ক্রিটেশিয়াস–প্যালিওজিন বিলুপ্তির ঘটনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{কাজ চলছে/২০১৯}}
{{কাজ চলছে/২০১৯}}
<b>ক্রিটেশিয়াস-প্যালিওজিন (K-Pg) বিলুপ্তি ঘটনা</b> (মতান্তরে <b>ক্রিটেশিয়াস-টার্শিয়ারি (K-T) বিলুপ্তি ঘটনা</b>) বলতে আজ থেকে প্রায় ৬.৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীর জীবজগতের প্রায় তিন চতুর্থাংশের আকস্মিক বিলোপনের ঘটনাকে বোঝায়<ref>{{cite web|url=http://www.stratigraphy.org/index.php/ics-chart-timescale |title=International Chronostratigraphic Chart |publisher=International Commission on Stratigraphy |year=2015 |accessdate=29 April 2015 |deadurl=yes |archiveurl=https://web.archive.org/web/20140530005940/http://www.stratigraphy.org/index.php/ics-chart-timescale |archivedate=May 30, 2014 }}</ref><ref name="Renne2013">{{cite journal |last=Renne |first=Paul R. |last2=Deino |first2=Alan L. |last3=Hilgen |first3=Frederik J. |last4=Kuiper |first4=Klaudia F. |last5=Mark |first5=Darren F. |last6=Mitchell |first6=William S. |last7=Morgan |first7=Leah E. |last8=Mundil |first8=Roland |last9=Smit |first9=Jan |title=Time Scales of Critical Events Around the Cretaceous-Paleogene Boundary |journal=Science |date=7 February 2013 |volume=339 |issue=6120 |pages=684–687 |doi=10.1126/science.1230492 |pmid=23393261 |url=http://www.cugb.edu.cn/uploadCms/file/20600/20131028144132060.pdf |bibcode=2013Sci...339..684R}}</ref><ref name="Fortey">{{cite book |last=Fortey |first=Richard |authorlink=Richard Fortey |title=Life: A Natural History of the First Four Billion Years of Life on Earth |publisher=Vintage |year=1999 |pages=238–260 |isbn=978-0-375-70261-7|title-link=Life: A Natural History of the First Four Billion Years of Life on Earth }}</ref>। সামুদ্রিক লেদারব্যাক কচ্ছপ ও কুমির ছাড়া ২৫ কিলোগ্রামের বেশি ওজনের কোনও চতুষ্পদ এই বিলোপনের হাত থেকে নিস্তার পায়নি<ref name="PrimalF">{{cite book | title=Primal Forces | publisher=Graphic Arts Center Publishing | last=Muench | first=David | last2=Muench | first2=Marc | last3=Gilders | first3=Michelle A. | year=2000 | location=Portland | pages=20 | isbn=978-1-55868-522-2}}</ref>। এটি ক্রিটেশিয়াস যুগ তথা মেসোজোয়িক মহাযুগের অবসান ও বর্তমান সিনোজোয়িক মহাযুগের আরম্ভের সূচক ঘটনা।
'''ক্রিটেশিয়াস-প্যালিওজিন (K-Pg) বিলুপ্তি ঘটনা''' (মতান্তরে '''ক্রিটেশিয়াস-টার্শিয়ারি (K-T) বিলুপ্তি ঘটনা''') বলতে আজ থেকে প্রায় ৬.৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীর জীবজগতের প্রায় তিন চতুর্থাংশের আকস্মিক বিলোপনের ঘটনাকে বোঝায়<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.stratigraphy.org/index.php/ics-chart-timescale |শিরোনাম=International Chronostratigraphic Chart |প্রকাশক=International Commission on Stratigraphy |বছর=2015 |সংগ্রহের-তারিখ=29 April 2015 |অকার্যকর-ইউআরএল=yes |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20140530005940/http://www.stratigraphy.org/index.php/ics-chart-timescale |আর্কাইভের-তারিখ=May 30, 2014 }}</ref><ref name="Renne2013">{{সাময়িকী উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Renne |প্রথমাংশ=Paul R. |শেষাংশ২=Deino |প্রথমাংশ২=Alan L. |শেষাংশ৩=Hilgen |প্রথমাংশ৩=Frederik J. |শেষাংশ৪=Kuiper |প্রথমাংশ৪=Klaudia F. |শেষাংশ৫=Mark |প্রথমাংশ৫=Darren F. |শেষাংশ৬=Mitchell |প্রথমাংশ৬=William S. |শেষাংশ৭=Morgan |প্রথমাংশ৭=Leah E. |শেষাংশ৮=Mundil |প্রথমাংশ৮=Roland |শেষাংশ৯=Smit |প্রথমাংশ৯=Jan |শিরোনাম=Time Scales of Critical Events Around the Cretaceous-Paleogene Boundary |সাময়িকী=Science |তারিখ=7 February 2013 |খণ্ড=339 |সংখ্যা নং=6120 |পাতাসমূহ=684–687 |ডিওআই=10.1126/science.1230492 |pmid=23393261 |ইউআরএল=http://www.cugb.edu.cn/uploadCms/file/20600/20131028144132060.pdf |বিবকোড=2013Sci...339..684R}}</ref><ref name="Fortey">{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Fortey |প্রথমাংশ=Richard |লেখক-সংযোগ=Richard Fortey |শিরোনাম=Life: A Natural History of the First Four Billion Years of Life on Earth |প্রকাশক=Vintage |বছর=1999 |পাতাসমূহ=238–260 |আইএসবিএন=978-0-375-70261-7|শিরোনামের-সংযোগ=Life: A Natural History of the First Four Billion Years of Life on Earth }}</ref>। সামুদ্রিক লেদারব্যাক কচ্ছপ ও কুমির ছাড়া ২৫ কিলোগ্রামের বেশি ওজনের কোনও চতুষ্পদ এই বিলোপনের হাত থেকে নিস্তার পায়নি<ref name="PrimalF">{{বই উদ্ধৃতি | শিরোনাম=Primal Forces | প্রকাশক=Graphic Arts Center Publishing | শেষাংশ=Muench | প্রথমাংশ=David | শেষাংশ২=Muench | প্রথমাংশ২=Marc | শেষাংশ৩=Gilders | প্রথমাংশ৩=Michelle A. | বছর=2000 | অবস্থান=Portland | পাতাসমূহ=20 | আইএসবিএন=978-1-55868-522-2}}</ref>। এটি ক্রিটেশিয়াস যুগ তথা মেসোজোয়িক মহাযুগের অবসান ও বর্তমান সিনোজোয়িক মহাযুগের আরম্ভের সূচক ঘটনা।


