কলি যুগ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{Distinguish|কালী}}
{{Hinduism}}
{{Hinduism}}
'''কলি যুগ''' ([[দেবনাগরী লিপি|দেবনাগরী]]: {{lang|sa|कलियुग}} {{IPA-sa|kəli juɡə|}}, আক্ষরিকভাবে "কালীর যুগ", বা "পাপের যুগ") হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, চার যুগের শেষ যুগ। অন্য যুগ গুলো হলো [[সত্য যুগ]], [[ত্রেতা যুগ]], ও [[দ্বাপর যুগ]]
'''কলি যুগ''' ([[দেবনাগরী লিপি|দেবনাগরী]]: {{lang|sa|कलियुग}} {{IPA-sa|kəli juɡə|}}, আক্ষরিকভাবে "কালীর যুগ", বা "পাপের যুগ") হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, চার যুগের শেষ যুগ। অন্য যুগ গুলো হলো [[সত্য যুগ]], [[ত্রেতা যুগ]], ও [[দ্বাপর যুগ]]


মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পুর্ণিমা তিথিতে শুক্রবারে কলিযুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ৪,৩২,০০০ বছর। পুণ্য এক ভাগ, পাপ তিন ভাগ। [[অবতার]] কল্কি। মানুষের আয়ু একশ বিশ বছর প্রায়। নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত নিজের শরীরের আয়তন। প্রাণ অন্নে। তীর্থ গঙ্গা। সব পাত্র ব্যবহার করা হয়। ধর্ম সংকোচিত। মানুষ তপস্যাহীন, সত্য থেকে দূরে অবস্থানরত। রাজনীতি কুটিল। শাসক ধনলোভী। ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন। পুরুষ স্ত্রীর অনুগত। পাপে অনুরক্ত। সৎ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি। দুষ্টের প্রভাব বৃদ্ধি। তারক ব্রহ্মনাম- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পুর্ণিমা তিথিতে শুক্রবারে কলিযুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ৪,৩২,০০০ বছর। পুণ্য এক ভাগ, পাপ তিন ভাগ। [[অবতার]] কল্কি। মানুষের আয়ু একশ বিশ বছর প্রায়। নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত নিজের শরীরের আয়তন। প্রাণ অন্নে। তীর্থ গঙ্গা। সব পাত্র ব্যবহার করা হয়। ধর্ম সংকোচিত। মানুষ তপস্যাহীন, সত্য থেকে দূরে অবস্থানরত। রাজনীতি কুটিল। শাসক ধনলোভী। ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন। পুরুষ স্ত্রীর অনুগত। পাপে অনুরক্ত। সৎ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি। দুষ্টের প্রভাব বৃদ্ধি। তারক ব্রহ্মনাম- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।


== সময় পরিমাণ ==
== সময় পরিমাণ ==
[[বেদব্যাস]] রচিত [[বিষ্ণু পুরাণ]] বলা হয়েছে যে কৃষ্ণের পৃথিবী ত্যাগ করে স্বর্গারোহণের সময় থেকে পৃথিবীতে কলি যুগের সূচনা হয়েছে। {{উক্তি|যস্মিন্ দিনে হরির্ঘাতে দিবং সন্ত্যজ্য মেদিনীম্।
[[বেদব্যাস]] রচিত [[বিষ্ণু পুরাণ]] বলা হয়েছে যে কৃষ্ণের পৃথিবী ত্যাগ করে স্বর্গারোহণের সময় থেকে পৃথিবীতে কলি যুগের সূচনা হয়েছে। {{উক্তি|যস্মিন্ দিনে হরির্ঘাতে দিবং সন্ত্যজ্য মেদিনীম্। তস্মিন্নেবাবতীর্ণোহয়ং কালকায়ো বলী কলিঃ।।<ref>বিষ্ণুপুরাণ, অংশ পঞ্চম, অধ্যায় ৩৮, শ্লোক ৮</ref>}}
তস্মিন্নেবাবতীর্ণোহয়ং কালকায়ো বলী কলিঃ।।<ref>বিষ্ণুপুরাণ, অংশ পঞ্চম, অধ্যায় ৩৮, শ্লোক ৮</ref>}}


