গিরিশ চন্দ্র সেন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
১০৭ নং লাইন: ১০৭ নং লাইন:


== মৃত্যু ==
== মৃত্যু ==
ভাই গিরিশচন্দ্র সেন ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
ভাই গিরিশচন্দ্র সেন ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট ভারতে মৃত্যুবরণ করেন।


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==

০৮:২২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

গিরিশ চন্দ্র সেন
জন্ম১৮৩৫
পাঁচদোনা, নরসিংদী
মৃত্যুআগস্ট ১৫, ১৯১০(১৯১০-০৮-১৫)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারত
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত
পরিচিতির কারণঅনুবাদক, গবেষক, পণ্ডিত, সম্পাদক।

গিরিশ চন্দ্র সেন (জন্ম: ১৮৩৪ - মৃত্যু: ১৫ আগস্ট ১৯১০)[১] ছিলেন একজন বাঙালি ধর্মবেত্তা,অনুবাদক ও বহুভাষীক। ভাই গিরিশচন্দ্র সেন নামেই তিনি বেশী পরিচিতি পেয়েছেন। বাংলা ভাষাভাষী জনসাধারনের নিকট প্রথম বাংলা ভাষায় পুর্নাঙ্গ কুরআন অনুবাদ ও প্রকাশের কৃতিত্ব তাকে দেয়া হয়।[২][৩] তিনি আরবি, ফার্সি, উর্দু এবং ইসলামী বিষয়াবলী সমন্ধেও পান্ডীত্য অর্জন করেছিলেন।[৪]

নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে তাঁর জন্ম। পেশাগত জীবনের প্রথম পর্যায়ে তিনি ময়মনসিংহের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাচারিতে নকলনবিশ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে স্বল্প সময়ের জন্য ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে শিক্ষকতা করে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। প্রথম পর্যায়ে তিনি ঢাকা প্রকাশে কাজ করেন এবং এতে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। পরে তিনি সুলভ সমাচার ও বঙ্গবন্ধু পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক এবং মাসিক মহিলা (১৩০২) পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ছাত্রজীবনে তিনি ফারসি ও সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা করেন। কেশবচন্দ্র সেন ও বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর প্রভাবে ১৮৭১ সালে তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন এবং প্রচারব্রত গ্রহণ করে উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত ও ব্রহ্মদেশ ভ্রমণ করেন। গুরু কেশবচন্দ্র সেনের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় তিনি ইসলামি সাহিত্য-সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। এ উপলক্ষে আরবি ভাষা ও ইসলামিক ধর্মশাস্ত্র চর্চার জন্য তিনি ১৮৭৬ সালে লক্ষ্ণৌ গমন করেন। সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে কুরআনের বঙ্গানুবাদ (১৮৮১-৮৬) সম্পন্ন করেন। বাংলা সাহিত্যে এটা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ, চারিত্রিক উদারতা এবং সত্যবাদিতার জন্য গিরিশচন্দ্র ব্রাহ্ম-হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করেন। এক কথায় তিনি ছিলেন সর্বধর্মসমন্বয়ের প্রতীক। তাই সকলের নিকট তিনি ‘ভাই গিরিশচন্দ্র’ নামে পরিচিত ছিলেন।

গিরিশচন্দ্রের বিখ্যাত গ্রন্থ তাপসমালা (১৮৮০-৯৫) ৯৬ জন ওলি-আউলিয়ার জীবনচরিত, যা শেখ ফরীদুদ্দীন আত্তারের ফারসি ভাষায় রচিত তায্কেরাতুল আত্তলিয়ার ভাবাদর্শে রচিত। তিনি হাদিস-পূর্ব বিভাগ (১৮৯২) শিরোনামে মিশ্কাত শরীফের প্রায় অর্ধাংশের অনুবাদ প্রকাশ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] গিরিশচন্দ্রের উল্লেখযোগ্য আরেকটি গ্রন্থ হলো তত্ত্বরত্নমালা (১৯০৭)।