ভূতাত্ত্বিক খতিয়ানে K-Pg ঘটনাটির নির্দেশক হল K-Pg সীমানা নামক একটি পাতলা অধঃক্ষেপের আস্তরণ, যা পৃথিবী জুড়ে স্থল ও সমুদ্রের তলদেশের শিলাস্তরে পাওয়া যায়। সীমানাটির রাসায়নিক বিশ্লেষণে অত্যধিক মাত্রায় ধাতব মৌল ইরিডিয়ামের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পৃথিবীর শিলামণ্ডলে বিরল হলেও গ্রহাণুতে সহজলভ্য।
ভূতাত্ত্বিক খতিয়ানে K-Pg ঘটনাটির নির্দেশক হল K-Pg সীমানা নামক একটি পাতলা অধঃক্ষেপের আস্তরণ, যা পৃথিবী জুড়ে স্থল ও সমুদ্রের তলদেশের শিলাস্তরে পাওয়া যায়। সীমানাটির রাসায়নিক বিশ্লেষণে অত্যধিক মাত্রায় ধাতব মৌল ইরিডিয়ামের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পৃথিবীর শিলামণ্ডলে বিরল হলেও গ্রহাণুতে সহজলভ্য।
২৪ নং লাইন: ২৪ নং লাইন:
সমুদ্রতলে সঞ্চিত যে ক্যালশিয়ামের স্তরের ভিত্তিতে ক্রিটেশিয়াস যুগের নামকরণ হয়েছে, সেই স্তর গঠনকারী ক্যালশিয়াম-সঞ্চয়ক ন্যানোপ্ল্যাঙ্কটনের জীবাশ্মের রেকর্ডে K-Pg সীমানা অন্যতম আকস্মিক ও আমূল একটি পরিবর্তনের সূচক। প্রজাতি পর্যায়ে এই পরিবর্তনের অভিঘাত লক্ষ্য করা যায়। সমসাময়িক সামুদ্রিক জীবকুলের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা যায়, এই ব্যাপক নেতিবাচক পরিবর্তনের কারণ ছিল প্রজাতিকরণের আকস্মিক হ্রাস নয়, বরং বিলোপনের আকস্মিক বৃদ্ধি। ডাইনোফ্ল্যাজেলেটদের K-Pg সীমানার রেকর্ড ভাল করে বোঝা যায় না, কারণ কেবলমাত্র অণুজীবীয় সিস্টরাই জীবাশ্মীভূত হয়, আর সমস্ত ডাইনোফ্ল্যাজেলেটের জীবনচক্রে সিস্ট নির্মাণকারী দশা থাকে না। এই কারণে তাদের জীববৈচিত্র্যের আসল পরিধি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানও ঝাপসা। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায়, উক্ত সীমানার আগে বা পরে ডাইনোফ্ল্যাজেলেটদের অবস্থায় কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।
সমুদ্রতলে সঞ্চিত যে ক্যালশিয়ামের স্তরের ভিত্তিতে ক্রিটেশিয়াস যুগের নামকরণ হয়েছে, সেই স্তর গঠনকারী ক্যালশিয়াম-সঞ্চয়ক ন্যানোপ্ল্যাঙ্কটনের জীবাশ্মের রেকর্ডে K-Pg সীমানা অন্যতম আকস্মিক ও আমূল একটি পরিবর্তনের সূচক। প্রজাতি পর্যায়ে এই পরিবর্তনের অভিঘাত লক্ষ্য করা যায়। সমসাময়িক সামুদ্রিক জীবকুলের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা যায়, এই ব্যাপক নেতিবাচক পরিবর্তনের কারণ ছিল প্রজাতিকরণের আকস্মিক হ্রাস নয়, বরং বিলোপনের আকস্মিক বৃদ্ধি। ডাইনোফ্ল্যাজেলেটদের K-Pg সীমানার রেকর্ড ভাল করে বোঝা যায় না, কারণ কেবলমাত্র অণুজীবীয় সিস্টরাই জীবাশ্মীভূত হয়, আর সমস্ত ডাইনোফ্ল্যাজেলেটের জীবনচক্রে সিস্ট নির্মাণকারী দশা থাকে না। এই কারণে তাদের জীববৈচিত্র্যের আসল পরিধি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানও ঝাপসা। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায়, উক্ত সীমানার আগে বা পরে ডাইনোফ্ল্যাজেলেটদের অবস্থায় কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।


রেডিওল্যারিয়া-রা অন্তত [[অর্ডোভিশিয়ান]] যুগ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড রেখে আসছে। তাদের খনিজায়িত জীবাশ্ম K-Pg সীমানার আগে ও পরে উভয় সময়কাল থেকেই পাওয়া যায়। এই সমস্ত জীবের গণবিলুপ্তির কোনও ইঙ্গিত নেই, আর দক্ষিণ গোলার্ধের উচ্চ অক্ষাংশে আদি প্যালিওসিনের শীতল আবহাওয়ার ফলে এদের অত্যধিক সক্রিয়তার প্রমাণ মেলে। প্রায় ৪৬% ডায়াটম ক্রিটেশিয়াস থেকে আদি প্যালিওসিনে প্রবেশ করে। প্রজাতির পরিসংখ্যানগত অনুপাতের নিরিখে এটি বেশ বড়মাপের হ্রাস, কিন্তু বিপজ্জনক বিলোপনের মত অত ব্যাপকও নয়।

রেডিওল্যারিয়া-রা অন্তত [[অর্ডোভিশিয়ান|অর্ডোভিশিয়ান]] যুগ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড রেখে আসছে। তাদের খনিজায়িত জীবাশ্ম K-Pg সীমানার আগে ও পরে উভয় সময়কাল থেকেই পাওয়া যায়। এই সমস্ত জীবের গণবিলুপ্তির কোনও ইঙ্গিত নেই, আর দক্ষিণ গোলার্ধের উচ্চ অক্ষাংশে আদি প্যালিওসিনের শীতল আবহাওয়ার ফলে এদের অত্যধিক সক্রিয়তার প্রমাণ মেলে। প্রায় ৪৬% ডায়াটম ক্রিটেশিয়াস থেকে আদি প্যালিওসিনে প্রবেশ করে। প্রজাতির পরিসংখ্যানগত অনুপাতের নিরিখে এটি বেশ বড়মাপের হ্রাস, কিন্তু বিপজ্জনক বিলোপনের মত অত ব্যাপকও নয়।



