গ্যালিলিও গ্যালিলেই: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বানান ও বাক্যের অসম্পূর্ণতা সংশোধন, রচনাশৈলীর ধারাবাহিকতা সংরক্ষণ ইত্যাদি। |
|||
৩ নং লাইন: | ৩ নং লাইন: | ||
|image = Galileo.arp.300pix.jpg|300px |
|image = Galileo.arp.300pix.jpg|300px |
||
|image_width = 300px |
|image_width = 300px |
||
|caption = গিয়ুস্তো সিস্তারমেন্স কর্তৃক অঙ্কিত |
|caption = গিয়ুস্তো সিস্তারমেন্স কর্তৃক অঙ্কিত গ্যালিলিওর ছবি |
||
|birth_date = [[ফেব্রুয়ারি ১৫]], [[১৫৬৪]]<ref name="McTutor">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www-history.mcs.st-andrews.ac.uk/Biographies/Galileo.html |প্রকাশক=[[University of St Andrews]], [[Scotland]] |কর্ম=The MacTutor History of Mathematics archive |শিরোনাম=Galileo Galilei |লেখক=J J O'Connor and E F Robertson |সংগ্রহের-তারিখ=2007-07-24}}</ref> |
|birth_date = [[ফেব্রুয়ারি ১৫]], [[১৫৬৪]]<ref name="McTutor">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www-history.mcs.st-andrews.ac.uk/Biographies/Galileo.html |প্রকাশক=[[University of St Andrews]], [[Scotland]] |কর্ম=The MacTutor History of Mathematics archive |শিরোনাম=Galileo Galilei |লেখক=J J O'Connor and E F Robertson |সংগ্রহের-তারিখ=2007-07-24}}</ref> |
||
|birth_place = [[পিসা]], [[ইতালি]] <ref name="McTutor"/> |
|birth_place = [[পিসা]], [[ইতালি]] <ref name="McTutor"/> |
||
|residence = [[গ্র্যান্ড |
|residence = [[গ্র্যান্ড ডিউকি অব টুস্কানি]] |
||
|death_date = [[জানুয়ারি ৮]], [[১৬৪২]] <ref name="McTutor"/> |
|death_date = [[জানুয়ারি ৮]], [[১৬৪২]] <ref name="McTutor"/> |
||
|death_place = [[আরসেট্রি]], [[ইতালি]] <ref name="McTutor"/> |
|death_place = [[আরসেট্রি]], [[ইতালি]] <ref name="McTutor"/> |
||
১৭ নং লাইন: | ১৭ নং লাইন: | ||
}} |
}} |
||
'''গ্যালিলিও গ্যালিলি''' ({{IPA-it|ɡaliˈlɛːo ɡaliˈlɛi}}; জন্ম: ১৫ ফেব্রুয়ারি, [[১৫৬৪]] - মৃত্যু: ৮ জানুয়ারি, [[১৬৪২]])<ref>{{ws|"[[s:Catholic Encyclopedia (1913)/Galileo Galilei|Galileo Galilei]]" in the 1913 ''Catholic Encyclopedia''}} by John Gerard. Retrieved 11 August 2007</ref> একজন [[ইতালি|ইতালীয়]] [[পদার্থবিজ্ঞানী]], [[জ্যোতির্বিজ্ঞানী]], [[গণিতজ্ঞ]] এবং [[দার্শনিক]] যিনি [[বৈজ্ঞানিক বিপ্লব|বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের]] |
'''গ্যালিলিও গ্যালিলি''' ({{IPA-it|ɡaliˈlɛːo ɡaliˈlɛi}}; জন্ম: ১৫ ফেব্রুয়ারি, [[১৫৬৪]] - মৃত্যু: ৮ জানুয়ারি, [[১৬৪২]])<ref>{{ws|"[[s:Catholic Encyclopedia (1913)/Galileo Galilei|Galileo Galilei]]" in the 1913 ''Catholic Encyclopedia''}} by John Gerard. Retrieved 11 August 2007</ref> একজন [[ইতালি|ইতালীয়]] [[পদার্থবিজ্ঞানী]], [[জ্যোতির্বিজ্ঞানী]], [[গণিতজ্ঞ]] এবং [[দার্শনিক]] যিনি [[বৈজ্ঞানিক বিপ্লব|বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের]] সঙ্গে বেশ নিগূঢ়ভাবে সম্পৃক্ত। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে [[দূরবীক্ষণ যন্ত্র|দূরবীক্ষণ যন্ত্রের]] উন্নতি সাধন যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা রেখেছে, বিভিন্ন ধরনের অনেক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, নিউটনের গতির প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র, এবং [[নিকোলাস কোপারনিকাস|কোপারনিকাসের]] মতবাদের পক্ষে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। |
||
বিজ্ঞানী [[স্টিফেন হকিং|স্টিফেন হকিংয়ের]] মতে আধুনিক যুগে |
বিজ্ঞানী [[স্টিফেন হকিং|স্টিফেন হকিংয়ের]] মতে আধুনিক যুগে প্রকৃতি বিজ্ঞানের এতো বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেননি। তাঁকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক,<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|শিরোনাম = A Short History of Science to the Nineteenth Century|প্রথমাংশ = Charles|শেষাংশ = Singer|বছর = 1941|প্রকাশক = Clarendon Press|ইউআরএল = http://www.google.com/books?id=mPIgAAAAMAAJ&pgis=1|পাতা =217}}</ref> আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক<ref name="Einstein">{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Weidhorn|প্রথমাংশ=Manfred|শিরোনাম=The Person of the Millennium: The Unique Impact of Galileo on World History|বছর=2005|প্রকাশক=iUniverse|আইএসবিএন=0-595-36877-8|পাতাসমূহ=155}}</ref> এবং এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক<ref name=finocchiaro2007>[[#Reference-Finocchiaro-2007|Finocchiaro (2007)]].</ref> হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। অ্যারিস্টটলীয় ধারণার অবসানে গ্যালিলিওর [[আবিষ্কার|আবিষ্কারগুলোই]] সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা রেখেছে। |
