বাংলাদেশ ব্যাংক: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
২০ নং লাইন: ২০ নং লাইন:


== ইতিহাস ==
== ইতিহাস ==
[[বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ|১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে]] বিজয়ের পর [[বাংলাদেশ সরকার]] ঢাকায় অবস্থিত [[স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান|স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের]] ঢাকা শাখাকে বাংলাদেশ ব্যাংক নাম দিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। 'বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২' পাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়।<ref name="bahar" />
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় লাভের পর [[বাংলাদেশ সরকার]] ঢাকায় অবস্থিত স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের ঢাকা শাখাকে বাংলাদেশ ব্যাংক নাম দিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে। ''বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২'' অধ্যাদেশ পাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়।<ref name="bahar" />


১৯৭১ সালে মুজিব সরকার সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থার আদলে অর্থনীতিকে গড়ে তোলার লক্ষে এবং যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশের উন্নয়নার্থে পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহের উদ্দেশ্যে সকল ব্যাংককে জাতীয়করন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকার ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংককে বিজাতীয়করন করে এবং বেসরকারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। ব্যাংকিং খাতকে পূনর্গঠন, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ এবং বেসরকারী পর্যায়ে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষে ১৯৮৬ সালে ''ন্যাশনাল কমিশন অন মানি, ব্যাংকিং এন্ড ক্রেডিট'' নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়। এর পরেও ব্যাংকিং খাত দক্ষ ও কার্যকর হয়ে উঠতে সক্ষম হয় নি।<ref name="bahar">{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|ইউআরএল=|শিরোনাম=Financial Liberalization and Reforms in Bangladesh|শেষাংশ=Bahar|প্রথমাংশ=Habibullah|তারিখ=৯ ডিসেম্বর ২০০৯|সাময়িকী=|প্রকাশক=UNESCAP/UNDP/Royal Monetary Authority of Bhutan|অবস্থান=Thimphu, Bhutan|ইউআরএল-অবস্থা=কার্যকর|সংগ্রহের-তারিখ=১৫ আগস্ট ২০১১}}</ref>
১৯৭১ সালে [[মুজিবনগর সরকার]] সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থার আদলে অর্থনীতিকে গড়ে তোলার লক্ষে এবং যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশের উন্নয়নার্থে পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহের উদ্দেশ্যে সকল ব্যাংককে জাতীয়করন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকার ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংককে বিজাতীয়করন করে এবং বেসরকারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। ব্যাংকিং খাতকে পুনর্গঠন, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ এবং বেসরকারী পর্যায়ে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষে ১৯৮৬ সালে ''ন্যাশনাল কমিশন অন মানি, ব্যাংকিং এন্ড ক্রেডিট'' নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়। যদিও এরপরও ব্যাংকিং খাত দক্ষ ও কার্যকর হয়ে উঠতে সক্ষম হয়নি।<ref name="bahar">{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|ইউআরএল=|শিরোনাম=Financial Liberalization and Reforms in Bangladesh|শেষাংশ=Bahar|প্রথমাংশ=Habibullah|তারিখ=৯ ডিসেম্বর ২০০৯|সাময়িকী=|প্রকাশক=UNESCAP/UNDP/Royal Monetary Authority of Bhutan|অবস্থান=Thimphu, Bhutan|ইউআরএল-অবস্থা=কার্যকর|সংগ্রহের-তারিখ=১৫ আগস্ট ২০১১}}</ref>


