লাইলাতুল মেরাজ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{ইসলামিক সংস্কৃতি}}
{{ইসলামিক সংস্কৃতি}}
'''লাইলাতুল মেরাজ''' বা '''মেরাজের রজনী''', যা সচরাচর '''শবে মেরাজ''' হিসাবে আখ্যায়িত হয়, হচ্ছে ইসলাম ধর্মমতে যে রাতে ইসলামের নবী [[মুহাম্মদ|মুহাম্মদের (সা.)]] ঐশ্বরিক উপায়ে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং [[আল্লাহ|স্রষ্টার]] সাথে সাক্ষাৎ করেন সেই রাত। মুসলমানরা এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে এই রাতটি উদযাপন করেন। ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ [[নামাজ]] মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক অর্থাৎ ([[ফরজ]]) নির্ধারণ করা হয় এবং দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নির্দিষ্ট করা হয়।
ইসলাম ধর্মমতে '''লাইলাতুল মেরাজ''' বা '''মেরাজের রাত''', যা সচরাচর '''শবে মেরাজ''' হিসাবে আখ্যায়িত হয়, হচ্ছে যে রাতে ইসলামের নবী [[মুহাম্মদ|মুহাম্মদের (সা.)]] ঐশ্বরিক উপায়ে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং [[আল্লাহ|স্রষ্টার]] সাথে সাক্ষাৎ করেন। অনেক মুসলমান এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে এই রাতটি উদযাপন করেন। ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ [[নামায]], মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক ([[ফরজ]]) করা হয় এবং এই রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন নবী মুহাম্মদ(সা:)।

ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদের (সা:) নবুওয়াত প্রকাশের একাদশ বৎসরের (৬২০ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা:) প্রথমে [[কাবা শরিফ]] থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত [[বায়তুল মুকাদ্দাস]] বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবীদের জামায়াতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি [[বোরাক]] বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি আল্লাহ'র সাক্ষাৎ লাভ করেন। এই সফরে ফেরেশতা জিবরাইল তার সফরসঙ্গী ছিলেন।<ref>[http://www.jugantor.com/last-page/2014/05/26/103557 পবিত্র শবে মেরাজ আজ]</ref> [[কুরআন|কুরআন শরিফের]] [[সুরা বনি ইসরাঈল]] এর প্রথম আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :
ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদের (সা:) নবুওয়াত প্রকাশের একাদশ বৎসরের (৬২০ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা:) প্রথমে [[কাবা শরিফ]] থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত [[বায়তুল মুকাদ্দাস]] বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবীদের জামায়াতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি [[বোরাক]] নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতায় তিনি আল্লাহ'র সাক্ষাৎ লাভ করেন। এই সফরে ফেরেশতা জিবরাইল তার সফরসঙ্গী ছিলেন।<ref>[http://www.jugantor.com/last-page/2014/05/26/103557 পবিত্র শবে মেরাজ আজ]</ref> [[কুরআন|কুরআন শরিফের]] [[সুরা বনি ইসরাঈল]] এর প্রথম আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :
{{quote|"পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।"{{cite quran|17|1}}}} <ref>[http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDVfMjZfMTRfMV8zXzFfMTMzMzY4 পবিত্র শবে মেরাজ] - ittefaq.com</ref>
{{cquote|سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنْ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّه هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ<br />উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি আস্রা বিআবদিহি লাইলাম মিনাল মাসিজদিল হারামী ইলাল মাসিজদিল আকসা <br />বঙ্গার্থ : "পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি তাহার এক বান্দা (মুহাম্মদ)-কে মসজিদে হারাম (কাবাঘর) হইতে মসজিদে আকসা (বাইতুল মোকাদ্দাস) পর্যন্ত পরিভ্রমণ করাইয়াছেন। ইহার মধ্যে তাহাকে অসংখ্য নিদর্শনাবলী দেখান হইয়াছে।}}<ref>[http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDVfMjZfMTRfMV8zXzFfMTMzMzY4 পবিত্র শবে মেরাজ]</ref>


== শব্দগত ব্যুৎপত্তি ==
== শব্দগত ব্যুৎপত্তি ==
যদিও ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ [[কুরআন]]-এ "মেরাজ" শব্দটির উল্লেখ দেখা যায় না, কিন্তু যখন অবিশ্বাসীগণ মুহাম্মদের নবুয়্যতের বা ঐশ্বিক বাণীর প্রমাণস্বরূপ স্বর্গে আরোহণকরত প্রমাণ আনতে বলে, তখন সেখানে উল্লিখিত শব্দ ছিল ''তারকা ফিস সামা-য়ী'': স্বর্গে আরোহণ করো। যেখানে ''তারকা'' মানে আরোহণ করো, আর শব্দটি ''রাকিয়া'' থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ "সে আরোহণ করেছিল"। আরবি ''মেরাজ'' শব্দটি ''আরাজা'' থেকে গৃহীত, যার অর্থ সে আরোহণ করেছিল। কিন্তু এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো ''রাকিয়া'' দ্বারা দৈহিক আরোহণ বোঝায়, অথচ ''আরাজা'' দ্বারা আত্মিক আরোহণ বোঝায়। তাই ক্বোরআন কর্তৃক মুহাম্মদের "আত্মিক আরোহণ" প্রমাণিত।<ref name="book-mhd"/><br /> এপ্রসঙ্গে ক্বোরআনের বক্তব্য হলো: {{cquote|এমন একদিন ফেরেশতা এবং রুহ আল্লাহর দিকে উর্ধ্বগামী হয় যা পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।<ref>আল ক্বোরআন ৭০:</ref>}}
যদিও ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ [[কুরআন]]-এ "মেরাজ" শব্দটির উল্লেখ দেখা যায় না, কিন্তু যখন অবিশ্বাসীগণ মুহাম্মদের নবুয়্যতের বা ঐশ্বিক বাণীর প্রমাণস্বরূপ স্বর্গে আরোহণকরত প্রমাণ আনতে বলে, তখন সেখানে উল্লিখিত শব্দ ছিল ''তারকা ফিস সামা-য়ী'': স্বর্গে আরোহণ করো। কেউ কেউ বলে, ''তারকা'' মানে আরোহণ করো, আর শব্দটি ''রাকিয়া'' থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ "সে আরোহণ করেছিল"। আরবি ''মেরাজ'' শব্দটি ''আরাজা'' থেকে গৃহীত, যার অর্থ সে আরোহণ করেছিল। তারা আরও বলে এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো ''রাকিয়া'' দ্বারা দৈহিক আরোহণ বোঝায়, আর ''আরাজা'' দ্বারা আত্মিক আরোহণ বোঝায়। তাই তাদের মতে মিরাজ হল "আত্মিক আরোহণ"<ref name="book-mhd"/> কিন্তু আহলুস সুন্নাহর আলেমগণের মতে মেরাজ সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। কারণ সকল সাহাবা, তাবেয়ীন তাবে তাবেয়ীনের এটিই বিশ্বাস করতেন।<ref name=km>{{cite web|title=মেরাজ স্বপ্নে হয়েছিল এমন আকীদা রাখা কেমন? হযরত আয়েশা রা. নাকি স্বশরীরে মেরাজ স্বীকার করতেন না?|url=https://www.alkawsar.com/bn/qa/answers/detail/295/|publisher=মাসিক আলকাউসার}}</ref>


== বিবরণ ==
== বিবরণ ==
মেরাজ ঘটেছিল মুহাম্মদ-এর নবুয়্যত বা ঐশ্বিক বাণী প্রাপ্তির দশম বছরে। মেরাজের ঘটনায় দুটো অংশ ছিল: ১. ''আল-ইসরা'' বা [[জেরুজালেম|জেরুজালেমে]] রাত্র-ভ্রমণ, এবং ২. ''মেরাজ'' বা ঊর্ধ্বারোহণ বা স্বর্গারোহণ।<ref name="book-mhd"/>
মেরাজ ঘটেছিল মুহাম্মদ-এর নবুয়্যত বা ঐশ্বিক বাণী প্রাপ্তির দশম বছরে। মেরাজের ঘটনায় দুটো অংশ ছিল:
# ''আল-ইসরা'' বা [[জেরুজালেম|জেরুজালেমে]] নৈশ-ভ্রমণ
# ''মেরাজ'' বা ঊর্ধ্বারোহণ বা স্বর্গারোহণ।<ref name="book-mhd"/>


একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় : নবুয়্যতের দশম বছর, সাত মাস; ২৭ রজব তারিখে মুহাম্মদ (সা:), [[আবু তালিব|আবু তালিবের]] মেয়ে হিন্দার বাড়িতে ছিলেন। আবার অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ঐ রাতে মুহাম্মদ [[কাবা|কাবাতে]] ঘুমান, এবং তিনি কাবা'র ঐ অংশে ঘুমান, যেখানে কোনো ছাদ ছিল না ([[হাতিম]])।<ref name="book-mhd"/>
একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় : নবুয়্যতের দশম বছর, সাত মাস; ২৭ রজব তারিখে মুহাম্মদ (সা:), [[আবু তালিব|আবু তালিবের]] মেয়ে হিন্দার বাড়িতে ছিলেন। আবার অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ঐ রাতে মুহাম্মদ [[কাবা|কাবাতে]] ঘুমান, এবং তিনি কাবা'র ঐ অংশে ঘুমান, যেখানে কোনো ছাদ ছিল না ([[হাতিম]])।<ref name="book-mhd"/>


হিন্দার বিবরণ থেকে জানা যায়, ঐ রাতে, মুহাম্মদ(সা:), রাতের প্রার্থণা সেরে ঘুমাতে যান। খুব ভোরে মুহাম্মদ(সা:) উঠে সবাইকে জাগালেন এবং নামাজ আদায় করলেন। হিন্দাও তাঁর সাথে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে মুহাম্মদ(সা.) জানালেন, {{cquote|ও উম্মেহানি (হিন্দার ডাক নাম), এই ঘরে আমি তোমাদের সাথে প্রার্থণা করেছি। যেমন তোমরা দেখেছ। তারপর আমি পবিত্র স্থানে গিয়েছি এবং সেখানে প্রার্থণা সেরেছি। এবং তারপর তোমাদের সাথে ভোরের প্রার্থণা সারলাম, যেমন তোমরা দেখছো।}}
হিন্দার বিবরণ থেকে জানা যায়, ঐ রাতে, মুহাম্মদ(সা:), রাতের প্রার্থনা সেরে ঘুমাতে যান। খুব ভোরে মুহাম্মদ(সা:) উঠে সবাইকে জাগালেন এবং নামাজ আদায় করলেন। হিন্দাও তাঁর সাথে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে মুহাম্মদ(সা.) জানালেন, {{cquote|ও উম্মেহানি (হিন্দার ডাক নাম), এই ঘরে আমি তোমাদের সাথে প্রার্থণা করেছি। যেমন তোমরা দেখেছ। তারপর আমি পবিত্র স্থানে গিয়েছি এবং সেখানে প্রার্থণা সেরেছি। এবং তারপর তোমাদের সাথে ভোরের প্রার্থণা সারলাম, যেমন তোমরা দেখছো।{{cn}}}}


আনাছ (রা.) মালেক ইবনে সা’সাআ’হ (রা.) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে যেই রাত্রে আল্লাহ তাআলা পরিভ্রমণে নিয়া গিয়াছিলেন সেই রাত্রের ঘটনা বর্ণনায় সাহাবীগণের সম্মুখে তিনি বলেছেন, যখন আমি কা’বা গৃহে উন্মুক্ত অংশ হাতীমে (উপনীত হইলাম এবং তখনও আমি ভাঙ্গা ঘুমে ভারাক্রান্ত) ঊর্ধ্বমুখী শায়িত ছিলাম, হঠাৎ এক আগন্তক [[ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)]] আমার নিকট আসিলেন (এবং আমাকে নিকটবর্তী/ জমজম কূপের সন্নিকটে নিয়া আসিলেন)। অতঃপর আমার বক্ষে ঊধর্ব র্সীমা হইতে পেটের নিম্ন সীমা পর্যন্ত চিরিয়া ফেলিলেন এবং আমার হৃৎপিণ্ড বা কল্বটাকে বাহির করিলেন। অতঃপর একটি স্বর্ণপাত্র উপস্থিত করা হইল, যাহা ইমান (পরিপক্ব সত্যিকার জ্ঞানবর্ধক) বস্তুতে পরিপূর্ণ ছিল । আমার কল্বটাকে ([[জমজম|জমজমের]] পানিতে) ধৌত করিয়া তাহার ভিতরে ঐ বস্তু ভরিয়া দেওয়া হইল এবং কল্বটাকে নির্ধারিত স্থানে রাখিয়া আমার বক্ষকে ঠিকঠাক করিয়া দেওয়া হইল। অতপর আমার জন্য খচ্চর হইতে একটু ছোট, গাধা হইতে একটু বড় শ্বেত বর্ণের একটি বাহন উপস্থিত করা হইল তাহার নাম “বোরাক”, যাহার প্রতি পদক্ষেপ দৃষ্টির শেষ সীমায়। সেই বাহনের উপর আমাকে সওয়ার করা হল। ঘটনা প্রবাহের ভিতর দিয়া জিবরাইল (আ.) আমাকে লইয়া নিকটবর্তী তথা প্রথম আসমানের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলিতে বলিলেন। ভিতর হইতে পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হইল, জিবরাইল স্বীয় পরিচয় প্রদান করিলেন। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে কে আছেন ? জিবরাইল বলিলেন, মুহাম্মদ (সা.) আছেন। বলা হইল, (তাঁহাকে নিয়া আসিবার জন্যই তো আপনাকে) তাঁহার নিকট পাঠান হইয়াছিল? জিবরাইল বলিলেন হাঁ। তারপর আমাদের প্রতি মোবারকবাদ জানাইয়া দরজা খোলা হইল। গেটের ভিতরে প্রবেশ করিয়া তথায় আদম (আ.)-কে দেখিতে পাইলাম । জিবরাইল আমাকে তাঁহার পরিচয় করাইয়া বলিলেন, তিনি আপনার আদি পিতা আদম (আ.), তাঁহাকে সালাম করুন। আমি তাঁহাকে সালাম করিলাম। আমার সলামের উত্তরদানে আমাকে “সুযোগ্য পুত্র ও সুযোগ্য নবী” আখ্যায়িত করিলেন এবং খোশ আমদেদ জানাইলেন
আনাছ (রা.) মালেক ইবনে সা’সাআ’হ (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, নবীকে ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম যেই রাত্রে আল্লাহ তাআলা পরিভ্রমণে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই রাত্রের ঘটনা বর্ণনায় সাহাবীগণের সম্মুখে তিনি বলেছেন, যখন আমি কা’বা গৃহে উন্মুক্ত অংশ হাতীমে (উপনীত হলাম এবং তখনও আমি ভাঙ্গা ঘুমে ভারাক্রান্ত) ঊর্ধ্বমুখী শুয়ে ছিলাম, হঠাৎ এক আগন্তক [[ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)]] আমার নিকট আসলেন (এবং আমাকে নিকটবর্তী/ জমজম কূপের সন্নিকটে নিয়ে আসলেন)। অতঃপর আমার বক্ষে ঊধর্ব সীমা থেকে পেটের নিম্ন সীমা পর্যন্ত চিরে ফেললেন এবং আমার হৃৎপিণ্ড বা কল্বটাকে বের করলেন। অতঃপর একটি স্বর্ণপাত্র উপস্থিত করা হল, যা পরিপক্ব সত্যিকার জ্ঞানবর্ধক বস্তুতে পরিপূর্ণ ছিল । আমার কল্বটাকে ([[জমজম|জমজমের]] পানিতে) ধৌত করে তার ভিতরে ঐ বস্তু ভরে দেয়া হল এবং কল্বটাকে নির্ধারিত স্থানে রেখে আমার বক্ষকে ঠিকঠাক করে দেয়া হল। অতপর আমার জন্য খচ্চর হতে একটু ছোট, গাধা হতে একটু বড় শ্বেত বর্ণের একটি বাহন উপস্থিত করা হল তার নাম “বোরাক”, যার প্রতি পদক্ষেপ দৃষ্টির শেষ সীমায়। সেই বাহনের উপর আমাকে সওয়ার করা হল। ঘটনা প্রবাহের ভিতর দিয়া জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে নিকটবর্তী তথা প্রথম আসমানের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। ভিতর হতে পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হল, জিবরাইল স্বীয় পরিচয় প্রদান করলেন। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে আছেন? জিবরাইল বললেন, মুহাম্মদ (সা.) আছেন। বলা হল, (তাঁকে নিয়ে আসার জন্যই তো আপনাকে) তাঁর নিকট পাঠান হয়েছিল? জিবরাইল বললেন হাঁ। তারপর আমাদের প্রতি মোবারকবাদ জানিয়ে দরজা খোলা হল। গেটের ভিতরে প্রবেশ করে তথায় আদম (আ.)-কে দেখতে পেলাম । জিবরাইল আমাকে তাঁর পরিচয় করে বললেন, তিনি আপনার আদি পিতা আদম (আ.), তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। আমার সালামের উত্তরদানে আমাকে “সুযোগ্য পুত্র ও সুযোগ্য নবী” আখ্যায়িত করলেন এবং খোশ আমদেদ জানালেন


