পানামা খাল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
পানামা খালের ইতিহাস। ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা |
সম্পাদনা সারাংশ নেই ট্যাগ: ২০১৭ উৎস সম্পাদনা |
||
৪০ নং লাইন: | ৪০ নং লাইন: | ||
|elev_note = |
|elev_note = |
||
|status = নির্মাণাধীন, আরও প্রশস্ত করার কাজ চলছে |
|status = নির্মাণাধীন, আরও প্রশস্ত করার কাজ চলছে |
||
|nav = পানামা ক্যানেল অথরিটি}} |
|nav = পানামা ক্যানেল অথরিটি |
||
}} |
|||
'''পানামা খাল''' ([[স্পেনীয় ভাষা|স্পেনীয়]]: Canal de Panamá) জাহাজ চলাচলের জন্য [[পানামা]] প্রজাতন্ত্রের ইস্থমাসে নির্মীত একটি খাল যা [[আটলান্টিক]] ও [[প্রশান্ত মহাসাগর|প্রশান্ত]] মহাসাগরকে যুক্ত করেছে। ইস্থমাস বলতে দুটো বড় ভূখণ্ডকে সংযোগকারী সরু ভূমিকে বোঝায় যার অন্য দুই পাশে সাধারণত পানি থাকে। পানামার ইস্থমাস [[উত্তর আমেরিকা|উত্তর]] ও [[দক্ষিণ আমেরিকা]] মহাদেশকে যুক্ত করে এবং আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে আলাদা করে রাখে। এই খালটি তাই এক অর্থে মহাদেশ দুটিকে আলাদা করে মহাসাগর দুটিকে যুক্ত করেছে। খালটির মালিক ও পরিচালক হচ্ছে পানামা প্রজাতন্ত্র। পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্বের উপকূল পর্যন্ত হিসাব করলে খালটির দৈর্ঘ্য ৬৫ কিলোমিটার (৪০ মাইল), কিন্তু আটলান্টিকের (আরও ঠিক করে বললে [[ক্যারিবীয় সাগর|ক্যারিবীয় সাগরের]]) গভীর জল থেকে প্রশান্তের গভীর জল পর্যন্ত হিসাব করলে ৮২ কিলোমিটার (৫০ মাইল)। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জাহাজ চলাচলকারী কৃত্রিম খালের একটি, অন্যটি হচ্ছে [[সুয়েজ খাল]]। পানামা খাল না থাকলে [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র|যুক্তরাষ্ট্রের]] পূর্ব থেকে পশ্চিম উপকূল অভিমুখে যাত্রাকারী যেকোন জাহাজকে দক্ষিণ আমেরিকার [[কেইপ হর্ন]] হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার নটিক্যাল মাইল) পথ অতিক্রম করতে হতো। এছাড়া উত্তর আমেরিকার এক দিকের উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দিকের উপকূলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও পানামা খালের কারণে ৬৫০০ কিলোমিটার কম পথ পাড়ি দিতে হয়। [[ইউরোপ]] এবং পূর্ব এশিয়া ও [[অস্ট্রেলিয়া|অস্ট্রেলিয়ার]] মধ্যে যাতায়াতকারী জাহাজেরও প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার পথ বেঁচে যায়। |
'''পানামা খাল''' ([[স্পেনীয় ভাষা|স্পেনীয়]]: Canal de Panamá) জাহাজ চলাচলের জন্য [[পানামা]] প্রজাতন্ত্রের ইস্থমাসে নির্মীত একটি খাল যা [[আটলান্টিক]] ও [[প্রশান্ত মহাসাগর|প্রশান্ত]] মহাসাগরকে যুক্ত করেছে। ইস্থমাস বলতে দুটো বড় ভূখণ্ডকে সংযোগকারী সরু ভূমিকে বোঝায় যার অন্য দুই পাশে সাধারণত পানি থাকে। পানামার ইস্থমাস [[উত্তর আমেরিকা|উত্তর]] ও [[দক্ষিণ আমেরিকা]] মহাদেশকে যুক্ত করে এবং আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে আলাদা করে রাখে। এই খালটি তাই এক অর্থে মহাদেশ দুটিকে আলাদা করে মহাসাগর দুটিকে যুক্ত করেছে। খালটির মালিক ও পরিচালক হচ্ছে পানামা প্রজাতন্ত্র। পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্বের উপকূল পর্যন্ত হিসাব করলে খালটির দৈর্ঘ্য ৬৫ কিলোমিটার (৪০ মাইল), কিন্তু আটলান্টিকের (আরও ঠিক করে বললে [[ক্যারিবীয় সাগর|ক্যারিবীয় সাগরের]]) গভীর জল থেকে প্রশান্তের গভীর জল পর্যন্ত হিসাব করলে ৮২ কিলোমিটার (৫০ মাইল)। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জাহাজ চলাচলকারী কৃত্রিম খালের একটি, অন্যটি হচ্ছে [[সুয়েজ খাল]]। পানামা খাল না থাকলে [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র|যুক্তরাষ্ট্রের]] পূর্ব থেকে পশ্চিম উপকূল অভিমুখে যাত্রাকারী যেকোন জাহাজকে দক্ষিণ আমেরিকার [[কেইপ হর্ন]] হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার নটিক্যাল মাইল) পথ অতিক্রম করতে হতো। এছাড়া উত্তর আমেরিকার এক দিকের উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দিকের উপকূলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও পানামা খালের কারণে ৬৫০০ কিলোমিটার কম পথ পাড়ি দিতে হয়। [[ইউরোপ]] এবং পূর্ব এশিয়া ও [[অস্ট্রেলিয়া|অস্ট্রেলিয়ার]] মধ্যে যাতায়াতকারী জাহাজেরও প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার পথ বেঁচে যায়। |
||
==ইতিহাস== |
|||
পানামা খাল খনন হয় ১৯০৪ সালে ও শেষ হয় ১৯১৪ সালে কিন্তু এর ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ। স্প্যানিশ অভিযাত্রী ভাস্কো নুয়েঞ্জ ডি বালবোয়াই প্রথম ইউরোপীয়, যিনি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের এ সম্মিলনের কথা বলেছিলেন। সে সময়ের স্প্যানিশ রাজা বালবোয়াইয়ের এ ধারণাকে উড়িয়ে দেন। তবে ১৫৩৪ সালে অপর রাজা চার্লস পঞ্চম প্রস্তাবটি যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটি তদন্ত করে জানায় একটি জাহাজ প্রবেশ করতে পারে এমন খাল ওই স্থানে খনন করা অসম্ভব। এরপর সময় কেটে যায় শতাব্দির পর শতাব্দি। পানামা খাল আর খনন করা যায়নি। আঠারো শতকের শেষের দিকে এ পথটিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের চোখ পড়ে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন হস্তক্ষেপেই তৈরি হয়েছে পানামা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমে খালটি নিকারাগুয়া দিয়ে করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নিকারাগুয়ার রাজনৈতিক অসন্তোষ ও ফরাসি প্রকৌশলী ফিলিপ বোনাও ভারিল্লার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র এ খাল পানামা দিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে দুই সাগরকে এভাবে এক করাটা একেবারেই অসম্ভব ছিল। এর মূল কারণ পানির উচ্চতার তারতম্য। খালটি দুই সমুদ্র সমতল হতে ৮৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। ঠিক এ কারণেই পনেরো শতকে পানামা খাল তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ১৮৮১ সালে খালটি খনন শুরু করে ফ্রান্স। প্রকৌশলগত ত্র“টির কারণে আবারও ব্যর্থ হয় কাজ। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার এটি নিয়ে কলম্বিয়া সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করার চেষ্টা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও সামরিক নৌজাহাজগুলো সহজে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে নেয়ার জন্য খাল খননের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে কলম্বিয়া সরকার। আর এ প্রত্যাখ্যানের পরই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক চালে একটি কথিত অভ্যুত্থান ঘটে এবং ১৯০৩ সালে জন্ম হয় পানামা নামের স্বাধীন রাষ্ট্রের। |
