ধামইরহাট উপজেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

স্থানাঙ্ক: ২৫°৮′৪৬″ উত্তর ৮৮°৫১′৫৪″ পূর্ব / ২৫.১৪৬১১° উত্তর ৮৮.৮৬৫০০° পূর্ব / 25.14611; 88.86500
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
পরিচ্ছন্ন করা হলো
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
৩৩ নং লাইন: ৩৩ নং লাইন:
পাল রাজ বংশের শেষ খ্যাতিমান রাজা রামপালের সভাকবি সন্ধ্যাকরনন্দি বরেন্দ্র ভূমিকে ‘বসুধার শীর্ষ স্থান’ বলে উল্লেখ করেছেন। বরেন্দ্র ভূমির কেন্দ্রস্থলেই আমাদের বসবাস। আবার প্রাচীন বাংলার দুই রাজধানী পুন্ড্র বর্ধণ (মহাস্থানগড়) ও গৌড় (মালদহ ও পার্শ্ববর্তী এলাকা) এর মধ্যস্থল এবং পরবর্তী কালের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ, লক্ষনাবর্তী, লহ্মৌতি, পান্ডুয়া ও মুর্শিদাবাদ সবগুলিই আবর্তিত হয়েছিল এই জনপদকে ঘিরেই। এখানকার পরগনা সন্তোষ জনপ্রিয় রাজা মহীপালের নামের প্রথম অংশের সাথে যুক্ত হয়ে মহীসন্তোষ বা মাহীসন্তোষ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। পঞ্চদশ শতকে সুলতান রুকুন উদ্দীন বারবাকশাহ এখানে বারবাকাবাদ নামের প্রাদেশিক রাজধানী স্থাপন করেন। স্থাপিত হয় টাকশাল, দূর্গ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কিন্তু মুঘল আমলে বিরান ভূমিতে পরিণত হয় সুলতানী আমলের মাহীগঞ্জ। অবশিষ্ট ছিল কেবল রাজস্ব আদায়ের প্রশাসনিক কাঠামো ‘ সরকার বারবাকাবাদ’। মাহী সন্তোষের সুলতানি আমলের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু গবেষনা মুলক কাজ হয়েছে। সম্প্রতি মুসলিম বাংলার প্রথম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত তকিউদ্দীন আল আরাবির মাজার নির্মিত হয়েছে।
পাল রাজ বংশের শেষ খ্যাতিমান রাজা রামপালের সভাকবি সন্ধ্যাকরনন্দি বরেন্দ্র ভূমিকে ‘বসুধার শীর্ষ স্থান’ বলে উল্লেখ করেছেন। বরেন্দ্র ভূমির কেন্দ্রস্থলেই আমাদের বসবাস। আবার প্রাচীন বাংলার দুই রাজধানী পুন্ড্র বর্ধণ (মহাস্থানগড়) ও গৌড় (মালদহ ও পার্শ্ববর্তী এলাকা) এর মধ্যস্থল এবং পরবর্তী কালের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ, লক্ষনাবর্তী, লহ্মৌতি, পান্ডুয়া ও মুর্শিদাবাদ সবগুলিই আবর্তিত হয়েছিল এই জনপদকে ঘিরেই। এখানকার পরগনা সন্তোষ জনপ্রিয় রাজা মহীপালের নামের প্রথম অংশের সাথে যুক্ত হয়ে মহীসন্তোষ বা মাহীসন্তোষ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। পঞ্চদশ শতকে সুলতান রুকুন উদ্দীন বারবাকশাহ এখানে বারবাকাবাদ নামের প্রাদেশিক রাজধানী স্থাপন করেন। স্থাপিত হয় টাকশাল, দূর্গ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কিন্তু মুঘল আমলে বিরান ভূমিতে পরিণত হয় সুলতানী আমলের মাহীগঞ্জ। অবশিষ্ট ছিল কেবল রাজস্ব আদায়ের প্রশাসনিক কাঠামো ‘ সরকার বারবাকাবাদ’। মাহী সন্তোষের সুলতানি আমলের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু গবেষনা মুলক কাজ হয়েছে। সম্প্রতি মুসলিম বাংলার প্রথম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত তকিউদ্দীন আল আরাবির মাজার নির্মিত হয়েছে।


ভট্রগুরব মিশ্র সুকবি এবং নারায়ন পালের (৯ম শতক) মন্ত্রী ছিলেন। তিনি দর্ভপানী মিশ্র সহ এই পরিবারের সকল মন্ত্রী, কবি, সাহিত্যিক, বিদ্যান ও বিদুষী গণের গুন কীর্ত্তণ করেছেন স্তম্ভলিপিতে। তিনি শিবের উপাষক ছিলেন। তাই উপাস্য দেবতার বাহন গড়–র-পাখী স্তম্ভের শীর্ষে স্থাপন করে শিবের উদ্দেশ্যে উৎস্বর্গ করেছিলেন। পাল রাজত্বের অবসানের পর ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রেশম ও নীলচাষ কার্যে নিয়োজিত বাদাল কুঠির অধ্যক্ষ গভীর জঙ্গলে স্তম্ভটি নতুনভাবে আবিস্কার করেন। তখন বজ্রখাতে গড়–র পাখিটি বিদীর্ণ হয়ে কিছুটা কাৎ অবস্থায় স্তম্ভটি দেখতে পাওয়া যায়। ইতিহাস বিশ্রুত স্থানীয় ধর্মাশ্রয়ী লোকজন তখন একটি কিংবদন্তীর অবতারনা করে। পৌরানিক কাহিনী অবলম্বনে মানুষের ধারণা জন্মে যে, দেবদূত ভীম মর্ত্যলোকের ভূমি কর্ষনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। গভীর রজনীতে চাষ কার্য শেষে মঙ্গলবাড়ী এসে ভোর হয়। তিনি দ্রুত লোক চক্ষুর অন্তরালে স্বর্গে গমনকালে তাঁর হাতে থাকা পান্টিটি আপন ভারে মাতিতে পুঁতে যায়।
ভট্রগুরব মিশ্র সুকবি এবং নারায়ন পালের (৯ম শতক) মন্ত্রী ছিলেন। তিনি দর্ভপানী মিশ্র সহ এই পরিবারের সকল মন্ত্রী, কবি, সাহিত্যিক, বিদ্যান ও বিদুষী গণের গুন কীর্ত্তণ করেছেন স্তম্ভলিপিতে। তিনি শিবের উপাষক ছিলেন। তাই উপাস্য দেবতার বাহন গড়–র-পাখী স্তম্ভের শীর্ষে স্থাপন করে শিবের উদ্দেশ্যে উৎস্বর্গ করেছিলেন। পাল রাজত্বের অবসানের পর ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রেশম ও নীলচাষ কার্যে নিয়োজিত বাদাল কুঠির অধ্যক্ষ গভীর জঙ্গলে স্তম্ভটি নতুনভাবে আবিস্কার করেন। তখন বজ্রখাতে গড়–র পাখিটি বিদীর্ণ হয়ে কিছুটা কাৎ অবস্থায় স্তম্ভটি দেখতে পাওয়া যায়। ইতিহাস বিশ্রুত স্থানীয় ধর্মাশ্রয়ী লোকজন তখন একটি কিংবদন্তির অবতারনা করে। পৌরানিক কাহিনী অবলম্বনে মানুষের ধারণা জন্মে যে, দেবদূত ভীম মর্ত্যলোকের ভূমি কর্ষনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। গভীর রজনীতে চাষ কার্য শেষে মঙ্গলবাড়ী এসে ভোর হয়। তিনি দ্রুত লোক চক্ষুর অন্তরালে স্বর্গে গমনকালে তাঁর হাতে থাকা পান্টিটি আপন ভারে মাতিতে পুঁতে যায়।


একাদশ শতকে পাল রাজত্বের অধঃপতনের যুগে দ্বিতীয় মহীপালের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এক গণ বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন স্থানীয় কৈবর্ত নায়ক দিব্যোক। তিনি দিবর দিঘীতে প্রতিষ্ঠিত দিব্যোক স্মৃতি স্তম্ভের (দিবরদীঘি) নিকটবর্তী স্থানে মহীপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে বাংলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দিব্যোকের ভ্রাতুস্পুত্র ভীম জনপ্রিয় শাসক ছিলেন। তাঁরই স্মৃতি দেবদূত ভীমের অলৌকিক শক্তিকে হয়তো আচ্ছন্ন করেছে। প্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চলের মানুষ হিন্দু ধর্মানুরাগী ছিলেন। এখানে হরগৌরির যুগল স্বর্ণমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এবং খিষ্ট্র পূর্ব দ্বিতীয় শতকের শিবলিঙ্গের অনুরূপ একটি বিগ্রহের আরধনা করত এখানকার মানুষ। সভ্যতার আলো থেকে বঞ্চিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ এই ধর্মীয় অনুভূতির কেন্দ্রে এক সময় আবিস্কার করে মঙ্গলজলের। এখানকার একটি জলাশয় থেকে সকল প্রকার রোগ শোকের মুক্তি লাভের আশায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ মঙ্গলবার দিন ভীড় জমাতো। সেখান থেকেই মঙ্গল বারির মহিমায় মঙ্গলবাড়ী হাটে রূপান্তরিত হয়েছে।
একাদশ শতকে পাল রাজত্বের অধঃপতনের যুগে দ্বিতীয় মহীপালের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এক গণ বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন স্থানীয় কৈবর্ত নায়ক দিব্যোক। তিনি দিবর দিঘীতে প্রতিষ্ঠিত দিব্যোক স্মৃতি স্তম্ভের (দিবরদীঘি) নিকটবর্তী স্থানে মহীপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে বাংলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দিব্যোকের ভ্রাতুস্পুত্র ভীম জনপ্রিয় শাসক ছিলেন। তাঁরই স্মৃতি দেবদূত ভীমের অলৌকিক শক্তিকে হয়তো আচ্ছন্ন করেছে। প্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চলের মানুষ হিন্দু ধর্মানুরাগী ছিলেন। এখানে হরগৌরির যুগল স্বর্ণমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এবং খিষ্ট্র পূর্ব দ্বিতীয় শতকের শিবলিঙ্গের অনুরূপ একটি বিগ্রহের আরধনা করত এখানকার মানুষ। সভ্যতার আলো থেকে বঞ্চিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ এই ধর্মীয় অনুভূতির কেন্দ্রে এক সময় আবিস্কার করে মঙ্গলজলের। এখানকার একটি জলাশয় থেকে সকল প্রকার রোগ শোকের মুক্তি লাভের আশায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ মঙ্গলবার দিন ভীড় জমাতো। সেখান থেকেই মঙ্গল বারির মহিমায় মঙ্গলবাড়ী হাটে রূপান্তরিত হয়েছে।

০৩:২২, ২ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ধামইরহাট উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৫°৮′৪৬″ উত্তর ৮৮°৫১′৫৪″ পূর্ব / ২৫.১৪৬১১° উত্তর ৮৮.৮৬৫০০° পূর্ব / 25.14611; 88.86500 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগরাজশাহী বিভাগ
জেলানওগাঁ জেলা
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫০ ৬৪ ২৮
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

ধামুরহাট বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

অবস্থান

জেলার সর্ব উত্তরের একটি উপজেলা। এর উত্তরে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ বালুঘাট থানা,পূর্বে জয়পুরহাট জেলা এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে পত্নীতলা উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা

আয়তন ৩০১ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার ইউনিয়নগুলো হল-

  • ধামইরহাট ইউনিয়ন
  • আলমপুর ইউনিয়ন
  • উমার ইউনিয়ন
  • আড়ানগর ইউনিয়
  • জাহানপুর ইউনিয়ন
  • ইসবপুর ইউনিয়ন
  • খেলনা ইউনিয়ন
  • আগ্রাদ্বিগুন ইউনিয়ন

ইতিহাস

পাল রাজ বংশের শেষ খ্যাতিমান রাজা রামপালের সভাকবি সন্ধ্যাকরনন্দি বরেন্দ্র ভূমিকে ‘বসুধার শীর্ষ স্থান’ বলে উল্লেখ করেছেন। বরেন্দ্র ভূমির কেন্দ্রস্থলেই আমাদের বসবাস। আবার প্রাচীন বাংলার দুই রাজধানী পুন্ড্র বর্ধণ (মহাস্থানগড়) ও গৌড় (মালদহ ও পার্শ্ববর্তী এলাকা) এর মধ্যস্থল এবং পরবর্তী কালের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ, লক্ষনাবর্তী, লহ্মৌতি, পান্ডুয়া ও মুর্শিদাবাদ সবগুলিই আবর্তিত হয়েছিল এই জনপদকে ঘিরেই। এখানকার পরগনা সন্তোষ জনপ্রিয় রাজা মহীপালের নামের প্রথম অংশের সাথে যুক্ত হয়ে মহীসন্তোষ বা মাহীসন্তোষ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। পঞ্চদশ শতকে সুলতান রুকুন উদ্দীন বারবাকশাহ এখানে বারবাকাবাদ নামের প্রাদেশিক রাজধানী স্থাপন করেন। স্থাপিত হয় টাকশাল, দূর্গ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কিন্তু মুঘল আমলে বিরান ভূমিতে পরিণত হয় সুলতানী আমলের মাহীগঞ্জ। অবশিষ্ট ছিল কেবল রাজস্ব আদায়ের প্রশাসনিক কাঠামো ‘ সরকার বারবাকাবাদ’। মাহী সন্তোষের সুলতানি আমলের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু গবেষনা মুলক কাজ হয়েছে। সম্প্রতি মুসলিম বাংলার প্রথম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত তকিউদ্দীন আল আরাবির মাজার নির্মিত হয়েছে।

ভট্রগুরব মিশ্র সুকবি এবং নারায়ন পালের (৯ম শতক) মন্ত্রী ছিলেন। তিনি দর্ভপানী মিশ্র সহ এই পরিবারের সকল মন্ত্রী, কবি, সাহিত্যিক, বিদ্যান ও বিদুষী গণের গুন কীর্ত্তণ করেছেন স্তম্ভলিপিতে। তিনি শিবের উপাষক ছিলেন। তাই উপাস্য দেবতার বাহন গড়–র-পাখী স্তম্ভের শীর্ষে স্থাপন করে শিবের উদ্দেশ্যে উৎস্বর্গ করেছিলেন। পাল রাজত্বের অবসানের পর ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রেশম ও নীলচাষ কার্যে নিয়োজিত বাদাল কুঠির অধ্যক্ষ গভীর জঙ্গলে স্তম্ভটি নতুনভাবে আবিস্কার করেন। তখন বজ্রখাতে গড়–র পাখিটি বিদীর্ণ হয়ে কিছুটা কাৎ অবস্থায় স্তম্ভটি দেখতে পাওয়া যায়। ইতিহাস বিশ্রুত স্থানীয় ধর্মাশ্রয়ী লোকজন তখন একটি কিংবদন্তির অবতারনা করে। পৌরানিক কাহিনী অবলম্বনে মানুষের ধারণা জন্মে যে, দেবদূত ভীম মর্ত্যলোকের ভূমি কর্ষনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। গভীর রজনীতে চাষ কার্য শেষে মঙ্গলবাড়ী এসে ভোর হয়। তিনি দ্রুত লোক চক্ষুর অন্তরালে স্বর্গে গমনকালে তাঁর হাতে থাকা পান্টিটি আপন ভারে মাতিতে পুঁতে যায়।

একাদশ শতকে পাল রাজত্বের অধঃপতনের যুগে দ্বিতীয় মহীপালের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এক গণ বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন স্থানীয় কৈবর্ত নায়ক দিব্যোক। তিনি দিবর দিঘীতে প্রতিষ্ঠিত দিব্যোক স্মৃতি স্তম্ভের (দিবরদীঘি) নিকটবর্তী স্থানে মহীপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে বাংলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দিব্যোকের ভ্রাতুস্পুত্র ভীম জনপ্রিয় শাসক ছিলেন। তাঁরই স্মৃতি দেবদূত ভীমের অলৌকিক শক্তিকে হয়তো আচ্ছন্ন করেছে। প্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চলের মানুষ হিন্দু ধর্মানুরাগী ছিলেন। এখানে হরগৌরির যুগল স্বর্ণমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এবং খিষ্ট্র পূর্ব দ্বিতীয় শতকের শিবলিঙ্গের অনুরূপ একটি বিগ্রহের আরধনা করত এখানকার মানুষ। সভ্যতার আলো থেকে বঞ্চিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ এই ধর্মীয় অনুভূতির কেন্দ্রে এক সময় আবিস্কার করে মঙ্গলজলের। এখানকার একটি জলাশয় থেকে সকল প্রকার রোগ শোকের মুক্তি লাভের আশায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ মঙ্গলবার দিন ভীড় জমাতো। সেখান থেকেই মঙ্গল বারির মহিমায় মঙ্গলবাড়ী হাটে রূপান্তরিত হয়েছে। একাদশ শতকের শেষার্ধে ভীমকে পরাজীত করে রামপাল প্রিয় পিতৃভূমি বরেন্দ্র উদ্ধার করেন। তিনি প্রজা সাধারণের আকুন্ঠ ভালবাসা অর্জনের জন্য সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেনএবং জগদ্দল মহাবিহার (বিশ্ববিদ্যালয়) ও রামাবতি নামক রাজধানী প্রতিষ্ঠা করে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ সময় পাহাড়পুর মহাবিহার বিদ্রোহীরা ভস্মীভূত করায় এটি পরিত্যাক্ত হয়েছিল। রামাবতিকে জগদ্দল মহাবিহারের দক্ষিণে এবং মালদহের নিকটে বলে নিদের্শ করা হয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান,ভবন-অট্রালিকার ধ্বংসাবশেষ ও নামের সঙ্গে কিছুটা মিল থাকায় আড়ানগর, লক্ষনপাড়ার সন্নিকটে আমাইড় গ্রামটিই রামাবতি বলে অনুমিত হয়।

রাজশাহী জেলার ইতিহাস রচয়িতা প্রখ্যাত ঐতিহাসিক কাজী মোহাম্মদ মিছের মহোদয়ের বর্ণনা মতে- ‘ধামা’ শব্দ থেকে ধামইরহাট শব্দের উৎপত্তি। আর এর পিছনের ঐতিহাসিক সুত্র হলো, ১৮৫৫ সালের ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাষন-শোষনের বিরুদ্ধে সাওতাল বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে সাওতাল উপজাতী গোষ্ঠীর মানুষেরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে রাজমহল ত্যাগ করে দুরবর্তী দুর্গম, পাহাড়, বন, জঙ্গলে পালিয়ে আতœরক্ষা করে। এদেরই একটি শাখা বর্তমান ধামইরহাট উপজেলা পরিষদের দক্ষিণাংশে জঙ্গলে বসবাস শুরু করে। কালক্রমে প্রাণ ভয়মুক্ত হয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে সহজ লভ্য বাঁশ ও বেঁত দিয়ে মানুষের দৈনন্দিন গৃহস্থালী কাজের অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত কাজে মনোযোগ দেয়। এসব সামগ্রীর পসরা নিয়ে সপ্তাহের রবিবার দিন মাহালীরা বর্তমান হাট খোলায় বিক্রি করতে বসতো। পণ্য গুলির মধ্যে ধামাই ছিল প্রধান। কেননা এ সময় লেন-দেনের জন্য বাটখারা বা দাঁড়িপাল্লার পরিবর্তে ধামার ব্যাপক প্রচলন ছিল। আর ধামার পাশাপাশি দোন, ডোল, ডালি, ডালা, চাঙ্গারী, ঝাঁটা, কুলা, খইচালা, মাথল প্রভৃতি পন্যগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ এখানে ভিড় জমাতো। এভাবে ধামা বিক্রির হাট দিনে দিনে প্রসার লাভ করে। এখানে গড়ে উঠে বাজার, পুলিশ ষ্টেশন, থানা উন্নয়ন কেন্দ্র এবং বর্তমানের ধামইরহাট উপজেলা পরিষদ।

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০০১ সালের জরিপে পুরুষের সংখ্যা ৮৭ হাজার এবং মহিলা ৮২ হাজার।

শিক্ষা

  • রঘুনাথপুর কামিল মাদ্রাসা
  • চকময়রাম মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
  • সুফিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
  • চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয়
  • বস্তাবর দাখিল মাদ্রাসা

অর্থনীতি

কৃতী ব্যক্তিত্ব

উপজেলার ঐতিহ্য

জগদ্দল মহাবিহার, ভীমের পান্টি, মাহিসন্তোস এ উপজেলার প্রত্নতাত্বিক স্থান।

আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান

সারি সারি শালবন পেরিয়ে যেতেই কাপড় আটকে যাবে বেতের কাঁটায় ।শুকনো পাতার পতনধ্বনিতে বুক হালকা ভয়ে আঁতকে উঠবে। মাথার উপর ডেকে ক্লান্ত হয়ে জিরোবে নানান প্রজাতির পাখি। প্রকৃতির নিসর্গ স্নিগতায় চোখ বুজে আসবে ঘুমে ।মুগ্ধতায় জুড়াবে নয়ন।শালবনের মাঝ দিয়ে একেবেঁকে চলা মেঠোপথের ঘাসের আগায় জমা বিন্দু বিন্দু শিশির ফোঁটা ভিজিয়ে দিবে নগ্ন পায়ের পাতা ।সৌন্দর্যতার এক অপরুপ লীলাভূমি, প্রাকৃতিক রুপের আঁধার "আলতাদীঘি"।

কথিত আছে অক্ষয় কুমার চৌধুরানী (জন্ম- মৃত্যু অজানা) আদেশ করেন আমি যত দূর হেঁটে যাব তত দূর পর্যন্ত দীঘি খনন করতে হবে। এভাবে এক কিলো হাঁটলে তাঁর কর্মচারীগন তাঁর পায়ে আলতা ছুঁড়েদেন ও বলেন রানী মা আপনার পায়ে রক্ত এবং তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন। একারণে এই দীঘির নাম আলতাদিঘি। নওগাঁ, ধামুইর হাট বাজার থেকে উত্তরে এ দীঘির অবস্থান। উত্তর বঙ্গের সবচেয়ে বড় বনভূমি সাল বনের মাঝখানে এর অবস্থান। উই পোকার ডিবি, এ বনে প্রচুর দেখা যায় এর পাশ দিয়ে ভারতের বর্ডার চলে গেছে।

বাংলাদেশ-ভারতের প্রায় সীমান্তঘেষা, নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা থেকে ৫ কিঃমিঃ উত্তরে আবিলাম মাদ্রাসা রোড ধরে ১০-১২ কিলো দূরে একটি ঐতিহাসিক দিঘীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সুবিশাল বনভূমি। শালবন এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ ২৬৪ হেক্টর জমির এই বনভূমির ঠিক মাঝখানেই রয়েছে প্রায় ৪৩ একর আয়তনের একটি বিশাল দিঘী, যা ‘আলতাদিঘী’ নামে পরিচিত। এটি দৈর্ঘ্যে ১.২ কিঃমিঃ এবং চওড়া ০.২ কিঃমি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে একে ‘আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি এই উদ্যানটির উন্নয়নে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার অধিক অর্থাত্‍ তিন কোটি একান্ন লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার টাকার (৩৫১৭৬০০০) একটি প্রকল্প সরকারকর্তৃক গ্রহণ করা হয়েছে। যা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। যথাযথ সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হলে উদ্যানটি জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। এলাকাবাসী দ্রুত এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় উদ্যানে পরিণত করার দাবি জানিয়েছেন। এতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে যে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হবে সেকথা বলার উপেক্ষা রাখে না।[১]

জগদ্দল বিহার

জগদ্দল বিহার ধামুইর হাট থেকে ২.৫-৩ কিলো পূর্বে হরিতকি ডাঙা, হরিতকি ডাঙা হতে উত্তরে ২.৫ কিলো দূরে এই বিহারের অবস্থান। জগদ্দল বিহার হতে .৫ কিলো দূরে বাংলাদেশের মাত্র দুটি আদিবাসী স্কুলের মধ্যে একটির অবস্থান। জগদ্দল আদিবাসী প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়। এ জায়গাতে মুলত সাঁওতাল আধিবাসীদের বাস। জগদ্দল বিহারের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে রাজা রামপাল গৌড় রাজ্য পুনরুদ্ধারের পর রামাবতী নগরে রাজধানী স্থাপন করেন। আইন-ই-আকবর রচয়িতা আবুল ফজল এ স্থানটিকে রমৌতি বলে উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন বাংলার ধর্মমঙ্গল কাব্যগুলিতে রামাবতীর উল্লেখ আছে। রাজা রামপালের পুত্র মদনপালের তাম্র শাসনেও রামাবতী নগরীর উল্লেখ আছে। দীনেশ চন্দ্র সেন বলেছেন যে, এই রামাবতী নগরে রাজা রামপাল জগদ্দল মহাবিহারের প্রতিষ্ঠা করেন। ঐতিহাসিক রামপ্রাণগুপ্ত জগদ্দল বিহার দিনাজপুরে অবস্থিত বলে উল্লেখ করেছেন। রামপ্রাণগুপ্তের জগদ্দল বিহার যে নওগাঁ জেলার আলোচ্য বিহার তা সহজেই অনুমান করা যায়। কারণ পূর্বে এ জেলা দিনাজপুর জেলার অংশ ছিল। একাদশ বা দ্বাদশ শতাব্দীতে রাজা রামপাল এই মন্দির নির্মাণ করেন বলে নীহাররঞ্জন রায়ের বাঙ্গালীর ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ আছে। এ গ্রন্থে আরও উল্লেখ আছে যে এ মন্দিরের অধিষ্ঠাতা দেবতা ছিলেন অবলোকিতেশ্বর, আর অধিষ্ঠাত্রী দেবী ছিলেন মহাতারা।[২]

এই বিহারটি প্রাচীন বাংলার শিক্ষা-দীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতে এ বিহারের দুইজন স্বনামধন্য পন্ডিত হলেন দানশীল ও বিভূতিচন্দ্র। প্রায় ষাটখানা গ্রন্থের তিব্বতী অনুবাদ করেন আচার্য দানশীল। রাজপুত্র বিভূতিচন্দ্র ছিলেন একাধারে গ্রন্থকার, টীকাকার, অনুবাদক ও সংশোধক। জগদ্দল বিহারের আচার্য মোক্ষকর গুপ্ত তর্কভাষা নামে বৌদ্ধ ন্যায়ের উপর একটি পুঁথি লিখেছিলেন। শুভকর গুপ্ত ,ধর্মাকর,প্রভৃতি মনীষী আচার্যরা কোন না কোন সময় এই মহাবিহারের অধিবাসী ছিলেন। কথিত আছে যে কাশ্মিরের প্রসিদ্ধ সাধু ও পন্ডিত সাক্য শ্রীভদ্র ১২০০ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন বিহার দর্শন করে জগদ্দল বিহারে এসেছিলেন। বাংলার জগদ্দল বিহারের বৌদ্ধ পন্ডিত বিদ্যাকর সুভাষিত রত্নকোষ নামে একটি কোষকাব্য সংকলন সমাপ্ত করেছিলেন। প্রাচীন বাংলার এই জ্ঞানসাধন কেন্দ্র আজ সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে এ স্থানটিতে খনন কাজ চলছে।[৩]

তথ্যসূত্র

  1. "আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান, পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা"http://archive.ittefaq.com.bd। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য); |publisher= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  2. UNESCO World Heritage website
  3. বিশ্বজিৎ মনি (১৭ এপ্রিল ২০১২)। "জগদ্দল, অগ্রপুরী, হলুদ বিহার হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক কীর্তি "নওগাঁর প্রাচীন নিদর্শন""http://www.dailyjanakantha.com/। দৈনিক জনকন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৪  |website= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