বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
সংযোগ
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
৩০ নং লাইন: ৩০ নং লাইন:


==প্রথম জীবন==
==প্রথম জীবন==
ডক্টর নাগচৌধুরী বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এলাহাবাদে তিনি প্রভাবশালী আইনজীবী পরমেশ্বর নারায়ণ হাকসরের পাশাপাশি খ্যাতিমান ভারতীয় পদার্থবিদ মেঘনাদ সাহার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন এবং তাঁর গবেষণা দলে যোগ দেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে মেঘনাদ সাহা যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ ক্যাম্পাসে চলে আসেন, নাগচৌধুরীও তাঁর সঙ্গে চলে যান।
ডক্টর নাগচৌধুরী [[কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়|বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং [[এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এলাহাবাদে তিনি প্রভাবশালী আইনজীবী পরমেশ্বর নারায়ণ হাকসরের পাশাপাশি খ্যাতিমান ভারতীয় পদার্থবিদ [[মেঘনাদ সাহা|মেঘনাদ সাহার]] সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি [[মেঘনাদ সাহা|বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার]] সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন এবং তাঁর গবেষণা দলে যোগ দেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে মেঘনাদ সাহা যখন [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ ক্যাম্পাসে চলে আসেন, নাগচৌধুরীও তাঁর সঙ্গে চলে যান।


বিজ্ঞানী সাহার মাধ্যমে তিনি আর্নেস্ট লরেন্সের সংস্পর্শে আসেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর সহায়তায় তিনি নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেটের জন্য ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। তাঁর থিসিস উপদেষ্টা ছিলেন আর্নেস্ট লরেন্স। নাগচৌধুরী ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ডক্টরেট শেষ করে ভারতে ফিরে আসেন।
বিজ্ঞানী সাহার মাধ্যমে তিনি [[আর্নেস্ট লরেন্স|আর্নেস্ট লরেন্সের]] সংস্পর্শে আসেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর সহায়তায় তিনি [[পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান|নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানে]] ডক্টরেটের জন্য ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে [[ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলি|বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে]] চলে আসেন। তাঁর থিসিস উপদেষ্টা ছিলেন [[আর্নেস্ট লরেন্স]]।<ref name=":0" /> নাগচৌধুরী ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ডক্টরেট শেষ করে ভারতে ফিরে আসেন।


===বিবাহ===
===বিবাহ===
৩৯ নং লাইন: ৩৯ নং লাইন:
==কর্মজীবন==
==কর্মজীবন==
===শিক্ষাবিদ এবং গবেষণা===
===শিক্ষাবিদ এবং গবেষণা===
১৯৪১ সালে ডক্টরেট শেষ করার পরে নাগচৌধুরী মেঘমাদ সাহার গবেষণা দলে যোগ দিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে ফিরে আসেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজে অধ্যাপনাকালে যখন সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স (এসআইএনপি) প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন নাগচৌধুরী সেখানে গবেষণার জন্য নিযুক্ত হন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে মেঘনাদ সাহার অবসর গ্রহণের পরে তাঁকে এসআইএনপির পরিচালক হিসেবে মনোনীত করা হয়।
১৯৪১ সালে ডক্টরেট শেষ করার পরে নাগচৌধুরী [[মেঘনাদ সাহা|মেঘমাদ সাহার]] গবেষণা দলে যোগ দিতে [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে ফিরে আসেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজে অধ্যাপনাকালে যখন [[সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স]] (এসআইএনপি) প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন নাগচৌধুরী সেখানে গবেষণার জন্য নিযুক্ত হন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে মেঘনাদ সাহার অবসর গ্রহণের পরে তাঁকে এ[[সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স|সআইএনপির]] পরিচালক হিসেবে মনোনীত করা হয়।


