লুক্রেতিউস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{About|the Roman poet|other people named Lucretius|Lucretia (gens)}}
{{Infobox philosopher
{{Infobox philosopher
| region = পাশ্চাত্য দর্শন
| region = পাশ্চাত্য দর্শন
| era = হেলেনীয় দর্শন
| era = [[হেলেনিস্টিক দর্শন]]
| name = তিতুস লুক্রেতিউস কারুস
| name = তিতুস লুক্রেতিউস কারুস
| birth_date = c. ৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
| image = Lucretius1.png
| death_date = c. ৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (বয়স ৪৪)
| caption = লুক্রেতিউসের আবক্ষমূর্তি
| school_tradition = [[এপিকিউরিয়ানিজম]]
| birth_date = {{circa}} ৯৯ খ্রিস্টপূর্ব
| main_interests = [[নীতিশাস্ত্র]], [[অধিবিদ্যা]]
| death_date = {{circa}} ৫৫ খ্রিস্টপূর্ব (৪৪)
| school_tradition = [[এপিকুরোসবাদ]]
| main_interests = [[নীতিবিদ্যা]], [[অধিবিদ্যা]]
| notable_ideas =
| notable_ideas =
| influences = [[Democritus]], [[Epicurus]], [[Empedocles]]
| influences = [[এপিকুরোস]], [[ডেমোক্রিটাস]], [[পার্মেনিদিস]], [[এম্পেদোক্লিস]], [[সক্রেটিস]], [[প্লেটো]], [[এরিস্টটল]]
| influenced = [[Epicureanism]], [[Cicero]], [[Ovid]], [[Virgil]], [[George Santayana]]
| influenced = [[সিসেরো]], [[ভার্জিল]], [[পিয়ের গাসেঁদি]], [[কার্ল মার্ক্স]], [[সিগমুন্ড ফ্রয়েড]], [[চার্লস ডারউইন]], [[আর্টুর শোপেনহাওয়ার]], [[ফ্রিডরিশ নিচে]], [[জিল দ্যলোজ]]
}}
}}
'''লুক্রেতিউস''' (Titus Lucretius Carus, ''তিতুস লুক্রেতিউস কারুস'', মৃত্যু: খ্রিস্টপূর্ব ৫০-এর দশক) রোমান প্রজাতান্ত্রিক যুগের শেষ দিককার একজন [[এপিকুরোস|এপিকুরীয়]] কবি। তার একমাত্র বই [[লাতিন]] [[ষট্পদী]] দিয়ে লেখা ''De rerum natura'' (''দে রেরুম নাতুরা'' — ‘বস্তুর প্রকৃতি’ বা ‘বিশ্বের প্রকৃতি’), যার ইংরেজি অনুবাদগুলোর নাম সাধারণত হয় ''On the Nature of Things'' বা ''On the Nature of the Universe''। তিনি কাব্যটি পুরো শেষ করে যেতে পারেননি, এবং বইটি সম্ভবত তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল। বইটির বিষয় এপিকুরোসের পদার্থবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা। প্রাচীন গ্রেকো-রোমান বিশ্বে [[ডেমোক্রিটাস|ডেমোক্রিটাসের]] পরমাণুবাদের উপর ভিত্তি করে যে বস্তুবাদী বিশ্বদর্শন গড়ে উঠেছিল তার সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা ও সমর্থন পাওয়া যায় এ বইয়ে।<ref name=stan>Sedley 2013, Section 1.</ref> সক্রেটিসপূর্ব গ্রিক দার্শনিক [[পার্মেনিদিস]] দার্শনিক কাব্যের যে ধারা শুরু করেছিলেন তাকে লাতিন কাব্যে পূর্ণতা দিয়েছেন লুক্রেতিউস। তবে তিনি পার্মেনিদিসের মতো বিশ্বের প্রকৃতি উপস্থাপন করেই থেমে যাননি, পাশাপাশি মানবজাতিকে বোঝাতে চেয়েছেন কিভাবে তারা এই প্রকৃতি উপলব্ধি করার মাধ্যমে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, মৃত্যুভীতি, ঈশ্বরভীতি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন প্রাণী হিসেবে তাদের এই একমাত্র জীবনটি সুখের সাথে যাপন করতে পারে।<ref name=rouse>Rouse, p. ix.</ref>