[[মনু সংহিতা|মনু সংহিতায়]] বলা হয়েছে যে মানুষের এক বছরে দেবতাদের এক দিবারাত্র হয়। উত্তরাযণ দেবতাদের দিন এবং দক্ষিণায়ন তাদের রাত।<ref>মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৬৭</ref> ৪,০০০ (চার সহস্র) দৈবপরিমাণ বছরে [[সত্য যুগ|সত্য বা কৃত যুগ]] হয় এবং ওই য়ুগের আগে ৪০০(চার শত) বছর সন্ধ্যা ও পরে ৪০০ বছর সন্ধ্যাংশ হয়। <ref>মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৬৯</ref> পরবর্তী যুগগুলিতে (ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি) যুগের পরিমাণ ১,০০০(এক হাজার) বছর করে এবং সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ ১০০(এক শত) বছর করে কমে যায়। <ref>মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৭০</ref> এই হিসাবে ১০০০ দৈব বছরে কলিযুগ হয় এবং এর সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ ১০০ বছর হয়; অর্থাৎ ১২০০ দৈব বছরে কলি যুগ সম্পূর্ণ হয় সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ সহ । ১ দৈববছর যদি ৩৬০ দৈব দিনে হয় তবে কলিযুগ সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে ১২০০x৩৬০=৪,৩২,০০০ মনুষ্য বা সৌর বছর।
[[মনু সংহিতা|মনু সংহিতায়]] বলা হয়েছে যে মানুষের এক বছরে দেবতাদের এক দিবারাত্র হয়। উত্তরাযণ দেবতাদের দিন এবং দক্ষিণায়ন তাদের রাত।<ref>মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৬৭</ref> ৪,০০০ (চার সহস্র) দৈবপরিমাণ বছরে [[সত্য যুগ|সত্য বা কৃত যুগ]] হয় এবং ওই য়ুগের আগে ৪০০(চার শত) বছর সন্ধ্যা ও পরে ৪০০ বছর সন্ধ্যাংশ হয়। <ref>মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৬৯</ref> পরবর্তী যুগগুলিতে (ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি) যুগের পরিমাণ ১,০০০(এক হাজার) বছর করে এবং সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ ১০০(এক শত) বছর করে কমে যায়। <ref>মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৭০</ref> এই হিসাবে ১০০০ দৈব বছরে কলিযুগ হয় এবং এর সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ ১০০ বছর হয়; অর্থাৎ ১২০০ দৈব বছরে কলি যুগ সম্পূর্ণ হয় সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ সহ । ১ দৈববছর যদি ৩৬০ দৈব দিনে হয় তবে কলিযুগ সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে ১২০০x৩৬০=৪,৩২,০০০ মনুষ্য বা সৌর বছর।
১৫ নং লাইন: ১৩ নং লাইন:


==লক্ষণ==
==লক্ষণ==
[['''বিষ্ণু পুরাণ''']] অনুযায়ী ব্রহ্মা সত্যযুগে সমস্ত সৃষ্টিকর্ম করেন এবং কলিতে সমস্ত সৃষ্টি উপসংহার করেন।{{উক্তি|আদ্যে কৃতযুগে সর্গো ব্রহ্মণা ক্রিয়তে যতঃ। ক্রিয়তে চোপসংহারস্তথান্তে চ কলৌ যুগে।।<ref>বিষ্ণুপুরাণ, অংশ ষষ্ঠ, অধ্যায় ১, শ্লোক ৭</ref>}} বিষ্ণু পুরাণ মতে কম ধনের অধিকারী হয়ে মানুষ এ যুগে বেশী গর্ব করবে ।ধর্মের জন্য অর্থ খচর করবে না ।ধর্মগ্রন্থের প্রতি মানুষের আর্কষন থাকবে না । মাতাপিতাকে মানবে না । পুত্র পিতৃহত্যা বা পিতা পুত্র হত্যা করতে কুন্ঠিত হবে না । মানুষ বৈদিক ক্রিয়া আচার সমূহ করবে না । ধর্মানুসারে কেউ বিবাহিত থাকবে না । স্ত্রীলোকরা কেবল চুলের বাহদুরী করেই নিজেকে সুন্দরী বলে মনে করবে । ধনহীন পতিকে স্ত্রীরা ত্যাগ করবে । আর ধনবান পুরুষরা সেই স্ত্রীগণের স্বামী হবে ।। কলিযুগে ধর্মের জন্য ব্যয় না করে কেবল গৃহাদি নির্মাণে অর্থ ব্যয় করবে । মানুষ পরকালের চিন্তা না করে কেবল অর্থ উর্পাজনের চিন্তাতেই নিরন্তর নিমগ্ন থাকবে । কলিযুগে নারীরা সাধারনতঃ স্বেচ্ছাচারিণী ও বিলাস উপকরণে অতিশয় অনুরাগিণী হবে এবং পুরুষরা অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করতে অভিলাষী হবে । সুহ্বদদের প্রার্থনাতে মানুষ নিজের অনুমাত্র স্বার্থ পরিত্যাগ করবেনা । অসমর্থ মানুষরা ধনহীন হয়ে নিরন্তর দুর্ভিক্ষ ও ক্লেশ ভোগ করবে । কলিকালে মানুষ স্নান না করে ভোজন করবে । কলিকালে স্ত্রীলোকরা নিতান্তই লোভী হবে , বহু ভোজনশীল হবে । স্ত্রীরা দুহাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে অনায়াসে পতি আজ্ঞা অবহেলা করবে । নিজের দেহ পোষণে ব্যস্ত থাকবে , নিরন্তন কঠোর ও মিথ্যা বাক্য বলবে । আচারহীন ব্রাহ্মণপুত্ররা ব্রহ্মচারীর বেশ ধারন বেদ অধ্যয়ন করবে । গৃহস্থরা হোমাদি করবেন না এবং উচিত দানসমূহও প্রদান করবেন । মানুষ অশাস্ত্রীয় তপস্যা করবে । কলি কালে ৮ থেকে ১০বছরের বালকেরা সহবাসে ৫ থেকে ৭বছর বয়সের বালিকারা সন্তান প্রসব করবে । মানুষের বুদ্ধি অতি অল্প ,তাঁদের ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তি অতিশয় কুত্ সিত ,তাদের অন্তকরণ অতিশয় অপবিত্র হবে । আর অল্প কালেই বিনাশ লাভ করবে । যখন পাষন্ড লোকের প্রভাব অত্যন্ত বাড়বে , তখন সমাজের ভালো লোক কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকবে না । সজ্জনের হানি লক্ষিত হবে। অল্প বৃষ্টি হবে, কলিকালে ফসল কম হবে । মানুষ শ্বশুরের অনুগত হয়ে, কার মাতা কার পিতা এরকম কথা বলবে । সুন্দরী স্ত্রী যার তার সাথে বন্ধুত্ব হবে , নিজ ভাইয়ের সাথে শত্রুভাব পোষন করবে।<ref>বিষ্ণু পুরাণ (৬/১/৮)</ref> চৈতন্য মহাপ্রভুর মতে হরিনাম সংকীর্তনই হবে কলিযুগের একমাত্র ধর্ম । ভাগবতে বলা আছে ছলনা মিথ্যা আলস্য নিদ্রা হিংসা দুঃখ শোক ভয় দীনতা প্রভৃতি হবে এযুগের বৈশিষ্ট।
[[বিষ্ণু পুরাণ]] অনুযায়ী ব্রহ্মা সত্যযুগে সমস্ত সৃষ্টিকর্ম করেন এবং কলিতে সমস্ত সৃষ্টি উপসংহার করেন।{{উক্তি|আদ্যে কৃতযুগে সর্গো ব্রহ্মণা ক্রিয়তে যতঃ।
[['''মনু সংহিতা'''|মনু সংহিতায়]] বলা হয়েছে যে সত্যযুগে তপস্যা, ত্রেতায়ুগে জ্ঞান, দ্বাপরয়ুগে যজ্ঞ এবং কলিতে দানই প্রধান হয়।<ref>মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৮৬</ref>
ক্রিয়তে চোপসংহারস্তথান্তে চ কলৌ যুগে।।<ref>বিষ্ণুপুরাণ, অংশ ষষ্ঠ, অধ্যায় ১, শ্লোক ৭</ref>}}


==কলিযুগের অবতার==
[[মনু সংহিতা|মনু সংহিতায়]] বলা হয়েছে যে সত্যযুগে তপস্যা, ত্রেতায়ুগে জ্ঞান, দ্বাপরয়ুগে যজ্ঞ এবং কলিতে দানই প্রধান হয়।<ref>মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৮৬</ref>
'''বুদ্ধ অবতার''' আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে জন্মগ্রহন করেন ।
'''কল্কি অবতার''' কলিযুগের শেষের দিকে আর্বিভাব ঘটবে ।শম্ভল গ্রামে (মোরাদাবাদ জেলায় ) সুমতি নামে ব্রাহ্মণ কন্যার গর্ভে , বিষ্ণুযশা নামে ব্রাহ্মণের বাড়িতে , কল্কি নামে ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতারের আর্বিভাব ঘটবে । কল্কি হবে বিষ্ণুযশা-সুমতির চতুর্থ সন্তান । বিষ্ণুযশা-সুমতির প্রথম তিন সন্তানের নাম হবে যথাক্রমে কবি, প্রাজ্ঞ আর সুমন্তক ।


