আলৎসহাইমারের রোগ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
১৪ নং লাইন: ১৪ নং লাইন:
|GeneReviewsNBK=NBK1161
|GeneReviewsNBK=NBK1161
}}
}}
'''আলঝেইমার’স ডিজিজ''' ([[:en:Alzheimer's Disease|Alzheimer's Disease]]) চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা আলঝেইমার রোগ নামেও পরিচিত, স্মৃতিভ্রংশের সবচেয়ে সাধারণ রূপ। এই রোগের কোন প্রতিকার নেই, রোগটি অগ্রগতির সাথে সাথে খারাপ অবস্থা প্রাপ্ত হয় এবং অবশেষে মৃত্যুর পথে পরিচালিত করে। ১৯০৬ সালে জার্মান মনোচিকিৎসক [[অ্যালয়েস আলঝেইমার]] সর্বপ্রথম এ রোগটির বর্ণনা দেন, আর তারই নাম অনুসারেই এ রোগের এমন নাম রাখা হয়।<ref name="pmid9661992">{{vcite journal|author=Berchtold NC, Cotman CW |title=Evolution in the conceptualization of dementia and Alzheimer's disease: Greco-Roman period to the 1960s |journal=Neurobiol. Aging |volume=19 |issue=3 |pages=173–89 |year=1998 |pmid=9661992 |doi=10.1016/S0197-4580(98)00052-9}}</ref>
'''আলঝেইমার’স ডিজিজ''' ([[:en:Alzheimer's Disease|Alzheimer's Disease]]) চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা আলঝেইমার রোগ নামেও পরিচিত, স্মৃতিভ্রংশের সবচেয়ে সাধারণ রূপ। এই রোগের কোন প্রতিকার নেই, রোগটি অগ্রগতির সাথে সাথে খারাপ অবস্থা প্রাপ্ত হয় এবং অবশেষে মৃত্যুর পথে পরিচালিত করে। ১৯০৬ সালে জার্মান মনোচিকিৎসক [[অ্যালয়েস আলঝেইমার]] সর্বপ্রথম এ রোগটির বর্ণনা দেন, আর তারই নাম অণুসারেই এ রোগের এমন নাম রাখা হয়।<ref name="pmid9661992">{{vcite journal|author=Berchtold NC, Cotman CW |title=Evolution in the conceptualization of dementia and Alzheimer's disease: Greco-Roman period to the 1960s |journal=Neurobiol. Aging |volume=19 |issue=3 |pages=173–89 |year=1998 |pmid=9661992 |doi=10.1016/S0197-4580(98)00052-9}}</ref>


সাধারণত ৬৫ বছর বয়সের বেশি লোকেরা এই রোগে আক্রান্ত হন।<ref>{{vcite journal|author=Brookmeyer R., Gray S., Kawas C.|title=Projections of Alzheimer's disease in the United States and the public health impact of delaying disease onset |journal=[[American Journal of Public Health]] |volume=88 |issue=9|pages=1337–42 |year=1998 |month=September |pmid=9736873 |pmc=1509089 |doi=10.2105/AJPH.88.9.1337}}</ref> যদিও আলঝেইমারের প্রারম্ভিক-সূত্রপাত অনেক আগেও হতে পারে। ২০০৬ সালে, ২ কোটি ৬৬ লক্ষ লোক এই রোগে আক্রান্ত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রতি ৮৫ জনে ১ জন হবে।<ref name="Brookmeyer2007">2006 prevalence estimate:
সাধারণত ৬৫ বছর বয়সের বেশি লোকেরা এই রোগে আক্রান্ত হন।<ref>{{vcite journal|author=Brookmeyer R., Gray S., Kawas C.|title=Projections of Alzheimer's disease in the United States and the public health impact of delaying disease onset |journal=[[American Journal of Public Health]] |volume=88 |issue=9|pages=1337–42 |year=1998 |month=September |pmid=9736873 |pmc=1509089 |doi=10.2105/AJPH.88.9.1337}}</ref> যদিও আলঝেইমারের প্রারম্ভিক-সূত্রপাত অনেক আগেও হতে পারে। ২০০৬ সালে, ২ কোটি ৬৬ লক্ষ লোক এই রোগে আক্রান্ত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রতি ৮৫ জনে ১ জন হবে।<ref name="Brookmeyer2007">2006 prevalence estimate:
২৪ নং লাইন: ২৪ নং লাইন:
প্রারম্ভিক অবস্থায় প্রকাশিত উপসর্গ সমূহের সবচেয়ে সাধারণ রূপ হল সাম্প্রতিক ঘটনা ভুলে যাওয়া কিন্তু অতীতের ঘটনা (যা স্বাভাবিকভাবে মনে থাকে না) এর পূর্ণ স্মৃতিচারণ।
প্রারম্ভিক অবস্থায় প্রকাশিত উপসর্গ সমূহের সবচেয়ে সাধারণ রূপ হল সাম্প্রতিক ঘটনা ভুলে যাওয়া কিন্তু অতীতের ঘটনা (যা স্বাভাবিকভাবে মনে থাকে না) এর পূর্ণ স্মৃতিচারণ।