পানামা খাল খনন হয় ১৯০৪ সালে ও শেষ হয় ১৯১৪ সালে কিন্তু এর ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ। স্প্যানিশ অভিযাত্রী ভাস্কো নুয়েঞ্জ ডি বালবোয়াই প্রথম ইউরোপীয়, যিনি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের এ সম্মিলনের কথা বলেছিলেন। সে সময়ের স্প্যানিশ রাজা বালবোয়াইয়ের এ ধারণাকে উড়িয়ে দেন। তবে ১৫৩৪ সালে অপর রাজা চার্লস পঞ্চম প্রস্তাবটি যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটি তদন্ত করে জানায় একটি জাহাজ প্রবেশ করতে পারে এমন খাল ওই স্থানে খনন করা অসম্ভব। এরপর সময় কেটে যায় শতাব্দির পর শতাব্দি। পানামা খাল আর খনন করা যায়নি। আঠারো শতকের শেষের দিকে এ পথটিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের চোখ পড়ে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন হস্তক্ষেপেই তৈরি হয়েছে পানামা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমে খালটি নিকারাগুয়া দিয়ে করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নিকারাগুয়ার রাজনৈতিক অসন্তোষ ও ফরাসি প্রকৌশলী ফিলিপ বোনাও ভারিল্লার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র এ খাল পানামা দিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে দুই সাগরকে এভাবে এক করাটা একেবারেই অসম্ভব ছিল। এর মূল কারণ পানির উচ্চতার তারতম্য। খালটি দুই সমুদ্র সমতল হতে ৮৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। ঠিক এ কারণেই পনেরো শতকে পানামা খাল তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ১৮৮১ সালে খালটি খনন শুরু করে ফ্রান্স। প্রকৌশলগত ত্র“টির কারণে আবারও ব্যর্থ হয় কাজ। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার এটি নিয়ে কলম্বিয়া সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করার চেষ্টা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও সামরিক নৌজাহাজগুলো সহজে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে নেয়ার জন্য খাল খননের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে কলম্বিয়া সরকার। আর এ প্রত্যাখ্যানের পরই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক চালে একটি কথিত অভ্যুত্থান ঘটে এবং ১৯০৩ সালে জন্ম হয় পানামা নামের স্বাধীন রাষ্ট্রের। |
||
খাল খননে আর বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের। পানামা-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৯০৪ সালে খালটি পুনরায় খনন শুরু করে। শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা ব্যর্থ হয়। ভারি বর্ষণ, আর্দ্রতা ও স্থানীয় বিভিন্ন রোগ ছিল খাল খননের অন্যতম প্রতিবন্ধক। এর আগেও স্পেন খাল খনন শুরু করলে নানা কারণে বিশ হাজার শ্রমিক দুর্ঘটনা ও মশার কামড়ে হলুদ জ্বর হয়ে মারা গেলে খনন বন্ধ রাখা হয়। যুক্তরাষ্ট্র তার কারিগরি সক্ষমতা দিয়ে শ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনে। তারপরও পাঁচ হাজার ছয়শ শ্রমিক মারা যায়। তৈরি হয় সভ্যতার অনন্য মাপকাঠি পানামা যোজক। পানামা খাল সংকীর্ণ আর অগভীর হওয়ায় যে কোনো জাহাজকেই এ খাল অতিক্রম করতে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হয়। ৭৭.১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে লেগে যায় ১৫ ঘণ্টা। তাই ২০০৭ সালে সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ৫.২ বিলিয়ন ডলারের এক প্রকল্প নেয়া হয়। বর্তমানে একটির বদলে পাশাপাশি দুটি জাহাজ চলতে পারে। |