||
== জীবনী == |
== জীবনী == |
||
গ্যালিলিও [[১৫৬৪]] |
গ্যালিলিও [[১৫৬৪]] খ্রিস্টাব্দের [[ফেব্রুয়ারি ১৫|১৫ ফেব্রুয়ারি]] তারিখে [[ইতালি|ইতালির]] [[টুস্কানি|টুস্কানিতে]] অবস্থিত [[পিসা]] নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা [[ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি]] গণিতজ্ঞ এবং সংগীতশিল্পী ছিলেন। ভিনসেঞ্জো [[১৫২০]] খ্রিস্টাব্দে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্ম নেন। তার মায়ের নাম ''গিউলিয়া আমানাতি'' (Giulia Ammannati)। গ্যালিলিও ছিলেন বাবা মায়ের সাত সন্তানের (কারো কারো মতে ৬) মধ্যে সবার বড়ো। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে তিনি ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবীও ছিলেন। |
||
বেশ অল্প বয়স থেকে গ্যালিলিওর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষার পর তিনি [[পিসা বিশ্ববিদ্যালয়|পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] |
বেশ অল্প বয়স থেকে গ্যালিলিওর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষার পর তিনি [[পিসা বিশ্ববিদ্যালয়|পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] ভরতি হন, কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন সেখানেই তার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়। তার পরেও [[১৫৮৯]] খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার জন্য একটি পদ পান এবং সেখানে গণিত পড়ানো শুরু করেন। এর পরপরই তিনি [[পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়|পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে]] চলে যান এবং সেখানকার অনুষদে [[জ্যামিতি]], [[বলবিজ্ঞান]] এবং [[জ্যোতির্বিজ্ঞান]] বিষয়ে [[১৬১০]] খ্রিস্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। ওই সময়ের মধ্যেই তিনি বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেন এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেন। |
||
গ্যালিলিও এবং [[মারিনা গ্যামবা]] তিন সন্তানের জন্ম দেন, কিন্তু |
গ্যালিলিও এবং [[মারিনা গ্যামবা]] তিন সন্তানের জন্ম দেন, কিন্তু তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। গ্যালিলিও একজন নিবেদিত [[রোমান ক্যাথলিক]] ছিলেন বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা মেনে নিলে তাঁর বিবাহ বহির্ভূত এই যৌনাচার অনেকটাই অবাস্তব মনে হয়। তাদের দুই মেয়ে (ভার্জিনিয়া ও লিভিয়া) এবং এক ছেলে (ভিনসেঞ্জিও) জন্মেছিল। বিবাহ বহির্ভূত সন্তান উৎপাদনের জন্য তাদের দুই মেয়েকেই স্বল্প বয়সে আরসেট্রিতে অবস্থিত ''সান মেটিও'' নামক গির্জায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাদের দুই মেয়েকে বাকি জীবন সেখানেই অতিবাহিত করতে হয়েছিল। কনভেন্টে প্রবেশের পর ''ভার্জিনিয়া'' [[মারিয়া সেলেস্টি]] নাম ধারণ করে, তিনি-ই ছিলেন গ্যালিলিওর সন্তানদের মধ্যে সবার বড়ো। ভার্জিনিয়া সবচেয়ে আদরের সন্তানও ছিলেন এবং বাবার মেধার খানিকটা উত্তরাধিকার তিনি-ই লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। [[১৬৩৪]] খ্রিস্টাব্দের [[এপ্রিল ২|২ এপ্রিল]] তারিখে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাঁর সমাধি [[বাসিলিকা ডি সান্তা ক্রস ডি ফিরেঞ্জ|বাসিলিকা ডি সান্তা ক্রস ডি ফিরেঞ্জে]] গ্যালিলিওর সমাধির পাশেই অবস্থিত। লিভিয়া (জ. ১৬০১) ''সুওর আরকাঞ্জেলা'' নাম ধারণ করেন। বড়ো বোনের মতো তিনি কিছু করে দেখাতে পারেননি, জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি অসুস্থ ছিলেন। ছেলে ভিনসেঞ্জিও (জ. ১৬০৬) পরবর্তীতে বৈধ জাত্যাধিকারী হন এবং ''সেসটিলা বচ্চিনারিককে'' (Sestilia Bocchineri) বিবাহ করেন। |
||
[[চিত্র:Galileo Galilei01.jpg|thumb|left|200px|ফ্লোরেন্সের উফিজির বাইরে অবস্থিত মূর্তি]] |
[[চিত্র:Galileo Galilei01.jpg|thumb|left|200px|ফ্লোরেন্সের উফিজির বাইরে অবস্থিত মূর্তি]] |
||
[[১৬১২]] |
