হামিদুজ্জামান খান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
++
২৯ নং লাইন: ২৯ নং লাইন:
হামিদুজ্জামান ১৯৪৬ সালে তদানীন্তন [[ব্রিটিশ ভারত]] অধীনস্ত [[বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি]]র (বর্তমান [[বাংলাদেশ]]) [[কিশোরগঞ্জ জেলা]]য় সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সায়েমউদ্দিন খান ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এবং মাতা রাবেয়া খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। হামিদ তার তিন ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। প্রখ্যাত ভারতীয় শিল্পী হেমেন্দ্রনাথ মজুমদারের বাড়ি ছিল সহশ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম গচিহাটায়। হামিদ প্রায়ই সেইবাড়িতে যেতেন এবং হেমেন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। হামিদ প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার নিজ গ্রামের সহশ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবং পরে বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে মেট্রিক পাস করেন। বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে [[নীরদচন্দ্র চৌধুরী]]র ভাইয়ের পুত্র তার সহপাঠী ছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি স্কেচ করতেন। এসময় তিনি তার দাদার একটি ছবি এঁকেছিলেন যা তার দাদার মুখের আকৃতির সাথে মিলে যায়।<ref name="বহুমাত্রিক শিল্পী">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.bd-pratidin.com/various/2015/07/31/96893 |শিরোনাম=বহুমাত্রিক শিল্পী হামিদুজ্জামান খান |কর্ম=[[বাংলাদেশ প্রতিদিন]] |তারিখ=৩১ জুলাই ২০১৫ |সংগ্রহের-তারিখ=২১ মে ২০১৭}}</ref>
হামিদুজ্জামান ১৯৪৬ সালে তদানীন্তন [[ব্রিটিশ ভারত]] অধীনস্ত [[বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি]]র (বর্তমান [[বাংলাদেশ]]) [[কিশোরগঞ্জ জেলা]]য় সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সায়েমউদ্দিন খান ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এবং মাতা রাবেয়া খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। হামিদ তার তিন ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। প্রখ্যাত ভারতীয় শিল্পী হেমেন্দ্রনাথ মজুমদারের বাড়ি ছিল সহশ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম গচিহাটায়। হামিদ প্রায়ই সেইবাড়িতে যেতেন এবং হেমেন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। হামিদ প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার নিজ গ্রামের সহশ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবং পরে বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে মেট্রিক পাস করেন। বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে [[নীরদচন্দ্র চৌধুরী]]র ভাইয়ের পুত্র তার সহপাঠী ছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি স্কেচ করতেন। এসময় তিনি তার দাদার একটি ছবি এঁকেছিলেন যা তার দাদার মুখের আকৃতির সাথে মিলে যায়।<ref name="বহুমাত্রিক শিল্পী">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.bd-pratidin.com/various/2015/07/31/96893 |শিরোনাম=বহুমাত্রিক শিল্পী হামিদুজ্জামান খান |কর্ম=[[বাংলাদেশ প্রতিদিন]] |তারিখ=৩১ জুলাই ২০১৫ |সংগ্রহের-তারিখ=২১ মে ২০১৭}}</ref>


মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ভৈরব কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু এই ধরনের পড়াশোনা তার ভালো লাগত না। তাই তিনি পড়াশুনা ছেড়ে সিলেট চলে যান। পরে তার এলাকার পোস্টমাস্টার তার বাবাকে তার আর্ট কলেজে পড়ার আগ্রহের কথা জানান। তার বাবা তাকে নিয়ে যান [[জয়নুল আবেদীন|শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের]] বাসায়। জয়নুল আবেদীন তাকে আর্ট কলেজে ভর্তি করতে সাহায্য করেন। আর্ট কলেজে হামিদুজ্জামান প্রখ্যাত শিল্পী জয়নুল আবেদিন, [[সফিউদ্দিন আহমেদ]], [[আমিনুল ইসলাম (চিত্রশিল্পী)|আমিনুল ইসলাম]] ও [[মুস্তফা মনোয়ার|মুস্তফা মনোয়ারের]] সান্নিধ্য লাভ করেন। জয়নুল আবেদীন হামিদের জলরঙ প্রশংসা করতেন এবং তাকে উৎসাহিত করেছিলেন জলরঙে অনুশীলনের জন্যে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন বার্মার রাষ্ট্রপতি [[নে উইন]] আর্ট কলেজ পরিদর্শনে এলে জয়নুল আবেদীন তাঁকে হামিদুজ্জামানের অঙ্কিত একটি শিল্পকর্ম উপহার হিসেবে প্রদান করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা আর্ট কলেজ (বর্তমান [[চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এসময় বিশিষ্ঠ শিল্পী [[আবদুর রাজ্জাক (চিত্রশিল্পী)|আবদুর রাজ্জাকের]] নেতৃত্বে আর্ট কলেজে ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ভৈরব কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু এই ধরনের পড়াশোনা তার ভালো লাগত না। তাই তিনি পড়াশুনা ছেড়ে সিলেট চলে যান। পরে তার এলাকার পোস্টমাস্টার তার বাবাকে তার আর্ট কলেজে পড়ার আগ্রহের কথা জানান। তার বাবা তাকে নিয়ে যান [[জয়নুল আবেদীন|শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের]] বাসায়। জয়নুল আবেদীন তাকে আর্ট কলেজে ভর্তি করতে সাহায্য করেন। আর্ট কলেজে হামিদুজ্জামান প্রখ্যাত শিল্পী জয়নুল আবেদিন, [[সফিউদ্দিন আহমেদ]], [[আমিনুল ইসলাম (চিত্রশিল্পী)|আমিনুল ইসলাম]] ও [[মুস্তফা মনোয়ার|মুস্তফা মনোয়ারের]] সান্নিধ্য লাভ করেন। জয়নুল আবেদীন হামিদের জলরঙ প্রশংসা করতেন এবং তাকে উৎসাহিত করেছিলেন জলরঙে অনুশীলনের জন্যে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন বার্মার রাষ্ট্রপতি [[নে উইন]] আর্ট কলেজ পরিদর্শনে এলে জয়নুল আবেদীন তাঁকে হামিদুজ্জামানের অঙ্কিত একটি শিল্পকর্ম উপহার হিসেবে প্রদান করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা আর্ট কলেজ (বর্তমান [[চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এসময় বিশিষ্ঠ শিল্পী [[আবদুর রাজ্জাক (চিত্রশিল্পী)|আবদুর রাজ্জাকের]] নেতৃত্বে আর্ট কলেজে ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।<ref name=DailySun/>