এটি শেখ ফরীদুদ্দীন আত্তারের মানতেকুত্তায়েব ও মওলানা জালালউদ্দীন রূমীর মসনবী শরীফ নামক প্রখ্যাত ফারসি গ্রন্থদ্বয় থেকে সংকলিত। এতে নীতিকথা ও শিক্ষণীয় বিষয় ছোট ছোট গল্পের আকারে রসাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি মূল ফারসি গ্রন্থ থেকে গুলিস্তাঁ ও বুস্তাঁর হিতোপাখ্যানমালা, হাদিস বা মেসকাত্ মসাবিহ (১৮৯২-৯৮), দীউয়ান-ই-হাফিজ প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থ, মহাপুরুষচরিত (১৮৮২-১৮৮৭), মহাপুরুষ মোহাম্মদ ও তৎপ্রবর্তিত এসলাম ধর্ম, এমাম হাসান ও হোসায়নের জীবনী (১৯১১), চারিজন ধর্মনেতা, চারটি সাধ্বী মুসলমান নারী, খলিফাবর্গ, সবমিলিয়ে ৪২টি পুস্তক বাংলা ভাষায় রচনা ও প্রকাশ করেন। বইগুলি মুসলিম সমাজে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়। তিনি রামমোহন রায় রচিত ইসলাম সম্বন্ধীয় গ্রন্থ তুহ্ফাৎ-উল-মুয়াহ্হিদীনের (১৮৭৮) বঙ্গানুবাদ করে ধর্মতত্ত্ব পত্রিকায় প্রকাশ করেন। স্কুলে অধ্যয়নকালে তিনি স্ত্রীশিক্ষার আবশ্যকতা প্রচারকল্পে বনিতাবিনোদন নামে একটি পুস্তক প্রকাশ করেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসের উক্তি ও জীবনী তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তাঁর আত্মজীবনী গ্রন্থটি ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি একজন পণ্ডিত ও ছিলেন।

জন্ম ও বংশপরিচয়

ভাই গিরিশচন্দ্র সেন বর্তমান নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে এক বিখ্যাত বৈদ্যব্রাহ্মণ দেওয়ান বংশে জন্মগ্রহণ করেন।[৫] গিরিশচন্দ্রের পিতা ছিলেন মাধবরাম সেন এবং পিতামহ ছিলেন রামমোহন সেন। গিরিশচন্দ্ররা ছিলেন তিন ভাই। ঈশ্বরচন্দ্র সেন, হরচন্দ্র সেন এবং সর্বকনিষ্ঠ গিরিশচন্দ্র সেন। ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের পরিবার ছিল অত্যন্ত গোঁড়াপন্থি। পরিবারে সনাতন ধর্মের আচরণ প্রয়োজনের তুলনায় একটু বাড়াবাড়ি রকমভাবেই মেনে চলা হতো। এমন একটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবারে জন্ম নিয়েও গিরিশচন্দ্র সেন একজন সম্পূর্ণ সংস্কার মুক্ত মানুষ হয়েছিলেন। অন্য ধর্মের উপর গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

বাল্যকাল ও আরবি শিক্ষা

প্রাথমিক পড়া শেষ করে গিরিশচন্দ্র ঢাকার পোগোজ স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু তার বেশিদিন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা হয়নি। তার বিদ্যালয় ছাড়ার কারণ নিয়ে একটি ঘটনা প্রচলিত রয়েছে। একদিন তিনি শ্রেণিকক্ষে দেখলেন শিক্ষক তার এক সহপাঠীকে পড়া না পারার জন্য খুব মারছেন। এই দেখে তার মনেও ভয় ধরে গেল, শিক্ষক যদি তাকেও মারেন। এই ভয়ে তিনি বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে বাসায় চলে এলেন। তার বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার এখানেই সমাপ্তি। এরপর তিনি পাঁচদোনায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। তার পাশের গ্রাম শানখোলায় কৃষ্ণ চন্দ্র রায় নামে একজন খুব ভালো ফার্সি জানা লোকের কাছে গিরিশচন্দ্র ফার্সি ভাষা শিখতে শুরু করেন।[৫] বছর দুয়েকের মধ্যে ফার্সি ভাষা তিনি বেশ ভালো ভাবেই আয়ত্ত করে ফেলেন। গিরিশচন্দ্র ময়মসিংহের ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও কাজী মৌলবী আব্দুল করিম সাহেবের কাছে রোক্কাতে আল্লামী অধ্যয়ন করেন।