K-Pg সীমানা জুড়ে প্ল্যাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরাদের প্রাপ্তির বিষয়টি ১৯৩০ এর দশক থেকেই চর্চিত হয়ে আসছে। উক্ত সীমানায় একটি সংঘর্ষজাত ঘটনার সম্ভাবনা দেখা দিতেই বহুসংখ্যক গবেষণা শুরু হয়ে যায়, আর তাতে সীমানা সন্নিহিত অঞ্চলে প্ল্যাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরার বিলোপন নিয়ে মন্তব্য করা হয়। অবশ্য এই বিলোপনের নিদর্শন প্রকৃতপক্ষে K-Pg সীমানায় কোনও এককালীন বড় বিলোপনের সূচক, নাকি ঐ সীমানা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অনেকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিলুপ্তি ঘটনার সূচক, তাই নিয়ে দু'টি দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে।
K-Pg সীমানা জুড়ে প্ল্যাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরাদের প্রাপ্তির বিষয়টি ১৯৩০ এর দশক থেকেই চর্চিত হয়ে আসছে। উক্ত সীমানায় একটি সংঘর্ষজাত ঘটনার সম্ভাবনা দেখা দিতেই বহুসংখ্যক গবেষণা শুরু হয়ে যায়, আর তাতে সীমানা সন্নিহিত অঞ্চলে প্ল্যাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরার বিলোপন নিয়ে মন্তব্য করা হয়। অবশ্য এই বিলোপনের নিদর্শন প্রকৃতপক্ষে K-Pg সীমানায় কোনও এককালীন বড় বিলোপনের সূচক, নাকি ঐ সীমানা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অনেকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিলুপ্তি ঘটনার সূচক, তাই নিয়ে দু'টি দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে।



বেন্থিক ফোরামিনিফেরার অনেক প্রজাতি এই বিলুপ্তি ঘটনায় লোপ পায়, হয়তো খাদ্যের জন্য জৈব বর্জ্যের উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার কারণে। সমসাময়িক সমুদ্রে জৈব বর্জ্যের পরিমাণ কমে গিয়েছিল ধারণা করা হয়। অবশ্য বিলোপনের ধাক্কা সামলে ওঠার পর সামুদ্রিক অণুজীবদের পুনরায় বংশবৃদ্ধি আরম্ভ হলে বর্ধিত খাদ্যের উৎসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেন্থিক ফোরামিনিফেরাদেরও প্রজাতিকরণের হার বৃদ্ধি পায়। আদি প্যালিওসিনে বহুসংখ্যক কর্কর ভক্ষক বেন্থিক ফোরামিনিফেরার ভরণপোষণের জন্য উপযুক্ত সংখ্যায় ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন জন্মাতে থাকে। সব মিলিয়ে আদি প্যালিওসিনের বহু লক্ষ বছর ধরে ধীর গতিতে বেন্থিক অণুজীবরা প্রাক্‌-K-Pg সীমানার সঙ্গে তুলনীয় সংখ্যায় ফিরে আসে।
বেন্থিক ফোরামিনিফেরার অনেক প্রজাতি এই বিলুপ্তি ঘটনায় লোপ পায়, হয়তো খাদ্যের জন্য জৈব বর্জ্যের উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার কারণে। সমসাময়িক সমুদ্রে জৈব বর্জ্যের পরিমাণ কমে গিয়েছিল ধারণা করা হয়। অবশ্য বিলোপনের ধাক্কা সামলে ওঠার পর সামুদ্রিক অণুজীবদের পুনরায় বংশবৃদ্ধি আরম্ভ হলে বর্ধিত খাদ্যের উৎসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেন্থিক ফোরামিনিফেরাদেরও প্রজাতিকরণের হার বৃদ্ধি পায়। আদি প্যালিওসিনে বহুসংখ্যক কর্কর ভক্ষক বেন্থিক ফোরামিনিফেরার ভরণপোষণের জন্য উপযুক্ত সংখ্যায় ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন জন্মাতে থাকে। সব মিলিয়ে আদি প্যালিওসিনের বহু লক্ষ বছর ধরে ধীর গতিতে বেন্থিক অণুজীবরা প্রাক্‌-K-Pg সীমানার সঙ্গে তুলনীয় সংখ্যায় ফিরে আসে।
৩৫ নং লাইন: ৩২ নং লাইন:
=== সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী ===
=== সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী ===
K-Pg সীমানা জুড়ে সামুদ্রিক মেরুদণ্ডীদের বিলোপনের হারের খতিয়ানে যথেষ্ট তারতম্য আছে। আপাতভাবে যে বিলোপনের হার সামনে আসে, তা সম্ভবতঃ প্রকৃত বিলোপনের চেয়ে জীবাশ্মের অভাবের দ্বারাই বেশি প্রভাবিত।
K-Pg সীমানা জুড়ে সামুদ্রিক মেরুদণ্ডীদের বিলোপনের হারের খতিয়ানে যথেষ্ট তারতম্য আছে। আপাতভাবে যে বিলোপনের হার সামনে আসে, তা সম্ভবতঃ প্রকৃত বিলোপনের চেয়ে জীবাশ্মের অভাবের দ্বারাই বেশি প্রভাবিত।



অস্ট্রাকড নামক ক্ষুদ্র কবচীদের (ক্রাস্টেশিয়ান) এক গোষ্ঠী আদি মাস্ট্রিক্টিয়ানে প্রভাবশালী ছিল, এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় জীবাশ্ম রেখে গেছে। এই সমস্ত জীবাশ্মের পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় অস্ট্রাকডদের বৈচিত্র্য গোটা সিনোজোয়িক অধিযুগের মধ্যে প্যালিওজিন যুগেই সবচেয়ে কম ছিল। অবশ্য সাম্প্রতিক গবেষণার দ্বারাও এই বিষয়টি পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি যে, বৈচিত্র্যের এই হ্রাস K-Pg সীমানার সমসাময়িক কিনা।
অস্ট্রাকড নামক ক্ষুদ্র কবচীদের (ক্রাস্টেশিয়ান) এক গোষ্ঠী আদি মাস্ট্রিক্টিয়ানে প্রভাবশালী ছিল, এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় জীবাশ্ম রেখে গেছে। এই সমস্ত জীবাশ্মের পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় অস্ট্রাকডদের বৈচিত্র্য গোটা সিনোজোয়িক অধিযুগের মধ্যে প্যালিওজিন যুগেই সবচেয়ে কম ছিল। অবশ্য সাম্প্রতিক গবেষণার দ্বারাও এই বিষয়টি পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি যে, বৈচিত্র্যের এই হ্রাস K-Pg সীমানার সমসাময়িক কিনা।