== শাখা কার্যালয়সমূহ ==
== শাখা কার্যালয়সমূহ ==

১৭:৪৪, ২৪ জুন ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বাংলাদেশ ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতীক
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতীক
প্রধান কার্যালয়মতিঝিল, ঢাকা
প্রতিষ্ঠিত১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
গভর্নরফজলে কবির
এর কেন্দ্রীয় ব্যাংকবাংলাদেশ
মুদ্রাটাকা
BDT (আইএসও ৪২১৭)
পূর্বসূরিস্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান
ওয়েবসাইটবাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২-এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এটির কার্যনির্বাহী প্রধান গভর্নর হিসাবে আখ্যায়িত। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রেগুলেটরি সংস্থা এবং কার্যতঃ ব্যাংকসমূহের ব্যাংক।[১] রাষ্ট্রের পক্ষে এটি দেশের ব্যাংক এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহেকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশের মুদ্রানীতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিরূপিত হয়। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সংরক্ষণ করে থাকে। এছাড়া এটি বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশী টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করে। ১ টাকা, ২ টাকা এবং ৫ টাকার কাগুজে নোট ব্যতীত সকল কাগুজে নোট মুদ্রণ এবং বাজারে প্রবর্তন এই ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়া এটি সরকারের কোষাগারের দায়িত্বও পালন করে থাকে।

ইতিহাস

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় লাভের পর বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় অবস্থিত স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের ঢাকা শাখাকে বাংলাদেশ ব্যাংক নাম দিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২ অধ্যাদেশ পাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়।[২]

১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থার আদলে অর্থনীতিকে গড়ে তোলার লক্ষে এবং যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশের উন্নয়নার্থে পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহের উদ্দেশ্যে সকল ব্যাংককে জাতীয়করন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকার ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংককে বিজাতীয়করন করে এবং বেসরকারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। ব্যাংকিং খাতকে পুনর্গঠন, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ এবং বেসরকারী পর্যায়ে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষে ১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল কমিশন অন মানি, ব্যাংকিং এন্ড ক্রেডিট নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়। যদিও এরপরও ব্যাংকিং খাত দক্ষ ও কার্যকর হয়ে উঠতে সক্ষম হয়নি।[২]

শাখা কার্যালয়সমূহ

বাংলাদেশ ব্যাংক এর প্রধান কার্যালয় সহ আরও ১০ টি শাখা কার্যালয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। শাখা কার্যালয়গুলো হচ্ছে-[৩][৪]

  1. মতিঝিল
  2. সদরঘাট
  3. বগুড়া
  4. চট্টগ্রাম
  5. রাজশাহী
  6. বরিশাল
  7. খুলনা
  8. সিলেট
  9. রংপুর
  10. ময়মনসিংহ

এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে যেটি বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমী নামে পরিচিত। ট্রেনিং একাডেমীটি ঢাকার মিরপুরের সেকশন-২ এ অবস্থিত।

বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, মতিঝিল, ঢাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজশাহী কার্যালয়, রাজশাহী।
বাংলাদেশ ব্যাংক, রংপুর কার্যালয়, রংপুর।
বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমী, মিরপুর, ঢাকা।

পরিচালনা পর্ষদ

বাংলাদেশ ব্যাংক-এর সার্বিক তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনা ৯ জন ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি পরিচালনা পর্ষদের ওপর অর্পিত আছে। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ গভর্নর, একজন ডেপুটি গভর্নর, তিন জন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং চার জন এমন ব্যক্তি থাকেন যারা ব্যাংকিং, বাণিজ্য, ব্যবসায়, শিল্প অথবা কৃষি খাতে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন তাদের নিয়ে গঠিত হয়। পর্ষদের চেয়ারম্যান হলেন গভর্নর নিজেই। পরিচালনা পর্ষদের সবাই সরকার দ্বারা নির্বাচিত হন। পরিচালনা পর্ষদের সভা প্রতি ছয় মাসে কমপক্ষে একবার অথবা প্রতি তিন মাস অন্তর একবার বসে। সরকার দ্বারা অনুমোদিত গভর্নর পর্ষদের পক্ষে, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কাজের দিক নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা হলেন:[৫]

  1. ফজলে কবির (গভর্নর)
  2. মোঃ আছাদুল ইসলাম
  3. আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম
  4. আব্দুর রউফ তালুকদার
  5. এস এম মনিরুজ্জামান
  6. মাহবুব আহমেদ
  7. এ কে এম আফতাব উল ইসলাম
  8. মোঃ নজরুল হুদা
  9. কাজী সাইদুর রহমান