'''তিতুস লুক্রেতিউস কারুস''' ([[লাতিন ভাষা|লাতিন ভাষায়]]: Titus Lucretius Carus, [[গ্রিক ভাষা|গ্রিক ভাষায়]]: Λουκρήτιος) (৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - ৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) বিখ্যাত রোমান কবি ও দার্শনিক। তার একটি রচনাই বর্তমানে অক্ষত আছে। [[এপিকুরোসবাদ|এপিকুরোসবাদের]] (বিশেষ করে ''এপিকুরোসীয় পদার্থবিজ্ঞান'') উপর ভিত্তি করে রচিত এই কাব্যগ্রন্থের নাম ''De Rerum Natura''।ইংরেজিতে বইটির নাম "On the Nature of Things" বা "On the Nature of the Universe"।
==জীবনী==
লুক্রেতিউসের জীবন সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি, আর কোনো রোমান কবি সম্পর্কে এত কম তথ্য আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। তার পুরোনাম একমাত্র তার বইয়ের প্রচ্ছদ ছাড়া আর কোনখানে পাওয়া যায় না। তার সম্পর্কে সবচেয়ে নিশ্চিত তথ্যটি পাওয়া যায় ৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে [[সিসেরো|সিসেরোর]] তার ভাইকে লেখা একটি চিঠি থেকে। ১০ বা ১১ ফেব্রুয়ারিতে লেখা এই চিঠিতে সিসেরো তার ভাইকে বলছেন, “তোমার চিঠিতে ঠিক কথাই লিখেছ; লুক্রেতিউসের কাব্য অনন্যসাধারণ মেধা এবং উঁচুদরের শিল্পমানের পরিচয় দেয়।” এটা পড়ে মনে হয়, হয় লুক্রেতিউস তার জীবদ্দশাতেই অপ্রকাশিত বইটি সিসেরো ভাইদের দেখিয়েছিলেন, অথবা ৫৪ সালের মধ্যেই লুক্রেতিউস মারা গেছেন এবং তার বইটি প্রকাশিত হয়ে গেছে। কোনটা ঠিক, নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না।<ref>Rouse, p. x.</ref>


