লুক্রেতিউস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৪৬ নং লাইন: ৪৬ নং লাইন:
* খণ্ড ৩: মহাবিশ্ব
* খণ্ড ৩: মহাবিশ্ব
** অধ্যায় ৫: মহাবিশ্ব সামগ্রিকভাবেও ক্ষণস্থায়ী, একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে।
** অধ্যায় ৫: মহাবিশ্ব সামগ্রিকভাবেও ক্ষণস্থায়ী, একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে।
** অধ্যায় ৬: এই সাময়িক মহাবিশ্বের সমগ্র ইতিহাস, মহাবিশ্বের উৎপত্তি থেকে শুরু করে মানব সভ্যতার বিবর্তন পর্যন্ত পুরোটা।
** অধ্যায় ৬: এই সাময়িক মহাবিশ্বের সমগ্র ইতিহাস, মহাবিশ্বের উৎপত্তি থেকে শুরু করে মানব সভ্যতার বিবর্তন পর্যন্ত পুরোটা।<ref>Sedley, section 2.</ref>


===পুনরাবিষ্কার===
===পুনরাবিষ্কার===

১৫:৫৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

তিতুস লুক্রেতিউস কারুস
লুক্রেতিউসের আবক্ষমূর্তি
জন্মআনু. ৯৯ খ্রিস্টপূর্ব
মৃত্যুআনু. ৫৫ খ্রিস্টপূর্ব (৪৪)
যুগহেলেনীয় দর্শন
অঞ্চলপাশ্চাত্য দর্শন
ধারাএপিকুরোসবাদ
প্রধান আগ্রহ
নীতিবিদ্যা, অধিবিদ্যা

লুক্রেতিউস (Titus Lucretius Carus, তিতুস লুক্রেতিউস কারুস, মৃত্যু: খ্রিস্টপূর্ব ৫০-এর দশক) রোমান প্রজাতান্ত্রিক যুগের শেষ দিককার একজন এপিকুরীয় কবি। তার একমাত্র বই লাতিন ষট্পদী দিয়ে লেখা De rerum natura (দে রেরুম নাতুরা — ‘বস্তুর প্রকৃতি’ বা ‘বিশ্বের প্রকৃতি’), যার ইংরেজি অনুবাদগুলোর নাম সাধারণত হয় On the Nature of Things বা On the Nature of the Universe। তিনি কাব্যটি পুরো শেষ করে যেতে পারেননি, এবং বইটি সম্ভবত তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল। বইটির বিষয় এপিকুরোসের পদার্থবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা। প্রাচীন গ্রেকো-রোমান বিশ্বে ডেমোক্রিটাসের পরমাণুবাদের উপর ভিত্তি করে যে বস্তুবাদী বিশ্বদর্শন গড়ে উঠেছিল তার সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা ও সমর্থন পাওয়া যায় এ বইয়ে।[১] সক্রেটিসপূর্ব গ্রিক দার্শনিক পার্মেনিদিস দার্শনিক কাব্যের যে ধারা শুরু করেছিলেন তাকে লাতিন কাব্যে পূর্ণতা দিয়েছেন লুক্রেতিউস। তবে তিনি পার্মেনিদিসের মতো বিশ্বের প্রকৃতি উপস্থাপন করেই থেমে যাননি, পাশাপাশি মানবজাতিকে বোঝাতে চেয়েছেন কিভাবে তারা এই প্রকৃতি উপলব্ধি করার মাধ্যমে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, মৃত্যুভীতি, ঈশ্বরভীতি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন প্রাণী হিসেবে তাদের এই একমাত্র জীবনটি সুখের সাথে যাপন করতে পারে।[২]

জীবনী

লুক্রেতিউসের জীবন সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি, আর কোনো রোমান কবি সম্পর্কে এত কম তথ্য আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। তার পুরোনাম একমাত্র তার বইয়ের প্রচ্ছদ ছাড়া আর কোনখানে পাওয়া যায় না। তার সম্পর্কে সবচেয়ে নিশ্চিত তথ্যটি পাওয়া যায় ৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিসেরোর তার ভাইকে লেখা একটি চিঠি থেকে। ১০ বা ১১ ফেব্রুয়ারিতে লেখা এই চিঠিতে সিসেরো তার ভাইকে বলছেন, “তোমার চিঠিতে ঠিক কথাই লিখেছ; লুক্রেতিউসের কাব্য অনন্যসাধারণ মেধা এবং উঁচুদরের শিল্পমানের পরিচয় দেয়।” এটা পড়ে মনে হয়, হয় লুক্রেতিউস তার জীবদ্দশাতেই অপ্রকাশিত বইটি সিসেরো ভাইদের দেখিয়েছিলেন, অথবা ৫৪ সালের মধ্যেই লুক্রেতিউস মারা গেছেন এবং তার বইটি প্রকাশিত হয়ে গেছে। কোনটা ঠিক, নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না।[৩]