রোগের অবনতির সাথে সাথে রোগী দ্বিধাগ্রস্থতা, অস্থিরতা, রোষপ্রণতা, ভাষা ব্যাবহারে অসুবিধা, দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিভ্রংশতা এবং ক্রমান্বয়ে শারীরিক ক্রিয়াকর্মের বিলুপ্ততা ও অবশেষে মৃত্যু মুখে পতিত হয়।
রোগের অবনতির সাথে সাথে রোগী দ্বিধাগ্রস্থতা, অস্থিরতা, রোষপ্রণতা, ভাষা ব্যবহারে অসুবিধা, দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিভ্রংশতা এবং ক্রমান্বয়ে শারীরিক ক্রিয়াকর্মের বিলুপ্ততা ও অবশেষে মৃত্যু মুখে পতিত হয়।
== কারণ ==
== কারণ ==
৩৬ নং লাইন: ৩৬ নং লাইন:
এই রোগের মূল ঘটনার সূত্রপাত হয় অ্যামাইলয়েড বিটা নামক একধরনের প্রোটিন উৎপাদনের মাধমে যা পরবর্তীতে মস্তিষ্কের রক্তকণিকার ভেতরে দলা পাকিয়ে অ্যামাইলয়েড প্লাক গঠন করে। এই অ্যামাইলয়েড প্লাকই নিউরনের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
এই রোগের মূল ঘটনার সূত্রপাত হয় অ্যামাইলয়েড বিটা নামক একধরনের প্রোটিন উৎপাদনের মাধমে যা পরবর্তীতে মস্তিষ্কের রক্তকণিকার ভেতরে দলা পাকিয়ে অ্যামাইলয়েড প্লাক গঠন করে। এই অ্যামাইলয়েড প্লাকই নিউরনের মৃত্যুর জন্য দায়ী।


প্রকৃতপক্ষে অ্যামাইলয়েড বিটা তৈরি হয় অ্যামাইলয়েড প্রিকারসর প্রোটিন এর এনজাইমেটিক ভাঙ্গনের ফলে। ধারণা করা হয় এই অ্যামাইলয়েড প্রিকারসর প্রোটিন মূলত স্নায়ু প্রতিরক্ষাকারী উপাদান। স্বাভাবিকক্ষেত্রে এটি উৎপন্ন হয় স্নায়ুবিক চাপ অথবা ইঞ্জুরির কারণে।
প্রকৃতপক্ষে অ্যামাইলয়েড বিটা তৈরি হয় অ্যামাইলয়েড প্রিকারসর প্রোটিন এর এনজাইমেটিক ভাঙ্গণের ফলে। ধারণা করা হয় এই অ্যামাইলয়েড প্রিকারসর প্রোটিন মূলত স্নায়ু প্রতিরক্ষাকারী উপাদান। স্বাভাবিকক্ষেত্রে এটি উৎপন্ন হয় স্নায়ুবিক চাপ অথবা ইঞ্জুরির কারণে।


উৎপাদিত এই অ্যামাইলয়েড প্রিকারসর প্রোটিনকে ভাঙনের জন্য দুই ধরনের এনজাইম যথাক্রমে আলফা সিক্রেটেজ ও বিটা সিক্রেটেজ প্রতিযোগিতা করে।
উৎপাদিত এই অ্যামাইলয়েড প্রিকারসর প্রোটিনকে ভাঙনের জন্য দুই ধরনের এনজাইম যথাক্রমে আলফা সিক্রেটেজ ও বিটা সিক্রেটেজ প্রতিযোগিতা করে।


আলফা সিক্রেটেজের দ্বারা ভাঙ্গনের ফলে কোন আমাইলয়েড বিটা প্রোটিন তৈরি হয় না।
আলফা সিক্রেটেজের দ্বারা ভাঙ্গণের ফলে কোন আমাইলয়েড বিটা প্রোটিন তৈরি হয় না।


কিন্তু বিটা সিক্রেটেজের প্রভাবে এক ধরনের প্রোটিন উৎপন্ন হয় যা আবার গামা সিক্রেটেজের প্রভাবে আরো দুই ধরনের অ্যামাইলয়েড বিটা প্রোটিন উৎপন্ন করে যার একটি ৪০ আমিনো এসিড এবং অপরটি ৪২ আমিনো এসিড সমৃদ্ধ।
কিন্তু বিটা সিক্রেটেজের প্রভাবে এক ধরনের প্রোটিন উৎপন্ন হয় যা আবার গামা সিক্রেটেজের প্রভাবে আরো দুই ধরনের অ্যামাইলয়েড বিটা প্রোটিন উৎপন্ন করে যার একটি ৪০ আমিনো এসিড এবং অপরটি ৪২ আমিনো এসিড সমৃদ্ধ।
৪৮ নং লাইন: ৪৮ নং লাইন:
# প্রদাহ ও জারণ ক্রিয়ায় স্নায়ুর ক্ষতি সাধনঃ অ্যামাইলয়েড প্লাক মস্তিষ্কের নিউরনের সাহায্যকারী গ্লিয়াল কোষ অ্যাসট্রোসাইট ও মাইক্রোগ্লিয়াকে উদ্দেপিত করে। ফলশ্রুতিতে অ্যাসট্রোসাইট অ্যারাচিডোনিক এসিড উৎপন্ন করে এবং অ্যারাচিডোনিক এসিড থেকে প্রস্টাগ্লান্ডিন উৎপন্ন হয়। অপরদিকে মাইক্রোগ্লিয়া ক্ষতিকর মুক্ত অণু (ফ্রি রেডিকাল) তৈরি করে। এই প্রস্টাগ্লান্ডিন এবং মুক্ত অণু (ফ্রি রেডিকাল) স্নায়ুকোষের মৃত্যু ঘটায়।
# প্রদাহ ও জারণ ক্রিয়ায় স্নায়ুর ক্ষতি সাধনঃ অ্যামাইলয়েড প্লাক মস্তিষ্কের নিউরনের সাহায্যকারী গ্লিয়াল কোষ অ্যাসট্রোসাইট ও মাইক্রোগ্লিয়াকে উদ্দেপিত করে। ফলশ্রুতিতে অ্যাসট্রোসাইট অ্যারাচিডোনিক এসিড উৎপন্ন করে এবং অ্যারাচিডোনিক এসিড থেকে প্রস্টাগ্লান্ডিন উৎপন্ন হয়। অপরদিকে মাইক্রোগ্লিয়া ক্ষতিকর মুক্ত অণু (ফ্রি রেডিকাল) তৈরি করে। এই প্রস্টাগ্লান্ডিন এবং মুক্ত অণু (ফ্রি রেডিকাল) স্নায়ুকোষের মৃত্যু ঘটায়।


# নিউরোফাইব্রিলারী টেঙ্গুল (টাউ প্রোটিনে গঠিত এক ধরনের আঁশ) গঠনঃ টাউ প্রোটিন হল অনুনালিকা (মাইক্রোটিবিউল) এর গাঠনিক উপাদান। অনুনালিকা সাধারণত নিউরনের কোষদেহ থেকে ডেন্ড্রাইটের দিকে প্রয়োজনীয় উপাদান পরিবহনে সহায়তা করে। আলঝেইমার রোগে আক্রান্তের স্নায়ুকোষের টাউ প্রোটিনের গাঠনিক পরিবর্তন ঘটে এবং এটি গিট পাকিয়ে যায়। তখন একে নিউরোফাইব্রিলারী টেঙ্গুল বলে। এমতাবস্থায় নিউরনে সক্রিয় অনুনালিকার পরিমাণ কমতে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে নিউরনের মৃত্যু ঘটে।
# নিউরোফাইব্রিলারী টেঙ্গুল (টাউ প্রোটিনে গঠিত এক ধরনের আঁশ) গঠনঃ টাউ প্রোটিন হল অণুনালিকা (মাইক্রোটিবিউল) এর গাঠনিক উপাদান। অণুনালিকা সাধারণত নিউরনের কোষদেহ থেকে ডেন্ড্রাইটের দিকে প্রয়োজনীয় উপাদান পরিবহনে সহায়তা করে। আলঝেইমার রোগে আক্রান্তের স্নায়ুকোষের টাউ প্রোটিনের গাঠনিক পরিবর্তন ঘটে এবং এটি গিট পাকিয়ে যায়। তখন একে নিউরোফাইব্রিলারী টেঙ্গুল বলে। এমতাবস্থায় নিউরনে সক্রিয় অণুনালিকার পরিমাণ কমতে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে নিউরনের মৃত্যু ঘটে।


মস্তিষ্কের কর্টেক্সে ও সম্মুখ ভাগে বৃহদাকার পিরামিড আকৃতির অ্যাসিটাইলকোলিন নিউরন থাকে যা আসিটাইলকোলিন ক্ষরণের মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তায় গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আসিটাইলকোলিন নিউরনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অনুনালিকা থাকে।
মস্তিষ্কের কর্টেক্সে ও সম্মুখ ভাগে বৃহদাকার পিরামিড আকৃতির অ্যাসিটাইলকোলিন নিউরন থাকে যা আসিটাইলকোলিন ক্ষরণের মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তায় গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আসিটাইলকোলিন নিউরনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অণুনালিকা থাকে।


আলঝেইমার রোগে টাউ প্রোটিনের গাঠনিক পরিবর্তনের কারণে এই আসিটাইলকোলিন নিউরনে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় । সাথে সাথে বুদ্ধিমত্তা , অনুধাবনের ক্ষমতা ও হ্রাস পায়।
আলঝেইমার রোগে টাউ প্রোটিনের গাঠনিক পরিবর্তনের কারণে এই আসিটাইলকোলিন নিউরনে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় । সাথে সাথে বুদ্ধিমত্তা , অণুধাবনের ক্ষমতা ও হ্রাস পায়।


== চিকিৎসা ==
== চিকিৎসা ==

০৮:২৪, ১ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আলৎসহাইমারের রোগ
বিশেষত্বস্নায়ুচিকিৎসাবিজ্ঞান উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

আলঝেইমার’স ডিজিজ (Alzheimer's Disease) চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা আলঝেইমার রোগ নামেও পরিচিত, স্মৃতিভ্রংশের সবচেয়ে সাধারণ রূপ। এই রোগের কোন প্রতিকার নেই, রোগটি অগ্রগতির সাথে সাথে খারাপ অবস্থা প্রাপ্ত হয় এবং অবশেষে মৃত্যুর পথে পরিচালিত করে। ১৯০৬ সালে জার্মান মনোচিকিৎসক অ্যালয়েস আলঝেইমার সর্বপ্রথম এ রোগটির বর্ণনা দেন, আর তারই নাম অণুসারেই এ রোগের এমন নাম রাখা হয়।[১]

সাধারণত ৬৫ বছর বয়সের বেশি লোকেরা এই রোগে আক্রান্ত হন।[২] যদিও আলঝেইমারের প্রারম্ভিক-সূত্রপাত অনেক আগেও হতে পারে। ২০০৬ সালে, ২ কোটি ৬৬ লক্ষ লোক এই রোগে আক্রান্ত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রতি ৮৫ জনে ১ জন হবে।[৩]

লক্ষণ ও উপসর্গ

যদিও এই রোগ বিভিন্নজনে বিভিন্নভাবে বিকশিত হয় তথাপি ইহার কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা যায়। প্রাথমিক উপসর্গগুলোকে প্রায়শ বার্ধক্যজনিত সমস্যা বা মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ বলে করে ভুল করা হয়। প্রারম্ভিক অবস্থায় প্রকাশিত উপসর্গ সমূহের সবচেয়ে সাধারণ রূপ হল সাম্প্রতিক ঘটনা ভুলে যাওয়া কিন্তু অতীতের ঘটনা (যা স্বাভাবিকভাবে মনে থাকে না) এর পূর্ণ স্মৃতিচারণ।

রোগের অবনতির সাথে সাথে রোগী দ্বিধাগ্রস্থতা, অস্থিরতা, রোষপ্রণতা, ভাষা ব্যবহারে অসুবিধা, দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিভ্রংশতা এবং ক্রমান্বয়ে শারীরিক ক্রিয়াকর্মের বিলুপ্ততা ও অবশেষে মৃত্যু মুখে পতিত হয়।

কারণ

আলঝেইমার রোগের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা এখনও সম্ভব হয় নি। তবে গবেষণায় এটি নিরূপিত যে, এটি মষ্তিস্কের প্লাক ও টেঙ্গুল(যা হাইড্রোফসফোরাইলেটেড টাউ প্রোটিনের সমষ্টি) সংশ্লিষ্ট রোগ। ৫-১০% ক্ষেত্রে বংশগতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।

এই রোগে আক্রান্তের মস্তিষ্কে তিনটি উপাদানের অস্বাভাবিক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছেঃ

  1. অ্যামাইলয়েড প্লাক
  2. নিউরোফাইব্রিলারী টেঙ্গুল (টাউ প্রোটিনে গঠিত এক ধরনের আঁশ)
  3. অ্যাসিটাইলকোলিন

এই রোগের মূল ঘটনার সূত্রপাত হয় অ্যামাইলয়েড বিটা নামক একধরনের প্রোটিন উৎপাদনের মাধমে যা পরবর্তীতে মস্তিষ্কের রক্তকণিকার ভেতরে দলা পাকিয়ে অ্যামাইলয়েড প্লাক গঠন করে। এই অ্যামাইলয়েড প্লাকই নিউরনের মৃত্যুর জন্য দায়ী।

প্রকৃতপক্ষে অ্যামাইলয়েড বিটা তৈরি হয় অ্যামাইলয়েড প্রিকারসর প্রোটিন এর এনজাইমেটিক ভাঙ্গণের ফলে। ধারণা করা হয় এই অ্যামাইলয়েড প্রিকারসর প্রোটিন মূলত স্নায়ু প্রতিরক্ষাকারী উপাদান। স্বাভাবিকক্ষেত্রে এটি উৎপন্ন হয় স্নায়ুবিক চাপ অথবা ইঞ্জুরির কারণে।

উৎপাদিত এই অ্যামাইলয়েড প্রিকারসর প্রোটিনকে ভাঙনের জন্য দুই ধরনের এনজাইম যথাক্রমে আলফা সিক্রেটেজ ও বিটা সিক্রেটেজ প্রতিযোগিতা করে।