নাগচৌধুরীর গবেষণায় মূল বিষয় ছিল পারমাণবিক আইসোমার, আবেশিত তেজস্ক্রিয়তা, চেরেংকভ রেডিয়েশন এবং নন-থারমাল প্লাজমা। বার্কলেতে ডক্টরেট থাকাকালীন তিনি সাইক্লোট্রন গবেষণার অগ্রগামীদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। ১৯৪১ সালে ভারতে ফিরে আসার পূর্বে মেঘনাদ সাহার সহায়তায় এবং টাটা গ্রুপের অর্থায়নে নাগচৌধুরী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাইক্লোট্রন চৌম্বকের জন্য কিছু অংশ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে, সাইক্লোট্রনের যন্ত্রাংশ বহনকারী দ্বিতীয় জাহাজটি জাপানিরা ডুবিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে মেঘনাদ সাহা এবং পরে নাগচৌধুরীর নেতৃত্বে গবেষণাদলটি বাকি অংশগুলি নিজেরাই তৈরির কাজ গ্রহণ করেছিল। বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরীকে ভারতের প্রথম সাইক্লোট্রন তৈরির জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
নাগচৌধুরীর গবেষণায় মূল বিষয় ছিল পারমাণবিক আইসোমার, আবেশিত তেজস্ক্রিয়তা, চেরেংকভ রেডিয়েশন এবং নন-থারমাল প্লাজমা। বার্কলেতে ডক্টরেট থাকাকালীন তিনি সাইক্লোট্রন গবেষণার অগ্রগামীদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। ১৯৪১ সালে ভারতে ফিরে আসার পূর্বে মেঘনাদ সাহার সহায়তায় এবং টাটা গ্রুপের অর্থায়নে নাগচৌধুরী [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] একটি সাইক্লোট্রন চৌম্বকের জন্য কিছু অংশ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে, সাইক্লোট্রনের যন্ত্রাংশ বহনকারী দ্বিতীয় জাহাজটি জাপানিরা ডুবিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে মেঘনাদ সাহা এবং পরে নাগচৌধুরীর নেতৃত্বে গবেষণাদলটি বাকি অংশগুলি নিজেরাই তৈরির কাজ গ্রহণ করেছিল। বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী ভারতের প্রথম সাইক্লোট্রন তৈরির পথিকৃৎ।


মেঘনাদ সাহার পর ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের পালিত অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন; তিনি ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ১৯৬১-৬২ খ্রিস্টাব্দে [[ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন]]-এ একজন পরিদর্শন অধ্যাপক ছিলেন এবং লিংকন প্রভাষক হিসাবে মনোনীত হন।
মেঘনাদ সাহার পর ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] [[পদার্থবিদ্যার পালিত অধ্যাপক|পদার্থবিজ্ঞানের পালিত অধ্যাপক]] হিসাবে নিযুক্ত হন; তিনি ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ১৯৬১-৬২ খ্রিস্টাব্দে [[ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন]]-এ একজন পরিদর্শন অধ্যাপক ছিলেন এবং লিংকন প্রভাষক হিসাবে মনোনীত হন।


===প্রশাসনিক ক্ষেত্রে===
===প্রশাসনিক ক্ষেত্রে===
নাগচৌধুরীর বিধানচন্দ্র রায় ও পরমেশ্বর নারায়ণ হাকসারের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তিনি ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রিসভা কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন এবং ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেই দায়িত্বভার পালন করেন। এই সময়কালে, তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের (এমওডি) বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা পদের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হন। ১৯৭০-১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ডিআরডিওর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
নাগচৌধুরীর [[বিধানচন্দ্র রায়]] ও পরমেশ্বর নারায়ণ হাকসারের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তিনি ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রিসভা কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন এবং ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেই দায়িত্বভার পালন করেন। এই সময়কালে, তিনি [[প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (ভারত)|প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের]] (এমওডি) বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা পদের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হন। ১৯৭০-১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি [[প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা|ডিআরডিওর]] বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।


পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান, মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সভাপতির ভূমিকা এবং ডিআরডিওর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসাবে তিনি ভারতের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা সম্পর্কে নীতিগত আলোচনায় নিবিড়ভাবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্মাইলিং বুদ্ধ পরীক্ষার জন্য অগ্রসর হলে নাগচৌধুরী পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরিচালনা কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে ডিআরডিওর বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য বিস্ফোরক লেন্স বানানো হয়েছিল। পরীক্ষাটি সফলভাবে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়।
[[পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান|পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের]] ক্ষেত্রে তাঁর অবদান, মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সভাপতির ভূমিকা এবং [[প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা|ডিআরডিওর]] বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসাবে তিনি ভারতের [[স্মাইলিং বুদ্ধ|প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা]] সম্পর্কে নীতিগত আলোচনায় নিবিড়ভাবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী [[ইন্দিরা গান্ধী]] স্মাইলিং বুদ্ধ পরীক্ষার জন্য অগ্রসর হলে নাগচৌধুরী পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরিচালনা কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে ডিআরডিওর বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য বিস্ফোরক লেন্স বানানো হয়েছিল। পরীক্ষাটি সফলভাবে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়।


১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য শ্রেণিবদ্ধ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেন। নাগচৌধুরির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে ''প্রজেক্ট ভ্যালিয়েন্ট''-এর সূচনা করা হয়েছিল। এছাড়া তাঁর উদ্যোগে সংক্ষিপ্ত-পরিসরের ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুতে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর জন্য ''প্রজেক্ট ডেভিল'' প্রকল্পটি [[প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা]] (ডিআরডিএল) পরিচালনা করেছিল। উভয় প্রকল্পই ডিআরডিএল-এর মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং অগ্রগতির অভাবের কারণে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে বন্ধ হয়ে গেলেও তারা ৮০-র দশকের গোড়ার দিকে সফলভাবে [[সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি]]র ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে দূরপাল্লার [[ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র]] তৈরির জন্য শ্রেণিবদ্ধ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেন। নাগচৌধুরির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে ''প্রজেক্ট ভ্যালিয়েন্ট''-এর সূচনা করা হয়েছিল। এছাড়া তাঁর উদ্যোগে সংক্ষিপ্ত-পরিসরের ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুতে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর জন্য ''প্রজেক্ট ডেভিল'' প্রকল্পটি [[প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা]] (ডিআরডিএল) পরিচালনা করেছিল। উভয় প্রকল্পই ডিআরডিএল-এর মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং অগ্রগতির অভাবের কারণে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে বন্ধ হয়ে গেলেও তারা ৮০-র দশকের গোড়ার দিকে সফলভাবে [[সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি]]র ভিত্তি স্থাপন করেছিল।


১৯৭০-৭১ খ্রিস্টাব্দে নাগচৌধুরী একটি কমিটির সভাপতিত্ব করেছিলেন যা ভারতের সামুদ্রিক সুরক্ষা বিষয়াদি পরীক্ষা করে। এই কমিটি ভারতের সুবিশাল উপকূলরেখায় টহল দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা, অবৈধ কার্যকলাপ চিহ্নিতকরণের জন্য উপকূলীয় মাছ ধরার জাহাজের একটি রেজিস্ট্রি স্থাপন এবং অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত জাহাজগুলিকে বাধা দেওয়ার জন্য একটি সক্ষম এবং সুসজ্জিত বাহিনী প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে। পরবর্তীকালে কমিটির সুপারিশের ফলে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে রুস্তমজী কমিটির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, যার ফলে [[ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী]] প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭০-৭১ খ্রিস্টাব্দে নাগচৌধুরী একটি কমিটির সভাপতিত্ব করেছিলেন যা ভারতের সামুদ্রিক সুরক্ষা বিষয়াদি পরীক্ষা করে। এই কমিটি ভারতের সুবিশাল উপকূলরেখায় টহল দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা, অবৈধ কার্যকলাপ চিহ্নিতকরণের জন্য উপকূলীয় মাছ ধরার জাহাজের একটি রেজিস্ট্রি স্থাপন এবং অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত জাহাজগুলিকে বাধা দেওয়ার জন্য একটি সক্ষম এবং সুসজ্জিত বাহিনী প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে। পরবর্তীকালে কমিটির সুপারিশের ফলে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে রুস্তমজী কমিটির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, যার ফলে [[ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী]] প্রতিষ্ঠিত হয়।


==পরবর্তী জীবন==
==পরবর্তী জীবন==
তিনি ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই থেকে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারী পর্যন্ত জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫-১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পরিবেশ পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি দিল্লির [[ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান দিল্লি|ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠানের]] বোর্ড অব গভর্নরসেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তিনি ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই থেকে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারী পর্যন্ত [[জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়|জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের]] (জেএনইউ) উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫-১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পরিবেশ পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি দিল্লির [[ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান দিল্লি|ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠানের]] বোর্ড অব গভর্নরসেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।


নাগচৌধুরী অসংখ্য ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭৬-৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি [[আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান কেন্দ্র|আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান কেন্দ্রের]] বৈজ্ঞানিক কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০-৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় ভৌতিক পরীক্ষাগারের গবেষণা উপদেষ্টা কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের গভর্নর বোর্ডের সদস্য ও সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
নাগচৌধুরী অসংখ্য ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭৬-৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি [[আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান কেন্দ্র|আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান কেন্দ্রের]] বৈজ্ঞানিক কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০-৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় ভৌতিক পরীক্ষাগারের গবেষণা উপদেষ্টা কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের গভর্নর বোর্ডের সদস্য ও সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
৬৬ নং লাইন: ৬৬ নং লাইন:


==পুরস্কার==
==পুরস্কার==
নাগচৌধুরী ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছিলেন।
নাগচৌধুরী ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে [[ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি|ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির]] ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি [[পদ্মবিভূষণ]] পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছিলেন।


==তথ্যসূত্র==
==তথ্যসূত্র==

১৯:০১, ২৫ জুন ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী
জন্ম(১৯১৭-০৯-০৬)৬ সেপ্টেম্বর ১৯১৭[১]
মৃত্যু২৫ জুন ২০০৬(2006-06-25) (বয়স ৮৮)[২]
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তন
পরিচিতির কারণসাইক্লোট্রন গবেষণা
পুরস্কার
  • ১৯৭৫ পদ্মবিভূষণ
  • সম্মানসূচক ডক্টরেট, কানপুর
  • সম্মানসূচক ডক্টরেট, অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্র
প্রতিষ্ঠানসমূহ
ডক্টরাল উপদেষ্টাআর্নেস্ট লরেন্স

বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী (৬ সেপ্টেম্বর ১৯১৭ - ২৫-জুন ২০০৬) একজন ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক। তিনি ভারত সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ভারতে পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের প্রথম সাইক্লোট্রন তৈরির জন্য পরিচিত।

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে নাগচৌধুরী ভারতের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা স্মাইলিং বুদ্ধ পরীক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ভারতের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রোগ্রামের প্রথম সম্ভাব্যতা অধ্যয়নও শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

জন্ম ও পরিবার

নাগচৌধুরি ঢাকা জেলার বারোদি গ্রামে ১৯১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ইউ. সি. নাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ছিলেন।[৩] বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী তাঁর সাত ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন, যার মধ্যে একজন বেশ কম বয়সেই মারা গিয়েছিলেন।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাজনের পর ঢাকায় হিন্দুদের বিরুদ্ধে অত্যাচার শুরু হলে তিনি তাঁর পরিবার সহ ভারতে চলে আসেন। তাঁর বাবা ভারতে এসে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে পদ গ্রহণ করেছিলেন।[৩]

প্রথম জীবন

ডক্টর নাগচৌধুরী বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এলাহাবাদে তিনি প্রভাবশালী আইনজীবী পরমেশ্বর নারায়ণ হাকসরের পাশাপাশি খ্যাতিমান ভারতীয় পদার্থবিদ মেঘনাদ সাহার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন এবং তাঁর গবেষণা দলে যোগ দেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে মেঘনাদ সাহা যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ ক্যাম্পাসে চলে আসেন, নাগচৌধুরীও তাঁর সঙ্গে চলে যান।

বিজ্ঞানী সাহার মাধ্যমে তিনি আর্নেস্ট লরেন্সের সংস্পর্শে আসেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর সহায়তায় তিনি নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেটের জন্য ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। তাঁর থিসিস উপদেষ্টা ছিলেন আর্নেস্ট লরেন্স[৩] নাগচৌধুরী ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ডক্টরেট শেষ করে ভারতে ফিরে আসেন।

বিবাহ

নাগচৌধুরী আগ্রার সেন্ট জনস কলেজের এক অধ্যাপকের কন্যা দীপালি নাগের (জন্ম পদবি: তালুকদার) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দীপালি নাগ একজন প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী ছিলেন।

কর্মজীবন

শিক্ষাবিদ এবং গবেষণা

১৯৪১ সালে ডক্টরেট শেষ করার পরে নাগচৌধুরী মেঘমাদ সাহার গবেষণা দলে যোগ দিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে ফিরে আসেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজে অধ্যাপনাকালে যখন সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স (এসআইএনপি) প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন নাগচৌধুরী সেখানে গবেষণার জন্য নিযুক্ত হন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে মেঘনাদ সাহার অবসর গ্রহণের পরে তাঁকে এসআইএনপির পরিচালক হিসেবে মনোনীত করা হয়।

নাগচৌধুরীর গবেষণায় মূল বিষয় ছিল পারমাণবিক আইসোমার, আবেশিত তেজস্ক্রিয়তা, চেরেংকভ রেডিয়েশন এবং নন-থারমাল প্লাজমা। বার্কলেতে ডক্টরেট থাকাকালীন তিনি সাইক্লোট্রন গবেষণার অগ্রগামীদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। ১৯৪১ সালে ভারতে ফিরে আসার পূর্বে মেঘনাদ সাহার সহায়তায় এবং টাটা গ্রুপের অর্থায়নে নাগচৌধুরী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাইক্লোট্রন চৌম্বকের জন্য কিছু অংশ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে, সাইক্লোট্রনের যন্ত্রাংশ বহনকারী দ্বিতীয় জাহাজটি জাপানিরা ডুবিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে মেঘনাদ সাহা এবং পরে নাগচৌধুরীর নেতৃত্বে গবেষণাদলটি বাকি অংশগুলি নিজেরাই তৈরির কাজ গ্রহণ করেছিল। বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী ভারতের প্রথম সাইক্লোট্রন তৈরির পথিকৃৎ।

মেঘনাদ সাহার পর ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের পালিত অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন; তিনি ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ১৯৬১-৬২ খ্রিস্টাব্দে ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন-এ একজন পরিদর্শন অধ্যাপক ছিলেন এবং লিংকন প্রভাষক হিসাবে মনোনীত হন।

প্রশাসনিক ক্ষেত্রে

নাগচৌধুরীর বিধানচন্দ্র রায় ও পরমেশ্বর নারায়ণ হাকসারের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তিনি ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রিসভা কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন এবং ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেই দায়িত্বভার পালন করেন। এই সময়কালে, তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের (এমওডি) বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা পদের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হন। ১৯৭০-১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ডিআরডিওর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান, মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সভাপতির ভূমিকা এবং ডিআরডিওর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসাবে তিনি ভারতের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা সম্পর্কে নীতিগত আলোচনায় নিবিড়ভাবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্মাইলিং বুদ্ধ পরীক্ষার জন্য অগ্রসর হলে নাগচৌধুরী পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরিচালনা কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে ডিআরডিওর বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য বিস্ফোরক লেন্স বানানো হয়েছিল। পরীক্ষাটি সফলভাবে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়।

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য শ্রেণিবদ্ধ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেন। নাগচৌধুরির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে প্রজেক্ট ভ্যালিয়েন্ট-এর সূচনা করা হয়েছিল। এছাড়া তাঁর উদ্যোগে সংক্ষিপ্ত-পরিসরের ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুতে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর জন্য প্রজেক্ট ডেভিল প্রকল্পটি প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিএল) পরিচালনা করেছিল। উভয় প্রকল্পই ডিআরডিএল-এর মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং অগ্রগতির অভাবের কারণে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে বন্ধ হয়ে গেলেও তারা ৮০-র দশকের গোড়ার দিকে সফলভাবে সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

১৯৭০-৭১ খ্রিস্টাব্দে নাগচৌধুরী একটি কমিটির সভাপতিত্ব করেছিলেন যা ভারতের সামুদ্রিক সুরক্ষা বিষয়াদি পরীক্ষা করে। এই কমিটি ভারতের সুবিশাল উপকূলরেখায় টহল দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা, অবৈধ কার্যকলাপ চিহ্নিতকরণের জন্য উপকূলীয় মাছ ধরার জাহাজের একটি রেজিস্ট্রি স্থাপন এবং অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত জাহাজগুলিকে বাধা দেওয়ার জন্য একটি সক্ষম এবং সুসজ্জিত বাহিনী প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে। পরবর্তীকালে কমিটির সুপারিশের ফলে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে রুস্তমজী কমিটির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, যার ফলে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরবর্তী জীবন

তিনি ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই থেকে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারী পর্যন্ত জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫-১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পরিবেশ পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি দিল্লির ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব গভর্নরসেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

নাগচৌধুরী অসংখ্য ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭৬-৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০-৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় ভৌতিক পরীক্ষাগারের গবেষণা উপদেষ্টা কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের গভর্নর বোর্ডের সদস্য ও সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

তিনি বিভিন্ন ভারতীয় পাবলিক সেক্টর সংস্থার বোর্ডেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড, ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড এবং হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড

তিনি সঙ্গীত ও সংস্কৃতিতে সক্রিয়ভাবে আগ্রহ বজায় রেখেছিলেন। তিনি আইটিসি সঙ্গীত গবেষণা একাডেমির উপদেষ্টা বোর্ডের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

মৃত্যু

২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন সেরিব্রাল ইনফার্কশন জনিত কারণে ডক্টর নাগচৌধুরী মারা যান।

পুরস্কার

নাগচৌধুরী ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র

  1. "Physicists"। Biological Dictionary of Indian Scientists। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৫-১৬ 
  2. "Dr B D Nagchaudhuri passes away"। ITC Sangeet Research Academy। ২২ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১২ 
  3. Anderson, Robert S. (২০১০-০৫-১৫)। Nucleus and Nation: Scientists, International Networks, and Power in India (ইংরেজি ভাষায়)। University of Chicago Press। আইএসবিএন 978-0-226-01977-2