লুক্রেতিউসের জীবন সম্পর্কে প্রায় যেকোনো আলোচনা সন্ত জেরোমের একটা উক্তি থেকে শুরু হয়। চতুর্থ শতকের শেষ দিকে জেরোম লিখেছিলেন, “খ্রিস্টপূর্ব ৯৪: কবি তিতুস লুক্রেতিউস জন্মগ্রহণ করেন। প্রণয়-পানীয় পান করে তিনি উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন, এবং মাঝে মাঝে যেটুকু সময় সুস্থ বুদ্ধি ফিরে পেতেন তখন বই লিখতেন—যেগুলো পরবর্তীতে সিসেরো সংশোধন করেন—এবং অবশেষে চুয়াল্লিশ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন।” বিশেষজ্ঞরা সবাই একমত যে জেরোমের এই কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়। লুক্রেতিউস যেহেতু খ্রিস্টান ইউরোপে ধর্মদ্রোহী ও অশুভ হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন সেহেতু তার সম্পর্কে খ্রিস্টানরা ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক খারাপ কথা ছড়িয়েছিল। লুক্রেতিউস বই পড়লেই স্পষ্ট বোঝা যায়, কোনো মাতাল কবির পক্ষে এত যৌক্তিক, সুগঠিত, সুবিন্যস্ত একটা মহাকাব্য রচনা করা সম্ভব না। তাছাড়া লুক্রেতিউসের পরবর্তী প্রজন্মের মহাকবি ভার্জিল যখন তার গেওর্গিকা কাব্যগ্রন্থে লিখেন,

        ধন্য তিনি,
যিনি সবকিছুর কারণ জেনেছিলেন,
যিনি পায়ে দলেছিলেন
    সমস্ত ভীতি, অমোঘ নিয়তি,
    আর সর্বগ্রাসী নরকের হুঙ্কার।[৪]

তখন বুঝতে বাকি থাকে না এখানে ‘যিনি’ দিয়ে লুক্রেতিউসকেই বোঝানো হচ্ছে, আর ভার্জিলের মতো কবি যার সম্পর্কে এত উঁচু ধারণা পোষণ করেন তিনি কোনভাবেই জেরোম বর্ণীত মানুষটির মতো হতে পারেন না। এই চার পংক্তিতে ভার্জিল লুক্রেতিউসের মহাকাব্যের সবচেয়ে মৌলিক চারটি ধারণাই খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ধারণা চারটি হচ্ছে: সবকিছুর কারণ আছে, এই কারণ বুঝলে বিশ্বের প্রতি সব ভয় দূর হবে, মানুষের স্বাধীনেচ্ছা আছে, এবং মৃত্যুর পর কোনো জীবন নেই। ভার্জিল যাকে সব ভয় থেকে মুক্ত, সুখী একজন মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন, তা একেবারেই মানা যায় না।[৫]

অনেকে দাবি করেন লুক্রেতিউসের সম্পর্কে এত কম তথ্য থাকার মূল কারণ ইউরোপে খ্রিস্টান ধর্মের আধিপত্য। খ্রিস্টানরা লুক্রেতিউস এবং এপিকুরোসবাদ ধ্বংসে সদা তৎপর ছিল এটা ঠিক, কিন্তু শুধু এই কারণেই লুক্রেতিউস আমাদের অজানা ধরে নেয়াটা ভুল হবে। কারণ প্রাচীন রোমের আরো অনেকের সম্পর্কেই আমরা খুব জানি। উদাহরণ হিসেবে কাতুল্লুস-এর কথা বলা যায়। কাতুল্লুস নিজে যদি তার কাব্যে নিজের সম্পর্কে এত কথা বলে না যেতেন তাহলে তার সম্পর্কেও আমরা প্রায় কিছুই জানতাম না। লুক্রেতিউসও যে সেরকম আত্মবর্ণনা করে যাননি, সে আমাদের দুর্ভাগ্য।

