বাংলা লিপি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
[অপরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Trinanjon (আলোচনা | অবদান)
Trinanjon (আলোচনা | অবদান)
২০০ নং লাইন: ২০০ নং লাইন:
|-
|-
| ।
| ।
| [[দাড়ি]]
| [[দাঁড়ি]]
|-
|-
| '
| '

১৫:২২, ৩ মে ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বাংলা লিপি
লিপির ধরন
সময়কালখ্রিস্টীয় একাদশ শতক থেকে বর্তমান[১]
লেখার দিকবাম-থেকে-ডান উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
অঞ্চলবঙ্গ
ভাষাসমূহবাংলা, অসমীয়া, মৈতৈ মণিপুরি, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, সিলেটি, ককবরক
সম্পর্কিত লিপি
উদ্ভবের পদ্ধতি
ভগিনী পদ্ধতি
তিব্বতি লিপি
আইএসও ১৫৯২৪
আইএসও ১৫৯২৪Beng, , ​বাংলা
ইউনিকোড
ইউনিকোড উপনাম
বাঙালি
U+0980 থেকে U+09FF পর্যন্ত
এই নিবন্ধে আধ্বব চিহ্ন রয়েছে। সঠিক রেন্ডারিং সমর্থন ছাড়া, আপনি হয়ত ইউনিকোড অক্ষরের বদলে জিজ্ঞাসা চিহ্ন, বাক্স বা অন্য কোনো চিহ্ন দেখবেন।

বাংলা লিপি হল একটি লিখন পদ্ধতি যেটা ব্যবহৃত করা হয় বাংলা, অসমীয়া (অসমীয়া লিপি), মণিপুরিসিলেটি ভাষায়। বাংলা লিপির গঠন তুলনামূলকভাবে কম আয়তাকার ও বেশী সর্পিল। বাংলা লিপিটি সিদ্ধং লিপি থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়। অসমীয়া ও অন্যান্য ভাষায় বাংলা লিপির যে সংস্করণগুলো ব্যবহৃত হয়, সেগুলোতে কিছু ছোটখাটো পার্থক্য রয়েছে৷ যেমন: (বাংলা ; অসমীয়া ) এবং (অসমীয়া ; কোন বাংলা প্রতিলিপি নেই)। বাংলা লিপি হল বিশ্বের ৬ষ্ঠ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত লিখন পদ্ধতি

ইতিহাস

উৎস

বাংলা লিপি এবং তার অক্ষর-হরফের উৎস বা উৎপত্তি কীভাবে হল, তা এখনো অজানা, কিন্তু গবেষণাসহ মনে করা হয় যে বাংলা লিপির ব্যবহার খ্রিস্টাব্দ একাদশ শতক থেকে প্রচলিত।[১] বাংলা লিপির ব্যবহার প্রায়ই মধ্যযুগীয় ভারতের পূর্বাঞ্চলে এবং তারপর পাল সাম্রাজ্যের মধ্যে ব্যবহার ছিল। পরে বিশেষভাবে বাংলার অঞ্চলে ব্যবহার করা অব্যাহত ছিল। পরে বাংলা লিপিটিকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বের অধীনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দ্বারা আধুনিক বাংলা লিপিতে প্রমিত করা হয়েছিল। বর্তমান দিনে বাংলা লিপিটি বাংলাদেশেভারতে সরকারী লিপির পদমর্যাদা স্থানে আছে, এবং বাংলার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যুক্ত আছে।

