দীপাবলি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৩১ নং লাইন: ৩১ নং লাইন:
"দীপাবলি" নামটির অর্থ "প্রদীপের সমষ্টি"।<ref name="Monier">{{cite book|last=[[Monier Monier-Williams]]|title=Sanskrit-English Dictionary|location=Entry for दीप|page=481}}</ref> এই দিন হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোটো মাটির প্রদীপ জ্বালেন। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক।<ref name="Demon">{{cite book|url = http://books.google.com/?id=8HhVcspIBU4C&pg=PA179&dq=lamps+kept+on+diwali+lakshmi+evil+spirit#v=fjhfgyuiuyuiyuuiyii99wtwtyeryyywruiuhyuiyy&q&f=false|title = Invisible River: Sir Richard's Last Mission|first=Zak|last=Vera|quote=First Diwali day called ''Dhanteras'' or wealth worship. We perform Laskshmi-Puja in evening when clay diyas lighted to drive away shadows of evil spirits.|accessdate = 26 October 2011|isbn = 978-1-4389-0020-9|date = 2010-02}}</ref> বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে [[লক্ষ্মী]] আসেন বলে উত্তর ভারতীয় হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। বাংলার দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই উৎসব সাড়ম্বরে আলোকসজ্জা সহকারে পালিত হয়। তবে এই পূজা প্রাচীন নয়। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধিগ্রন্থে এই পূজার সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতকে তাঁর সকল প্রজাকে শাস্তির ভীতিপ্রদর্শন করে কালীপূজা করতে বাধ্য করেন। সেই থেকে নদিয়ায় কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্রও বহু অর্থব্যয় করে কালীপূজার আয়োজন করতেন। অমঙ্গল বিতাড়নের জন্য আতসবাজিও পোড়ানো হয়।<ref name="Firecracker1">{{cite book|url = http://books.google.com/?id=ni2z5Z35htkC&pg=PA54&dq=lamps+diwali+evil+spirits#v=onepage&q=lamps%20diwali%20evil%20spirits&f=false|title = Big Book of Canadian Celebrations|first=Ruth|last=Solski|publisher=S&S Learning Materials|quote=Fireworks and firecrackers are set off to chase away evil spirits, so it is a noisy holiday too.|accessdate = 26 October 2011|year = 2008|isbn = 978-1-55035-849-0}}</ref><ref name="Firecracker2">{{cite book|url = http://books.google.com/?id=GErOyV7FBNUC&pg=PA175&dq=lamps+diwali+evil+spirits#v=onepage&q=lamps%20diwali%20evil%20spirits&f=false|title = Asian American History|first=Valerie|last=Petrillo|publisher=Chicago Review Press|quote=There are firecrackers everywhere to scare off evil spirits and contribute to the festive atmosphere.|accessdate = 26 October 2011|isbn = 978-1-55652-634-3|date = 28 May 2007}}</ref><ref name="Firecracker3">{{cite book|url = http://books.google.com/?id=TRyb8XqB7dEC&pg=SA9-PA1&dq=lamps+diwali+evil+spirits#v=onepage&q=lamps%20diwali%20evil%20spirits&f=false|title = The International Holiday & Festival Primer|first=David|last=DeRocco|first2=Joan|last2=Dundas|coauthor=Ian Zimmerman|publisher=Full Blast Productions|quote=But as well as delighting the spectators, the fireworks are believed to chase away evil spirits.|accessdate = 26 October 2011|isbn = 978-1-895451-24-5|year = 1996}}</ref> বিশেষত উত্তর ভারতে দীপাবলির সময় নতুন পোশাক পড়া, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণের প্রথাও আছে।
"দীপাবলি" নামটির অর্থ "প্রদীপের সমষ্টি"।<ref name="Monier">{{cite book|last=[[Monier Monier-Williams]]|title=Sanskrit-English Dictionary|location=Entry for दीप|page=481}}</ref> এই দিন হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোটো মাটির প্রদীপ জ্বালেন। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক।<ref name="Demon">{{cite book|url = http://books.google.com/?id=8HhVcspIBU4C&pg=PA179&dq=lamps+kept+on+diwali+lakshmi+evil+spirit#v=fjhfgyuiuyuiyuuiyii99wtwtyeryyywruiuhyuiyy&q&f=false|title = Invisible River: Sir Richard's Last Mission|first=Zak|last=Vera|quote=First Diwali day called ''Dhanteras'' or wealth worship. We perform Laskshmi-Puja in evening when clay diyas lighted to drive away shadows of evil spirits.|accessdate = 26 October 2011|isbn = 978-1-4389-0020-9|date = 2010-02}}</ref> বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে [[লক্ষ্মী]] আসেন বলে উত্তর ভারতীয় হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। বাংলার দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই উৎসব সাড়ম্বরে আলোকসজ্জা সহকারে পালিত হয়। তবে এই পূজা প্রাচীন নয়। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধিগ্রন্থে এই পূজার সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতকে তাঁর সকল প্রজাকে শাস্তির ভীতিপ্রদর্শন করে কালীপূজা করতে বাধ্য করেন। সেই থেকে নদিয়ায় কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্রও বহু অর্থব্যয় করে কালীপূজার আয়োজন করতেন। অমঙ্গল বিতাড়নের জন্য আতসবাজিও পোড়ানো হয়।<ref name="Firecracker1">{{cite book|url = http://books.google.com/?id=ni2z5Z35htkC&pg=PA54&dq=lamps+diwali+evil+spirits#v=onepage&q=lamps%20diwali%20evil%20spirits&f=false|title = Big Book of Canadian Celebrations|first=Ruth|last=Solski|publisher=S&S Learning Materials|quote=Fireworks and firecrackers are set off to chase away evil spirits, so it is a noisy holiday too.|accessdate = 26 October 2011|year = 2008|isbn = 978-1-55035-849-0}}</ref><ref name="Firecracker2">{{cite book|url = http://books.google.com/?id=GErOyV7FBNUC&pg=PA175&dq=lamps+diwali+evil+spirits#v=onepage&q=lamps%20diwali%20evil%20spirits&f=false|title = Asian American History|first=Valerie|last=Petrillo|publisher=Chicago Review Press|quote=There are firecrackers everywhere to scare off evil spirits and contribute to the festive atmosphere.|accessdate = 26 October 2011|isbn = 978-1-55652-634-3|date = 28 May 2007}}</ref><ref name="Firecracker3">{{cite book|url = http://books.google.com/?id=TRyb8XqB7dEC&pg=SA9-PA1&dq=lamps+diwali+evil+spirits#v=onepage&q=lamps%20diwali%20evil%20spirits&f=false|title = The International Holiday & Festival Primer|first=David|last=DeRocco|first2=Joan|last2=Dundas|coauthor=Ian Zimmerman|publisher=Full Blast Productions|quote=But as well as delighting the spectators, the fireworks are believed to chase away evil spirits.|accessdate = 26 October 2011|isbn = 978-1-895451-24-5|year = 1996}}</ref> বিশেষত উত্তর ভারতে দীপাবলির সময় নতুন পোশাক পড়া, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণের প্রথাও আছে।


ধনতেরাসের দিন অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অর্থবর্ষের সূচনা হয়; লোকজন নতুন বর্তন, বাসন, গয়না প্রভৃতিও কিনে থাকেন এই দিনে। তবে বেশির ভাগ বাঙালি ব্যবসায়ীদের অর্থবর্ষের সূচনা হয় [[পহেলা বৈশাখ|পয়লা বৈশাখে]]। দ্বিতীয় দিনটিকে বলে [[ভূত চতুর্দশী]]। এই দিনে বাঙালিরা বাড়ির চোদ্দোটা এঁদো কোণায় চোদ্দোটা প্রদীপ জ্বালিয়ে কালো মুছিয়ে আলোকিত করে তুলেন বাড়িটাকে। কথায় আছে যে এমনটা করলে ভূতপ্রেত পরিবার আর স্বজনদের কাছ থেকে দূরে সরে থাকবে; এমনটাও লোককথায় শোনা যায় যে এই প্রদীপসজ্জার মাধ্যমে পরিবারের পিতৃপুরুষদের অনুষ্ঠানে পদার্পণ করার জন্য নেমন্তন্ন পাঠানো হয়, যাতে ওঁরা মায়ের বাৎসরিক আগমনে উপস্থিত হয়ে সবাইকে শুভাশীশ দিয়ে নিজেরা মায়ের আশীর্ব্বাদে মোক্ষ লাভ করবেন। তৃতীয় দিন কার্তিক অমাবস্যায় যেখানে [[উত্তর ভারত|উত্তর ভারতে]] লক্ষ্মীর পূজা চলছে, [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গে]] দারুণ জাঁকজমকে ঘটা করে পালন করা হয় [[কালীপূজা]]। অবস্য সেদিন আদি পশ্চিমবঙ্গ বাসিন্দারা, ঘটিরা, বাড়িতে লক্ষ্মীর পূজাও করে থাকেন। তবে আদি বাংলাদেশি হিন্দুদের, বাঙালদের, এই নিয়ম নেই; তা অনেকে বাড়িতেও কালী পুজো করেন, যদিও এই পুজোর বারোয়ারি ভাবে পালন হওয়ার প্রচলন বেশি। কদাচিৎ কালীপুজোর দিন আর দেওয়ালির দিন পৃথকও হতে পারে; দেওয়ালির তারিখটা একদিন পরে কিংবা আগে পড়া সম্ভব। কেননা কালীপূজার লগ্ন অমাবস্যার মাঝরাত্রিতে ঠিক হয়, আবার দীপাবলির লক্ষ্মী পূজার লগ্ন অমাবস্যার সন্ধ্যেতে নিশ্চিত করা হয়, তাই পুজোর লগ্ন অনুযায়ী দুই পুজোর দিনে মাঝে মাঝে অন্তর ঘটে থাকে। দেওয়ালির দিনে প্রদীপের আলোয় বাড়ি-বাড়ি ঝকমক করে ওঠে। নানান রঙের বাজিতে আকাশটাও রীতিমত চকচক করে থাকে। দীপাবলি সারি-সারি প্রদীপের আলোকে স্বর্গের দেবতাকে মর্তের কুটিরে বরণ করে নেবার উত্সব। চতুর্থ দিন কার্তিক শুক্লা প্রতিপদ।এই দিন [[বৈষ্ণবধর্ম|বৈষ্ণবরা]] [[গোবর্ধন পূজা]] করেন। পঞ্চম দিন যমদ্বিতীয়া বা [[ভাইফোঁটা]]। এই দিন বোনেরা তাদের ভাইদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে।
ধনতেরাসের দিন অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অর্থবর্ষের সূচনা হয়; লোকজন নতুন বর্তন, বাসন, গয়না প্রভৃতিও কিনে থাকেন এই দিনে। তবে বেশির ভাগ বাঙালি ব্যবসায়ীদের অর্থবর্ষের সূচনা হয় [[পহেলা বৈশাখ|পয়লা বৈশাখে]]। দ্বিতীয় দিনটিকে বলে [[ভূত চতুর্দশী]]। এই দিনে বাঙালিরা বাড়ির চোদ্দোটা এঁদো কোণায় চোদ্দোটা প্রদীপ জ্বালিয়ে কালো মুছিয়ে আলোকিত করে তুলেন বাড়িটাকে। কথায় আছে যে এমনটা করলে ভূতপ্রেত পরিবার আর স্বজনদের কাছ থেকে দূরে সরে থাকবে; এমনটাও লোককথায় শোনা যায় যে এই প্রদীপসজ্জার মাধ্যমে পরিবারের পিতৃপুরুষদের অনুষ্ঠানে পদার্পণ করার জন্য নেমন্তন্ন পাঠানো হয়, যাতে ওঁরা মায়ের বাৎসরিক আগমনে উপস্থিত হয়ে সবাইকে শুভাশীশ দিয়ে নিজেরা মায়ের আশীর্ব্বাদে মোক্ষ লাভ করবেন। তৃতীয় দিন কার্তিক অমাবস্যায় যেখানে [[উত্তর ভারত|উত্তর ভারতে]] লক্ষ্মীর পূজা চলছে, [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গে]] দারুণ জাঁকজমকে ঘটা করে পালন করা হয় [[কালীপূজা]]। অবস্য সেদিন আদি পশ্চিমবঙ্গ বাসিন্দারা, ঘটিরা, বাড়িতে লক্ষ্মীর পূজাও করে থাকেন। তবে আদি বাংলাদেশি হিন্দুদের, বাঙালদের, এই নিয়ম নেই; তা অনেকে বাড়িতেও কালী পুজো করেন, যদিও এই পুজোর বারোয়ারি ভাবে পালন হওয়ার প্রচলন বেশি। কদাচিৎ কালীপুজোর দিন আর দেওয়ালির দিন পৃথকও হতে পারে; দেওয়ালির তারিখটা একদিন পরে কিংবা আগে পড়া সম্ভব। কেননা কালীপূজার লগ্ন অমাবস্যার মাঝরাত্রিতে ঠিক হয়, আবার দীপাবলির লক্ষ্মী পূজার লগ্ন অমাবস্যার সন্ধ্যেতে নিশ্চিত করা হয়, তাই পুজোর লগ্ন অনুযায়ী দুই পুজোর তারিখে মাঝে মাঝে অন্তর ঘটে থাকে। দেওয়ালির দিনে প্রদীপের আলোয় বাড়ি-বাড়ি ঝকমক করে ওঠে। নানান রঙের বাজিতে আকাশটাও রীতিমত চকচক করে থাকে। দীপাবলি সারি-সারি প্রদীপের আলোকে স্বর্গের দেবতাকে মর্তের কুটিরে বরণ করে নেবার উত্সব। চতুর্থ দিন কার্তিক শুক্লা প্রতিপদ। এই দিন [[বৈষ্ণবধর্ম|বৈষ্ণবরা]] [[গোবর্ধন পূজা]] করেন। পঞ্চম দিন যমদ্বিতীয়া বা [[ভাইফোঁটা]]। এই দিন বোনেরা তাদের ভাইদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে।


== পাদটীকা ==
== পাদটীকা ==

১২:৩৭, ১০ মার্চ ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

দীপাবলি
উত্তর ভারতে দীপাবলি উপলক্ষ্যে রঙিন গুঁড়ো দিয়ে দেওয়া রঙ্গোলি আলপনা
অন্য নামদেওয়ালি, আলোর উৎসব, দীপোত্সব, দীপান্বিতা, আলোকোত্সব
পালনকারীহিন্দু, শিখজৈন (বিশ্বজনীন); ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মরিশাস, গুয়ানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, সুরিনাম, মালয়েসিয়া, সিঙ্গাপুরফিজি (জাতীয় ছুটি)
ধরনধর্মীয়
উদযাপনপ্রদীপ ও মোমবাতি দিয়ে বাড়ি সাজানো, আতসবাজি, মিষ্টি ও উপহার বিতরণ ,
পালনপ্রার্থনা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান
শুরুধনতেরাস/ধনত্রয়োদশী
সমাপ্তিভাইফোঁটা
তারিখহিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে নির্ধারিত হয়
দীপাবলির রাতে প্রদীপসজ্জা
দীপাবলির রাতে আলোকমালার প্রতিবিম্ব

দীপাবলি বা দেওয়ালি[১] হল একটি পাঁচ দিন-ব্যাপী হিন্দু উৎসব[২] আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরাস অথবা ধনত্রয়োদশী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয়। কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হয়। নবরাত্রি উৎসব অথবা বাঙালিদের দুর্গোৎসব শেষ হওয়ার ১৮ দিন পর দীপাবলি শুরু হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বরের মধ্যে দীপাবলি অনুষ্ঠিত হয়।

দীপাবলি ভারত,[৩] নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মরিশাস, গুয়ানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, সুরিনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিজিতে একটি সরকারি ছুটির দিন।

হিন্দুদের কাছে, দীপাবলি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিন সব হিন্দুরা বাড়িতে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। বাংলা, আসাম ও উড়িশাতে এই দিনটি কালীপূজা হিসেবে উদযাপন করা হয়। ভারতীয় সমাজের দৃঢ় বিশ্বাস 'দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন' বা 'ন্যায়ের কাছে অন্যায়ের পরাজয়' উক্তি গুলোয়। দীপাবলির মাধ্যমে উপনিষদের আজ্ঞায় এটা চরিতার্থ হয়ে ওঠে, "অসতো মা সৎ গময়, তমসো মা জ্যোতির্গময়, মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।" অর্থাৎ "অসৎ হইতে সত্যে লইয়া যাও, অন্ধকার হইতে জ্যোতিতে লইয়া যাও, মৃত্যু হইতে অমরত্বে লইয়া যাও।" উত্তর ভারতীয় হিন্দুদের মতে দীপাবলির দিনেই শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের নির্বাসনের পর অযোধ্যা ফেরেন। নিজের পরমপ্রিয় রাজাকে ফিরে পেয়ে অযোধ্যাবাসীরা ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে সাজিয়ে তোলেন তাঁদের রাজধানীকে। এই দিনটিতে পূর্বভারত বাদে সম্পূর্ণ ভারতবর্ষে লক্ষ্মী-গণেশের পুজোর নিয়ম আছে। জৈন মতে, ৫২৭ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মহাবীর দীপাবলির দিনেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেছিলেন।[৪][৫] ১৬১৯ খ্রিস্টাব্দে শিখদের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ ও ৫২ জন রাজপুত্র দীপাবলির দিন মুক্তি পেয়েছিলেন বলে শিখরাও এই উৎসব পালন করেন।[৬] আর্য সমাজ এই দিনে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুদিন পালন করে। তারা এই দিনটি "শারদীয়া নব-শস্যেষ্টি" হিসেবেও পালন করেন।

"দীপাবলি" নামটির অর্থ "প্রদীপের সমষ্টি"।[৭] এই দিন হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোটো মাটির প্রদীপ জ্বালেন। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক।[৮] বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে লক্ষ্মী আসেন বলে উত্তর ভারতীয় হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। বাংলার দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই উৎসব সাড়ম্বরে আলোকসজ্জা সহকারে পালিত হয়। তবে এই পূজা প্রাচীন নয়। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধিগ্রন্থে এই পূজার সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতকে তাঁর সকল প্রজাকে শাস্তির ভীতিপ্রদর্শন করে কালীপূজা করতে বাধ্য করেন। সেই থেকে নদিয়ায় কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্রও বহু অর্থব্যয় করে কালীপূজার আয়োজন করতেন। অমঙ্গল বিতাড়নের জন্য আতসবাজিও পোড়ানো হয়।[৯][১০][১১] বিশেষত উত্তর ভারতে দীপাবলির সময় নতুন পোশাক পড়া, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণের প্রথাও আছে।

ধনতেরাসের দিন অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অর্থবর্ষের সূচনা হয়; লোকজন নতুন বর্তন, বাসন, গয়না প্রভৃতিও কিনে থাকেন এই দিনে। তবে বেশির ভাগ বাঙালি ব্যবসায়ীদের অর্থবর্ষের সূচনা হয় পয়লা বৈশাখে। দ্বিতীয় দিনটিকে বলে ভূত চতুর্দশী। এই দিনে বাঙালিরা বাড়ির চোদ্দোটা এঁদো কোণায় চোদ্দোটা প্রদীপ জ্বালিয়ে কালো মুছিয়ে আলোকিত করে তুলেন বাড়িটাকে। কথায় আছে যে এমনটা করলে ভূতপ্রেত পরিবার আর স্বজনদের কাছ থেকে দূরে সরে থাকবে; এমনটাও লোককথায় শোনা যায় যে এই প্রদীপসজ্জার মাধ্যমে পরিবারের পিতৃপুরুষদের অনুষ্ঠানে পদার্পণ করার জন্য নেমন্তন্ন পাঠানো হয়, যাতে ওঁরা মায়ের বাৎসরিক আগমনে উপস্থিত হয়ে সবাইকে শুভাশীশ দিয়ে নিজেরা মায়ের আশীর্ব্বাদে মোক্ষ লাভ করবেন। তৃতীয় দিন কার্তিক অমাবস্যায় যেখানে উত্তর ভারতে লক্ষ্মীর পূজা চলছে, পশ্চিমবঙ্গে দারুণ জাঁকজমকে ঘটা করে পালন করা হয় কালীপূজা। অবস্য সেদিন আদি পশ্চিমবঙ্গ বাসিন্দারা, ঘটিরা, বাড়িতে লক্ষ্মীর পূজাও করে থাকেন। তবে আদি বাংলাদেশি হিন্দুদের, বাঙালদের, এই নিয়ম নেই; তা অনেকে বাড়িতেও কালী পুজো করেন, যদিও এই পুজোর বারোয়ারি ভাবে পালন হওয়ার প্রচলন বেশি। কদাচিৎ কালীপুজোর দিন আর দেওয়ালির দিন পৃথকও হতে পারে; দেওয়ালির তারিখটা একদিন পরে কিংবা আগে পড়া সম্ভব। কেননা কালীপূজার লগ্ন অমাবস্যার মাঝরাত্রিতে ঠিক হয়, আবার দীপাবলির লক্ষ্মী পূজার লগ্ন অমাবস্যার সন্ধ্যেতে নিশ্চিত করা হয়, তাই পুজোর লগ্ন অনুযায়ী দুই পুজোর তারিখে মাঝে মাঝে অন্তর ঘটে থাকে। দেওয়ালির দিনে প্রদীপের আলোয় বাড়ি-বাড়ি ঝকমক করে ওঠে। নানান রঙের বাজিতে আকাশটাও রীতিমত চকচক করে থাকে। দীপাবলি সারি-সারি প্রদীপের আলোকে স্বর্গের দেবতাকে মর্তের কুটিরে বরণ করে নেবার উত্সব। চতুর্থ দিন কার্তিক শুক্লা প্রতিপদ। এই দিন বৈষ্ণবরা গোবর্ধন পূজা করেন। পঞ্চম দিন যমদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা। এই দিন বোনেরা তাদের ভাইদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে।

পাদটীকা

  1. The New Oxford Dictionary of English (1998) ISBN 0-19-861263-X - p.540 "Diwali /dɪwɑːli/ (also Divali) noun a Hindu festival with lights...".
  2. "Diwali"Encyclopedia Britannica 
  3. "Indian Government Holiday Calendar"। National Portal of India। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১০ 
  4. Sharma, S.P.; Gupta, Seema (২০০৬)। Fairs and Festivals of India। Pustak Mahal। পৃষ্ঠা 79। আইএসবিএন 978-81-223-0951-5 
  5. Upadhye, A. N. (Jan.-Mar. 1982)। Cohen, Richard J., সম্পাদক। "Mahavira and His Teachings"। Journal of the American Oriental Society। American Oriental Society। 102 (1): 231–232। জেস্টোর 601199ডিওআই:10.2307/601199  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  6. "BBC - Religions - Sikhism: Diwali"bbc.co.uk 
  7. Monier Monier-WilliamsSanskrit-English Dictionary। Entry for दीप। পৃষ্ঠা 481। 
  8. Vera, Zak (2010-02)। Invisible River: Sir Richard's Last Missionআইএসবিএন 978-1-4389-0020-9। সংগ্রহের তারিখ 26 October 2011First Diwali day called Dhanteras or wealth worship. We perform Laskshmi-Puja in evening when clay diyas lighted to drive away shadows of evil spirits.  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  9. Solski, Ruth (২০০৮)। Big Book of Canadian Celebrations। S&S Learning Materials। আইএসবিএন 978-1-55035-849-0। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১১Fireworks and firecrackers are set off to chase away evil spirits, so it is a noisy holiday too. 
  10. Petrillo, Valerie (২৮ মে ২০০৭)। Asian American History। Chicago Review Press। আইএসবিএন 978-1-55652-634-3। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১১There are firecrackers everywhere to scare off evil spirits and contribute to the festive atmosphere. 
  11. DeRocco, David; Dundas, Joan (১৯৯৬)। The International Holiday & Festival Primer। Full Blast Productions। আইএসবিএন 978-1-895451-24-5। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১১But as well as delighting the spectators, the fireworks are believed to chase away evil spirits.  অজানা প্যারামিটার |coauthor= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