জেরোমের উক্তিতে সিসেরোর নাম পেয়ে অনেকে ধরে নিয়েছেন লুক্রেতিউসের মৃত্যুর পর সিসেরো নিজেই সম্ভবত বইটি সম্পাদনা করে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এটা বিশ্বাস করা কষ্ট, কারণ সিসেরো এপিকুরোসবাদ খুবই অপছন্দ করতেন। তার পরও হয়ত তিনি লুক্রেতিউসের বন্ধুস্থানীয় ছিলেন, কিন্তু বন্ধু হওয়া আর একটা পুরো বই সম্পাদনার দায়িত্ব নেয়া এক কথা নয়। লুক্রেতিউসের মৃত্যুর পর যে-ই বইটি প্রকাশ করুক, সে যে বইয়ে খুব বড়ো কোনো পরিবর্তন আনেনি সেটা নিশ্চিত।

অনেকে দাবি করেছেন লুক্রেতিউস নিম্নবিত্ত ছিলেন, কিন্তু মহাকাব্যটি পড়লে তা একটুও বিশ্বাস হয় না। পুরো বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে মেম্মিউস নামে একজন রোমান অভিজাত রাজনীতিবিদকে, যিনি কিছু সময়ের জন্য রোমান প্রজাতন্ত্রের praetorও ছিলেন। কিছুক্ষণ পরপরই লুক্রেতিউস মেম্মিউসকে সরাসরি সম্বোধন করেন, এবং সম্বোধনের ভাষা থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় তিনি মেম্মিউসের সমকক্ষ। এছাড়াও কাব্যটি থেকে বোঝা যায় লুক্রেতিউস বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে বাস করতেন।[৬] গ্রিক ও লাতিন সাহিত্যে এবং গ্রিক দর্শনে যে তার অগাধ জ্ঞান ছিল তাও নিশ্চিত। তিনি সম্ভবত রোমেই জন্মেছিলেন, এবং সেখানে তার একটা বাড়িও ছিল। কিন্তু অন্য অনেক রোমান অভিজাতের মতো তিনিও মাঝে মাঝে গ্রাম্য এলাকায় অবসর কাটাতে যেতেন; তার কবিতায় গ্রামের প্রকৃতির নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়। এদিক থেকে তাকে রবীন্দ্রনাথের সাথে তুলনা করা যায়, যিনি শহরের মানুষ হলেও অনেক গ্রাম দেখেছেন, এবং গ্রামীণ জীবন তার কবিতাকে অনেক প্রভাবিত করেছে।

যেহেতু লুক্রেতিউস মেম্মিউসের বন্ধু স্থানীয়, এবং মেম্মিউস কাতুল্লুসের পৃষ্ঠপোষক, সেহেতু অনুমান করা যায় লুক্রেতিউস ও কাতুল্লুস একে অপরকে চিনতেন। দু’জনের লিখনশৈলীর মধ্যেও অনেক মিল পাওয়া যায়, এত মিল যে তা কাকতালীয় হতে পারে না। কাতুল্লুসের শুধু একটি কবিতায় যেহেতু লুক্রেতিউসের সব কবিতার ছাপ পাওয়া যায়, সেহেতু অনুমান করা হয় কাতুল্লুসই লুক্রেতিউসকে অনুসরণ করেছিলেন, উল্টোটা নয়। কাতুল্লুস এক রোমান অভিজাতের স্ত্রী ক্লোদিয়া-কে ভালোবাসতেন, ক্লোদিয়াকে তার কবিতায় ‘লেসবিয়া’ নামে সম্বোধন করতেন, এবং তার সাথে এমন একটা সম্পর্ক চাইতেন যা এপিকুরোসবাদীদের বন্ধুত্বের ধারণার কথা মনে করিয়ে দেয়। এ থেকে অনেকে অনুমান করেন কাতুল্লুস নিজেও হয়ত লুক্রেতিউসের মাধ্যমে এপিকুরোসবাদের প্রতি কিছুটা আকৃষ্ট হয়েছিলেন।[৭]