বাংলা মুদ্রণের প্রথম অর্ধশতাব্দী

১৭৭৮ সালে ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেডের আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রকাশনার মাধ্যমে বাংলা মুদ্রণশিল্পের জন্ম হয়। বইটি ইংরেজি ভাষাতে লেখা হলেও এতে বাংলা বর্ণপরিচয় ও বাংলা লেখার নিদর্শন সবই বাংলা মুদ্রাক্ষরে ছাপা হয়। এই মুদ্রণে প্রথমবারের মত "বিচল হরফ" প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই কৌশলে প্রতিটি হরফের জন্য আলাদা একটি ব্লক থাকে, যে ব্লকটিকে ইচ্ছামত নড়ানো ও বসানো যায়। জার্মানির ইয়োহানেস গুটেনবের্গ ছিলেন এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক। বাংলা মুদ্রণে হালেদের বইতে চার্লস উইলকিন্স এবং তার সহকারী পঞ্চানন কর্মকার এই প্রযুক্তি প্রথমবারের মত প্রয়োগ করেন। ধাতুর ব্লকে ঢালাই করা একই আকৃতি একই হরফের জন্য একাধিক পাতাতে ব্যবহার করা যায় বলে বাংলা ছাপা হরফে একটা স্থায়ী, বৈষম্যহীন রূপ এসেছিল। তবে এই প্রথম দিককার হরফগুলি খুব সুদৃশ্য ও পরিণত ছিল না। ইংরেজির তুলনায় বাংলা হরফের আকার ছিল বেশ বড়। ইউরোপে এর প্রায় তিনশত বছর আগেই বিচল হরফে ছাপার প্রযুক্তি শুরু হয়ে গেলেও বাংলাতে এটি ছিল একেবারেই নতুন একটি ঘটনা। চার্লস উইলকিন্স ও তার সহকারী পঞ্চানন কর্মকার সম্ভবত এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কারিগর ছিলেন না।

১৮০০ সালে শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে উইলিয়াম কেরি ও উইলিয়াম ওয়ার্ড ছিলেন ছাপখান বিশেষজ্ঞ। তাঁরা সেখানে পঞ্চানন কর্মকারের চাকরির ব্যবস্থা করেন। এদের মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলা হরফের চেহারার উন্নতি হতে থাকে। ১৯শ শতকের তৃতীয় দশকেই বাংলা ছাপার চেহারা অনেকখানি পাল্টে যায়। ১৮৩১ সালে ভিনসেন্ট ফিগিন্স সম্ভবত প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য বাংলা হরফ তৈরি করেছিলেন।

এসময়কার বাংলা হরফের বৈশিষ্ট্যগুলি এরকম:

  • অনুস্বারের নিচের দাগটি ছিল না। ছিল কেবল গোল চিহ্নটি।
  • ব্যঞ্জনের খাড়া দাগের সাথে যফলা মিলে বাঁকিয়ে কমলার কোয়ার মত একটা চেহারা ছিল। এগুলি আজও কখনো কখনো দেখতে পাওয়া যায়। আধুনিক কম্পিউটারের লিখন হরফে স্য-তে এর দেখা মেলে।
  • "তু" যুক্তাক্ষরটি বর্তমান চেহারা পায়। অর্থাৎ ""-এর নিচে "ু" বসিয়ে।
  • "স্থ" (স+থ) যুক্তাক্ষরটি হালেদের সময়ে, অর্থাৎ ১৮শ শতকে "স"-এর নিচে পরিষ্কার "থ" লিখে দেখানো হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি "স"-এর নিচে ছোট "হ"-এর মত অক্ষর বসিয়ে নির্দেশ করা হয়। ফলে যুক্তাক্ষরটি অস্বচ্ছ রূপ ধারণ করে। এখনো এই অস্বচ্ছ রূপটিই ব্যবহার করা হয়। এরকম আরো বহু যুক্তাক্ষরের অস্বচ্ছ রূপ ১৯শ শতকের শুরুর এই পর্বে নির্দিষ্ট হয়ে যায়।
  • "র" অক্ষরটির হরফটি হালেদের সময়ে পেট কাটা "ব" (অসমীয়া ) এবং "ব"-এর নিচে ফুটকি উভয় (অসমীয়া ) রূপেই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ১৮শ শতকের মাঝামাঝিতে এই পর্বের শেষে এসে বর্তমান ফুটকিযুক্ত রূপটিই সর্বত্র চালু হয়ে যায়।

বিদ্যাসাগরীয় পর্ব

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে জীবিকা অর্জনের জন্য একটি ছাপাখানা খোলেন। বিদ্যাসাগর বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের জন্য অনেকগুলি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এগুলি হল এরকম:

  • সংস্কৃতের "অন্তঃস্থ য়" বর্ণটি বাংলায় "" হরফ দিয়ে লেখা হত, কিন্তু শব্দে অবস্থানভেদে এর উচ্চারণ বর্তমান "বর্গীয় " কিংবা "অন্তঃস্থ য়"-এর মতো উচ্চারিত হত। বিদ্যাসাগর "বর্গীয় জ" উচ্চারণের ক্ষেত্রে "য" বর্ণটি ব্যবহার এবং "অন্তঃস্থ য়" উচ্চারণের ক্ষেত্রে "য"-এর নিচে ফুটকি দিয়ে নতুন "য়" বর্ণটি ব্যবহারের প্রস্তাব করেছিলেন।
  • একইভাবে "" ও ""-এর নীচে ফুটকি দিয়ে বিদ্যাসাগর "ড়" ও "ঢ়" হরফ দুইটির প্রচলন করেছিলেন।
  • বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষায় অব্যবহৃত "দীর্ঘ-" ও "দীর্ঘ-" বর্ণ দুইটি বর্জন করেছিলেন। তবে কেবল "৯" বর্ণটিরও বাংলায় প্রচলন ছিল না, কিন্তু বিদ্যসাগর এ নিয়ে কিছু বলেননি।
  • এছাড়া সংস্কৃত স্বরবর্ণমালার অন্তর্গত অনুঃস্বর (ং), বিসর্গ (ঃ), এবং চন্দ্রবিন্দু (ঁ) যেহেতু প্রকৃতপক্ষে ব্যঞ্জনবর্ণ সেহেতু বিদ্যাসাগর এই বর্ণগুলিকে ব্যঞ্জনবর্ণমালার অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ব্যঞ্জনবর্ণ হলেও যেহেতু এগুলি স্বতন্ত্র বর্ণ নয়, অযোগবাহ বর্ণ সেহেতু কোন বাংলা অভিধানেই বিদ্যাসাগরপ্রণীত বর্ণক্রমটি গৃহীত হয়নি।

বিদ্যাসাগর "ণ-ন" এবং "শ-ষ-স"-এর মধ্যে উচ্চারণের সমতা সম্ভবত লক্ষ্য করলেও এর কোন সংস্কার করেন নি।

বিদ্যাসাগর বাংলা হরফের স্বচ্ছতা ও সমতা বিধানের জন্যও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন:

  • তিনি যফলাকে ব্যাঞ্জনের সাথে যুক্ত করে কমলার কোয়ার মতো না লিখে আলাদা করে লেখার ধারা চালু করেন। ফলে সর্বত্র যফলার আকার একই রূপ পেল।
  • বিদ্যাসাগরের আগে ঋ-কার ব্যঞ্জনের তলে বিভিন্ন রূপে বসত। বিদ্যসাগরই প্রথম ব্যঞ্জনের নিচে পরিস্কারভাবে "ৃ" চিহ্নটি বসিয়ে লেখা চালু করেন। একইভাবে হ্রস্ব-উ কারের জন্য "ু" লেখা চালু করেন।

কিন্তু বিদ্যাসাগরের সংস্কারগুলি সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। অনেকগুলি অস্বচ্ছ যুক্তব্যঞ্জনের চিহ্ন অস্বচ্ছই থেকে গিয়েছিল। যেমন - "তু" "ত"-এর নিচে উ-কার দিয়ে লেখা হলেও "ন্তু", "স্তু" যুক্তাক্ষরগুলিতে পুরনো অস্বচ্ছ রূপটিই থেকে গেল।