===দুর্ঘটনা এবং ইউরোপ ভ্রমণ===
===দুর্ঘটনা এবং ইউরোপ ভ্রমণ===
ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ১৯৬৭ সালে হামিদুজ্জামান সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। এতে তাঁর মাথার [[করোটি]] ক্ষতিগ্রস্থ হয়। [[ঢাকা মেডিকেল কলেজ|ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের]] তৎকালীন প্রধান সার্জন ডা. আছিরউদ্দিনের পরামর্শে ও সহায়তায় তিনি করোটির অস্ত্রোপচারের জন্যে ১৯৬৯ সালে সমুদ্রপথে যুক্তরাজ্যে যাত্রা করেন। [[ডাকার|ডাকারে]] যাত্রাবিরতিকালে হামিদুজ্জামান আফ্রিকান ঐতিহ্যবাহী দারুশিল্প ও মুখোশ দেখে আকৃষ্ট হন। এছাড়া [[কেপটাউন|কেপটাউনের]] পাথুরে পর্বত, ঝর্ণা ও সমুদ্র তাকে আকৃষ্ট করে। যুক্তরাজ্যে পৌছে হামিদুজ্জামান এডিনবরা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতাল ত্যাগের পর তিনি প্রায় এক মাস [[এডিনবরা|এডিনবরায়]] অবস্থান করেন। এসময় তিনি [[স্কটিশ জাতীয় জাদুঘর]] এবং এডিনবরায় একটি উদ্যানে বিখ্যাত ভাস্কর [[হেনরি মুর|হেনরি মুরের]] ভাস্কর্য দেখে অভিভূত হন। এরপর লন্ডনে তিনি চারমাস অবস্থান করেন। লন্ডনে হামিদুজ্জামান [[ব্রিটিশ মিউজিয়াম]], [[ভিক্টোরিয়া এন্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম]], [[ন্যাশনাল গ্যালারি]] এবং [[টেট গ্যালারি|টেট গ্যালারির]] প্রাচীন ভাস্কর্য, ব্রিটিশ চিত্রশিল্পীদের ছবি ও শিল্পকর্ম দেখেন। টার্নার জন কনস্টেবলের নৈসর্গিক চিত্রকর্ম তাঁকে আকৃষ্ট করে। এডিনবরা ও লন্ডনে আধুনিক শৈলীর ভাস্কর্যে বিমূর্ত আঙ্গিকের প্রভাব, নাগরিক পরিবেশ ও ভূদৃশ্যের নান্দনিক গুণ বৃদ্ধিতে বৃহদায়তন ভাস্কর্যের ব্যবহার হামিদকে বিশেষভাবে ভাস্কর্যের ব্যাপারে আগ্রহী করে। প্যারিসে দুই সপ্তাহ অবস্থানকালে তিনি [[লুভ্‌র জাদুঘর|লুভ্‌র জাদুঘরে]] [[পিকাসো]], [[অঁরি মাতিস|মাতিস]], [[ওগুস্ত রদ্যাঁ|রদ্যাঁ]] প্রমুখ শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখেন। সুইস ভাস্কর [[জিওকোমিতি|জিওকোমিতির]] একক প্রদর্শনী তাঁকে আধুনিক ধাঁচের ভাস্কর্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এছাড়া প্যারিসের উন্মুক্ত অঙ্গনে অসংখ্যা ব্রোঞ্জ ও মার্বেল পাথরের ভাস্কর্য দেখে তিনি অভিভূত হন। এরপর ইতালিতে সেন্ট পিটার্স চার্চে অসংখ্যা ভাস্কর্য এবং বিশেষ করে [[মাইকেলেঞ্জেলো|মাইকেলেঞ্জেলোর]] [[পিয়েতা (মাইকেলেঞ্জেলো)|পিয়েতা]], সিস্টিন চ্যাপেল সিলিং প্রত্যক্ষ করেন। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালি ভ্রমণকালে প্রখ্যাত শিল্পীদের ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম পরিদর্শন হামিদুজ্জামানকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে এবং বিশেষভাবে ভাস্কর্যের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। ১৯৬৯ সালে হামিদ চিকিৎসা ও বিদেশ ভ্রমণ শেষে ঢাকায় ফিরে আসেন। ইতোমধ্যে আর্ট কলেজে প্রখ্যাত শিল্পী [[আবদুর রাজ্জাক (চিত্রশিল্পী)|আবদুর রাজ্জাকের]] নেতৃত্বে ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। হামিদ ভাস্কর্য শেখার ইচ্ছার কথা আবদুর রাজ্জাকের কাছে প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে হামিদ তাঁর শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের অধীনের ছয় মাস ভাস্কর্য শেখেন।<ref name=book1>{{cite book |last=রায় |first=সুমন্ত |authorlink= |date=2008 |title=ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান – জীবন ও কর্ম |page=২৬-৩২ |publisher=ডেলভিস্তা ফাউন্ডেশন}}</ref>
ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ১৯৬৭ সালে হামিদুজ্জামান সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। এতে তাঁর মাথার [[করোটি]] ক্ষতিগ্রস্থ হয়। [[ঢাকা মেডিকেল কলেজ|ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের]] তৎকালীন প্রধান সার্জন ডা. আছিরউদ্দিনের পরামর্শে ও সহায়তায় তিনি করোটির অস্ত্রোপচারের জন্যে ১৯৬৯ সালে সমুদ্রপথে যুক্তরাজ্যে যাত্রা করেন। [[ডাকার|ডাকারে]] যাত্রাবিরতিকালে হামিদুজ্জামান আফ্রিকান ঐতিহ্যবাহী দারুশিল্প ও মুখোশ দেখে আকৃষ্ট হন। এছাড়া [[কেপটাউন|কেপটাউনের]] পাথুরে পর্বত, ঝর্ণা ও সমুদ্র তাকে আকৃষ্ট করে। যুক্তরাজ্যে পৌছে হামিদুজ্জামান এডিনবরা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতাল ত্যাগের পর তিনি প্রায় এক মাস [[এডিনবরা|এডিনবরায়]] অবস্থান করেন। এসময় তিনি [[স্কটিশ জাতীয় জাদুঘর]] এবং এডিনবরায় একটি উদ্যানে বিখ্যাত ভাস্কর [[হেনরি মুর|হেনরি মুরের]] ভাস্কর্য দেখে অভিভূত হন। এরপর লন্ডনে তিনি চারমাস অবস্থান করেন। লন্ডনে হামিদুজ্জামান [[ব্রিটিশ মিউজিয়াম]], [[ভিক্টোরিয়া এন্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম]], [[ন্যাশনাল গ্যালারি]] এবং [[টেট গ্যালারি|টেট গ্যালারির]] প্রাচীন ভাস্কর্য, ব্রিটিশ চিত্রশিল্পীদের ছবি ও শিল্পকর্ম দেখেন। টার্নার জন কনস্টেবলের নৈসর্গিক চিত্রকর্ম তাঁকে আকৃষ্ট করে।<ref name=MasterStroke>{{Cite news |date=2008-03-19 |title=Master Stroke |url=https://www.thedailystar.net/news-detail-28335 |work=The Daily Star|access-date=2020-04-08}}</ref> এডিনবরা ও লন্ডনে আধুনিক শৈলীর ভাস্কর্যে বিমূর্ত আঙ্গিকের প্রভাব, নাগরিক পরিবেশ ও ভূদৃশ্যের নান্দনিক গুণ বৃদ্ধিতে বৃহদায়তন ভাস্কর্যের ব্যবহার হামিদকে বিশেষভাবে ভাস্কর্যের ব্যাপারে আগ্রহী করে। প্যারিসে দুই সপ্তাহ অবস্থানকালে তিনি [[লুভ্‌র জাদুঘর|লুভ্‌র জাদুঘরে]] [[পিকাসো]], [[অঁরি মাতিস|মাতিস]], [[ওগুস্ত রদ্যাঁ|রদ্যাঁ]] প্রমুখ শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখেন। সুইস ভাস্কর [[জিওকোমিতি|জিওকোমিতির]] একক প্রদর্শনী তাঁকে আধুনিক ধাঁচের ভাস্কর্যের প্রতি আকৃষ্ট করে।<ref name=MasterStroke/><ref name=StarMag/><ref name=Jamini>{{Cite news |date=2013-10-13 |title=An Interview with Hamiduzzaman Khan |url=https://issuu.com/bengal-foundation/docs/jamini/8 |work=Jamini|access-date=2020-04-08}}</ref> এছাড়া প্যারিসের উন্মুক্ত অঙ্গনে অসংখ্যা ব্রোঞ্জ ও মার্বেল পাথরের ভাস্কর্য দেখে তিনি অভিভূত হন। এরপর ইতালিতে সেন্ট পিটার্স চার্চে অসংখ্যা ভাস্কর্য এবং বিশেষ করে [[মাইকেলেঞ্জেলো|মাইকেলেঞ্জেলোর]] [[পিয়েতা (মাইকেলেঞ্জেলো)|পিয়েতা]], সিস্টিন চ্যাপেল সিলিং প্রত্যক্ষ করেন। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালি ভ্রমণকালে প্রখ্যাত শিল্পীদের ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম পরিদর্শন হামিদুজ্জামানকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে এবং বিশেষভাবে ভাস্কর্যের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। ১৯৬৯ সালে হামিদ চিকিৎসা ও বিদেশ ভ্রমণ শেষে ঢাকায় ফিরে আসেন। ইতোমধ্যে আর্ট কলেজে প্রখ্যাত শিল্পী [[আবদুর রাজ্জাক (চিত্রশিল্পী)|আবদুর রাজ্জাকের]] নেতৃত্বে ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। হামিদ ভাস্কর্য শেখার ইচ্ছার কথা আবদুর রাজ্জাকের কাছে প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে হামিদ তাঁর শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের অধীনের ছয় মাস ভাস্কর্য শেখেন।<ref name=book1>{{cite book |last=রায় |first=সুমন্ত |authorlink= |date=2008 |title=ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান – জীবন ও কর্ম |page=২৬-৩২ |publisher=ডেলভিস্তা ফাউন্ডেশন}}</ref><ref name=DailySun/>


===ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষালাভ===
===ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষালাভ===
হামিদুজ্জামান খান ১৯৭৩ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারত সরকারের বৃত্তি অর্জন করেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সালে [[বারোদা|বারোদার]] [[মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়|মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে]] শিক্ষা লাভ করেন। বারোদায় হামিদ প্রখ্যাত ভারতীয় শিল্পী ও ভাস্কর রাঘব কানেরিয়া, মাহেন্দ্র পান্ডিয়া, শঙ্ক চৌধুরী, কে. জি. সুব্রামানিয়ানের অধীনে শিক্ষালাভ করেন। বারোদায় পড়াকালীন [[মুম্বই|বোম্বের]] এক প্রদর্শনীতে তার ভাস্কর্য প্রথম পুরস্কার লাভ করে এবং প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী [[মকবুল ফিদা হুসেন|মকবুল ফিদা হুসেনকে]] আকৃষ্ট করে। ১৯৭৬ সালে তিনি বারোদা মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাস্কর্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
হামিদুজ্জামান খান ১৯৭৩ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারত সরকারের বৃত্তি অর্জন করেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সালে [[বারোদা|বারোদার]] [[মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়|মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে]] শিক্ষা লাভ করেন। বারোদায় হামিদ প্রখ্যাত ভারতীয় শিল্পী ও ভাস্কর রাঘব কানেরিয়া, মাহেন্দ্র পান্ডিয়া, শঙ্ক চৌধুরী, কে. জি. সুব্রামানিয়ানের অধীনে শিক্ষালাভ করেন।<ref name=StarMag>{{Cite news |date=2010-10-10 |title=Symbolising Freedom |url=https://www.thedailystar.net/magazine/2010/12/02/art.htm |work=The Daily Star|access-date=2020-04-08}}</ref> বারোদায় পড়াকালীন [[মুম্বই|বোম্বের]] এক প্রদর্শনীতে তার ভাস্কর্য প্রথম পুরস্কার লাভ করে এবং প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী [[মকবুল ফিদা হুসেন|মকবুল ফিদা হুসেনকে]] আকৃষ্ট করে।<ref name=DailySun/> ১৯৭৬ সালে তিনি বারোদা মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাস্কর্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।<ref name=StarMag/>


১৯৮২ থেকে ১৯৮৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের স্কাল্পচার সেন্টার স্কুল থেকে মেটাল কাস্টিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।<ref name="বহুমাত্রিক শিল্পী"/> এসময় নিউ ইয়র্ক সিটিতে হেনরি মুরের একটি ভাস্কর্য প্রদর্শনী দেখে হামিদ প্রভাবিত হন। ১৯৮২ সালে [[বিশ্বব্যাংক]] হামিদুজ্জামানের তিনটি চিত্রকর্ম ক্রয় করে এবং [[ওয়াশিংটন ডি.সি.|ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে]] বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে স্থাপন করে। নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে তিনি যেসব ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলেন, সেগুলো নিয়ে ১৯৮৩ সালে ওয়াশিংটন, ডি.সি.-তে [[বাংলাদেশের দূতাবাস, ওয়াশিংটন, ডি.সি.|বাংলাদেশ দূতাবাসে]] ভাস্কর্য প্রদর্শনী হয়।<ref name=StarMag>{{Cite news |date=2010-10-10 |title=Symbolising Freedom |url=https://www.thedailystar.net/magazine/2010/12/02/art.htm |work=[[দ্য ডেইলি স্টার]]|access-date=2020-04-08}}</ref>
১৯৮২ থেকে ১৯৮৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের স্কাল্পচার সেন্টার স্কুল থেকে মেটাল কাস্টিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।<ref name="বহুমাত্রিক শিল্পী"/> এসময় নিউ ইয়র্ক সিটিতে হেনরি মুরের একটি ভাস্কর্য প্রদর্শনী দেখে হামিদ প্রভাবিত হন।<ref name=NewAge1>{{Cite news |date=2019-04-26 |title=Art through the Years |url=https://www.newagebd.net/print/article/70803 |work=New Age|access-date=2020-04-11}}</ref> ১৯৮২ সালে [[বিশ্বব্যাংক]] হামিদুজ্জামানের তিনটি চিত্রকর্ম ক্রয় করে এবং [[ওয়াশিংটন ডি.সি.|ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে]] বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে স্থাপন করে। নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে তিনি যেসব ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলেন, সেগুলো নিয়ে ১৯৮৩ সালে ওয়াশিংটন, ডি.সি.-তে [[বাংলাদেশের দূতাবাস, ওয়াশিংটন, ডি.সি.|বাংলাদেশ দূতাবাসে]] ভাস্কর্য প্রদর্শনী হয়।<ref name=StarMag/>