খাল খননে আর বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের। পানামা-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৯০৪ সালে খালটি পুনরায় খনন শুরু করে। শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা ব্যর্থ হয়। ভারি বর্ষণ, আর্দ্রতা ও স্থানীয় বিভিন্ন রোগ ছিল খাল খননের অন্যতম প্রতিবন্ধক। এর আগেও স্পেন খাল খনন শুরু করলে নানা কারণে বিশ হাজার শ্রমিক দুর্ঘটনা ও মশার কামড়ে হলুদ জ্বর হয়ে মারা গেলে খনন বন্ধ রাখা হয়। যুক্তরাষ্ট্র তার কারিগরি সক্ষমতা দিয়ে শ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনে। তারপরও পাঁচ হাজার ছয়শ শ্রমিক মারা যায়। তৈরি হয় সভ্যতার অনন্য মাপকাঠি পানামা যোজক। পানামা খাল সংকীর্ণ আর অগভীর হওয়ায় যে কোনো জাহাজকেই এ খাল অতিক্রম করতে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হয়। ৭৭.১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে লেগে যায় ১৫ ঘণ্টা। তাই ২০০৭ সালে সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ৫.২ বিলিয়ন ডলারের এক প্রকল্প নেয়া হয়। বর্তমানে একটির বদলে পাশাপাশি দুটি জাহাজ চলতে পারে। |
||
<ref>[http://www.britannica.com/EBchecked/topic/440784/Panama-Canal Panama Canal], [[এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা]], ১৬ জুন ২০১৩ তারিখে সংগৃহীত</ref> |
<ref>[http://www.britannica.com/EBchecked/topic/440784/Panama-Canal Panama Canal], [[এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা]], ১৬ জুন ২০১৩ তারিখে সংগৃহীত</ref> |
||
<ref> |
|||
https://www.jugantor.com/oneday-everyday/2016/01/24/6125/পানামা-খালের-জানা-অজানা-:-পর্ব-১ |
|||
== তথ্যসূত্র == |
== তথ্যসূত্র == |
১২:২২, ৩০ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
পানামা খাল (স্পেনীয়: Canal de Panamá) জাহাজ চলাচলের জন্য পানামা প্রজাতন্ত্রের ইস্থমাসে নির্মীত একটি খাল যা আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে। ইস্থমাস বলতে দুটো বড় ভূখণ্ডকে সংযোগকারী সরু ভূমিকে বোঝায় যার অন্য দুই পাশে সাধারণত পানি থাকে। পানামার ইস্থমাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশকে যুক্ত করে এবং আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে আলাদা করে রাখে। এই খালটি তাই এক অর্থে মহাদেশ দুটিকে আলাদা করে মহাসাগর দুটিকে যুক্ত করেছে। খালটির মালিক ও পরিচালক হচ্ছে পানামা প্রজাতন্ত্র। পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্বের উপকূল পর্যন্ত হিসাব করলে খালটির দৈর্ঘ্য ৬৫ কিলোমিটার (৪০ মাইল), কিন্তু আটলান্টিকের (আরও ঠিক করে বললে ক্যারিবীয় সাগরের) গভীর জল থেকে প্রশান্তের গভীর জল পর্যন্ত হিসাব করলে ৮২ কিলোমিটার (৫০ মাইল)। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জাহাজ চলাচলকারী কৃত্রিম খালের একটি, অন্যটি হচ্ছে সুয়েজ খাল। পানামা খাল না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব থেকে পশ্চিম উপকূল অভিমুখে যাত্রাকারী যেকোন জাহাজকে দক্ষিণ আমেরিকার কেইপ হর্ন হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার নটিক্যাল মাইল) পথ অতিক্রম করতে হতো। এছাড়া উত্তর আমেরিকার এক দিকের উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দিকের উপকূলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও পানামা খালের কারণে ৬৫০০ কিলোমিটার কম পথ পাড়ি দিতে হয়। ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে যাতায়াতকারী জাহাজেরও প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার পথ বেঁচে যায়।
ইতিহাস