অন্ত্য ক্রিটেশিয়াসের স্ক্লেরাটিনিয়া প্রবাল গণেদের প্রায় ৬০% K-Pg সীমানা পার করতে সক্ষম হয়নি। এই প্রবালদের বিলোপনের পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উষ্ণ ও অগভীর ক্রান্তীয় সমুদ্রে বসবাসকারী ঔপনিবেশিক প্রবালের প্রায় ৯৮% এই সময়ে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যে সমস্ত প্রবাল একা থাকে অর্থাৎ যারা প্রবাল প্রাচীর নির্মাণ করে না এবং সমুদ্রের শীতলতর ও গভীরতর অঞ্চলে (আলোকিত অঞ্চলের নীচে) বাস করে, তাদের উপর উক্ত সীমানার বিলোপনের প্রভাব তেমন নয়। ঔপনিবেশিক প্রবালরা সালোকসংশ্লেষকারী শৈবালদের সঙ্গে মিথোজীবী জীবন কাটায়, আর ঐ সমস্ত শৈবাল K-Pg সীমানাঘটিত বিপর্যয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য প্রবালের জীবাশ্ম থেকে আহরিত তথ্য দিয়ে K-Pg বিলোপন ও পরবর্তী প্যালিওসিন পুনরুত্থানের তত্ত্ব সমর্থন করতে গেলে গোটা K-Pg সীমানা জুড়ে প্রবাল বাস্তুতন্ত্রসমূহে যে ক্রমপরিবর্তন ঘটে চলেছিল, তার কথাও বিবেচনা করতে হবে।
অন্ত্য ক্রিটেশিয়াসের স্ক্লেরাটিনিয়া প্রবাল গণেদের প্রায় ৬০% K-Pg সীমানা পার করতে সক্ষম হয়নি। এই প্রবালদের বিলোপনের পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উষ্ণ ও অগভীর ক্রান্তীয় সমুদ্রে বসবাসকারী ঔপনিবেশিক প্রবালের প্রায় ৯৮% এই সময়ে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যে সমস্ত প্রবাল একা থাকে অর্থাৎ যারা প্রবাল প্রাচীর নির্মাণ করে না এবং সমুদ্রের শীতলতর ও গভীরতর অঞ্চলে (আলোকিত অঞ্চলের নীচে) বাস করে, তাদের উপর উক্ত সীমানার বিলোপনের প্রভাব তেমন নয়। ঔপনিবেশিক প্রবালরা সালোকসংশ্লেষকারী শৈবালদের সঙ্গে মিথোজীবী জীবন কাটায়, আর ঐ সমস্ত শৈবাল K-Pg সীমানাঘটিত বিপর্যয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য প্রবালের জীবাশ্ম থেকে আহরিত তথ্য দিয়ে K-Pg বিলোপন ও পরবর্তী প্যালিওসিন পুনরুত্থানের তত্ত্ব সমর্থন করতে গেলে গোটা K-Pg সীমানা জুড়ে প্রবাল বাস্তুতন্ত্রসমূহে যে ক্রমপরিবর্তন ঘটে চলেছিল, তার কথাও বিবেচনা করতে হবে।



K-Pg সীমানার অব্যবহিত পরে সেফালোপড, কন্টকত্বকী, ও ঝিনুকের গণসমূহ রীতিমত স্পষ্ট ক্ষয়ক্ষতি প্রদর্শন করে। যদিও সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডীদের একটি ক্ষুদ্র পর্ব ব্র্যাকিওপডরা K-Pg বিলুপ্তি ঘটনা কাটিয়ে ওঠে এবং আদি প্যালিওসিনে বহু শাখায় বিভক্ত হয়।
K-Pg সীমানার অব্যবহিত পরে সেফালোপড, কন্টকত্বকী, ও ঝিনুকের গণসমূহ রীতিমত স্পষ্ট ক্ষয়ক্ষতি প্রদর্শন করে। যদিও সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডীদের একটি ক্ষুদ্র পর্ব ব্র্যাকিওপডরা K-Pg বিলুপ্তি ঘটনা কাটিয়ে ওঠে এবং আদি প্যালিওসিনে বহু শাখায় বিভক্ত হয়।



নটিলয়েড (আধুনিক নটিলিডা পর্ব যাদের জ্ঞাতি) এবং সিলয়েড (যা ক্রিটেশিয়াসেই আধুনিক অক্টোপাস, স্কুইড ও কাট্‌ল মাছে ভাগ হয়ে গিয়েছিল) ছাড়া অন্য সমস্ত সেফালোপোডা জাতীয় কম্বোজ শ্রেণির প্রাণি K-Pg সীমানায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। এদের মধ্যে ছিল বাস্তুতন্ত্রগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বেলেম্‌নয়েড, এবং অতি বিচিত্র ও পরিব্যাপ্ত বাসস্থানের অধিকারী, খোলকযুক্ত সেফালোপড অ্যামোনয়েড। গবেষকরা দেখিয়েছেন, বেঁচে যাওয়া নটিলয়েডদের অল্পসংখ্যক ও বৃহত্তর ডিম দিয়ে প্রজননের পদ্ধতিটি বিলুপ্তি ঘটনার সময়ে অ্যামোনয়েডদের থেকে তাদেরকে এগিয়ে রাখতে পেরেছিল। অ্যামোনয়েডরা প্রজননের জন্য প্ল্যাঙ্কটনীয় পদ্ধতি অনুসরণ করত (অসংখ্য ডিম ও প্ল্যাঙ্কটনীয় লার্ভা), যা K-Pg বিলুপ্তি ঘটনায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। অতিরিক্ত গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্র থেকে অ্যামোনয়েডদের বিলুপ্তির পর থেকে নটিলয়েডরা এক বিবর্তনীয় বিকিরণের মধ্য দিয়ে যায় এবং ক্রমশঃ অ্যামোনাইটদের মত জটিল খোলক ও অন্যান্য জটিল শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ প্রদর্শন করে।
নটিলয়েড (আধুনিক নটিলিডা পর্ব যাদের জ্ঞাতি) এবং সিলয়েড (যা ক্রিটেশিয়াসেই আধুনিক অক্টোপাস, স্কুইড ও কাট্‌ল মাছে ভাগ হয়ে গিয়েছিল) ছাড়া অন্য সমস্ত সেফালোপোডা জাতীয় কম্বোজ শ্রেণির প্রাণি K-Pg সীমানায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। এদের মধ্যে ছিল বাস্তুতন্ত্রগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বেলেম্‌নয়েড, এবং অতি বিচিত্র ও পরিব্যাপ্ত বাসস্থানের অধিকারী, খোলকযুক্ত সেফালোপড অ্যামোনয়েড। গবেষকরা দেখিয়েছেন, বেঁচে যাওয়া নটিলয়েডদের অল্পসংখ্যক ও বৃহত্তর ডিম দিয়ে প্রজননের পদ্ধতিটি বিলুপ্তি ঘটনার সময়ে অ্যামোনয়েডদের থেকে তাদেরকে এগিয়ে রাখতে পেরেছিল। অ্যামোনয়েডরা প্রজননের জন্য প্ল্যাঙ্কটনীয় পদ্ধতি অনুসরণ করত (অসংখ্য ডিম ও প্ল্যাঙ্কটনীয় লার্ভা), যা K-Pg বিলুপ্তি ঘটনায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। অতিরিক্ত গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্র থেকে অ্যামোনয়েডদের বিলুপ্তির পর থেকে নটিলয়েডরা এক বিবর্তনীয় বিকিরণের মধ্য দিয়ে যায় এবং ক্রমশঃ অ্যামোনাইটদের মত জটিল খোলক ও অন্যান্য জটিল শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ প্রদর্শন করে।



