জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
→‎বহিঃসংযোগ: বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে, কোন সমস্যা?
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
টেমপ্লেটে সংশোধন
১৮ নং লাইন: ১৮ নং লাইন:


== প্রাথমিক জীবন ==
== প্রাথমিক জীবন ==
ম্যাডানের পিতার অনেক টাকার ক্ষতি হয় বম্বে রিক্ল্যামেশন ব্যাঙ্কের পতনের কারণে। এই ব্যাঙ্কের দায়িত্ব ছিল বম্বের সাতটি দ্বীপের জমি উদ্ধার করা। জ়ামশেদজি স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন; তারপর তিনি ১৮৬৮ সালে 'এলফিনস্টোন ড্রামাটিক ক্লাব'-এ থিয়েটারের 'prop boy'-এর কাজ নেন। ১৯৭৫ সালের মধ্যে এই অপেশাদার ক্লাব একটি পেশাদার থিয়েটার কোম্পানীতে পরিণত হয় আর সারা ভারত জুড়ে তাঁদের থিয়েটার মঞ্চস্থ করে।<ref name=gramo>{{cite book | pages = 17-20 | title = The Gramophone Company's First Indian Recordings, 1899-1908 | author = Michael Kinnear | publisher = Popular Prakshan | year = 2004 | isbn = 8171547281}}</ref>
ম্যাডানের পিতার অনেক টাকার ক্ষতি হয় বম্বে রিক্ল্যামেশন ব্যাঙ্কের পতনের কারণে। এই ব্যাঙ্কের দায়িত্ব ছিল বম্বের সাতটি দ্বীপের জমি উদ্ধার করা। জ়ামশেদজি স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন; তারপর তিনি ১৮৬৮ সালে 'এলফিনস্টোন ড্রামাটিক ক্লাব'-এ থিয়েটারের 'prop boy'-এর কাজ নেন। ১৯৭৫ সালের মধ্যে এই অপেশাদার ক্লাব একটি পেশাদার থিয়েটার কোম্পানীতে পরিণত হয় আর সারা ভারত জুড়ে তাঁদের থিয়েটার মঞ্চস্থ করে।<ref name=gramo>{{বই উদ্ধৃতি | pages = 17-20 | title = The Gramophone Company's First Indian Recordings, 1899-1908 | author = Michael Kinnear | publisher = Popular Prakshan | year = 2004 | isbn = 8171547281}}</ref>


== অধ্যবসায় ==
== অধ্যবসায় ==
১৮৮২ সালে থিয়েটার কোম্পানীর কাজ ছেড়ে দিয়ে, ম্যাডান [[করাচী]] শহরে ছোটোখাটো ব্যবসায় লিপ্ত হন, আর তাতে সাফল্য অর্জন করেন। ১৮৮৩ সালে তিনি কলকাতায় চলে যান। সেখানে সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে নানান দ্রব্য জোগান দেওয়ার ব্যবসা করেন। এই ব্যবসায় সাফল্য পেয়ে তিনি কলকাতায় করিন্থিয়ান হল নামক এক থিয়েটার মঞ্চ কিনে ফেলেন। এছাড়া, যেখানে তাঁর কর্মজীবনের শুরু, সেই [[এলফিনস্টোন থিয়েটার কোম্পানী]]-ও তিনি কিনে নেন [[কুভার্জী নাজির]]-এর থেকে, যাঁকে ভারতীয় থিয়েটার জগতের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করা হয়।<ref name=gramo/> করিন্থিয়ান হলের নতুন নামকরণ হয় [[করিন্থিয়ান থিয়েটার]], আর সেখানে তখনকার জনপ্রিয় [[পার্শী থিয়েটার]] মঞ্চস্থ হতে থাকে। এই থিয়েটার অনেক জাঁকজমকপূর্ণ হত আর এতে অভিনয় করতে আসতেন মহিলা অভিনেত্রীরাও, যা তখনকার দিনে বিরল দেখা যেত।
১৮৮২ সালে থিয়েটার কোম্পানীর কাজ ছেড়ে দিয়ে, ম্যাডান [[করাচী]] শহরে ছোটোখাটো ব্যবসায় লিপ্ত হন, আর তাতে সাফল্য অর্জন করেন। ১৮৮৩ সালে তিনি কলকাতায় চলে যান। সেখানে সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে নানান দ্রব্য জোগান দেওয়ার ব্যবসা করেন। এই ব্যবসায় সাফল্য পেয়ে তিনি কলকাতায় করিন্থিয়ান হল নামক এক থিয়েটার মঞ্চ কিনে ফেলেন। এছাড়া, যেখানে তাঁর কর্মজীবনের শুরু, সেই [[এলফিনস্টোন থিয়েটার কোম্পানী]]-ও তিনি কিনে নেন [[কুভার্জী নাজির]]-এর থেকে, যাঁকে ভারতীয় থিয়েটার জগতের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করা হয়।<ref name=gramo/> করিন্থিয়ান হলের নতুন নামকরণ হয় [[করিন্থিয়ান থিয়েটার]], আর সেখানে তখনকার জনপ্রিয় [[পার্শী থিয়েটার]] মঞ্চস্থ হতে থাকে। এই থিয়েটার অনেক জাঁকজমকপূর্ণ হত আর এতে অভিনয় করতে আসতেন মহিলা অভিনেত্রীরাও, যা তখনকার দিনে বিরল দেখা যেত।


১৯০২ সালে, কলকাতার ময়দানে তাঁবু খাটিয়ে তিনি [[বায়োস্কোপ শো]] দেখানো শুরু করেন। একইসঙ্গে করিন্থিয়ান থিয়েটারেও একইরকম শো শুরু করেন। [[প্যারিস|প্যারিসের]] 'পাথে ফ্রেরেস' কোম্পানী থেকে আনা হয়েছিল এসব শোয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এইসব বায়োস্কোপ শোয়ে 'পাথে প্রোডাকশনস' কোম্পানীর নির্মিত ছবিই দেখানো হত।এইসব বায়োস্কোপ শোয়ের আয়োজন করা হয়েছিল এলফিনস্টোন বায়োস্কোপ কোম্পানীর নামে।<ref name=gramo/> এই কোম্পানীর তত্ত্বাবধানে অনেক স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি হয়।<ref>{{cite web | url = http://hungarian.imdb.com/company/co0117825/ | publisher = হাঙ্গারীয়ান [[ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেস]] | title = এলফিনস্টোন বায়োস্কোপ কোম্পানী}}</ref> একই বছরে আলফ্রেড থিয়েটার কিনে সেখানেও ম্যাডান বায়োস্কোপ শো শুরু করেন।
১৯০২ সালে, কলকাতার ময়দানে তাঁবু খাটিয়ে তিনি [[বায়োস্কোপ শো]] দেখানো শুরু করেন। একইসঙ্গে করিন্থিয়ান থিয়েটারেও একইরকম শো শুরু করেন। [[প্যারিস|প্যারিসের]] 'পাথে ফ্রেরেস' কোম্পানী থেকে আনা হয়েছিল এসব শোয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এইসব বায়োস্কোপ শোয়ে 'পাথে প্রোডাকশনস' কোম্পানীর নির্মিত ছবিই দেখানো হত।এইসব বায়োস্কোপ শোয়ের আয়োজন করা হয়েছিল এলফিনস্টোন বায়োস্কোপ কোম্পানীর নামে।<ref name=gramo/> এই কোম্পানীর তত্ত্বাবধানে অনেক স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি | url = http://hungarian.imdb.com/company/co0117825/ | publisher = হাঙ্গারীয়ান [[ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেস]] | title = এলফিনস্টোন বায়োস্কোপ কোম্পানী}}</ref> একই বছরে আলফ্রেড থিয়েটার কিনে সেখানেও ম্যাডান বায়োস্কোপ শো শুরু করেন।


১৯০৭ সালে তিনি কলকাতার প্রথম স্থায়ী শো হাউস প্রতিষ্ঠা করেন 'এলফিনস্টোন পিক্‌চার প্যালেস', যা আজকাল 'চ্যাপলিন সিনেমা' নামে পরিচিত। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ম্যাডান থিয়েটার আর 'প্যালেস অফ্‌ ভ্যারাইটিস' (যা আজকাল 'এলিট সিনেমা' নামে পরিচিত)।<ref name=gramo/>
১৯০৭ সালে তিনি কলকাতার প্রথম স্থায়ী শো হাউস প্রতিষ্ঠা করেন 'এলফিনস্টোন পিক্‌চার প্যালেস', যা আজকাল 'চ্যাপলিন সিনেমা' নামে পরিচিত। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ম্যাডান থিয়েটার আর 'প্যালেস অফ্‌ ভ্যারাইটিস' (যা আজকাল 'এলিট সিনেমা' নামে পরিচিত)।<ref name=gramo/>
৩৭ নং লাইন: ৩৭ নং লাইন:


== ঐতিহ্যধারা ==
== ঐতিহ্যধারা ==
ম্যাডান এবং তাঁর আত্মীয়স্বজন মদ্যদ্রব্য আমদানি, খাদ্য, ঔষধদ্রব্য, জমিজমা, বীমা প্রভৃতি নানান ব্যবসায় লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু এসবের মধ্যে ম্যাডান থিয়েটার ছিল সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আর সর্বজ্ঞাত। এই সংস্থার প্রসার [[বার্মা]] আর [[শ্রীলঙ্কা]] অবধি ছড়িয়ে পড়ে—সেই সময়ে এই দুটি দেশ [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতের]] মধ্যে পড়ত।<ref>{{cite web | url = http://www.bfjaawards.com/archives/articles/198801.htm | title = BFJA page on five pillars of Indian Cinema | publisher = Bengal Film Journalist Association}}</ref>
ম্যাডান এবং তাঁর আত্মীয়স্বজন মদ্যদ্রব্য আমদানি, খাদ্য, ঔষধদ্রব্য, জমিজমা, বীমা প্রভৃতি নানান ব্যবসায় লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু এসবের মধ্যে ম্যাডান থিয়েটার ছিল সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আর সর্বজ্ঞাত। এই সংস্থার প্রসার [[বার্মা]] আর [[শ্রীলঙ্কা]] অবধি ছড়িয়ে পড়ে—সেই সময়ে এই দুটি দেশ [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতের]] মধ্যে পড়ত।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি | url = http://www.bfjaawards.com/archives/articles/198801.htm | title = BFJA page on five pillars of Indian Cinema | publisher = Bengal Film Journalist Association}}</ref>


১৯২৩ সালে জ়ে এফ ম্যাডানের মৃত্যুর পর তাঁর তৃতীয় পুত্র জ়ে জ়ে ম্যাডান হন ম্যাডান থিয়েটার্সের কর্ণধার। ১৯২০-এর দশকের শেষদিকে ম্যাডান থিয়েটার্স উন্নতির শীর্ষে পৌঁছেছিল, যখন এর অধীনে ১২৭ টি থিয়েটার আর সারা দেশের বক্স অফিসের অর্ধেক নাগালের মধ্যে এসে গিয়েছিল।<ref>{{cite book | page = 520 | title = The SAGE Handbook of Media Studies | author = John H Downing et. al | publisher = SAGE | year = 2004 | isbn = 0761921699}}</ref> ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ম্যাডান থিয়েটার্স বহু জনপ্রিয় ছবির প্রযোজনা করে যেগুলি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য।
১৯২৩ সালে জ়ে এফ ম্যাডানের মৃত্যুর পর তাঁর তৃতীয় পুত্র জ়ে জ়ে ম্যাডান হন ম্যাডান থিয়েটার্সের কর্ণধার। ১৯২০-এর দশকের শেষদিকে ম্যাডান থিয়েটার্স উন্নতির শীর্ষে পৌঁছেছিল, যখন এর অধীনে ১২৭ টি থিয়েটার আর সারা দেশের বক্স অফিসের অর্ধেক নাগালের মধ্যে এসে গিয়েছিল।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | page = 520 | title = The SAGE Handbook of Media Studies | author = John H Downing et. al | publisher = SAGE | year = 2004 | isbn = 0761921699}}</ref> ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ম্যাডান থিয়েটার্স বহু জনপ্রিয় ছবির প্রযোজনা করে যেগুলি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য।


আমেরিকান অভিনেতা [[এরিক আভারি]] হলেন ম্যাডান বংশের এক উত্তরসূরী; তিনি জ়ে জ়ে ম্যাডানের প্রপৌত্র।<ref>{{imdb name|0042805|Erick Avari}}</ref>
আমেরিকান অভিনেতা [[এরিক আভারি]] হলেন ম্যাডান বংশের এক উত্তরসূরী; তিনি জ়ে জ়ে ম্যাডানের প্রপৌত্র।<ref>{{imdb name|0042805|Erick Avari}}</ref>


== সূত্র ==
== সূত্র ==
{{সূত্র তালিকা}}
{{reflist}}
== বহিঃসংযোগ ==
== বহিঃসংযোগ ==
৫৩ নং লাইন: ৫৩ নং লাইন:
{{বাংলা চলচ্চিত্র}}
{{বাংলা চলচ্চিত্র}}


{{DEFAULTSORT:জামশেদজী ফ্রেমজী ম্যাডান}}
{{পূর্বনির্ধারিতবাছাই:জামশেদজী ফ্রেমজী ম্যাডান}}
[[বিষয়শ্রেণী:১৮৫৬-এ জন্ম]]
[[বিষয়শ্রেণী:১৮৫৬-এ জন্ম]]
[[বিষয়শ্রেণী:১৯২৩-এ মৃত্যু]]
[[বিষয়শ্রেণী:১৯২৩-এ মৃত্যু]]

১৪:৪৪, ২২ মার্চ ২০১৭ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
জন্ম১৮৫৬
মুম্বাই
মৃত্যু১৯২৩

জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান (১৮৫৬-১৯২৩) ছিলেন এক পার্শী ব্যবসায়ী এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের একজন পথিকৃৎ। তিনি মুম্বাই শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর কর্মক্ষেত্র ছিল কলকাতায়

প্রাথমিক জীবন

ম্যাডানের পিতার অনেক টাকার ক্ষতি হয় বম্বে রিক্ল্যামেশন ব্যাঙ্কের পতনের কারণে। এই ব্যাঙ্কের দায়িত্ব ছিল বম্বের সাতটি দ্বীপের জমি উদ্ধার করা। জ়ামশেদজি স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন; তারপর তিনি ১৮৬৮ সালে 'এলফিনস্টোন ড্রামাটিক ক্লাব'-এ থিয়েটারের 'prop boy'-এর কাজ নেন। ১৯৭৫ সালের মধ্যে এই অপেশাদার ক্লাব একটি পেশাদার থিয়েটার কোম্পানীতে পরিণত হয় আর সারা ভারত জুড়ে তাঁদের থিয়েটার মঞ্চস্থ করে।[১]

অধ্যবসায়

১৮৮২ সালে থিয়েটার কোম্পানীর কাজ ছেড়ে দিয়ে, ম্যাডান করাচী শহরে ছোটোখাটো ব্যবসায় লিপ্ত হন, আর তাতে সাফল্য অর্জন করেন। ১৮৮৩ সালে তিনি কলকাতায় চলে যান। সেখানে সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে নানান দ্রব্য জোগান দেওয়ার ব্যবসা করেন। এই ব্যবসায় সাফল্য পেয়ে তিনি কলকাতায় করিন্থিয়ান হল নামক এক থিয়েটার মঞ্চ কিনে ফেলেন। এছাড়া, যেখানে তাঁর কর্মজীবনের শুরু, সেই এলফিনস্টোন থিয়েটার কোম্পানী-ও তিনি কিনে নেন কুভার্জী নাজির-এর থেকে, যাঁকে ভারতীয় থিয়েটার জগতের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করা হয়।[১] করিন্থিয়ান হলের নতুন নামকরণ হয় করিন্থিয়ান থিয়েটার, আর সেখানে তখনকার জনপ্রিয় পার্শী থিয়েটার মঞ্চস্থ হতে থাকে। এই থিয়েটার অনেক জাঁকজমকপূর্ণ হত আর এতে অভিনয় করতে আসতেন মহিলা অভিনেত্রীরাও, যা তখনকার দিনে বিরল দেখা যেত।

১৯০২ সালে, কলকাতার ময়দানে তাঁবু খাটিয়ে তিনি বায়োস্কোপ শো দেখানো শুরু করেন। একইসঙ্গে করিন্থিয়ান থিয়েটারেও একইরকম শো শুরু করেন। প্যারিসের 'পাথে ফ্রেরেস' কোম্পানী থেকে আনা হয়েছিল এসব শোয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এইসব বায়োস্কোপ শোয়ে 'পাথে প্রোডাকশনস' কোম্পানীর নির্মিত ছবিই দেখানো হত।এইসব বায়োস্কোপ শোয়ের আয়োজন করা হয়েছিল এলফিনস্টোন বায়োস্কোপ কোম্পানীর নামে।[১] এই কোম্পানীর তত্ত্বাবধানে অনেক স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি হয়।[২] একই বছরে আলফ্রেড থিয়েটার কিনে সেখানেও ম্যাডান বায়োস্কোপ শো শুরু করেন।

১৯০৭ সালে তিনি কলকাতার প্রথম স্থায়ী শো হাউস প্রতিষ্ঠা করেন 'এলফিনস্টোন পিক্‌চার প্যালেস', যা আজকাল 'চ্যাপলিন সিনেমা' নামে পরিচিত। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ম্যাডান থিয়েটার আর 'প্যালেস অফ্‌ ভ্যারাইটিস' (যা আজকাল 'এলিট সিনেমা' নামে পরিচিত)।[১]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তাঁর ব্যবসায় প্রভূত উন্নতি হয়। ১৯১৯ সালে, চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যবসায়ে তিনি 'ম্যাডান থিয়েটার্স লিমিটেড' নামে একটি যৌথ উদ্যোগ কোম্পানী স্থাপন করেন। এই কোম্পানী আর এর সহযোগী কোম্পানীগুলির তখনকার ভারতীয় থিয়েটার হাউসগুলির ওপর অনেক প্রতিপত্তি ছিল। ১৯১৯ সালে ম্যাডানের প্রযোজনায় তৈরি হয় বিল্বমঙ্গল, প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র। এ ছবির প্রথম প্রদর্শন হয় 'কর্ণওয়ালিস থিয়েটার'-এ, যা আজকাল 'শ্রী সিনেমা' নামে পরিচিত।

'দি ইলেক্ট্রিক ধিয়েটার' (এখনকার 'রিগ্যাল সিনেমা'), 'গ্র্যান্ড অপেরা হাউস' (এখনকার 'গ্লোব সিনেমা') আর 'ক্রাউন সিনেমা' (এখনকার 'উত্তরা সিনেমা')—এসবই ছিল ম্যাডান থিয়েটার্সের অধীনে।

সাফল্যের চাবিকাঠি

ম্যাডানের তৈরি চলচ্চিত্রে উচ্চমানের কারিগরী দক্ষতার পরিচয় থাকত। বিদেশ থেকে তিনি ইউজেনিও দে লিগুরো, ক্যামিল লে গ্রাঁদ আর জর্জিও ম্যানিনির মত অভিজ্ঞ পরিচালকদের আমন্ত্রণ করে এনে তাঁর ছবির পরিচালনার কাজে নিযুক্ত করেন। এঁদের অভিজ্ঞতার সাথে বিশাল বিশাল 'সেট'-এর ব্যবহার আর জনপ্রিয় পৌরাণিক কাহিনীর গল্প—এসব উপাদান ম্যাডানকে ব্যবসায়িক সাফল্য এনে দেয়। এর ওপর তাঁর অনেক চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছিল সেই সময়কার জনপ্রিয় থিয়েটারের অনুসরণে। লিগুরো পরিচালনা করেছিলেন নল দময়ন্তী (১৯২০) আর ধ্রুব চরিত্র (১৯২১); লে গ্রাঁদ পরিচালনা করেছিলেন রত্নাবলী (১৯২২) আর ম্যানিনি পরিচালনা করেছিলেন সাবিত্রী সত্যবান (১৯২৩). সেই সময়ের জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেত্রী পেশেন্স কুপার ম্যাডান থিয়েটার্স প্রযোজিত বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

ম্যাডান বাংলা সাহিত্যের দিকপাল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানান রচনাসৃষ্টির চলচ্চিত্র সত্ত্ব সংগ্রহ করার প্রচেষ্টা চালান। ম্যাডান থিয়েটারের প্রযোজনায় বঙ্কিমচন্দ্রের রচনার ওপর ভিত্তি করে বিষবৃক্ষ (১৯২২ আর ১৯২৮), দুর্গেশনন্দিনী (১৯২৭) আর রাধারাণী (১৯৩০) ছবিগুলি তৈরি হয়। রবীন্দ্রনাথের রচনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় গিরিবালা (১৯২৯)।

ঐতিহ্যধারা

ম্যাডান এবং তাঁর আত্মীয়স্বজন মদ্যদ্রব্য আমদানি, খাদ্য, ঔষধদ্রব্য, জমিজমা, বীমা প্রভৃতি নানান ব্যবসায় লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু এসবের মধ্যে ম্যাডান থিয়েটার ছিল সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আর সর্বজ্ঞাত। এই সংস্থার প্রসার বার্মা আর শ্রীলঙ্কা অবধি ছড়িয়ে পড়ে—সেই সময়ে এই দুটি দেশ ব্রিটিশ ভারতের মধ্যে পড়ত।[৩]

১৯২৩ সালে জ়ে এফ ম্যাডানের মৃত্যুর পর তাঁর তৃতীয় পুত্র জ়ে জ়ে ম্যাডান হন ম্যাডান থিয়েটার্সের কর্ণধার। ১৯২০-এর দশকের শেষদিকে ম্যাডান থিয়েটার্স উন্নতির শীর্ষে পৌঁছেছিল, যখন এর অধীনে ১২৭ টি থিয়েটার আর সারা দেশের বক্স অফিসের অর্ধেক নাগালের মধ্যে এসে গিয়েছিল।[৪] ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ম্যাডান থিয়েটার্স বহু জনপ্রিয় ছবির প্রযোজনা করে যেগুলি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য।

আমেরিকান অভিনেতা এরিক আভারি হলেন ম্যাডান বংশের এক উত্তরসূরী; তিনি জ়ে জ়ে ম্যাডানের প্রপৌত্র।[৫]

সূত্র

  1. Michael Kinnear (২০০৪)। The Gramophone Company's First Indian Recordings, 1899-1908। Popular Prakshan। পৃষ্ঠা 17–20। আইএসবিএন 8171547281 
  2. "এলফিনস্টোন বায়োস্কোপ কোম্পানী"। হাঙ্গারীয়ান ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেস 
  3. "BFJA page on five pillars of Indian Cinema"। Bengal Film Journalist Association। 
  4. John H Downing et. al (২০০৪)। The SAGE Handbook of Media Studies। SAGE। পৃষ্ঠা 520। আইএসবিএন 0761921699 
  5. ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে Erick Avari (ইংরেজি)

বহিঃসংযোগ