[[ক্যালটেক|ক্যালটেকের]] বিশ্বতত্ত্ববিদ [[শন ক্যারল]] সম্প্রতি তার এক ব্লগে লুক্রেতিউসকে বিশ্বের প্রথম [[কোয়ান্টাম বিশ্বতত্ত্ব|কোয়ান্টাম বিশ্বতত্ত্ববিদ]] হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি লুক্রেতিউসের রচনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, লুক্রেতিউস [[পরমাণুবাদ|পরমাণুবাদের]] ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে [[কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন]]-এর মত কিছু একটার কথা উল্লেখ করেছিলেন। সে হিসেবে [[পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞান|পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞানেও]] তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। পরমাণুর বিচলন নিয়ে [[এপিকুরোস|এপিকুরোসের]] মতবাদকে লুক্রেতিউস সমর্থন করেছেন। এই বিচলনের বিষয়টিই [[লুটভিগ বোল্‌ৎসমান]] অনেক পরে আবিষ্কার করেন। তবে এপিকুরোসবাদী দার্শনিক বা বোল্‌ৎসমান কারও তত্ত্বই বর্তমানে আর আক্ষরিক অর্থে গ্রহণযোগ্য নয়।<ref>[http://blogs.discovermagazine.com/cosmicvariance/2008/08/21/the-first-quantum-cosmologist/ The First Quantum Cosmologist] - [[কসমিক ভ্যারিয়েন্স]] ব্লগ, শন ক্যারল</ref>
লুক্রেতিউসের জীবন সম্পর্কে প্রায় যেকোনো আলোচনা [[জেরোম|সন্ত জেরোমের]] একটা উক্তি থেকে শুরু হয়। চতুর্থ শতকের শেষ দিকে জেরোম লিখেছিলেন, “খ্রিস্টপূর্ব ৯৪: কবি তিতুস লুক্রেতিউস জন্মগ্রহণ করেন। প্রণয়-পানীয় পান করে তিনি উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন, এবং মাঝে মাঝে যেটুকু সময় সুস্থ বুদ্ধি ফিরে পেতেন তখন বই লিখতেন—যেগুলো পরবর্তীতে সিসেরো সংশোধন করেন—এবং অবশেষে চুয়াল্লিশ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন।” বিশেষজ্ঞরা সবাই একমত যে জেরোমের এই কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়। লুক্রেতিউস যেহেতু খ্রিস্টান ইউরোপে ধর্মদ্রোহী ও অশুভ হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন সেহেতু তার সম্পর্কে খ্রিস্টানরা ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক খারাপ কথা ছড়িয়েছিল। লুক্রেতিউস বই পড়লেই স্পষ্ট বোঝা যায়, কোনো মাতাল কবির পক্ষে এত যৌক্তিক, সুগঠিত, সুবিন্যস্ত একটা মহাকাব্য রচনা করা সম্ভব না। তাছাড়া লুক্রেতিউসের পরবর্তী প্রজন্মের মহাকবি [[ভার্জিল]] যখন তার ''গেওর্গিকা'' কাব্যগ্রন্থে লিখেন,
<poem>
ধন্য তিনি,
যিনি সবকিছুর কারণ জেনেছিলেন,
যিনি পায়ে দলেছিলেন
সমস্ত ভীতি, অমোঘ নিয়তি,
আর সর্বগ্রাসী নরকের হুঙ্কার।<ref>Virgil, 2.490-2.</ref>
</poem>
তখন বুঝতে বাকি থাকে না এখানে ‘যিনি’ দিয়ে লুক্রেতিউসকেই বোঝানো হচ্ছে, আর ভার্জিলের মতো কবি যার সম্পর্কে এত উঁচু ধারণা পোষণ করেন তিনি কোনভাবেই জেরোম বর্ণীত মানুষটির মতো হতে পারেন না। এই চার পংক্তিতে ভার্জিল লুক্রেতিউসের মহাকাব্যের সবচেয়ে মৌলিক চারটি ধারণাই খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ধারণা চারটি হচ্ছে: সবকিছুর কারণ আছে, এই কারণ বুঝলে বিশ্বের প্রতি সব ভয় দূর হবে, মানুষের স্বাধীনেচ্ছা আছে, এবং মৃত্যুর পর কোনো জীবন নেই। ভার্জিল যাকে সব ভয় থেকে মুক্ত, সুখী একজন মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন, তা একেবারেই মানা যায় না।<ref>Sedley, Section 1</ref>


== জীবনী ==
অনেকে দাবি করেন লুক্রেতিউসের সম্পর্কে এত কম তথ্য থাকার মূল কারণ ইউরোপে খ্রিস্টান ধর্মের আধিপত্য। খ্রিস্টানরা লুক্রেতিউস এবং এপিকুরোসবাদ ধ্বংসে সদা তৎপর ছিল এটা ঠিক, কিন্তু শুধু এই কারণেই লুক্রেতিউস আমাদের অজানা ধরে নেয়াটা ভুল হবে। কারণ প্রাচীন রোমের আরো অনেকের সম্পর্কেই আমরা খুব জানি। উদাহরণ হিসেবে [[কাতুল্লুস]]-এর কথা বলা যায়। কাতুল্লুস নিজে যদি তার কাব্যে নিজের সম্পর্কে এত কথা বলে না যেতেন তাহলে তার সম্পর্কেও আমরা প্রায় কিছুই জানতাম না। লুক্রেতিউসও যে সেরকম আত্মবর্ণনা করে যাননি, সে আমাদের দুর্ভাগ্য।
লুক্রেতিউসের লেখা কবিতাই বলা চলে তার জীবন সম্পর্কে জানার একমাত্র উপায়। অন্য কোন উৎস থেকেই তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি।


