নং লাইন: ৩ নং লাইন:
{{NPOV|date=সেপ্টেম্বর ২০২০}}
{{NPOV|date=সেপ্টেম্বর ২০২০}}
[[File:মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক.svg|thumb|মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক]]
[[File:মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক.svg|thumb|মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক]]
পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণা যিনি দিয়েছিলেন তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক [[শেখ মুজিবুর রহমান]] নাকি [[জিয়াউর রহমান]] এই নিয়ে বিস্তর রাজনৈতিক মতভেদ রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৭১ এর তৎকালীন [[রিচার্ড নিক্সন|রিচার্ড নিক্সনের]] শাসনামলের<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://history.state.gov/historicaldocuments/nixon-ford|শিরোনাম=Nixon-Ford Administrations|শেষাংশ=|প্রথমাংশ=|তারিখ=|ওয়েবসাইট=history.state.gov|প্রকাশক=|সংগ্রহের-তারিখ=}}</ref> সকল কূটনৈতিক গোপন নথিতে [[জিয়াউর রহমান]]কে স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয়েছে।
পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণা যিনি দিয়েছিলেন তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক [[শেখ মুজিবুর রহমান]] নাকি [[জিয়াউর রহমান]] এই নিয়ে বিস্তর রাজনৈতিক মতভেদ রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৭১ এর তৎকালীন [[রিচার্ড নিক্সন|রিচার্ড নিক্সনের]] শাসনামলের<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://history.state.gov/historicaldocuments/nixon-ford|শিরোনাম=Nixon-Ford Administrations|শেষাংশ=|প্রথমাংশ=|তারিখ=|ওয়েবসাইট=history.state.gov|প্রকাশক=|সংগ্রহের-তারিখ=}}</ref> সকল কূটনৈতিক গোপন নথিতে [[জিয়াউর রহমান]]কে স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয়েছে।{{তথ্যসূত্র প্রয়োজন|date=নভেম্বর ২০২০}}


== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==
== ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ==

১৬:৪৭, ১৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক

পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণা যিনি দিয়েছিলেন তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শেখ মুজিবুর রহমান নাকি জিয়াউর রহমান এই নিয়ে বিস্তর রাজনৈতিক মতভেদ রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৭১ এর তৎকালীন রিচার্ড নিক্সনের শাসনামলের[১] সকল কূটনৈতিক গোপন নথিতে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

মার্কিন গোপন নথিতে বাংলাদেশের স্বাধিনতা ঘোষণা

আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ এশিয়া সংকট ১৯৭১ এই শিরোনামের সকল গোপন নথি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বিষয়ক। ২ মার্চ থেকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সকল রিপোর্ট এবং মিটিং এর বিস্তারিত পাওয়া যায় এই সংকলনে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য অনেক গুরত্বপূর্ণ।

৬ মার্চ ১৯৭১

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রি  হেনারি কিসিঞ্জার

১৯৭১ সালের মার্চ ৬ এ হোয়াইট হাউজ সিচুয়েশন রুমে একটি হাই প্রোফাইল মিটিং হয় সেখানে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনারি কিসিঞ্জার , সি আই এ ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর সিনিয়র রিভিউ গ্রুপ মিটিং ওয়াশিংটন, ৬ মার্চ ১৯৭১[২] থেকে কে কিছু লাইন তুলে ধরা হোল । এই সভায় স্টেট ডিপার্টমেন্টের এলক্সিস জনসন বলেন

আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে আজ বিকেলে ব্রিটিশ সঙ্গে কথা বলা হবে। মুজিব ১৬২ আসন থেকে ১৬০ টি গত নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন , এটি তার অনুপম রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আছে। তিনি মার্কিন দিকে বন্ধুত্বপূর্ণ। পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টো প্রায় মার্কিনদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ নয় । আমরা হয়ত এই দুই দেশকে এক সাথে রাখতে তাদের সাথে সমঝোতার ব্যাবস্থা করতে পাড়ি , কিন্তু তা হবার সম্ভবনা খুবই কম । এখন শুধু প্রশ্ন তারা কিভাবে বিভক্ত হবে এবং টা কত বড় আকারে বিভক্ত হবে"