==কর্মজীবন==
==কর্মজীবন==
[[File:HK studio 01.jpg|thumb|হামিদুজ্জামান খানের ছবি আঁকার স্টুডিও]]
[[File:HK studio 01.jpg|thumb|হামিদুজ্জামান খানের ছবি আঁকার স্টুডিও]]
ভাস্কর্য চর্চার আগে হামিদুজ্জামান খান [[জলরঙ|জলরঙের]] চিত্রকর্ম প্রদর্শন ও বিক্রয় করে খ্যাতি লাভ করেন। আর্ট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন হামিদের বেশ কিছু জলরঙের চিত্রকর্ম জয়নুল আবেদীন ক্রয় করেন। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম গ্যালারি 'আর্ট অ্যাসেম্বল গ্যালারি'-তে হামিদের একটি জলরঙের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে তাঁর অনেকগুলো চিত্রকর্ম বিক্রয় হয়। এছাড়া ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত হামিদের অঙ্কিত জলরঙের চিত্রকর্ম নিয়ে ১৯৬৯ সালে [[চট্টগ্রাম ক্লাব|চট্টগ্রাম ক্লাবে]] প্রদর্শনী হয় এবং সেই প্রদর্শনীর সবগুলো চিত্রকর্ম চট্টগ্রাম ক্লাব কিনে নেয়। প্রাপ্ত অর্থ বিদেশে চিকিৎসা লাভের ক্ষেত্রে হামিদকে সাহায্য করে।
ভাস্কর্য চর্চার আগে হামিদুজ্জামান খান [[জলরঙ|জলরঙের]] চিত্রকর্ম প্রদর্শন ও বিক্রয় করে খ্যাতি লাভ করেন। আর্ট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন হামিদের বেশ কিছু জলরঙের চিত্রকর্ম জয়নুল আবেদীন ক্রয় করেন। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম গ্যালারি 'আর্ট অ্যাসেম্বল গ্যালারি'-তে হামিদের একটি জলরঙের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে তাঁর অনেকগুলো চিত্রকর্ম বিক্রয় হয়। এছাড়া ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত হামিদের অঙ্কিত জলরঙের চিত্রকর্ম নিয়ে ১৯৬৯ সালে [[চট্টগ্রাম ক্লাব|চট্টগ্রাম ক্লাবে]] প্রদর্শনী হয় এবং সেই প্রদর্শনীর সবগুলো চিত্রকর্ম চট্টগ্রাম ক্লাব কিনে নেয়। প্রাপ্ত অর্থ বিদেশে চিকিৎসা লাভের ক্ষেত্রে হামিদকে সাহায্য করে।<ref name=DailySun>{{Cite news |date=2017-03-10 |title=In Conversation With Hamiduzzaman Khan |url=https://www.daily-sun.com/magazine/details/211036/In-Conversation-With-Hamiduzzaman-Khan/2017-03-10 |work=The Daily Sun |access-date=2020-04-11}}</ref>


===প্রাথমিক কর্মজীবন===
===প্রাথমিক কর্মজীবন===
হামিদুজ্জামান ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে [[বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ|মুক্তিযুদ্ধের]] সময় হামিদ পাকিস্তান সৈন্যদের প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও ছাড়া পান। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার [[নিউ মার্কেট, ঢাকা|নিউ মার্কেট]] এলাকায় হামিদ অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। যুদ্ধের নৃসংশতা এবং বাঙালিদের অভাবনীয় দুর্দশা হামিদকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। ফলে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে প্রথম দুই দশকে ভাস্কর্য হিসেবে তিনি যেসব ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন, সেসবের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় ''একাত্তর স্মরণে'' শিরোনামে নির্মিত হয়। ১৯৭২ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ভাস্কর [[আবদুর রাজ্জাক (চিত্রশিল্পী)|আবদুর রাজ্জাকের]] সাথে তিনি ''[[জাগ্রত চৌরঙ্গী]]'' নামে একটি ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য কাজ করেন। এতে একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গাজীপুরে [[জয়দেবপুর|জয়দেবপুর]] চৌরাস্তার মোড়ে স্থাপিত এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য।
হামিদুজ্জামান ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে [[বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ|মুক্তিযুদ্ধের]] সময় হামিদ পাকিস্তান সৈন্যদের প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও ছাড়া পান। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার [[নিউ মার্কেট, ঢাকা|নিউ মার্কেট]] এলাকায় হামিদ অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। যুদ্ধের নৃসংশতা এবং বাঙালিদের অভাবনীয় দুর্দশা হামিদকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। ফলে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে প্রথম দুই দশকে ভাস্কর্য হিসেবে তিনি যেসব ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন, সেসবের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় ''একাত্তর স্মরণে'' শিরোনামে নির্মিত হয়। ১৯৭২ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ভাস্কর [[আবদুর রাজ্জাক (চিত্রশিল্পী)|আবদুর রাজ্জাকের]] সাথে তিনি ''[[জাগ্রত চৌরঙ্গী]]'' নামে একটি ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য কাজ করেন। এতে একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গাজীপুরে [[জয়দেবপুর|জয়দেবপুর]] চৌরাস্তার মোড়ে স্থাপিত এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য।<ref name=NZ/>
[[বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি]] আয়োজিত প্রথম জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে হামিদ ব্রোঞ্জ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় তৈরি ভাস্কর্য নিয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং শ্রেষ্ঠ ভাস্কর-এর পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর পুরস্কারজয়ী ভাস্কর্যটির নাম ছিল ''দরজা'', এটি একটি ঘরের দরজার কোণায় পড়ে থাকা যুদ্ধে শহীদ মানবদেহের প্রতিকৃতি।
[[বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি]] আয়োজিত প্রথম জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে হামিদ ব্রোঞ্জ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় তৈরি ভাস্কর্য নিয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং শ্রেষ্ঠ ভাস্কর-এর পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর পুরস্কারজয়ী ভাস্কর্যটির নাম ছিল ''দরজা'', এটি একটি ঘরের দরজার কোণায় পড়ে থাকা যুদ্ধে শহীদ মানবদেহের প্রতিকৃতি।<ref name=NewAge1/>


===১৯৮০ থেকে ২০০০===
===১৯৮০ থেকে ২০০০===
বাংলাদেশে হামিদুজ্জামান খান জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতি লাভ করেন [[বঙ্গভবন|বঙ্গভবনের]] প্রবেশপথে ফোয়ারায় স্থাপিত ''পাখি পরিবার'' শীর্ষক ভাস্কর্যের মাধ্যমে। ভাস্কর্যের তিনটি পাখি ব্রাশ পাইপ ও শিট দিয়ে তৈরি এবং গোলাকার বেদী মার্বেল পাথরে মোড়ানো। পাখিগুলোর মাথা মিলে মিনারের মত আকৃতি। হামিদ ভাস্কর্যের ফর্ম বক থেকে নিয়েছিলেন এবং কাজটি করতে তাঁর নয় মাস লেগেছিল। ভাস্কর্যটি স্থাপনের পরে তৎকালীন মন্ত্রি ও সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সেটি পছন্দ করেননি। তাঁরা বলেছিলেন যে সেটি সরিয়ে ফেলা হবে। তবে ফরাসী রাষ্ট্রদূত বঙ্গভবনে কাজের প্রয়োজনে এলে ভাস্কর্যটি লক্ষ্য করে করেন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি [[জিয়াউর রহমান|জিয়াউর রহমানকে]] অবহিত করেন যে সেটি ফ্রান্সের সমকালীন ভাস্কর্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এ ঘটনার পরে হামিদকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ করা হয় এবং মন্ত্রী ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ভাস্কর্যটির প্রশংসা করেন। শিল্প-সমালোচকরা ভাস্কর্যটিকে বাংলাদেশে আধুনিক ভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ উপস্থাপনা বলে আখ্যায়িত করেন। শিল্প সমালোচক [[সৈয়দ আলী আহসান]] তাঁর লিখিত বইয়ে এই কাজটিকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন।
বাংলাদেশে হামিদুজ্জামান খান জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতি লাভ করেন [[বঙ্গভবন|বঙ্গভবনের]] প্রবেশপথে ফোয়ারায় স্থাপিত ''পাখি পরিবার'' শীর্ষক ভাস্কর্যের মাধ্যমে। ভাস্কর্যের তিনটি পাখি ব্রাশ পাইপ ও শিট দিয়ে তৈরি এবং গোলাকার বেদী মার্বেল পাথরে মোড়ানো। পাখিগুলোর মাথা মিলে মিনারের মত আকৃতি। হামিদ ভাস্কর্যের ফর্ম বক থেকে নিয়েছিলেন এবং কাজটি করতে তাঁর নয় মাস লেগেছিল। ভাস্কর্যটি স্থাপনের পরে তৎকালীন মন্ত্রি ও সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সেটি পছন্দ করেননি। তাঁরা বলেছিলেন যে সেটি সরিয়ে ফেলা হবে। তবে ফরাসী রাষ্ট্রদূত বঙ্গভবনে কাজের প্রয়োজনে এলে ভাস্কর্যটি লক্ষ্য করে করেন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি [[জিয়াউর রহমান|জিয়াউর রহমানকে]] অবহিত করেন যে সেটি ফ্রান্সের সমকালীন ভাস্কর্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এ ঘটনার পরে হামিদকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ করা হয় এবং মন্ত্রী ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ভাস্কর্যটির প্রশংসা করেন। শিল্প-সমালোচকরা ভাস্কর্যটিকে বাংলাদেশে আধুনিক ভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ উপস্থাপনা বলে আখ্যায়িত করেন। শিল্প সমালোচক [[সৈয়দ আলী আহসান]] তাঁর লিখিত বইয়ে এই কাজটিকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন।<ref name=DailySun/>