''দে রেরুম নাতুরা''-র বাইরে তার জীবন সম্পর্কে সম্পর্কে জানার একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস হচ্ছে সিসেরোর লেখা একটি চিঠি। চিঠিটি লুক্রেতিউসের জীবদ্দশায় লেখা হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না, কারণ তার মৃত্যুর তারিখও অনিশ্চিত। ৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই চিঠিতে সিসেরো তার ভাইয়ের সাথে একমত হয়ে লিখেছেন, লুক্রেতিউসের কবিতায় "মেধার দীপ্তি" এবং "পেশাদারীত্বের" প্রমাণ পাওয়া যায়। চিঠিটি লেখা হয়েছিল তৎকালীন রোমের অভিজাত পরিবার মেম্মিউস-এর কোন একজন সদস্যের প্রতি। তবে ঠিক কোন সদস্যকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে তা নিশ্চিত জানা যায় না। লুক্রেতিওস মেম্মিউস পরিবারের বন্ধুত্বের প্রত্যাশা করেছিলেন, কিন্তু এই বন্ধুত্ব কি কোন লেনদেনের কারণে নাকি কোন প্রকৃত সামাজিক সম্পর্ক সেটা বোঝার কোন উপায় নেই।
জেরোমের উক্তিতে সিসেরোর নাম পেয়ে অনেকে ধরে নিয়েছেন লুক্রেতিউসের মৃত্যুর পর সিসেরো নিজেই সম্ভবত বইটি সম্পাদনা করে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এটা বিশ্বাস করা কষ্ট, কারণ সিসেরো এপিকুরোসবাদ খুবই অপছন্দ করতেন। তার পরও হয়ত তিনি লুক্রেতিউসের বন্ধুস্থানীয় ছিলেন, কিন্তু বন্ধু হওয়া আর একটা পুরো বই সম্পাদনার দায়িত্ব নেয়া এক কথা নয়। লুক্রেতিউসের মৃত্যুর পর যে-ই বইটি প্রকাশ করুক, সে যে বইয়ে খুব বড়ো কোনো পরিবর্তন আনেনি সেটা নিশ্চিত।


অন্য সব উৎস অনেক দেরিতে লেখা হয়েছে এবং সেগুলোর নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। এসব উৎসে অনেকে বলেছেন তার জন্ম ৯৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এবং মৃত্যু ৫৪ বা ৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। বর্তমানে অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলা যায় লুক্রেতিউস ১ম খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝামাঝি সময়ে তার মহাকাব্যটি লিখেছিলেন।
অনেকে দাবি করেছেন লুক্রেতিউস নিম্নবিত্ত ছিলেন, কিন্তু মহাকাব্যটি পড়লে তা একটুও বিশ্বাস হয় না। পুরো বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে মেম্মিউস নামে একজন রোমান অভিজাত রাজনীতিবিদকে, যিনি কিছু সময়ের জন্য রোমান প্রজাতন্ত্রের praetorও ছিলেন। কিছুক্ষণ পরপরই লুক্রেতিউস মেম্মিউসকে সরাসরি সম্বোধন করেন, এবং সম্বোধনের ভাষা থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় তিনি মেম্মিউসের সমকক্ষ। এছাড়াও কাব্যটি থেকে বোঝা যায় লুক্রেতিউস বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে বাস করতেন।<ref>Seller, p. 288.</ref> গ্রিক ও লাতিন সাহিত্যে এবং গ্রিক দর্শনে যে তার অগাধ জ্ঞান ছিল তাও নিশ্চিত। তিনি সম্ভবত রোমেই জন্মেছিলেন, এবং সেখানে তার একটা বাড়িও ছিল। কিন্তু অন্য অনেক রোমান অভিজাতের মতো তিনিও মাঝে মাঝে গ্রাম্য এলাকায় অবসর কাটাতে যেতেন; তার কবিতায় গ্রামের প্রকৃতির নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়। এদিক থেকে তাকে [[রবীন্দ্রনাথ|রবীন্দ্রনাথের]] সাথে তুলনা করা যায়, যিনি শহরের মানুষ হলেও অনেক গ্রাম দেখেছেন, এবং গ্রামীণ জীবন তার কবিতাকে অনেক প্রভাবিত করেছে।