[[১৬১২]] খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও [[রোম|রোমে]] গিয়ে ''অ্যাকাডেমিয়া দেই লিন্সেই''-তে যোগ দেন। সেখানে তিনি মূলত [[সৌর কলঙ্ক]] পযর্বেক্ষণ করতেন। ওই বছরই [[কোপারনিকাস|কোপারনিকাসের]] মতবাদের বিরোধী মতবাদ প্রচারিত হয় এবং গ্যালিলিও তা সমর্থন করেন। [[১৬১৪]] খ্রিস্টাব্দে ''সান্তা মারিয়া নভেলার'' প্রচারবেদিতে দাঁড়িয়ে ফাদার [[টমাসো কাচ্চিনি]] (Tommaso Caccini, ১৫৭৪ - ১৬৪৮) ব্যাখ্যা সহকারে পৃথিবীর গতি সম্পর্কে গ্যালিলিওর মতবাদ বর্ণনা করেন। এরপর সেই মতবাদের ভিত্তিতে তাঁর বিচার করেন এবং ঘোষণা করেন যে, এগুলো ভয়ঙ্কর এবং ধর্মদ্রোহীতার শামিল। এধরনের অভিযোগ থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় তিনি রোমে যান। কিন্তু [[১৬১৬]] খ্রিস্টাব্দে কার্ডিনাল [[রবার্ট বেলারমাইন]] ব্যক্তিগতভাবে তার মামলাটি হাতে নেন এবং তাঁকে হেনস্ত করতে শুরু করেন। ধর্মীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় কোপারনিকাসের তত্ত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ধর্মীয় আইন হিসেবে কোপারনিকান জ্যোতির্বিজ্ঞান পড়তে বা পড়াতে বাধ্য করা হয়। [[১৬২২]] খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও তাঁর বিখ্যাত বই [[দ্য অ্যাসাইয়ার]] (''Saggiatore'') রচনা করেন যা [[১৬২৩]] খ্রিস্টাব্দে স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রকাশিত হয়। [[১৬২৪]] খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর প্রথম [[অণুবীক্ষণ যন্ত্র]] তৈরি করেন। [[১৬৩০]] খ্রিস্টাব্দে তিনি রোমে ফিরে যান তাঁর রচিত একটি বই প্রকাশের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য। বইটির নাম ছিল [[ডায়ালগ কনসার্নিং দ্য টু চিফ ওয়র্ল্ড সিস্টেম্স]]। এটি এই লাইসেন্সের আওতাতেই [[১৬৩২]] খ্রিস্টাব্দে [[ফ্লোরেন্স]] থেকে প্রকাশিত হয়। ওই বছরেরই [[অক্টোবর]] মাসে তাঁকে রোমের [[পবিত্র দপ্তর|পবিত্র দপ্তরের]] (Holy Office) সম্মুখীন হতে হয়। কারণ ছিল "Congregation for the Doctrine of the Faith" (বিশ্বাসের উপদেশাবলির জন্য সমাবেশ)। আদালত থেকে তাঁকে একটি দণ্ডাদেশ দেওয়া হয় যার মাধ্যমে তাকে পূর্ববর্তী ধ্যান-ধারণা শপথের মাধ্যমে পরিত্যাগের জন্য বলা হয়। ওই দণ্ডাদেশের কার্যকরতা প্রমাণের জন্যই তাঁকে [[সিয়েনা|সিয়েনায়]] একঘরে জীবন কাটাতে হয়। এর কিছু পর [[১৬৩৩]] খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরে তাঁকে তার নিজ বাড়ি [[আরসেট্রি|আরসেট্রিতে]] ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। [[১৬৩৪]] খ্রিস্টাব্দে তাঁর বড়ো মেয়ের মৃত্যুর পর গ্যালিলিও অনেকটাই ভেঙে পড়েন। বড়ো মেয়ে সিস্টার সেলেস্টি (১৬০০ - ১৬৩৪) তাঁকে সবসময় সঙ্গ দিত, এই অকালমৃত্যুতে তাই গ্যালিলিও হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ। [[১৬৩৮]] খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও [[লিডেন]] থেকে তাঁর সর্বশেষ বই [[টু নিউ সায়েন্সেস]] প্রকাশ করেন। আরসেট্রিতে [[১৬৪২]] খ্রিস্টাব্দে [[জানুয়ারি ৮|৮ জানুয়ারি]] তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার ছাত্র [[ভিনসেঞ্জো ভিভিয়ানি]] তাঁর পাশে ছিলেন। |
||
== বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসমূহ == |
== বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসমূহ == |
||
গ্যালিলিও বিজ্ঞানের জগতে পরিমাণগত পরিমাপের পদ্ধতির গোড়াপত্তনে অগ্রদূতের |
গ্যালিলিও বিজ্ঞানের জগতে পরিমাণগত পরিমাপের পদ্ধতির গোড়াপত্তনে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর এই পরিমাপ ফলগুলো গাণিতিক সূক্ষ্মতার বিচারে উত্তীর্ণ হয়েছিল। একই সময় [[উইলিয়াম গিলবার্ট]] চুম্বকত্ব এবং বিদ্যুৎ নিয়ে বেশ কিছু পরিমাণগত অধ্যয়ন করেছিলেন। গ্যালিলিওর বাবা ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি কিছু পরীক্ষা করেছিলেন যার মাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে এ পর্যন্ত জানা মতে প্রথম অরৈখিক সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল। সুর সৃষ্টিকারী যন্ত্রের ওপর এই পরীক্ষা চালিয়ে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, একটি টানা তারের জন্য, পিচ টানের বর্গমূলের সমানুপাতিক। |
||
== অবদান == |
== অবদান == |
||
==== দূরবীক্ষণ যন্ত্রের |
==== দূরবীক্ষণ যন্ত্রের আবিষ্কার ==== |
||
[[চিত্র:Bertini fresco of Galileo Galilei and Doge of Venice.jpg|thumbnail|right|নিজের আবিষ্কৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্রের প্রদর্শন]] |
[[চিত্র:Bertini fresco of Galileo Galilei and Doge of Venice.jpg|thumbnail|right|নিজের আবিষ্কৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্রের প্রদর্শন]] |
||
১৬০৯ |