১৮৭৬ সালের আরবি শিক্ষার জন্য গিরিশ চন্দ্র লক্ষ্মৌ যান। লক্ষ্মৌ ব্রাহ্ম সমাজের আনুকূল্যে এবং সহযোগিতায় জ্ঞানবৃদ্ধ মৌলবী এহসান আলী সাহেবের কাছে আরবি ব্যাকরণ ও দিওয়ান-ই-হাফিজের পাঠ গ্রহণ করেন। লক্ষ্মৌ থেকে কলকাতায় ফিরে একজন মৌলবীর কাছে এ বিষয়ে আরও কিছু শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর ঢাকায় নলগোলায় মৌলবী আলিমউদ্দিন সাহেবের কাছে আরবি ইতিহাস ও সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ করেন।[৫]

কর্মজীবনে প্রবেশ

বেশ কিছুদিন বেকার বসে থাকার পর তিনি তার মেজভাইয়ের সাথে চাকরির খোঁজে ময়মনসিংহ গমন করেন। সেখানে তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে শিক্ষকের (দ্বিতীয় পন্ডিত) পদে যোগদান করেন। কিন্তু গিরিশচন্দ্র সামান্য এক চাকরির মাঝে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতে পারলেন না। তার ছিল জ্ঞানের পিপাসা। তিনি নিজে নিজেই পড়াশোনা শুরু করলেন। সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চাও শুরু করলেন গিরিশচন্দ্র। তৎকালীন ঢাকা থেকে প্রকাশিত 'ঢাকা প্রকাশ' পত্রিকায় তিনি ময়মনসিংহের সংবাদদাতা ছিলেন। তাছাড়া এই পত্রিকায় তার অনেকগুলো লেখাও প্রকাশিত হয়েছিল।

ব্রাহ্ম ধর্মের দীক্ষালাভ

চাকরি ছেড়ে দিয়ে গিরিশচন্দ্র কলকাতায় গমন করেন। কলকাতায় যাওয়ার পর তার সাথে দেখা হয় রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত ব্রাহ্মধর্মের তৎকালীন প্রচারক কেশবচন্দ্র সেনের। সে সময় কেশবচন্দ্র ছিলেন ব্রাহ্মধর্মের নববিধান শাখার প্রধান। তারই প্রভাবে গিরিশচন্দ্র সেন ব্রাহ্ম মতবাদে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মসমাজ তার কর্তব্যনিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ভাই উপাধিতে ভূষিত করে। [৬]

কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক

ব্রাক্ষধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে কেশবচন্দ্রের অনুরোধ ও ব্যবস্থাপনাতে তিনি ফার্সি ভাষায় আরো গভীর জ্ঞান লাভ এবং আরবি-ফার্সি সাহিত্যের ওপর পড়াশোনা করার জন্য কানপুরলখনউ গমন করেন। ফিরে আসার পর কেশবচন্দ্রের উৎসাহেই তিনি ইসলামি দর্শনের উপর গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা ও গবেষণা করার জন্য প্রধান বাধাই ছিল ভাষা। ব্রাহ্মসমাজের প্রচারের উদ্দেশ্যে কেশবচন্দ্র সেন পরিচালিত নববিধান সভা ইসলাম ধর্মগ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে গিরিশচন্দ্র সেন সরাসরি আরবী থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ বাংলা অনুবাদ করেননি। বরং আরবীর পাশাপাশি ফার্সী অনুবাদেরও সাহায্য নিয়ে ছিলেন। আর তিনি আল্লাহ পাক এর নামের জায়গায় স্রষ্টা/ঈশ্বর এবং নবী ও রাসুল এর স্থানে পয়গম্বর/অবতার/দেবদূত ফেরেশতাদের স্থলে দেব-দেবী ইত্যাদি ব্যবহার করে ছিলেন। কোরানশরিফ অনুবাদ করতে আরবী ব্যাকরণের সঠিক ব্যাবহার এবং কোরান শরিফের বিশেষ জ্ঞান থাকা আবশ্যিক ছিল তাই তৎকালীন দুটি মুসলিম সম্প্রদায় এটির প্রশংসা করলেও গিরিশ চন্দ্র সেনের পূর্ণাংগ অনুবাদ কর্ম যেটা তখন বাজারে প্রচলিত ছিলো তাও ছিলো নানা দোষে দুষ্ট ছিল বলে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়নি।[৭][৮][৯] তবে তার আগ্রহের এবং শ্রমের কোন কমতি ছিল না।