১৯৮১ সালে [[সিলেট|সিলেটের]] জালালাবাদ সেনানিবাসে হামিদের একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বে গঠিত ভাস্কর্যটির নাম ''হামলা''। একই বিষয়বস্তকে কেন্দ্র করে ১৯৮৫ সালে [[বাংলা একাডেমি|বাংলা একাডেমিতে]] ''মুক্তিযোদ্ধা'' শীর্ষক তাঁর আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। হামিদের প্রথম একক প্রদর্শনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ গ্যালারিতে ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত হয়। তাতে প্রধানত তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যসমূহ প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনীতে প্রচুর জনসমাগম ঘটে এবং শিল্প সমালোচক ও সমঝদাররা প্রদর্শনীটির ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ করেন। ১৯৮৬ সালে [[নয়া দিল্লি|নয়া দিল্লীর]] [[ললিত কলা একাডেমি|ললিত কলা একাডেমির]] আয়োজনে ৬ষ্ঠ ত্রিবার্ষিক শিল্প প্রদর্শনীতে হামিদ বাংলাদেশের পক্ষ হতে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নেন। ঢাকার [[আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা|আলিয়ঁস ফ্রসেজ]]-এ ১৯৮৭ সালে হামিদের একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে [[বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি]] আয়োজিত জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে হামিদ শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কার অর্জন করেন। [[ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা| ব্রাহ্মণবাড়িয়ার]] [[আশুগঞ্জ|আশুগঞ্জে]] জিয়া সার কারখানার সম্মুখে ১৯৮৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় তাঁর নির্মিত ''জাগ্রতবাংলা'' শীর্ষক আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়।
১৯৮১ সালে [[সিলেট|সিলেটের]] জালালাবাদ সেনানিবাসে হামিদের একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বে গঠিত ভাস্কর্যটির নাম ''হামলা''। একই বিষয়বস্তকে কেন্দ্র করে ১৯৮৫ সালে [[বাংলা একাডেমি|বাংলা একাডেমিতে]] ''মুক্তিযোদ্ধা'' শীর্ষক তাঁর আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। হামিদের প্রথম একক প্রদর্শনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ গ্যালারিতে ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত হয়। তাতে প্রধানত তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যসমূহ প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনীতে প্রচুর জনসমাগম ঘটে এবং শিল্প সমালোচক ও সমঝদাররা প্রদর্শনীটির ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ করেন।<ref name=NZ>{{cite book |last=Roy |first=Sumanta |authorlink= |date=2008 |title=ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান – জীবন ও কর্ম |page=96-105 |publisher=Delvistaa Foundation}}</ref> ১৯৮৬ সালে [[নয়া দিল্লি|নয়া দিল্লীর]] [[ললিত কলা একাডেমি|ললিত কলা একাডেমির]] আয়োজনে ৬ষ্ঠ ত্রিবার্ষিক শিল্প প্রদর্শনীতে হামিদ বাংলাদেশের পক্ষ হতে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নেন। ঢাকার [[আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা|আলিয়ঁস ফ্রসেজ]]-এ ১৯৮৭ সালে হামিদের একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে [[বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি]] আয়োজিত জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে হামিদ শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কার অর্জন করেন।<ref name=Critics1>{{cite book |last=Roy |first=Sumanta |authorlink= |date=2008 |title=ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান – জীবন ও কর্ম |page=90-94 |publisher=Delvistaa Foundation}}</ref> [[ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা| ব্রাহ্মণবাড়িয়ার]] [[আশুগঞ্জ|আশুগঞ্জে]] জিয়া সার কারখানার সম্মুখে ১৯৮৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় তাঁর নির্মিত ''জাগ্রতবাংলা'' শীর্ষক আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়।<ref>{{Cite news |date=2014-11-07 |title=পাথরের শৈল্পিক রূপকার ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান |url=https://www.bhorerkagoj.com/print-edition/2014/11/07/3343.php |language=[[Bangla (language)|Bangla]] |work=[[Bhorer Kagoj]]|access-date=2020-04-11}}</ref>