কন্টকত্বকী গণের প্রায় ৩৫% K-Pg সীমানায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এদের মধ্যে যারা অন্ত্য ক্রিটেশিয়াসে ক্রান্তীয় অঞ্চলের অগভীর সমুদ্রে বাস করত, তারাই সবচেয়ে বেশি হারে বিলুপ্ত হয়। গভীর সমুদ্র ও মধ্য অক্ষাংশবাসী গণগুলির উপর এই বিলোপনের প্রভাব নগণ্য। বিলুপ্তির এই বিন্যাস থেকে বোঝা যায় বিশেষ করে অগভীর সমুদ্রে প্রবাল প্রাচীর-সম্বলিত সমস্ত কার্বনেট প্ল্যাটফর্মের নিমজ্জন ও তজ্জনিত বাসস্থান লোপের ফলে বিলুপ্তি বেড়েছিল।
কন্টকত্বকী গণের প্রায় ৩৫% K-Pg সীমানায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এদের মধ্যে যারা অন্ত্য ক্রিটেশিয়াসে ক্রান্তীয় অঞ্চলের অগভীর সমুদ্রে বাস করত, তারাই সবচেয়ে বেশি হারে বিলুপ্ত হয়। গভীর সমুদ্র ও মধ্য অক্ষাংশবাসী গণগুলির উপর এই বিলোপনের প্রভাব নগণ্য। বিলুপ্তির এই বিন্যাস থেকে বোঝা যায় বিশেষ করে অগভীর সমুদ্রে প্রবাল প্রাচীর-সম্বলিত সমস্ত কার্বনেট প্ল্যাটফর্মের নিমজ্জন ও তজ্জনিত বাসস্থান লোপের ফলে বিলুপ্তি বেড়েছিল।



রুডিস্ট (প্রাচীর নির্মাতা ঝিনুক) ও ইনোসেরামিড (আধুনিক নোনাজলের ঝিনুকের দৈত্যাকার জ্ঞাতি) সমেত অন্যান্য অমেরুদণ্ডী গোষ্ঠীও K-Pg সীমানায় বিলুপ্ত হয়েছিল।
রুডিস্ট (প্রাচীর নির্মাতা ঝিনুক) ও ইনোসেরামিড (আধুনিক নোনাজলের ঝিনুকের দৈত্যাকার জ্ঞাতি) সমেত অন্যান্য অমেরুদণ্ডী গোষ্ঠীও K-Pg সীমানায় বিলুপ্ত হয়েছিল।


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==
{{সূত্র তালিকা}}
{{Reflist}}


[[বিষয়শ্রেণী:ভূতত্ত্ব]]
[[বিষয়শ্রেণী:ভূতত্ত্ব]]

২১:৫২, ৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ক্রিটেশিয়াস-প্যালিওজিন (K-Pg) বিলুপ্তি ঘটনা (মতান্তরে ক্রিটেশিয়াস-টার্শিয়ারি (K-T) বিলুপ্তি ঘটনা) বলতে আজ থেকে প্রায় ৬.৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীর জীবজগতের প্রায় তিন চতুর্থাংশের আকস্মিক বিলোপনের ঘটনাকে বোঝায়[১][২][৩]। সামুদ্রিক লেদারব্যাক কচ্ছপ ও কুমির ছাড়া ২৫ কিলোগ্রামের বেশি ওজনের কোনও চতুষ্পদ এই বিলোপনের হাত থেকে নিস্তার পায়নি[৪]। এটি ক্রিটেশিয়াস যুগ তথা মেসোজোয়িক মহাযুগের অবসান ও বর্তমান সিনোজোয়িক মহাযুগের আরম্ভের সূচক ঘটনা।

ভূতাত্ত্বিক খতিয়ানে K-Pg ঘটনাটির নির্দেশক হল K-Pg সীমানা নামক একটি পাতলা অধঃক্ষেপের আস্তরণ, যা পৃথিবী জুড়ে স্থল ও সমুদ্রের তলদেশের শিলাস্তরে পাওয়া যায়। সীমানাটির রাসায়নিক বিশ্লেষণে অত্যধিক মাত্রায় ধাতব মৌল ইরিডিয়ামের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পৃথিবীর শিলামণ্ডলে বিরল হলেও গ্রহাণুতে সহজলভ্য।

১৯৮০ খৃঃ বিজ্ঞানী লুই আলভারেজ ও তাঁর পুত্র ওয়াল্টার আলভারেজ একটি বিজ্ঞানী দলের মুখপাত্র হিসেবে একটি ধারণা দেন যা এখনও পর্যন্ত স্বীকৃত। তাঁরা বলেন, K-Pg বিলোপনের কারণ হল ৬.৬ কোটি বছর আগে ১০ থেকে ১৫ কিমি. ব্যাসের একটি ধূমকেতু বা গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ। এর ফলে সারা পৃথিবীর পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যায়। প্রধানতঃ একটি সুদীর্ঘ সংঘর্ষজাত শীতকালকে এর জন্য দায়ী করা হয়, যার ফলে উদ্ভিদ ও প্ল্যাঙ্কটনের সালোকসংশ্লেষ বন্ধ হয়ে গিয়ে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ে। এই সংঘর্ষ তত্ত্বের অপর নাম আলভারেজ তত্ত্ব, এবং এটি ১৯৯০ এর দশকের প্রথম দিকে মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী ইউকাটান উপদ্বীপে ১৮০ কিমি. চওড়া চিক্সুলাব উল্কাখাত আবিষ্কারের পর দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত হয়। মহাবিলুপ্তিটি যে একই সঙ্গে সর্বত্র ঘটেছিল, তা থেকে আরও জোরদার ধারণা হয় যে উল্কাটিই এর জন্য দায়ী। ২০১৬ খৃঃ চিক্সুলাব খাতের কিনারার বলয়ে একটি ড্রিলিং প্রকল্প নিশ্চিত জানায় যে বলয়টি এমন গ্রানাইট পাথরে নির্মিত যা ভূগর্ভের গভীর থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে উৎসারিত হয়েছিল। অথচ তাতে সালফেট-সমৃদ্ধ জিপসামের ভাগ খুবই কম, যা কিনা আঞ্চলিক সমুদ্রতলের ভূত্বকের সাধারণ উপাদান। সংঘর্ষের অত্যধিক উত্তাপে জিপসাম বাষ্পায়িত হয়ে হাওয়ায় মিশে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, আর জলবায়ু ও খাদ্যশৃঙ্খলের উপর সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল।

মহাবিলুপ্তির অন্যান্য সম্ভাব্য কারণের মধ্যে দাক্ষিণাত্য ও অন্যত্র আগ্নেয়োচ্ছ্বাস, জলবায়ু পরিবর্তন, ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব থাকতে পারে।

