রাজনৈতিক দর্শন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১২ নং লাইন: ১২ নং লাইন:
==ইতিহাস==
==ইতিহাস==
===প্রাচীন ভারত===
===প্রাচীন ভারত===
প্রাচীনকালে ভারতীয় রাজনৈতিক দর্শন (১) জাতি এবং রাষ্ট্রের (২) ধর্ম এবং রাষ্ট্রের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য চিহ্নিত করেছিল। হিন্দু রাষ্ট্রের গঠনগুলি সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়েছিল এবং এই বিকাশের ধারাটি রাজনৈতিক এবং আইনী আচরণ এবং প্রচলিত সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলি সরকার, প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, আইন শৃঙ্খলায় মোটামুটিভাবে বিভক্ত ছিল। এই রাষ্ট্রগুলোর প্রধান প্রশাসনিক সংস্থা মন্ত্রজ্ঞের মধ্যে ছিলো রাজা, প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনীর সেনাপতি, রাজার প্রধান ঠাকুর। প্রধানমন্ত্রী কার্যনির্বাহী প্রধান (মহা আমাত্য) সহ মন্ত্রীদের কমিটির নেতৃত্ব দেন।
প্রাচীনকালে ভারতীয় রাজনৈতিক দর্শন (১) জাতি এবং রাষ্ট্রের (২) ধর্ম এবং রাষ্ট্রের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য চিহ্নিত করেছিল। হিন্দু রাষ্ট্রের গঠনগুলি সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়েছিল এবং এই বিকাশের ধারাটি রাজনৈতিক এবং আইনি আচরণ এবং প্রচলিত সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলি সরকার, প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, আইন শৃঙ্খলায় মোটামুটিভাবে বিভক্ত ছিল। এই রাষ্ট্রগুলোর প্রধান প্রশাসনিক সংস্থা মন্ত্রজ্ঞের মধ্যে ছিলো রাজা, প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনীর সেনাপতি, রাজার প্রধান ঠাকুর। প্রধানমন্ত্রী কার্যনির্বাহী প্রধান (মহা আমাত্য) সহ মন্ত্রীদের কমিটির নেতৃত্ব দেন।