হামিদুজ্জামান খান ১৯৮৮ সালে [[দক্ষিণ কোরিয়া|দক্ষিণ কোরিয়ার]] সিউল অলিম্পিক কমিটি থেকে তাঁর একটি ভাস্কর্য স্থায়ীভাবে স্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ পান। ভাস্কর্যটির নাম ''স্টেপস্ (সিড়ি)''। এটি কপার দিয়ে তৈরি, উচ্চতা ১৩ ফুট। সিউল অলিম্পিক পার্কের ভাস্কর্য উদ্যানে একশ পঞ্চাশটি দেশের ভাস্কর্যের পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের অংশগ্রহণ হিসেবে স্থান পায়। [[জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়|জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের]] কেন্দ্রীয় পাঠাগারের সম্মুখে ১৯৮৯ সালে হামিদের ''সংশপ্তক'' নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। মূল ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১২ ফুট এবং বেদীর উচ্চতা ১৩ ফুট। বেদী লাল ইট দ্বারা নির্মিত এবং মূল ভাস্কর্য ব্রোঞ্জের পাত দিয়ে তৈরি। এতে শত্রুর আঘাতে দেহ থেকে একটি হাত ও একটি পা বিচ্ছিন্ন হওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বকে আধুনিক শৈলীতে উপস্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা প্রচণ্ড গতিতে ধাবমান, কোন বাধাই তাকে আটকাতে পারছে না। ''সংশপ্তক'' বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। এই ভাস্কর্যটির অবয়বের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে বিভিন্ন উপাদান ও আঙ্গিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হামিদ ভাস্কর্য স্থাপন করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ২০০৩ সালে ঢাকার পান্থপথে ইউটিসি ভবনের প্রবেশপথের দেয়ালে ''ফ্রিডম ফাইটার (মুক্তিযোদ্ধা)'' শীর্ষক ইস্পাতের ভাস্কর্য। ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার পুয়ো ইন্টারন্যাশনাল মডার্ন স্কাল্পচার সিম্পোজিয়ামে হামিদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই সিম্পোজিয়াম উপলক্ষ্যে তিনি ১০ ফুট উচ্চতার একটি ইস্পাতের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন, যেটি পুয়ো বোদরেক পার্কে স্থাপিত হয়। [[ময়মনসিংহ সেনানিবাস|ময়মনসিংহ সেনানিবাসে]] ১৯৯৯ সালে ''মুক্তিযোদ্ধা'' নামে হামিদের আরেকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য স্থাপিত হয়।
হামিদুজ্জামান খান ১৯৮৮ সালে [[দক্ষিণ কোরিয়া|দক্ষিণ কোরিয়ার]] সিউল অলিম্পিক কমিটি থেকে তাঁর একটি ভাস্কর্য স্থায়ীভাবে স্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ পান। ভাস্কর্যটির নাম ''স্টেপস্ (সিড়ি)''। এটি কপার দিয়ে তৈরি, উচ্চতা ১৩ ফুট।<ref name=way>[http://www.waymarking.com/waymarks/WMD6KG_The_Steps_5066851221_Olympic_Park__Seoul_Korea "The Steps (여정) - Olympic Park - Seoul, Korea - Abstract Public Sculptures on Waymarking.com"].</ref> সিউল অলিম্পিক পার্কের ভাস্কর্য উদ্যানে একশ পঞ্চাশটি দেশের ভাস্কর্যের পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের অংশগ্রহণ হিসেবে স্থান পায়। [[জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়|জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের]] কেন্দ্রীয় পাঠাগারের সম্মুখে ১৯৮৯ সালে হামিদের ''সংশপ্তক'' নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। মূল ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১২ ফুট এবং বেদীর উচ্চতা ১৩ ফুট। বেদী লাল ইট দ্বারা নির্মিত এবং মূল ভাস্কর্য ব্রোঞ্জের পাত দিয়ে তৈরি। এতে শত্রুর আঘাতে দেহ থেকে একটি হাত ও একটি পা বিচ্ছিন্ন হওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বকে আধুনিক শৈলীতে উপস্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা প্রচণ্ড গতিতে ধাবমান, কোন বাধাই তাকে আটকাতে পারছে না। ''সংশপ্তক'' বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।<ref>{{Cite news |date=2020-02-14 |title=Haphazard structures cannot enhance beauty: Hamiduzzaman Khan |url=https://www.newagebd.net/article/99534/haphazard-structures-cannot-enhance-beauty-hamiduzzaman-khan |url-status= |work=The Daily Star|access-date=2020-04-11}}</ref> এই ভাস্কর্যটির অবয়বের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে বিভিন্ন উপাদান ও আঙ্গিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হামিদ ভাস্কর্য স্থাপন করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ২০০৩ সালে ঢাকার পান্থপথে ইউটিসি ভবনের প্রবেশপথের দেয়ালে ''ফ্রিডম ফাইটার (মুক্তিযোদ্ধা)'' শীর্ষক ইস্পাতের ভাস্কর্য। ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার পুয়ো ইন্টারন্যাশনাল মডার্ন স্কাল্পচার সিম্পোজিয়ামে হামিদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই সিম্পোজিয়াম উপলক্ষ্যে তিনি ১০ ফুট উচ্চতার একটি ইস্পাতের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন, যেটি পুয়ো বোদরেক পার্কে স্থাপিত হয়। [[ময়মনসিংহ সেনানিবাস|ময়মনসিংহ সেনানিবাসে]] ১৯৯৯ সালে ''মুক্তিযোদ্ধা'' নামে হামিদের আরেকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য স্থাপিত হয়।<ref name=book1/>


===২০০০ থেকে বর্তমান===
===২০০০ থেকে বর্তমান===

০৬:৩৭, ১৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

হামিদুজ্জামান খান
জন্ম১৯৪৬
জাতীয়তাবাংলাদেশী
মাতৃশিক্ষায়তনঢাকা আর্ট কলেজ (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় )
পুরস্কারএকুশে পদক (২০০৬)
উল্লেখযোগ্য নকশাসংশপ্তক

হামিদুজ্জামান খান হলেন একজন বাংলাদেশী ভাস্কর। তার নকশাকৃত অন্যতম ভাস্কর্য হল সংশপ্তক। তিনি ঢাকা আর্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক এবং বর্তমানে বাংলাদেশ আর্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক।[১] ভাস্কর্যে অবদানের জন্য তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক লাভ করেন।

প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন

হামিদুজ্জামান ১৯৪৬ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারত অধীনস্ত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) কিশোরগঞ্জ জেলায় সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সায়েমউদ্দিন খান ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এবং মাতা রাবেয়া খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। হামিদ তার তিন ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। প্রখ্যাত ভারতীয় শিল্পী হেমেন্দ্রনাথ মজুমদারের বাড়ি ছিল সহশ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম গচিহাটায়। হামিদ প্রায়ই সেইবাড়িতে যেতেন এবং হেমেন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। হামিদ প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার নিজ গ্রামের সহশ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবং পরে বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে মেট্রিক পাস করেন। বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে নীরদচন্দ্র চৌধুরীর ভাইয়ের পুত্র তার সহপাঠী ছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি স্কেচ করতেন। এসময় তিনি তার দাদার একটি ছবি এঁকেছিলেন যা তার দাদার মুখের আকৃতির সাথে মিলে যায়।[২]

মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ভৈরব কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু এই ধরনের পড়াশোনা তার ভালো লাগত না। তাই তিনি পড়াশুনা ছেড়ে সিলেট চলে যান। পরে তার এলাকার পোস্টমাস্টার তার বাবাকে তার আর্ট কলেজে পড়ার আগ্রহের কথা জানান। তার বাবা তাকে নিয়ে যান শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের বাসায়। জয়নুল আবেদীন তাকে আর্ট কলেজে ভর্তি করতে সাহায্য করেন। আর্ট কলেজে হামিদুজ্জামান প্রখ্যাত শিল্পী জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দিন আহমেদ, আমিনুল ইসলামমুস্তফা মনোয়ারের সান্নিধ্য লাভ করেন। জয়নুল আবেদীন হামিদের জলরঙ প্রশংসা করতেন এবং তাকে উৎসাহিত করেছিলেন জলরঙে অনুশীলনের জন্যে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন বার্মার রাষ্ট্রপতি নে উইন আর্ট কলেজ পরিদর্শনে এলে জয়নুল আবেদীন তাঁকে হামিদুজ্জামানের অঙ্কিত একটি শিল্পকর্ম উপহার হিসেবে প্রদান করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা আর্ট কলেজ (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এসময় বিশিষ্ঠ শিল্পী আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আর্ট কলেজে ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।[৩]