K-Pg মহাবিলুপ্তিতে অনেক প্রজাতি লুপ্ত হয়ে যায়, যাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল উড্ডয়নে অক্ষম ডাইনোসরকুল। এছাড়াও অনেক স্তন্যপায়ী, টেরোসর, পাখি, গিরগিটি, পতঙ্গ, ও উদ্ভিদ সমেত অনেক প্রজাতি ধ্বংস হয়। মহাসাগরে এই বিপর্যয় প্লীসিওসর এবং দৈত্যাকার সামুদ্রিক গিরগিটি মোসাসরদের বিনাশ করে, আর মাছ, হাঙর, কম্বোজ (বিশেষতঃ অ্যামোনাইট, যারা লোপ পায়), ও প্ল্যাঙ্কটনের অনেক প্রজাতি বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনুমান করা হয় সমগ্র জীবজগতের ৭৫% বা তার বেশি এই মহাবিলুপ্তির গ্রাস হয়েছিল। এত সত্ত্বেও এই বিপর্যয় থেকেই আবার নতুন জীবনের সুযোগেরও সৃষ্টি হয়; অনেক প্রাণিগোষ্ঠী অভিযোজনীয় বিকিরণের মধ্য দিয়ে যায় অর্থাৎ অল্প সময়ের মধ্যে অনেক আলাদা আলাদা প্রজাতিতে ভাগ হয়ে গিয়ে বাস্তুতন্ত্রের ফাঁকা হয়ে যাওয়া ধাপগুলির দখল নেয়। বিশেষতঃ প্যালিওজিন যুগে স্তন্যপায়ীরা বহু ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়, যে বিবর্তনের ফলে ঘোড়া, তিমি, বাদুড়, ও প্রাইমেটদের উদ্ভব। পাখি, মাছ ও সম্ভবতঃ টিকটিকিরাও অনুরূপ বিকিরণের মধ্য দিয়ে বহু প্রজাতিতে ভাগ হয়েছিল।

বিলুপ্তির বিন্যাস

ক্যাম্ব্রিয়ানঅর্ডোভিশিয়ানসিলুরিয়ানডেভোনিয়ানকার্বনিফেরাসপার্মিয়ানট্রায়াসিকজুরাসিকক্রিটেশিয়াসপ্যালিওজিননিওজিন
ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগ জুড়ে সামুদ্রিক বিলোপনের হার
%
কোটি বছর আগে
ক্যাম্ব্রিয়ানঅর্ডোভিশিয়ানসিলুরিয়ানডেভোনিয়ানকার্বনিফেরাসপার্মিয়ানট্রায়াসিকজুরাসিকক্রিটেশিয়াসপ্যালিওজিননিওজিন
এই নীল গ্রাফটি প্রদত্ত নির্দিষ্ট সময়কালে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সামুদ্রিক প্রাণীর গণসমূহের আপাত শতাংশ (পরম সংখ্যা নয়) দেখাচ্ছে। এটি সব সামুদ্রিক প্রজাতির প্রতিনিধিত্ব করে না, শুধু সেইগুলি দেখায় যেগুলি নির্দ্বিধায় জীবাশ্ম হয়ে গেছে। প্রথাগত "বৃহৎ পঞ্চ মহাবিলুপ্তি" এবং সম্প্রতি স্বীকৃত আরও দুটি বিলুপ্তি ঘটনার স্তর ক্লিকযোগ্য হাইপারলিংকে দেওয়া হয়েছে; আরও তথ্যের জন্য বিলুপ্তি ঘটনা দেখুন। (উৎস এবং চিত্রের তথ্য)

K-Pg বিলুপ্তি ঘটনাটি ছিল প্রবল, বিশ্বব্যাপী, ও দ্রুত; বহুসংখ্যক প্রজাতি এর ফলে লোপ পায়। সামুদ্রিক জীবাশ্ম থেকে অনুমান করা হয় সমসাময়িক জীবজগতের ৭৫% বা তার বেশি এই ঘটনার ফলে লুপ্ত হয়েছিল।

ঘটনাটির প্রভাব প্রতিটি মহাদেশেই একসঙ্গে পড়েছিল বলে মনে করা হয়। বোঝার সুবিধার জন্য উড্ডয়নে অক্ষম ডাইনোসরদের উদাহরণ নিলে দেখা যাবে, এই ধরণের ডাইনোসরেরা পূর্ববর্তী ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষ পর্ব মাস্ট্রিক্টিয়ান অধোযুগে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, এবং আণ্টার্কটিকা এই সবক'টি মহাদেশেই পাওয়া যেত, কিন্তু পরবর্তী সিনোজোয়িক অধিযুগে এদের কোত্থাও পাওয়া যায় না। আবার জীবাশ্মীভূত পরাগরেণুতে ধরা ধ্বংসের চিহ্ন পাওয়া যায় নিউ মেক্সিকো, আলাস্কা, চীন, এবং নিউজিল্যান্ডের মত পরস্পর বহুদূরবর্তী অঞ্চল থেকে, একই সময়ে।

ঘটনাটির প্রাবল্য সত্ত্বেও বিভিন্ন ক্লেডের মধ্যে তুলনামূলক বিলোপনের হারে যথেষ্ট তারতম্য ছিল। যে সমস্ত প্রজাতি সালোকসংশ্লেষের উপর নির্ভরশীল ছিল, তারা বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণায় সূর্যালোক আটকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানো সৌরশক্তির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে লুপ্ত হয়। এইভাবে প্রভাবশালী উদ্ভিদকুলের প্রজাতিগুলি শেষ হয়। সর্বভুক, পতঙ্গভুক, ও মৃতজীবী প্রাণিগোষ্ঠীরা এই বিলুপ্তি ঘটনার পরেও টিকে থাকে, যার সম্ভাব্য কারণ এই ঘটনা তাদের খাদ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছিল। কোনও শুদ্ধ তৃণভোজী বা মাংসাশী স্তন্যপায়ী বেঁচে থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় না। যে সমস্ত স্তন্যপায়ী ও পাখি বেঁচে গিয়েছিল, তারা পতঙ্গ, কেঁচো ও কৃমি, শামুক ইত্যাদি খেয়ে থাকত। ঐ সমস্ত খাদ্য-প্রাণিরা আবার ছিল কর্কর (মৃত প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ পদার্থ) ভক্ষক।