১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও স্বাধীনভাবে এবং উন্নত ধরনের দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ ও এই যন্ত্রকে জ্যোতির্বিদ্যায় সার্থকভাবে প্রয়োগ করেন। এর আগে ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজ চশমা নির্মাতা লিপেরশাইম তাঁর নির্মিত এক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের কথা প্রকাশ করেন এবং সেই বছরই এই অদ্ভুত কাচ নির্মিত যন্ত্রের কথা গ্যালিলিওর নিকট পৌঁছে। এসময় তিনি তাঁর এক রচনায় লেখেন: “প্রায় ১০ মাস পূর্বে আমার কাছে সংবাদ পৌঁছে যে জনৈক ওলন্দাজ চশমা নির্মাতা এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন যার দ্বারা দূরবর্তী বস্তুদের নিকটবর্তী বস্তুর মতো স্পষ্ট দেখা যায়। এ খবর পাওয়ামাত্র আমি নিজে কীভাবে এরূপ একটি যন্ত্র নির্মাণ করতে পারি তা চিন্তা করতে লাগলাম।” শীঘ্রই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের নানা উন্নতি সাধন করে গ্যালিলিও দূরবর্তী বস্তুর অন্তত ৩০ গুণ বড়ো করে দেখার ব্যবস্থা করেন। |
||
⚫ | |||
⚫ | |||
⚫ | দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে জ্যোতিষ্কদের প্রথম পর্যবেক্ষণের ফল ‘[[সাইডরিয়াস নানসিয়াস]]’ বা ‘[[নক্ষত্র থেকে সংবাদবাহক]]’ গ্রন্থে লিপিবব্ধ হয় (প্রকাশকাল [[১৬১০]] |
||
⚫ | দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে জ্যোতিষ্কদের প্রথম পর্যবেক্ষণের ফল ‘[[সাইডরিয়াস নানসিয়াস]]’ বা ‘[[নক্ষত্র থেকে সংবাদবাহক]]’ গ্রন্থে লিপিবব্ধ হয় (প্রকাশকাল [[১৬১০]] খ্রিস্টাব্দ)। চাঁদের পৃষ্ঠের খাদ, ছোটো-বড়ো অনেক দাগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এই গ্রন্থে আলোচিত হয়। ভূপৃষ্ঠের ন্যায় চাঁদের উপরিভাগে যে পাহাড়, পর্বত, উপত্যকা, নদী, গহ্বর, জলাশয় প্রভৃতির দ্বারা গঠিত গ্যালিলিও এইরূপ অভিমত ব্যক্ত করেন। [[দূরবীক্ষণ]] যন্ত্রে বড়ো বড়ো কাল দাগ দেখে তিনি তাদের সমুদ্র মনে করেছিলেন, পরে অবশ্য এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। |
||
==== ছায়াপথ, বিষমতারা, নীহারিকা ==== |
==== ছায়াপথ, বিষমতারা, নীহারিকা ==== |
||
[[চিত্র:Galileo facing the Roman Inquisition.jpg|thumbnail|right|১৮৫৭ |
[[চিত্র:Galileo facing the Roman Inquisition.jpg|thumbnail|right|১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ক্রিস্টিয়ানো বান্টি কর্তৃত অঙ্কিত: রোমান কর্তপক্ষ কর্তৃক গ্যালিলিকে জিজ্ঞাসাবাদ]] |
||
খালি চোখে অদৃশ্য অসংখ্য নক্ষত্রের অস্তিত্ব দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে। সে সময় খালি চোখে [[কৃত্তিকা]] তারামণ্ডলে মাত্র ৬টি নক্ষত্র দেখা যেত; কিন্তু গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা ৩৬টি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন। সে সময়ের রহস্যময় ছায়াপথ আকাশগঙ্গা পর্যবেক্ষণ করে দেখান যে, তা আসলে অসংখ্য নক্ষত্রের সমষ্টি। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তিনি কিছু [[বিষমতারা]] এবং কয়েকটি [[নীহারিকা|নীহারিকাও]] আবিষ্কার করেছিলেন। |
খালি চোখে অদৃশ্য অসংখ্য নক্ষত্রের অস্তিত্ব দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে। সে সময় খালি চোখে [[কৃত্তিকা]] তারামণ্ডলে মাত্র ৬টি নক্ষত্র দেখা যেত; কিন্তু গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা ৩৬টি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন। সে সময়ের রহস্যময় ছায়াপথ আকাশগঙ্গা পর্যবেক্ষণ করে দেখান যে, তা আসলে অসংখ্য নক্ষত্রের সমষ্টি। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তিনি কিছু [[বিষমতারা]] এবং কয়েকটি [[নীহারিকা|নীহারিকাও]] আবিষ্কার করেছিলেন। |
||
==== |
==== বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কার ==== |
||
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে গ্যালিলিও প্রথম পর্যায়ের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পরপর কয়েক রাত বৃহস্পতি গ্রহ পর্যবেক্ষণ করে বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ খুঁজে পান। বৃহস্পতির উপগ্রহের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে, ‘গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতি জ্যোতিষ্করা একমাত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে’, প্রাচীন জ্যোতির্বিদদের এই মতবাদ সত্য নয়। |
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে গ্যালিলিও প্রথম পর্যায়ের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পরপর কয়েক রাত বৃহস্পতি গ্রহ পর্যবেক্ষণ করে বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ খুঁজে পান। বৃহস্পতির উপগ্রহের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে, ‘গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতি জ্যোতিষ্করা একমাত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে’, প্রাচীন জ্যোতির্বিদদের এই মতবাদ সত্য নয়। |