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলীসমূহ

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে দেশের ব্যাংক এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। 'বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২ এর সেকশন-৭এ[৬] অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলীসমূহ হচ্ছে-

  • মুদ্রানীতি এবং ঋণনীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন;
  • ব্যাংক এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ এবং দেশীয় আর্থিক বাজারের প্রসারর ও উন্নয়ন;
  • দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা;
  • মুদ্রা (ধাতব ও কাগজী মুদ্রা) ইস্যু করা;
  • পেমেন্ট সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান;
  • মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ;
  • ঋণের তথ্য সংগ্রহ করা;
  • বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন করা;
  • আমানত বীমা প্রকল্প পরিচালনা।[৪]

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশনাসমূহ

বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকাশনা, গবেষণাপত্র, প্রতিবেদন, অর্থনৈতিক পর্যালোচনা, আর্থিক ও ব্যাংকিং সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রতিবেদন এবং পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-[৭]

  • বার্ষিক প্রতিবেদন
  • বাংলাদেশ ব্যাংক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন
  • আর্থিক নীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন
  • বিবিটিএ জার্নাল: ব্যাংকিং এবং অর্থায়ন সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা
  • গ্রিন ব্যাংকিং সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন
  • আমদানি রপ্তানি প্রতিবেদন এবং
  • আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদন।

গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে বলা হয় গভর্নর। এ পর্যন্ত ১১জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যাংকের বর্তমান (১১ তম) গভর্নর হলেন ফজলে কবির

বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার ২০০০ সালে চালু হয়।বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে দেশের কয়েকজন প্রসিদ্ধ অর্থনীতিবিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বোর্ড পুরস্কারের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম নিচে উল্লেখ করা হলঃ

সমালোচনা

স্বর্ণ সংরক্ষণে ব্যর্থতা

২০১৮ এর জুলাইতে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে অনিয়ম পাওয়া গিয়েছে- এমনটা দাবী করা হয়। সে প্রতিবেদন অনুসারে; শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর দৈবচয়নের ভিত্তিতে করা অনুসন্ধানী পরীক্ষায় এই অনিয়ম ধরা পড়ে। এই অনিয়মের প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়; সরকারের ১ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৬ টাকা ৬৭ পয়সা ক্ষতির সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনের প্রথম তথ্যসুত্রে উল্লেখ করা হয়েছে; কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তার কথা। তার সোনার একটি গোল চাকতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়। যার ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা এই মর্মে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়, কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, তার মাত্র ৪০ শতাংশের কাছাকাছি সোনা।[১১] এরপর সেদিন বিকালে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন দাবী করেন, স্বর্ণের হিসাবে কোনো হেরফের হয় নি, বরং স্বর্ণকারের বাংলা ৪ ও ইংরেজি ৮ এর মধ্যকার সমস্যা থাকায় এই বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে। এছাড়াও ৯৬৩ কেজি সংক্রান্ত সোনা সংক্রান্ত যে চিঠি শুল্ক বিভাগ দিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রতিউত্তরে আণবিক শক্তি কমিশন দ্বারা এই স্বর্ণ পুনরায় মাপার আহ্বান করে। ব্যাংক নির্বাহী পরিচালকের মতে, যে মানদন্ড শুল্ক বিভাগ ব্যবহার করেছে, তা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।[১২]