[[চাণক্য]] ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর ভারতীয় রাজনৈতিক দার্শনিক। ''[[অর্থশাস্ত্র (গ্রন্থ)|অর্থশাস্ত্র]]'' একজন বিজ্ঞ শাসকের জন্য রাজনীতি বিজ্ঞানের বিবরণ, পররাষ্ট্র বিষয়ক ও যুদ্ধের নীতিমালা, গুপ্তচর রাষ্ট্রের ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের নজরদারি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিবরণ প্রদান করে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|লেখক-সংযোগ=Roger Boesche|শেষাংশ=Boesche|প্রথমাংশ=Roger|শিরোনাম=The First Great Political Realist: Kautilya and His Arthashastra|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=K85NA7Rg67wC&lpg=PP1&dq=isbn%3A0739106074&pg=PP1#v=onepage&q&f=false|বছর=2002|প্রকাশক=Lexington Books|আইএসবিএন=978-0-7391-0401-9|পাতা=7}}</ref> চাণক্য ব্রুহস্পতি, ঊষানস, প্রচেতাসা মনু, পরাসর এবং আম্বি সহ বেশ কয়েকটি কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন এবং নিজেকে রাজনৈতিক দার্শনিকদের বংশধর হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন এবং তার পিতা চাণক তার পূর্বসূরী ছিলেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=Rangarajan|প্রথমাংশ১=L N|শিরোনাম=The Arthashastra |ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=3jbzZkoR36QC&lpg=PA1&pg=PT22#v=onepage&q&f=false|বছর=2000|প্রকাশক=Penguin UK|আইএসবিএন=9788184750119|পাতা=95}}</ref> রাজনৈতিক দর্শনে আরও একটি প্রভাবশালী প্রচলিত ভারতীয় গ্রন্থ হলো শুক্র নীতি।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Brown|প্রথমাংশ=D. Mackenzie|শিরোনাম=The White Umbrella: Indian Political Thought from Manu to Gandhi|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=JZzXv2JOZUMC&lpg=PA65&dq=sukraniti&pg=PP1#v=onepage&q&f=false|বছর=1982|প্রকাশক=Greenwood Press|আইএসবিএন=978-0313232107|পাতা=64}}</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=Sankhdher|প্রথমাংশ১=Madan Mohan|শেষাংশ২=Kaur|প্রথমাংশ২=Gurdeep|শিরোনাম=Politics in India: Ancient India, Politics of Change, Modern India|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=veYezcrVAlcC&lpg=PA103&dq=sukra%20neeti&pg=PR4#v=onepage&q=sukra&f=false|বছর=2005|প্রকাশক=Deep and Deep Publications|আইএসবিএন=9788176296557|পাতা=95}}</ref> প্রাচীন ভারতে আইনের একটি কোডের উদাহরণ হলো [[মনুসংহিতা]] বা মনুর আইন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|লেখক=Manu ((Lawgiver))|লেখক২=Kullūkabhaṭṭa|শিরোনাম=Institutes of Hindu Law: Or, The Ordinances of Menu, According to the Gloss of Cullúca|ইউআরএল=https://books.google.com/?id=4caNTgBa6oEC|বছর=1796|প্রকাশক=Calcutta, Printed by order of the government, London reprinted, for J. Sewell and J. Debrett}}</ref>
[[চাণক্য]] ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর ভারতীয় রাজনৈতিক দার্শনিক। ''[[অর্থশাস্ত্র (গ্রন্থ)|অর্থশাস্ত্র]]'' একজন বিজ্ঞ শাসকের জন্য রাজনীতি বিজ্ঞানের বিবরণ, পররাষ্ট্র বিষয়ক ও যুদ্ধের নীতিমালা, গুপ্তচর রাষ্ট্রের ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের নজরদারি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিবরণ প্রদান করে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|লেখক-সংযোগ=Roger Boesche|শেষাংশ=Boesche|প্রথমাংশ=Roger|শিরোনাম=The First Great Political Realist: Kautilya and His Arthashastra|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=K85NA7Rg67wC&lpg=PP1&dq=isbn%3A0739106074&pg=PP1#v=onepage&q&f=false|বছর=2002|প্রকাশক=Lexington Books|আইএসবিএন=978-0-7391-0401-9|পাতা=7}}</ref> চাণক্য ব্রুহস্পতি, ঊষানস, প্রচেতাসা মনু, পরাসর এবং আম্বি সহ বেশ কয়েকটি কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন এবং নিজেকে রাজনৈতিক দার্শনিকদের বংশধর হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন এবং তার পিতা চাণক তার পূর্বসূরী ছিলেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=Rangarajan|প্রথমাংশ১=L N|শিরোনাম=The Arthashastra |ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=3jbzZkoR36QC&lpg=PA1&pg=PT22#v=onepage&q&f=false|বছর=2000|প্রকাশক=Penguin UK|আইএসবিএন=9788184750119|পাতা=95}}</ref> রাজনৈতিক দর্শনে আরও একটি প্রভাবশালী প্রচলিত ভারতীয় গ্রন্থ হলো শুক্র নীতি।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Brown|প্রথমাংশ=D. Mackenzie|শিরোনাম=The White Umbrella: Indian Political Thought from Manu to Gandhi|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=JZzXv2JOZUMC&lpg=PA65&dq=sukraniti&pg=PP1#v=onepage&q&f=false|বছর=1982|প্রকাশক=Greenwood Press|আইএসবিএন=978-0313232107|পাতা=64}}</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=Sankhdher|প্রথমাংশ১=Madan Mohan|শেষাংশ২=Kaur|প্রথমাংশ২=Gurdeep|শিরোনাম=Politics in India: Ancient India, Politics of Change, Modern India|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=veYezcrVAlcC&lpg=PA103&dq=sukra%20neeti&pg=PR4#v=onepage&q=sukra&f=false|বছর=2005|প্রকাশক=Deep and Deep Publications|আইএসবিএন=9788176296557|পাতা=95}}</ref> প্রাচীন ভারতে আইনের একটি কোডের উদাহরণ হলো [[মনুসংহিতা]] বা মনুর আইন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|লেখক=Manu ((Lawgiver))|লেখক২=Kullūkabhaṭṭa|শিরোনাম=Institutes of Hindu Law: Or, The Ordinances of Menu, According to the Gloss of Cullúca|ইউআরএল=https://books.google.com/?id=4caNTgBa6oEC|বছর=1796|প্রকাশক=Calcutta, Printed by order of the government, London reprinted, for J. Sewell and J. Debrett}}</ref>