প্রাচীন কালের খ্রিস্ট ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ তাকে ঈশ্বর এবং ধর্মের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল বলেই সেকালের অনেক লেখায় তার জীবনকে বিকৃত এবং বিধ্বস্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে। যেমন, ৪র্থ শতাব্দীর ইলিরিয়ান (রোমান সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত একটি স্থান) সাধু জেরোম (St. Jerome) লিখেছেন, লুক্রেতিউস নাকি অদম্য ভালবাসায় পাগল হয়ে গিয়েছিল, পাগলামির মাঝে মাঝে যেটুকু সময় ধাতস্থ থাকত তখন কবিতা লিখত এবং পরিশেষে আত্মহত্যা করেছিল, যার ফলে মৃত্যুর পর তার কবিতাগুলো সম্পাদনা করতে হয়েছিল সিসেরোকে। শেষ লাইনের কিছুটা সত্যতা থাকলেও এর আগে যা বলেছেন তার পুরোটাই বানোয়াট। এগুলো যে বানানো কথা তার আরও প্রমাণ মেলে লুক্রেতিউসের অনুরাগী মহাকবি [[ভের্গিল]] (ভার্জিল) এর লেখনীতে।
যেহেতু লুক্রেতিউস মেম্মিউসের বন্ধু স্থানীয়, এবং মেম্মিউস কাতুল্লুসের পৃষ্ঠপোষক, সেহেতু অনুমান করা যায় লুক্রেতিউস ও [[কাতুল্লুস]] একে অপরকে চিনতেন। দু’জনের লিখনশৈলীর মধ্যেও অনেক মিল পাওয়া যায়, এত মিল যে তা কাকতালীয় হতে পারে না। কাতুল্লুসের শুধু একটি কবিতায় যেহেতু লুক্রেতিউসের সব কবিতার ছাপ পাওয়া যায়, সেহেতু অনুমান করা হয় কাতুল্লুসই লুক্রেতিউসকে অনুসরণ করেছিলেন, উল্টোটা নয়। কাতুল্লুস এক রোমান অভিজাতের স্ত্রী ক্লোদিয়া-কে ভালোবাসতেন, ক্লোদিয়াকে তার কবিতায় ‘লেসবিয়া’ নামে সম্বোধন করতেন, এবং তার সাথে এমন একটা সম্পর্ক চাইতেন যা এপিকুরোসবাদীদের বন্ধুত্বের ধারণার কথা মনে করিয়ে দেয়। এ থেকে অনেকে অনুমান করেন কাতুল্লুস নিজেও হয়ত লুক্রেতিউসের মাধ্যমে এপিকুরোসবাদের প্রতি কিছুটা আকৃষ্ট হয়েছিলেন।<ref>Rouse, p. xviii.</ref>


