ওরিয়েন্টালিজম (গ্রন্থ): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
হটক্যাটের মাধ্যমে বিষয়শ্রেণী:রাজনৈতিক বই যোগ
Mosesheron (আলোচনা | অবদান)
'Orientalism' পরিভাষাটির মোটামুটি কাছাকাছি অনুবাদ হতে পারে 'প্রাচ্যতত্ত্ব'। বেশিরভাগ নির্ভরযোগ্য বাঙ্গালি লেখক এর অনুবাদ 'প্রাচ্যতত্ত্ব'ই করেছেন। 'প্রাচ্যবাদ' শব্দটি নেহাতই একটা ভুল অর্থ প্রদান করে। এটা কোনোমতেই Orientalism বোঝায় না। শব্দটিকে তাই 'প্রাচ্যতত্ত্ব' দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হলো।
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
'''''ওরিয়েন্টালিজম''''' (Orientalism) হচ্ছে এডওয়ার্ড ডব্লিউ. সাঈদ এর লেখা ১৯৭৮ সালের একটি গ্রন্থ, যেখানে লেখক প্রাচ্যবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখানে প্রাচ্যবাদ বলতে লেখক বুঝিয়েছেন সেই মনোভাবকে যার দ্বারা পাশ্চাত্য প্রাচ্যকে, প্রাচ্যের সমাজকে ও প্রাচ্যের জনগণকে দেখে থাকে। এখানে প্রাচ্য বলতে লেখক এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যকে বুঝিয়েছেন। সাঈদ এর মতে, প্রাচ্যবাদ এর মনোভাবটি শক্তভাবে সাম্রাজ্যবাদী সমাজগুলোর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যেগুলো সাম্রাজ্যবাদকে তৈরি করেছে, এবং যারা রাজনৈতিকভাবে ও ক্ষমতা-সম্পর্কিতভাবে প্রাচ্যবাদ এর কাজ করে চলেছে বা টিকিয়ে রাখছে।<ref>''The New Fontana Dictionary of Modern Thought'', Third Edition. (1999) p. 617.</ref>
'''''ওরিয়েন্টালিজম''''' (Orientalism) হচ্ছে এডওয়ার্ড ডব্লিউ. সাঈদ এর লেখা ১৯৭৮ সালের একটি গ্রন্থ, যেখানে লেখক [[প্রাচ্যতত্ত্ব]] নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখানে প্রাচ্যতত্ত্ব বলতে লেখক বুঝিয়েছেন সেই মনোভাবকে যার দ্বারা পাশ্চাত্য প্রাচ্যকে, প্রাচ্যের সমাজকে ও প্রাচ্যের জনগণকে দেখে থাকে। এখানে প্রাচ্য বলতে লেখক এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যকে বুঝিয়েছেন। সাঈদ এর মতে, প্রাচ্যবাদ এর মনোভাবটি শক্তভাবে সাম্রাজ্যবাদী সমাজগুলোর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যেগুলো সাম্রাজ্যবাদকে তৈরি করেছে, এবং যারা রাজনৈতিকভাবে ও ক্ষমতা-সম্পর্কিতভাবে প্রাচ্যবাদ এর কাজ করে চলেছে বা টিকিয়ে রাখছে।<ref>''The New Fontana Dictionary of Modern Thought'', Third Edition. (1999) p. 617.</ref>


