আরবি ভাষা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করেছে
৪৩ নং লাইন: ৪৩ নং লাইন:
[[ইসলাম ধর্ম|ইসলামের]] আবির্ভাবের ঠিক আগের যুগে [[আরব উপদ্বীপ|আরব উপদ্বীপে]] আরবি ভাষার উৎপত্তি ঘটে। প্রাক-ইসলামী আরব কবিরা যে আরবি ভাষা ব্যবহার করতেন, তা ছিল অতি উৎকৃষ্ট মানের। তাঁদের লেখা কবিতা মূলত মুখে মুখেই প্রচারিত ও সংরক্ষিত হত। আরবি ভাষাতে সহজেই বিজ্ঞান ও শিল্পের প্রয়োজনে নতুন নতুন শব্দ ও পরিভাষা তৈরি করা যেত এবং আজও তা করা যায়। ইসলামের প্রচারকেরা [[৭ম শতাব্দী|৭ম শতাব্দীতে]] আরব উপদ্বীপের সীমানা ছাড়িয়ে এক বিশাল [[আরব সাম্রাজ্য]] গড়তে বেরিয়ে পড়েন এবং প্রথমে [[দামেস্ক]] ও পরে [[বাগদাদ|বাগদাদে]] তাঁদের রাজধানী স্থাপন করেন। এসময় [[ভূমধ্যসাগর|ভূমধ্যসাগরের]] তীরবর্তী এক বিশাল এলাকা জুড়ে আরবি প্রধান প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হত। ভাষাটি [[বাইজেন্টীয় গ্রিক ভাষা]] ও [[ফার্সি ভাষা]] থেকে ধার নিয়ে এবং নিজস্ব [[শব্দভাণ্ডার]] ও [[ব্যাকরণ]] পরিবর্তন করে আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
[[ইসলাম ধর্ম|ইসলামের]] আবির্ভাবের ঠিক আগের যুগে [[আরব উপদ্বীপ|আরব উপদ্বীপে]] আরবি ভাষার উৎপত্তি ঘটে। প্রাক-ইসলামী আরব কবিরা যে আরবি ভাষা ব্যবহার করতেন, তা ছিল অতি উৎকৃষ্ট মানের। তাঁদের লেখা কবিতা মূলত মুখে মুখেই প্রচারিত ও সংরক্ষিত হত। আরবি ভাষাতে সহজেই বিজ্ঞান ও শিল্পের প্রয়োজনে নতুন নতুন শব্দ ও পরিভাষা তৈরি করা যেত এবং আজও তা করা যায়। ইসলামের প্রচারকেরা [[৭ম শতাব্দী|৭ম শতাব্দীতে]] আরব উপদ্বীপের সীমানা ছাড়িয়ে এক বিশাল [[আরব সাম্রাজ্য]] গড়তে বেরিয়ে পড়েন এবং প্রথমে [[দামেস্ক]] ও পরে [[বাগদাদ|বাগদাদে]] তাঁদের রাজধানী স্থাপন করেন। এসময় [[ভূমধ্যসাগর|ভূমধ্যসাগরের]] তীরবর্তী এক বিশাল এলাকা জুড়ে আরবি প্রধান প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হত। ভাষাটি [[বাইজেন্টীয় গ্রিক ভাষা]] ও [[ফার্সি ভাষা]] থেকে ধার নিয়ে এবং নিজস্ব [[শব্দভাণ্ডার]] ও [[ব্যাকরণ]] পরিবর্তন করে আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।


[[৯ম শতক|৯ম]] ও [[১০ম শতক|১০ম শতকে]] বাগদাদে এক মহান বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন সম্পন্ন হয়। সেসময় বিশ্বের অপরাপর প্রাচীন ভাষা, বিশেষত [[গ্রিক ভাষা|গ্রিক ভাষার]] বহু প্রাচীন বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক লেখা আরবিতে অণুবাদ করা হয়। এগুলিতে আবার আরবি চিন্তাবিদেরা নিজস্ব চিন্তা সংযোজন করেন। পরবর্তীতে [[আরব স্পেন|আরব স্পেনে]] এই জ্ঞানচর্চাই ইউরোপে মধ্যযুগের অবসান ঘটিয়ে [[রেনেসাঁস|রেনেসাঁসের]] সূচনা করেছিল। আরবিই ছিল [[১১শ শতক|১১শ শতকে]] মনুষ্য জ্ঞানভাণ্ডারের বাহক ভাষা এবং এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাচীন [[গ্রিক ভাষা|গ্রিক]] ও [[লাতিন ভাষা|লাতিনের]] উত্তরসূরী। [[আরব সভ্যতা]] বলতে কেবল আরব জাতি বা ইসলামকে বোঝায় না; এই ভাষার মহিমা এই যে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর মানুষকে এটি আকৃষ্ট করেছিল। বিস্তীর্ণ আরব সাম্রাজ্যের নানা জাতের মানুষ আরবি ভাষার ছায়ায় এক বৃহত্তর সমৃদ্ধিশীল আরব সভ্যতার অংশ হিসেবে একতাবদ্ধ হয়েছিল। [[৮ম শতক]] থেকে [[১২শ শতক]] পর্যন্ত সংস্কৃতি, কূটনীতি, বিজ্ঞান ও দর্শনের সার্বজনীন ভাষা ছিল আরবি। ঐ সময়ে যারা [[আরিস্তোতল]] পড়তে চাইত, বা চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক পরিভাষা ব্যবহার করতে চাইত, বা গাণিতিক সমস্যার সমাধান খুঁজত, বা যেকোন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় অংশ নিতে চাইত, তাদের জন্য আরবির জ্ঞান ছিল অপরিহার্য।
[[৯ম শতক|৯ম]] ও [[১০ম শতক|১০ম শতকে]] বাগদাদে এক মহান বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন সম্পন্ন হয়। সেসময় বিশ্বের অপরাপর প্রাচীন ভাষা, বিশেষত [[গ্রিক ভাষা|গ্রিক ভাষার]] বহু প্রাচীন বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক লেখা আরবিতে অনুবাদ করা হয়। এগুলিতে আবার আরবি চিন্তাবিদেরা নিজস্ব চিন্তা সংযোজন করেন। পরবর্তীতে [[আরব স্পেন|আরব স্পেনে]] এই জ্ঞানচর্চাই ইউরোপে মধ্যযুগের অবসান ঘটিয়ে [[রেনেসাঁস|রেনেসাঁসের]] সূচনা করেছিল। আরবিই ছিল [[১১শ শতক|১১শ শতকে]] মনুষ্য জ্ঞানভাণ্ডারের বাহক ভাষা এবং এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাচীন [[গ্রিক ভাষা|গ্রিক]] ও [[লাতিন ভাষা|লাতিনের]] উত্তরসূরী। [[আরব সভ্যতা]] বলতে কেবল আরব জাতি বা ইসলামকে বোঝায় না; এই ভাষার মহিমা এই যে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর মানুষকে এটি আকৃষ্ট করেছিল। বিস্তীর্ণ আরব সাম্রাজ্যের নানা জাতের মানুষ আরবি ভাষার ছায়ায় এক বৃহত্তর সমৃদ্ধিশীল আরব সভ্যতার অংশ হিসেবে একতাবদ্ধ হয়েছিল। [[৮ম শতক]] থেকে [[১২শ শতক]] পর্যন্ত সংস্কৃতি, কূটনীতি, বিজ্ঞান ও দর্শনের সার্বজনীন ভাষা ছিল আরবি। ঐ সময়ে যারা [[আরিস্তোতল]] পড়তে চাইত, বা চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক পরিভাষা ব্যবহার করতে চাইত, বা গাণিতিক সমস্যার সমাধান খুঁজত, বা যেকোন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় অংশ নিতে চাইত, তাদের জন্য আরবির জ্ঞান ছিল অপরিহার্য।


আরবি ভাষা সেমিটীয় গোত্রের ভাষাসমূহের অন্তর্গত একটি ভাষা। অন্যান্য জীবিত সেমিটীয় ভাষাগুলির মধ্যে রয়েছে আধুনিক হিব্রু ভাষা ([[ইসরায়েল|ইসরায়েলে]] প্রচলিত), [[আমহারীয় ভাষা]] ([[ইথিওপিয়া|ইথিওপিয়ার]] ভাষা), এবং ইথিওপিয়ায় প্রচলিত অন্যান্য ভাষা। মৃত সেমিটীয় ভাষাগুলির মধ্যে আছে ধর্মগ্রন্থ তোরাহ-র প্রাচীন হিব্রু ভাষা, [[আক্কাদীয় ভাষা]] (ব্যাবিলনীয় ও আসিরীয়), [[সিরীয় ভাষা]] ও [[ইথিওপীয় ভাষা]]।
আরবি ভাষা সেমিটীয় গোত্রের ভাষাসমূহের অন্তর্গত একটি ভাষা। অন্যান্য জীবিত সেমিটীয় ভাষাগুলির মধ্যে রয়েছে আধুনিক হিব্রু ভাষা ([[ইসরায়েল|ইসরায়েলে]] প্রচলিত), [[আমহারীয় ভাষা]] ([[ইথিওপিয়া|ইথিওপিয়ার]] ভাষা), এবং ইথিওপিয়ায় প্রচলিত অন্যান্য ভাষা। মৃত সেমিটীয় ভাষাগুলির মধ্যে আছে ধর্মগ্রন্থ তোরাহ-র প্রাচীন হিব্রু ভাষা, [[আক্কাদীয় ভাষা]] (ব্যাবিলনীয় ও আসিরীয়), [[সিরীয় ভাষা]] ও [[ইথিওপীয় ভাষা]]।


সব সেমিটীয় ভাষারই একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ব্যঞ্জন দিয়ে গঠিত ধাতুরূপ বা শব্দমূল। সাধারণত তিনটি ব্যঞ্জন নিয়ে একটি মূল গঠিত হয় এবং প্রতিটির একটি মূল অর্থ থাকে। তারপর এই মূলকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে (স্বরবর্ণ যোগ করে, উপসর্গ-মধ্যসর্গ-অন্ত্যপ্রত্যয় বসিয়ে) অন্যান্য কাছাঁকাছি অর্থের শব্দ সৃষ্টি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ নেয়া যাক আরবি "সালিম" মূলটি, যার অর্থ নিরাপদ (আরও সঠিকভাবে সালিম মানে সে (পুরুষ) নিরাপদ ছিল।) এখান থেকে আমরা পাই সাল্লাম (সরবরাহ করা), আসলামা (সমর্পণ করা, জমা দেওয়া), ইস্তালামা (গ্রহণ করা), ইস্তাস্তালামা (আত্মসমর্পণ করা), সালামুন (শান্তি), সালামাতুন (নিরাপত্তা) এবং মুসলিমুন (মুসলিম)। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে আরবি ভাষার শিক্ষার্থী সহজেই আরবি শব্দভাণ্ডারের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারেন।
সব সেমিটীয় ভাষারই একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ব্যঞ্জন দিয়ে গঠিত ধাতুরূপ বা শব্দমূল। সাধারণত তিনটি ব্যঞ্জন নিয়ে একটি মূল গঠিত হয় এবং প্রতিটির একটি মূল অর্থ থাকে। তারপর এই মূলকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে (স্বরবর্ণ যোগ করে, উপসর্গ-মধ্যসর্গ-অন্ত্যপ্রত্যয় বসিয়ে) অন্যান্য কাছাকাছি অর্থের শব্দ সৃষ্টি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ নেয়া যাক আরবি "সালিম" মূলটি, যার অর্থ নিরাপদ (আরও সঠিকভাবে সালিম মানে সে (পুরুষ) নিরাপদ ছিল।) এখান থেকে আমরা পাই সাল্লাম (সরবরাহ করা), আসলামা (সমর্পণ করা, জমা দেওয়া), ইস্তালামা (গ্রহণ করা), ইস্তাস্তালামা (আত্মসমর্পণ করা), সালামুন (শান্তি), সালামাতুন (নিরাপত্তা) এবং মুসলিমুন (মুসলিম)। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে আরবি ভাষার শিক্ষার্থী সহজেই আরবি শব্দভাণ্ডারের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারেন।


আরবিকে সাধারণত ধ্রুপদী আরবি, আধুনিক লেখ্য আরবি এবং আধুনিক কথ্য বা চলতি আরবি --- এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। ধ্রুপদী আরবি [[৬ষ্ঠ শতক]] থেকে প্রচলিত ও এতেই [[কুরআন শরীফ]] লেখা হয়েছে। [[আল-মুতানাব্বি]] ও [[ইবন খালদুন]] ধ্রুপদী আরবির বিখ্যাত কবি। আধুনিক লেখ্য আরবিতে আধুনিক শব্দ যোগ হয়েছে ও অতি প্রাচীন শব্দগুলি বর্জন করা হয়েছে, কিন্তু এ সত্ত্বেও ধ্রুপদী আরবির সাথে এর পার্থক্য খুব একটা বেশী নয়। আরবি সংবাদপত্র ও আধুনিক সাহিত্য আধুনিক লেখ্য আরবিতেই প্রকাশিত হয়। [[তাহা হুসাইন]] ও [[তাওফিক আল হাকিম]] আধুনিক লেখ্য আরবির দুই অন্যতম প্রধান লেখক ছিলেন।
আরবিকে সাধারণত ধ্রুপদী আরবি, আধুনিক লেখ্য আরবি এবং আধুনিক কথ্য বা চলতি আরবি --- এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। ধ্রুপদী আরবি [[৬ষ্ঠ শতক]] থেকে প্রচলিত ও এতেই [[কুরআন শরীফ]] লেখা হয়েছে। [[আল-মুতানাব্বি]] ও [[ইবন খালদুন]] ধ্রুপদী আরবির বিখ্যাত কবি। আধুনিক লেখ্য আরবিতে আধুনিক শব্দ যোগ হয়েছে ও অতি প্রাচীন শব্দগুলি বর্জন করা হয়েছে, কিন্তু এ সত্ত্বেও ধ্রুপদী আরবির সাথে এর পার্থক্য খুব একটা বেশী নয়। আরবি সংবাদপত্র ও আধুনিক সাহিত্য আধুনিক লেখ্য আরবিতেই প্রকাশিত হয়। [[তাহা হুসাইন]] ও [[তাওফিক আল হাকিম]] আধুনিক লেখ্য আরবির দুই অন্যতম প্রধান লেখক ছিলেন।

১২:৫৫, ২ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আরবি
العربية/عربي/عربى আল্-আরবিয়াহ/আরবি
আল্-আরবিয়াহ্ আরবি লিপিতে লিখিত
অঞ্চলপ্রধানত আরব রাজ্যের মধ্য প্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকাতে
মাতৃভাষী
৩১০ মিলিয়নেরও বেশি (২০০৬)[১]
আফ্রো-এশীয়
  • সেমিটীয়
    • কেন্দ্রীয় সেমিটীয়
      • আরবি
প্রমিত রূপ
আধুনিক আরবি
আরবি লিপি
সরকারি অবস্থা
সরকারি ভাষা
আধুনিক আরবি হল ২৬ রাষ্ট্রের সরকারি ভাষা, ইংরেজি এবং ফরাসি হল তৃতীয় ভাষা।[২]  আলজেরিয়া
 বাহরাইন
 কোমোরোস
 চাদ
 জিবুতি
 মিশর
 ইরিত্রিয়া
 ইরাক
 ইসরায়েল
 জর্দান
 কুয়েত
 লেবানন
 লিবিয়া
 মৌরিতানিয়া
 মরোক্কো
 ওমান
 ফিলিস্তিন
 কাতার
 সৌদি আরব
 সোমালিয়া
 সুদান
 সিরিয়া
 তিউনিসিয়া
 সংযুক্ত আরব আমিরাত
 পশ্চিম সাহারা
 ইয়েমেন
 আফ্রিকান ইউনিয়ন
 আরব লীগ
 জাতিসংঘ
নিয়ন্ত্রক সংস্থা
ভাষা কোডসমূহ
আইএসও ৬৩৯-১ar
আইএসও ৬৩৯-২ara
আইএসও ৬৩৯-৩ara আরবি (জেনেরিক)
(আরবির ভিন্নতার ব্যক্তিগত কোড দেখুন)
একমাত্র সরকারি ভাষা (সবুজ) এবং এক বা একাধিক সরকারি ভাষা (নীল) হিসাবে আরবি বণ্টন।

আরবি ভাষা (العربية) সেমিটীয় ভাষা পরিবারের জীবন্ত সদস্যগুলির মধ্যে বৃহত্তম। এটি একটি কেন্দ্রীয় সেমিটীয় ভাষা এবং হিব্রুআরামীয় ভাষার সাথে এ ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। আধুনিক আরবিকে একটি "ম্যাক্রোভাষা" আখ্যা দেয়া হয়; এর ২৭ রকমের উপভাষা ISO 639-3-তে স্বীকৃত। সমগ্র আরব বিশ্ব জুড়ে এই উপভাষাগুলি প্রচলিত এবং আদর্শ আরবি ইসলামী বিশ্বের সর্বত্র পড়া ও লেখা হয়। আধুনিক আদর্শ আরবি চিরায়ত আরবি থেকে উদ্ভূত। মধ্যযুগে আরবি গণিত, বিজ্ঞানদর্শনের প্রধান বাহক ভাষা ছিল। বিশ্বের বহু ভাষা আরবি থেকে শব্দ ধার করেছে।

ইসলামের আবির্ভাবের ঠিক আগের যুগে আরব উপদ্বীপে আরবি ভাষার উৎপত্তি ঘটে। প্রাক-ইসলামী আরব কবিরা যে আরবি ভাষা ব্যবহার করতেন, তা ছিল অতি উৎকৃষ্ট মানের। তাঁদের লেখা কবিতা মূলত মুখে মুখেই প্রচারিত ও সংরক্ষিত হত। আরবি ভাষাতে সহজেই বিজ্ঞান ও শিল্পের প্রয়োজনে নতুন নতুন শব্দ ও পরিভাষা তৈরি করা যেত এবং আজও তা করা যায়। ইসলামের প্রচারকেরা ৭ম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপের সীমানা ছাড়িয়ে এক বিশাল আরব সাম্রাজ্য গড়তে বেরিয়ে পড়েন এবং প্রথমে দামেস্ক ও পরে বাগদাদে তাঁদের রাজধানী স্থাপন করেন। এসময় ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী এক বিশাল এলাকা জুড়ে আরবি প্রধান প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হত। ভাষাটি বাইজেন্টীয় গ্রিক ভাষাফার্সি ভাষা থেকে ধার নিয়ে এবং নিজস্ব শব্দভাণ্ডারব্যাকরণ পরিবর্তন করে আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।

৯ম১০ম শতকে বাগদাদে এক মহান বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন সম্পন্ন হয়। সেসময় বিশ্বের অপরাপর প্রাচীন ভাষা, বিশেষত গ্রিক ভাষার বহু প্রাচীন বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক লেখা আরবিতে অনুবাদ করা হয়। এগুলিতে আবার আরবি চিন্তাবিদেরা নিজস্ব চিন্তা সংযোজন করেন। পরবর্তীতে আরব স্পেনে এই জ্ঞানচর্চাই ইউরোপে মধ্যযুগের অবসান ঘটিয়ে রেনেসাঁসের সূচনা করেছিল। আরবিই ছিল ১১শ শতকে মনুষ্য জ্ঞানভাণ্ডারের বাহক ভাষা এবং এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাচীন গ্রিকলাতিনের উত্তরসূরী। আরব সভ্যতা বলতে কেবল আরব জাতি বা ইসলামকে বোঝায় না; এই ভাষার মহিমা এই যে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর মানুষকে এটি আকৃষ্ট করেছিল। বিস্তীর্ণ আরব সাম্রাজ্যের নানা জাতের মানুষ আরবি ভাষার ছায়ায় এক বৃহত্তর সমৃদ্ধিশীল আরব সভ্যতার অংশ হিসেবে একতাবদ্ধ হয়েছিল। ৮ম শতক থেকে ১২শ শতক পর্যন্ত সংস্কৃতি, কূটনীতি, বিজ্ঞান ও দর্শনের সার্বজনীন ভাষা ছিল আরবি। ঐ সময়ে যারা আরিস্তোতল পড়তে চাইত, বা চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক পরিভাষা ব্যবহার করতে চাইত, বা গাণিতিক সমস্যার সমাধান খুঁজত, বা যেকোন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় অংশ নিতে চাইত, তাদের জন্য আরবির জ্ঞান ছিল অপরিহার্য।

আরবি ভাষা সেমিটীয় গোত্রের ভাষাসমূহের অন্তর্গত একটি ভাষা। অন্যান্য জীবিত সেমিটীয় ভাষাগুলির মধ্যে রয়েছে আধুনিক হিব্রু ভাষা (ইসরায়েলে প্রচলিত), আমহারীয় ভাষা (ইথিওপিয়ার ভাষা), এবং ইথিওপিয়ায় প্রচলিত অন্যান্য ভাষা। মৃত সেমিটীয় ভাষাগুলির মধ্যে আছে ধর্মগ্রন্থ তোরাহ-র প্রাচীন হিব্রু ভাষা, আক্কাদীয় ভাষা (ব্যাবিলনীয় ও আসিরীয়), সিরীয় ভাষাইথিওপীয় ভাষা

সব সেমিটীয় ভাষারই একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ব্যঞ্জন দিয়ে গঠিত ধাতুরূপ বা শব্দমূল। সাধারণত তিনটি ব্যঞ্জন নিয়ে একটি মূল গঠিত হয় এবং প্রতিটির একটি মূল অর্থ থাকে। তারপর এই মূলকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে (স্বরবর্ণ যোগ করে, উপসর্গ-মধ্যসর্গ-অন্ত্যপ্রত্যয় বসিয়ে) অন্যান্য কাছাকাছি অর্থের শব্দ সৃষ্টি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ নেয়া যাক আরবি "সালিম" মূলটি, যার অর্থ নিরাপদ (আরও সঠিকভাবে সালিম মানে সে (পুরুষ) নিরাপদ ছিল।) এখান থেকে আমরা পাই সাল্লাম (সরবরাহ করা), আসলামা (সমর্পণ করা, জমা দেওয়া), ইস্তালামা (গ্রহণ করা), ইস্তাস্তালামা (আত্মসমর্পণ করা), সালামুন (শান্তি), সালামাতুন (নিরাপত্তা) এবং মুসলিমুন (মুসলিম)। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে আরবি ভাষার শিক্ষার্থী সহজেই আরবি শব্দভাণ্ডারের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারেন।

আরবিকে সাধারণত ধ্রুপদী আরবি, আধুনিক লেখ্য আরবি এবং আধুনিক কথ্য বা চলতি আরবি --- এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। ধ্রুপদী আরবি ৬ষ্ঠ শতক থেকে প্রচলিত ও এতেই কুরআন শরীফ লেখা হয়েছে। আল-মুতানাব্বিইবন খালদুন ধ্রুপদী আরবির বিখ্যাত কবি। আধুনিক লেখ্য আরবিতে আধুনিক শব্দ যোগ হয়েছে ও অতি প্রাচীন শব্দগুলি বর্জন করা হয়েছে, কিন্তু এ সত্ত্বেও ধ্রুপদী আরবির সাথে এর পার্থক্য খুব একটা বেশী নয়। আরবি সংবাদপত্র ও আধুনিক সাহিত্য আধুনিক লেখ্য আরবিতেই প্রকাশিত হয়। তাহা হুসাইনতাওফিক আল হাকিম আধুনিক লেখ্য আরবির দুই অন্যতম প্রধান লেখক ছিলেন।

আরবি লিপি ডান থেকে বাম দিকে লেখা হয়। ২৯টি বর্ণ বা হরফের এই লিপিতে কেবল ব্যঞ্জন ও দীর্ঘ স্বরধ্বনি নির্দেশ করা হয়। আরবিতে বড় হাতের ও ছোট হাতের অক্ষর বলে কিছু নেই। আরবি লিপি এক অক্ষরের সাথে আরেক অক্ষর পেঁচিয়ে লেখা হয়। প্রতিটি বর্ণের একাধিক রূপ আছে, যে রূপগুলি বর্ণটি শব্দের শুরুতে, মাঝে, শেষে নাকি আলাদাভাবে অবস্থিত, তার উপর নির্ভর করে। কতগুলি বর্ণ একই মূল রূপের উপর ভিত্তি করে লেখা হয় এবং বিন্দুর সংখ্যা দিয়ে একে অপরের থেকে পৃথক করা হয়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Procházka, 2006.
  2. Wright, 2001, p. 492.

বহিঃসংযোগ