||
৫৩ নং লাইন: | ৫৪ নং লাইন: | ||
==== শনির বলয় ==== |
==== শনির বলয় ==== |
||
[[১৬১০]] |
[[১৬১০]] খ্রিস্টাব্দের শেষভাগে পাদুয়া পরিত্যাগের কিছু পূর্বে গ্যালিলিও [[শনি|শনির]] বলয় আবিষ্কার করেন। |
||
==== সৌর কলঙ্ক ==== |
==== সৌর কলঙ্ক ==== |
||
১৬১০ |
১৬১০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে গ্যালিলিও সর্বপ্রথম সূর্যে কতগুলো কালো দাগ পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু ১৬১২ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের পূর্বে তিনি এ আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করেননি। ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী [[টমাস হ্যারিয়ট]], হল্যান্ডের [[জন ফ্যাব্রিসিয়াস]] ও জার্মানিতে [[শাইনার]] স্বাধীনভাবে [[সৌরকলঙ্ক]] পর্যবেক্ষণ করেন, এবং তাদের আবিষ্কারের কথা গ্যালিলিওর আগেই প্রকাশিত হয়। সেই জন্য সৌরকলঙ্ক আবিষ্কারের কৃতিত্ব হ্যারিয়ট, ফ্যাব্রিসিয়াস, শাইনার ও গ্যালিলিও প্রত্যেকেরই আংশিকভাবে প্রাপ্য। |
||
== |
== রচনাবলি == |
||
* ''[[সিডেরিয়াস নানসিয়াস]]'' অথবা [[দি স্টারি মেসেঞ্জার]] - [[১৬১০]] |
* ''[[সিডেরিয়াস নানসিয়াস]]'' অথবা [[দি স্টারি মেসেঞ্জার]] - [[১৬১০]] |
||
* ''[[ |
* ''[[লেটা্র্স অন সানস্পট্স]]'' - [[১৬১৩]] |
||
* ''[[লেটার টু গ্র্যান্ড ডাচেস ক্রিস্টিনা]] - [[১৬১৫]] |
* ''[[লেটার টু গ্র্যান্ড ডাচেস ক্রিস্টিনা]] - [[১৬১৫]] |
||
* ''[[দ্য অ্যাসায়ার]]'' (The Assayer) - [[১৬২৩]] |
* ''[[দ্য অ্যাসায়ার]]'' (The Assayer) - [[১৬২৩]] |
||
* ''[[ডায়ালগ |
* ''[[ডায়ালগ কনসার্নিং দ্য টু চিফ ওয়র্ল্ড সিস্টেম্স]]'' - [[১৬৩২]] |
||
* ''[[টু নিউ |
* ''[[টু নিউ সায়েন্সেস]] - [[১৬৩৮]] |
||
* ''[[ডায়াগ্রামা]]'' |
* ''[[ডায়াগ্রামা]]'' |
||
== |
== আরো দেখুন == |
||
* [[মেডিসি]] |
* [[মেডিসি]] |
||
* [[গ্যালিলীয় |
* [[গ্যালিলীয় রূপান্তর]] |
||
* [[ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি]] |
* [[ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি]] |
||
* [[বৈজ্ঞানিক বিপ্লব]] |
* [[বৈজ্ঞানিক বিপ্লব]] |
||
৭৭ নং লাইন: | ৭৮ নং লাইন: | ||
<references/> |
<references/> |
||
== বহির্সংযোগ == |
|||
== বহিঃসংযোগ == |
|||
{{উইকিউক্তি}} |
{{উইকিউক্তি}} |
||
{{কমন্স|Galileo Galilei}} |
{{কমন্স|Galileo Galilei}} |
||
* [http://www-history.mcs.st-andrews.ac.uk/PictDisplay/Galileo.html |
* [http://www-history.mcs.st-andrews.ac.uk/PictDisplay/Galileo.html গ্যালিলিওর চিত্রসমুহ] |
||
* [https://web.archive.org/web/20080329172508/http://asv.vatican.va/en/stud/download/CAV_21.htm গ্যালিলি |
* [https://web.archive.org/web/20080329172508/http://asv.vatican.va/en/stud/download/CAV_21.htm গ্যালিলি গ্যালিলিওর বিচার প্রক্রিয়ার প্রকৃত দলিল] ভ্যাটিক্যান গোপন আর্কাইভ থেকে |
||
* [http://www.catholic.net/rcc/Periodicals/Issues/GalileoAffair.html গ্যালিলিও সম্পর্কে: ক্যাথলিক.নেট] |
* [http://www.catholic.net/rcc/Periodicals/Issues/GalileoAffair.html গ্যালিলিও সম্পর্কে: ক্যাথলিক.নেট] |
||
* [http://galileo.rice.edu/ গ্যালিলিওকে নিয়ে কর্মশালা] রাইস বিশ্ববিদ্যালয় (Rice University) |
* [http://galileo.rice.edu/ গ্যালিলিওকে নিয়ে কর্মশালা] রাইস বিশ্ববিদ্যালয় (Rice University) |
||
* [https://web.archive.org/web/20061205052813/http://pacifier.com/~tpope/ CCD গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপে দেখা ছবি] গ্যালিলিও আসলে |
* [https://web.archive.org/web/20061205052813/http://pacifier.com/~tpope/ CCD গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপে দেখা ছবি] গ্যালিলিও আসলে কী দেখছিলেন তার সম্ভাবনা |
||
{{অসম্পূর্ণ}} |
{{অসম্পূর্ণ}} |
১৭:০৬, ২৯ জুন ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
গ্যালিলিও গ্যালিলি | |
---|---|
জন্ম | ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৫৬৪[১] |
মৃত্যু | জানুয়ারি ৮, ১৬৪২ [১] |
মাতৃশিক্ষায়তন | পিসা বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | গতিবিজ্ঞান দূরবীন সৌর জগৎ |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয় |
