শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
অ →শিক্ষাজীবন: বানান সংশোধন |
অ →শিক্ষাজীবন: সংশোধন |
||
২৮ নং লাইন: | ২৮ নং লাইন: | ||
== শিক্ষাজীবন == |
== শিক্ষাজীবন == |
||
শরৎচন্দ্রের পাঁচ বছর বয়সকালে মতিলাল তাঁকে দেবানন্দপুরের প্যারী পণ্ডিতের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন, যেখানে তিনি দু-তিন বছর শিক্ষালাভ করেন। এরপর [[ভাগলপুর]] শহরে থাকাকালীন তাঁর মামা তাঁকে স্থানীয় দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয়ে ছাত্রবৃত্তিতে ভর্তি করিয়ে দেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র ভাগলপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে মতিলালের ডিহিরির চাকরি চলে গেলে তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে দেবানন্দপুরে ফিরে গেলে শরৎচন্দ্র জেলা স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই সময় তিনি হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে দারিদ্র্যের কারণে স্কুলের ফি দিতে না-পারার কারণে তাঁকে এই বিদ্যালয়ও ত্যাগ করতে হয়। এই সময় তিনি [[কাশীনাথ|'কাশীনাথ']] ও 'ব্রহ্মদৈত্য' নামে দুটি গল্প লেখেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে মতিলাল পুনরায় [[ভাগলপুর]] ফিরে গেলে প্রতিবেশী সাহিত্যিক তথা তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষালাভের প্রতি শরৎচন্দ্রের আগ্রহ |
শরৎচন্দ্রের পাঁচ বছর বয়সকালে মতিলাল তাঁকে দেবানন্দপুরের প্যারী পণ্ডিতের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন, যেখানে তিনি দু-তিন বছর শিক্ষালাভ করেন। এরপর [[ভাগলপুর]] শহরে থাকাকালীন তাঁর মামা তাঁকে স্থানীয় দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয়ে ছাত্রবৃত্তিতে ভর্তি করিয়ে দেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র ভাগলপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে মতিলালের ডিহিরির চাকরি চলে গেলে তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে দেবানন্দপুরে ফিরে গেলে শরৎচন্দ্র জেলা স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই সময় তিনি হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে দারিদ্র্যের কারণে স্কুলের ফি দিতে না-পারার কারণে তাঁকে এই বিদ্যালয়ও ত্যাগ করতে হয়। এই সময় তিনি [[কাশীনাথ|'কাশীনাথ']] ও 'ব্রহ্মদৈত্য' নামে দুটি গল্প লেখেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে মতিলাল পুনরায় [[ভাগলপুর]] ফিরে গেলে প্রতিবেশী সাহিত্যিক তথা তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষালাভের প্রতি শরৎচন্দ্রের আগ্রহ লক্ষ করে তাঁকে তাঁর বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এই বিদ্যালয় থেকে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষা পাস করে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজে ভর্তি হন। এই সময় তিনি তাঁর মাতামহের ছোটো ভাই অঘোরনাথের দুই পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ও গিরীন্দ্রনাথকে প্রতি রাতে পড়াতেন, তার বিনিময়ে অঘোরনাথ তাঁর কলেজে পড়ার প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতেন। এতৎসত্ত্বেও এফএ পরীক্ষার ফি জোগাড় করতে না-পারার জন্য তিনি পরীক্ষায় বসতে পারেননি।<ref name="Nath"/>{{rp|৫৯২-৫৯৩}} |
||
== ভাগ্যান্বেষণ == |
== ভাগ্যান্বেষণ == |
১৯:৪৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | দেবানন্দপুর, হুগলি জেলা, প্রেসিডেন্সি বিভাগ, ব্রিটিশ ভারত | ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬
মৃত্যু | জানুয়ারি ১৬, ১৯৩৮ কলকাতা, প্রেসিডেন্সি বিভাগ, ব্রিটিশ ভারত | (বয়স ৬১)
ছদ্মনাম | অনিলা দেবী[১] |
পেশা | লেখক |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় |
ধরন | উপন্যাস, ছোটগল্প |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | শ্রীকান্ত, দেবদাস |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | জগত্তারিণী পদক (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) |
দাম্পত্যসঙ্গী | শান্তি দেবী, হিরন্ময়ী দেবী |
ওয়েবসাইট | |