===প্রাচীন চীন===
===প্রাচীন চীন===
চীনা রাজনৈতিক দর্শন [[শরৎ বসন্ত কাল|শরৎ বসন্ত কালীন]] সময়ের, বিশেষত খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে কনফুসিয়াসের সাথে সম্পর্কিত। চীনা রাজনৈতিক দর্শন শরৎ বসন্তকালীন সময়ে বিকশিত হয়েছিল। এই বিকাশ শরৎ বসন্তকালীন পর্বে এবং [[প্রাচীন চীনের যুদ্ধরত রাজ্য কাল]] পর্বে দেশের বৈশিষ্ট্যসমূহের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে প্রধান দর্শনগুলি ছিল [[কনফুসীয়বাদ]], আইনীবাদ, মহিবাদ, কৃষিবাদ এবং [[তাওবাদ]]। আবার এই দর্শনগুলোর প্রত্যেকেটি চিন্তাধারারই একটি রাজনৈতিক দিক ছিল। [[কনফুসিয়াস]], [[মেনসিয়াস]] এবং মোজির মতো দার্শনিকরা তাদের রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি হিসাবে রাজনৈতিক ঐক্য এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। কনফুসীয়বাদ সহানুভূতি, আনুগত্য এবং আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে একটি ক্রমোচ্চ শ্রেণীবিভাগকৃত, মেধাবী সরকারকে সমর্থন করে।
চীনা রাজনৈতিক দর্শন [[শরৎ বসন্ত কাল|শরৎ বসন্ত কালীন]] সময়ের, বিশেষত খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে কনফুসিয়াসের সাথে সম্পর্কিত। চীনা রাজনৈতিক দর্শন শরৎ বসন্তকালীন সময়ে বিকশিত হয়েছিল। এই বিকাশ শরৎ বসন্তকালীন পর্বে এবং [[প্রাচীন চীনের যুদ্ধরত রাজ্য কাল]] পর্বে দেশের বৈশিষ্ট্যসমূহের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে প্রধান দর্শনগুলি ছিল [[কনফুসীয়বাদ]], আইনিবাদ, মহিবাদ, কৃষিবাদ এবং [[তাওবাদ]]। আবার এই দর্শনগুলোর প্রত্যেকেটি চিন্তাধারারই একটি রাজনৈতিক দিক ছিল। [[কনফুসিয়াস]], [[মেনসিয়াস]] এবং মোজির মতো দার্শনিকরা তাদের রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি হিসাবে রাজনৈতিক ঐক্য এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। কনফুসীয়বাদ সহানুভূতি, আনুগত্য এবং আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে একটি ক্রমোচ্চ শ্রেণীবিভাগকৃত, মেধাবী সরকারকে সমর্থন করে।


===প্রাচীন গ্রীস===
===প্রাচীন গ্রীস===

১৬:০২, ১২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

প্লেটো (বামে) এবং এরিস্টটল (ডানে), রাফায়েলের আঁকা একটি ফ্রেস্কো এথেন্সের বিদ্যালয়-এর একটি বিবরণ থেকে। প্লেটোর রিপাবলিক এবং অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স গ্রন্থ দুটি গ্রীক দার্শনিকদ্বয়কে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দার্শনিক হিসাবে নিশ্চিত করেছিল।

রাজনৈতিক দর্শন বা রাষ্ট্রদর্শন হচ্ছে রাষ্ট্র সম্পর্কে দার্শনিক চিন্তন, রাষ্ট্রের প্রকৃতি, কার্যাবলি, মূল্য, রাষ্ট্রীয় অভিজ্ঞতার সত্যতা, জীবন ও জগতের পরম সার্থকতা হিসেবে রাষ্ট্রীয় অভিজ্ঞতার যথার্থতা সম্পর্কে দার্শনিক অনুসন্ধান লাভ। রাষ্ট্রদর্শন বলতে আমরা রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের প্রকৃতি, পরিধি ও কার্যাবলি এবং মানব জাতির উন্নয়ন ও প্রগতি সম্পর্কিত মতবাদকে বুঝি। সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্র সম্পর্কিত দার্শনিক চিন্তাভাবনাই হলো রাষ্ট্রদর্শন। রাষ্ট্রদর্শনের বিষয়বস্তু প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। যেমন, মানব প্রকৃতি ও তার কার্যকলাপ, জীবনের সমগ্র অনুভূতির জন্য পৃথিবীর অপরাপর বিষয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ক এবং সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক।[১]

রাজনৈতিক দর্শনের বিষয়বস্তু

রাষ্ট্রই হচ্ছে রাষ্ট্রদর্শনের মূল একথা বলা যায় না। বিভিন্ন যুগে রাষ্ট্রদর্শনের বিভিন্ন সমস্যা প্রাধান্য পেয়েছে। প্রাচীনকালে বিশেষ করে গ্রিক ও রোমান চিন্তায় যে সমস্ত প্রশ্ন প্রাধান্য পেয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ন্যায়নীতির ধারণা, আদর্শ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য, শাসনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, শাসকের যোগ্যতা এবং আইনের প্রয়োজনীয়তা ও লক্ষ্য, সমতার ভিত্তিতে সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব কী না প্রভৃতি।

