শাফী ইমাম রুমী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
২৪ নং লাইন: ২৪ নং লাইন:
{{Quote box|width=23%|fontsize=85%|quoted=1|quote=প্রাণপ্রিয় পাশা মামা,<br>অবাক হয়ো না। এটা লেখা হয়েছে আর তােমার কাছে পৌছেছে। আর পড়ার পর চিঠিটা নষ্ট হলে ফেলো। এ নিয়ে আম্মাকেও কিছু লিখো না। তা হলে তাঁদের বিপদে পড়তে হবে। তাড়াহুড়া করে লিখলাম। আমার হাতে সময় খুব কম। বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে কাল এখান থেকে চলে যেতে হবে।<br>আমরা একটা ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ লড়ছি। আমরা জয়ী হব। আমাদের সবার জন্য দোয়া করো। কী লিখবো বুঝতে পারছি না- কত কী নিয়ে যে লেখার আছে। নৃশংসতার যত কাহিনী তুমি শুনছ, ভয়াভয় ধংশের যত ছবু তুমি দেখছ, জানবে তার সবই সত্য। ওরা আমাদের নৃশংসতার সঙ্গে ক্ষতবিক্ষত করছে, মানব ইতিহাসে যার তুলনা নেই। আর নিউটন আসলেই যথার্থ বলেছেন, একই ধরনের হিংস্রতা নিয়ে আমরাও তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ব। এরই মধ্যে আমাদের যুদ্ধ অনেক এগিয়ে গেছে। বর্ষা শুরু হলে আমরা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেব।<br>জানি না আবার কখন লিখতে পারব। আমাকে লিখাে না। সােনার বাংলার জন্য সর্বোচ্চ যা পারো, করো। এখনকার মতাে বিদায়।|source=&mdash;সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশাকে লেখা চিঠিতে শফি ইমাম রুমী<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=একাত্তরের চিঠি|বছর=২০০৯|প্রকাশক=প্রথমা প্রকাশন|অবস্থান=ঢাকা|আইএসবিএন=978-984-8765-00-5|পাতাসমূহ=২৫}}</ref>}}
{{Quote box|width=23%|fontsize=85%|quoted=1|quote=প্রাণপ্রিয় পাশা মামা,<br>অবাক হয়ো না। এটা লেখা হয়েছে আর তােমার কাছে পৌছেছে। আর পড়ার পর চিঠিটা নষ্ট হলে ফেলো। এ নিয়ে আম্মাকেও কিছু লিখো না। তা হলে তাঁদের বিপদে পড়তে হবে। তাড়াহুড়া করে লিখলাম। আমার হাতে সময় খুব কম। বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে কাল এখান থেকে চলে যেতে হবে।<br>আমরা একটা ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ লড়ছি। আমরা জয়ী হব। আমাদের সবার জন্য দোয়া করো। কী লিখবো বুঝতে পারছি না- কত কী নিয়ে যে লেখার আছে। নৃশংসতার যত কাহিনী তুমি শুনছ, ভয়াভয় ধংশের যত ছবু তুমি দেখছ, জানবে তার সবই সত্য। ওরা আমাদের নৃশংসতার সঙ্গে ক্ষতবিক্ষত করছে, মানব ইতিহাসে যার তুলনা নেই। আর নিউটন আসলেই যথার্থ বলেছেন, একই ধরনের হিংস্রতা নিয়ে আমরাও তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ব। এরই মধ্যে আমাদের যুদ্ধ অনেক এগিয়ে গেছে। বর্ষা শুরু হলে আমরা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেব।<br>জানি না আবার কখন লিখতে পারব। আমাকে লিখাে না। সােনার বাংলার জন্য সর্বোচ্চ যা পারো, করো। এখনকার মতাে বিদায়।|source=&mdash;সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশাকে লেখা চিঠিতে শফি ইমাম রুমী<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=একাত্তরের চিঠি|বছর=২০০৯|প্রকাশক=প্রথমা প্রকাশন|অবস্থান=ঢাকা|আইএসবিএন=978-984-8765-00-5|পাতাসমূহ=২৫}}</ref>}}


যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে, রুমী ধারাবাহিকভাবে তার মা ও বাবাকে নিজের যুদ্ধে যাবার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল মাকে অবশেষে রাজি করিয়ে সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ খুজছিলেন। পরে ২ মে রুমী সীমান্ত অতিক্রমের প্রথম প্রয়াস চালান। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাঁকে ফেরত আসতে হয় এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন। তিনি সেক্টর-২ এর অধীনে মেলাঘরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই সেক্টরটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন [[খালেদ মোশাররফ]] ও [[রশিদ হায়দার]]। প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি ঢাকায় ফেরত আসেন এবং [[ক্র্যাক প্লাটুন|ক্র্যাক প্লাটুনে]] যোগ দেন। ক্র্যাক প্লাটুন হল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে [[গেরিলা]] আক্রমণ পরিচালনাকারী একটি সংগঠন। রুমী ও তার দলের ঢাকায় আসার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল [[সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন]] হামলা করা। এ সময় তাকে ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ পরিচালনা করতে হয় যার মধ্যে ধানমণ্ডি রোডের একটি আক্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে, রুমী ধারাবাহিকভাবে তার মা ও বাবাকে নিজের যুদ্ধে যাবার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল মাকে অবশেষে রাজি করিয়ে সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ খুজছিলেন। পরে ২ মে রুমী সীমান্ত অতিক্রমের প্রথম প্রয়াস চালান। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাকে ফেরত আসতে হয় এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন। তিনি সেক্টর-২ এর অধীনে মেলাঘরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই সেক্টরটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন [[খালেদ মোশাররফ]] ও [[রশিদ হায়দার]]। প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি ঢাকায় ফেরত আসেন এবং [[ক্র্যাক প্লাটুন|ক্র্যাক প্লাটুনে]] যোগ দেন। ক্র্যাক প্লাটুন হল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে [[গেরিলা]] আক্রমণ পরিচালনাকারী একটি সংগঠন। রুমী ও তার দলের ঢাকায় আসার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল [[সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন]] হামলা করা। এ সময় তাকে ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ পরিচালনা করতে হয় যার মধ্যে ধানমণ্ডি রোডের একটি আক্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
সেখানে একটি পাকিস্তানী সেনা জিপ তাদের বহনকারী গাড়ির পিছু নিলে তিনি গাড়ির পেছনের কাচ ভেংগে "'দেখো দেখো, একটি জিপ আমাদের অনুসরণ করছে"' বলে স্টেন গান ব্রাশফায়ার করেন। তার গুলিতে পাকিস্তানি জিপের ড্রাইভার নিহত হয় এবং গাড়ি ল্যাম্পপোস্টে যেয়ে ধাক্কা খায়। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা তার গুলিতে মারা যায়।
সেখানে একটি পাকিস্তানী সেনা জিপ তাদের বহনকারী গাড়ির পিছু নিলে তিনি গাড়ির পেছনের কাচ ভেংগে "'দেখো দেখো, একটি জিপ আমাদের অনুসরণ করছে"' বলে স্টেন গান ব্রাশফায়ার করেন। তার গুলিতে পাকিস্তানি জিপের ড্রাইভার নিহত হয় এবং গাড়ি ল্যাম্পপোস্টে যেয়ে ধাক্কা খায়। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা তার গুলিতে মারা যায়।


==পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা গ্রেফতার ও পরিণতি==
==পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা গ্রেফতার ও পরিণতি==
ধানমণ্ডি রোডের অপারেশনের পর রুমী তার সহকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে কাটান, এবং এই রাতেই বেশকিছু গেরিলা যোদ্ধার সাথে তিনি পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী একটি অজ্ঞাত উৎস থেকে তথ্য নিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক যোদ্ধাকে গ্রেফতার করেন যার মধ্যে ছিলেন [[আলতাফ মাহমুদ]], আবুল বারাক, আজাদ ও জুয়েল। রুমীর সাথে তার বাবা শরীফ এবং ভাই জামীকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের স্থানে রুমীকে ভাই ও বাবাসহ একঘরে আনলে রুমী সবাইকে তার যুদ্ধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করতে বলেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, পাক বাহিনী তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন এবং এর সব দায়-দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান। ৩০ আগস্টের পর রুমী ও তার সহযোদ্ধা বদী এবং চুল্লুকে আর দেখা যায়নি।
ধানমণ্ডি রোডের অপারেশনের পর রুমী তার সহকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তার নিজের বাড়িতে কাটান, এবং এই রাতেই বেশকিছু গেরিলা যোদ্ধার সাথে তিনি পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী একটি অজ্ঞাত উৎস থেকে তথ্য নিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক যোদ্ধাকে গ্রেফতার করেন যার মধ্যে ছিলেন [[আলতাফ মাহমুদ]], আবুল বারাক, আজাদ ও জুয়েল। রুমীর সাথে তার বাবা শরীফ এবং ভাই জামীকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের স্থানে রুমীকে ভাই ও বাবাসহ একঘরে আনলে রুমী সবাইকে তার যুদ্ধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করতে বলেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, পাক বাহিনী তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন এবং এর সব দায়-দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান। ৩০ আগস্টের পর রুমী ও তার সহযোদ্ধা বদী এবং চুল্লুকে আর দেখা যায়নি।