আলফা সিক্রেটেজের দ্বারা ভাঙ্গণের ফলে কোন আমাইলয়েড বিটা প্রোটিন তৈরি হয় না।

কিন্তু বিটা সিক্রেটেজের প্রভাবে এক ধরনের প্রোটিন উৎপন্ন হয় যা আবার গামা সিক্রেটেজের প্রভাবে আরো দুই ধরনের অ্যামাইলয়েড বিটা প্রোটিন উৎপন্ন করে যার একটি ৪০ আমিনো এসিড এবং অপরটি ৪২ আমিনো এসিড সমৃদ্ধ। Aß42 (৪২ আমিনো এসিড সমৃদ্ধ আমাইলয়েড বিটা) আঠালো প্রকৃতির যা মস্তিষ্কের রক্তনালিকার ভেতরে দলা পাকিয়ে অ্যামাইলয়েড প্লাক গঠন করে।

এই অ্যামাইলয়েড প্লাক নিম্নোক্ত দুটি ঘটনার মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্নায়ুর মৃত্যু ঘটায়ঃ

  1. প্রদাহ ও জারণ ক্রিয়ায় স্নায়ুর ক্ষতি সাধনঃ অ্যামাইলয়েড প্লাক মস্তিষ্কের নিউরনের সাহায্যকারী গ্লিয়াল কোষ অ্যাসট্রোসাইট ও মাইক্রোগ্লিয়াকে উদ্দেপিত করে। ফলশ্রুতিতে অ্যাসট্রোসাইট অ্যারাচিডোনিক এসিড উৎপন্ন করে এবং অ্যারাচিডোনিক এসিড থেকে প্রস্টাগ্লান্ডিন উৎপন্ন হয়। অপরদিকে মাইক্রোগ্লিয়া ক্ষতিকর মুক্ত অণু (ফ্রি রেডিকাল) তৈরি করে। এই প্রস্টাগ্লান্ডিন এবং মুক্ত অণু (ফ্রি রেডিকাল) স্নায়ুকোষের মৃত্যু ঘটায়।
  1. নিউরোফাইব্রিলারী টেঙ্গুল (টাউ প্রোটিনে গঠিত এক ধরনের আঁশ) গঠনঃ টাউ প্রোটিন হল অণুনালিকা (মাইক্রোটিবিউল) এর গাঠনিক উপাদান। অণুনালিকা সাধারণত নিউরনের কোষদেহ থেকে ডেন্ড্রাইটের দিকে প্রয়োজনীয় উপাদান পরিবহনে সহায়তা করে। আলঝেইমার রোগে আক্রান্তের স্নায়ুকোষের টাউ প্রোটিনের গাঠনিক পরিবর্তন ঘটে এবং এটি গিট পাকিয়ে যায়। তখন একে নিউরোফাইব্রিলারী টেঙ্গুল বলে। এমতাবস্থায় নিউরনে সক্রিয় অণুনালিকার পরিমাণ কমতে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে নিউরনের মৃত্যু ঘটে।

মস্তিষ্কের কর্টেক্সে ও সম্মুখ ভাগে বৃহদাকার পিরামিড আকৃতির অ্যাসিটাইলকোলিন নিউরন থাকে যা আসিটাইলকোলিন ক্ষরণের মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তায় গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আসিটাইলকোলিন নিউরনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অণুনালিকা থাকে।

আলঝেইমার রোগে টাউ প্রোটিনের গাঠনিক পরিবর্তনের কারণে এই আসিটাইলকোলিন নিউরনে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় । সাথে সাথে বুদ্ধিমত্তা , অণুধাবনের ক্ষমতা ও হ্রাস পায়।

চিকিৎসা

এ রোগের কোন প্রতিকার নেই। এর চিকিৎসা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গের উন্নতি সাধন এবং রোগের বিস্তার প্রতিরোধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

তথ্যসূত্র

  1. Berchtold NC, Cotman CW. Evolution in the conceptualization of dementia and Alzheimer's disease: Greco-Roman period to the 1960s. Neurobiol. Aging. 1998;19(3):173–89. doi:10.1016/S0197-4580(98)00052-9. PMID 9661992.
  2. Brookmeyer R., Gray S., Kawas C.. Projections of Alzheimer's disease in the United States and the public health impact of delaying disease onset. American Journal of Public Health. 1998;88(9):1337–42. doi:10.2105/AJPH.88.9.1337. PMID 9736873.
  3. 2006 prevalence estimate:

বহিঃসংযোগ