দুর্ঘটনা এবং ইউরোপ ভ্রমণ

ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ১৯৬৭ সালে হামিদুজ্জামান সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। এতে তাঁর মাথার করোটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন প্রধান সার্জন ডা. আছিরউদ্দিনের পরামর্শে ও সহায়তায় তিনি করোটির অস্ত্রোপচারের জন্যে ১৯৬৯ সালে সমুদ্রপথে যুক্তরাজ্যে যাত্রা করেন। ডাকারে যাত্রাবিরতিকালে হামিদুজ্জামান আফ্রিকান ঐতিহ্যবাহী দারুশিল্প ও মুখোশ দেখে আকৃষ্ট হন। এছাড়া কেপটাউনের পাথুরে পর্বত, ঝর্ণা ও সমুদ্র তাকে আকৃষ্ট করে। যুক্তরাজ্যে পৌছে হামিদুজ্জামান এডিনবরা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতাল ত্যাগের পর তিনি প্রায় এক মাস এডিনবরায় অবস্থান করেন। এসময় তিনি স্কটিশ জাতীয় জাদুঘর এবং এডিনবরায় একটি উদ্যানে বিখ্যাত ভাস্কর হেনরি মুরের ভাস্কর্য দেখে অভিভূত হন। এরপর লন্ডনে তিনি চারমাস অবস্থান করেন। লন্ডনে হামিদুজ্জামান ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ভিক্টোরিয়া এন্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম, ন্যাশনাল গ্যালারি এবং টেট গ্যালারির প্রাচীন ভাস্কর্য, ব্রিটিশ চিত্রশিল্পীদের ছবি ও শিল্পকর্ম দেখেন। টার্নার জন কনস্টেবলের নৈসর্গিক চিত্রকর্ম তাঁকে আকৃষ্ট করে।[৪] এডিনবরা ও লন্ডনে আধুনিক শৈলীর ভাস্কর্যে বিমূর্ত আঙ্গিকের প্রভাব, নাগরিক পরিবেশ ও ভূদৃশ্যের নান্দনিক গুণ বৃদ্ধিতে বৃহদায়তন ভাস্কর্যের ব্যবহার হামিদকে বিশেষভাবে ভাস্কর্যের ব্যাপারে আগ্রহী করে। প্যারিসে দুই সপ্তাহ অবস্থানকালে তিনি লুভ্‌র জাদুঘরে পিকাসো, মাতিস, রদ্যাঁ প্রমুখ শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখেন। সুইস ভাস্কর জিওকোমিতির একক প্রদর্শনী তাঁকে আধুনিক ধাঁচের ভাস্কর্যের প্রতি আকৃষ্ট করে।[৪][৫][৬] এছাড়া প্যারিসের উন্মুক্ত অঙ্গনে অসংখ্যা ব্রোঞ্জ ও মার্বেল পাথরের ভাস্কর্য দেখে তিনি অভিভূত হন। এরপর ইতালিতে সেন্ট পিটার্স চার্চে অসংখ্যা ভাস্কর্য এবং বিশেষ করে মাইকেলেঞ্জেলোর পিয়েতা, সিস্টিন চ্যাপেল সিলিং প্রত্যক্ষ করেন। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালি ভ্রমণকালে প্রখ্যাত শিল্পীদের ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম পরিদর্শন হামিদুজ্জামানকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে এবং বিশেষভাবে ভাস্কর্যের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। ১৯৬৯ সালে হামিদ চিকিৎসা ও বিদেশ ভ্রমণ শেষে ঢাকায় ফিরে আসেন। ইতোমধ্যে আর্ট কলেজে প্রখ্যাত শিল্পী আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। হামিদ ভাস্কর্য শেখার ইচ্ছার কথা আবদুর রাজ্জাকের কাছে প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে হামিদ তাঁর শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের অধীনের ছয় মাস ভাস্কর্য শেখেন।[৭][৩]

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষালাভ

হামিদুজ্জামান খান ১৯৭৩ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারত সরকারের বৃত্তি অর্জন করেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সালে বারোদার মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেন। বারোদায় হামিদ প্রখ্যাত ভারতীয় শিল্পী ও ভাস্কর রাঘব কানেরিয়া, মাহেন্দ্র পান্ডিয়া, শঙ্ক চৌধুরী, কে. জি. সুব্রামানিয়ানের অধীনে শিক্ষালাভ করেন।[৫] বারোদায় পড়াকালীন বোম্বের এক প্রদর্শনীতে তার ভাস্কর্য প্রথম পুরস্কার লাভ করে এবং প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনকে আকৃষ্ট করে।[৩] ১৯৭৬ সালে তিনি বারোদা মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাস্কর্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[৫]

১৯৮২ থেকে ১৯৮৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের স্কাল্পচার সেন্টার স্কুল থেকে মেটাল কাস্টিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।[২] এসময় নিউ ইয়র্ক সিটিতে হেনরি মুরের একটি ভাস্কর্য প্রদর্শনী দেখে হামিদ প্রভাবিত হন।[৮] ১৯৮২ সালে বিশ্বব্যাংক হামিদুজ্জামানের তিনটি চিত্রকর্ম ক্রয় করে এবং ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে স্থাপন করে। নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে তিনি যেসব ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলেন, সেগুলো নিয়ে ১৯৮৩ সালে ওয়াশিংটন, ডি.সি.-তে বাংলাদেশ দূতাবাসে ভাস্কর্য প্রদর্শনী হয়।[৫]

কর্মজীবন

হামিদুজ্জামান খানের ছবি আঁকার স্টুডিও

ভাস্কর্য চর্চার আগে হামিদুজ্জামান খান জলরঙের চিত্রকর্ম প্রদর্শন ও বিক্রয় করে খ্যাতি লাভ করেন। আর্ট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন হামিদের বেশ কিছু জলরঙের চিত্রকর্ম জয়নুল আবেদীন ক্রয় করেন। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম গ্যালারি 'আর্ট অ্যাসেম্বল গ্যালারি'-তে হামিদের একটি জলরঙের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে তাঁর অনেকগুলো চিত্রকর্ম বিক্রয় হয়। এছাড়া ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত হামিদের অঙ্কিত জলরঙের চিত্রকর্ম নিয়ে ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম ক্লাবে প্রদর্শনী হয় এবং সেই প্রদর্শনীর সবগুলো চিত্রকর্ম চট্টগ্রাম ক্লাব কিনে নেয়। প্রাপ্ত অর্থ বিদেশে চিকিৎসা লাভের ক্ষেত্রে হামিদকে সাহায্য করে।[৩]

প্রাথমিক কর্মজীবন

হামিদুজ্জামান ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হামিদ পাকিস্তান সৈন্যদের প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও ছাড়া পান। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায় হামিদ অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। যুদ্ধের নৃসংশতা এবং বাঙালিদের অভাবনীয় দুর্দশা হামিদকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। ফলে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে প্রথম দুই দশকে ভাস্কর্য হিসেবে তিনি যেসব ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন, সেসবের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় একাত্তর স্মরণে শিরোনামে নির্মিত হয়। ১৯৭২ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সাথে তিনি জাগ্রত চৌরঙ্গী নামে একটি ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য কাজ করেন। এতে একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গাজীপুরে জয়দেবপুর চৌরাস্তার মোড়ে স্থাপিত এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য।[৯] বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত প্রথম জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে হামিদ ব্রোঞ্জ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় তৈরি ভাস্কর্য নিয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং শ্রেষ্ঠ ভাস্কর-এর পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর পুরস্কারজয়ী ভাস্কর্যটির নাম ছিল দরজা, এটি একটি ঘরের দরজার কোণায় পড়ে থাকা যুদ্ধে শহীদ মানবদেহের প্রতিকৃতি।[৮]