অতপর জিবরাইল আমাকে লইয়া দ্বিতীয় আসমানের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলিতে বলিলেন। এখানেও পূর্বের ন্যায় কথোপকথন হইল এবং শুভেচ্ছ মোবারকবাদ জনাইয়া দরজা খোলা হইল। ভিতরে প্রবেশ করিয়া তথায় ইয়াহইয়া (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ পাইলাম; তাঁহাদের উভয়ের নানী পরস্পর ভগ্নী ছিলেন। জিবরাইল আমাকে তাঁহাদের পরিচয় দানে সালাম করিতে বলিলেন, আমি তাঁহাদিগকে সালাম করিলাম। তাঁহারা আমার সালামের উত্তর প্রদান করত “সুযোগ্য ভ্রাতা সুযোগ্য নবী” বলিয়া আমাকে খোশ আমদেদ জানাইলেন।
অতপর জিবরাইল আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। এখানেও পূর্বের ন্যায় কথোপকথন হল এবং শুভেচ্ছ মোবারকবাদ জানিয়ে দরজা খোলা হল। ভিতরে প্রবেশ করে তথায় ইয়াহয়ে (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম; তাঁদের উভয়ের নানী পরস্পর ভগ্নী ছিলেন। জিবরাইল আমাকে তাঁদের পরিচয় দানে সালাম করতে বললেন, আমি তাঁদেরকে সালাম করলাম। তাঁরা আমার সালামের উত্তর প্রদান করত “সুযোগ্য ভ্রাতা সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে খোশ আমদেদ জানালেন।


অতঃপর জিবরাইল (আ.) আমাকে লইয়া তৃতীয় আসমানের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলিতে বলিলেন। তথায়ও পূর্বের ন্যায় কথোপকথনের পর শুভেচ্ছা স্বাগত জানাইয়া দরজা খোলা হইল। ভিতরে প্রবেশ করিয়া ইউসুফ (আ.)-এর সাক্ষাৎ পাইলাম । জিবরাইল (আ.) আমাকে তাঁহার সহিত পরিচয় করাইয়া সালাম করিতে বলিলেন; আমি তাঁহাকে সালাম করিলামা তিনি সালামের উত্তর দান করত আমাকে “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলিয়া মোবারকবাদ জানাইলেন । অতঃপর আমাকে লইয়া জিবরাইল চতুর্থ আসমানের নিকটে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলিতে বলিলেন। সেখানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তরের পর শুভেচ্ছা স্বাগত জানাইয়া দরজা খোলা হইল । ভিতরে প্রবেশ করিয়া আমরা তথায় ইদ্রিস (আ.)-এর সাক্ষাৎ পাইলাম । জিবরাইল(আ:) আমাকে তাঁহার পরিচয় করাইয়া সালাম করিতে বলিলেন। আমি তাঁহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলিয়া আমাকে মারহাবা জানাইলেন। অতঃপর জিবরাইল আমাকে লইয়া পঞ্চম আসমানে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলিতে বলিলেন। এই স্থানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তর চলার পর শুভেচ্ছ ও মোবারকবাদ দানের সহিত দরজা খোলা হইল। আমি ভিতরে পৌঁছিয়া হারুন (আ.)-এর সাক্ষাৎ পাইলাম জিবরাইল আমাকে তাঁহার পরিচয় দানে সালাম করিতে বলিলেন। আমি সালাম করিলাম। তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলিয়া আমাকে খোশ আমদেদ জানাইলেন। তারপর জিবরাইল আমাকে লইয়া ষষ্ঠ আসমানের দরজায় পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলিতে বলিলেন । এস্থানেও পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হইলে জিবরাইল স্বীয় পরিচয় দান করিলেন, অতঃপর সঙ্গে কে আছে জিজ্ঞাস করা হইল। তিনি বলিলেন, মুহাম্মদ (সা.); বলা হইল, তাঁহাকে তো নিয়া আসিবার জন্য অপনাকে পাঠান হইয়াছিল ? জিব্রাঈল বলিলেন, হাঁ। তৎক্ষণাত শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাইয়া দরজা খোলা হইল। তথায় প্রবেশ করিয়া মুসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ পাইলাম । জিবরাইল(আ:) আমাকে তাঁহার পরিচয় জ্ঞাত করিয়া সালাম করিতে বলিলেন। আমি তাঁহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের উত্তর প্রদান করিলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলিয়া আমাকে মোবারকবাদ জানাইলেন। যখন আমি এই এলাকা ত্যাগ করিয়া যাইতে লাগিলাম তখন মুসা (আ.) কাঁদিতেছিলেন । তাঁহাকে কাঁদিবার কারণ জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি বলিলেন, আমি কাঁদিতেছি এই কারণে যে, আমার উম্মতে বেহেশত লাভকারীর সংখ্যা এই নবীর উম্মতের বেহেশত লাভকারীর সংখ্যা অপেক্ষা কম হইবে অথচ তিনি বয়সের দিক দিয়া যুবক এবং দুনিয়াতে প্রেরিত হইয়াছেন আমার পরে। তারপর জিবরাইল(আ:) আমাকে লইয়া সপ্তম আসমানের প্রতি আরোহণ করিলেন এবং তাহার দ্বারে পৌঁছিয়া দরজা খুলিতে বলিলেন । এস্থনেও পূর্বের ন্যায় সকল প্রশ্নোত্তরই হইল এবং দরজা খুলিয়া শুভেচ্ছা ও স্বাগত জনান হইল। আমি ভিতরে প্রবেশ করিলাম। তথায় ইবরাহিম (আ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ হইল। জিবরাইল আমাকে বলিলেন, তিনি আপনার (বংশের আদি) পিতা, তাঁহাকে সালাম করুন। আমি তাঁহাকে সালাম করিলাম। তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য পুত্র, সুযোগ্য নবী” বলিয়া মারহাবা ও মোবারকবাদ জানাইলেন
অতঃপর জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। তথায়ও পূর্বের ন্যায় কথোপকথনের পর শুভেচ্ছা স্বাগত জানিয়ে দরজা খোলা হল। ভিতরে প্রবেশ করে ইউসুফ (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম । জিবরাইল (আ.) আমাকে তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে সালাম করতে বললেন; আমি তাঁকে সালাম করলাম তিনি সালামের উত্তর দান করত আমাকে “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে মোবারকবাদ জানালেন । অতঃপর আমাকে নিয়ে জিবরাইল চতুর্থ আসমানের নিকটে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। সেখানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তরের পর শুভেচ্ছা স্বাগত জানিয়ে দরজা খোলা হল । ভিতরে প্রবেশ করে আমরা তথায় ইদ্রিস (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম । জিবরাইল(আ:) আমাকে তাঁর পরিচয় করিয়ে সালাম করতে বললেন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে মারহাবা জানালেন। অতঃপর জিবরাইল আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। এই স্থানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তর চলার পর শুভেচ্ছ ও মোবারকবাদ দানের সাথে দরজা খোলা হল। আমি ভিতরে পৌঁছিয়া হারুন (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম জিবরাইল আমাকে তাঁর পরিচয় দানে সালাম করতে বললেন। আমি সালাম করলাম। তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে খোশ আমদেদ জানালেন। তারপর জিবরাইল আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দরজায় পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন । এস্থানেও পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হলে জিবরাইল স্বীয় পরিচয় দান করিলেন, অতঃপর সঙ্গে কে আছে জিজ্ঞাস করা হল। তিনি বললেন, মুহাম্মদ (সা.); বলা হল, তাঁকে তো নিয়ে আসার জন্য অাপনাকে পাঠান হয়েছিল ? জিব্রাঈল বললেন, হাঁ। তৎক্ষণাত শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে দরজা খোলা হল। তথায় প্রবেশ করে মুসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম । জিবরাইল(আ:) আমাকে তাঁর পরিচয় জ্ঞাত করে সালাম করতে বললেন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি সালামের উত্তর প্রদান করিলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে মোবারকবাদ জানালেন। যখন আমি এই এলাকা ত্যাগ করে যাইতে লাগিলাম তখন মুসা (আ.) কাঁদিতেছিলেন । তাঁকে কাঁদিবার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমি কাঁদতেছি এই কারণে যে, আমার উম্মতে বেহেশত লাভকারীর সংখ্যা এই নবীর উম্মতের বেহেশত লাভকারীর সংখ্যা অপেক্ষা কম হবে অথচ তিনি বয়সের দিক দিয়া যুবক এবং দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছেন আমার পরে। তারপর জিবরাইল(আ:) আমাকে নিয়ে সপ্তম আসমানের প্রতি আরোহণ করিলেন এবং তার দ্বারে পৌঁছিয়া দরজা খুলতে বললেন । এস্থনেও পূর্বের ন্যায় সকল প্রশ্নোত্তরই হল এবং দরজা খুলে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জনান হল। আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম। তথায় ইবরাহিম (আ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ হল। জিবরাইল আমাকে বললেন, তিনি আপনার (বংশের আদি) পিতা, তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য পুত্র, সুযোগ্য নবী” বলে মারহাবা ও মোবারকবাদ জানালেন