সাঈড এর মতে, মধ্যপ্রাচ্যে শাসক আরব সম্ভ্রান্তদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা নির্দেশ করছে যে তারা সাম্রাজ্যবাদের অধস্তন শাসনকর্তা হিসেবে কাজ করছে, এবং তারা ফরাসী, ইংরেজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রাচ্যবাদীদের দ্বারা তৈরিকৃত আরব সংস্কৃতিকে ধারণ ও বহন করছে। উদাহরণ হিসেবে জোসেফ কনরাড এর ঐপনিবেশিক সাহিত্যের বিশ্লেষণ এর কথা বলা যেতে পারে, যেখানে একটি জনগোষ্ঠী, একটি সময় ও একটি স্থানকে একটি বিদেশী অঞ্চলের ঘটনা ও অভিযান এর দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন।<ref>''The Johns Hopkins Guide to Literary Theory and Criticism'', Third Edition (1994), pp. 642.</ref>
সাঈড এর মতে, মধ্যপ্রাচ্যে শাসক আরব সম্ভ্রান্তদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা নির্দেশ করছে যে তারা সাম্রাজ্যবাদের অধস্তন শাসনকর্তা হিসেবে কাজ করছে, এবং তারা ফরাসী, ইংরেজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রাচ্যবাদীদের দ্বারা তৈরিকৃত আরব সংস্কৃতিকে ধারণ ও বহন করছে। উদাহরণ হিসেবে জোসেফ কনরাড এর ঐপনিবেশিক সাহিত্যের বিশ্লেষণ এর কথা বলা যেতে পারে, যেখানে একটি জনগোষ্ঠী, একটি সময় ও একটি স্থানকে একটি বিদেশী অঞ্চলের ঘটনা ও অভিযান এর দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন।<ref>''The Johns Hopkins Guide to Literary Theory and Criticism'', Third Edition (1994), pp. 642.</ref>


এই গ্রন্থ উল্লিখিত প্রাচ্যবাদে উত্তর-আধুনিকতাবাদের প্রয়োগ সাংস্কৃতিক সমালোচনা নামে একটি সাহিতিক তত্ত্বের বিকাশ ঘটেছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য পাঠ নামে একটি শাখা তোইরি হয়েছে যেখানে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে শিক্ষায়তনিক গণ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক তদন্ত, পরীক্ষণ, বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করেন।<ref name="newhumanist">Stephen Howe, [http://newhumanist.org.uk/1908 "Dangerous mind?"], ''New Humanist'', Vol. 123, November/December 2008</ref> সাঈদের প্রাচ্যবাদ নিয়ে কাজটি উত্তর-উপনিবেশী সাংস্কৃতিক পাঠ এর ভিত্তি তৈরি করেছে, যেখানে প্রাচ্যবাদ নিয়ে ও বিভিন্ন দেশের উত্তর-উপনিবেশী সময়ের ইতিহাস নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।<ref>''The Johns Hopkins Guide to Literary Theory and Criticism'', Third Edition (1994), pp. 642–43, 581–83</ref>
এই গ্রন্থ উল্লিখিত প্রাচ্যতত্ত্বে উত্তর-আধুনিকতাবাদের প্রয়োগ সাংস্কৃতিক সমালোচনা নামে একটি সাহিতিক তত্ত্বের বিকাশ ঘটেছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য পাঠ নামে একটি শাখা তোইরি হয়েছে যেখানে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে শিক্ষায়তনিক গণ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক তদন্ত, পরীক্ষণ, বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করেন।<ref name="newhumanist">Stephen Howe, [http://newhumanist.org.uk/1908 "Dangerous mind?"], ''New Humanist'', Vol. 123, November/December 2008</ref> সাঈদের প্রাচ্যবাদ নিয়ে কাজটি উত্তর-উপনিবেশী সাংস্কৃতিক পাঠ এর ভিত্তি তৈরি করেছে, যেখানে প্রাচ্যবাদ নিয়ে ও বিভিন্ন দেশের উত্তর-উপনিবেশী সময়ের ইতিহাস নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।<ref>''The Johns Hopkins Guide to Literary Theory and Criticism'', Third Edition (1994), pp. 642–43, 581–83</ref>