দে রেরুম নাতুরা

লুক্রেতিউস আদৌ বইটি শেষ করে যেতে পেরেছিলেন কি না তা জানলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বইয়ের অধ্যায়গুলো খুবই সুপরিকল্পিত। মোট ছয়টি অধ্যায়, যেগুলো আবার তিনটি খণ্ডে বিভক্ত। প্রতি খণ্ডে দুটি করে অধ্যায়। একেক খণ্ড একেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়, এবং প্রতি খণ্ডের প্রথম অধ্যায়টি উক্ত বিষয়ের মৌলিক তত্ত্বটি উপস্থাপন করে, এবং দ্বিতীয় অধ্যায়টি সেই তত্ত্বের আলো সে-বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সব ঘটনা ব্যাখ্যা করে। খণ্ড ও অধ্যায় ভাগ গুলো এমন হতে পারে:

  • খণ্ড ১: পরমাণু ও শূন্যস্থান
    • অধ্যায় ১: পরমাণু ও শূন্যস্থানই মহাবিশ্বের মৌলিক গাঠনিক উপাদান; সবকিছু এ দুটি দিয়ে গঠিত।
    • অধ্যায় ২: পরমাণু ও শূন্যস্থান দিয়ে প্রকৃতির সব ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করা যায়।
  • খণ্ড ২: আত্মা
    • অধ্যায় ৩: আত্মার প্রকৃতি এবং নশ্বরতা।
    • অধ্যায় ৪: আত্মার নশ্বরতা, এবং মৃত্যুর মাধ্যমে সবকিছুর শেষ হয়ে যাওয়া দিয়ে আমাদের জীবন ব্যাখ্যা করা যায়।
  • খণ্ড ৩: মহাবিশ্ব
    • অধ্যায় ৫: মহাবিশ্ব সামগ্রিকভাবেও ক্ষণস্থায়ী, একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে।
    • অধ্যায় ৬: এই সাময়িক মহাবিশ্বের সমগ্র ইতিহাস, মহাবিশ্বের উৎপত্তি থেকে শুরু করে মানব সভ্যতার বিবর্তন পর্যন্ত পুরোটা।[৮]

পুনরাবিষ্কার

ইংরেজি অনুবাদ

অসংখ্য ইংরেজি অনুবাদ হয়েছে। নিচে নির্বাচিত কয়েকটি উল্লেখ করা হল।

  • ১৬০০ (আনু.): M S Rawlinson, Bodleian Library, Oxford. (গদ্যানুবাদ)
  • ১৬৫০ (আনু.): Lucy Hutchinson, Lucy Hutchinson's translation of Lucretius: De rerum natura, ed. Hugh de Quehen, 1996. (পদ্যানুবাদ)
  • ১৮৫১: John Selby Watson, On the Nature of Things.
  • ১৯২৪: W. H. D. Rouse, On the Nature of Things, Loeb Classical Library, revised in 1975 by M. F. Smith.
  • ১৯৯৪: R. E. Latham & J Godwin, On the Nature of the Universe, Harmondsworth: Penguin.
  • ১৯৯৭: Ronald Melville, On the Nature of the Universe, with introduction and notes by D. and P. Fowler, Oxford: Clarendon Press.
  • ২০০১: M. F. Smith, On the Nature of Things, Indianapolis and Cambridge, Hackett.
  • ২০০৩: W. Englert, On the Nature of Things, Newburyport, Mass.: Focus.
  • ২০০৭: A. E. Stallings, The Nature of Things, Harmondsworth: Penguin.

পাদটীকা

  1. Sedley 2013, Section 1.
  2. Rouse, p. ix.
  3. Rouse, p. x.
  4. Virgil, 2.490-2.
  5. Sedley, Section 1
  6. Seller, p. 288.
  7. Rouse, p. xviii.
  8. Sedley, section 2.

তথ্যসূত্র

  • Rouse, W. H. D. 1924. “Introduction,” tr. On the Nature of Thins, revised by M. F. Smith, 1992, Harvard University Press.
  • Sedley, David. 2013. “Lucretius.” Stanford Encyclopedia of Philosophy.
  • Seller, W. Y. The Roman Poets of the Republic, 1881.
  • Virgil, Georgica, 2.490–2.492, 29 BCE.

বহিঃসংযোগ