মধ্য যুগে রাষ্ট্রদর্শনের ধারাটি ছিলো কিছুটা ভিন্ন ধর্মী। আধ্যাত্মিক ও পার্থিব শক্তির প্রাধান্যের লড়াই এই যুগের রাষ্ট্রদর্শনকে প্রভাবিত করেছে। ধর্মীয় কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে সংস্কার আন্দোলন ষোড়শ শতাব্দীতে রাষ্ট্রদর্শনের অগ্রগতিকে প্রসারিত করেছে। সার্বভৌমিকতা ও জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণাটিও এই সময় প্রচারিত হয়।

সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর চিন্তায় প্রাধান্য পায় রাষ্ট্র ও সংগঠনের বিভিন্ন তত্ত্ব। গণতন্ত্র, প্রতিনিধিত্ব, সমতা, স্বাধীনতা প্রভৃতি ধারণা এই সময় জনপ্রিয় হয়। উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে যে বিষয়গুলো ছিলো রাজনৈতিক বিতর্কের মূলে তার মধ্যে উল্লে¬খযোগ্য হলো রাষ্ট্রের কার্যাবলি, পরিধি, রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রভৃতি।[১]

ইতিহাস

প্রাচীন ভারত

প্রাচীনকালে ভারতীয় রাজনৈতিক দর্শন (১) জাতি এবং রাষ্ট্রের (২) ধর্ম এবং রাষ্ট্রের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য চিহ্নিত করেছিল। হিন্দু রাষ্ট্রের গঠনগুলি সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়েছিল এবং এই বিকাশের ধারাটি রাজনৈতিক এবং আইনি আচরণ এবং প্রচলিত সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলি সরকার, প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, আইন শৃঙ্খলায় মোটামুটিভাবে বিভক্ত ছিল। এই রাষ্ট্রগুলোর প্রধান প্রশাসনিক সংস্থা মন্ত্রজ্ঞের মধ্যে ছিলো রাজা, প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনীর সেনাপতি, রাজার প্রধান ঠাকুর। প্রধানমন্ত্রী কার্যনির্বাহী প্রধান (মহা আমাত্য) সহ মন্ত্রীদের কমিটির নেতৃত্ব দেন।

চাণক্য ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর ভারতীয় রাজনৈতিক দার্শনিক। অর্থশাস্ত্র একজন বিজ্ঞ শাসকের জন্য রাজনীতি বিজ্ঞানের বিবরণ, পররাষ্ট্র বিষয়ক ও যুদ্ধের নীতিমালা, গুপ্তচর রাষ্ট্রের ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের নজরদারি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিবরণ প্রদান করে।[২] চাণক্য ব্রুহস্পতি, ঊষানস, প্রচেতাসা মনু, পরাসর এবং আম্বি সহ বেশ কয়েকটি কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন এবং নিজেকে রাজনৈতিক দার্শনিকদের বংশধর হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন এবং তার পিতা চাণক তার পূর্বসূরী ছিলেন।[৩] রাজনৈতিক দর্শনে আরও একটি প্রভাবশালী প্রচলিত ভারতীয় গ্রন্থ হলো শুক্র নীতি।[৪][৫] প্রাচীন ভারতে আইনের একটি কোডের উদাহরণ হলো মনুসংহিতা বা মনুর আইন।[৬]

প্রাচীন চীন

চীনা রাজনৈতিক দর্শন শরৎ বসন্ত কালীন সময়ের, বিশেষত খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে কনফুসিয়াসের সাথে সম্পর্কিত। চীনা রাজনৈতিক দর্শন শরৎ বসন্তকালীন সময়ে বিকশিত হয়েছিল। এই বিকাশ শরৎ বসন্তকালীন পর্বে এবং প্রাচীন চীনের যুদ্ধরত রাজ্য কাল পর্বে দেশের বৈশিষ্ট্যসমূহের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে প্রধান দর্শনগুলি ছিল কনফুসীয়বাদ, আইনিবাদ, মহিবাদ, কৃষিবাদ এবং তাওবাদ। আবার এই দর্শনগুলোর প্রত্যেকেটি চিন্তাধারারই একটি রাজনৈতিক দিক ছিল। কনফুসিয়াস, মেনসিয়াস এবং মোজির মতো দার্শনিকরা তাদের রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি হিসাবে রাজনৈতিক ঐক্য এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। কনফুসীয়বাদ সহানুভূতি, আনুগত্য এবং আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে একটি ক্রমোচ্চ শ্রেণীবিভাগকৃত, মেধাবী সরকারকে সমর্থন করে।