একজন গণ বুদ্ধিজীবী হিসেবে এডওয়ার্ড সাঈদ এরিয়া স্টাডিস এর ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতদের সাথে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বারনার্ড লুইস, যিনি সাঈদ এর প্রাচ্যবাদ নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধটিকে "পাশ্চাত্য-বিরোধী" বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।<ref>Oleg Grabar, Edward Said, Bernard Lewis, [http://www.nybooks.com/articles/6517 "Orientalism: An Exchange"], ''New York Review of Books'', Vol. 29, No. 13. 12 August 1982. Accessed 4 January 2010.</ref> ''ওরিয়েন্টালিজম'' এর পরের সংস্করণগুলোতে সাঈদ একটি "আফটারওয়ার্ড" (১৯৯৫)<ref>Orientalism: "Afterword" pp. 329–352.</ref> এবং একটি "মুখবন্ধ" (২০০৩)<ref>Orientalism: "Preface," pp. xi-xxiii.</ref> যোগ করেন, যেখানে তিনি সাংস্কৃতিক সমালোচনা হিসেবে তার লেখা ও বিষয়বস্তুর সমালোচনা নিয়ে লেখেন।
একজন গণ বুদ্ধিজীবী হিসেবে এডওয়ার্ড সাঈদ এরিয়া স্টাডিস এর ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতদের সাথে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বারনার্ড লুইস, যিনি সাঈদ এর প্রাচ্যতত্ত্ব নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধটিকে "পাশ্চাত্য-বিরোধী" বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।<ref>Oleg Grabar, Edward Said, Bernard Lewis, [http://www.nybooks.com/articles/6517 "Orientalism: An Exchange"], ''New York Review of Books'', Vol. 29, No. 13. 12 August 1982. Accessed 4 January 2010.</ref> ''ওরিয়েন্টালিজম'' এর পরের সংস্করণগুলোতে সাঈদ একটি "আফটারওয়ার্ড" (১৯৯৫)<ref>Orientalism: "Afterword" pp. 329–352.</ref> এবং একটি "মুখবন্ধ" (২০০৩)<ref>Orientalism: "Preface," pp. xi-xxiii.</ref> যোগ করেন, যেখানে তিনি সাংস্কৃতিক সমালোচনা হিসেবে তার লেখা ও বিষয়বস্তুর সমালোচনা নিয়ে লেখেন।


== গ্রন্থের বিষয়বস্তু ==
== গ্রন্থের বিষয়বস্তু ==
প্রাচ্যবাদ হচ্ছে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সমাজ এর মধ্যকার পার্থক্যকে বাড়িয়ে দেখানো, পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠত্বকে ধরে নেয়া, এবং প্রাচ্য সম্পর্কিত গতানুগতিক বিশ্লেষণী মডেলগুলোর প্রয়োগ। যেমন প্রাচ্যবাদ হচ্ছে ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক প্রতিফলন এর উৎস্য যা প্রাচ্য সম্পর্কে পাশ্চাত্যের চিন্তাধারা ও বোধ এর ভিত্তি তৈরি করে, আর এটি বিশেষ করে দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে।
প্রাচ্যতত্ত্ব হচ্ছে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সমাজ এর মধ্যকার পার্থক্যকে বাড়িয়ে দেখানো, পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠত্বকে ধরে নেয়া, এবং প্রাচ্য সম্পর্কিত গতানুগতিক বিশ্লেষণী মডেলগুলোর প্রয়োগ। যেমন প্রাচ্যতত্ত্ব হচ্ছে ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক প্রতিফলন এর উৎস্য যা প্রাচ্য সম্পর্কে পাশ্চাত্যের চিন্তাধারা ও বোধ এর ভিত্তি তৈরি করে, আর এটি বিশেষ করে দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে।


"প্রাচ্যবাদ" শব্দটি অন্তত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু আন্তঃসম্পর্কিত অর্থ প্রকাশ করে: (১) একটি শিক্ষায়তনিক ঐতিহ্য বা শাখা; (২) প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সত্তাতাত্ত্বিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিনিধিত্ব, এবং চিন্তার রীতি; এবং (৩) কর্তৃত্ব বা আধিপত্যের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরঞ্জাম।<ref name=":1">Said, Edward. ''Orientalism'' (1978) pp. 2-3.</ref>
"প্রাচ্যতত্ত্ব" শব্দটি অন্তত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু আন্তঃসম্পর্কিত অর্থ প্রকাশ করে: (১) একটি শিক্ষায়তনিক ঐতিহ্য বা শাখা; (২) প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সত্তাতাত্ত্বিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিনিধিত্ব, এবং চিন্তার রীতি; এবং (৩) কর্তৃত্ব বা আধিপত্যের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরঞ্জাম।<ref name=":1">Said, Edward. ''Orientalism'' (1978) pp. 2-3.</ref>