ভের্গিল লুক্রেতিউসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই Georgics লিখেছিলেন। চার খণ্ডের এই কাব্যগ্রন্থে লুক্রেতিউস সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, "felix qui potuit rerum cognoscere causas" যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, সে কতই না সুখী যে সবকিছুর কারণ জানে। এরপর বইটিতে আরও বলা হয়েছে, যে সকল ভয়, অপরিবর্তনীয় ভাগ্য এবং সর্বগ্রাসী নরকের চিৎকারকে পায়ে দলেছিল। এই প্রশংসামূলক বাক্যগুলোর মাধ্যমে ভের্গিল লুক্রেতিউসের কবিতার চারটি প্রভাবশালী বৈশিষ্ট্য পরিষ্কার করে তুলেছিল:
==দে রেরুম নাতুরা==
# মহাবিশ্বের সবকিছুর কারণ অনুসন্ধান
লুক্রেতিউস আদৌ বইটি শেষ করে যেতে পেরেছিলেন কি না তা জানলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বইয়ের অধ্যায়গুলো খুবই সুপরিকল্পিত। মোট ছয়টি অধ্যায়, যেগুলো আবার তিনটি খণ্ডে বিভক্ত। প্রতি খণ্ডে দুটি করে অধ্যায়। একেক খণ্ডে একেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়, এবং প্রতি খণ্ডের প্রথম অধ্যায়টি উক্ত বিষয়ের মৌলিক তত্ত্বটি উপস্থাপন করে, এবং দ্বিতীয় অধ্যায়টি সেই তত্ত্বের আলোকে সে-বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সব ঘটনা ব্যাখ্যা করে। খণ্ড ও অধ্যায় ভাগ গুলো মোটামুটি এমন:
# পৃথিবীর সকল ভয়-ভীতির মূলোৎপাটন (সবকিছুর কারণ জানার কারণে)
* খণ্ড ১: পরমাণু ও শূন্যস্থান
# মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ঘোষণা এবং
** অধ্যায় ১: পরমাণু ও শূন্যস্থানই মহাবিশ্বের মৌলিক গাঠনিক উপাদান; সবকিছু এ দুটি দিয়ে গঠিত।
# মৃত্যুর পরে আত্মার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা
** অধ্যায় ২: পরমাণু ও শূন্যস্থান দিয়ে প্রকৃতির সব ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করা যায়।
পাশাপাশি ভের্গিলের এই কথাগুলোর মাধ্যমে এটাও বোঝা যায় যে, লুক্রেতিউস খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের মাঝে আত্মহননেচ্ছু পাগল হিসেবে যে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল তা সত্য নয়।<ref>[http://plato.stanford.edu/entries/lucretius/ ''Lucretius - Stanford Encyclopedia of Philosophy'']; by David Sedley, University of Cambridge</ref>
* খণ্ড ২: আত্মা
** অধ্যায় ৩: আত্মার প্রকৃতি এবং নশ্বরতা।
** অধ্যায় ৪: মৃত্যুর মাধ্যমে সবকিছুর শেষ হয়ে যাওয়া দিয়ে আমাদের জীবন ব্যাখ্যা করা যায়।
* খণ্ড ৩: মহাবিশ্ব
** অধ্যায় ৫: মহাবিশ্ব সামগ্রিকভাবেও ক্ষণস্থায়ী, একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে।
** অধ্যায় ৬: এই সাময়িক মহাবিশ্বের সমগ্র ইতিহাস, মহাবিশ্বের উৎপত্তি থেকে শুরু করে মানব সভ্যতার বিবর্তন পর্যন্ত পুরোটা।<ref>Sedley, section 2.</ref>

অধ্যায়গুলোর ধারাটি ছোটো থেকে বড়োর দিকে। প্রথম খণ্ডে পরমাণুর ক্ষুদ্র জগৎ নিয়ে কথা বলা হয়েছে, দ্বিতীয় খণ্ডে মাঝামাঝি অবস্থানকারী মানুষ নিয়ে, আর শেষ খণ্ডে সবচেয়ে বড়ো জিনিস অর্থাৎ সমগ্র মহাবিশ্ব নিয়ে। বর্তমান যুগের অনেক বিজ্ঞানগ্রন্থেও এই ধারাবাহিকতাটি অনুসরণ করা হয়।<ref>Tegmark 2014.</ref>

===পুনরাবিষ্কার===

===ইংরেজি অনুবাদ===
অসংখ্য ইংরেজি অনুবাদ হয়েছে। নিচে নির্বাচিত কয়েকটি উল্লেখ করা হল।
* ১৬০০ (আনু.): M S Rawlinson, Bodleian Library, Oxford. (গদ্যানুবাদ)
* ১৬৫০ (আনু.): Lucy Hutchinson, ''Lucy Hutchinson's translation of Lucretius: De rerum natura'', ed. Hugh de Quehen, 1996. (পদ্যানুবাদ)
* ১৮৫১: John Selby Watson, ''On the Nature of Things''.
* ১৯২৪: W. H. D. Rouse, ''On the Nature of Things'', Loeb Classical Library, revised in 1975 by M. F. Smith.
* ১৯৯৪: R. E. Latham & J Godwin, ''On the Nature of the Universe'', Harmondsworth: Penguin.
* ১৯৯৭: Ronald Melville, ''On the Nature of the Universe'', with introduction and notes by D. and P. Fowler, Oxford: Clarendon Press.
* ২০০১: M. F. Smith, ''On the Nature of Things'', Indianapolis and Cambridge, Hackett.
* ২০০৩: W. Englert, ''On the Nature of Things'', Newburyport, Mass.: Focus.
* ২০০৭: A. E. Stallings, ''The Nature of Things'', Harmondsworth: Penguin.