৬ মার্চের মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর বাসভবন হোয়াইট হাঊসে হয়ে যাওয়া এই টপ সিক্রেট মিটিং এ পাকিস্তানের তৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয় । রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে মার্কিন গোয়েন্দাদের নিশ্চিত হন পাকিস্তান ভাগ হবেই , কিন্তু কিভাবে ভাগ হবে বা এর কোন রাজনৈতিক সমঝোতা আমেরিকা করতে পাড়ে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয় । সাত মার্চের শেখ মুজিবুর এর ভাষণের বিষয়বস্তু কি হবে তা নিয়ে আমেরিকানরা অনেকটাই জানতেন।

অর্থাৎ মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট তখন ধারনা করে ৭ মার্চ ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিনতার ঘোষণা দিতে পারেন এবং এই সাত মার্চের ঘোষণা আসলে ইয়াহিয়া কি ব্যাবস্থা নিতে পারে এই মিটিং-এ তার ব্যাখ্যা করা হয়।

যদি মুজিব আমাদের কাছে আসে এবং একটি সম্পুরন স্বাধিনতার ঘোষণার কথা বলে এবং আমাদের মতামত জানতে চায় তখন আমরা (আমেরিকা ) তাকে কি বলব সেটা অনেক বড় ব্যাপার । আর ইয়াহিয়া যদি তার মতে থেকে এই স্বাধিনতা ঘোষণার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করে তখন আমরা ( আমেরিকা ) কি করবে তাও চিন্তা করতে হবে । এখন ইয়াহিয়ার ২০০০০ হাজার কমব্যাট ট্রুপ্স রেডি আছে এবং তার বিপক্ষে রিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের ৭৫ মিলিয়ন জনতা

১৩ মার্চ ১৯৭১ – হোয়াইট হাউজ

৬ মার্চের এই মিটিং এর পড় ১৩ই মার্চ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনারি কিসিঞ্জার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশের) ব্যাপারে রিপোর্ট প্রদান করেন যার নাম ছিল ন্যাশনাল সিকিউরিটি এফেয়ার্সের রাষ্ট্রপতির সহকারীর পক্ষ থেকে স্মারকলিপি। কিসিঞ্জার থেকে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রতি[৩] তাতে লেখা হয়:

দেখা যাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তার পূর্ব পরিকল্পিত স্বাধীনতার ঘোষণার থেকে কিছুটা পিছিয়ে এসেছেন। ৭ মার্চের ভাষণের পূর্ণ কপি তে দেখা যায় অনেক কঠিন কথা বলেছেন তিন, এবং এটা মনে হচ্ছে তার এই পিছিয়ে পড়া তার একটি স্ট্রাটেজিক কৌশল হতে পারে। উনি ব্যাপারটা পরিস্কার করেছেন তারা স্বাধিনতার খুব কাছাকাছি।

১৩ মার্চের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্টের মিটিং এর প্রধান বিশয়বস্তু ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ৭ মার্চের ভাষণ। এই হাই প্রোফাইল সিক্রেট মিটিং এ তৎকালীন সময়ের গুরত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পালা পরিবর্তনের ব্যাপার গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। ৬ মার্চে ভূট্টোর দেওয়া ভাষণে স্বাধীনতার বিপক্ষে অনেক কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিলে হয়ত শেখ মুজিব সম্পূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে পিছিয়ে আসেন বলে মোমেরান্ডাম এ বলা হয়।

আমাদের ইসলামাবাদ এমব্যাসি বিশ্বাস করে রহমানের উদ্দেশ্য অপরিবর্তিত পূর্ব পাকিস্তানের পশ্চিম পাকিস্তানি প্রভাব থেকে রাজনৈতিক স্বধিনতা চান । এটা এখন মনে হচ্ছে এক পাকিস্তান থেকেও পূর্ব পাকিস্তানের সায়ত্বস্বাসন সম্ভব। কিন্তু তা হবার সম্ভবনা খুবই কম, যদি তা না হয় রহমান বিশ্বাস করেন যে রাজনৈতিক স্বাধিনতা তিনি চাইছেন তা কেবল পূর্ণ স্বাধীনতার মাধ্যমেই অর্জিত হতে পাড়ে। গত রবিবারের ভাষণে এটাই স্পষ্ট যে উনি সামরিক বাহিনীর সাথে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে ধীরে ধীরে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাইছেন যা হয়ত আনফিসিয়াল স্বাধীনতার ঘোষণা হতে পারে।