প্রাচ্যবাদের মূল নীতি হচ্ছে "আরব-ইসলামী জনগোষ্ঠী এবং তাদের সংস্কৃতি নিয়ে সূক্ষ্ম ও স্থায়ী ইউরোপকেন্দ্রিক পূর্বসংস্কার", যা প্রাচ্য (সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব) নিয়ে পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি হয়েছে, এবং প্রাচ্যকে "প্রাচ্যের জনগোষ্ঠী" ও "প্রাচ্যের অঞ্চল" এর মত কাল্পনিক সারসত্তায় সংকুচিত ও রূপান্তরিত করে। এরকম সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্বই অ-পাশ্চাত্য জনগোষ্ঠী নিয়ে পাশ্চাত্য জনগোষ্ঠীর ডিসকোর্স বা আলোচনায় প্রাধান্য বিস্তার করে আছে।
প্রাচ্যতত্ত্বের মূল নীতি হচ্ছে "আরব-ইসলামী জনগোষ্ঠী এবং তাদের সংস্কৃতি নিয়ে সূক্ষ্ম ও স্থায়ী ইউরোপকেন্দ্রিক পূর্বসংস্কার", যা প্রাচ্য (সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব) নিয়ে পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি হয়েছে, এবং প্রাচ্যকে "প্রাচ্যের জনগোষ্ঠী" ও "প্রাচ্যের অঞ্চল" এর মত কাল্পনিক সারসত্তায় সংকুচিত ও রূপান্তরিত করে। এরকম সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্বই অ-পাশ্চাত্য জনগোষ্ঠী নিয়ে পাশ্চাত্য জনগোষ্ঠীর ডিসকোর্স বা আলোচনায় প্রাধান্য বিস্তার করে আছে।


এই সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব সাধারণত "প্রাচ্য"-কে পাশ্চাত্যের তুলনায় আদিম, অযৌক্তিক, সহিংস, সার্বভৌম, ধর্মান্ধ, এবং অন্তর্নিহিতভাবে নিকৃষ্ট বলে মনে করে, আর তাই, "আলোকপ্রাপ্তি" ("enlightenment") তখনই সম্ভব হবে যখন "গতানুগতিক" এবং "প্রতিক্রিয়াশীল" মূল্যবোধগুলো "সমসাময়িক" এবং "প্রগতিশীল" চিন্তাধারার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে, সেগুলো পাশ্চাত্যই হোক বা পাশ্চাত্য-প্রভাবিতই হোক।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Marandi|প্রথমাংশ=S.M.|তারিখ=2009|শিরোনাম=Constructing an Axis of Evil: Iranian Memoirs in the "Land of the Free"|ইউআরএল=|সাময়িকী=The American Journal of Islamic Social Sciences|খণ্ড=|পাতাসমূহ=24|মাধ্যম=}}</ref>
এই সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব সাধারণত "প্রাচ্য"-কে পাশ্চাত্যের তুলনায় আদিম, অযৌক্তিক, সহিংস, সার্বভৌম, ধর্মান্ধ, এবং অন্তর্নিহিতভাবে নিকৃষ্ট বলে মনে করে, আর তাই, "আলোকপ্রাপ্তি" ("enlightenment") তখনই সম্ভব হবে যখন "গতানুগতিক" এবং "প্রতিক্রিয়াশীল" মূল্যবোধগুলো "সমসাময়িক" এবং "প্রগতিশীল" চিন্তাধারার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে, সেগুলো পাশ্চাত্যই হোক বা পাশ্চাত্য-প্রভাবিতই হোক।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Marandi|প্রথমাংশ=S.M.|তারিখ=2009|শিরোনাম=Constructing an Axis of Evil: Iranian Memoirs in the "Land of the Free"|ইউআরএল=|সাময়িকী=The American Journal of Islamic Social Sciences|খণ্ড=|পাতাসমূহ=24|মাধ্যম=}}</ref>