কর্কর খাদ্যশৃঙ্খলের অন্তর্গত প্রাণিদের মধ্যে বিলোপনের হার ছিল অপেক্ষাকৃত কম, কারণ তারা জীবনধারণের জন্য প্রত্যক্ষভাবে জীবিত উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল না থেকে ডাঙা থেকে ধুয়ে আসা মৃত জৈব পদার্থের উপর নির্ভরশীল ছিল। সমুদ্রের তলদেশের বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রে এই জাতীয়, কিন্তু অনেক বেশি জটিল খাদ্যশৃঙ্খলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সমুদ্রের মাঝামাঝি গভীরতায় বসবাসকারী জীবজন্তুদের মধ্যে বিলোপনের হার ছিল সমুদ্রের তলার মাটিতে বসবাসকারীদের তুলনায় বেশি। মাঝামাঝি গভীরতার প্রাণিরা প্রায় সম্পূর্ণভাবে জীবিত ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের উপর খাদ্যের জন্য নির্ভর করে; অন্যদিকে সমুদ্রতলের মাটিতে থাকা প্রাণিরা সবসময় বা প্রায়শই কর্কর খেয়ে থাকে। কোকোলিথোফোরিড, কম্বোজ (অ্যামোনাইট, রুডিস্ট, মিঠেজলের শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি) এবং তাদের খেয়ে জীবনধারণ করা প্রাণিরা লোপ পায় বা সংখ্যায় ভীষণভাবে কমে যায়। যেমন, মনে করা হয় অ্যামোনাইটরা ছিল সামুদ্রিক সরীসৃপ মোসাসরদের প্রধান খাদ্য। ক্রিটেশিয়াসের পরে মোসাসরদের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায় না। বায়ুজীবী প্রাণিদের মধ্যে যারা এই বিলুপ্তি ঘটনায় লোপ পায়নি, তাদের মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় হল কুমির ও চ্যাম্পোসরদের গোষ্ঠী। এরা উভয়েই ছিল কেবল অংশতঃ জলচর, আর আংশিক কর্করভোজীও বটে। আধুনিক কুমিরেরা 'ধাঙড় খাদক' হিসেবে, তাজা খাবার ছাড়া কয়েক মাস পর্যন্ত বাঁচতে পারে। তাদের বাচ্চারা আকারে ছোট, তাদের বৃদ্ধি হয় অতি ধীরে, এবং জীবনের প্রথম কয়েক বছর অমেরুদণ্ডী ও মৃত প্রাণীদেহ ভক্ষণ করেই তারা জীবনধারণ করে। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষে তাদের টিকে থাকার অভিযোজনের অংশ বলে মনে করা হয়।

K-Pg ঘটনার পর বাস্তুতন্ত্রের অনেক ধাপ ফাঁকা হয়ে গেলেও জীববৈচিত্র্য পুনরায় আগের পর্যায়ে ফিরে আসতে অনেক সময় লেগেছিল।

অণুজীব

সমুদ্রতলে সঞ্চিত যে ক্যালশিয়ামের স্তরের ভিত্তিতে ক্রিটেশিয়াস যুগের নামকরণ হয়েছে, সেই স্তর গঠনকারী ক্যালশিয়াম-সঞ্চয়ক ন্যানোপ্ল্যাঙ্কটনের জীবাশ্মের রেকর্ডে K-Pg সীমানা অন্যতম আকস্মিক ও আমূল একটি পরিবর্তনের সূচক। প্রজাতি পর্যায়ে এই পরিবর্তনের অভিঘাত লক্ষ্য করা যায়। সমসাময়িক সামুদ্রিক জীবকুলের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা যায়, এই ব্যাপক নেতিবাচক পরিবর্তনের কারণ ছিল প্রজাতিকরণের আকস্মিক হ্রাস নয়, বরং বিলোপনের আকস্মিক বৃদ্ধি। ডাইনোফ্ল্যাজেলেটদের K-Pg সীমানার রেকর্ড ভাল করে বোঝা যায় না, কারণ কেবলমাত্র অণুজীবীয় সিস্টরাই জীবাশ্মীভূত হয়, আর সমস্ত ডাইনোফ্ল্যাজেলেটের জীবনচক্রে সিস্ট নির্মাণকারী দশা থাকে না। এই কারণে তাদের জীববৈচিত্র্যের আসল পরিধি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানও ঝাপসা। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায়, উক্ত সীমানার আগে বা পরে ডাইনোফ্ল্যাজেলেটদের অবস্থায় কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।

রেডিওল্যারিয়া-রা অন্তত অর্ডোভিশিয়ান যুগ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড রেখে আসছে। তাদের খনিজায়িত জীবাশ্ম K-Pg সীমানার আগে ও পরে উভয় সময়কাল থেকেই পাওয়া যায়। এই সমস্ত জীবের গণবিলুপ্তির কোনও ইঙ্গিত নেই, আর দক্ষিণ গোলার্ধের উচ্চ অক্ষাংশে আদি প্যালিওসিনের শীতল আবহাওয়ার ফলে এদের অত্যধিক সক্রিয়তার প্রমাণ মেলে। প্রায় ৪৬% ডায়াটম ক্রিটেশিয়াস থেকে আদি প্যালিওসিনে প্রবেশ করে। প্রজাতির পরিসংখ্যানগত অনুপাতের নিরিখে এটি বেশ বড়মাপের হ্রাস, কিন্তু বিপজ্জনক বিলোপনের মত অত ব্যাপকও নয়।

K-Pg সীমানা জুড়ে প্ল্যাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরাদের প্রাপ্তির বিষয়টি ১৯৩০ এর দশক থেকেই চর্চিত হয়ে আসছে। উক্ত সীমানায় একটি সংঘর্ষজাত ঘটনার সম্ভাবনা দেখা দিতেই বহুসংখ্যক গবেষণা শুরু হয়ে যায়, আর তাতে সীমানা সন্নিহিত অঞ্চলে প্ল্যাঙ্কটনিক ফোরামিনিফেরার বিলোপন নিয়ে মন্তব্য করা হয়। অবশ্য এই বিলোপনের নিদর্শন প্রকৃতপক্ষে K-Pg সীমানায় কোনও এককালীন বড় বিলোপনের সূচক, নাকি ঐ সীমানা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অনেকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিলুপ্তি ঘটনার সূচক, তাই নিয়ে দু'টি দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে।

বেন্থিক ফোরামিনিফেরার অনেক প্রজাতি এই বিলুপ্তি ঘটনায় লোপ পায়, হয়তো খাদ্যের জন্য জৈব বর্জ্যের উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার কারণে। সমসাময়িক সমুদ্রে জৈব বর্জ্যের পরিমাণ কমে গিয়েছিল ধারণা করা হয়। অবশ্য বিলোপনের ধাক্কা সামলে ওঠার পর সামুদ্রিক অণুজীবদের পুনরায় বংশবৃদ্ধি আরম্ভ হলে বর্ধিত খাদ্যের উৎসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেন্থিক ফোরামিনিফেরাদেরও প্রজাতিকরণের হার বৃদ্ধি পায়। আদি প্যালিওসিনে বহুসংখ্যক কর্কর ভক্ষক বেন্থিক ফোরামিনিফেরার ভরণপোষণের জন্য উপযুক্ত সংখ্যায় ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন জন্মাতে থাকে। সব মিলিয়ে আদি প্যালিওসিনের বহু লক্ষ বছর ধরে ধীর গতিতে বেন্থিক অণুজীবরা প্রাক্‌-K-Pg সীমানার সঙ্গে তুলনীয় সংখ্যায় ফিরে আসে।

সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী

K-Pg সীমানা জুড়ে সামুদ্রিক মেরুদণ্ডীদের বিলোপনের হারের খতিয়ানে যথেষ্ট তারতম্য আছে। আপাতভাবে যে বিলোপনের হার সামনে আসে, তা সম্ভবতঃ প্রকৃত বিলোপনের চেয়ে জীবাশ্মের অভাবের দ্বারাই বেশি প্রভাবিত।

অস্ট্রাকড নামক ক্ষুদ্র কবচীদের (ক্রাস্টেশিয়ান) এক গোষ্ঠী আদি মাস্ট্রিক্টিয়ানে প্রভাবশালী ছিল, এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় জীবাশ্ম রেখে গেছে। এই সমস্ত জীবাশ্মের পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় অস্ট্রাকডদের বৈচিত্র্য গোটা সিনোজোয়িক অধিযুগের মধ্যে প্যালিওজিন যুগেই সবচেয়ে কম ছিল। অবশ্য সাম্প্রতিক গবেষণার দ্বারাও এই বিষয়টি পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি যে, বৈচিত্র্যের এই হ্রাস K-Pg সীমানার সমসাময়িক কিনা।

অন্ত্য ক্রিটেশিয়াসের স্ক্লেরাটিনিয়া প্রবাল গণেদের প্রায় ৬০% K-Pg সীমানা পার করতে সক্ষম হয়নি। এই প্রবালদের বিলোপনের পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উষ্ণ ও অগভীর ক্রান্তীয় সমুদ্রে বসবাসকারী ঔপনিবেশিক প্রবালের প্রায় ৯৮% এই সময়ে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যে সমস্ত প্রবাল একা থাকে অর্থাৎ যারা প্রবাল প্রাচীর নির্মাণ করে না এবং সমুদ্রের শীতলতর ও গভীরতর অঞ্চলে (আলোকিত অঞ্চলের নীচে) বাস করে, তাদের উপর উক্ত সীমানার বিলোপনের প্রভাব তেমন নয়। ঔপনিবেশিক প্রবালরা সালোকসংশ্লেষকারী শৈবালদের সঙ্গে মিথোজীবী জীবন কাটায়, আর ঐ সমস্ত শৈবাল K-Pg সীমানাঘটিত বিপর্যয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য প্রবালের জীবাশ্ম থেকে আহরিত তথ্য দিয়ে K-Pg বিলোপন ও পরবর্তী প্যালিওসিন পুনরুত্থানের তত্ত্ব সমর্থন করতে গেলে গোটা K-Pg সীমানা জুড়ে প্রবাল বাস্তুতন্ত্রসমূহে যে ক্রমপরিবর্তন ঘটে চলেছিল, তার কথাও বিবেচনা করতে হবে।

K-Pg সীমানার অব্যবহিত পরে সেফালোপড, কন্টকত্বকী, ও ঝিনুকের গণসমূহ রীতিমত স্পষ্ট ক্ষয়ক্ষতি প্রদর্শন করে। যদিও সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডীদের একটি ক্ষুদ্র পর্ব ব্র্যাকিওপডরা K-Pg বিলুপ্তি ঘটনা কাটিয়ে ওঠে এবং আদি প্যালিওসিনে বহু শাখায় বিভক্ত হয়।

নটিলয়েড (আধুনিক নটিলিডা পর্ব যাদের জ্ঞাতি) এবং সিলয়েড (যা ক্রিটেশিয়াসেই আধুনিক অক্টোপাস, স্কুইড ও কাট্‌ল মাছে ভাগ হয়ে গিয়েছিল) ছাড়া অন্য সমস্ত সেফালোপোডা জাতীয় কম্বোজ শ্রেণির প্রাণি K-Pg সীমানায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। এদের মধ্যে ছিল বাস্তুতন্ত্রগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বেলেম্‌নয়েড, এবং অতি বিচিত্র ও পরিব্যাপ্ত বাসস্থানের অধিকারী, খোলকযুক্ত সেফালোপড অ্যামোনয়েড। গবেষকরা দেখিয়েছেন, বেঁচে যাওয়া নটিলয়েডদের অল্পসংখ্যক ও বৃহত্তর ডিম দিয়ে প্রজননের পদ্ধতিটি বিলুপ্তি ঘটনার সময়ে অ্যামোনয়েডদের থেকে তাদেরকে এগিয়ে রাখতে পেরেছিল। অ্যামোনয়েডরা প্রজননের জন্য প্ল্যাঙ্কটনীয় পদ্ধতি অনুসরণ করত (অসংখ্য ডিম ও প্ল্যাঙ্কটনীয় লার্ভা), যা K-Pg বিলুপ্তি ঘটনায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। অতিরিক্ত গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্র থেকে অ্যামোনয়েডদের বিলুপ্তির পর থেকে নটিলয়েডরা এক বিবর্তনীয় বিকিরণের মধ্য দিয়ে যায় এবং ক্রমশঃ অ্যামোনাইটদের মত জটিল খোলক ও অন্যান্য জটিল শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ প্রদর্শন করে।

কন্টকত্বকী গণের প্রায় ৩৫% K-Pg সীমানায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এদের মধ্যে যারা অন্ত্য ক্রিটেশিয়াসে ক্রান্তীয় অঞ্চলের অগভীর সমুদ্রে বাস করত, তারাই সবচেয়ে বেশি হারে বিলুপ্ত হয়। গভীর সমুদ্র ও মধ্য অক্ষাংশবাসী গণগুলির উপর এই বিলোপনের প্রভাব নগণ্য। বিলুপ্তির এই বিন্যাস থেকে বোঝা যায় বিশেষ করে অগভীর সমুদ্রে প্রবাল প্রাচীর-সম্বলিত সমস্ত কার্বনেট প্ল্যাটফর্মের নিমজ্জন ও তজ্জনিত বাসস্থান লোপের ফলে বিলুপ্তি বেড়েছিল।

রুডিস্ট (প্রাচীর নির্মাতা ঝিনুক) ও ইনোসেরামিড (আধুনিক নোনাজলের ঝিনুকের দৈত্যাকার জ্ঞাতি) সমেত অন্যান্য অমেরুদণ্ডী গোষ্ঠীও K-Pg সীমানায় বিলুপ্ত হয়েছিল।

তথ্যসূত্র

  1. "International Chronostratigraphic Chart"। International Commission on Stratigraphy। ২০১৫। মে ৩০, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১৫ 
  2. Renne, Paul R.; Deino, Alan L.; Hilgen, Frederik J.; Kuiper, Klaudia F.; Mark, Darren F.; Mitchell, William S.; Morgan, Leah E.; Mundil, Roland; Smit, Jan (৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "Time Scales of Critical Events Around the Cretaceous-Paleogene Boundary" (পিডিএফ)Science339 (6120): 684–687। ডিওআই:10.1126/science.1230492পিএমআইডি 23393261বিবকোড:2013Sci...339..684R 
  3. Fortey, Richard (১৯৯৯)। Life: A Natural History of the First Four Billion Years of Life on Earth। Vintage। পৃষ্ঠা 238–260। আইএসবিএন 978-0-375-70261-7 
  4. Muench, David; Muench, Marc; Gilders, Michelle A. (২০০০)। Primal Forces। Portland: Graphic Arts Center Publishing। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 978-1-55868-522-2