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==

১০:৩৮, ১৪ জুন ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

কলি যুগ (দেবনাগরী: कलियुग [kəli juɡə], আক্ষরিকভাবে "কালীর যুগ", বা "পাপের যুগ") হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, চার যুগের শেষ যুগ। অন্য যুগ গুলো হলো সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, ও দ্বাপর যুগ

মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পুর্ণিমা তিথিতে শুক্রবারে কলিযুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ৪,৩২,০০০ বছর। পুণ্য এক ভাগ, পাপ তিন ভাগ। অবতার কল্কি। মানুষের আয়ু একশ বিশ বছর প্রায়। নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত নিজের শরীরের আয়তন। প্রাণ অন্নে। তীর্থ গঙ্গা। সব পাত্র ব্যবহার করা হয়। ধর্ম সংকোচিত। মানুষ তপস্যাহীন, সত্য থেকে দূরে অবস্থানরত। রাজনীতি কুটিল। শাসক ধনলোভী। ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন। পুরুষ স্ত্রীর অনুগত। পাপে অনুরক্ত। সৎ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি। দুষ্টের প্রভাব বৃদ্ধি। তারক ব্রহ্মনাম- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।

সময় পরিমাণ

বেদব্যাস রচিত বিষ্ণু পুরাণ বলা হয়েছে যে কৃষ্ণের পৃথিবী ত্যাগ করে স্বর্গারোহণের সময় থেকে পৃথিবীতে কলি যুগের সূচনা হয়েছে।

যস্মিন্ দিনে হরির্ঘাতে দিবং সন্ত্যজ্য মেদিনীম্। তস্মিন্নেবাবতীর্ণোহয়ং কালকায়ো বলী কলিঃ।।[১]

মনু সংহিতায় বলা হয়েছে যে মানুষের এক বছরে দেবতাদের এক দিবারাত্র হয়। উত্তরাযণ দেবতাদের দিন এবং দক্ষিণায়ন তাদের রাত।[২] ৪,০০০ (চার সহস্র) দৈবপরিমাণ বছরে সত্য বা কৃত যুগ হয় এবং ওই য়ুগের আগে ৪০০(চার শত) বছর সন্ধ্যা ও পরে ৪০০ বছর সন্ধ্যাংশ হয়। [৩] পরবর্তী যুগগুলিতে (ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি) যুগের পরিমাণ ১,০০০(এক হাজার) বছর করে এবং সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ ১০০(এক শত) বছর করে কমে যায়। [৪] এই হিসাবে ১০০০ দৈব বছরে কলিযুগ হয় এবং এর সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ ১০০ বছর হয়; অর্থাৎ ১২০০ দৈব বছরে কলি যুগ সম্পূর্ণ হয় সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ সহ । ১ দৈববছর যদি ৩৬০ দৈব দিনে হয় তবে কলিযুগ সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে ১২০০x৩৬০=৪,৩২,০০০ মনুষ্য বা সৌর বছর।

মানুষের আয়ুকাল

মনু সংহিতায় বলা হয়েছে যে সত্যযুগে মানুষের আয়ু ছিল ৪০০(চার শত) বছর। পরবর্তী ৩ যুগে ১০০ বছর করে পরমায়ু কমে যায়।[৫] এই হিসেবে কলি যুগে মানুষের পরমায়ু ১০০ বছর।

লক্ষণ

'''বিষ্ণু পুরাণ''' অনুযায়ী ব্রহ্মা সত্যযুগে সমস্ত সৃষ্টিকর্ম করেন এবং কলিতে সমস্ত সৃষ্টি উপসংহার করেন।

আদ্যে কৃতযুগে সর্গো ব্রহ্মণা ক্রিয়তে যতঃ। ক্রিয়তে চোপসংহারস্তথান্তে চ কলৌ যুগে।।[৬]