১৯৮০ থেকে ২০০০

বাংলাদেশে হামিদুজ্জামান খান জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতি লাভ করেন বঙ্গভবনের প্রবেশপথে ফোয়ারায় স্থাপিত পাখি পরিবার শীর্ষক ভাস্কর্যের মাধ্যমে। ভাস্কর্যের তিনটি পাখি ব্রাশ পাইপ ও শিট দিয়ে তৈরি এবং গোলাকার বেদী মার্বেল পাথরে মোড়ানো। পাখিগুলোর মাথা মিলে মিনারের মত আকৃতি। হামিদ ভাস্কর্যের ফর্ম বক থেকে নিয়েছিলেন এবং কাজটি করতে তাঁর নয় মাস লেগেছিল। ভাস্কর্যটি স্থাপনের পরে তৎকালীন মন্ত্রি ও সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সেটি পছন্দ করেননি। তাঁরা বলেছিলেন যে সেটি সরিয়ে ফেলা হবে। তবে ফরাসী রাষ্ট্রদূত বঙ্গভবনে কাজের প্রয়োজনে এলে ভাস্কর্যটি লক্ষ্য করে করেন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অবহিত করেন যে সেটি ফ্রান্সের সমকালীন ভাস্কর্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এ ঘটনার পরে হামিদকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ করা হয় এবং মন্ত্রী ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ভাস্কর্যটির প্রশংসা করেন। শিল্প-সমালোচকরা ভাস্কর্যটিকে বাংলাদেশে আধুনিক ভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ উপস্থাপনা বলে আখ্যায়িত করেন। শিল্প সমালোচক সৈয়দ আলী আহসান তাঁর লিখিত বইয়ে এই কাজটিকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন।[৩]

১৯৮১ সালে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে হামিদের একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বে গঠিত ভাস্কর্যটির নাম হামলা। একই বিষয়বস্তকে কেন্দ্র করে ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমিতে মুক্তিযোদ্ধা শীর্ষক তাঁর আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। হামিদের প্রথম একক প্রদর্শনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ গ্যালারিতে ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত হয়। তাতে প্রধানত তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যসমূহ প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনীতে প্রচুর জনসমাগম ঘটে এবং শিল্প সমালোচক ও সমঝদাররা প্রদর্শনীটির ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ করেন।[৯] ১৯৮৬ সালে নয়া দিল্লীর ললিত কলা একাডেমির আয়োজনে ৬ষ্ঠ ত্রিবার্ষিক শিল্প প্রদর্শনীতে হামিদ বাংলাদেশের পক্ষ হতে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নেন। ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রসেজ-এ ১৯৮৭ সালে হামিদের একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে হামিদ শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কার অর্জন করেন।[১০] ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে জিয়া সার কারখানার সম্মুখে ১৯৮৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় তাঁর নির্মিত জাগ্রতবাংলা শীর্ষক আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়।[১১]

হামিদুজ্জামান খান ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল অলিম্পিক কমিটি থেকে তাঁর একটি ভাস্কর্য স্থায়ীভাবে স্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ পান। ভাস্কর্যটির নাম স্টেপস্ (সিড়ি)। এটি কপার দিয়ে তৈরি, উচ্চতা ১৩ ফুট।[১২] সিউল অলিম্পিক পার্কের ভাস্কর্য উদ্যানে একশ পঞ্চাশটি দেশের ভাস্কর্যের পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের অংশগ্রহণ হিসেবে স্থান পায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগারের সম্মুখে ১৯৮৯ সালে হামিদের সংশপ্তক নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। মূল ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১২ ফুট এবং বেদীর উচ্চতা ১৩ ফুট। বেদী লাল ইট দ্বারা নির্মিত এবং মূল ভাস্কর্য ব্রোঞ্জের পাত দিয়ে তৈরি। এতে শত্রুর আঘাতে দেহ থেকে একটি হাত ও একটি পা বিচ্ছিন্ন হওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বকে আধুনিক শৈলীতে উপস্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা প্রচণ্ড গতিতে ধাবমান, কোন বাধাই তাকে আটকাতে পারছে না। সংশপ্তক বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।[১৩] এই ভাস্কর্যটির অবয়বের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে বিভিন্ন উপাদান ও আঙ্গিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হামিদ ভাস্কর্য স্থাপন করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ২০০৩ সালে ঢাকার পান্থপথে ইউটিসি ভবনের প্রবেশপথের দেয়ালে ফ্রিডম ফাইটার (মুক্তিযোদ্ধা) শীর্ষক ইস্পাতের ভাস্কর্য। ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার পুয়ো ইন্টারন্যাশনাল মডার্ন স্কাল্পচার সিম্পোজিয়ামে হামিদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই সিম্পোজিয়াম উপলক্ষ্যে তিনি ১০ ফুট উচ্চতার একটি ইস্পাতের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন, যেটি পুয়ো বোদরেক পার্কে স্থাপিত হয়। ময়মনসিংহ সেনানিবাসে ১৯৯৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা নামে হামিদের আরেকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য স্থাপিত হয়।[৭]

২০০০ থেকে বর্তমান

শৈল্পিক ধারা

ব্যক্তিগত জীবন

হামিদুজ্জামান খান ১৯৭৬ সালে আইভি জামানকে বিয়ে করেন। আইভি জামান চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগ থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন। পেশাগতভাবে তিনি একজন শিল্পী ও ভাস্কর।[১৪] তাদের দুই ছেলে রয়েছে, জুবায়ের জামান খান কপার এবং জারিফ হামিদুজ্জামান।[১৫]

সম্মাননা

  • ভাস্কর্যে অবদানের জন্য ২০০৬ সালে একুশে পদক
  • ১৯৭৬ সালে জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কারের প্রথম পুরস্কার।[১৬]

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

  1. "Hamiduzzaman Khan"Dhaka Art Center। ২৪ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭ 
  2. "বহুমাত্রিক শিল্পী হামিদুজ্জামান খান"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৩১ জুলাই ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭ 
  3. "In Conversation With Hamiduzzaman Khan"The Daily Sun। ২০১৭-০৩-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১ 
  4. "Master Stroke"The Daily Star। ২০০৮-০৩-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৮ 
  5. "Symbolising Freedom"The Daily Star। ২০১০-১০-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৮ 
  6. "An Interview with Hamiduzzaman Khan"Jamini। ২০১৩-১০-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৮ 
  7. রায়, সুমন্ত (২০০৮)। ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান – জীবন ও কর্ম। ডেলভিস্তা ফাউন্ডেশন। পৃষ্ঠা ২৬-৩২। 
  8. "Art through the Years"New Age। ২০১৯-০৪-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১ 
  9. Roy, Sumanta (২০০৮)। ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান – জীবন ও কর্ম। Delvistaa Foundation। পৃষ্ঠা 96-105। 
  10. Roy, Sumanta (২০০৮)। ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান – জীবন ও কর্ম। Delvistaa Foundation। পৃষ্ঠা 90-94। 
  11. "পাথরের শৈল্পিক রূপকার ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান"Bhorer Kagoj (Bangla ভাষায়)। ২০১৪-১১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১ 
  12. "The Steps (여정) - Olympic Park - Seoul, Korea - Abstract Public Sculptures on Waymarking.com".
  13. "Haphazard structures cannot enhance beauty: Hamiduzzaman Khan"The Daily Star। ২০২০-০২-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১ 
  14. "বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে 'সাহসী ভাস্কর্যের ভুবন' শীর্ষক ভাস্কর আইভি জামানের একক ভাস্কর্য ও পেইন্টিং প্রদর্শনীর আয়োজন"বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। ২৫ জুন ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০২০ 
  15. "মা সে তো পরম বন্ধু"ইত্তেফাক। ৮ মে ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০২০ 
  16. "পাথরের শৈল্পিক রূপকার ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান : আবুল কালাম আজাদ"ভোরের কাগজ। ৭ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