গ্যালিলিও গ্যালিলি (ইতালীয় উচ্চারণ: [ɡaliˈlɛːo ɡaliˈlɛi]; জন্ম: ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৫৬৪ - মৃত্যু: ৮ জানুয়ারি, ১৬৪২)[২] একজন ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক যিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সঙ্গে বেশ নিগূঢ়ভাবে সম্পৃক্ত। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতি সাধন যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা রেখেছে, বিভিন্ন ধরনের অনেক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, নিউটনের গতির প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র, এবং কোপারনিকাসের মতবাদের পক্ষে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ।
বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের মতে আধুনিক যুগে প্রকৃতি বিজ্ঞানের এতো বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেননি। তাঁকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক,[৩] আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক[৪] এবং এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক[৫] হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। অ্যারিস্টটলীয় ধারণার অবসানে গ্যালিলিওর আবিষ্কারগুলোই সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা রেখেছে।
জীবনী
গ্যালিলিও ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে ইতালির টুস্কানিতে অবস্থিত পিসা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি গণিতজ্ঞ এবং সংগীতশিল্পী ছিলেন। ভিনসেঞ্জো ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্ম নেন। তার মায়ের নাম গিউলিয়া আমানাতি (Giulia Ammannati)। গ্যালিলিও ছিলেন বাবা মায়ের সাত সন্তানের (কারো কারো মতে ৬) মধ্যে সবার বড়ো। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে তিনি ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবীও ছিলেন।
বেশ অল্প বয়স থেকে গ্যালিলিওর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষার পর তিনি পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হন, কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন সেখানেই তার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়। তার পরেও ১৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার জন্য একটি পদ পান এবং সেখানে গণিত পড়ানো শুরু করেন। এর পরপরই তিনি পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান এবং সেখানকার অনুষদে জ্যামিতি, বলবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। ওই সময়ের মধ্যেই তিনি বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেন এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেন।
গ্যালিলিও এবং মারিনা গ্যামবা তিন সন্তানের জন্ম দেন, কিন্তু তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। গ্যালিলিও একজন নিবেদিত রোমান ক্যাথলিক ছিলেন বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা মেনে নিলে তাঁর বিবাহ বহির্ভূত এই যৌনাচার অনেকটাই অবাস্তব মনে হয়। তাদের দুই মেয়ে (ভার্জিনিয়া ও লিভিয়া) এবং এক ছেলে (ভিনসেঞ্জিও) জন্মেছিল। বিবাহ বহির্ভূত সন্তান উৎপাদনের জন্য তাদের দুই মেয়েকেই স্বল্প বয়সে আরসেট্রিতে অবস্থিত সান মেটিও নামক গির্জায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাদের দুই মেয়েকে বাকি জীবন সেখানেই অতিবাহিত করতে হয়েছিল। কনভেন্টে প্রবেশের পর ভার্জিনিয়া মারিয়া সেলেস্টি নাম ধারণ করে, তিনি-ই ছিলেন গ্যালিলিওর সন্তানদের মধ্যে সবার বড়ো। ভার্জিনিয়া সবচেয়ে আদরের সন্তানও ছিলেন এবং বাবার মেধার খানিকটা উত্তরাধিকার তিনি-ই লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ১৬৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২ এপ্রিল তারিখে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাঁর সমাধি বাসিলিকা ডি সান্তা ক্রস ডি ফিরেঞ্জে গ্যালিলিওর সমাধির পাশেই অবস্থিত। লিভিয়া (জ. ১৬০১) সুওর আরকাঞ্জেলা নাম ধারণ করেন। বড়ো বোনের মতো তিনি কিছু করে দেখাতে পারেননি, জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি অসুস্থ ছিলেন। ছেলে ভিনসেঞ্জিও (জ. ১৬০৬) পরবর্তীতে বৈধ জাত্যাধিকারী হন এবং সেসটিলা বচ্চিনারিককে (Sestilia Bocchineri) বিবাহ করেন।