২৬শে মার্চ ১৯৭১

১৩ মার্চের এই প্রতিবেদনের পড় ২৬ শে মার্চ থেকে প্রতিনিয়ত একদিন দুইদিন পরপর হোয়াইট হাউজে রিপোর্ট এবং পূর্ব পাকিস্তানের বিষয় নিয়ে মিটিং হতে থাকে। মার্চের ২৯ তারিখে প্রেসিডেন্ট রিচারড নিক্সনের সাথে কিসিঞ্জারের আলাপে নিক্সনের ইয়াহিয়ার প্রতি সমর্থন এর কথা প্রকাশ্যে উঠে আসে। ২৬ মার্চের ইমারজেন্সি মিটিং ওয়াশিংটন বিশেষ কর্মসূচি গ্রুপ মিটিং[৪] এ বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিনতা ঘোষণা করা হয়েছে।

২৬ মার্চ ওয়াশিংটনে স্পেশাল একশন গ্রূপ মিটিং এ উপস্থিত চিলেন হেনারি কিসিঞ্জার, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি ও সি আই এর প্রতিনিধিবৃন্দ। যারা ২৫ ও ২৬ মার্চ ঘোটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইমারজেন্সি মিটিং করছিলেন। সেখানে সি আই এর মিস্টার রিচারড হেলমস বলেন,

মার্চের ২৪ তারিখের আলোচনায় একটি সমোঝোতা আসলেও সেই চুক্তি ভেঙ্গে যায় কারণ মুজিবুর রহমান সম্পূর্ণ সামরিক শাসন প্রত্যাহার চাইছিলেন। একটি ক্ষীণ ও গোপনীয় রেডিও ব্রডকাস্টে শেখ মুজিবুর রহামান বাংলাদেশের স্বাধিনতা ঘোষণা করেন। সেখানে প্রায় ২০০০০ হাজার পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য রয়েছে। বিপক্ষে রয়েছে ৫০০০ পূর্ব পাকিস্তানি সৈন্য ও ১৩০০০ আধা সামরিক বাহিনী কিন্তু তারা কোন পক্ষে থাকবে তা নিশ্চিত নয়।[৫]

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকালীন সামরিক কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী বীর উত্তম আবদুল করিম খন্দকার ২০১৪ সালে লিখিত ১৯৭১ : ভেতরে বাইরে গ্রন্থে লেখেন, শেখ মুজিব ৭ই মার্চ থেকে শুরু করে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত স্বাধীনতার কোন ঘোষণা দিয়ে যান নি, কোন লিখিত চিরকুট বা রেকর্ডকৃত কণ্ঠবার্তাও রেখে যান নি এবং পূর্বনির্ধারিত কোন দিকনির্দেশনাও দিয়ে যান নি।[৬] তার মতে,

দেশের এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চ ভাষণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু কী বলেন তা শোনার জন্য দেশের মানুষ অপেক্ষা করছিল। ইয়াহিয়া খান অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে সাতই মার্চ যদি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তাহলে এই আন্দোলনকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। তাই তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেন, "তুমি এমন কিছু করো না, যা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায়। আমি আলোচনা করার জন্য ঢাকায় আসছি।" সাতই মার্চের ভাষণের দিন ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের পরিস্থিতি বেশ স্বাভাবিক ছিল, সবাই ব্যস্ত ছিল নিজ নিজ কাজে। এদিন বঙ্গবন্ধু যে ভাষণটি দিলেন, তা খুবই তির্যক ছিল। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে বাঙালিরা ভাবতে আরম্ভ করল, সত্যিই কি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল, আমরা কি যুদ্ধে নামব, নাকি গ্রামে চলে যাব। সাতই মার্চের ভাষণটি আমি শুনেছি। এর মধ্যে যে কথাগুলো আমার ভালো লেগেছিল, তা হলো: “দুর্গ গড়ে তোলো", 'তোমাদের যার যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাকো", 'শত্রর মোকাবিলা করতে হবে", “এবারের সংগ্রামম আমাদের যুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' এ সময় সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ তার কাছ থেকে এ ধরনের কথা আশা করছিল। ওই কথাগুলো শক্তিশালী ছিল বটে, তবে তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের নেতাদের ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, কিন্তু আমার মনে হয়েছে, কীভাবে স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে, তা তিনি পরিষ্কার করেননি। তা ছাড়া জনগণকে যুদ্ধ করার জন্য যেভাবে প্রস্তুত করা প্রয়োজন, তা করা হয়নি। ভাষণে চূড়ান্ত কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া গেল না। ভাষণটির পর মানুষজন ভাবতে শুরু করল--এরপর কী হবে? আওয়ামী লীগের পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় যুদ্ধ শুরু করার কথা বলাও একেবারে বোকামি হতো। সম্ভবত এ কারণেই বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চ সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করা থেকে বিরত থাকেন। তা ছাড়া ইয়াহিয়া খান নিজেও ওই ধরনের ঘোষণা না দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হয়তো ঢাকায় ইয়াহিয়ার উপস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণেই যে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল, তা আমি মনে করি না। এই ভাষণের শেষ শব্দগুলো ছিল "জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান"। তিনি যুদ্ধের ডাক দিয়ে বললেন, "জয় পাকিস্তান"! এটি যে যুদ্ধের ডাক বা স্বাধীনতার আহ্বান, তা প্রচণ্ডভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং তর্কাতীতও নয়। যদি আওয়ামী লীগের নেতাদের কোনো যুদ্ধ-পরিকল্পনা থাকত, তাহলে মার্চের শুরু থেকে জনগণ এবং সরকারি, বেসরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের স্বল্প সময়ে সঠিকভাবে সংগঠিত করা যেত। সেটা করা হলে আমার মনে হয় যুদ্ধটি হয়তো-বা খুব অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যেত এবং আমাদের বিজয় নিশ্চিত হতো। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সেটা করা হয়নি ।... মুক্তিযুদ্ধের সময় থিয়েটার রোডে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যে ঘরে থাকতেন তার পাশের ঘরেই আমি মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে থাকতাম । একদিন আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “স্যার, বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আপনি কি তার কাছ থেকে কোনো নির্দেশ পেয়েছিলেন?' উত্তরে তিনি বলেছিলেন, 'না, আমি কোনো নির্দেশ পাইনি ।' ওই রাতে বঙ্গবন্ধু সবাইকে আত্মগোপন করার কথা বলেন, অথচ তিনি কোথায় যাবেন, সে কথা কাউকে বলেননি। যদি তিনি গ্রেপ্তার হন, তাহলে দলের নেতৃত্ব কী হবে, তা-ও তিনি কাউকে বলেননি। এ ছাড়া মঈদুল হাসান, উইং কমান্ডার এস আর মীর্জা এবং আমার মধ্যকার আলোচনাভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপরঃ কথোপকথন গ্রস্থটিতে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় তাজউদ্দীন আহমদ ও শেখ মুজিবের সাক্ষাতের বিষয়ে সাংবাদিক মঈদুল হাসান বলেন : ২৫-২৬ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমান যে পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী হবেন, তিনি যে বাড়িতেই থাকবেন--এই সিদ্ধান্তটা তিনি দলের নেতৃস্থানীয় কারও সঙ্গে আলাপ করেননি । তেমনি বলে যাননি যে তিনি না থাকলে কে বা কারা নেতৃত্ব দেবেন এবং কোন লক্ষ্যে কাজ করবেন। নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কি কোনো আলাদা কমিটি করতে হবে? তাদের কৌশলটা কী হবে? এঁদের কি কোনো কর্মসূচি থাকবে? সেখানে দলের প্রবীণদের কী ভূমিকা হবে, তরুণদেরই বা কী ভূমিকা হবে-এসব কোনো প্রশ্নের উত্তরই কারও জানা ছিল না।...মুক্তিযুদ্ধকালে আমিও একদিন তাজউদ্দীন আহমদকে ২৫ মার্চের রাতের ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তাজউদ্দীন আহমদ স্বীকার করেছিলেন, সেই খসড়া ঘোষণাটি তার নিজের লেখা ছিল এবং তিনি বঙ্গবন্ধুকে খসড়া ঘোষণাটি পাঠ করার প্রস্তাব করেছিলেন । লেখাটা ছিল সম্ভবত এই রকম : “পাকিস্তানি সেনারা আমাদের আক্রমণ করেছে অতর্কিতভাবে। তারা সর্বত্র দমননীতি শুরু করেছে। এই অবস্থায় আমাদের দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম।" তাজউদ্দীন সাহেব আরও বলেন, এই খসড়া ঘোষণাটা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেওয়ার পর সেটা তিনি পড়ে কোনো কিছুই বললেন না, নিরুত্তর রইলেন। অনেকটা এড়িয়ে গেলেন। পরবর্তী সময়ে মঈদুল হাসানের কাছ থেকে জানতে পারি, তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, “মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে। কেননা কালকে কী হবে, যদি আমাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়? তাহলে কেউ জানবে না যে আমাদের কী করতে হবে? এই ঘোষণা কোনো গোপন জায়গায় সংরক্ষিত থাকলে পরে আমরা ঘোষণাটি প্রচার করতে পারব। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাও করা হবে।' বঙ্গবন্ধু তখন প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, 'এটা আমার বিরুদ্ধে একটা দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের বিচার করতে পারবে।' এ কথায় তাজউদ্দীন আহমদ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে সম্ভবত রাত নয়টার পরপরই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীকালে মঈদুল হাসান এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুল মোমিনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনিও ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। আবদুল মোমিন বলেন, তিনি যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকছিলেন, তখন দেখেন যে তাজউদ্দীন আহমদ খুব রাগান্বিত চেহারায় ফাইলপত্র বগলে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবদুল মোমিন তাজউদ্দীনের হাত ধরে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি রেগে চলে যাও কেন? তখন তাজউদ্দীন আহমদ তার কাছে আগের ঘটনাটি বর্ণনা করে বলেন, 'বঙ্গবন্ধু একটু ঝুঁকিও নিতে রাজি নন। অথচ আমাদের ওপর একটা আঘাত বা আক্রমণ আসছেই।'[৬]

