মহেশখালী উপজেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
৭৬ নং লাইন: | ৭৬ নং লাইন: | ||
== কৃতি ব্যক্তিত== |
== কৃতি ব্যক্তিত== |
||
(শিক্ষানুরাগী রাজা, মহেশখালী।) |
*[[অজিত কুমার রায় বাহাদুর]] (শিক্ষানুরাগী রাজা, মহেশখালী।) |
||
# ডঃ বদিউল আলম, ভিসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। |
# ডঃ বদিউল আলম, ভিসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। |
১০:৫৭, ৩০ মার্চ ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
মহেশখালী উপজেলা | |
---|---|
স্থানাঙ্ক: ২১°৩৩′ উত্তর ৯১°৫৭′ পূর্ব / ২১.৫৫০° উত্তর ৯১.৯৫০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | কক্সবাজার জেলা |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৪০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ২২ ৪৯ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
মহেশখালী উপজেলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি দ্বীপ এবং স্বতন্ত্র উপজেলা; যা মহেশখালী দ্বীপ নামেও পরিচিত।
অবস্থান
উত্তর পূর্বে চকরিয়া উপজেলা, দক্ষিণ পূর্বে কক্সবাজার সদর উপজেলা, দক্ষিণ, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর পশ্চিমে কুতুবদিয়া উপজেলা।
উপজেলা সম্পর্কে
অধ্যাপক ড. সুনীতি ভূষণ কানুনগোর মতে, ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দের প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়।[১] একজন পর্তুগীজ ভ্রমণকারী আরাকান অঞ্চলে এই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তাছাড়া দ্বীপের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে উত্তর দক্ষিণমুখী পাহাড় এবং তার পাদদেশে প্রবাহিত চ্যানেল থাকার কারণে অনুমিত হয় যে, দ্বীপটি একসময় মূল ভূ-খন্ডের সাথে যুক্ত ছিলো। মহেশখালী উপজেলা আরো তিনটি ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো হলো: সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা। পান, মাছ, শুঁটকী, চিংড়ি, লবণ এবং মুক্তার উৎপাদন এই উপজেলাটিকে দিয়েছে আলাদা পরিচিতি।[২]
তবে উপজেলার উত্তর প্রান্তে জনতা বাজার নামক স্থানে মহেশখালী সেতু নির্মিত হওয়ায় মূল ভূ-খন্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে মহেশখালী। কোহেলিয়া নদীর উপর অন্য একটি সংযোগ সেতুর দ্বারা মূল মহেশখালীর সাথে যুক্ত হয়েছে উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়ন। এদিকে মহেশখালী চ্যানেল ধীরে ধীরে নাব্যতা হারাচ্ছে, নদীতে জেগে উঠছে চর। হয়ত একদিন নদীটি ভরাট হয়ে মূল ভূখন্ডের সাথে আবারো মিশে যাবে দ্বীপটি। তাছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ধলঘাটা ও মাতারবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিমে বিরাট চর জেগে উঠেছে (২০১০) যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠতে পারে।[২] তাই দ্বীপটি ধীরে ধীরে মূল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত হয়ে এর দ্বীপ উপাধি হারাতে পারে।
নামকরণ
দ্বীপটির নামকরণের ইতিহাস সুবিদিত নয়। কিংবদন্তী অনুসারে, ছোট মহেশখালীর তৎকালীন এক প্রভাবশালী বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ সিকদার, মাঝে মাঝেই পাহাড়ে হরিণ শিকার করতে যেতেন। একদিন হরিণ শিকার করতে গিয়ে সারা দিন এদিক-ওদিক ঘুরেও শিকারের সন্ধান না পেয়ে একটি গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ কিছু একটার শব্দে তার তন্দ্রা টুটে যায়। শব্দ অনুসরণ করে তিনি দেখতে পান যে, একটি গাভী একটি মসৃণ শিলাখন্ডের উপর বাট থেকে দুধ ঢালছে; এই গাভীটি তারই গোয়ালঘর থেকে কিছুদিন আগে হারিয়ে যায়। গাভী আর সেই সুন্দর শিলাখন্ডটি নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। সেদিন রাতেই তিনি স্বপ্নে দেখতে পান: এক মহাপুরুষ তাঁকে বলছেন যে, শিলাখন্ডটি একটি দেব বিগ্রহ। এ বিগ্রহ যেখান থেকে নিয়ে এসেছেন সেখানে রেখে তার উপর একটি মন্দির নির্মাণ করতে হবে। মন্দিরের নাম হবে আদিনাথ মন্দির। এ আদিনাথের (শিবের)[১] ১০৮ নামের মধ্যে "মহেশ" অন্যতম। আর এই মহেশ নাম হতেই এই স্থান পরবর্তীতে মহেশখালী হয়ে যায়।[১][২]
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
মহেশখালী উপজেলায় ১ টি পৌরসভা এবং ৮ টি ইউনিয়ন রয়েছে: মহেশখালী পৌরসভা এবং বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, ধলঘাটা, হোয়ানক, কালারমারছড়া, মাতারবাড়ী, শাপলাপুর ও কুতুবজোম ইউনিয়ন।
বিবরণ
মহেশখালী দ্বীপের আয়তন ৩৬২.১৮ বর্গ কিলোমিটার, এবং এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ। কক্সবাজার থেকে দ্বীপটির দূরত্ব ১২ কিলোমিটার।[১] উপজেলার উত্তর-পূর্বে চকরিয়া উপজেলা, দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজার সদর, দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, উত্তর-পশ্চিমে কুতুবদিয়া উপজেলা। উপজেলার উত্তর-দক্ষিণমুখী মহেশখালী চ্যানেল দ্বারা মূল ভূ-খন্ড থেকে আলাদা হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর মহেশখালী থানা উপজেলায় পরিবর্তিত হয়।[২]
ইতিহাস
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীতি ভূষণ কানুনগো তাঁর রচিত গ্রন্থ "চট্টগ্রামে মগশাসন" গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ চট্টগ্রামে আরাকানী শাসন শুরু হলে মূল ভূ-খন্ড থেকে পৃথক থাকার কারণে মহেশখালী দ্বীপের উপর শাসকগোষ্ঠীর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলোনা। আর তাই এই দ্বীপাঞ্চলে গড়ে ওঠেনি সুশৃঙ্খল কোনো জাতির আবাস। এখানে একটি সংঘবদ্ধ জলদস্যুদের আবাসস্থল গড়ে ওঠে বলে তিনি অনুমান করেছেন। মূলত কোম্পানী শাসনামলেই মহেশখালী দ্বীপটি ইংরেজদের নজরে পড়ে। সাগরের মাঝখানে অবস্থিত মনোরম দ্বীপটি, ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ওয়ারলেজ নামক জনৈক ইংরেজ কর্মচারী, বন্দোবস্তি নেবার জন্য আবেদন করলে ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে, দ্বীপটি বন্দোবস্তি সংক্রান্ত দলিল সম্পাদিত হয়।[২]
১৭৮২ সালের ২০ নভেম্বর রবার্ট ওয়ারলেজ চট্টগ্রামের ইংরেজ কালেক্টর চার্লস ক্রাফটস-এর কাছে ২০,০০০ টাকার বিনিময়ে দ্বীপটি হস্তান্তর করেন। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে দুরত্ব আর যোগাযোগের অসুবিধার কারণে জনাব ক্রাফটস স্থানীয় দেওয়ান কালিচরণ কানুনগোর কাছে ৪০,০০০ টাকার বিনিময়ে দ্বীপটির মালিকানা হস্তান্তর করেন। কালিচরণ কানুনগো নিঃসন্তান ছিলেন। চন্ডিচরণ নামক এক ছেলেকে তিনি দত্তক পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে কালিচরণ কানুনগোর মৃত্যু হলে তাঁর স্ত্রী প্রভাবতী মহেশখালীর মালিক হোন।[২]
প্রভাবতির জীবদ্দশায় চন্ডিচরণ শরৎচন্দ্র নামক এক পুত্রসন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করলে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় শরৎচন্দ্র অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকায় প্রভাবতীর নামে বন্দোবস্ত হয়। পরে শরৎচন্দ্র মহেশখালী দ্বীপের প্রজাবৎসল জমিদার হোন। তিনিই জনসাধারণের পানীয় জলের অভাব মোচনের জন্য বিশাল একটি দিঘি খনন করেন (যা বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের সম্মুখে অবস্থিত)। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে নুরুল আমিন সরকার কর্তৃক জমিদারী প্রথার বিলোপ ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত শ্রীযুক্ত বাবু অজিত কুমার রায় বাহাদুর চৌধুরী মহেশখালী দ্বীপের জমিদার ছিলেন। বাবুদের মূল বাড়ী চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার পড়ৈকোড়া গ্রামে। অজিত কুমার রায় বাহাদুর প্রজাবৎসল ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন।[২]
মহেশখালীর ইতিহাসের সাথে সাথে 'নাথ' সম্প্রদায়ের ইতিহাস উল্লেখযোগ্য। নাথ সম্প্রদায়ের প্রথম গুরু মীন নাথের শীষ্য গোরক্ষ নাথ-এর আবির্ভাব কাল একাদশ শতাব্দীতে এবং তাঁর রচিত গ্রন্থ "গোরক্ষ বিজয়" প্রকাশিত হয় ষোড়শ শতাব্দীতে। নাথ সম্প্রদায়ের চারজন সিদ্ধগুরু মীননাথ, গোরক্ষনাথ, হাড়িপা এবং কাহ্নপার প্রভাব বাংলা ছাড়িয়ে নেপাল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিলো। কাজেই বাংলার প্রান্তে মহেশখালীতে নাথ সম্প্রদায়ের প্রভাবে মন্দির নির্মিত হওয়া স্বাভাবিক। বাংলাদেশের দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, বগুড়া অঞ্চলে গোরক্ষনাথের শিব মন্দির রয়েছে। দক্ষিণ প্রান্তে এটিই একমাত্র মন্দির। মন্দিরের অনতিদুর একটি বাজারের নাম গোরকঘাটা বাজার। কাজেই এ মন্দিরে গোরক্ষনাথ এবং তাঁর শিষ্যদের যাতায়াত ছিল বলে অনুমান করা যায়। আদিনাথ মন্দিরের লোক কাহিনীতে নেপাল রাজা, নুর মোহাম্মদ সিকদারের উল্লেখ আছে। গোরক্ষ বিজয়েও কবীন্দ্র দাস, শ্যামদাস, ভীমদাসসহ ফয়জুল্লাহ, সুকুর মুহাম্মদ প্রভৃতি মুসলমানের নামও পাওয়া যায়। কাজেই হিন্দু-মুসলমান মিলনের সেতু হিসাবে আবির্ভাব ঘটে এবং নাথ সম্প্রদায়ের প্রভাবে মহেশখালীতে আদিনাথ মন্দির নির্মিত হওয়া স্বাভাবিক বলেই মনে হয়।[২]
লোককাহিনী অনুসারে মহেশখালীর মৈনাক পাহাড়ে শিবের আবির্ভাব ঘটে ত্রেতাযুগে। রাম-রাবনের যুদ্ধের সময় শিবের আশির্বাদ লাভের জন্য রাক্ষসরাজ রাবন কৈলাশে যান শিবকে আনার জন্য। দেবতাদের অনুরোধে শিব রাবনকে শর্ত দেন যে, বিরতিহীনভাবে নিয়ে যেতে পারলে শিব লংকায় যেতে রাজি আছেন। শর্ত মেনে শিবকে মাথায় নিয়ে রাবন যাত্রা শুরু করে। কিন্তু প্রস্রাবের জন্য মৈনাক পাহাড়ে রাবনের যাত্রাবিরতি ঘটে। এতে শর্তভঙ্গ হওয়ায় শিব, মৈনাক পাহাড়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। লোককাহিনী মতে, একদিন স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে এক নাগা সন্ন্যাসীর সহায়তায় নেপাল থেকে পাথরের অষ্টভূজা দুর্গামূর্তি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সমুদ্রের মধ্যে মৈনাক পর্বতের অবস্থান বলে রামায়নে উল্লেখ আছে। মহেশখালী দ্বীপ এবং সমুদ্রের মাঝখানে আদিনাথ পাহাড়টির নাম মৈনাক পাহাড়। আদিনাথ মন্দিরটি সমুদ্রস্তর থেকে ২৮৮ ফুট উঁচু মৈনাক পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত।[২]
নাথ সম্প্রদায়ের ইতিহাস থেকে জানা যায় হিন্দু-মুসলমানদের সেতুবন্ধন হিসেবে মন্দিরটি ইতিহাসের সাক্ষী। উপমহাদেশের আদি তীর্থস্থান হিসেবে প্রত্যেক হিন্দু এখানে পূজা করে। তাই মন্দিরের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মন্দির কমপ্লেক্সে আছে একটি মসজিদ ও একটি রাখাইন বৌদ্ধ বিহার। তাই অনেকে মন্দিরটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক মনে করেন। প্রতিবছর শিব চতুর্দশী উপলক্ষে হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে এ মন্দিরে। এ উপলক্ষে ১০/১৫ দিন মেলা বসে। প্রাকৃতিক পরিবেশে মন্দিরটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। মন্দিরের তিনদিকেই সমুদ্র।[২]
জনসংখ্যা
মহেশখালি উপজেলায় ভূস্বামী, প্রান্তিক চার্ষ, বর্গাচাষী কৃষকেরা ছাড়াও রয়েছে ভূমিহীন কৃষকেরাও। মোট উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িতদের পরিসংখ্যান হলো: লবণচাষী ৫৫%, কৃষি ২১.১৭%, পানচাষী ১৫%, ব্যবসায়ী ৬.৯০% এবং চাকরিজীবি ০.৯৭%।[২]
শিক্ষা
অজিত কুমার রায় বাহাদুর মহেশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং বিদ্যালয়ের জন্য ৩২ একর জমি দান করেছিলেন। এই বিদ্যালয়টি মহেশখালী উপজেলায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়।[২] এছাড়া রয়েছে তিনটি কলেজও।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
লোকসংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
মহেশখালীরর লোকসংস্কৃতি ও লোক উৎসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আদিনাথ মেলা। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের কোনো একদিন থেকে শুরু হয়ে প্রায় দশ-পনেরো দিন পর্যন্ত চলে এই মেলা। মেলায় দেশীয় পণ্যের পসরা বসে। মাটির কিংবা বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসের মধ্যে হাঁড়ি পাতিল, কলসি, হাতা, ধুছনী, লোহার তৈরি দা-বটি ইত্যাদি পণ্য মেলাতে কেনাবেচা হয়। মেলা উপলক্ষে নাটক, যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।[২]
সম্পদরাজি
লবন, পান, চিংড়ী, প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ বালি।
জীববৈচিত্র্য
মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও এখানে এক সময় হাতি, বাঘ, হরিণ, বানর, ভালুক, বিভিন্ন প্রকারের সাপ, পরিযায়ী পাখি, দেশীয় পাখিসহ বিভিন্ন প্রকারের জীবজন্তুর চারণভূমি ছিল মহেশখালী। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস আর এক শ্রেণীর অসাধু শিকারীর চোরাদৃষ্টিতে মহেশখালীর জীব বৈচিত্র্য হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে (২০১০) হরিণ, বানর, গুটিকয়েক সাপ আর শীতের মৌসুমে অল্প কিছু পরিযায়ী পাখি চোখে পড়ে।[২]
অন্যান্য
দ্বীপটি লবণ ও পান ব্যবসায়ের প্রধান কেন্দ্র। সামুদ্রিক মাছ ধরা, চিংড়ি চাষ করা এবং তা প্রক্রিয়াজাতকরণ এই দ্বীপরে একটি বিকাশমান শিল্প। পান চাষ এখানকার ঐতিহ্যবাহী পেশা ও ব্যবসা। শুষ্ক মৌসুমে সামুদ্রিক শুঁটকির জন্য দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীদের ভীড় জমতে দেখা যায় এই দ্বীপে।[২]
অবকাঠামো
যাতায়াত ও যোগাযোগ
মহেশখালী উপজেলার উত্তর দিক থেকে দক্ষিণে উপজেলা পর্যন্ত ২টি পাকা সড়ক রয়েছে। বদরখালী ব্রীজ নির্মাণের ফলে মহেশখালী মুল ভূখন্ডের সাথে সরাসরি যুক্ত হয়েছে। বদরখালী ব্রীজ থেকে উপজেলা হেড কোয়ার্টার পর্যন্ত সড়কপথের দুরুত্ব ২৫ কিলোমিটার। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৬৮টি সড়কের মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২৮২ কিলোমিটার। তার মাঝে পাকাসড়ক ৯১ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক ১৯১ কিলোমিটার। ফলে সড়কপথে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে মহেশখালীতে যাতায়াত সম্ভব। সড়কপথে জীপ, অটোরিক্সা, ট্রাক, টেম্পো চলাচল করে থাকে। জলপথের মধ্যে কক্সবাজার হতে মহেশখালী পর্যন্ত ৭কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলটি উল্লেখযোগ্য। জলপথে মালবাহী ট্রলার, স্পীডবোট, যাত্রীবাহী লঞ্চ, নৌকা চলাচল করে থাকে। মহেশখালীতে ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপিত হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ সম্ভবপর। বাংলাদেশের প্রায় সকল মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে মহেশখালী দ্বীপ।[২]
উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী
১৯৯১-এর ঘূর্ণিঝড়
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৯ এপ্রিল দ্বীপটির ইতিহাসের সবচেয়ে শোকাবহ দিন। এদিনে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়েছিলো মহেশখালীর দ্বীপ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। কত লোক প্রাণ হারিয়েছে কিংবা কত পরিবার সাগরের বুকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আজো পাওয়া যায়নি। এ বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়কালীন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২০০-২৫০ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাসে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬.১ মিটার। এ ঘূর্ণিঝড় কেড়ে নেয় উপকুলের লক্ষ লক্ষ মানুষ, পশু-পাখির জীবন। সরকারি হিসেবে কক্সবাজার জেলায় এসময় নিহত হয় ৫০,০০০ মানুষ। শুধু প্রাণহানী নয়, জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা এতই ব্যাপক ছিলো যে, অসংখ্য বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জনপথ, বিদ্যালয়, মাদ্রাসা বিধ্বস্ত হয়ে যায়।[২]
কৃতি ব্যক্তিত
- অজিত কুমার রায় বাহাদুর (শিক্ষানুরাগী রাজা, মহেশখালী।)
- ডঃ বদিউল আলম, ভিসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
- ডঃ সলিম উল্লাহ খান, সমাজ বিজ্ঞানী ও লেখক।
- ডঃ আনসারুল করিম, পরিবেশ বিজ্ঞানী।
- কাওসার চৌধুরী, বিশিষ্ট নাট্যকার।
- সাদাত উল্লাহ খান, নৃ বিজ্ঞানী।
- ডঃ রশিদ রাশেদ, বিশিষ্ট রপ্তানীকারক।
- ডঃ অধ্যাপক কাজ্বী দ্বীন মোহাম্মদ, সমাজ সেবক।
- আব্দুস সামাদ ভূঁইয়া, বুদ্ধিজীবি ও শিক্ষানুরাগী।
রাজাকারগন
১/ মো: রশিদ বি.এ, সাবেক এম.পি > রশিদ মিয়া ২/ সালামত উল্লাহ খান ৩/ মৌলভী জাকারিয়া সিকদার ৪/ বাদশা মিয়া ৫/ সামসুদোহা ৬/ হাবিবুর রহমান
গ্যালারি
-
তীর থেকে মহেশখালীর দৃশ্য
-
মহেশখালীতে বৌদ্ধ মন্দির
-
আদিনাথ মন্দিরের সম্মুখভাগ
-
আদিনাথ মন্দিরের প্রবেশ পথ
-
মহেশখালী ট্রলার ঘাট
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ গ ঘ "মহেশখালী দ্বীপ"। কালের কণ্ঠ। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ। ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ, ২০১০। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ মোঃ জামাল উদ্দিন; ফরিদুল আলম দেওয়ান ([অজানা])। "সাগর-পাহাড় সহাবস্থান যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য" (প্রিন্ট)। দৈনিক আজাদী। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৪, ২০১০। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)