ব্যবহারকারী:AS Antu: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
AS Antu (আলোচনা | অবদান)
নরম খোলসের কাঁকড়া চাষ
(কোনও পার্থক্য নেই)

০৭:৩৮, ২১ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

নরম খোলসের কাঁকড়া চাষ প্রযুক্তিঃ

(Soft-Shell Crab Culture Technique)

অন্তর সরকার

ফিশারিজ ১ম বর্ষ,

“চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি & এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়”

“কাঁকড়া” শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। এর প্রচলিত চাষ পদ্ধতি সম্পর্কেও অনেকেই অবগত। কিন্তু নরম খোলসের কাকঁড়া চাষ বিষয়টা অনেকেরই অজানা। প্রথমে একটু কাঁকড়া সম্পর্কে বলি। কাঁকড়া আর্থ্রোপোডা পর্বের একটি ক্রাস্টাসিয়ান (Crustaceans) প্রাণি। এদের শরীর একটি পুরু বহিঃকঙ্কালে আবৃত থাকে এবং এদের এক জোড়া দাঁড়া বা চেলাযুক্ত পা (Chelate legs), ৫ জোড়া হাঁটা পা (Walking legs), ১ জোড়া সাঁতারু পা (Swimmerets) থাকে। বাংলাদেশ সীমানায় ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। এসব কাঁকড়ার মধ্যে মাইলা, শাইলা, সিরোটা ও শীলা প্রজাতি উল্লেখযোগ্য। মাইলা ও শীলা জাতের কাঁকড়া সবচেয়ে উন্নতমানের। তাই বিদেশে এগুলোর চাহিদা বেশি। কাঁকড়া তার জীবদ্দশায় প্রায় ১১ থেকে ১২ বার খোলস নির্মোচন বা মোল্টিং (Molting) করে থাকে। এসময় তারা সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। এসময় এরা গর্তে বাস করে থাকে শিকারির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতিবার খোলস নির্মোচনের ফলে এদের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে। প্রতিবার মোল্টিং এর ফলে কাঁকড়ার ২৫-৩০ ভাগ ওজন বৃদ্ধি পায়।

নরম খোলসের কাঁকড়া চাষের জন্য ছিদ্রযুক্ত প্লাস্টিক বক্স বা খাঁচা প্রস্তুত করা হয়। বক্স বা খাঁচাগুলো চাষের ঘের বা পুকুরের উপর নির্মিত ভাসমান স্ট্যান্ড এ সারিবদ্ধভাবে এমনভাবে রাখা হয় যেন কিছুটা অংশ পানির নিচে থাকে। পুকুরের লবণাক্ততা (Salinity) সাধারণত ১৫-২০ পিপিটি, বর্ষা মৌসুম এ কমে ১০ থেকে সর্বনিম্ন ২ বা ১ পিপিটি(প্রায়), শীত মৌসুম এ বেড়ে ৩০-৩৫ পিপিটি হয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস হতে কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয় যেগুলো ছিদ্রযুক্ত বক্স বা খাঁচাগুলোতে একক ভাবে রাখা হয়। এরপর দুই বা তিনদিন পর পর ৮ থেকে ১০ গ্রাম প্রতি বক্সে খাবার দেয়া হয়। খাবার হিসেবে প্রধানত ট্রাশ ফিশ, বাইক্যাচ ফিশ অথবা স্কুইড ইত্যাদি দেয়া হয়। স্থানীয় ভাষায় “জো” (New moon/Full moon) এর সময় এরা খোলস নির্মোচন করে থাকে। ‘পূর্ণিমার জো’ তে খোলস নির্মোচন বেশি হয় ‘অমাবস্যার জো’এর তুলনায়। খোলস নির্মোচনের জন্য এদের অনেক শক্তির প্রয়োজন হয় তাই খোলস নির্মোচনের আগে এরা খাবার বেশি খায়। কিন্তু খোলস নির্মোচনের সময় এরা নিষ্ক্রিয় থাকে এবং খাবার কম খায় বা খায়না প্রায়। চাষকালীন সময়ে দৈনিক ৩ ঘন্টা পর পর পর্যবেক্ষণ করতে হয় এবং নির্মোচিত (Molted) কাকঁড়াগুলো সংগ্রহ করে স্বাদুপানিতে রাখা হয় কারণ লবণাক্ত পাানিতে খোলস তাড়াতাড়ি শক্ত হয়ে যায় যা মূল উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করে। এরপর কাঁকড়াগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয় রপ্তানি বা বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে। এ পদ্ধতিতে কাঁকড়ার মৃত্যুহার প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ।