বিষ্ণু পুরাণ মতে কম ধনের অধিকারী হয়ে মানুষ এ যুগে বেশী গর্ব করবে ।ধর্মের জন্য অর্থ খচর করবে না ।ধর্মগ্রন্থের প্রতি মানুষের আর্কষন থাকবে না । মাতাপিতাকে মানবে না । পুত্র পিতৃহত্যা বা পিতা পুত্র হত্যা করতে কুন্ঠিত হবে না । মানুষ বৈদিক ক্রিয়া আচার সমূহ করবে না । ধর্মানুসারে কেউ বিবাহিত থাকবে না । স্ত্রীলোকরা কেবল চুলের বাহদুরী করেই নিজেকে সুন্দরী বলে মনে করবে । ধনহীন পতিকে স্ত্রীরা ত্যাগ করবে । আর ধনবান পুরুষরা সেই স্ত্রীগণের স্বামী হবে ।। কলিযুগে ধর্মের জন্য ব্যয় না করে কেবল গৃহাদি নির্মাণে অর্থ ব্যয় করবে । মানুষ পরকালের চিন্তা না করে কেবল অর্থ উর্পাজনের চিন্তাতেই নিরন্তর নিমগ্ন থাকবে । কলিযুগে নারীরা সাধারনতঃ স্বেচ্ছাচারিণী ও বিলাস উপকরণে অতিশয় অনুরাগিণী হবে এবং পুরুষরা অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করতে অভিলাষী হবে । সুহ্বদদের প্রার্থনাতে মানুষ নিজের অনুমাত্র স্বার্থ পরিত্যাগ করবেনা । অসমর্থ মানুষরা ধনহীন হয়ে নিরন্তর দুর্ভিক্ষ ও ক্লেশ ভোগ করবে । কলিকালে মানুষ স্নান না করে ভোজন করবে । কলিকালে স্ত্রীলোকরা নিতান্তই লোভী হবে , বহু ভোজনশীল হবে । স্ত্রীরা দুহাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে অনায়াসে পতি আজ্ঞা অবহেলা করবে । নিজের দেহ পোষণে ব্যস্ত থাকবে , নিরন্তন কঠোর ও মিথ্যা বাক্য বলবে । আচারহীন ব্রাহ্মণপুত্ররা ব্রহ্মচারীর বেশ ধারন বেদ অধ্যয়ন করবে । গৃহস্থরা হোমাদি করবেন না এবং উচিত দানসমূহও প্রদান করবেন । মানুষ অশাস্ত্রীয় তপস্যা করবে । কলি কালে ৮ থেকে ১০বছরের বালকেরা সহবাসে ৫ থেকে ৭বছর বয়সের বালিকারা সন্তান প্রসব করবে । মানুষের বুদ্ধি অতি অল্প ,তাঁদের ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তি অতিশয় কুত্ সিত ,তাদের অন্তকরণ অতিশয় অপবিত্র হবে । আর অল্প কালেই বিনাশ লাভ করবে । যখন পাষন্ড লোকের প্রভাব অত্যন্ত বাড়বে , তখন সমাজের ভালো লোক কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকবে না । সজ্জনের হানি লক্ষিত হবে। অল্প বৃষ্টি হবে, কলিকালে ফসল কম হবে । মানুষ শ্বশুরের অনুগত হয়ে, কার মাতা কার পিতা এরকম কথা বলবে । সুন্দরী স্ত্রী যার তার সাথে বন্ধুত্ব হবে , নিজ ভাইয়ের সাথে শত্রুভাব পোষন করবে।[৭] চৈতন্য মহাপ্রভুর মতে হরিনাম সংকীর্তনই হবে কলিযুগের একমাত্র ধর্ম । ভাগবতে বলা আছে ছলনা মিথ্যা আলস্য নিদ্রা হিংসা দুঃখ শোক ভয় দীনতা প্রভৃতি হবে এযুগের বৈশিষ্ট।

মনু সংহিতায় বলা হয়েছে যে সত্যযুগে তপস্যা, ত্রেতায়ুগে জ্ঞান, দ্বাপরয়ুগে যজ্ঞ এবং কলিতে দানই প্রধান হয়।[৮]

কলিযুগের অবতার

বুদ্ধ অবতার আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে জন্মগ্রহন করেন । কল্কি অবতার কলিযুগের শেষের দিকে আর্বিভাব ঘটবে ।শম্ভল গ্রামে (মোরাদাবাদ জেলায় ) সুমতি নামে ব্রাহ্মণ কন্যার গর্ভে , বিষ্ণুযশা নামে ব্রাহ্মণের বাড়িতে , কল্কি নামে ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতারের আর্বিভাব ঘটবে । কল্কি হবে বিষ্ণুযশা-সুমতির চতুর্থ সন্তান । বিষ্ণুযশা-সুমতির প্রথম তিন সন্তানের নাম হবে যথাক্রমে কবি, প্রাজ্ঞ আর সুমন্তক ।

তথ্যসূত্র

  1. বিষ্ণুপুরাণ, অংশ পঞ্চম, অধ্যায় ৩৮, শ্লোক ৮
  2. মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৬৭
  3. মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৬৯
  4. মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৭০
  5. মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৮৩
  6. বিষ্ণুপুরাণ, অংশ ষষ্ঠ, অধ্যায় ১, শ্লোক ৭
  7. বিষ্ণু পুরাণ (৬/১/৮)
  8. মনু সংহিতা, অধ্যায় প্রথম, শ্লোক ৮৬

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