পানামা খাল খনন হয় ১৯০৪ সালে ও শেষ হয় ১৯১৪ সালে কিন্তু এর ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ। স্প্যানিশ অভিযাত্রী ভাস্কো নুয়েঞ্জ ডি বালবোয়াই প্রথম ইউরোপীয়, যিনি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের এ সম্মিলনের কথা বলেছিলেন। সে সময়ের স্প্যানিশ রাজা বালবোয়াইয়ের এ ধারণাকে উড়িয়ে দেন। তবে ১৫৩৪ সালে অপর রাজা চার্লস পঞ্চম প্রস্তাবটি যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটি তদন্ত করে জানায় একটি জাহাজ প্রবেশ করতে পারে এমন খাল ওই স্থানে খনন করা অসম্ভব। এরপর সময় কেটে যায় শতাব্দির পর শতাব্দি। পানামা খাল আর খনন করা যায়নি। আঠারো শতকের শেষের দিকে এ পথটিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের চোখ পড়ে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন হস্তক্ষেপেই তৈরি হয়েছে পানামা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমে খালটি নিকারাগুয়া দিয়ে করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নিকারাগুয়ার রাজনৈতিক অসন্তোষ ও ফরাসি প্রকৌশলী ফিলিপ বোনাও ভারিল্লার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র এ খাল পানামা দিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে দুই সাগরকে এভাবে এক করাটা একেবারেই অসম্ভব ছিল। এর মূল কারণ পানির উচ্চতার তারতম্য। খালটি দুই সমুদ্র সমতল হতে ৮৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। ঠিক এ কারণেই পনেরো শতকে পানামা খাল তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ১৮৮১ সালে খালটি খনন শুরু করে ফ্রান্স। প্রকৌশলগত ত্র“টির কারণে আবারও ব্যর্থ হয় কাজ। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার এটি নিয়ে কলম্বিয়া সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করার চেষ্টা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও সামরিক নৌজাহাজগুলো সহজে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে নেয়ার জন্য খাল খননের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে কলম্বিয়া সরকার। আর এ প্রত্যাখ্যানের পরই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক চালে একটি কথিত অভ্যুত্থান ঘটে এবং ১৯০৩ সালে জন্ম হয় পানামা নামের স্বাধীন রাষ্ট্রের। খাল খননে আর বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের। পানামা-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৯০৪ সালে খালটি পুনরায় খনন শুরু করে। শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা ব্যর্থ হয়। ভারি বর্ষণ, আর্দ্রতা ও স্থানীয় বিভিন্ন রোগ ছিল খাল খননের অন্যতম প্রতিবন্ধক। এর আগেও স্পেন খাল খনন শুরু করলে নানা কারণে বিশ হাজার শ্রমিক দুর্ঘটনা ও মশার কামড়ে হলুদ জ্বর হয়ে মারা গেলে খনন বন্ধ রাখা হয়। যুক্তরাষ্ট্র তার কারিগরি সক্ষমতা দিয়ে শ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনে। তারপরও পাঁচ হাজার ছয়শ শ্রমিক মারা যায়। তৈরি হয় সভ্যতার অনন্য মাপকাঠি পানামা যোজক। পানামা খাল সংকীর্ণ আর অগভীর হওয়ায় যে কোনো জাহাজকেই এ খাল অতিক্রম করতে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হয়। ৭৭.১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে লেগে যায় ১৫ ঘণ্টা। তাই ২০০৭ সালে সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ৫.২ বিলিয়ন ডলারের এক প্রকল্প নেয়া হয়। বর্তমানে একটির বদলে পাশাপাশি দুটি জাহাজ চলতে পারে।
তথ্যসূত্র
- ↑ Panama Canal, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, ১৬ জুন ২০১৩ তারিখে সংগৃহীত
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |