বেশান্তর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Debjitpaul10 (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা
Debjitpaul10 (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা
২৫ নং লাইন: ২৫ নং লাইন:


===ড্র্যাগ===
===ড্র্যাগ===
[[File:Lady Bunny and Sherry Vine by David Shankbone.JPG|thumb|left|225px|প্রদর্শন-কলায় বেশান্তর করেন ড্র্যাগ কুইনরা।]]
বেশান্তর ব্যবহার করে একটি বিশেষ প্রদর্শন-কলাকে ইংরেজিতে ''ড্র্যাগ'' বলে। এই কলায় পুরুষেরা অতিরঞ্জিত উগ্র নারীচরিত্রে অভিনয় করে, এদেরকে ইংরজিতে ''ড্র্যাগ কুইন'' বলা হয়। এরা অত্যন্ত উত্তেজক ধরনের খোলামেলা পোশাক, হাই-হিল জুতো, কড়া মেকআপ আর পরচুলো ব্যবহার করে। ড্র্যাগ কুইনরা সাধারণত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র কিংবা পপ-সঙ্গীত তারকাকে অনুকরণ করে অভিনয় করে। এই একই কৌশল যদি কোনো মহিলাই ব্যবহার করে, তবে তাকে ''ফক্স কুইন'' বলা হয়।
বেশান্তর ব্যবহার করে একটি বিশেষ প্রদর্শন-কলাকে ইংরেজিতে ''ড্র্যাগ'' বলে। এই কলায় পুরুষেরা অতিরঞ্জিত উগ্র নারীচরিত্রে অভিনয় করে, এদেরকে ইংরজিতে ''ড্র্যাগ কুইন'' বলা হয়। এরা অত্যন্ত উত্তেজক ধরনের খোলামেলা পোশাক, হাই-হিল জুতো, কড়া মেকআপ আর পরচুলো ব্যবহার করে। ড্র্যাগ কুইনরা সাধারণত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র কিংবা পপ-সঙ্গীত তারকাকে অনুকরণ করে অভিনয় করে। এই একই কৌশল যদি কোনো মহিলাই ব্যবহার করে, তবে তাকে ''ফক্স কুইন'' বলা হয়।



১০:৪৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আর্ভিং বার্লিনের "দিস ইজ় দ্য আর্মি, মিস্টার জোন্‌স", বেশান্তরকারীদের দ্বারা অভিনীত (১৯৪২)

বেশান্তর (ইংরেজি: Cross-dressing; ক্রসড্রেসিং) হল কোনো ব্যক্তির বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে জড়িত নির্দিষ্ট সমাজ-নির্ধারিত পোশাক অথবা অন্যান্য সামগ্রী ওই ব্যক্তির দ্বারা পরিধান করার ক্রিয়া। আধুনিক যুগে এবং অতীতে ছদ্মবেশ, স্বাচ্ছন্দ্য এবং আত্ম-সন্ধানের উদ্দেশ্যে বেশান্তর ব্যবহৃত হয়েছে।

সুদূর অতীত থেকেই প্রায় প্রতিটি মানব সমাজ প্রত্যেকটি লিঙ্গের জন্য কাঙ্ক্ষিত ভঙ্গিমা, রঙ এবং তাদের পরিধেয় পোশাকের ধরন সম্পর্কিত নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করেছে। অনুরূপে, কোনো লিঙ্গের জন্য যথাযথ পোশাক কী, তার সংজ্ঞা নির্ধারণহেতু অধিকাংশ সমাজেরই গুচ্ছের বিধিনির্দেশ, দৃষ্টিভঙ্গি, এমনকি আইনও রয়েছে।