অতঃপর আমি সিদরাতুল মোনতাহার নিকট উপনীত হইলাম। (তাহা এক বড় প্রকাণ্ড কূল বৃক্ষবিশেষ) তাহার এক একটা কুল হজর অঞ্চলে তৈয়ারি (বড় বড়) মটকার ন্যায় এবং তাহার পাতা হাতীর কানের ন্যায়। জিবরাইল আমাকে বলিলেন, এই বৃক্ষটির নাম “সিদরাতুল মুনতাহা”। তথায় চারটি প্রবাহমান নদী দেখিতে পাইলাম-- দুইটি ভিতরের দিকে প্রবাহিত এবং দুইটি বাইরের দিকে। নদীগুলির নাম সম্পর্কে আমি জিবরাইলকে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেন, ভিতরের দুইটি বেহেশতে প্রবাহমান (সালসাবিল ও কাওসার নামক) দুইটি নদী। আর বাহিরের দিকে প্রবাহমান দুইটি হইল (ভূ-পৃষ্ঠের মিসরে প্রবাহিত) নীল ও (ইরাকে প্রবাহিত) ফোরাত (নদী বা তাহাদের নামের মূল উৎস)। তারপর আমাকে “বায়তুল মা’মুর” পরিদর্শন করান হইল। তথায় প্রতিদিন (এবাদতের জন্য) সত্তর হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হইয়া থাকেন (যে দল একদিন সুযোগ পায় সেই দল চিরকালের জন্য দ্বিতীয় দিন সুযোগ গ্রাপ্ত হয় না)।
অতঃপর আমি সিদরাতুল মোনতার নিকট উপনীত হলাম। (তা এক বড় প্রকাণ্ড কূল বৃক্ষবিশেষ) তার এক একটা কুল হজর অঞ্চলে তৈয়ারি (বড় বড়) মটকার ন্যায় এবং তার পাতা হাতীর কানের ন্যায়। জিবরাইল আমাকে বললেন, এই বৃক্ষটির নাম “সিদরাতুল মুনতা”। তথায় চারটি প্রবাহমান নদী দেখতে পেলাম-- দুইটি ভিতরের দিকে প্রবাহিত এবং দুইটি বাইরের দিকে। নদীগুলির নাম সম্পর্কে আমি জিবরাইলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ভিতরের দুইটি বেহেশতে প্রবাহমান (সালসাবিল ও কাওসার নামক) দুইটি নদী। আর বাহিরের দিকে প্রবাহমান দুইটি হল (ভূ-পৃষ্ঠের মিসরে প্রবাহিত) নীল ও (ইরাকে প্রবাহিত) ফোরাত (নদী বা তাদের নামের মূল উৎস)। তারপর আমাকে “বায়তুল মা’মুর” পরিদর্শন করান হল। তথায় প্রতিদিন (এবাদতের জন্য) সত্তর হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে থাকেন (যে দল একদিন সুযোগ পায় সেই দল চিরকালের জন্য দ্বিতীয় দিন সুযোগ গ্রাপ্ত হয় না)।


অতঃপর (আমার সৃষ্টিগত স্বভাবের স্বচ্ছতা ও নির্মলতা প্রকাশ করিয়া দেখাইবার উদ্দেশে পরীক্ষার জন্য) আমার সম্মুখে তিনটি পাত্র উপস্থিত করা হইল। একটিতে ছিল সুরা বা মদ,অপরটিতে ছিল দুগ্ধ, আরেকটিতে মধু আমি দুগ্ধের পাত্রটি গ্রহণ করিলাম। জিবরাইল(আ:) বলিলেন,দুগ্ধ সত্য ও খাঁটি স্বভাগত ধর্ম ইসলামের স্বরুপ; (সুতরাং, আপনি দুগ্ধের পাত্র গ্রহণ করিয়া ইহাই প্রমাণ করিয়াছেন যে,) আপনি সত্যও স্বভাবগত ধর্ম ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন এবং আপনার উসিলায় আপনার উম্মতও তাহার উপর থাকিবে।
অতঃপর (আমার সৃষ্টিগত স্বভাবের স্বচ্ছতা ও নির্মলতা প্রকাশ করে দেখাইবার উদ্দেশে পরীক্ষার জন্য) আমার সম্মুখে তিনটি পাত্র উপস্থিত করা হল। একটিতে ছিল সুরা বা মদ,অপরটিতে ছিল দুগ্ধ, আরেকটিতে মধু আমি দুগ্ধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। জিবরাইল(আ:) বললেন,দুগ্ধ সত্য ও খাঁটি স্বভাগত ধর্ম ইসলামের স্বরুপ; (সুতরাং, আপনি দুগ্ধের পাত্র গ্রহণ করে ইহাই প্রমাণ করেছেন যে,) আপনি সত্যও স্বভাবগত ধর্ম ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন এবং আপনার উসিলায় আপনার উম্মতও তার উপর থাকিবে।


তারপর আমার শরিয়তে প্রত্যেক দিন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার বিধান করা হইল। আমি ফিরিবার পথে মুসা (আ.) এর নিকটবর্তী পথ অতিক্রম করা কালে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, বিশেষ আদেশ কী লাভ করিয়াছেন ? আমি বলিলাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। মুসা (আ.) বলিলেন, আপনার উম্মত প্রতিদ্ন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নমায আদায় করিয়া যাইতে সক্ষম হইবেনা। আমি,সাধারণ মানুষের স্বভাব সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াছি এবং বণী ইস্রাঈল গণকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করিয়েছি; সুতরাং আপনি পরওয়ারদেগারের দরবারে আপনার উম্মতের জন্য এই আদেশ আরও সহজ করার আবেদন করুন। হযরত (সঃ) বলেন, আমি পরওয়ারদেগারের খাস দরবারে ফিরিয়া গেলাম। পরওয়ারদেগার (দুইবারে পাঁচ পাঁচ করিয়া)দশ ওয়াক্ত কম করিয়া দিলেন। অত:পর আমি আবার মূসার নিকট পৌছালাম,তিনি পূর্বের ন্যায় পরামর্শই আমাকে দিলেন। আমি,পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরিয়া গেলাম এইবারও (ঐরূপ)দশ ওয়াক্ত কম করিয়া দিলেন। পুনরায় মূসার নিকট পৌছিলে তিনি আমাকে এইবারও সেই পরামর্শই দিলেন। আমি পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরিয়া গেলাম এবং (পূর্বের ন্যায়) দশ ওয়াক্ত কম করিয়া দিলেন । এইবারও মূসা (আ:)-র নিকট পৌছিলে পর তিনি আমাকে পূর্বের ন্যায় পরামর্শ দিলেন। আমি পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরিয়া গেলাম, এইবার আমার জন্য প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইল । এইবারও মূসার নিকট পৌছিলে পর আমাকে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, কি আদেশ লাভ করিয়াছেন? আমি বলিলাম, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আদেশ প্রদান করা হইয়াছে। মূসা (আঃ) বলিলেন, আপনার উম্মত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেরও পাবন্দী করিতে পারিবে না। আমি আপনার পুর্বেই সাধারণ মানুষের স্বাভাব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছি এবং বনী ইস্রাঈলগণকে অনেক পরীক্ষা করিয়াছি। আপনি আবার পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরিয়া আরও কম করার আবেদন জানান। হযরত (সঃ) বলেন, আমি মুসাকে বলিলাম, পরওয়ারদেগারের দরবারে অনেক বার আসা-যাওয়া করিয়াছি; এখন আবার যাইতে লজ্জা বোধ হয়, আর যাইব না বরং পাঁচ ওয়াক্তের উপরই সন্তুষ্ট রহিলাম এবং তাহা বরণ করিয়া নিলাম। হযরত (সঃ) বলেন, অতপর যখন আমি ফিরিবার পথে অগ্রসর হইলাম তখন আল্লাহ তাআলার তরফ হইতে একটি ঘোষণা জারি করা হইল-(বান্দাদের প্রাপ্য সওয়াবের দিক দিয়া) “আমার নির্ধারিত সংখ্যা (পঞ্চাশ) বাকী রাখিলাম, (আমার পক্ষে আমার বাক্য অপরিবর্তিতই থাকিবে) অবশ্য কর্মক্ষেত্রে বান্দাদের পক্ষে সহজ ও কম করিয়া দিলাম । (অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে পাঁচ ওয়াক্ত রহিল, কিন্তু সওয়াবের দিক দিয়া পাঁচই পঞ্চাশ পরিগণিত হইবে।) প্রতিটি নেক আমলে দশ ণ্ডণ সওয়াব দান করিব ।” <ref>[http://www.quranhadith.org/hadith/bn%20Bukhari%20Shareef/BukhariShareef-ImamBukhariRA-Vol-5-Page-351-404.pdf সহীহ বুখারী শরীফ, খন্ডঃ ৫, পৃষ্ঠা ৩৫১ – ৩৫৪]</ref> (সংক্ষিপত)
তারপর আমার শরিয়তে প্রত্যেক দিন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার বিধান করা হল। আমি ফেরার পথে মুসা (আ.) এর নিকটবর্তী পথ অতিক্রম করা কালে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, বিশেষ আদেশ কী লাভ করেছেন ? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। মুসা (আ.) বললেন, আপনার উম্মত প্রতিদ্ন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নমায আদায় করে যাইতে সক্ষম হবেনা। আমি,সাধারণ মানুষের স্বভাব সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এবং বণী ইস্রাঈল গণকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করিয়েছি; সুতরাং আপনি পরওয়ারদেগারের দরবারে আপনার উম্মতের জন্য এই আদেশ আরও সহজ করার আবেদন করুন। হযরত (সঃ) বলেন, আমি পরওয়ারদেগারের খাস দরবারে ফিরে গেলাম। পরওয়ারদেগার (দুইবারে পাঁচ পাঁচ করে)দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন। অত:পর আমি আবার মূসার নিকট পৌছালাম,তিনি পূর্বের ন্যায় পরামর্শই আমাকে দিলেন। আমি,পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম এইবারও (ঐরূপ)দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন। পুনরায় মূসার নিকট পৌছালে তিনি আমাকে এইবারও সেই পরামর্শই দিলেন। আমি পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম এবং (পূর্বের ন্যায়) দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন । এইবারও মূসা (আ:)-র নিকট পৌছালে পর তিনি আমাকে পূর্বের ন্যায় পরামর্শ দিলেন। আমি পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম, এইবার আমার জন্য প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল । এইবারও মূসার নিকট পৌছালে পর আমাকে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, কি আদেশ লাভ করেছেন? আমি বললাম, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আদেশ প্রদান করা হয়েছে। মূসা (আঃ) বললেন, আপনার উম্মত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেরও পাবন্দী করতে পারবে না। আমি আপনার পুর্বেই সাধারণ মানুষের স্বাভাব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি এবং বনী ইস্রাঈলগণকে অনেক পরীক্ষা করেছি। আপনি আবার পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে আরও কম করার আবেদন জানান। হযরত (সঃ) বলেন, আমি মুসাকে বললাম, পরওয়ারদেগারের দরবারে অনেক বার আসা-যাওয়া করেছি; এখন আবার যাইতে লজ্জা বোধ হয়, আর যাব না বরং পাঁচ ওয়াক্তের উপরই সন্তুষ্ট থাকলাম এবং তা বরণ করে নিলাম। হযরত (সঃ) বলেন, অতপর যখন আমি ফেরার পথে অগ্রসর হলাম তখন আল্লাহ তাআলার তরফ হতে একটি ঘোষণা জারি করা হল-(বান্দাদের প্রাপ্য সওয়াবের দিক দিয়া) “আমার নির্ধারিত সংখ্যা (পঞ্চাশ) বাকী রাখিলাম, (আমার পক্ষে আমার বাক্য অপরিবর্তিতই থাকিবে) অবশ্য কর্মক্ষেত্রে বান্দাদের পক্ষে সহজ ও কম করে দিলাম । (অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে পাঁচ ওয়াক্ত থাকল, কিন্তু সওয়াবের দিক দিয়া পাঁচই পঞ্চাশ পরিগণিত হবে।) প্রতিটি নেক আমলে দশ ণ্ডণ সওয়াব দান করিব ।” <ref>[http://www.quranhadith.org/hadith/bn%20Bukhari%20Shareef/BukhariShareef-ImamBukhariRA-Vol-5-Page-351-404.pdf সহীহ বুখারী শরীফ, খন্ডঃ ৫, পৃষ্ঠা ৩৫১ – ৩৫৪]</ref> (সংক্ষিপত)

আল ঈসরা‘


=== স্বর্গারোহণ ===
=== স্বর্গারোহণ ===
স্বর্গারোহণের পরে আল্লাহর সাথে মুহাম্মদের যে কথোপকথন হয়, তা সকল মুসলমান দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে, বসা অবস্থায় পাঠ করেন, যাকে বলা হয় "তাশাহ্‌হুদ"।{{cn}}


=== মেরাজের ঘটনা প্রকাশ ===
=== মেরাজের ঘটনা প্রকাশ ===
৩৮ নং লাইন: ৩৭ নং লাইন:


== ইব্রাহিমীয় মেরাজ ==
== ইব্রাহিমীয় মেরাজ ==
ইসলাম ধর্মমতে, মেরাজের (এখানে ঐশ্বিক সান্নিধ্য অর্থে) ঘটনা ঘটেছিল [[ইব্রাহিম]](আ:) এবং [[মুসা|মুসার]](আ:)ক্ষেত্রেও<ref>ক্বোরআন ৭:১৪৩</ref>।<ref name="book-mhd"/>
ইসলাম ধর্মমতে, ঐশ্বিক সান্নিধ্যের ঘটনা ঘটেছিল [[ইব্রাহিম]](আ:) এবং [[মুসা|মুসার]](আ:) ক্ষেত্রেও<ref>কুরআন ৭:১৪৩</ref>।<ref name="book-mhd"/>


== ভিন্ন মত ==
== ভিন্ন মত ==
ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ [[নামায]], মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক ([[ফরজ]]) করা হয় এবং এই রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন নবী মুহাম্মদ(সা:)। তবে কোনো কোনো ইসলামী চিন্তাবিদের মতে, এটা দৈহিক নয়, বরং ছিল আত্মিক আরোহণ&mdash; মুহাম্মদের স্ত্রী [[আয়েশা]] (রা:)এবং [[আবু সুফিয়ান]] (রা:)এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন।<ref name="book-mhd">ইসলামের ধারাবাহিক ইতিহাস: প্রথম খন্ড: ''মহানবী (স:)'', ডক্টর ওসমান গনী, মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা থেকে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত। সংগ্রহের তারিখ: ১৭ জুন ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।</ref>
কোনো কোনো ইসলামী চিন্তাবিদের মতে, এটা দৈহিক নয়, বরং ছিল আত্মিক আরোহণ&mdash; মুহাম্মদের স্ত্রী [[আয়েশা]] (রা:)এবং [[আবু সুফিয়ান]] (রা:)এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন বলা হয়।<ref name="book-mhd">ইসলামের ধারাবাহিক ইতিহাস: প্রথম খন্ড: ''মহানবী (স:)'', ডক্টর ওসমান গনী, মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা থেকে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত। সংগ্রহের তারিখ: ১৭ জুন ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।</ref>
অনেক আলেমগণের মতে, হযরত আয়েশা রা.-এর থেকে যে কথা বর্ণনা করা হয় তা সত্য নয়। বর্ণনাটির সনদ অনির্ভরযোগ্য।<ref name=km/>
যদিও মেরাজের ঘটনা ইসলামে যথেষ্ট অর্থবহ তবুও মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ রাত পালনের নিয়মকে ইসলামী চিন্তাবিদগণ গ্রহণ করেন না; কেননা ঠিক কত তারিখে মেরাজ ঘটেছিল তার কোনো নির্ধারিত বিবরণ পাওয়া যায় না, এব্যাপারে সাহাবাদের মধ্যেই মতভেদ ছিল। শুধুমাত্র এতটুকু সঠিক করে বলা যায় যে, নবুয়্যতের দশম থেকে ত্রয়োদশ বছরের মধ্যে কোনো এক রাতে ঘটেছে মেরাজের ঘটনা।<ref name="book-mhd"/>

যদিও মেরাজের ঘটনা ইসলামে যথেষ্ট অর্থবহ তবুও মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ রাত উৎযাপনের নিয়মকে ইসলামী চিন্তাবিদগণ গ্রহণ করেন না; কেননা ঠিক কত তারিখে মেরাজ ঘটেছিল তার কোনো নির্ধারিত বিবরণ পাওয়া যায় না, এব্যাপারে সাহাবাদের মধ্যেই মতভেদ ছিল। শুধুমাত্র এতটুকু সঠিক করে বলা যায় যে, নবুয়্যতের দশম থেকে ত্রয়োদশ বছরের মধ্যে কোনো এক রাতে ঘটেছে মেরাজের ঘটনা।<ref name="book-mhd"/>


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==
৫৯ নং লাইন: ৬০ নং লাইন:
{{পূর্বনির্ধারিতবাছাই:মেরাজ}}
{{পূর্বনির্ধারিতবাছাই:মেরাজ}}
[[বিষয়শ্রেণী:ইসলামের ইতিহাস]]
[[বিষয়শ্রেণী:ইসলামের ইতিহাস]]
[[বিষয়শ্রেণী:ইসলামী পুরাণ]]
[[বিষয়শ্রেণী:মুহাম্মাদ]]
[[বিষয়শ্রেণী:মুহাম্মাদ]]
[[বিষয়শ্রেণী:কুরআন]]
[[বিষয়শ্রেণী:কুরআন]]

১৩:৪১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ইসলাম ধর্মমতে লাইলাতুল মেরাজ বা মেরাজের রাত, যা সচরাচর শবে মেরাজ হিসাবে আখ্যায়িত হয়, হচ্ছে যে রাতে ইসলামের নবী মুহাম্মদের (সা.) ঐশ্বরিক উপায়ে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং স্রষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেন। অনেক মুসলমান এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে এই রাতটি উদযাপন করেন। ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামায, মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক (ফরজ) করা হয় এবং এই রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন নবী মুহাম্মদ(সা:)।

ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদের (সা:) নবুওয়াত প্রকাশের একাদশ বৎসরের (৬২০ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা:) প্রথমে কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবীদের জামায়াতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি বোরাক নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতায় তিনি আল্লাহ'র সাক্ষাৎ লাভ করেন। এই সফরে ফেরেশতা জিবরাইল তার সফরসঙ্গী ছিলেন।[১] কুরআন শরিফের সুরা বনি ইসরাঈল এর প্রথম আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :

"পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।"[কুরআন ১৭:১]

[২]

শব্দগত ব্যুৎপত্তি

যদিও ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ কুরআন-এ "মেরাজ" শব্দটির উল্লেখ দেখা যায় না, কিন্তু যখন অবিশ্বাসীগণ মুহাম্মদের নবুয়্যতের বা ঐশ্বিক বাণীর প্রমাণস্বরূপ স্বর্গে আরোহণকরত প্রমাণ আনতে বলে, তখন সেখানে উল্লিখিত শব্দ ছিল তারকা ফিস সামা-য়ী: স্বর্গে আরোহণ করো। কেউ কেউ বলে, তারকা মানে আরোহণ করো, আর শব্দটি রাকিয়া থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ "সে আরোহণ করেছিল"। আরবি মেরাজ শব্দটি আরাজা থেকে গৃহীত, যার অর্থ সে আরোহণ করেছিল। তারা আরও বলে এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো রাকিয়া দ্বারা দৈহিক আরোহণ বোঝায়, আর আরাজা দ্বারা আত্মিক আরোহণ বোঝায়। তাই তাদের মতে মিরাজ হল "আত্মিক আরোহণ"[৩]। কিন্তু আহলুস সুন্নাহর আলেমগণের মতে মেরাজ সশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। কারণ সকল সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের এটিই বিশ্বাস করতেন।[৪]

বিবরণ

মেরাজ ঘটেছিল মুহাম্মদ-এর নবুয়্যত বা ঐশ্বিক বাণী প্রাপ্তির দশম বছরে। মেরাজের ঘটনায় দুটো অংশ ছিল:

  1. আল-ইসরা বা জেরুজালেমে নৈশ-ভ্রমণ
  2. মেরাজ বা ঊর্ধ্বারোহণ বা স্বর্গারোহণ।[৩]

একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় : নবুয়্যতের দশম বছর, সাত মাস; ২৭ রজব তারিখে মুহাম্মদ (সা:), আবু তালিবের মেয়ে হিন্দার বাড়িতে ছিলেন। আবার অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ঐ রাতে মুহাম্মদ কাবাতে ঘুমান, এবং তিনি কাবা'র ঐ অংশে ঘুমান, যেখানে কোনো ছাদ ছিল না (হাতিম)।[৩]

হিন্দার বিবরণ থেকে জানা যায়, ঐ রাতে, মুহাম্মদ(সা:), রাতের প্রার্থনা সেরে ঘুমাতে যান। খুব ভোরে মুহাম্মদ(সা:) উঠে সবাইকে জাগালেন এবং নামাজ আদায় করলেন। হিন্দাও তাঁর সাথে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে মুহাম্মদ(সা.) জানালেন,

আনাছ (রা.) মালেক ইবনে সা’সাআ’হ (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, নবীকে ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম যেই রাত্রে আল্লাহ তাআলা পরিভ্রমণে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই রাত্রের ঘটনা বর্ণনায় সাহাবীগণের সম্মুখে তিনি বলেছেন, যখন আমি কা’বা গৃহে উন্মুক্ত অংশ হাতীমে (উপনীত হলাম এবং তখনও আমি ভাঙ্গা ঘুমে ভারাক্রান্ত) ঊর্ধ্বমুখী শুয়ে ছিলাম, হঠাৎ এক আগন্তক ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) আমার নিকট আসলেন (এবং আমাকে নিকটবর্তী/ জমজম কূপের সন্নিকটে নিয়ে আসলেন)। অতঃপর আমার বক্ষে ঊধর্ব সীমা থেকে পেটের নিম্ন সীমা পর্যন্ত চিরে ফেললেন এবং আমার হৃৎপিণ্ড বা কল্বটাকে বের করলেন। অতঃপর একটি স্বর্ণপাত্র উপস্থিত করা হল, যা পরিপক্ব সত্যিকার জ্ঞানবর্ধক বস্তুতে পরিপূর্ণ ছিল । আমার কল্বটাকে (জমজমের পানিতে) ধৌত করে তার ভিতরে ঐ বস্তু ভরে দেয়া হল এবং কল্বটাকে নির্ধারিত স্থানে রেখে আমার বক্ষকে ঠিকঠাক করে দেয়া হল। অতপর আমার জন্য খচ্চর হতে একটু ছোট, গাধা হতে একটু বড় শ্বেত বর্ণের একটি বাহন উপস্থিত করা হল তার নাম “বোরাক”, যার প্রতি পদক্ষেপ দৃষ্টির শেষ সীমায়। সেই বাহনের উপর আমাকে সওয়ার করা হল। ঘটনা প্রবাহের ভিতর দিয়া জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে নিকটবর্তী তথা প্রথম আসমানের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। ভিতর হতে পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হল, জিবরাইল স্বীয় পরিচয় প্রদান করলেন। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে আছেন? জিবরাইল বললেন, মুহাম্মদ (সা.) আছেন। বলা হল, (তাঁকে নিয়ে আসার জন্যই তো আপনাকে) তাঁর নিকট পাঠান হয়েছিল? জিবরাইল বললেন হাঁ। তারপর আমাদের প্রতি মোবারকবাদ জানিয়ে দরজা খোলা হল। গেটের ভিতরে প্রবেশ করে তথায় আদম (আ.)-কে দেখতে পেলাম । জিবরাইল আমাকে তাঁর পরিচয় করে বললেন, তিনি আপনার আদি পিতা আদম (আ.), তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। আমার সালামের উত্তরদানে আমাকে “সুযোগ্য পুত্র ও সুযোগ্য নবী” আখ্যায়িত করলেন এবং খোশ আমদেদ জানালেন ।

অতপর জিবরাইল আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। এখানেও পূর্বের ন্যায় কথোপকথন হল এবং শুভেচ্ছ মোবারকবাদ জানিয়ে দরজা খোলা হল। ভিতরে প্রবেশ করে তথায় ইয়াহয়ে (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম; তাঁদের উভয়ের নানী পরস্পর ভগ্নী ছিলেন। জিবরাইল আমাকে তাঁদের পরিচয় দানে সালাম করতে বললেন, আমি তাঁদেরকে সালাম করলাম। তাঁরা আমার সালামের উত্তর প্রদান করত “সুযোগ্য ভ্রাতা সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে খোশ আমদেদ জানালেন।

অতঃপর জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। তথায়ও পূর্বের ন্যায় কথোপকথনের পর শুভেচ্ছা স্বাগত জানিয়ে দরজা খোলা হল। ভিতরে প্রবেশ করে ইউসুফ (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম । জিবরাইল (আ.) আমাকে তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে সালাম করতে বললেন; আমি তাঁকে সালাম করলাম তিনি সালামের উত্তর দান করত আমাকে “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে মোবারকবাদ জানালেন । অতঃপর আমাকে নিয়ে জিবরাইল চতুর্থ আসমানের নিকটে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। সেখানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তরের পর শুভেচ্ছা স্বাগত জানিয়ে দরজা খোলা হল । ভিতরে প্রবেশ করে আমরা তথায় ইদ্রিস (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম । জিবরাইল(আ:) আমাকে তাঁর পরিচয় করিয়ে সালাম করতে বললেন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে মারহাবা জানালেন। অতঃপর জিবরাইল আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। এই স্থানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তর চলার পর শুভেচ্ছ ও মোবারকবাদ দানের সাথে দরজা খোলা হল। আমি ভিতরে পৌঁছিয়া হারুন (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম জিবরাইল আমাকে তাঁর পরিচয় দানে সালাম করতে বললেন। আমি সালাম করলাম। তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে খোশ আমদেদ জানালেন। তারপর জিবরাইল আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দরজায় পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন । এস্থানেও পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হলে জিবরাইল স্বীয় পরিচয় দান করিলেন, অতঃপর সঙ্গে কে আছে জিজ্ঞাস করা হল। তিনি বললেন, মুহাম্মদ (সা.); বলা হল, তাঁকে তো নিয়ে আসার জন্য অাপনাকে পাঠান হয়েছিল ? জিব্রাঈল বললেন, হাঁ। তৎক্ষণাত শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে দরজা খোলা হল। তথায় প্রবেশ করে মুসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম । জিবরাইল(আ:) আমাকে তাঁর পরিচয় জ্ঞাত করে সালাম করতে বললেন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি সালামের উত্তর প্রদান করিলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে মোবারকবাদ জানালেন। যখন আমি এই এলাকা ত্যাগ করে যাইতে লাগিলাম তখন মুসা (আ.) কাঁদিতেছিলেন । তাঁকে কাঁদিবার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমি কাঁদতেছি এই কারণে যে, আমার উম্মতে বেহেশত লাভকারীর সংখ্যা এই নবীর উম্মতের বেহেশত লাভকারীর সংখ্যা অপেক্ষা কম হবে অথচ তিনি বয়সের দিক দিয়া যুবক এবং দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছেন আমার পরে। তারপর জিবরাইল(আ:) আমাকে নিয়ে সপ্তম আসমানের প্রতি আরোহণ করিলেন এবং তার দ্বারে পৌঁছিয়া দরজা খুলতে বললেন । এস্থনেও পূর্বের ন্যায় সকল প্রশ্নোত্তরই হল এবং দরজা খুলে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জনান হল। আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম। তথায় ইবরাহিম (আ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ হল। জিবরাইল আমাকে বললেন, তিনি আপনার (বংশের আদি) পিতা, তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য পুত্র, সুযোগ্য নবী” বলে মারহাবা ও মোবারকবাদ জানালেন ।

