প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
সংশোধন, বানান সংশোধন
৩ নং লাইন: ৩ নং লাইন:
| image = Pramathesh Barua and Jamuna Barua in Devdas, 1935.jpg
| image = Pramathesh Barua and Jamuna Barua in Devdas, 1935.jpg
| imagesize =
| imagesize =
| caption = দেবদাস চলচিত্রে প্রমথেশ বরুয়া ও যমুনা বরুয়া
| caption = দেবদাস চলচ্চিত্ৰে প্রমথেশ বড়ুয়া ও যমুনা বড়ুয়া
| birthname = প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া
| birthname = প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া
| birth_date = ২৪ অক্টোবর, ১৯০৩
| birth_date = ২৪ অক্টোবর, ১৯০৩
| birth_place = [[গৌরীপুর]], [[অসম]], [[ভারত]]
| birth_place = [[গৌরীপুর]], [[অসম]], [[ভারত]]
| death_date = ২৯ নভেম্বর, ১৯৫১
| death_date = ২৯ নভেম্বর, ১৯৫১
| death_place = [[কলকতা]], [[পশ্চিম বঙ্গ]], [[ভারত]]
| death_place = [[কলকাতা]], [[পশ্চিমবঙ্গ]], [[ভারত]]
| othername =
| othername =
| occupation = অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রনাট্য লেখক
| occupation = অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রনাট্য লেখক
১৯ নং লাইন: ১৯ নং লাইন:
| awards =
| awards =
}}
}}
'''প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া''' ( {{lang-en|Pramathesh Chandra (P.C.) Barua}}; [[অসমীয়া ভাষা|অসমীয়া:প্ৰমথেশ চন্দ্ৰ বৰুৱা]] ) ভারতের একজন বিখ্যাত অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্য লেখক ছিলেন। আসামের গৌরীপুরে জন্মগ্রহন করা প্রমথেশ বরুয়া বাংলা ও হিন্দী চলচিত্র জগতের একজন বিখ্যাত চলচিত্র নির্মাতা ছিলেন। '''অপরাধী''' চলচ্চিত্রে তিনি সর্বপ্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন এবং এটাই ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে প্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার। তিনি অপরাধী চলচিত্রে ব্যাবহার করা “কৃত্রিম আলো” ভারতীয় চলচিত্রে জগতে প্রথম কৃত্রিম ব্যাবস্থা ছিল। ভারতীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম তিনি দেবদাস চলচ্চিত্রে ফ্লাস ব্যাক মন্তাজ, টেলিপ্যাথি শট এবং সাবজেকটিভ ক্যামেরার প্রথম ব্যবহার করেন।<ref>http://calcuttaweb.com/cinema/pramatheshbarua.shtml</ref>
'''প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া''' ( {{lang-en|Pramathesh Chandra (P.C.) Barua}}; [[অসমীয়া ভাষা|অসমীয়া:প্ৰমথেশ চন্দ্ৰ বৰুৱা]] ) ভারতের একজন বিখ্যাত অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্য লেখক ছিলেন। আসামের গৌরীপুরে জন্মগ্রহণ করা প্রমথেশ বড়ুয়া বাংলা ও হিন্দী চলচ্চিত্ৰ জগতের একজন বিখ্যাত চলচিত্র নির্মাতা ছিলেন। '''অপরাধী''' চলচ্চিত্রে তিনি সর্বপ্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন এবং এটাই ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে প্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার। তাঁর অপরাধী চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা “কৃত্রিম আলো” ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে প্রথম কৃত্রিম ব্যবস্থা ছিল। ভারতীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম তিনি দেবদাস চলচ্চিত্রে ফ্লাস ব্যাক মন্তাজ, টেলিপ্যাথি শট এবং সাবজেকটিভ ক্যামেরার ব্যবহার করেন।<ref>http://calcuttaweb.com/cinema/pramatheshbarua.shtml</ref>