১৬১২ খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও রোমে গিয়ে অ্যাকাডেমিয়া দেই লিন্সেই-তে যোগ দেন। সেখানে তিনি মূলত সৌর কলঙ্ক পযর্বেক্ষণ করতেন। ওই বছরই কোপারনিকাসের মতবাদের বিরোধী মতবাদ প্রচারিত হয় এবং গ্যালিলিও তা সমর্থন করেন। ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দে সান্তা মারিয়া নভেলার প্রচারবেদিতে দাঁড়িয়ে ফাদার টমাসো কাচ্চিনি (Tommaso Caccini, ১৫৭৪ - ১৬৪৮) ব্যাখ্যা সহকারে পৃথিবীর গতি সম্পর্কে গ্যালিলিওর মতবাদ বর্ণনা করেন। এরপর সেই মতবাদের ভিত্তিতে তাঁর বিচার করেন এবং ঘোষণা করেন যে, এগুলো ভয়ঙ্কর এবং ধর্মদ্রোহীতার শামিল। এধরনের অভিযোগ থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় তিনি রোমে যান। কিন্তু ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দে কার্ডিনাল রবার্ট বেলারমাইন ব্যক্তিগতভাবে তার মামলাটি হাতে নেন এবং তাঁকে হেনস্ত করতে শুরু করেন। ধর্মীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় কোপারনিকাসের তত্ত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ধর্মীয় আইন হিসেবে কোপারনিকান জ্যোতির্বিজ্ঞান পড়তে বা পড়াতে বাধ্য করা হয়। ১৬২২ খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও তাঁর বিখ্যাত বই দ্য অ্যাসাইয়ার (Saggiatore) রচনা করেন যা ১৬২৩ খ্রিস্টাব্দে স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রকাশিত হয়। ১৬২৪ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর প্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন। ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি রোমে ফিরে যান তাঁর রচিত একটি বই প্রকাশের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য। বইটির নাম ছিল ডায়ালগ কনসার্নিং দ্য টু চিফ ওয়র্ল্ড সিস্টেম্স। এটি এই লাইসেন্সের আওতাতেই ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ফ্লোরেন্স থেকে প্রকাশিত হয়। ওই বছরেরই অক্টোবর মাসে তাঁকে রোমের পবিত্র দপ্তরের (Holy Office) সম্মুখীন হতে হয়। কারণ ছিল "Congregation for the Doctrine of the Faith" (বিশ্বাসের উপদেশাবলির জন্য সমাবেশ)। আদালত থেকে তাঁকে একটি দণ্ডাদেশ দেওয়া হয় যার মাধ্যমে তাকে পূর্ববর্তী ধ্যান-ধারণা শপথের মাধ্যমে পরিত্যাগের জন্য বলা হয়। ওই দণ্ডাদেশের কার্যকরতা প্রমাণের জন্যই তাঁকে সিয়েনায় একঘরে জীবন কাটাতে হয়। এর কিছু পর ১৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরে তাঁকে তার নিজ বাড়ি আরসেট্রিতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বড়ো মেয়ের মৃত্যুর পর গ্যালিলিও অনেকটাই ভেঙে পড়েন। বড়ো মেয়ে সিস্টার সেলেস্টি (১৬০০ - ১৬৩৪) তাঁকে সবসময় সঙ্গ দিত, এই অকালমৃত্যুতে তাই গ্যালিলিও হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ। ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও লিডেন থেকে তাঁর সর্বশেষ বই টু নিউ সায়েন্সেস প্রকাশ করেন। আরসেট্রিতে ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে ৮ জানুয়ারি তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার ছাত্র ভিনসেঞ্জো ভিভিয়ানি তাঁর পাশে ছিলেন।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসমূহ
গ্যালিলিও বিজ্ঞানের জগতে পরিমাণগত পরিমাপের পদ্ধতির গোড়াপত্তনে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর এই পরিমাপ ফলগুলো গাণিতিক সূক্ষ্মতার বিচারে উত্তীর্ণ হয়েছিল। একই সময় উইলিয়াম গিলবার্ট চুম্বকত্ব এবং বিদ্যুৎ নিয়ে বেশ কিছু পরিমাণগত অধ্যয়ন করেছিলেন। গ্যালিলিওর বাবা ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি কিছু পরীক্ষা করেছিলেন যার মাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে এ পর্যন্ত জানা মতে প্রথম অরৈখিক সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল। সুর সৃষ্টিকারী যন্ত্রের ওপর এই পরীক্ষা চালিয়ে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, একটি টানা তারের জন্য, পিচ টানের বর্গমূলের সমানুপাতিক।
অবদান
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের আবিষ্কার
১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও স্বাধীনভাবে এবং উন্নত ধরনের দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ ও এই যন্ত্রকে জ্যোতির্বিদ্যায় সার্থকভাবে প্রয়োগ করেন। এর আগে ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজ চশমা নির্মাতা লিপেরশাইম তাঁর নির্মিত এক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের কথা প্রকাশ করেন এবং সেই বছরই এই অদ্ভুত কাচ নির্মিত যন্ত্রের কথা গ্যালিলিওর নিকট পৌঁছে। এসময় তিনি তাঁর এক রচনায় লেখেন: “প্রায় ১০ মাস পূর্বে আমার কাছে সংবাদ পৌঁছে যে জনৈক ওলন্দাজ চশমা নির্মাতা এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন যার দ্বারা দূরবর্তী বস্তুদের নিকটবর্তী বস্তুর মতো স্পষ্ট দেখা যায়। এ খবর পাওয়ামাত্র আমি নিজে কীভাবে এরূপ একটি যন্ত্র নির্মাণ করতে পারি তা চিন্তা করতে লাগলাম।” শীঘ্রই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের নানা উন্নতি সাধন করে গ্যালিলিও দূরবর্তী বস্তুর অন্তত ৩০ গুণ বড়ো করে দেখার ব্যবস্থা করেন।
চাঁদের কলঙ্কের কারণ আবিষ্কার
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে জ্যোতিষ্কদের প্রথম পর্যবেক্ষণের ফল ‘সাইডরিয়াস নানসিয়াস’ বা ‘নক্ষত্র থেকে সংবাদবাহক’ গ্রন্থে লিপিবব্ধ হয় (প্রকাশকাল ১৬১০ খ্রিস্টাব্দ)। চাঁদের পৃষ্ঠের খাদ, ছোটো-বড়ো অনেক দাগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এই গ্রন্থে আলোচিত হয়। ভূপৃষ্ঠের ন্যায় চাঁদের উপরিভাগে যে পাহাড়, পর্বত, উপত্যকা, নদী, গহ্বর, জলাশয় প্রভৃতির দ্বারা গঠিত গ্যালিলিও এইরূপ অভিমত ব্যক্ত করেন। দূরবীক্ষণ যন্ত্রে বড়ো বড়ো কাল দাগ দেখে তিনি তাদের সমুদ্র মনে করেছিলেন, পরে অবশ্য এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।
ছায়াপথ, বিষমতারা, নীহারিকা
খালি চোখে অদৃশ্য অসংখ্য নক্ষত্রের অস্তিত্ব দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে। সে সময় খালি চোখে কৃত্তিকা তারামণ্ডলে মাত্র ৬টি নক্ষত্র দেখা যেত; কিন্তু গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা ৩৬টি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন। সে সময়ের রহস্যময় ছায়াপথ আকাশগঙ্গা পর্যবেক্ষণ করে দেখান যে, তা আসলে অসংখ্য নক্ষত্রের সমষ্টি। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তিনি কিছু বিষমতারা এবং কয়েকটি নীহারিকাও আবিষ্কার করেছিলেন।
বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কার
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে গ্যালিলিও প্রথম পর্যায়ের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পরপর কয়েক রাত বৃহস্পতি গ্রহ পর্যবেক্ষণ করে বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ খুঁজে পান। বৃহস্পতির উপগ্রহের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে, ‘গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতি জ্যোতিষ্করা একমাত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে’, প্রাচীন জ্যোতির্বিদদের এই মতবাদ সত্য নয়।
শনির বলয়
১৬১০ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগে পাদুয়া পরিত্যাগের কিছু পূর্বে গ্যালিলিও শনির বলয় আবিষ্কার করেন।
সৌর কলঙ্ক
১৬১০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে গ্যালিলিও সর্বপ্রথম সূর্যে কতগুলো কালো দাগ পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু ১৬১২ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের পূর্বে তিনি এ আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করেননি। ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী টমাস হ্যারিয়ট, হল্যান্ডের জন ফ্যাব্রিসিয়াস ও জার্মানিতে শাইনার স্বাধীনভাবে সৌরকলঙ্ক পর্যবেক্ষণ করেন, এবং তাদের আবিষ্কারের কথা গ্যালিলিওর আগেই প্রকাশিত হয়। সেই জন্য সৌরকলঙ্ক আবিষ্কারের কৃতিত্ব হ্যারিয়ট, ফ্যাব্রিসিয়াস, শাইনার ও গ্যালিলিও প্রত্যেকেরই আংশিকভাবে প্রাপ্য।
রচনাবলি
- সিডেরিয়াস নানসিয়াস অথবা দি স্টারি মেসেঞ্জার - ১৬১০
- লেটা্র্স অন সানস্পট্স - ১৬১৩
- লেটার টু গ্র্যান্ড ডাচেস ক্রিস্টিনা - ১৬১৫
- দ্য অ্যাসায়ার (The Assayer) - ১৬২৩
- ডায়ালগ কনসার্নিং দ্য টু চিফ ওয়র্ল্ড সিস্টেম্স - ১৬৩২
- টু নিউ সায়েন্সেস - ১৬৩৮
- ডায়াগ্রামা
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ গ ঘ J J O'Connor and E F Robertson। "Galileo Galilei"। The MacTutor History of Mathematics archive। University of St Andrews, Scotland। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-২৪।
- ↑ "Galileo Galilei" in the 1913 Catholic Encyclopedia. @ by John Gerard. Retrieved 11 August 2007
- ↑ Singer, Charles (১৯৪১)। "A Short History of Science to the Nineteenth Century"। Clarendon Press: 217।
- ↑ Weidhorn, Manfred (২০০৫)। The Person of the Millennium: The Unique Impact of Galileo on World History। iUniverse। পৃষ্ঠা 155। আইএসবিএন 0-595-36877-8।
- ↑ Finocchiaro (2007).
বহির্সংযোগ
- গ্যালিলিওর চিত্রসমুহ
- গ্যালিলি গ্যালিলিওর বিচার প্রক্রিয়ার প্রকৃত দলিল ভ্যাটিক্যান গোপন আর্কাইভ থেকে
- গ্যালিলিও সম্পর্কে: ক্যাথলিক.নেট
- গ্যালিলিওকে নিয়ে কর্মশালা রাইস বিশ্ববিদ্যালয় (Rice University)
- CCD গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপে দেখা ছবি গ্যালিলিও আসলে কী দেখছিলেন তার সম্ভাবনা
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |