ফোরাত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Intakhab ব্যবহারকারী ইউফ্রেটিস পাতাটিকে ফোরাত শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন: মূল নাম
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{Unreferenced|date=মার্চ ২০১০}}
{{Unreferenced|date=মার্চ ২০১০}}


{{তথ্যছক নদী| river_name = ইউফ্রেটিস
{{তথ্যছক নদী| river_name = ফোরাত
| image_name = Tigr-euph.png
| image_name = Tigr-euph.png
| caption = [[টাইগ্রিস]] নদীর মানচিত্র-ইউফ্রেটিস (জলছাপ দেয়া অঞ্চল)
| caption = [[দজলা]] নদীর মানচিত্র-ফোরাত (জলছাপ দেয়া অঞ্চল)
| origin = পূর্ব [[তুরস্ক]]
| origin = পূর্ব [[তুরস্ক]]
| mouth = [[শাত আল আরব]]
| mouth = [[শাত আল আরব]]
১২ নং লাইন: ১২ নং লাইন:
| watershed = ৭৬৫,৮৩১ কিমি²
| watershed = ৭৬৫,৮৩১ কিমি²
}}
}}
'''ইউফ্রেটিস নদী''' ({{lang-ar|نهر الفرات ''নাহ্‌র্‌ উল্‌-ফুরাত্‌''; [[তুর্কি ভাষা|তুর্কি ভাষায়]]: Fırat; [[সিরীয় ভাষা|সিরীয় ভাষায়]]: ܦܪܬ; [[হিব্রু ভাষা|হিব্রু ভাষায়]]: פרת}}) বা '''ফোরাত''' দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি নদী। এটি তুরস্কতে উৎপত্তি লাভ করে [[সিরিয়া]] ও [[ইরাক|ইরাকের]] ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে [[টাইগ্রিস]] নদীর সাথে মিলিত হয়েছে এবং শাত আল আরব নামে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে। ইউফ্রেটিস ও [[টাইগ্রিস]] নদীর পানি ব্যবহার করেই প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতাগুলি বিকাশ লাভ করেছিল। গ্রিক নাম মেসোপটেমিয়া এই স্বাক্ষরই বহন করছে; শব্দটির আক্ষরিক অর্থ "দুই নদীর মাঝে"। এখানেই প্রাচীন সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় এবং আসিরিয় সভ্যতাগুলি বিকাশ লাভ করেছিল।
'''ফোরাত নদী''' ({{lang-ar|نهر الفرات ''নাহ্‌র্‌ উল্‌-ফুরাত্‌''; [[তুর্কি ভাষা|তুর্কি ভাষায়]]: Fırat; [[সিরীয় ভাষা|সিরীয় ভাষায়]]: ܦܪܬ; [[হিব্রু ভাষা|হিব্রু ভাষায়]]: פרת}}) বা '''ফোরাত''' দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি নদী। এটি তুরস্কতে উৎপত্তি লাভ করে [[সিরিয়া]] ও [[ইরাক|ইরাকের]] ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে [[দজলা]] নদীর সাথে মিলিত হয়েছে এবং শাত আল আরব নামে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে। ফোরাত ও [[দজলা]] নদীর পানি ব্যবহার করেই প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতাগুলি বিকাশ লাভ করেছিল। গ্রিক নাম মেসোপটেমিয়া এই স্বাক্ষরই বহন করছে; শব্দটির আক্ষরিক অর্থ "দুই নদীর মাঝে"। এখানেই প্রাচীন সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় এবং আসিরিয় সভ্যতাগুলি বিকাশ লাভ করেছিল।


ইউফ্রেটিস নদী ২,৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর অববাহিকার আয়তন প্রায় ৪,৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার। এর মোট অববাহিকার মাত্র ৩০% তুরস্কতে অবস্থিত হলেও এর পানির ৯০%-এর উৎস তুরস্কের উচ্চভূমি। তুরস্কের কোরাসুয়ু নদী, মুরাত নদী এবং আরও অনেকগুলি নদী পূর্ব মধ্য তুরস্কে এলাজিগ-এর কাছে মিলিত হয়ে ইউফ্রেটিসের ঊর্ধ্ব অংশ গঠন করেছে। তারপর নদীটি আলাব শহরের ১২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সিরিয়াতে প্রবেশ করেছে। পূর্ব সিরিয়াতে এর সাথে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক থেকে আগত খাবুর নদী নামের একটি প্রধান উপনদী মিলিত হয়েছে।
ফোরাত নদী ২,৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর অববাহিকার আয়তন প্রায় ৪,৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার। এর মোট অববাহিকার মাত্র ৩০% তুরস্কতে অবস্থিত হলেও এর পানির ৯০%-এর উৎস তুরস্কের উচ্চভূমি। তুরস্কের কোরাসুয়ু নদী, মুরাত নদী এবং আরও অনেকগুলি নদী পূর্ব মধ্য তুরস্কে এলাজিগ-এর কাছে মিলিত হয়ে ফোরাতর ঊর্ধ্ব অংশ গঠন করেছে। তারপর নদীটি আলাব শহরের ১২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সিরিয়াতে প্রবেশ করেছে। পূর্ব সিরিয়াতে এর সাথে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক থেকে আগত খাবুর নদী নামের একটি প্রধান উপনদী মিলিত হয়েছে।


ইউফ্রেটিস নদীর গতিপথ মূলত টাইগ্রিস নদীর সমান্তরাল। নদী দুইটি ইরাকে প্রবেশের পর একে অপর থেকে সর্বোচ্চ ১০০ মাইল দূরত্ব বজায় রেখে পাশাপাশি অগ্রসর হয়েছে। উত্তর ইরাকে ইউফ্রেটিস নদী আল জাজিরাহ নামের অঞ্চলের পশ্চিম সীমান্ত গঠন করেছে। অন্যদিকে তাইগ্রিস নদী এর পূর্ব সীমান্ত গঠন করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব ইরাকে এই দুই নদীর মধ্যবর্তী অববাহিকা এলাকাটিতে প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতা অবস্থিত ছিল। তাইগ্রিস থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে এসে ইউফ্রেটিস দুইটি শাখায় ভাগ হয়ে গেছে। শাখা দুইটি ১৮০ কিলোমিটার পরে আবার একত্রিত হয়েছে। এরপর ইউফ্রেটিস ও তাইগ্রিস কুরনাহ শহরের কাছে মিলিত হয়ে শাত আল আরব নদী গঠন করেছে এবং [[পারস্য উপসাগর|পারস্য উপসাগরে]] পতিত হয়েছে।
ইফোরাতনদীর গতিপথ মূলত দজলা নদীর সমান্তরাল। নদী দুইটি ইরাকে প্রবেশের পর একে অপর থেকে সর্বোচ্চ ১০০ মাইল দূরত্ব বজায় রেখে পাশাপাশি অগ্রসর হয়েছে। উত্তর ইরাকে ইফোরাতনদী আল জাজিরাহ নামের অঞ্চলের পশ্চিম সীমান্ত গঠন করেছে। অন্যদিকে তাইগ্রিস নদী এর পূর্ব সীমান্ত গঠন করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব ইরাকে এই দুই নদীর মধ্যবর্তী অববাহিকা এলাকাটিতে প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতা অবস্থিত ছিল। তাইগ্রিস থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে এসে ইফোরাতদুইটি শাখায় ভাগ হয়ে গেছে। শাখা দুইটি ১৮০ কিলোমিটার পরে আবার একত্রিত হয়েছে। এরপর ইফোরাতও তাইগ্রিস কুরনাহ শহরের কাছে মিলিত হয়ে শাত আল আরব নদী গঠন করেছে এবং [[পারস্য উপসাগর|পারস্য উপসাগরে]] পতিত হয়েছে।


ইউফ্রেটিস নদী প্রতিবছর ২৮০০ কোটি ঘনমিটার পানি বহন করে। এপ্রিল ও মে মাসে পানি ধারণের পরিমাণ সর্বোচ্চ। ইউফ্রেটিস নদীর উপর অবস্থিত প্রধান শহরগুলি হল সিরিয়ার রাকাহ ও দাইর আজ জর, এবং ইরাকের [[কারবালা]], হিল্লাহ এবং [[নাজাফ]]।
ইফোরাতনদী প্রতিবছর ২৮০০ কোটি ঘনমিটার পানি বহন করে। এপ্রিল ও মে মাসে পানি ধারণের পরিমাণ সর্বোচ্চ। ইফোরাতনদীর উপর অবস্থিত প্রধান শহরগুলি হল সিরিয়ার রাকাহ ও দাইর আজ জর, এবং ইরাকের [[কারবালা]], হিল্লাহ এবং [[নাজাফ]]।


ইউফ্রেটিস নদীটি অগভীর বলে ছোট নৌকা ছাড়া অন্য কিছু এখানে চালনা করা সম্ভব নয়। এটি পানি সরবরাহের জন্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নদীটি তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার একটি বড় উৎস। তিনটি দেশই সেচকাজ ও পানিবিদ্যুতের জন্য নদীটির পানির উপর নির্ভরশীল। তুরস্ক গ্রামীণ আনাতোলিয়ার উন্নয়নের জন্য নদীটির পানির একটি বড় অংশ রেখে দেবার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া প্রকল্পে ২২টি বাঁধ এবং আনাতোলীয় পর্বতমালা থেকে ইউফ্রেটিসের খাড়া পতনকে কাজে লাগানোর জন্য ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। আতাতুর্ক বাঁধ এই প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধগুলির একটি। ১৯৯০ সালে এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। বাঁধটির পেছনের জলাধারের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল ৮১৬ বর্গকিলোমিটার। ইউফ্রেটিস নদীকে এক মাস ধরে বাধা দিয়ে এই জলাধারটি বারে বারে ভরে তোলা হয়।
ইফোরাতনদীটি অগভীর বলে ছোট নৌকা ছাড়া অন্য কিছু এখানে চালনা করা সম্ভব নয়। এটি পানি সরবরাহের জন্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নদীটি তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার একটি বড় উৎস। তিনটি দেশই সেচকাজ ও পানিবিদ্যুতের জন্য নদীটির পানির উপর নির্ভরশীল। তুরস্ক গ্রামীণ আনাতোলিয়ার উন্নয়নের জন্য নদীটির পানির একটি বড় অংশ রেখে দেবার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া প্রকল্পে ২২টি বাঁধ এবং আনাতোলীয় পর্বতমালা থেকে ইফোরাতর খাড়া পতনকে কাজে লাগানোর জন্য ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। আতাতুর্ক বাঁধ এই প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধগুলির একটি। ১৯৯০ সালে এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। বাঁধটির পেছনের জলাধারের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল ৮১৬ বর্গকিলোমিটার। ইফোরাতনদীকে এক মাস ধরে বাধা দিয়ে এই জলাধারটি বারে বারে ভরে তোলা হয়।


কিন্তু নিম্ন অববাহিকাতে ইউফ্রেটিসের জলধারার এই হ্রাস সিরিয়ার জন্য একটি বড় সমস্যা। সিরিয়া নিজে সেচ ও পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ইউফ্রেটিস নদীর উপর আল সাওরা বাঁধ নির্মাণ করেছে। ১৯৭৩ সালে উত্তর মধ্য সিরিয়াতে বাঁধটি নির্মাণ শেষ হয় এবং এর পেছনের আসাদ জলাধার নামের জলাধারের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬৪০ বর্গকিলোমিটার। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া প্রকল্পের কারণে বর্তমানে এটি যথেষ্ট পরিমাণে সেচের পানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না।
কিন্তু নিম্ন অববাহিকাতে ইফোরাতর জলধারার এই হ্রাস সিরিয়ার জন্য একটি বড় সমস্যা। সিরিয়া নিজে সেচ ও পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ইফোরাতনদীর উপর আল সাওরা বাঁধ নির্মাণ করেছে। ১৯৭৩ সালে উত্তর মধ্য সিরিয়াতে বাঁধটি নির্মাণ শেষ হয় এবং এর পেছনের আসাদ জলাধার নামের জলাধারের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬৪০ বর্গকিলোমিটার। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া প্রকল্পের কারণে বর্তমানে এটি যথেষ্ট পরিমাণে সেচের পানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না।


একইভাবে আরও নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত ইরাক সিরিয়ার বাঁধের নিন্দা করেছে। ১৯৭৫ সালে দুই দেশের মধ্যে অল্পের জন্য যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়। অত্যন্ত শুষ্ক ইরাকের কৃষিকাজ ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। পানির প্রবাহের তারতম্য ইরাকে খরার সৃষ্টি করে। ১৯৮৬ সালে পশ্চিম মধ্য ইরাকের আদিসা-তে পানি ধরে রাখার জন্য একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়, কিন্তু এটি খুব একটা কার্যকর হয়নি। ১৯৫০-এর দশক তাইগ্রিস নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের ফলে থারথার নিম্নভূমির মধ্য দিয়ে তাইগ্রিসের কিছু পানি ইউফ্রেতিস অববাহিকাতে আনা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু এটিও পানি সরবরাহ সমস্যার তেমন সমাধান করতে পারেনি। সিরিয়া ও তুরস্ক থেকে বয়ে আনা রাসায়নিক বর্জ্যবিশিষ্ট পানিও ইরাকের জন্য একটি বড় সমস্যা।
একইভাবে আরও নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত ইরাক সিরিয়ার বাঁধের নিন্দা করেছে। ১৯৭৫ সালে দুই দেশের মধ্যে অল্পের জন্য যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়। অত্যন্ত শুষ্ক ইরাকের কৃষিকাজ ইফোরাতও দজলা নদীব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। পানির প্রবাহের তারতম্য ইরাকে খরার সৃষ্টি করে। ১৯৮৬ সালে পশ্চিম মধ্য ইরাকের আদিসা-তে পানি ধরে রাখার জন্য একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়, কিন্তু এটি খুব একটা কার্যকর হয়নি। ১৯৫০-এর দশক তাইগ্রিস নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের ফলে থারথার নিম্নভূমির মধ্য দিয়ে তাইগ্রিসের কিছু পানি ইউফ্রেতিস অববাহিকাতে আনা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু এটিও পানি সরবরাহ সমস্যার তেমন সমাধান করতে পারেনি। সিরিয়া ও তুরস্ক থেকে বয়ে আনা রাসায়নিক বর্জ্যবিশিষ্ট পানিও ইরাকের জন্য একটি বড় সমস্যা।


== বহিঃসংযোগ ==
== বহিঃসংযোগ ==
* [http://www.ppl.nl/bibliographies/all/?bibliography=water পানিসম্পদ এবং আন্তর্জাতিক আইন]
* [http://www.ppl.nl/bibliographies/all/?bibliography=water পানিসম্পদ এবং আন্তর্জাতিক আইন]
* [http://www.jewishencyclopedia.com/view.jsp?artid=518&letter=E ''ইহুদি বিশ্বকোষ'':]
* [http://www.jewishencyclopedia.com/view.jsp?artid=518&letter=E ''ইহুদি বিশ্বকোষ'':]
* [http://gurukul.ucc.american.edu/ted/ice/tigris.htm টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস নদীর কথা]
* [http://gurukul.ucc.american.edu/ted/ice/tigris.htm দজলা-ইফোরাতনদীর কথা]
* [http://www.mfa.gov.tr/MFA/ForeignPolicy/MainIssues/WaterIssues/WaterIssuesBetweenTurkeySyriaIraq_Chapter_IV.htm তুরস্কের আন্তর্জাতিক নীতি]
* [http://www.mfa.gov.tr/MFA/ForeignPolicy/MainIssues/WaterIssues/WaterIssuesBetweenTurkeySyriaIraq_Chapter_IV.htm তুরস্কের আন্তর্জাতিক নীতি]



২৩:৪৫, ১২ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ফোরাত
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
মোহনাশাত আল আরব
দৈর্ঘ্য২,৮০০ কিমি

ফোরাত নদী ([نهر الفرات নাহ্‌র্‌ উল্‌-ফুরাত্‌; তুর্কি ভাষায়: Fırat; সিরীয় ভাষায়: ܦܪܬ; হিব্রু ভাষায়: פרת] ত্রুটি: {{Lang-xx}}: text has italic markup (সাহায্য)) বা ফোরাত দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি নদী। এটি তুরস্কতে উৎপত্তি লাভ করে সিরিয়াইরাকের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দজলা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে এবং শাত আল আরব নামে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে। ফোরাত ও দজলা নদীর পানি ব্যবহার করেই প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতাগুলি বিকাশ লাভ করেছিল। গ্রিক নাম মেসোপটেমিয়া এই স্বাক্ষরই বহন করছে; শব্দটির আক্ষরিক অর্থ "দুই নদীর মাঝে"। এখানেই প্রাচীন সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় এবং আসিরিয় সভ্যতাগুলি বিকাশ লাভ করেছিল।

ফোরাত নদী ২,৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর অববাহিকার আয়তন প্রায় ৪,৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার। এর মোট অববাহিকার মাত্র ৩০% তুরস্কতে অবস্থিত হলেও এর পানির ৯০%-এর উৎস তুরস্কের উচ্চভূমি। তুরস্কের কোরাসুয়ু নদী, মুরাত নদী এবং আরও অনেকগুলি নদী পূর্ব মধ্য তুরস্কে এলাজিগ-এর কাছে মিলিত হয়ে ফোরাতর ঊর্ধ্ব অংশ গঠন করেছে। তারপর নদীটি আলাব শহরের ১২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সিরিয়াতে প্রবেশ করেছে। পূর্ব সিরিয়াতে এর সাথে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক থেকে আগত খাবুর নদী নামের একটি প্রধান উপনদী মিলিত হয়েছে।

ইফোরাতনদীর গতিপথ মূলত দজলা নদীর সমান্তরাল। নদী দুইটি ইরাকে প্রবেশের পর একে অপর থেকে সর্বোচ্চ ১০০ মাইল দূরত্ব বজায় রেখে পাশাপাশি অগ্রসর হয়েছে। উত্তর ইরাকে ইফোরাতনদী আল জাজিরাহ নামের অঞ্চলের পশ্চিম সীমান্ত গঠন করেছে। অন্যদিকে তাইগ্রিস নদী এর পূর্ব সীমান্ত গঠন করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব ইরাকে এই দুই নদীর মধ্যবর্তী অববাহিকা এলাকাটিতে প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতা অবস্থিত ছিল। তাইগ্রিস থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে এসে ইফোরাতদুইটি শাখায় ভাগ হয়ে গেছে। শাখা দুইটি ১৮০ কিলোমিটার পরে আবার একত্রিত হয়েছে। এরপর ইফোরাতও তাইগ্রিস কুরনাহ শহরের কাছে মিলিত হয়ে শাত আল আরব নদী গঠন করেছে এবং পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে।

ইফোরাতনদী প্রতিবছর ২৮০০ কোটি ঘনমিটার পানি বহন করে। এপ্রিল ও মে মাসে পানি ধারণের পরিমাণ সর্বোচ্চ। ইফোরাতনদীর উপর অবস্থিত প্রধান শহরগুলি হল সিরিয়ার রাকাহ ও দাইর আজ জর, এবং ইরাকের কারবালা, হিল্লাহ এবং নাজাফ

ইফোরাতনদীটি অগভীর বলে ছোট নৌকা ছাড়া অন্য কিছু এখানে চালনা করা সম্ভব নয়। এটি পানি সরবরাহের জন্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নদীটি তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার একটি বড় উৎস। তিনটি দেশই সেচকাজ ও পানিবিদ্যুতের জন্য নদীটির পানির উপর নির্ভরশীল। তুরস্ক গ্রামীণ আনাতোলিয়ার উন্নয়নের জন্য নদীটির পানির একটি বড় অংশ রেখে দেবার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া প্রকল্পে ২২টি বাঁধ এবং আনাতোলীয় পর্বতমালা থেকে ইফোরাতর খাড়া পতনকে কাজে লাগানোর জন্য ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। আতাতুর্ক বাঁধ এই প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধগুলির একটি। ১৯৯০ সালে এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। বাঁধটির পেছনের জলাধারের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল ৮১৬ বর্গকিলোমিটার। ইফোরাতনদীকে এক মাস ধরে বাধা দিয়ে এই জলাধারটি বারে বারে ভরে তোলা হয়।

কিন্তু নিম্ন অববাহিকাতে ইফোরাতর জলধারার এই হ্রাস সিরিয়ার জন্য একটি বড় সমস্যা। সিরিয়া নিজে সেচ ও পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ইফোরাতনদীর উপর আল সাওরা বাঁধ নির্মাণ করেছে। ১৯৭৩ সালে উত্তর মধ্য সিরিয়াতে বাঁধটি নির্মাণ শেষ হয় এবং এর পেছনের আসাদ জলাধার নামের জলাধারের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬৪০ বর্গকিলোমিটার। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া প্রকল্পের কারণে বর্তমানে এটি যথেষ্ট পরিমাণে সেচের পানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না।

একইভাবে আরও নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত ইরাক সিরিয়ার বাঁধের নিন্দা করেছে। ১৯৭৫ সালে দুই দেশের মধ্যে অল্পের জন্য যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়। অত্যন্ত শুষ্ক ইরাকের কৃষিকাজ ইফোরাতও দজলা নদীব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। পানির প্রবাহের তারতম্য ইরাকে খরার সৃষ্টি করে। ১৯৮৬ সালে পশ্চিম মধ্য ইরাকের আদিসা-তে পানি ধরে রাখার জন্য একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়, কিন্তু এটি খুব একটা কার্যকর হয়নি। ১৯৫০-এর দশক তাইগ্রিস নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের ফলে থারথার নিম্নভূমির মধ্য দিয়ে তাইগ্রিসের কিছু পানি ইউফ্রেতিস অববাহিকাতে আনা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু এটিও পানি সরবরাহ সমস্যার তেমন সমাধান করতে পারেনি। সিরিয়া ও তুরস্ক থেকে বয়ে আনা রাসায়নিক বর্জ্যবিশিষ্ট পানিও ইরাকের জন্য একটি বড় সমস্যা।

বহিঃসংযোগ