রিজার্ভ চুরি

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশে ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৮১০ কোটি টাকা চুরি করে একদন হ্যাকার। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের $৮১ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮১০ কোটি টাকা[১৩]) সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে হ্যাকাররা চুরি করে।[১৪] বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয় চুরি হওয়া অর্থ চলে গিয়েছিল ফিলিপিনের ব্যাংক ও জুয়ার বাজারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, রিজার্ভ চুরির সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরের কেউ-কেউ জড়িত থাকতে পারে।যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক এই অভিযোগ বরাবরই নাকচ করে এসেছে।[১৫] চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত ও দোষীদের খুঁজে বের করতে তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই কমিটি একটি প্রতিবেদন জমা দেয় যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অদক্ষতা ও অবহেলাকেই মূলত দায়ী করা হয়।[১৬] প্রতিবেদনে বলা হয়, রিজার্ভ চুরির তথ্য ২৪ দিন পর্যন্ত সরকারের কাছে গোপন রেখেছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আতিউর রহমান। এতে আরও বলা হয়, অর্থ চুরির তথ্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করার কোনোই যৌক্তিকতা নেই, বরং গর্হিত অপরাধ।[১৭] পরবর্তীতে, ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ। এতে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) সহ ৫টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫জন বেক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।[১৮] পরবর্তীতে জানা যায়, উক্ত মামলা যুক্তরাষ্ট্রের আদালত খারিজ করে দেয়।[১৯] বিভিন্ন সময়ে চুরি যাওয়া অর্থের প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্ধার করতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

রিজার্ভ চুরির প্রতিক্রিয়া হিসেবে, ১৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে পদত্যাগ করেন ব্যাংকের তখনকার গভর্নর আতিউর রহমান[২০] আতিউর রহমানের পদত্যাগের পর দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম ও নাজনীন সুলতানাকেও অব্যাহতি দেয়া হয়।[২১]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "AFI Member Institutions", Alliance for Financial Inclusion, ২০১২-০৮-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা 
  2. Bahar, Habibullah (৯ ডিসেম্বর ২০০৯)। "Financial Liberalization and Reforms in Bangladesh"। Thimphu, Bhutan: UNESCAP/UNDP/Royal Monetary Authority of Bhutan। 
  3. "ময়মনসিংহে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন অফিসের যাত্রা শুরু :: দৈনিক ইত্তেফাক"archive.ittefaq.com.bd (Bengali ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৭ 
  4. "বাংলাদেশ ব্যাংক"bb.org.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৭ 
  5. "Board of Directors"bb.org.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৯ 
  6. "The Bangladesh Bank Order, 1972 (President's Order)"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৯ 
  7. "বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশনাসমূহ"bb.org.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৭ 
  8. "Economist digs deep into rich-poor gap"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১০-০৪-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৫ 
  9. "বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার পেলেন মোজাফ্ফর আহমদ ও স্বদেশ বোস"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৫ 
  10. "বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার পেলেন আজিজুর রহমান ও মাহবুব হোসেন | banglatribune.com"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৫ 
  11. "বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড"। প্রথম আলো। ১৭ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৮ 
  12. "স্বর্ণ সংরক্ষণে হেরফের হয় নি, হয়েছে ইংরেজি-বাংলা বানানে"। বিডি নিউজ। ১৭ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৮ 
  13. "বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির আদ্যোপান্ত"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৬ 
  14. Corkery, Michael (২০১৬-০৫-১২)। "Once Again, Thieves Enter Swift Financial Network and Steal"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৬ 
  15. হোসেন, আকবর (২০১৭-০৩-২৩)। "'রিজার্ভ চুরির হোতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে আছে'"BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৬ 
  16. "বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির আদ্যোপান্ত"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৯ 
  17. "২৪ দিন অর্থ চুরির তথ্য গোপন রাখেন আতিউর রহমান"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৯ 
  18. "রিজার্ভ চুরির চার বছর পার, উদ্ধারের আশা ক্ষীণ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৯ 
  19. ডটকম, নিউজ ডেস্ক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "রিজার্ভ চুরি: মামলায় হারলো বাংলাদেশ ব্যাংক"bangla.bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৯ 
  20. "বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেছেন"BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৯ 
  21. "গভর্নরের পদত্যাগ"সমকাল (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৯ 

বহিঃসংযোগ