মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Salim Khandoker (আলোচনা | অবদান)
→‎ইতিহাস: বানান ঠিক করা হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
১৬ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
==মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার সূত্রবলী==
==মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার সূত্রবলী==


===প্রেষণা===
===প্রেষণা (MOTIVATION)===
প্রেষণা হলো শ্রমিক-কর্মচারীকে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কর্মে উদ্দীপ্ত করা। যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চারটি উদ্দেশ্য থাকে যথা: বিক্রয় তথা রাজস্ব বৃদ্ধি, মুনাফা বৃদ্ধি, বাজার বৃদ্ধি এবং গুডউইল বৃদ্ধি। শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্তরিকভাবে সক্রিয় না হলে এই উদ্দেশ্যাবলী আদায় হবে না। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা শাস্ত্রের অন্যতম লক্ষ্য হলো কীভাবে শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যানুযায়ী কাজে ব্যাপৃত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা। অ্যাব্রাহাম মাসলো বলেছেন মানুষের অনেক চাহিদা থাকে। এই সব চাহিদা পূরণ করা হলে মানুষ কাজে উদ্দীপ্ত হয়। তিনি মানুষের সকল চাহিদাকে ৫টি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই পাঁচ প্রকার চাহিদা একটি নির্দিষ্ট ক্রমে কার্যকর হয়। সর্ব প্রথমে জৈবিক চাহিদাগুলো সক্রিয় থাকে। সুতরাং প্রেষণার প্রথম ধাপ হবে এই সব জৈবিক চাহিদা পূরণ করা। লো হলো: আহার, বাস্থান এবং লজ্জানিবারণের পোষাকআশাক। পরবর্তীতে যৌনতৃপ্তিকে এই পর্যায়ে অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। চাহিদার দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে নিরাপত্তর চাহিদা। জৈবিক চাহিদা পূরণ হওয়ার পর নিরাপত্তার চাহিদা সক্রিয় হয়। জৈবিক চাহিদা ও নিরাপত্তার চাহিদা - এই দুটি স্তরের পর ক্রমান্বয়ে সক্রিয় হয় সামাজি চাহিদা, মর্যাদার চাহিদা এবং আত্মোচরিতার্থতার চাহিদা। মাসলোর মতে নিম্নতর চাহিদা পূরণ না হলে উচ্চতর চাহিদা সক্রিয় হয় না। আবার একটি চাহিদা সর্বাংশে মিটে গেলে তা আর প্রেষণা সৃষ্টি করতে পারে না। মাসলোর তত্ত্বটি তাৎপর্যময় কিন্তু গবেষণা দিয়ে এটিকে প্রতিপন্ন করা কঠিন। তবে মাসলো যা উল্লেখ করেন নি তা হলো এই যে কর্মের ধরন এবং প্রতিষ্ঠানের কর্ম পরিবেশ শ্রমিক-কর্মচারীর প্রেষণা ব্যাপকভাবে প্রভাবান্বিত করে থাকে। এই বিষয়টি হার্জবার্গ তাঁর তত্ত্বে উপস্থাপন করেছেন।
প্রেষণা হলো শ্রমিক-কর্মচারীকে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কর্মে উদ্দীপ্ত করা। যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চারটি উদ্দেশ্য থাকে যথা: বিক্রয় তথা রাজস্ব বৃদ্ধি, মুনাফা বৃদ্ধি, বাজার বৃদ্ধি এবং গুডউইল বৃদ্ধি। শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্তরিকভাবে সক্রিয় না হলে এই উদ্দেশ্যাবলী আদায় হবে না। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা শাস্ত্রের অন্যতম লক্ষ্য হলো কীভাবে শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যানুযায়ী কাজে ব্যাপৃত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা। অ্যাব্রাহাম মাসলো বলেছেন মানুষের অনেক চাহিদা থাকে। এই সব চাহিদা পূরণ করা হলে মানুষ কাজে উদ্দীপ্ত হয়। তিনি মানুষের সকল চাহিদাকে ৫টি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই পাঁচ প্রকার চাহিদা একটি নির্দিষ্ট ক্রমে কার্যকর হয়। সর্ব প্রথমে জৈবিক চাহিদাগুলো সক্রিয় থাকে। সুতরাং প্রেষণার প্রথম ধাপ হবে এই সব জৈবিক চাহিদা পূরণ করা। লো হলো: আহার, বাস্থান এবং লজ্জানিবারণের পোষাকআশাক। পরবর্তীতে যৌনতৃপ্তিকে এই পর্যায়ে অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। চাহিদার দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে নিরাপত্তর চাহিদা। জৈবিক চাহিদা পূরণ হওয়ার পর নিরাপত্তার চাহিদা সক্রিয় হয়। জৈবিক চাহিদা ও নিরাপত্তার চাহিদা - এই দুটি স্তরের পর ক্রমান্বয়ে সক্রিয় হয় সামাজি চাহিদা, মর্যাদার চাহিদা এবং আত্মোচরিতার্থতার চাহিদা। মাসলোর মতে নিম্নতর চাহিদা পূরণ না হলে উচ্চতর চাহিদা সক্রিয় হয় না। আবার একটি চাহিদা সর্বাংশে মিটে গেলে তা আর প্রেষণা সৃষ্টি করতে পারে না। মাসলোর তত্ত্বটি তাৎপর্যময় কিন্তু গবেষণা দিয়ে এটিকে প্রতিপন্ন করা কঠিন। তবে মাসলো যা উল্লেখ করেন নি তা হলো এই যে কর্মের ধরন এবং প্রতিষ্ঠানের কর্ম পরিবেশ শ্রমিক-কর্মচারীর প্রেষণা ব্যাপকভাবে প্রভাবান্বিত করে থাকে। এই বিষয়টি হার্জবার্গ তাঁর তত্ত্বে উপস্থাপন করেছেন।