বেশান্তর পরিভাষাটি এমনই একটি ঘটনা অথবা আচরণকে নির্দেশ করে, যেই আচরণ প্রকাশের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। অনেক ক্ষেত্রেই ভাবা হয়, এই ঘটনাটি রূপান্তরকামী পরিচয় নয়তো যৌনতা, কামুকতা, আর সমকামিতার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। কিন্তু এই পরিভাষাটি বাস্তবে নিজেই এরূপ কোনো উদ্দেশ্যকে সমর্থন করে না, এবং পরিভাষাটি কোনোভাবেই ব্যক্তিবিশেষের লিঙ্গ-পরিচয়ের সাথে সম্পর্কিত নয়।

ইতিহাস

ফ্রান্সেস বেঞ্জামিন জনস্টন (ডানে) তাঁর দুই বেশান্তরকারী বন্ধুর সাথে; জনস্টনের অনুসারে, "মহিলাটি" হলেন চিত্রকর মিল্‌স থম্পসন।

ইতিহাসের পাতা জুড়ে অনেক সভ্যতাতেই বেশান্তর এর চর্চা হয়েছে। হিন্দু, গ্রিক, নর্স পুরাণে এর অনেক উদাহরণ আছে। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন স্তরের অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকেও বেশবদল করতে দেখা গেছে। লোককথা, সাহিত্য, থিয়েটার ও সংগীতে বেশান্তরের উজ্জ্বল ইতিহাস আছে। কাবুকি, কোরীয় শমন, চিনে অপেরা যার উদাহরণ।

হিন্দু পুরাণে বেশান্তর একটি পরিচিত ঘটনা। রামায়ণে উত্তরকাণ্ডে রাজা ইলার কাহিনিতে ভগবান শিবকে নারীবেশে পার্বতীর সাথে জলকেলি করতে দেখা যায়। সমুদ্র মন্থনে বিষ্ণু অসুরদের লক্ষ্যচ্যুত করতে "মোহিনী" নামে নারীর রূপ ধারণ করেন। সেটাকেও বেশান্তরের রূপভেদ বলা যেতে পারে। মহাভারতে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বেশান্তর-সম্বন্ধীয়। বিরাটপর্বে অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন অর্জুন প্রায় এক বছর "বৃহন্নলা" নামে নর্তকী নারীর ছদ্মবেশ ধরে মৎস্যরাজ্যে যাপন করেছিলেন (বর্তমানে বৃহন্নলা শব্দটি রূপান্তরকামী অর্থে ব্যবহৃত হয়)। রাজা দ্রুপদের কন্যা শিখণ্ডী পুরুষ সেজে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। আবার মৌষলপর্বে যাদবরা কৃষ্ণপুত্র শাম্বকে জোরপূর্বক গর্ভবতী নারী সাজিয়ে বিদ্রূপ করেছিল।

ভারতীয় থিয়েটার ও চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বেশান্তরের অনেক উদাহরণ আছে। তৎকালীন সমাজে মেয়েদের অভিনয় করা প্রথা-বিরুদ্ধ ছিল বলে, নারীচরিত্রে পুরুষদেরই অভিনয় করতে হত। ১৯১৩ সালে নির্মিত প্রথম ভারতীয় ছবি "রাজা হরিশ্চন্দ্র"-তে হরিশ্চন্দ্রের স্ত্রী তারাদেবীর ভূমিকায় অভিনয় করেন আন্না সালুঙ্কে নামে এক মরাঠি যুবক। বাংলা থিয়েটারেও অনুরূপ দৃষ্টান্তের অভাব নেই। শোনা যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর মেয়ে সেজে নারী-চরিত্রাভিনয়ে পারদর্শী ছিলেন। মাইকেল মধুসূদন দত্তের কৃষ্ণকুমারী নাটকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ অহল্যাদেবী নামে এক সাহসী রানির ভূমিকায় অভিনয় করেন।

