যদুনাথ সরকার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NahidHossain (আলোচনা | অবদান) অ বিষয়শ্রেণী:রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী যোগ হটক্যাটের মাধ্যমে |
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান) অ বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন |
||
৪ নং লাইন: | ৪ নং লাইন: | ||
== জন্ম ও পরিবার == |
== জন্ম ও পরিবার == |
||
যদুনাথ সরকারের জন্ম ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর, বৃহত্তর রাজশাহী জেলার আত্রাই থানার কড়চমারিয়া গ্রামে৷ পিতা রাজকুমার সরকার এবং মাতা হরিসুন্দরী দেবীর ৭ পুত্র এবং ৩ কন্যার মধ্যে তিনি ৫ম সন্তান, ৩য় পুত্র। তাদের পূর্বপুরুষ ধনাঢ্য জমিদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। বিদ্যানুরাগী রাজকুমার সরকারের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল বিশালাকার। গণিতের ছাত্র হলেও ইতিহাসে ছিল গভীর আগ্রহ। নানা জনহিতকর কাজে তিনি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে ভালোবাসতেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এই বিষয়াদি যদুনাথ সরকারকে প্রভাবান্বিত করেছিল। পিতার মাধ্যমেই অল্প বয়সে তাঁর পরিচয় হয়েছিল [[বার্ট্রান্ড রাসেল|বার্ট্রান্ড রাসেলের]] 'Hisotry of England' নামীয় গ্রন্থের সঙ্গে। রাজকুমার সরকার পুত্রের হাতে প্লুটার্ক রচিত প্রাচীন |
যদুনাথ সরকারের জন্ম ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর, বৃহত্তর রাজশাহী জেলার আত্রাই থানার কড়চমারিয়া গ্রামে৷ পিতা রাজকুমার সরকার এবং মাতা হরিসুন্দরী দেবীর ৭ পুত্র এবং ৩ কন্যার মধ্যে তিনি ৫ম সন্তান, ৩য় পুত্র। তাদের পূর্বপুরুষ ধনাঢ্য জমিদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। বিদ্যানুরাগী রাজকুমার সরকারের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল বিশালাকার। গণিতের ছাত্র হলেও ইতিহাসে ছিল গভীর আগ্রহ। নানা জনহিতকর কাজে তিনি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে ভালোবাসতেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এই বিষয়াদি যদুনাথ সরকারকে প্রভাবান্বিত করেছিল। পিতার মাধ্যমেই অল্প বয়সে তাঁর পরিচয় হয়েছিল [[বার্ট্রান্ড রাসেল|বার্ট্রান্ড রাসেলের]] 'Hisotry of England' নামীয় গ্রন্থের সঙ্গে। রাজকুমার সরকার পুত্রের হাতে প্লুটার্ক রচিত প্রাচীন গ্রিক ও রোমান নায়কদের জীবনী তুলে দিয়েছিলেন। পিতাই তাঁর কিশোর চিত্তে ইতিহাসের নেশা জাগিয়ে দিয়েছিলেন। |
||
== শিক্ষাজীবন == |
== শিক্ষাজীবন == |
১৫:৩৫, ৩ মে ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
স্যার যদুনাথ সরকার (ডিসেম্বর ১০, ১৮৭০ - মে ১৯, ১৯৫৮) স্বনামধন্য বাঙালি ইতিহাসবিদ। তিনিই প্রথম মীর্জা নাথান রচিত বাহারিস্তান-ই-গায়বী এর পাণ্ডুলিপি ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত জাতীয় গ্রন্থাগারে খুঁজে পান এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন জার্নালে বাংলা এবং ইংরেজিতে প্রবন্ধ লিখে বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জন্ম ও পরিবার
যদুনাথ সরকারের জন্ম ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর, বৃহত্তর রাজশাহী জেলার আত্রাই থানার কড়চমারিয়া গ্রামে৷ পিতা রাজকুমার সরকার এবং মাতা হরিসুন্দরী দেবীর ৭ পুত্র এবং ৩ কন্যার মধ্যে তিনি ৫ম সন্তান, ৩য় পুত্র। তাদের পূর্বপুরুষ ধনাঢ্য জমিদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। বিদ্যানুরাগী রাজকুমার সরকারের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল বিশালাকার। গণিতের ছাত্র হলেও ইতিহাসে ছিল গভীর আগ্রহ। নানা জনহিতকর কাজে তিনি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে ভালোবাসতেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এই বিষয়াদি যদুনাথ সরকারকে প্রভাবান্বিত করেছিল। পিতার মাধ্যমেই অল্প বয়সে তাঁর পরিচয় হয়েছিল বার্ট্রান্ড রাসেলের 'Hisotry of England' নামীয় গ্রন্থের সঙ্গে। রাজকুমার সরকার পুত্রের হাতে প্লুটার্ক রচিত প্রাচীন গ্রিক ও রোমান নায়কদের জীবনী তুলে দিয়েছিলেন। পিতাই তাঁর কিশোর চিত্তে ইতিহাসের নেশা জাগিয়ে দিয়েছিলেন।
শিক্ষাজীবন
গ্রামের স্কুলে তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু। তারপর অধ্যয়ন করেছেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে। এরপর গন্তব্য কোলকাতার হেয়ার স্কুর ও সিটি কলেজিয়েট স্কুল। পরে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করেন প্রথম শ্রেণীতে ষষ্ঠ স্থান অর্জন ক’রে। তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ১ম বিভাগে দশম স্থান অধিকার করে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে।[১] পরবর্তী গন্তব্য কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ। থাকতেন ইডেন হোস্টেলে। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইতিহাস ও ইংরেজি সাহিত্য - এই দুটি বিষয়ে অনার্সসহ বি.এ পাশ করেন এবং ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে ৯০% নম্বর নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ পাশ করেন৷ ১৮৯৭ সালে তিনি ‘প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ’ স্কলারশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বর্ণপদকসহ দশ হাজার টাকা বৃত্তি লাভ করেন৷
কর্মজীবন
অধ্যাপনার মাধ্যমে ১৮৯৮ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁর প্রথম কর্মস্থল নির্ধারিত হয়। ১৮৯৯ সালে পাটনা কলেজে বদলী হয়ে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। মাঝখানে কিছুকাল ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অধ্যাপনা করেন। অধ্যাপক জীবনের বেশীরভাগ সময়ই কাটে পাটনা ও কটকে।[২] ৪ আগস্ট, ১৯২৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে মনোনীত হন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনিই প্রথম অধ্যাপক ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন তিনি।
যদুনাথ সরকার ১৯২৩ সালে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানিত সদস্য হন।
সাহিত্যিক জীবন
ইতিহাস শাস্ত্রে অসাধারণ ও প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন যদুনাথ সরকার। তাঁকে ইতিহাস-চর্চায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন ভগিনী নিবেদিতা, যিনি সিস্টার নিবেদিতা নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি ঐতিহাসিক গবেষণা-গ্রন্থ রচনার জন্য বাংলা, ইংরেজী, সংস্কৃত ভাষা ছাড়াও উর্দু, ফারসী, মারাঠীসহ আরও কয়েকটি ভাষা শিখেছিলেন।[২]
ঐতিহাসিক গবেষণা ছাড়াও তিনি একজন বিশিষ্ট সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন। এছাড়াও, রবীন্দ্র-সাহিত্যের সমঝদার পাঠক ছিলেন যদুনাথ সরকার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার পাবার আগেই তিনি কবির রচনার ইংরেজী অনুবাদ করে পাশ্চাত্য জগতের কাছে তাঁর পরিচয় তুলে ধরেন।[২]
রচিত গ্রন্থসমূহ
যদুনাথ সরকার ২৫টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও, ১২টি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন।[২] ১৯০১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ পাঁচ খণ্ডে সমাপ্ত 'হিস্ট্রি অফ ঔরঙ্গজেব'। তাঁর রচিত অন্যান্য গ্রন্থ হলো -
- দ্য ফল অফ দ্য মুঘল এম্পায়ার
- শিবাজী (বাংলা)
- মিলিটারী হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া
- দ্য রানী অফ ঝাঁসী
- ফেমাস ব্যাটেল্স্ অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি
- শিবাজী এন্ড হিজ টাইম
- ক্রোনোলজী অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি
তাঁর সংগৃহীত গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপি ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে।
আচার্য পদবী
ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণায় যদুনাথ সরকার পথিকৃৎ বা পথ প্রদর্শক ছিলেন। এই কারণে দেশবাসী তাঁকে আচার্য হিসাবে বরণ করেছিলেন।[২]
পুরস্কার ও সম্মাননা
যদুনাথ সরকার তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে বিরল সম্মাননা অর্জন করেছিলেন৷
- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধি প্রদান করেন।
- ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৪৪ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় ডি.লিট উপাধি প্রদান করে৷
মৃত্যু
আচার্য যদুনাথ সরকার ৮৮ বৎসর বয়সে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে তারিখে কলকাতায় পরলোকগমন করেন৷