ইয়াহিয়া খান ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলে অনেক আত্মীয় তাঁর জন্য আবেদন করতে বলেন। কিন্তু রুমী যে বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ধরা পড়েছে, তাদের কাছেই ক্ষমা চাইতে রুমীর বাবা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, দেশপ্রেমিক [[শরীফ ইমাম]] রাজি ছিলেন না।<ref>[http://archive.prothom-alo.com/detail/news/15876 দৈনিক প্রথম আলো, "মুক্তিযুদ্ধের নিভৃত এক সহযাত্রী", প্রশান্ত কর্মকার | তারিখ: ৩০-১০-২০০৯]</ref>
ইয়াহিয়া খান ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলে অনেক আত্মীয় তার জন্য আবেদন করতে বলেন। কিন্তু রুমী যে বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ধরা পড়েছে, তাদের কাছেই ক্ষমা চাইতে রুমীর বাবা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, দেশপ্রেমিক [[শরীফ ইমাম]] রাজি ছিলেন না।<ref>[http://archive.prothom-alo.com/detail/news/15876 দৈনিক প্রথম আলো, "মুক্তিযুদ্ধের নিভৃত এক সহযাত্রী", প্রশান্ত কর্মকার | তারিখ: ৩০-১০-২০০৯]</ref>


== হত্যার বিচার ==
== হত্যার বিচার ==

১৯:২২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

শাফী ইমাম রুমী
জন্ম২৯ মার্চ, ১৯৫১
সিলেট
মৃত্যু৩০ আগস্ট, ১৯৭১ (নিখোঁজ)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
আত্মীয়জাহানারা ইমাম (মা)

শাফী ইমাম রুমী (জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৫১ - নিখোঁজ: ৩০ আগস্ট, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন গেরিলা যোদ্ধা। তিনি ছিলেন শহীদ জননী খ্যাত জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠ পুত্র।[১] জাহানারা ইমাম রচিত একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থে[২] রুমী অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখা দেয় এবং তার মৃত্যুর জন্য জাহানারা ইমাম শহীদ জননী উপাধি পান।

প্রারম্ভিক জীবন

শাফী ইমাম রুমী ১৯৫১ সালের ২৯ মার্চ শরীফ ও জাহানারা ইমামের উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আই.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৯৭১‌ সালের মার্চ মাসে রুমী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। এছাড়া, বিশেষ অনুমতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অর্থনীতি বিভাগ এ ক্লাস করতেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন তুখোড় তার্কিক।

তিনি ইলিনয় ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে সুযোগ পেলেও যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার পর আদর্শগত কারণে দেশকে যুদ্ধের মধ্যে রেখে বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে নিজের ক্যারিয়ারের জন্য পড়তে যাননি।

মুক্তিযুদ্ধ

প্রাণপ্রিয় পাশা মামা,
অবাক হয়ো না। এটা লেখা হয়েছে আর তােমার কাছে পৌছেছে। আর পড়ার পর চিঠিটা নষ্ট হলে ফেলো। এ নিয়ে আম্মাকেও কিছু লিখো না। তা হলে তাঁদের বিপদে পড়তে হবে। তাড়াহুড়া করে লিখলাম। আমার হাতে সময় খুব কম। বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে কাল এখান থেকে চলে যেতে হবে।
আমরা একটা ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ লড়ছি। আমরা জয়ী হব। আমাদের সবার জন্য দোয়া করো। কী লিখবো বুঝতে পারছি না- কত কী নিয়ে যে লেখার আছে। নৃশংসতার যত কাহিনী তুমি শুনছ, ভয়াভয় ধংশের যত ছবু তুমি দেখছ, জানবে তার সবই সত্য। ওরা আমাদের নৃশংসতার সঙ্গে ক্ষতবিক্ষত করছে, মানব ইতিহাসে যার তুলনা নেই। আর নিউটন আসলেই যথার্থ বলেছেন, একই ধরনের হিংস্রতা নিয়ে আমরাও তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ব। এরই মধ্যে আমাদের যুদ্ধ অনেক এগিয়ে গেছে। বর্ষা শুরু হলে আমরা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেব।
জানি না আবার কখন লিখতে পারব। আমাকে লিখাে না। সােনার বাংলার জন্য সর্বোচ্চ যা পারো, করো। এখনকার মতাে বিদায়।

—সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশাকে লেখা চিঠিতে শফি ইমাম রুমী[৩]

যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে, রুমী ধারাবাহিকভাবে তার মা ও বাবাকে নিজের যুদ্ধে যাবার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল মাকে অবশেষে রাজি করিয়ে সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ খুজছিলেন। পরে ২ মে রুমী সীমান্ত অতিক্রমের প্রথম প্রয়াস চালান। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাকে ফেরত আসতে হয় এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন। তিনি সেক্টর-২ এর অধীনে মেলাঘরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই সেক্টরটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন খালেদ মোশাররফরশিদ হায়দার। প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি ঢাকায় ফেরত আসেন এবং ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন। ক্র্যাক প্লাটুন হল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনাকারী একটি সংগঠন। রুমী ও তার দলের ঢাকায় আসার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন হামলা করা। এ সময় তাকে ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ পরিচালনা করতে হয় যার মধ্যে ধানমণ্ডি রোডের একটি আক্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য। সেখানে একটি পাকিস্তানী সেনা জিপ তাদের বহনকারী গাড়ির পিছু নিলে তিনি গাড়ির পেছনের কাচ ভেংগে "'দেখো দেখো, একটি জিপ আমাদের অনুসরণ করছে"' বলে স্টেন গান ব্রাশফায়ার করেন। তার গুলিতে পাকিস্তানি জিপের ড্রাইভার নিহত হয় এবং গাড়ি ল্যাম্পপোস্টে যেয়ে ধাক্কা খায়। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা তার গুলিতে মারা যায়।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা গ্রেফতার ও পরিণতি

ধানমণ্ডি রোডের অপারেশনের পর রুমী তার সহকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তার নিজের বাড়িতে কাটান, এবং এই রাতেই বেশকিছু গেরিলা যোদ্ধার সাথে তিনি পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী একটি অজ্ঞাত উৎস থেকে তথ্য নিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক যোদ্ধাকে গ্রেফতার করেন যার মধ্যে ছিলেন আলতাফ মাহমুদ, আবুল বারাক, আজাদ ও জুয়েল। রুমীর সাথে তার বাবা শরীফ এবং ভাই জামীকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের স্থানে রুমীকে ভাই ও বাবাসহ একঘরে আনলে রুমী সবাইকে তার যুদ্ধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করতে বলেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, পাক বাহিনী তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন এবং এর সব দায়-দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান। ৩০ আগস্টের পর রুমী ও তার সহযোদ্ধা বদী এবং চুল্লুকে আর দেখা যায়নি।

ইয়াহিয়া খান ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলে অনেক আত্মীয় তার জন্য আবেদন করতে বলেন। কিন্তু রুমী যে বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ধরা পড়েছে, তাদের কাছেই ক্ষমা চাইতে রুমীর বাবা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, দেশপ্রেমিক শরীফ ইমাম রাজি ছিলেন না।[৪]

হত্যার বিচার

২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ-এর বিরুদ্ধে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা, রুমী হত্যা ও নির্যাতন ইত্যাদিসহ মোট উত্থাপিত ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে দোষী প্রমানিত হয়। এর মাঝে দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড আদেশ দেয়া হয়।[৫][৬][৭][৮]

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো
  2. Hensher, Philip (১ মার্চ ২০১৩)। "Bangladesh's bestseller about its brutal birth"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  3. একাত্তরের চিঠি। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। ২০০৯। পৃষ্ঠা ২৫। আইএসবিএন 978-984-8765-00-5 
  4. দৈনিক প্রথম আলো, "মুক্তিযুদ্ধের নিভৃত এক সহযাত্রী", প্রশান্ত কর্মকার | তারিখ: ৩০-১০-২০০৯
  5. "Bangladesh Islamist leader sentenced to death for 1971 war crimes"Reuters। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  6. "Bangladesh Islamist party leader sentenced to death for war crimes"Deutsche Welle। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  7. "Jamaat secretary-general gets death penalty for war crimes"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  8. Khan, Tamanna (১৮ জুলাই ২০১৩)। "They now can rest in peace"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