প্রফুল্ল চন্দ্র রায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
commons has file
৩০ নং লাইন: ৩০ নং লাইন:
* নিজের বাসভবনে দেশীয় [[ভেষজ]] নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তিনি তার গবেষণাকর্ম আরম্ভ করেন। তার এই গবেষণাস্থল থেকেই পরবর্তীকালে [[বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা|বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানার]] সৃষ্টি হয় যা ভারতবর্ষের শিলপায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
* নিজের বাসভবনে দেশীয় [[ভেষজ]] নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তিনি তার গবেষণাকর্ম আরম্ভ করেন। তার এই গবেষণাস্থল থেকেই পরবর্তীকালে [[বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা|বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানার]] সৃষ্টি হয় যা ভারতবর্ষের শিলপায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
* [[১৮৯৫]] সালে তিনি [[মারকিউরাস নাইট্রাইট]] (HgNO<sub>2</sub>) আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২ টি যৌগিক [[লবন]] এবং ৫ টি [[থায়োএস্টার]] আবিষ্কার করেন।
* [[১৮৯৫]] সালে তিনি [[মারকিউরাস নাইট্রাইট]] (HgNO<sub>2</sub>) আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২ টি যৌগিক [[লবন]] এবং ৫ টি [[থায়োএস্টার]] আবিষ্কার করেন।
* সমবায়ের পুরোধা স্যার পিসি রায় ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ সালে বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় পিতার নামে আরকেবিকে হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।


== সম্মাননা ==
== সম্মাননা ==

০৪:০৬, ২ আগস্ট ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
জন্ম
প্রফুল্ল চন্দ্র রায়

আগষ্ট ২, ১৮৬১
মৃত্যুজুন ১৬, ১৯৪৪
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনমেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন
প্রেসিডেন্সি কলেজ
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, যিনি পি সি রায় নামেও পরিচিত (আগস্ট ২, ১৮৬১ - জুন ১৬, ১৯৪৪) একজন প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ, বিজ্ঞানশিক্ষক, দার্শনিক, কবি। তিনি বেঙ্গল কেমিকালের প্রতিষ্ঠাতা এবং মার্কিউরাস নাইট্রাইট-এর আবিষ্কারক। দেশী শিল্পায়ন উদ্যোক্তা। তাঁর জন্ম অবিভক্ত বাংলার খুলনা জেলায় (বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত)। তিনি জগদীশ চন্দ্র বসুর সহকর্মী ছিলেন।

জন্ম ও বাল্যকাল

পি সি রায় বাংলাদেশের খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা'র ভূবনমোহিনী দেবী এবং পিতার নাম হরিশচন্দ্র রায় যিনি স্থানীয় একজন জমিদার ছিলেন। তার পরিবার ছিল বনিয়াদি। ছোটবেলা থেকেই প্রফুল্লচন্দ্র অত্যন্ত তুখোড় এবং প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন।

তার পড়াশোনা শুরু হয় বাবার প্রতিষ্ঠিত এম ই স্কুলে। ১৮৭২ সালে তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু রক্ত আমাশা রোগের কারণে তার পড়ালেখায় ব্যাপক বিঘ্নের সৃষ্টি হয়। বাধ্য হয়ে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে থাকার এই সময়টা তার জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনে সাহায্য করেছে। বাবার গ্রন্থাগারে প্রচুর বই পান তিনি এবং বইপাঠ তার জ্ঞানমানসের বিকাশসাধনে প্রভূত সহযোগিতা করে।

শিক্ষাজীবন

১৮৭৪ সালে প্রফুল্লচন্দ্র আবার কলকাতায় ফিরে যেয়ে অ্যালবার্ট স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই ১৮৭৮ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) ভর্তি হন। ১৮৮১ সালে সেখান থেকে এফ এ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে বি এ ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সী থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি বি এস সি পাশ করেন এবং ডি এস সি ডিগ্রী লাভের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তার সেই গবেষণার বিষয় ছিল কপার ম্যাগনেসিয়াম শ্রেণীর সম্মিলিত সংযুক্তি পর্যবেক্ষণ (Conjugated Sulphates of Copper Magnesium Group: A Study of Isomorphous Mixtures and Molecular Combination)। দুই বছরের কঠোর সাধনায় তিনি এই গবেষণা সমাপ্ত করেন এবং পি এইচ ডিডি এস সি ডিগ্রী লাভ করেন। এমনকি তার এই গবেষণাপত্রটি শ্রেষ্ঠ মনোনীত হওয়ায় তাকে হোপ প্রাইজে ভূষিত করা হয়। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই ১৮৮৫ সালে সিপাহী বিদ্রোহের আগে ও পরে (India Before and After the Sepoy Mutiny) এবং ভারতবিষয়ক বিভিন্ন নিবন্ধ লিখে ভারতবর্ষ এবং ইংল্যান্ডে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