==পাদটীকা==
{{reflist}}


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==
<references/>
* Rouse, W. H. D. 1924. “Introduction,” tr. ''On the Nature of Thins'', revised by M. F. Smith, 1992, Harvard University Press.
* Sedley, David. 2013. “Lucretius.” Stanford Encyclopedia of Philosophy.
* Seller, W. Y. ''The Roman Poets of the Republic'', 1881.
* Tegmark, Max. 2014. ''Our Mathematical Universe''. Random House.
* Virgil, ''Georgica'', 2.490–2.492, 29 BCE.


== বহিঃসংযোগ ==
== বহিঃসংযোগ ==
{{wikiquote|Lucretius|লুক্রেতিউস}}
{{wikiquote|Lucretius|লুক্রেতিউস}}
* [[গুটেনবার্গ প্রকল্প]] ই-টেক্সট ''[http://www.gutenberg.org/ebooks/785 On The Nature Of Things]''
* [http://www.marxists.org/archive/marx/works/1841/dr-theses/index.htm ''On the Difference Between the Democritean and Epicurean Philosophy of Nature'' -- Karl Marx's doctoral dissertation, 1841]
* [http://www.marxists.org/archive/marx/works/1841/dr-theses/index.htm ''On the Difference Between the Democritean and Epicurean Philosophy of Nature'' -- Karl Marx's doctoral dissertation, 1841]
* [http://plato.stanford.edu/entries/lucretius/ Stanford Encyclopedia of Philosophy entry]
* [http://plato.stanford.edu/entries/lucretius/ Stanford Encyclopedia of Philosophy entry]

১৬:০৭, ১৯ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

তিতুস লুক্রেতিউস কারুস
জন্মc. ৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
মৃত্যুc. ৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (বয়স ৪৪)
যুগহেলেনিস্টিক দর্শন
অঞ্চলপাশ্চাত্য দর্শন
ধারাএপিকিউরিয়ানিজম
প্রধান আগ্রহ
নীতিশাস্ত্র, অধিবিদ্যা
ভাবগুরু
ভাবশিষ্য

তিতুস লুক্রেতিউস কারুস (লাতিন ভাষায়: Titus Lucretius Carus, গ্রিক ভাষায়: Λουκρήτιος) (৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - ৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) বিখ্যাত রোমান কবি ও দার্শনিক। তার একটি রচনাই বর্তমানে অক্ষত আছে। এপিকুরোসবাদের (বিশেষ করে এপিকুরোসীয় পদার্থবিজ্ঞান) উপর ভিত্তি করে রচিত এই কাব্যগ্রন্থের নাম De Rerum Natura।ইংরেজিতে বইটির নাম "On the Nature of Things" বা "On the Nature of the Universe"।

ক্যালটেকের বিশ্বতত্ত্ববিদ শন ক্যারল সম্প্রতি তার এক ব্লগে লুক্রেতিউসকে বিশ্বের প্রথম কোয়ান্টাম বিশ্বতত্ত্ববিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি লুক্রেতিউসের রচনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, লুক্রেতিউস পরমাণুবাদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন-এর মত কিছু একটার কথা উল্লেখ করেছিলেন। সে হিসেবে পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞানেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। পরমাণুর বিচলন নিয়ে এপিকুরোসের মতবাদকে লুক্রেতিউস সমর্থন করেছেন। এই বিচলনের বিষয়টিই লুটভিগ বোল্‌ৎসমান অনেক পরে আবিষ্কার করেন। তবে এপিকুরোসবাদী দার্শনিক বা বোল্‌ৎসমান কারও তত্ত্বই বর্তমানে আর আক্ষরিক অর্থে গ্রহণযোগ্য নয়।[১]

জীবনী

লুক্রেতিউসের লেখা কবিতাই বলা চলে তার জীবন সম্পর্কে জানার একমাত্র উপায়। অন্য কোন উৎস থেকেই তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি।