==='''<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=প্রশিক্ষণও উন্নয়ন|শেষাংশ=উন্নয়ন|প্রথমাংশ=প্রশিক্ষণ|বছর=১ জুলাই ২০১৯|প্রকাশক=হক পাবলিকেশনস্ - এর পক্ষে জাহানারা হক|অবস্থান=৩৮ বাংলাবাজার (২য় তলা), ঢাকা - ১১০০|পাতাসমূহ=৪৫-৬১|আইএসবিএন=}}</ref>'''প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন ===
==='''<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=প্রশিক্ষণও উন্নয়ন|শেষাংশ=উন্নয়ন|প্রথমাংশ=প্রশিক্ষণ|বছর=১ জুলাই ২০১৯|প্রকাশক=হক পাবলিকেশনস্ - এর পক্ষে জাহানারা হক|অবস্থান=৩৮ বাংলাবাজার (২য় তলা), ঢাকা - ১১০০|পাতাসমূহ=৪৫-৬১|আইএসবিএন=}}</ref>'''প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন (TRAINING AND MOTIVATION) ===


প্রশিক্ষণ হচ্ছে মানব সম্পদ উন্নয়নের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও কার্যকর হাতিয়ার । প্রাতিষ্ঠানিক কাজে মানবীয় সম্পদকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাইলে তাদের দক্ষতা ও উপযুক্ততা থাকলেই চলবে না বরং কীভাবে তারা সেই দক্ষতা ও উপযুক্ততাকে প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগাতে পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে । মানব সম্পদ নির্বাচন ও নিয়ােগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাকে অনেক কিছুর সাথে আপােশ করতে হয় । এক্ষেত্রে একমাত্র প্রশিক্ষণই নির্বাচন ও নিয়ােগকালীন সীমাবদ্ধতাকে দূরীভূত করে উপযুক্ত মানব সম্পদ গঠন বা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে । এ ছাড়া যত দ্রুত প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে পুরনাে কর্মীদের পুনঃপ্রশিক্ষণের প্রয়ােজন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাই নতুন পুরনাে সকল কর্মীর ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণ সমানভাবে প্রযােজ্য ।
প্রশিক্ষণ হচ্ছে মানব সম্পদ উন্নয়নের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও কার্যকর হাতিয়ার । প্রাতিষ্ঠানিক কাজে মানবীয় সম্পদকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাইলে তাদের দক্ষতা ও উপযুক্ততা থাকলেই চলবে না বরং কীভাবে তারা সেই দক্ষতা ও উপযুক্ততাকে প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগাতে পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে । মানব সম্পদ নির্বাচন ও নিয়ােগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাকে অনেক কিছুর সাথে আপােশ করতে হয় । এক্ষেত্রে একমাত্র প্রশিক্ষণই নির্বাচন ও নিয়ােগকালীন সীমাবদ্ধতাকে দূরীভূত করে উপযুক্ত মানব সম্পদ গঠন বা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে । এ ছাড়া যত দ্রুত প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে পুরনাে কর্মীদের পুনঃপ্রশিক্ষণের প্রয়ােজন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাই নতুন পুরনাে সকল কর্মীর ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণ সমানভাবে প্রযােজ্য ।
৩১ নং লাইন: ৩১ নং লাইন:
=== কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন===
=== কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন===


== কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ==
== কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা (SHRM) ==
কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা স্ট্র্যাটিজিক হিউম্যনা রিসৌর্স ম্যানেজমেন্ট (Strategic Human Resource Management - SHRM) একটি নবতর ধারণা যার লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়-কৌশল অনুযায়ী মানব সম্পদ আহরণ, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা। কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাত্ত্বিকদের অবস্থান এখনো সুপরিষ্কার নয়। কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা দাবী করে যে ব্যবসায় কৌশল এবং মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা পারস্পরিকভাবে যুক্ত।
কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা স্ট্র্যাটিজিক হিউম্যনা রিসৌর্স ম্যানেজমেন্ট (Strategic Human Resource Management - SHRM) একটি নবতর ধারণা যার লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়-কৌশল অনুযায়ী মানব সম্পদ আহরণ, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা। কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাত্ত্বিকদের অবস্থান এখনো সুপরিষ্কার নয়। কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা দাবী করে যে ব্যবসায় কৌশল এবং মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা পারস্পরিকভাবে যুক্ত।


৩৭ নং লাইন: ৩৭ নং লাইন:
* [[কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র]]
* [[কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র]]
* [[ফ্রেডারিক উইন্সলো টেলর]]
* [[ফ্রেডারিক উইন্সলো টেলর]]

== তথ্যসূত্র ==
{{সূত্র তালিকা}}
{{সূত্র তালিকা}}



০৪:৪৭, ৩ মার্চ ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা (ইংরেজি: Human resource management) একই সঙ্গে একটি অধ্যয়নের বিষয় ও ব্যবস্থাপনা কৌশল যা একটি প্রতিষ্ঠানের অভীষ্ঠ লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য আভ্যন্তরীক মানবসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ওপর আলোকপাত করে। কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আকৃষ্ট করা, আগ্রহীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের খুঁজে বের করা ও নিয়োগ প্রদান, কর্মীদের অনুপ্রাণিত করা ও তাদের সাথে প্রতিষ্ঠানের সু-সম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের কর্মজীবনে উত্তরোত্তর উন্নয়নের পথ সৃষ্টি করা এবং প্রয়োজনে তাদের ছাঁটাই করাসহ প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ সম্পর্কিত সব ধরনের কাজই প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাজ। কিন্তু এর মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যসমূহ অর্জন করা যার মধ্যে প্রধান চারটি হলো বিক্রয় ও রাজস্বআয় বৃদ্ধি, মুনাফা অর্জন ও বর্ধন, মার্কেট শেয়ার বৃদ্ধি এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উন্নততর করণ। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে কাজ করার সময় মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে সেই দেশের শ্রম আইন ও কর্মসংস্থান আইন মেনে চলতে হয়। প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যিনি থাকেন তাকে সচরাচর মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক বলা হয়।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সারা বিশ্বে শিল্প বিপ্লব শুরু হলে তুমুল প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের দিয়ে অবৈধভাবে কাজ করিয়ে নেয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এবং এর ফলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে থাকে। মূলত এই শ্রমিক অসন্তোষের ফলেই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ধারণার জন্ম হয়।[১] তৎকালীন সময়ে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজ ছিল শ্রমিকদের কর্ম-ঘণ্টার হিসাব রাখা এবং তাদের যথোপযুক্ত পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রয়োজনের তাগিদে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়েছে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রথাগত পারসোনেল ম্যানেজমেণ্ট থেকে পৃথক।

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিচিতি ।

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সাধারণ ব্যবস্থাপনারই একটি অবিচেছদ্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ । ব্যবস্থাপনাবিদগণ যে সাতটি ‘ M ’ দ্বারা কার্য সম্পাদন করেন তার মধ্যে Man Power বা Human Resource অন্যতম । দক্ষতা ও ফলপ্রসূতার সাথে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে দক্ষকর্মী সংগ্রহ ও নিয়ােগ , উন্নয়ন ও সংরক্ষণের প্রক্রিয়াকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বলে । প্রতিষ্ঠানে নিয়ােজিত কর্মী । তথা মানব সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে ব্যবস্থাপনার যে অংশ কাজ করে , তা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা হিসেবে পরিচিত । মানব সম্পদ । ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ , তাদের সংগ্রহ , নির্বাচন ও নিয়ােগ , উন্নয়ন , কর্মীদের কাজে উদ্বুদ্ধকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সাথে সম্পর্কিত । মানব সম্পদ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি । তাই প্রতিষ্ঠানের এ সম্পদের বাছাই , নিয়ােগ , প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন , বেতন ও মজুরি প্রদান , প্রেষণা ও সুযােগ - সুবিধা দান , কর্মীদের অভাব - অভিযােগ নিরসন , কর্মীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয়সমূহ যে মাধ্যমে সম্পাদন করা হয় , তাকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা হিসেবে অভিহিত করা যায় ।

ইতিহাস

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার শুরু হয়েছিল মূলত ফ্রেডারিক টেইলরের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ব থেকে। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা মূলত উৎপাদনে প্রক্রিয়ার কার্যকারীতা, দক্ষতা এবং মিতব্যায়িতা আনয়ন করেছিল। এই বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনাকে প্রায়োগিক করার জন্য এর আরো একটি উন্নত তত্বের প্রয়োজন ছিল যা মানব সম্পর্ক বিজ্ঞান বা হিউম্যান রিলেশন সায়েন্স নামে পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে এই মানব সম্পর্ক বিজ্ঞানই মানব সম্পদ ব্যাবস্থাপনার রুপ নেয়।
মানব সম্পর্ক বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এলটন মেয়ো বিংশ শতাব্দির মাঝামঝি সময়ে এসে দেখান যে কেমন করে মজুরি এবং শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি উৎপাদন ব্যাবস্থা ত্বরান্বিত করে এবং শ্রমিকদের আরোও বেশি উৎপাদনে প্ররণা যোগায়। এছাড়াও ম্যাক্স ভাইবার, অ্যাব্রহাম মাসলো, হার্জবার্গ এবং ডেভিড ম্যাকক্লিল্যান্ড প্রমুখ ব্যাবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মানুষের প্রাতিষ্ঠানিক আচরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক তত্বের জন্য একটি সুস্পষ্ট ভিত্তি দাঁড় করান।

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বনাম জনপ্রশাসন

আধুনিক মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার ধারণা প্রচলিত জনপ্রশাসনের ধারণার বিচেনায় কার্যত প্রায় অভিন্ন কিন্তু উদ্দেশ্যগতভাবে পৃথক। জনপ্রশাসন একটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আর মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিল করা।

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার সূত্রবলী

প্রেষণা (MOTIVATION)

প্রেষণা হলো শ্রমিক-কর্মচারীকে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কর্মে উদ্দীপ্ত করা। যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চারটি উদ্দেশ্য থাকে যথা: বিক্রয় তথা রাজস্ব বৃদ্ধি, মুনাফা বৃদ্ধি, বাজার বৃদ্ধি এবং গুডউইল বৃদ্ধি। শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্তরিকভাবে সক্রিয় না হলে এই উদ্দেশ্যাবলী আদায় হবে না। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা শাস্ত্রের অন্যতম লক্ষ্য হলো কীভাবে শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যানুযায়ী কাজে ব্যাপৃত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা। অ্যাব্রাহাম মাসলো বলেছেন মানুষের অনেক চাহিদা থাকে। এই সব চাহিদা পূরণ করা হলে মানুষ কাজে উদ্দীপ্ত হয়। তিনি মানুষের সকল চাহিদাকে ৫টি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই পাঁচ প্রকার চাহিদা একটি নির্দিষ্ট ক্রমে কার্যকর হয়। সর্ব প্রথমে জৈবিক চাহিদাগুলো সক্রিয় থাকে। সুতরাং প্রেষণার প্রথম ধাপ হবে এই সব জৈবিক চাহিদা পূরণ করা। লো হলো: আহার, বাস্থান এবং লজ্জানিবারণের পোষাকআশাক। পরবর্তীতে যৌনতৃপ্তিকে এই পর্যায়ে অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। চাহিদার দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে নিরাপত্তর চাহিদা। জৈবিক চাহিদা পূরণ হওয়ার পর নিরাপত্তার চাহিদা সক্রিয় হয়। জৈবিক চাহিদা ও নিরাপত্তার চাহিদা - এই দুটি স্তরের পর ক্রমান্বয়ে সক্রিয় হয় সামাজি চাহিদা, মর্যাদার চাহিদা এবং আত্মোচরিতার্থতার চাহিদা। মাসলোর মতে নিম্নতর চাহিদা পূরণ না হলে উচ্চতর চাহিদা সক্রিয় হয় না। আবার একটি চাহিদা সর্বাংশে মিটে গেলে তা আর প্রেষণা সৃষ্টি করতে পারে না। মাসলোর তত্ত্বটি তাৎপর্যময় কিন্তু গবেষণা দিয়ে এটিকে প্রতিপন্ন করা কঠিন। তবে মাসলো যা উল্লেখ করেন নি তা হলো এই যে কর্মের ধরন এবং প্রতিষ্ঠানের কর্ম পরিবেশ শ্রমিক-কর্মচারীর প্রেষণা ব্যাপকভাবে প্রভাবান্বিত করে থাকে। এই বিষয়টি হার্জবার্গ তাঁর তত্ত্বে উপস্থাপন করেছেন।

[২]প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন (TRAINING AND MOTIVATION)

প্রশিক্ষণ হচ্ছে মানব সম্পদ উন্নয়নের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও কার্যকর হাতিয়ার । প্রাতিষ্ঠানিক কাজে মানবীয় সম্পদকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাইলে তাদের দক্ষতা ও উপযুক্ততা থাকলেই চলবে না বরং কীভাবে তারা সেই দক্ষতা ও উপযুক্ততাকে প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগাতে পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে । মানব সম্পদ নির্বাচন ও নিয়ােগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাকে অনেক কিছুর সাথে আপােশ করতে হয় । এক্ষেত্রে একমাত্র প্রশিক্ষণই নির্বাচন ও নিয়ােগকালীন সীমাবদ্ধতাকে দূরীভূত করে উপযুক্ত মানব সম্পদ গঠন বা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে । এ ছাড়া যত দ্রুত প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে পুরনাে কর্মীদের পুনঃপ্রশিক্ষণের প্রয়ােজন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাই নতুন পুরনাে সকল কর্মীর ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণ সমানভাবে প্রযােজ্য ।

মানব সম্পদ সংগ্রহ

সংগঠন কাঠামাে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টপদে কর্মীর চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আকৃষ্ট করার প্রক্রিয়াকে মানব সম্পদ সংগ্রহ বলে । প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কারণে পদ শূন্য ও সৃষ্টি হয় । এসব শূন্যপদে উপযুক্ত ও দক্ষ মানব সম্পদ নিয়ােগের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন করতে অনুপ্রাণিত করার পদ্ধতিকে মানব সম্পদ সংগ্রহ বলে । উপরােক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে , প্রতিষ্ঠানের সৃষ্ট বা শূন্যপদে প্রয়ােজনীয় সংখ্যক যােগ্য ও দক্ষপ্রার্থী খুঁজে বের করে তাদেরকে উক্ত পদে চাকরি লাভে আকৃষ্ট ও অনুপ্রাণিত করার প্রক্রিয়াকে মানব সম্পদ সংগ্রহ বলে ।[৩]

মজুরি ও পারিতোষিক

কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন

কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা (SHRM)

কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা স্ট্র্যাটিজিক হিউম্যনা রিসৌর্স ম্যানেজমেন্ট (Strategic Human Resource Management - SHRM) একটি নবতর ধারণা যার লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়-কৌশল অনুযায়ী মানব সম্পদ আহরণ, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা। কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাত্ত্বিকদের অবস্থান এখনো সুপরিষ্কার নয়। কৌশলগত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা দাবী করে যে ব্যবসায় কৌশল এবং মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা পারস্পরিকভাবে যুক্ত।

আরো দেখুন

  1. Human Resource Management by Robert L. Mathis & John L. Jackson, ISBN 10:0-538-45315-8
  2. উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ (১ জুলাই ২০১৯)। প্রশিক্ষণও উন্নয়ন। ৩৮ বাংলাবাজার (২য় তলা), ঢাকা - ১১০০: হক পাবলিকেশনস্ - এর পক্ষে জাহানারা হক। পৃষ্ঠা ৪৫–৬১। 
  3. নির্বাচন, মানব সম্পদসংগ্রহ (১ জুলাই ২০১৯)। মানব সম্পদ সংগ্রহ ও নির্বাচন। ৩৮ বাংলাবাজার ( ২ তলা) , ঢাকা: হক পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ৩৪। আইএসবিএন - |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: length (সাহায্য)