==আরো দেখুন==
* [[প্রাচ্যতত্ত্ব]]


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==

১৬:৪১, ৩১ মার্চ ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ওরিয়েন্টালিজম (Orientalism) হচ্ছে এডওয়ার্ড ডব্লিউ. সাঈদ এর লেখা ১৯৭৮ সালের একটি গ্রন্থ, যেখানে লেখক প্রাচ্যতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখানে প্রাচ্যতত্ত্ব বলতে লেখক বুঝিয়েছেন সেই মনোভাবকে যার দ্বারা পাশ্চাত্য প্রাচ্যকে, প্রাচ্যের সমাজকে ও প্রাচ্যের জনগণকে দেখে থাকে। এখানে প্রাচ্য বলতে লেখক এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যকে বুঝিয়েছেন। সাঈদ এর মতে, প্রাচ্যবাদ এর মনোভাবটি শক্তভাবে সাম্রাজ্যবাদী সমাজগুলোর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যেগুলো সাম্রাজ্যবাদকে তৈরি করেছে, এবং যারা রাজনৈতিকভাবে ও ক্ষমতা-সম্পর্কিতভাবে প্রাচ্যবাদ এর কাজ করে চলেছে বা টিকিয়ে রাখছে।[১]

সাঈড এর মতে, মধ্যপ্রাচ্যে শাসক আরব সম্ভ্রান্তদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা নির্দেশ করছে যে তারা সাম্রাজ্যবাদের অধস্তন শাসনকর্তা হিসেবে কাজ করছে, এবং তারা ফরাসী, ইংরেজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রাচ্যবাদীদের দ্বারা তৈরিকৃত আরব সংস্কৃতিকে ধারণ ও বহন করছে। উদাহরণ হিসেবে জোসেফ কনরাড এর ঐপনিবেশিক সাহিত্যের বিশ্লেষণ এর কথা বলা যেতে পারে, যেখানে একটি জনগোষ্ঠী, একটি সময় ও একটি স্থানকে একটি বিদেশী অঞ্চলের ঘটনা ও অভিযান এর দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন।[২]

এই গ্রন্থ উল্লিখিত প্রাচ্যতত্ত্বে উত্তর-আধুনিকতাবাদের প্রয়োগ সাংস্কৃতিক সমালোচনা নামে একটি সাহিতিক তত্ত্বের বিকাশ ঘটেছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য পাঠ নামে একটি শাখা তোইরি হয়েছে যেখানে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে শিক্ষায়তনিক গণ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক তদন্ত, পরীক্ষণ, বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করেন।[৩] সাঈদের প্রাচ্যবাদ নিয়ে কাজটি উত্তর-উপনিবেশী সাংস্কৃতিক পাঠ এর ভিত্তি তৈরি করেছে, যেখানে প্রাচ্যবাদ নিয়ে ও বিভিন্ন দেশের উত্তর-উপনিবেশী সময়ের ইতিহাস নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।[৪]

একজন গণ বুদ্ধিজীবী হিসেবে এডওয়ার্ড সাঈদ এরিয়া স্টাডিস এর ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতদের সাথে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বারনার্ড লুইস, যিনি সাঈদ এর প্রাচ্যতত্ত্ব নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধটিকে "পাশ্চাত্য-বিরোধী" বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।[৫] ওরিয়েন্টালিজম এর পরের সংস্করণগুলোতে সাঈদ একটি "আফটারওয়ার্ড" (১৯৯৫)[৬] এবং একটি "মুখবন্ধ" (২০০৩)[৭] যোগ করেন, যেখানে তিনি সাংস্কৃতিক সমালোচনা হিসেবে তার লেখা ও বিষয়বস্তুর সমালোচনা নিয়ে লেখেন।