দে রেরুম নাতুরা-র বাইরে তার জীবন সম্পর্কে সম্পর্কে জানার একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস হচ্ছে সিসেরোর লেখা একটি চিঠি। চিঠিটি লুক্রেতিউসের জীবদ্দশায় লেখা হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না, কারণ তার মৃত্যুর তারিখও অনিশ্চিত। ৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই চিঠিতে সিসেরো তার ভাইয়ের সাথে একমত হয়ে লিখেছেন, লুক্রেতিউসের কবিতায় "মেধার দীপ্তি" এবং "পেশাদারীত্বের" প্রমাণ পাওয়া যায়। চিঠিটি লেখা হয়েছিল তৎকালীন রোমের অভিজাত পরিবার মেম্মিউস-এর কোন একজন সদস্যের প্রতি। তবে ঠিক কোন সদস্যকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে তা নিশ্চিত জানা যায় না। লুক্রেতিওস মেম্মিউস পরিবারের বন্ধুত্বের প্রত্যাশা করেছিলেন, কিন্তু এই বন্ধুত্ব কি কোন লেনদেনের কারণে নাকি কোন প্রকৃত সামাজিক সম্পর্ক সেটা বোঝার কোন উপায় নেই।

অন্য সব উৎস অনেক দেরিতে লেখা হয়েছে এবং সেগুলোর নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। এসব উৎসে অনেকে বলেছেন তার জন্ম ৯৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এবং মৃত্যু ৫৪ বা ৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। বর্তমানে অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলা যায় লুক্রেতিউস ১ম খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝামাঝি সময়ে তার মহাকাব্যটি লিখেছিলেন।

প্রাচীন কালের খ্রিস্ট ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ তাকে ঈশ্বর এবং ধর্মের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল বলেই সেকালের অনেক লেখায় তার জীবনকে বিকৃত এবং বিধ্বস্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে। যেমন, ৪র্থ শতাব্দীর ইলিরিয়ান (রোমান সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত একটি স্থান) সাধু জেরোম (St. Jerome) লিখেছেন, লুক্রেতিউস নাকি অদম্য ভালবাসায় পাগল হয়ে গিয়েছিল, পাগলামির মাঝে মাঝে যেটুকু সময় ধাতস্থ থাকত তখন কবিতা লিখত এবং পরিশেষে আত্মহত্যা করেছিল, যার ফলে মৃত্যুর পর তার কবিতাগুলো সম্পাদনা করতে হয়েছিল সিসেরোকে। শেষ লাইনের কিছুটা সত্যতা থাকলেও এর আগে যা বলেছেন তার পুরোটাই বানোয়াট। এগুলো যে বানানো কথা তার আরও প্রমাণ মেলে লুক্রেতিউসের অনুরাগী মহাকবি ভের্গিল (ভার্জিল) এর লেখনীতে।

ভের্গিল লুক্রেতিউসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই Georgics লিখেছিলেন। চার খণ্ডের এই কাব্যগ্রন্থে লুক্রেতিউস সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, "felix qui potuit rerum cognoscere causas" যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, সে কতই না সুখী যে সবকিছুর কারণ জানে। এরপর বইটিতে আরও বলা হয়েছে, যে সকল ভয়, অপরিবর্তনীয় ভাগ্য এবং সর্বগ্রাসী নরকের চিৎকারকে পায়ে দলেছিল। এই প্রশংসামূলক বাক্যগুলোর মাধ্যমে ভের্গিল লুক্রেতিউসের কবিতার চারটি প্রভাবশালী বৈশিষ্ট্য পরিষ্কার করে তুলেছিল:

  1. মহাবিশ্বের সবকিছুর কারণ অনুসন্ধান
  2. পৃথিবীর সকল ভয়-ভীতির মূলোৎপাটন (সবকিছুর কারণ জানার কারণে)
  3. মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ঘোষণা এবং
  4. মৃত্যুর পরে আত্মার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা

পাশাপাশি ভের্গিলের এই কথাগুলোর মাধ্যমে এটাও বোঝা যায় যে, লুক্রেতিউস খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের মাঝে আত্মহননেচ্ছু পাগল হিসেবে যে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল তা সত্য নয়।[২]

তথ্যসূত্র

  1. The First Quantum Cosmologist - কসমিক ভ্যারিয়েন্স ব্লগ, শন ক্যারল
  2. Lucretius - Stanford Encyclopedia of Philosophy; by David Sedley, University of Cambridge

বহিঃসংযোগ