লেখক জীবন

তিনি কুরআন শরীফের সম্পূর্ণ অংশ, মিশকাত শরীফের প্রায় অধিকাংশ, হাদিস, তাজকিরাতুল আউলিয়া, দিওয়ান-ই-হাফিজ, গুলিস্তাঁ, বুঁস্তা, মকতুব্বত-ই-মাকদুস, শারফ উদ্দিন মুনিবী, মসনভী-ই-রুমী, কিমিয়া-ই-সাদত, গুলশান-ই-আসরার ইত্যাদিসহ বহু ইসলামি গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বিভিন্ন গ্রন্থাবলী রচনা

তার প্রথমগ্রন্থ ব্রহ্মময়ী-চরিত(জীবনী) প্রকাশিত হয় ১৮৬৯ সালে। তার দ্বিতীয় গ্রন্থ 'হিতোপদেশমালা'-র গল্পগুলো ছিল কবি শেখ সাদির গুলিস্তাঁ গ্রন্থের কিছু গল্পের অনুবাদ। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭১ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকার গিরিশ প্রেস থেকে। 'ধর্ম ও নীতি' প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালের ১৮ জুলাই কলকাতার ওল্ড ইন্ডিয়ান প্রেস থেকে। এরপর তিনি 'আকসিরে হেদায়েত' থেকে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন 'ধর্ম-বন্ধু' গ্রন্থটি। এটি প্রকাশিত হয় ১৮৭৬ সালের ২০ আগস্ট কলকাতার বাহ্মসমাজ থেকে। তিনি তিন খন্ডে পারস্যের কবি হাফিজের জীবনী, নৈতিক উপদেশ ও বাণীসমূহের অনুবাদ প্রকাশ করেন। এর প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৭৭ সালের ২৩ জানুয়ারি, দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৯০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৯৮ সালের ১৮ অক্টোবর। তিনটি গ্রন্থই প্রকাশিত হয় কলকাতার ব্রাহ্মসমাজ থেকে। 'তাজকিরাতুল আউলিয়া' নামক গ্রন্থ থেকে তিনি মুসলিম দরবেশদের বাণীসমূহ সঙ্কলন ও অনুবাদ করে প্রকাশ করেন ১৮৭৭ সালের ১৯ আগস্ট। 'দরবেশদিগের উক্তি (তাসাউফ)' শিরোনামের এই গ্রন্থটিও প্রকাশিত হয় ব্রাহ্মসমাজ থেকে। উর্দুগ্রন্থ 'আকসিরে হেদায়েত' থেকে তিনি মুসলিম দরবেশগণের বাণী সঙ্কলন ও অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। 'নীতিমালা' শিরোনামের এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৮৭৭ সালের ১৯ আগস্ট। 'দরবেশদের ক্রিয়া'(তাসাউফ) প্রকাশিত ১৮৭৮ সালে এবং মুসলিম পীর-দরবেশরা কীভাবে আল্লাহ্‌র ইবাদত করার জন্য প্রস্তুত হন, নামাজ আদায় করেন ও কীভাবে তত্ত্বলাভ করেন, এ সম্পর্কিত আলোচনা বিষয়ক গ্রন্থের অনুবাদ 'দরবেশদিগের সাধন প্রণালী' প্রকাশিত হয় ১৮৭৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। কুরআনের বাছাই করা আয়াতের অনুবাদ 'প্রবচনবলী (ধর্ম উপদেশ)' প্রকাশিত হয় ব্রাহ্মসমাজ থেকে ১৮৮০ সালের ২০ জানুয়ারি।

ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের মিশনারিসুলভ কাজের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল 'তাজকিরাতুল আউলিয়া'-র বাংলা অনুবাদ 'তাপসমালা' শিরোনামে একটি ধারাবাহিক গ্রন্থের প্রকাশ। তাজকিরাতুল আউলিয়াতে মোট ৯৬ জন মুসলিম দরবেশের কাহিনী বর্ণিত আছে। এই কাহিনীগুলো ভাই গিরিশচন্দ্র সেন বাংলায় অনুবাদ করেন। তিনি মোট ছয় খন্ডে এই বিশাল অনুবাদ কর্মটি সম্পন্ন করেন।

কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ

অনুবাদক হিসেবে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি কুরআনের অনুবাদের কাজ শুরু করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে মোট ১২ টি খন্ডে এই অনুবাদকর্ম সমাপ্ত করেন। 'তাপসমালা'র দুটো খন্ড বের হওয়ার পর ১৮৮১ সালের ১২ ডিসেম্বর কুরআনের প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয়। প্রথম খন্ড প্রকাশের সময় গিরিশচন্দ্র অনুবাদকের নাম গোপন রাখেন। মুসলিম সমাজে এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন। গ্রন্থটিতে শুধুমাত্র প্রকাশক গিরিশচন্দ্র সেন এবং মুদ্রক তারিণীচরণ বিশ্বাসের নাম ছিল। ৩২ পৃষ্ঠার এই খন্ডের মূল্য ছিল মাত্র চারআনা। কিন্তু গিরিশচন্দ্রের আশঙ্কা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হলো। যদিও কিছু আলেম এর সমালোচনা করেছিলো কিন্তু দুইটি মুসলমান সম্প্রদায় তার অনুবাদ সম্পাদন করার জন্য এই অজ্ঞাতনামা অনুবাদকের প্রশংসা করে ব্রাহ্মসমাজের নিকট পত্র প্রেরণ করেন। তাদের প্রশংসাপূর্ণ পত্রের অংশবিশেষ নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

কুরআন অনুবাদ শেষ করে ভাই গিরিশচন্দ্র সেন বলেছিলেনঃ

কুরআনের সম্পূর্ণ খন্ড একত্রে প্রকাশিত হয় ১৮৮৬ সালে। সম্পূর্ণ খন্ডেই প্রথম তিনি স্বনামে আত্নপ্রকাশ করেন। ভাই গিরিশ্চন্দ্র সেন অনূদিত কুরআনের চতুর্থ সংস্করণে মৌলানা আকরাম খাঁ একটি প্রশংসাসূচক ভূমিকা লিখেছিলেন।

হাদিসের অনুবাদ

কুরআনের পর তার আর একটি বড় কাজ হাদিসের অনুবাদ। হাদিসও কয়েকখন্ড পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হয়। এর প্রথম খন্ড হাদিস-পূর্ব-বিভাগ (১ম খন্ড) প্রকাশিত হয় ১৮৯২ সালের ২৪ জানুয়ারি। শেষ খন্ড হাদিস-উত্তর-বিভাগ (৪র্থ খন্ড) প্রকাশিত হয় ১৯০৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

জীবনী গ্রন্থমালা

তার জীবনী গ্রন্থমালা সমূহও মূলত 'তাপসমালা'র সমতুল্য। 'মহাপুরুষ চরিত' প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় ১৮৮৩ সালে। প্রথম ভাগে ছিল হযরত ইব্রাহিম (আ.)হযরত দাউদ (আ.)-এর জীবনী। দ্বিতীয় ভাগে ছিল হযরত মুসা (আ.)-এর জীবনী। এটি ১৮৮৪ সালের ৬ জানুয়ারি। তৃতীয় ভাগে আছে ইহুদী রাজা কিং ডেভিডের জীবনী। তার 'জীবনচরিতমালা'-র আরেকটি বড় গ্রন্থ মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনী। এর প্রথমখন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৮৬ সালের ২৩ জানুয়ারি। দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৮৭ সালের ২৪ জানুয়ারি। তৃতীয় ও শেষ খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৮৭ সালের ২৮ মে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

অন্যান্য জীবনীগ্রন্থ

অন্যান্য গ্রন্থ

  • তত্ত্ব কুসুম (ধর্মবিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন)। প্রকাশকাল ২০ এপ্রিল, ১৮৮২।
  • তত্ত্বরত্নমালা (ফার্সি ভাষা থেকে ধর্মীয় নীতিকথার অনুবাদ)। প্রকাশকাল ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৮২।
  • ১৮৮৫ সালের ৮ আইনের সহজ বাংলা অনুবাদ (দুখন্ড)। প্রকাশকাল ২৪ নভেম্বর, ১৮৮৫।
  • নববিধান প্রেরিতগণের প্রতিনিধি (ব্রাহ্মধর্মের নববিধান সংঘের কার্যক্রমবিষয়ক গ্রন্থ)। প্রকাশকাল ২৪ জানুয়ারি, ১৮৮৭।
  • নববিধান কি?। প্রকাশকাল ২৪ ব্জানুয়ারি, ১৮৮৭।
  • তত্ত্ব সন্দর্ভমালা (নববিধানের মূলতত্ত্ব)। প্রকাশকাল ২৭ আগস্ট, ১৮৯৩।
  • কাব্যলহরী (পাঠ্যপুস্তক : কবিতা)। প্রকাশকাল ১৮ জুন, ১৮৯৭।
  • দরবেশী (তাসাউফ)। প্রকাশকাল ১৯ এপ্রিল, ১৯০২।
  • ধর্মবন্ধুর প্রতি কর্তব্য (বিবিধ)। প্রকাশকাল ২২ মার্চ, ১৯০৬।
  • আত্নজীবনী। প্রকাশকাল ১৯০৭।
  • মহালিপি (পারস্যের শরাফত-আল-দীন আহমদ মালিরির পত্রাবলীর অনুবাদ। প্রকাশকাল ১৯০৯।

সম্পাদনা কর্ম

ভাই গিরিশচন্দ্র সেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত 'বঙ্গবন্ধু' ও 'সুলভ সমাচার' নামের দুটি পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। তৎকালীন পশ্চাৎপদ নারী সমাজের জাগরণে নিজউদ্যোগে প্রকাশ করেছিলেন 'মহিলা' (বাংলায় 1303 বঙ্গাব্দে) নামের একটি পত্রিকা। তিনি নিজেই এর সম্পাদক ছিলেন।

মৃত্যু

ভাই গিরিশচন্দ্র সেন ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট ভারতে মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র

  1. "গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন"প্রথম আলো। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। 
  2. মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম, সংগ্রহ ও সম্পাদনা: (ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। আত্ম-জীবন: ভাই গিরিশচন্দ্র সেন। বাংলাবাজার, ঢাকা: কথাপ্রকাশ প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ২৯ ও ৪০ নং পৃষ্ঠা। 
  3. মাকমুদূল হাসান, মনোহরদী, নরসিংদী (২০১২)। "সেন, গিরিশচন্দ্র"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  4. "বাংলায় কুরআনের প্রথম অনুবাদক কে"দৈনিক নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৫ 
  5. ফজলুর রহমান, "শতাব্দীর দর্পণ", ২০০০, পৃষ্ঠা ৫৯
  6. [১]
  7. "কোরআন শরীফ অনুবাদের ইতিহাস"alhassanain.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৫ 
  8. "কুরআন এর প্রথম বাংলা অনুবাদক নিয়ে একটি ভুল প্রচারণা'র নিরসন হউক।" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৫ 
  9. "বাংলায় কুরআনের প্রথম অনুবাদক কে"Daily Nayadiganta। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৫ 

বহিঃসংযোগ