গ্রন্থের বিষয়বস্তু

প্রাচ্যতত্ত্ব হচ্ছে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সমাজ এর মধ্যকার পার্থক্যকে বাড়িয়ে দেখানো, পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠত্বকে ধরে নেয়া, এবং প্রাচ্য সম্পর্কিত গতানুগতিক বিশ্লেষণী মডেলগুলোর প্রয়োগ। যেমন প্রাচ্যতত্ত্ব হচ্ছে ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক প্রতিফলন এর উৎস্য যা প্রাচ্য সম্পর্কে পাশ্চাত্যের চিন্তাধারা ও বোধ এর ভিত্তি তৈরি করে, আর এটি বিশেষ করে দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে।

"প্রাচ্যতত্ত্ব" শব্দটি অন্তত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু আন্তঃসম্পর্কিত অর্থ প্রকাশ করে: (১) একটি শিক্ষায়তনিক ঐতিহ্য বা শাখা; (২) প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সত্তাতাত্ত্বিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিনিধিত্ব, এবং চিন্তার রীতি; এবং (৩) কর্তৃত্ব বা আধিপত্যের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরঞ্জাম।[৮]

প্রাচ্যতত্ত্বের মূল নীতি হচ্ছে "আরব-ইসলামী জনগোষ্ঠী এবং তাদের সংস্কৃতি নিয়ে সূক্ষ্ম ও স্থায়ী ইউরোপকেন্দ্রিক পূর্বসংস্কার", যা প্রাচ্য (সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব) নিয়ে পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি হয়েছে, এবং প্রাচ্যকে "প্রাচ্যের জনগোষ্ঠী" ও "প্রাচ্যের অঞ্চল" এর মত কাল্পনিক সারসত্তায় সংকুচিত ও রূপান্তরিত করে। এরকম সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্বই অ-পাশ্চাত্য জনগোষ্ঠী নিয়ে পাশ্চাত্য জনগোষ্ঠীর ডিসকোর্স বা আলোচনায় প্রাধান্য বিস্তার করে আছে।

এই সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব সাধারণত "প্রাচ্য"-কে পাশ্চাত্যের তুলনায় আদিম, অযৌক্তিক, সহিংস, সার্বভৌম, ধর্মান্ধ, এবং অন্তর্নিহিতভাবে নিকৃষ্ট বলে মনে করে, আর তাই, "আলোকপ্রাপ্তি" ("enlightenment") তখনই সম্ভব হবে যখন "গতানুগতিক" এবং "প্রতিক্রিয়াশীল" মূল্যবোধগুলো "সমসাময়িক" এবং "প্রগতিশীল" চিন্তাধারার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে, সেগুলো পাশ্চাত্যই হোক বা পাশ্চাত্য-প্রভাবিতই হোক।[৯]

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. The New Fontana Dictionary of Modern Thought, Third Edition. (1999) p. 617.
  2. The Johns Hopkins Guide to Literary Theory and Criticism, Third Edition (1994), pp. 642.
  3. Stephen Howe, "Dangerous mind?", New Humanist, Vol. 123, November/December 2008
  4. The Johns Hopkins Guide to Literary Theory and Criticism, Third Edition (1994), pp. 642–43, 581–83
  5. Oleg Grabar, Edward Said, Bernard Lewis, "Orientalism: An Exchange", New York Review of Books, Vol. 29, No. 13. 12 August 1982. Accessed 4 January 2010.
  6. Orientalism: "Afterword" pp. 329–352.
  7. Orientalism: "Preface," pp. xi-xxiii.
  8. Said, Edward. Orientalism (1978) pp. 2-3.
  9. Marandi, S.M. (২০০৯)। "Constructing an Axis of Evil: Iranian Memoirs in the "Land of the Free""। The American Journal of Islamic Social Sciences: 24।