প্রকারভেদ

বেশান্তর অনেক ধরনের হতে পারে এবং কোনো ব্যক্তির এই আচরণে জড়িত হবারও অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু মানুষ তার বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরেন নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অথবা পোশাকশৈলীর জন্য। এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির পোশাক অন্য মানুষের কাছে বেশান্তর বলে বিবেচিত হয় না অথবা হওয়া উচিত নয়। আবার কিছু মানুষ অন্যদের চমকে দিতে বা সামাজিক বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখাতে বেশান্তর করেন।

লিঙ্গ-পরিচয় গোপন করতে, অর্থাৎ মেয়েরা সমাজে পুরুষ হিসেবে বাঁচতে এবং ছেলেরা নারী হিসেবে কাটাতে বেশান্তর করে। গল্পকাহিনীতে লিঙ্গ-ছদ্মবেশ বারবার ব্যবহৃত হয়েছে আর সাহিত্য, থিয়েটার ও চলচ্চিত্রে এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সেনাবাহিনীর মতো পুরুষপ্রধান পেশায় অংশ নিতে কিছু মহিলা ইতিহাসে বেশান্তর করেছেন। উল্টোদিকে, সেনাবাহিনী থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য, নয়তো রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রতিবাদে ভূমিকা নিতে কিছু পুরুষ বেশান্তর করেছেন।

নোরা ভিনসেন্ট-এর প্রকল্প সেল্ফ-মেড ম্যান অনুসারে, গুপ্ত-সাংবাদিকতায় বেশান্তর করতে হতে পারে।

যে সব মঞ্চনাটক একটি লিঙ্গের মানুষ দ্বারা পরিচালিত হয়, সেখানে কিছু অভিনেতা বিপরীত লিঙ্গের কোনো চরিত্রে অভিনয় করতে বেশান্তর করেন। এক্ষেত্রে মূলত পুরুষরাই মহিলাদের পোশাক পরেন, এবং এটি অনেক সময় কৌতুকের পরিবেশ তৈরি করে ও হাসির উদ্রেক করে।

ড্র্যাগ

প্রদর্শন-কলায় বেশান্তর করেন ড্র্যাগ কুইনরা।

বেশান্তর ব্যবহার করে একটি বিশেষ প্রদর্শন-কলাকে ইংরেজিতে ড্র্যাগ বলে। এই কলায় পুরুষেরা অতিরঞ্জিত উগ্র নারীচরিত্রে অভিনয় করে, এদেরকে ইংরজিতে ড্র্যাগ কুইন বলা হয়। এরা অত্যন্ত উত্তেজক ধরনের খোলামেলা পোশাক, হাই-হিল জুতো, কড়া মেকআপ আর পরচুলো ব্যবহার করে। ড্র্যাগ কুইনরা সাধারণত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র কিংবা পপ-সঙ্গীত তারকাকে অনুকরণ করে অভিনয় করে। এই একই কৌশল যদি কোনো মহিলাই ব্যবহার করে, তবে তাকে ফক্স কুইন বলা হয়।

ড্র্যাগ কুইনের বিপরীত ঘটনা, অর্থাৎ কোনো পুরুষ চিত্রতারকা বা সংগীত তারকাকে অনুকরণ করে কোনো মহিলা পুরুষ-চরিত্রে অভিনয় করলে, তাকে ইংরেজিতে ড্র্যাগ কিং বলে। কিছু মহিলা আবার লিঙ্গান্তর ঘটিয়েও নিজেকে ড্র্যাগ কিং প্রতিপন্ন করে; যদিও সংজ্ঞা অনুসারে এদের ড্র্যাগ কিং বলা চলে না।

যেসব পুরুষেরা বেশান্তরের কাজটিতে উত্তেজক যৌনতার অনুভূতি পান, তাদের বেশান্তরীয় কামুক (Transvestic fetishist) বলে। এই পুরুষেরা অবশ্য যৌন পরিচয়ে বিষমকামী, কিন্তু মেয়েদের পোশাক পরা তথা মেয়ে সাজার প্রতি অদম্য চোরা যৌন আকর্ষণ থাকে।