এডুলিচার পরিচালিত শরৎ রচনাবলি পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত শরৎ রচনাবলি। |
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ - ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক। তার সাহিত্যকর্মের জন্যে পাঠকের কাছে তিনি 'অপরাজেয় কথাশিল্পী' নামে কথিত হন।
জন্ম ও পরিবার
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি বিভাগের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর দিদি অনিলা দেবী ছাড়াও প্রভাসচন্দ্র ও প্রকাশচন্দ্র নামে তাঁর দুই ভাই ও সুশীলা দেবী নামে তাঁর এক বোন ছিল। শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাঁড়া। দারিদ্র্যের কারণে মতিলাল স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভাগলপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন বলে শরৎচন্দ্রের শৈশবের অধিকাংশ সময় এই শহরেই কেটেছিল। [২]:৫৯১
শিক্ষাজীবন
শরৎচন্দ্রের পাঁচ বছর বয়সকালে মতিলাল তাঁকে দেবানন্দপুরের প্যারী পণ্ডিতের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন, যেখানে তিনি দু-তিন বছর শিক্ষালাভ করেন। এরপর ভাগলপুর শহরে থাকাকালীন তাঁর মামা তাঁকে স্থানীয় দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয়ে ছাত্রবৃত্তিতে ভর্তি করিয়ে দেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র ভাগলপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে মতিলালের ডিহিরির চাকরি চলে গেলে তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে দেবানন্দপুরে ফিরে গেলে শরৎচন্দ্র জেলা স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই সময় তিনি হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে দারিদ্র্যের কারণে স্কুলের ফি দিতে না-পারার কারণে তাঁকে এই বিদ্যালয়ও ত্যাগ করতে হয়। এই সময় তিনি 'কাশীনাথ' ও 'ব্রহ্মদৈত্য' নামে দুটি গল্প লেখেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে মতিলাল পুনরায় ভাগলপুর ফিরে গেলে প্রতিবেশী সাহিত্যিক তথা তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষালাভের প্রতি শরৎচন্দ্রের আগ্রহ লক্ষ করে তাঁকে তাঁর বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এই বিদ্যালয় থেকে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষা পাস করে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজে ভর্তি হন। এই সময় তিনি তাঁর মাতামহের ছোটো ভাই অঘোরনাথের দুই পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ও গিরীন্দ্রনাথকে প্রতি রাতে পড়াতেন, তার বিনিময়ে অঘোরনাথ তাঁর কলেজে পড়ার প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতেন। এতৎসত্ত্বেও এফএ পরীক্ষার ফি জোগাড় করতে না-পারার জন্য তিনি পরীক্ষায় বসতে পারেননি।[২]:৫৯২-৫৯৩
ভাগ্যান্বেষণ
কলেজ ত্যাগ করার পর শরৎচন্দ্র ভাগলপুর শহরের আদমপুর ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে খেলাধুলো ও অভিনয় করে সময় কাটাতে শুরু করেন। এই সময় প্রতিবেশী বিভূতিভূষণ ভট্টের বাড়িতে একটি সাহিত্যসভার আয়োজন করেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি বড়দিদি, 'দেবদাস', চন্দ্রনাথ, শুভদা ইত্যাদি উপন্যাস এবং 'অনুপমার প্রেম', আলো ও ছায়া, 'বোঝা', হরিচরণ' ইত্যাদি গল্প রচনা করেন। এই সময় তিনি বনেলী রাজ-এস্টেটে কয়েকদিন চাকরি করেন। কিন্তু পিতার ওপর কোনো কারণে অভিমানবশত তিনি সন্ন্যাসী সেজে ঘর ছেড়ে চলে যান। এই সময় তাঁর পিতার মৃত্যু হলে তিনি ভাগলপুর ফিরে এসে পিতার শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করে কলকাতা যাত্রা করেন, যেখানে তিনি কলকাতা উচ্চ আদালতের উকিল লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে হিন্দি বইয়ের ইংরেজি তর্জমা করার জন্য মাসে ত্রিশ টাকা বেতনের চাকরি পান। এই সময়, তিনি 'মন্দির' নামে একটি গল্প লিখে 'কুন্তলীন' প্রতিযোগিতায় পাঠালে তা বিজয়ী ঘোষিত হয়।[২]:৫৯৩