অতঃপর আমি সিদরাতুল মোনতার নিকট উপনীত হলাম। (তা এক বড় প্রকাণ্ড কূল বৃক্ষবিশেষ) তার এক একটা কুল হজর অঞ্চলে তৈয়ারি (বড় বড়) মটকার ন্যায় এবং তার পাতা হাতীর কানের ন্যায়। জিবরাইল আমাকে বললেন, এই বৃক্ষটির নাম “সিদরাতুল মুনতা”। তথায় চারটি প্রবাহমান নদী দেখতে পেলাম-- দুইটি ভিতরের দিকে প্রবাহিত এবং দুইটি বাইরের দিকে। নদীগুলির নাম সম্পর্কে আমি জিবরাইলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ভিতরের দুইটি বেহেশতে প্রবাহমান (সালসাবিল ও কাওসার নামক) দুইটি নদী। আর বাহিরের দিকে প্রবাহমান দুইটি হল (ভূ-পৃষ্ঠের মিসরে প্রবাহিত) নীল ও (ইরাকে প্রবাহিত) ফোরাত (নদী বা তাদের নামের মূল উৎস)। তারপর আমাকে “বায়তুল মা’মুর” পরিদর্শন করান হল। তথায় প্রতিদিন (এবাদতের জন্য) সত্তর হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে থাকেন (যে দল একদিন সুযোগ পায় সেই দল চিরকালের জন্য দ্বিতীয় দিন সুযোগ গ্রাপ্ত হয় না)।

অতঃপর (আমার সৃষ্টিগত স্বভাবের স্বচ্ছতা ও নির্মলতা প্রকাশ করে দেখাইবার উদ্দেশে পরীক্ষার জন্য) আমার সম্মুখে তিনটি পাত্র উপস্থিত করা হল। একটিতে ছিল সুরা বা মদ,অপরটিতে ছিল দুগ্ধ, আরেকটিতে মধু আমি দুগ্ধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। জিবরাইল(আ:) বললেন,দুগ্ধ সত্য ও খাঁটি স্বভাগত ধর্ম ইসলামের স্বরুপ; (সুতরাং, আপনি দুগ্ধের পাত্র গ্রহণ করে ইহাই প্রমাণ করেছেন যে,) আপনি সত্যও স্বভাবগত ধর্ম ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন এবং আপনার উসিলায় আপনার উম্মতও তার উপর থাকিবে।

তারপর আমার শরিয়তে প্রত্যেক দিন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার বিধান করা হল। আমি ফেরার পথে মুসা (আ.) এর নিকটবর্তী পথ অতিক্রম করা কালে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, বিশেষ আদেশ কী লাভ করেছেন ? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। মুসা (আ.) বললেন, আপনার উম্মত প্রতিদ্ন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নমায আদায় করে যাইতে সক্ষম হবেনা। আমি,সাধারণ মানুষের স্বভাব সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এবং বণী ইস্রাঈল গণকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করিয়েছি; সুতরাং আপনি পরওয়ারদেগারের দরবারে আপনার উম্মতের জন্য এই আদেশ আরও সহজ করার আবেদন করুন। হযরত (সঃ) বলেন, আমি পরওয়ারদেগারের খাস দরবারে ফিরে গেলাম। পরওয়ারদেগার (দুইবারে পাঁচ পাঁচ করে)দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন। অত:পর আমি আবার মূসার নিকট পৌছালাম,তিনি পূর্বের ন্যায় পরামর্শই আমাকে দিলেন। আমি,পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম এইবারও (ঐরূপ)দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন। পুনরায় মূসার নিকট পৌছালে তিনি আমাকে এইবারও সেই পরামর্শই দিলেন। আমি পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম এবং (পূর্বের ন্যায়) দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন । এইবারও মূসা (আ:)-র নিকট পৌছালে পর তিনি আমাকে পূর্বের ন্যায় পরামর্শ দিলেন। আমি পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম, এইবার আমার জন্য প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল । এইবারও মূসার নিকট পৌছালে পর আমাকে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, কি আদেশ লাভ করেছেন? আমি বললাম, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আদেশ প্রদান করা হয়েছে। মূসা (আঃ) বললেন, আপনার উম্মত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেরও পাবন্দী করতে পারবে না। আমি আপনার পুর্বেই সাধারণ মানুষের স্বাভাব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি এবং বনী ইস্রাঈলগণকে অনেক পরীক্ষা করেছি। আপনি আবার পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে আরও কম করার আবেদন জানান। হযরত (সঃ) বলেন, আমি মুসাকে বললাম, পরওয়ারদেগারের দরবারে অনেক বার আসা-যাওয়া করেছি; এখন আবার যাইতে লজ্জা বোধ হয়, আর যাব না বরং পাঁচ ওয়াক্তের উপরই সন্তুষ্ট থাকলাম এবং তা বরণ করে নিলাম। হযরত (সঃ) বলেন, অতপর যখন আমি ফেরার পথে অগ্রসর হলাম তখন আল্লাহ তাআলার তরফ হতে একটি ঘোষণা জারি করা হল-(বান্দাদের প্রাপ্য সওয়াবের দিক দিয়া) “আমার নির্ধারিত সংখ্যা (পঞ্চাশ) বাকী রাখিলাম, (আমার পক্ষে আমার বাক্য অপরিবর্তিতই থাকিবে) অবশ্য কর্মক্ষেত্রে বান্দাদের পক্ষে সহজ ও কম করে দিলাম । (অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে পাঁচ ওয়াক্ত থাকল, কিন্তু সওয়াবের দিক দিয়া পাঁচই পঞ্চাশ পরিগণিত হবে।) প্রতিটি নেক আমলে দশ ণ্ডণ সওয়াব দান করিব ।” [৫] (সংক্ষিপত)

স্বর্গারোহণ

মেরাজের ঘটনা প্রকাশ

ফলাফল

মেরাজের ফলে মুসলমানদের জন্য দৈনিক পাঁচবার পাঁচটি নির্দিষ্ট সময়ে নামায আদায় করা ফরজ হয়।[৩]

ইব্রাহিমীয় মেরাজ

ইসলাম ধর্মমতে, ঐশ্বিক সান্নিধ্যের ঘটনা ঘটেছিল ইব্রাহিম(আ:) এবং মুসার(আ:) ক্ষেত্রেও[৬][৩]

ভিন্ন মত

কোনো কোনো ইসলামী চিন্তাবিদের মতে, এটা দৈহিক নয়, বরং ছিল আত্মিক আরোহণ— মুহাম্মদের স্ত্রী আয়েশা (রা:)এবং আবু সুফিয়ান (রা:)এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন বলা হয়।[৩] অনেক আলেমগণের মতে, হযরত আয়েশা রা.-এর থেকে যে কথা বর্ণনা করা হয় তা সত্য নয়। বর্ণনাটির সনদ অনির্ভরযোগ্য।[৪]

যদিও মেরাজের ঘটনা ইসলামে যথেষ্ট অর্থবহ তবুও মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ রাত উৎযাপনের নিয়মকে ইসলামী চিন্তাবিদগণ গ্রহণ করেন না; কেননা ঠিক কত তারিখে মেরাজ ঘটেছিল তার কোনো নির্ধারিত বিবরণ পাওয়া যায় না, এব্যাপারে সাহাবাদের মধ্যেই মতভেদ ছিল। শুধুমাত্র এতটুকু সঠিক করে বলা যায় যে, নবুয়্যতের দশম থেকে ত্রয়োদশ বছরের মধ্যে কোনো এক রাতে ঘটেছে মেরাজের ঘটনা।[৩]

তথ্যসূত্র

  1. পবিত্র শবে মেরাজ আজ
  2. পবিত্র শবে মেরাজ - ittefaq.com
  3. ইসলামের ধারাবাহিক ইতিহাস: প্রথম খন্ড: মহানবী (স:), ডক্টর ওসমান গনী, মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা থেকে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত। সংগ্রহের তারিখ: ১৭ জুন ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
  4. "মেরাজ স্বপ্নে হয়েছিল এমন আকীদা রাখা কেমন? হযরত আয়েশা রা. নাকি স্বশরীরে মেরাজ স্বীকার করতেন না?"। মাসিক আলকাউসার। 
  5. সহীহ বুখারী শরীফ, খন্ডঃ ৫, পৃষ্ঠা ৩৫১ – ৩৫৪
  6. কুরআন ৭:১৪৩

বহিঃসংযোগ