কিন্তু প্রকাশের পরপর সমসাময়িক আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দর মাঝে এবং সংসদ অধিবেশনে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় এবং লেখক ও বইটির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক তথ্য বিকৃতির অভিযোগে মামলা করা হয়[৭], এবং লেখক বইটির উক্ত অংশ ও তৎসংশ্লিষ্ট আরও কিছু অংশ প্রত্যাহার করেন[৮] ও ২০১৯ সালের ১১ই আগস্ট এর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ মুজিবের ব্যপারে ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য জাতির নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ঘোষণা করেন।[৯]

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা

পূর্ব বাংলা বেতারের টেকনিশিয়ান

আবদুল করিম খন্দকারের মতে, পূর্ব বাংলা বেতারের এক টেকনিশিয়ান ২৬শে মার্চ বেতার বার্তায় সর্বপ্রথম স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

এম এ হান্নান

জিয়াউর রহমানের পূর্বে এম. এ. হান্নান কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

মেজর জিয়া

২৭শে মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে থেকে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।[১০][১১][১২]

ইতিহাস বিকৃতি

রাজনৈতিক মতভেদ

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Nixon-Ford Administrations"history.state.gov 
  2. "Minutes of Senior Review Group Meeting1 Washington, March 6," 
  3. "Memorandum From the Presidentʼs Assistant for National Security Affairs (Kissinger) to President Nixon1 Washington, March 13,"United States Department of State 
  4. "Minutes of Washington Special Actions Group Meeting1 Washington, March 26,"United States Department of State 
  5. "FOREIGN RELATIONS OF THE UNITED STATES, 1969–1976, VOLUME XI, SOUTH ASIA CRISIS, 1971" 
  6. খন্দকার, এ কে (২০১৪)। ১৯৭১: ভেতরে বাইরে। প্রথমা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ৩১–৫৬। আইএসবিএন 978-984-90747-4-8। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২০ 
  7. "Court summons AK Khandaker"banglanews24.com। ১১ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২০ 
  8. "AK Khandker revises his book"Dhaka Tribune। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২০ 
  9. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন এ কে খন্দকার"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২০ 
  10. "বাংলাদেশ প্রতিদিন ৬ এপ্রিল ২০১৪"। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৭ 
  11. "'ক্যারিশমেটিক' জিয়া সেনাবাহিনীর রাজনীতিকীকরণ করেছেন - প্রথম আলো"। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৭ 
  12. https://docs.google.com/viewer?a=v&q=cache:VeKkDBAqEzcJ:www.fhiredekha.com/gallery/albums/documents/declassifieddoc_march26_1971b.pdf+on+march+27+the+clandestine+radio+announced+the+formation+of+a+revolutionary&hl=en&gl=bd&pid=bl&srcid=ADGEEShEAKibidOlOBQev7vnIxsI447K2zd4q_Cs0PLUpUChcQWkoEbBbdX4XlY4ggzWCbi-Pn9B_l3E0malX1XI3aVuFEXYMzDOs05InKeaCVyvNwY_N8mTAcX3r8K7pfB2LhQD60DD&sig=AHIEtbSTu_IbFd5XL2SDPNWjSsqPaBVNTQ