এ পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ ও এর সমূহ উন্নয়ন এবং আধুনিকীকরণের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার এর দরিয়ানগর এ অবস্থিত “Institute of Coastal Biodiversity, Marine Fisheries & Wild Life Conservation” এ বিগত দুই বছর ধরে গবেষনা করে যাচ্ছে “চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি & এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়” এর “মাৎস্যবিজ্ঞান” অনুষদ” এর সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী এবং মাস্টার্স এর শিক্ষার্থীবৃন্দ। “বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট” এর অর্থায়নে পরিচালিত তাদের ৩ বছর মেয়াদী প্রোগ্রাম “Improvement of Traditional Culture Technique of Soft Shelled Mud Crab (Scylla serrata)”  এর লক্ষ্য হলো- কাঁকড়ার নির্মোচন সময় ব্যবধান (Molting Duration) কমিয়ে আনা, বাণিজ্যিক খাদ্য ব্যবহার করে চাষ পদ্ধতির প্রসার ঘটানো, বাণিজ্যিক খাদ্য গ্রহণের উপযোগী প্রজন্ম তৈরী করা, কাঁকড়ার চেলাযুক্ত পা (Chelate leg) ব্যবচ্ছেদ করে বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ (কারণ ‘Chelate leg’ যুক্ত অবস্থায় তাদের আক্রমণাত্বক স্বভাব এর কারণে গৃহীত পুষ্টির অনেকাংশই নষ্ট হয়ে যায় আর বৃদ্ধিও কমে যায়) এবং সর্বোপরি নরম খোলসের কাঁকড়া চাষকে আরো প্রচলিত ও প্রসারিত করা। এ গবেষণা সফল হলে অদূর ভবিষ্যতে বদলে যাবে কাঁকড়া চাষের পরিসর। এ পদ্ধতিতে চাষ করে অনেকেই হতে পারবে স্বাবলম্বী অল্প পুঁজির সাহায্যে যা সৃষ্টি করবে নতুন কর্মসংস্থানের।

শক্ত খোলসের কাঁকড়ার তুলনায় নরম খোলসের কাঁকড়াতে ফ্যাট এর পরিমাণ বেশি তাছাড়া ভিটামিন ও প্রোটিন তো আছেই। নরম খোলসের কাঁকড়ার রপ্তানিমূল্য অনেক বেশি। এক সময়ের অবহেলিত এ জলজ প্রাণিটির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে সারা বিশ্বে। চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে খাদ্য হিসেবে কাঁকড়ার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে ১৯৯৩ সাল থেকে দেশের উপকূলীয় জলাশয়ে এর চাষ শুরু হয়। এখন এটি দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। বিদেশে কাঁকড়ার চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া। কাঁকড়া রপ্তানি করে এখন প্রতিবছর গড়ে আয় হচ্ছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা। রপ্তানি তালিকায় অপ্রচলিত এ ‘পণ্য’ই বদলে দিতে পারে লাখো মানুষের ভাগ্য। যে হারে চাহিদা বাড়ছে তাতে ‘সাদা সোনা’ হিসেবে পরিচিত গলদা চিংড়িকে অদূর ভবিষ্যতে হার মানাতে পারে এ জলজ সম্পদ।