কর্মজীবন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে আচার্য রায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় ২৪ বছর তিনি এই কলেজে অধ্যাপনা করেছিলেন। অধ্যাপনাকালে তার প্রিয় বিষয় রসায়ন নিয়ে তিনি নিত্য নতুন অনেক গবেষণাও চালিয়ে যান। তার উদ্যোগে তার নিজস্ব গবেষণাগার থেকেই বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীকালে ১৯০১ সালে তা কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত করা হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড

অবদান

  • নিজের বাসভবনে দেশীয় ভেষজ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তিনি তার গবেষণাকর্ম আরম্ভ করেন। তার এই গবেষণাস্থল থেকেই পরবর্তীকালে বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানার সৃষ্টি হয় যা ভারতবর্ষের শিলপায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
  • ১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট (HgNO2) আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২ টি যৌগিক লবন এবং ৫ টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন।
  • সমবায়ের পুরোধা স্যার পিসি রায় ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ সালে বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় পিতার নামে আরকেবিকে হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

সম্মাননা

ব্যাক্তি হিসেবে আচার্য

দেশপ্রেম

আচার্য দেবের দেশপ্রেম তাকে ইউরোপে থেকে ফিরিয়ে এনেছিল। দেশে এসেও তিনি তার সেই স্বদেশপ্রীতির পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ক্লাসে বাংলায় লেকচার দিতেন। বাংলা ভাষা তার অস্তিত্বের সাথে মিশে ছিল। তার বাচনভঙ্গী ছিল অসাধারণ যার দ্বারা তিনি ছাত্রদের মন জয় করে নিতেন খুব সহজেই। তিনি সকল ক্ষেত্রেই ছিলেন উদারপন্থী।

অসাম্প্রদায়িকতা

কিছু সূত্র মতে, তিনি অসাম্প্রদায়িকই শুধু ছিলেননা বরং সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার মূলোৎপাটনের জন্যও চেষ্টা করেছেন সবসময়। ১৯০৫ সালে ড. কুদরত-এ-খুদাকে প্রেসিডেন্সী কলেজে থেকে রসায়নে প্রথম বিভাগ দেয়া হয়। অনেকের বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রফুল্লচন্দ্র নিজের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুদরত-এ-খুদাকে প্রথম বিভাগ দেন। এরকম ব্যাপার শোনা যায় শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুক হকের জীবনী থেকেও।

গ্রন্থাবলী

  • India Before and After the Sepoy Mutiny (সিপাহী বিদ্রোহের আগে ও পরে)
  • সরল প্রাণীবিজ্ঞান, বাঙ্গালী মস্তিষ্ক ও তার অপব্যবহার
  • হিন্দু রসায়নী বিদ্যা
  • মোট গবেষণাপত্রের সংখ্যা ১৪৫ টি

আরও দেখুন

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি

  • আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় জীবন ও সাধনা - অধ্যাপক এম কে আলী
  • জীবনস্মৃতি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় - জয়ন্ত কুমার ঘোষ
  • আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় - শেখ শাহাদাত হোসেন বাচ্চু
  • টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয় (জনকণ্ঠের সাপ্তাহিক প্রতিবেদন) - অমল সাহা; ০৫ মে, ২০০২

তথ্যসূত্র

  • আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় উপমহাদেশে রসায়নশাস্ত্রের পথিকৃৎ (মাসিক সায়েন্স ওয়ার্ল্ড এর নিবন্ধ) - সুব্রত দাশ সোনা; বর্ষ ৫, সংখ্যা ৫৬, আগস্ট ২০০৬