ছয় মাস লালমোহনের বাড়িতে কাটানোর পর শরৎচন্দ্র ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে রেঙ্গুনে লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের ভগ্নিপতি উকিল অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে চলে যান। অঘোরনাথ তাঁকে বর্মা রেলওয়ের অডিট অফিসে একটি অস্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। দুই বছর পর তাঁর চাকরি চলে গেলে তিনি তাঁর বন্ধু গিরীন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে পেগু চলে যান ও সেখানে অবিনাশ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে বসবাস করেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে বর্মার পাবলিক ওয়ার্কস অ্যাকাউন্টস অফিসের ডেপুটি একজামিনার মণীন্দ্রনাথ মিত্রের সাহায্যে শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে এই অফিসে চাকরি পান ও পরবর্তী দশ বছর এই চাকরি করেন।[২]:৫৯৩-৫৯৪
১৯১২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে শরৎচন্দ্র এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে এলে 'যমুনা' নামে পত্রিকার সম্পাদক ফনীন্দ্রনাথ পাল তাঁকে পত্রিকার জন্য লেখা পাঠাতে অনুরোধ করেন। সেই অনুযায়ী, শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে ফিরে গিয়ে রামের সুমতি গল্পটি পাঠিয়ে দেন, যা যমুনা পত্রিকায় ১৩১৯ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন ও চৈত্র্য সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি 'ভারতবর্ষ' পত্রিকার জন্যেও লেখা পাঠাতে শুরু করেন। ফনীন্দ্রনাথ পাল তাঁর উপন্যাস বড়দিদি পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন। এমসি সরকার অ্যান্ড সন্স ও গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স তাঁর উপন্যাসগুলি পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন।[২]:৫৯৫
১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছুটি নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে শরৎচন্দ্র চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে রেঙ্গুন বাংলায় ফিরে আসেন।[২]:৫৯৫
বৈবাহিক জীবন
শরৎচন্দ্র বার্মা রেলের হিসাব পরীক্ষক হিসেবে পচাত্তর টাকা মাইনের কেরেনিগিরির চাকরি লাভ করেন ১৯০৫ সালে।[৩] রেঙ্গুনের উপকণ্ঠে বোটাটং পোজনডং অঞ্চলে কলকারখানার মিস্ত্রিদের পল্লিতে বসবাস করতেন। তাঁর বাসার নিচে শান্তি দেবী নামে এক ব্রাহ্মণ মিস্ত্রির কন্যা বসবাস করতেন। তাঁর পিতা তাঁর সঙ্গে এক মদ্যপের বিয়ের ঠিক করলে শান্তি দেবী শরৎচন্দ্রকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে অনুরোধ করায় শরৎচন্দ্র তাঁকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। তাঁদের এক পুত্র সন্তানেরও জন্ম হয়, কিন্তু রেঙ্গুনের প্লেগে আক্রান্ত হয়ে শান্তি দেবী ও তাঁর এক বছরের সন্তান মৃত্যুবরণ করেন। এর অনেক কাল পরে শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে কৃষ্ণদাস অধিকারী নামে এক ভাগ্যান্বেষী ব্যক্তির অনুরোধে তাঁর ১৪ বছরের কন্যা মোক্ষদাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি মোক্ষদার নাম রাখেন হিরন্ময়ী দেবী। তাঁরা নিঃসন্তান ছিলেন।[২]:৫৯৪
শেষ জীবন
মধ্যবয়সে শরৎচন্দ্র হাওড়া জেলার পানিত্রাস (সামতাবেড়) গ্রামের মাটির বাড়িতে বাস করতেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দেউলটি স্টেশন থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটারের পথ সামতাবেড়ের বাড়িটা রূপনারায়ণ নদের তীরে এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। পাশাপাশি দুটো পুকুরে সানের ঘাট, বাগান, ডালিম, পেয়ারা গাছে ঘেরা। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ঘরভাঙানি বন্যায় পাশাপাশি সব গাঁয়ের মাটির বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। শরৎচন্দ্রের মাটির বাড়িটা রূপনারায়ণের কূলে থেকেও আশ্চর্যজনকভাবে রক্ষা পেয়ে যায়। জানালা পর্যন্ত ভিতটা ইঁট-সিমেন্টে গাঁথা ছিল বলে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পড়ে যায়নি। পরে সরকারি উদ্যোগে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে শরৎচন্দ্র শিবপুরেও থাকতেন। শিবপুর ব্যাতাইতলা বাজার থেকে চ্যাটার্জিহাট পর্যন্ত রাস্তা শরৎচন্দ্রের নামেই চালু আছে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র প্রায়শই অসুস্থ থাকতেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি স্বাস্থ্য উদ্ধারের উদ্দেশ্যে দেওঘরে তিন চার মাস কাটিয়ে কলকাতা ফিরে এলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সময় তাঁর যকৃতের ক্যান্সার ধরা পড়ে, যা তাঁর পাকস্থলী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। বিধানচন্দ্র রায়, কুমুদশঙ্কর রায় প্রমুখ চিকিৎসক তাঁর অস্ত্রোপচারের পক্ষে মত দেন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্রথমে দক্ষিণ কলকাতার সাবার্বান হসপিটাল রোডের একটি ইউরোপীয় নার্সিং হোমে ও পরে ৪ নম্বর ভিক্টোরিয়া টেরাসে অবস্থিত পার্ক নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি শল্য চিকিৎসক ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দেহে অস্ত্রোপচার করেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। চার দিন পর ১৬ জানুয়ারি সকাল দশটায় শরৎচন্দ্র শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।[২]:৫৯৭-৫৯৮
প্রকাশিত বই
উপন্যাস
- বড়দিদি, ১৯১৩
- বিরাজবৌ, ১৯১৪
- পন্ডিতমশাই, ১৯১৪
- পল্লী-সমাজ, ১৯১৬
- চন্দ্রনাথ, ১৯১৬
- শ্রীকান্ত-প্রথম পর্ব, ১৯১৭
- দেবদাস, ১৯১৭
- চরিত্রহীন, ১৯১৭
- দত্তা, ১৯১৮
- শ্রীকান্ত-দ্বিতীয় পর্ব, ১৯১৮
- গৃহদাহ, ১৯২০
- বামুনের মেয়ে, ১৯২০
- দেনা পাওনা, ১৯২৩
- নব-বিধান, ১৯২৪
- পথের দাবী, ১৯২৬
- শ্রীকান্ত-তৃতীয় পর্ব, ১৯২৭
- শেষ প্রশ্ন, ১৯৩১
- শ্রীকান্ত-চতুর্থ পর্ব, ১৯৩৩
- বিপ্রদাস, ১৯৩৫
- শুভদা, ১৯৩৮
নাটক
গল্প
- রামের সুমতি ১৯১৪
- পরিণীতা, ১৯১৪
- বিন্দুর ছেলে, ১৯১৪
- পথ-নির্দেশ, ১৯১৪
- মেজদিদি, ১৯১৫
- আঁধারে আলো ১৯১৫
- দর্পচূর্ণ ১৯১৫
- বৈকুণ্ঠের উইল, ১৯১৬
- অরক্ষণীয়া, ১৯১৬
- নিষ্কৃতি, ১৯১৭
- কাশীনাথ, ১৯১৭
- স্বামী, ১৯১৭
- ছবি, ১৯২০
- বিলাসী, ১৯২০
- মামলার ফল, ১৯২০
- হরিলক্ষ্মী, ১৯২৬
- মহেশ, ১৯২৬
- অভাগীর স্বর্গ, ১৯২৬
- অনুরাধা, ১৯৩৪
- সতী, ১৯৩৪
- পরেশ, ১৯৩৪
প্রবন্ধ
চলচ্চিত্রায়ণ
তাঁর সাহিত্য-কর্মকে ঘিরে ভারতীয় উপমহাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটি চলচ্চিত্র বিভিন্ন ভাষায় তৈরি হয়েছে।[৪] তার মধ্যে 'দেবদাস' উপন্যাসটি বাংলা, হিন্দি এবং তেলেগু ভাষায় আটবার তৈরি হয়। বিভিন্ন সময়ে 'দেবদাস' বাংলা ও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রমথেশ বড়ুয়া, কানন দেবী, উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া দেবী, সুমিত্রা মুখার্জি, শাহরুখ খান, ঐশ্বর্য রাই প্রমুখ। এছাড়া সন্ধ্যারানি ও উত্তমকুমার অভিনীত বিখ্যাত বাংলা ছবি 'বড়দিদি', সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় অভিনীত 'পরিণীতা' ছবি নির্মিত হয়। 'পরিণীতা' উপন্যাস দু-বার চলচ্চিত্রায়িত হয়, বাংলা ছবি উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত 'চন্দ্রনাথ', রজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত, উত্তমকুমার ও মাধবী মুখার্জি অভিনীত 'বিরাজ বউ', ঋষিকেশ মুখার্জির হিন্দি ছবি 'মাঝলি দিদি' অন্যতম। 'স্বামী' (১৯৭৭) চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা লেখকের পুরস্কার পান। 'বিন্দুর ছেলে' অবলম্বনে 'ছোটি বহু' (১৯৭১) নামে বিখ্যাত চলচ্চিত্র তৈরি হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে 'দত্তা' চলচ্চিত্রে সুচিত্রা সেন এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া তার নববিধান উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে 'তুমহারি পাখি' নামে একটি ভারতীয় টিভি ধারাবাহিক নির্মিত হয়|
তথ্যসূত্র
- ↑ মাসিক কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, মে ২০১১, পৃ. ৩৩; পরিদর্শনের তারিখ: ২৬ মে ২০১১ খ্রিস্টাব্দ
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ শরৎ রচনাবলি, জন্মশতবার্ষিকী সংস্করণ, প্রথম ভাগ, প্রথম প্রকাশ : ১২ ভাদ্র, ১৩৮২ বঙ্গাব্দ, পুনর্মুদ্রণ কার্তিক ১৪০০, প্রকাশক : নাথ পাবলিশিং, কলকাতা, সম্পাদক : শৈলেন্দ্রনাথ গুহ রায়
- ↑ সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা অাকাদেমি চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ৩৬২।
- ↑ ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (ইংরেজি)