==শিক্ষা==
==শিক্ষা==
প্রমথেশ বরুয়ার জন্ম অসমের গোয়ালপারা জেলার গৌরীপুরে হয়েছিল। পিতার নাম প্রভাত চন্দ্র বরুয়া ও মাতার নাম সরোজবালা বরুয়া।<ref>http://web.archive.org/web/20080502101907/http://www.bfjaawards.com/archives/articles/198801.htm</ref> তিনি ছেলেবেলায় গৌরীপুরে ইউনাইটেড ক্লাব নামক একটি সাংস্কৃতিক সংঘের স্থাপনা করে নাটক করিতেন। প্রমথেশ বরুয়া গৌরীপুর বিদ্যালয়ে শিক্ষা সম্পূর্ন করার পর কলকাতার হেয়ার বিদ্যালয়ে নামভর্তী করেছিলন। ১৯২১ সনে তিনি কলকাতার বিরেন্দ্রনাথ মিত্রের কন্যা মাধুরীলতাকে বিবাহ করেছিলেন। ১৯২৮ প্রমথেশ বরুয়া কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেছিলেন। তিনি ইউরোপ ভ্রমণ করার সময় চলচিত্র জগতের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল। ১৯২৬ সনে মাতৃবিয়োগের পর তিনি অসমে ফিরে আসেন ও পিতার সহিত জমিদারী কার্যে মনোনিবেশ করেন। কিছুদিন পর তিনি কলকতার জন্য রওনা হন ঘড়ের সদস্যের আপত্তি থাকা সত্বেও তিনি চলচিত্র জগতে জড়িত হন। তিনি অমলা বালা বরুয়া ও যমুনা বরুয়াকে বিবাহ করেছিলেন। প্রথমেশ বরুয়া মোট ৬টি সন্তানের পিতৃ ছিলেন।
প্রমথেশ বড়ুয়ার জন্ম অসমের [[গোয়ালপাড়া জেলা]]র গৌরীপুরে হয়েছিল। পিতার নাম প্রভাত চন্দ্র বরুয়া ও মাতার নাম সরোজবালা বরুয়া।<ref>http://web.archive.org/web/20080502101907/http://www.bfjaawards.com/archives/articles/198801.htm</ref> তিনি ছেলেবেলায় গৌরীপুরে ইউনাইটেড ক্লাব নামক একটি সাংস্কৃতিক সংঘের স্থাপনা করে নাটক করিতেন। প্রমথেশ বরুয়া গৌরীপুর বিদ্যালয়ে শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর কলকাতার হেয়ার বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলন। ১৯২১ সনে তিনি কলকাতার বীরেন্দ্রনাথ মিত্রের কন্যা মাধুরীলতাকে বিবাহ করেছিলেন। ১৯২৮ প্রমথেশ বরুয়া কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেছিলেন। তিনি ইউরোপ ভ্রমণ করার সময় চলচ্চিত্র জগতের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মেছিল। ১৯২৬ সনে মাতৃবিয়োগের পর তিনি অসমে ফিরে আসেন ও পিতার সহিত জমিদারী কার্যে মনোনিবেশ করেন। কিছুদিন পর তিনি কলকাতার জন্য রওনা হন এবং ঘরের সদস্যদের আপত্তি থাকা সত্বেও তিনি চলচ্চিত্র জগতে জড়িত হন। তিনি অমলা বালা বরুয়া ও যমুনা বরুয়াকে বিবাহ করেছিলেন। প্রথমেশ বরুয়া মোট ৬টি সন্তানের পিতা ছিলেন।


==জীবনী এবং চলচ্চিত্রে অবদান==
==জীবনী এবং চলচ্চিত্রে অবদান==
১৯২০ সালে কলকাতা [[হেয়ার স্কুল]] থেকে প্রবেশিকা পাশ। ১৯২৪-এ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৯২৮-এ মনোনীত সদস্য হিসেবে আসাম আইনসভায় যোগদান। ১৯৩০-এ উক্ত আইনসভার সদস্য নির্বাচিত।তিনি মোট ১৪টি বাংলা ও সাতটি হিন্দি ছবি পরিচালনা করেন।<ref name="ReferenceA">[[সেলিনা হোসেন]] ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ২৩১।</ref> প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া কলকাতার ধীরেন নাথ গাঙ্গুলির দা ব্রিটিশ ডমিনিয়ান ফিল্ম লিমিটেডে ধন নিবেশ করেছিলেন ও তিনি এই প্রতিষ্ঠানে অভিনয় করেছিলেন।তিনি দ্বিতীয়বার ইউরোপ ভ্রমনের জন্য গিয়েছিলেন ও লন্ডন থেকে চলচিত্র নির্মানের জন্য প্রশিক্ষন নিয়েছিলেন ও পেরিসে লাইট বয় হিসেবে কাজ করে চলচিত্র নির্মানের কার্য আয়ত্ত করেছিলেন। পেরিস থেকে চলচিত্র নির্মানের সামগ্রী ক্রয় করে তিনি ভারতে বরুয়া পিক্চার্স নামক ষ্টুডিও স্থাপন করেছিলেন। ১৯৩১ সনে এই ষ্টুডিওর প্রথম চলচিত্র অপরাধী মুক্তি পেয়েছিল। কালিপ্রসাদ ঘোষ পরিচালিত ভাগ্যলক্ষী চলচিত্রে তিনি খলনায়করের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। থীরেন নাথ গাঙ্গুলি, প্রমথেশ বরুয়া ও দেবকী বসু একত্রিত হয়ে নিউ থিয়েটার নামক চলচিত্র প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। এই থিয়েটারের অন্তঃভুক্ত থাকার সময় তিনি দেবদাস চলচিত্র নির্মান করেছিলেন। [[শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] রচিত উপন্যাসে আধারিত এই চলচিত্র প্রথমে বাংলা ভাষায় নির্মান করা হয়েছিল ১৯৬৩ সনে তিনি হিন্দী ভাষায় দেবদাস চলচিত্র নির্মান করেছিলেন। তিনি হিন্দী চলচিত্র মন্জিল, মুক্তি, অধিকার ও রজত জয়ন্তীতে পরিচলনা করেছিলেন।
১৯২০ সালে কলকাতা [[হেয়ার স্কুল]] থেকে প্রবেশিকা পাশ। ১৯২৪-এ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৯২৮-এ মনোনীত সদস্য হিসেবে আসাম আইনসভায় যোগদান। ১৯৩০-এ উক্ত আইনসভার সদস্য নির্বাচিত।তিনি মোট ১৪টি বাংলা ও সাতটি হিন্দি ছবি পরিচালনা করেন।<ref name="ReferenceA">[[সেলিনা হোসেন]] ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ২৩১।</ref> প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া কলকাতার [[ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী]]র 'দ্য ব্রিটিশ ডমিনিয়ান ফিল্ম লিমিটেড'এ মনোনিবেশ করেছিলেন ও তিনি এই প্রতিষ্ঠানে অভিনয় করেছিলেন।তিনি দ্বিতীয়বার ইউরোপ ভ্রমনের জন্য গিয়েছিলেন ও লন্ডন থেকে চলচিত্র নির্মানের জন্য প্রশিক্ষন নিয়েছিলেন ও প্যারিসে লাইট বয় হিসেবে কাজ করে চলচ্চিত্র নির্মানের কার্য আয়ত্ত করেছিলেন। প্যারিস থেকে চলচ্চিত্র নির্মানের সামগ্রী ক্রয় করে তিনি ভারতে বড়ুয়া পিক্চার্স নামক ষ্টুডিও স্থাপন করেছিলেন। ১৯৩১ সনে এই ষ্টুডিওর প্রথম চলচ্চিত্র 'অপরাধী' মুক্তি পেয়েছিল। কালীপ্রসাদ ঘোষ পরিচালিত [[ভাগ্যলক্ষ্মী]] চলচ্চিত্ৰে তিনি খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। [[ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী]], প্রমথেশ বড়ুয়া[[দেবকী বসু]] একত্রিত হয়ে [[নিউ থিয়েটর্স]] নামক চলচ্চিত্র প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। এই থিয়েটারের অন্তঃভুক্ত থাকার সময় তিনি দেবদাস চলচিত্র নির্মাণ করেছিলেন। [[শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] রচিত উপন্যাসে আধারিত এই চলচ্চিত্র প্রথমে বাংলা ভাষায় নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ১৯৩৫ সনে তিনি হিন্দী ভাষায় দেবদাস চলচ্চিত্র নির্মান করেছিলেন। তিনি হিন্দী চলচ্চিত্র মন্জিল, মুক্তি, অধিকার ও রজত জয়ন্তীতে পরিচলনা করেছিলেন।


==মৃত্যু==
==মৃত্যু==
অত্যধিক সুরাপানের ফলে প্রথমেশ বরুয়ার স্বাস্থ ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে ফলে ১৯৫১ সনের ৩১ নভেম্বর তারিখে প্রমথেশ বরুয়ার মৃত্যু হয়। কলকাতার কেওরালতা সমাধিক্ষেত্রে প্রথমেশ বরুয়ার অন্তিম কার্য সমাপ্ত করা হয়।
অত্যধিক সুরাপানের ফলে প্রথমেশ বড়ুয়ার স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে; ফলে ১৯৫১ সনের ৩১শে নভেম্বর তারিখে প্রমথেশ বড়ুয়ার মৃত্যু হয়। কলকাতার [[ক্যাওড়াতলা]] মহাশ্মশানে প্রথমেশ বরুয়ার অন্তিম কার্য সমাপ্ত করা হয়।
==প্রমথেশ বরুয়ার চলচিত্র==
==প্রমথেশ বরুয়ার চলচিত্র==
;পরিচালনা
;পরিচালনা
৬৯ নং লাইন: ৬৯ নং লাইন:
*মঞ্জিল(১৯৩৬) .... মহিম
*মঞ্জিল(১৯৩৬) .... মহিম
*দেবদাস (১৯৩৫) .... দেবদাস
*দেবদাস (১৯৩৫) .... দেবদাস
*রূপ লেখা (১৯৩৪) .... অরুপ
*রূপ লেখা (১৯৩৪) .... অরূপ
*বেঙ্গল ১৯৮৩ (১৯৩২)
*বেঙ্গল ১৯৮৩ (১৯৩২)
*অপরাধী (১৯৩১)
*অপরাধী (১৯৩১)
*চরিত্ৰহীন (১৯৩১)
*চরিত্ৰহীন (১৯৩১)
*টাকাই কি না হয় (১৯৩১)
*টাকায় কি না হয় (১৯৩১)
</div>
</div>



০৬:১২, ২৭ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া
দেবদাস চলচ্চিত্ৰে প্রমথেশ বড়ুয়া ও যমুনা বড়ুয়া
জন্ম
প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া

২৪ অক্টোবর, ১৯০৩
মৃত্যু২৯ নভেম্বর, ১৯৫১
পেশাঅভিনেতা, পরিচালক, চিত্রনাট্য লেখক
দাম্পত্য সঙ্গীমাধুরীলতা
অমলা বালা বরুয়া
যমুনা বরুয়া

প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া ( ইংরেজি: Pramathesh Chandra (P.C.) Barua; অসমীয়া:প্ৰমথেশ চন্দ্ৰ বৰুৱা ) ভারতের একজন বিখ্যাত অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্য লেখক ছিলেন। আসামের গৌরীপুরে জন্মগ্রহণ করা প্রমথেশ বড়ুয়া বাংলা ও হিন্দী চলচ্চিত্ৰ জগতের একজন বিখ্যাত চলচিত্র নির্মাতা ছিলেন। অপরাধী চলচ্চিত্রে তিনি সর্বপ্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন এবং এটাই ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে প্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার। তাঁর অপরাধী চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা “কৃত্রিম আলো” ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে প্রথম কৃত্রিম ব্যবস্থা ছিল। ভারতীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম তিনি দেবদাস চলচ্চিত্রে ফ্লাস ব্যাক মন্তাজ, টেলিপ্যাথি শট এবং সাবজেকটিভ ক্যামেরার ব্যবহার করেন।[১]

শিক্ষা

প্রমথেশ বড়ুয়ার জন্ম অসমের গোয়ালপাড়া জেলার গৌরীপুরে হয়েছিল। পিতার নাম প্রভাত চন্দ্র বরুয়া ও মাতার নাম সরোজবালা বরুয়া।[২] তিনি ছেলেবেলায় গৌরীপুরে ইউনাইটেড ক্লাব নামক একটি সাংস্কৃতিক সংঘের স্থাপনা করে নাটক করিতেন। প্রমথেশ বরুয়া গৌরীপুর বিদ্যালয়ে শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর কলকাতার হেয়ার বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলন। ১৯২১ সনে তিনি কলকাতার বীরেন্দ্রনাথ মিত্রের কন্যা মাধুরীলতাকে বিবাহ করেছিলেন। ১৯২৮ প্রমথেশ বরুয়া কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেছিলেন। তিনি ইউরোপ ভ্রমণ করার সময় চলচ্চিত্র জগতের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মেছিল। ১৯২৬ সনে মাতৃবিয়োগের পর তিনি অসমে ফিরে আসেন ও পিতার সহিত জমিদারী কার্যে মনোনিবেশ করেন। কিছুদিন পর তিনি কলকাতার জন্য রওনা হন এবং ঘরের সদস্যদের আপত্তি থাকা সত্বেও তিনি চলচ্চিত্র জগতে জড়িত হন। তিনি অমলা বালা বরুয়া ও যমুনা বরুয়াকে বিবাহ করেছিলেন। প্রথমেশ বরুয়া মোট ৬টি সন্তানের পিতা ছিলেন।

জীবনী এবং চলচ্চিত্রে অবদান

১৯২০ সালে কলকাতা হেয়ার স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাশ। ১৯২৪-এ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৯২৮-এ মনোনীত সদস্য হিসেবে আসাম আইনসভায় যোগদান। ১৯৩০-এ উক্ত আইনসভার সদস্য নির্বাচিত।তিনি মোট ১৪টি বাংলা ও সাতটি হিন্দি ছবি পরিচালনা করেন।[৩] প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া কলকাতার ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলীর 'দ্য ব্রিটিশ ডমিনিয়ান ফিল্ম লিমিটেড'এ মনোনিবেশ করেছিলেন ও তিনি এই প্রতিষ্ঠানে অভিনয় করেছিলেন।তিনি দ্বিতীয়বার ইউরোপ ভ্রমনের জন্য গিয়েছিলেন ও লন্ডন থেকে চলচিত্র নির্মানের জন্য প্রশিক্ষন নিয়েছিলেন ও প্যারিসে লাইট বয় হিসেবে কাজ করে চলচ্চিত্র নির্মানের কার্য আয়ত্ত করেছিলেন। প্যারিস থেকে চলচ্চিত্র নির্মানের সামগ্রী ক্রয় করে তিনি ভারতে বড়ুয়া পিক্চার্স নামক ষ্টুডিও স্থাপন করেছিলেন। ১৯৩১ সনে এই ষ্টুডিওর প্রথম চলচ্চিত্র 'অপরাধী' মুক্তি পেয়েছিল। কালীপ্রসাদ ঘোষ পরিচালিত ভাগ্যলক্ষ্মী চলচ্চিত্ৰে তিনি খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী, প্রমথেশ বড়ুয়া ও দেবকী বসু একত্রিত হয়ে নিউ থিয়েটর্স নামক চলচ্চিত্র প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। এই থিয়েটারের অন্তঃভুক্ত থাকার সময় তিনি দেবদাস চলচিত্র নির্মাণ করেছিলেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত উপন্যাসে আধারিত এই চলচ্চিত্র প্রথমে বাংলা ভাষায় নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ১৯৩৫ সনে তিনি হিন্দী ভাষায় দেবদাস চলচ্চিত্র নির্মান করেছিলেন। তিনি হিন্দী চলচ্চিত্র মন্জিল, মুক্তি, অধিকার ও রজত জয়ন্তীতে পরিচলনা করেছিলেন।

মৃত্যু

অত্যধিক সুরাপানের ফলে প্রথমেশ বড়ুয়ার স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে; ফলে ১৯৫১ সনের ৩১শে নভেম্বর তারিখে প্রমথেশ বড়ুয়ার মৃত্যু হয়। কলকাতার ক্যাওড়াতলা মহাশ্মশানে প্রথমেশ বরুয়ার অন্তিম কার্য সমাপ্ত করা হয়।

প্রমথেশ বরুয়ার চলচিত্র

পরিচালনা
  • বেঙ্গল ১৯৮৩ (১৯৩২)
  • রূপ লেখা (১৯৩৪)
  • দেবদাস (১৯৩৫)
  • মায়া (১৯৩৬)
  • মঞ্জিল (১৯৩৬)
  • গৃহদাহ (১৯৩৬)
  • দেবদাস (১৯৩৬) হিন্দী
  • মুক্তি (১৯৩৭)
  • রজত জয়ন্তী (১৯৩৯)
  • অধিকার (১৯৩৯)
  • জিন্দেগী (১৯৪০)
  • শাপ মুক্তি (১৯৪০)
  • মায়ের প্ৰাণ (১৯৪১)
  • উত্তরায়ণ (১৯৪১)
  • জবাব (১৯৪২)
  • রাণী (১৯৪৩)
  • চুবহ শাম (১৯৪৪)
  • আমীরী (১৯৪৫)
  • পেহচান (১৯৪৬)
  • ইরাণ কী এক রাত (১৯৪৯)
  • মায়া কানন (১৯৫৩)
অভিনয়
  • সুবহ শাম (১৯৪৪)
  • রানী (১৯৪৩)
  • জবাব (১৯৪২) .... মনোজ
  • উত্তরায়ণ (১৯৪১) .... সলিল
  • মায়ের প্ৰাণ (১৯৪১) .... সতীশ
  • শাপ মুক্তি (১৯৪০) .... রমেশ
  • অধিকার (১৯৩৯) .... নিখিলেশ
  • রজত জয়ন্তী (১৯৩৯) .... রজত
  • মুক্তি (১৯৩৭) .... প্ৰশান্ত
  • গৃহদাহ (১৯৩৬) .... মহিম
  • মঞ্জিল(১৯৩৬) .... মহিম
  • দেবদাস (১৯৩৫) .... দেবদাস
  • রূপ লেখা (১৯৩৪) .... অরূপ
  • বেঙ্গল ১৯৮৩ (১৯৩২)
  • অপরাধী (১৯৩১)
  • চরিত্ৰহীন (১৯৩১)
  • টাকায় কি না হয় (১৯৩১)
চিত্রনাট্যকার
  • অধিকার (১৯৩৯)
  • রজত জয়ন্তী (১৯৩৯)
  • মুক্তি (১৯৩৭)
  • দেবদাস (১৯৩৬) হিন্দী
  • মায়া (১৯৩৬)
  • দেবদাস (১৯৩৫)
  • একাডা (১৯৩২)

তথ্যসূত্র

  1. http://calcuttaweb.com/cinema/pramatheshbarua.shtml
  2. http://web.archive.org/web/20080502101907/http://www.bfjaawards.com/archives/articles/198801.htm
  3. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ২৩১।