প্রাচীন গ্রীস

পাশ্চাত্য রাজনৈতিক দর্শনের সূচনা হয় প্রাচীন গ্রীসের দর্শনে, যেখানে রাজনৈতিক দর্শন অন্তত প্লেটো থেকে উৎপত্তি হয়।[৭] প্রাচীন গ্রীস নগর-রাষ্ট্রগুলির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল, যে নগররাষ্ট্রগুলো রাজনৈতিক সংগঠনের বিভিন্ন রূপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিল। সেই নগররাষ্ট্রগুলোকে প্লেটো অন্তর্নিহিত স্থায়িত্ব এবং নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে পাঁচটি বিভাগে বিভক্ত করেছিলেন, ভাগগুলো হচ্ছে: রাজতন্ত্র, টেমোক্রেসি, গোষ্ঠীশাসনতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং স্বেচ্ছাচারতন্ত্র। রাজনৈতিক দর্শনের প্রথম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রীয় কাজগুলির একটি হলো প্লেটো রচিত রিপাবলিক গ্রন্থ।[৭] রিপাবলিক গ্রন্থের পরে লিখিত হয় অ্যারিস্টটলের নিকোমাচিয়ান নীতিশাস্ত্র এবং পলিটিক্স[৮] রোমান রাজনৈতিক দর্শন স্টোইকস এবং রোমান রাজনীতিবিদ সিসেরো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।

সমসাময়িক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত, যখন জন রোলস ন্যায়পরায়ণতার তত্ত্ব প্রকাশ করেছিলেন তখন থেকে এংলো-আমেরিকান একাডেমিক বিশ্বে রাজনৈতিক দর্শন হ্রাস পেয়েছিল; কারণ বিশ্লেষক দার্শনিকরা আদর্শস্থাপনকারী অভিমতগুলিতে জ্ঞানীয় বিষয়বস্তু রাখার সম্ভাবনা সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন এবং রাজনৈতিক বিজ্ঞান পরিবর্তিত হচ্ছিল পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি এবং আচরণবাদীতায়। মহাদেশীয় ইউরোপে, অন্যদিকে, যুদ্ধোত্তর দশকগুলিতে রাজনৈতিক দর্শনের এক বিশাল প্রস্ফুটন দেখা গেছিল, যখন মার্কসবাদ মাঠে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. মো. আবদুল ওদুদ (দ্বিতীয় সংস্করণ, এপ্রিল ২০১৪)। রাষ্ট্রদর্শন। ঢাকা: মনন পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ২৩, ২৯। আইএসবিএন 978-98-43300-90-4  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য);
  2. Boesche, Roger (২০০২)। The First Great Political Realist: Kautilya and His Arthashastra। Lexington Books। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 978-0-7391-0401-9 
  3. Rangarajan, L N (২০০০)। The Arthashastra। Penguin UK। পৃষ্ঠা 95। আইএসবিএন 9788184750119 
  4. Brown, D. Mackenzie (১৯৮২)। The White Umbrella: Indian Political Thought from Manu to Gandhi। Greenwood Press। পৃষ্ঠা 64। আইএসবিএন 978-0313232107 
  5. Sankhdher, Madan Mohan; Kaur, Gurdeep (২০০৫)। Politics in India: Ancient India, Politics of Change, Modern India। Deep and Deep Publications। পৃষ্ঠা 95। আইএসবিএন 9788176296557 
  6. Manu ((Lawgiver)); Kullūkabhaṭṭa (১৭৯৬)। Institutes of Hindu Law: Or, The Ordinances of Menu, According to the Gloss of Cullúca। Calcutta, Printed by order of the government, London reprinted, for J. Sewell and J. Debrett। 
  7. Sahakian, Mabel Lewis (১৯৯৩)। Ideas of the great philosophers। Barnes & Noble Publishing। পৃষ্ঠা 59। আইএসবিএন 978-1-56619-271-2... Western philosophical tradition can be traced back as early as Plato (427–347 BC). 
  8. Kraut, Richard (২০০২)। Aristotle: political philosophy। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 978-0-19-878200-1To understand and assess Aristotle's contributions to political thought ...