ইংরেজি বিচল হরফগুলি একটি ডালায় দুই খোপে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী সাজানো থাকত। কিন্তু বাংলায় এ নিয়ে তেমন কোন চিন্তা হয় নি। বিদ্যাসাগরই প্রথম বাংলা হরফের জন্য ডালার একটি নকশা এবং কোন হরফের পর কোন হরফ বসবে তার নিয়ম স্থির করে দেন। তাঁর এই নকশাই ক্রমে সমস্ত বিচল হরফ ব্যবহারকারী বাংলা ছাপাখানাতে গৃহীত হয়। বাংলা মুদ্রণশিল্পে প্রতিষ্ঠিত হয় সমতা। বিদ্যাসাগর বাংলা মুদ্রণশিল্পকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। মূলত তার বেঁধে দেয়া নিয়মনীতি অনুসারেই পরবর্তী একশো বছর, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত বাংলা হরফ মুদ্রিত হয়।

সময়ের সাথে বিদ্যাসাগরীয় হরফের সামান্য কিছু পরিমার্জনের চেষ্টাও করা হয়েছে। বিদ্যাসাগর নিজে বর্ণপরিচয়-এর ৬০তম সংস্করণ থেকে শব্দের শেষে অন্তর্নিহিত ও উচ্চারণযুক্ত ব্যঞ্জন, যেমন- "বিগত", "কত" শব্দের শেষের "ত"-টা, যেন "ৎ"-এর মত উচ্চারণ না হয়, সেজন্য এগুলির উপর তারাচিহ্ন দেয়া প্রবর্তন করেন। বিংশ শতাব্দীতে অনেক লেখক একই কাজে ঊর্ধ্বকমা (') ব্যবহার করেছেন, যেমন- একশ', ইত্যাদি। তবে এই সংস্কারটি সর্বজনগৃহীত হয়নি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাসাগরী হরফের দুই ধরনের এ-কার (মাত্রাছাড়া ও মাত্রাসহ) দুইটি ভিন্ন কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। তিনি শব্দের শুরুর মাত্রাযুক্র এ-কার দিয়ে "অ্যা" ধ্বনি বুঝিয়ে ছাপানো শুরু করেন। তবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য বেশির ভাগ প্রকাশকই এই রীতিটি গ্রহণ করেনি।

লাইনোটাইপ পর্ব

ইউরোপে ১৯শ শতকের শেষ দিকে লাইনোটাইপ মেশিনে ছাপানোর চল হয়। ১৯৩০-এর দশকে বাংলা হরফও লাইনো মেশিনে ছাপানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়। লাইনোটাইপ মেশিনতে ছাপানোর অনেক সুবিধা থাকলেও এর একটি অসুবিধা ছিল এতে আড়াইশো-র মত চিহ্ন রাখার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বিদ্যাসাগরীয় পদ্ধতিতে হরফের সংখ্যা ছিল বিশাল। "করণ টাইপ" নামের এক পদ্ধতিতে এর সংখ্যা কমলেও তার পরেও সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০-র মত হরফের ব্লক প্রয়োজন হত। আনন্দবাজার প্রকাশনা সংস্থার সুরেশচন্দ্র মজুমদার রাজশেখর বসুর পরামর্শে বাংলা হরফের বিরাট আকারের সংস্কার সাধন করেন। তিনি স্বরবর্ণের কার-চিহ্নগুলি সকল ক্ষেত্রে একই আকারের রাখার ব্যবস্থা করলেন এবং এগুলি ব্যঞ্জন বা যুক্তব্যঞ্জনের নিচে বা উপরে না বসিয়ে সামান্য ডানে বা বামে সরিয়ে আলাদা অক্ষর হিসেবে ছাপার ব্যবস্থা করলেন।

এছাড়াও তিনি অনেক যুক্তব্যঞ্জনের একই উপাদান ব্যঞ্জনাক্ষরের সাধারণ আদল আলাদা করে সেটির হরফ বানালেন, ফলে যুক্তব্যঞ্জন ছাপানোতেও হরফের সংখ্যার অনেক সাশ্রয় হল। শেষ পর্যন্ত সুরেশচন্দ্র বাংলা হরফের সংখ্যাকে চাবির ডালায় ১২৪টি এবং বিবিধ আরও ৫০টিতে নামিয়ে আনতে পেরেছিলেন। [২]

বাংলা অক্ষর

স্বরবর্ণ

ক ব্যঞ্জনবর্ণের পরে আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ স্বরবর্ণের ব্যবহার

বাংলা লিপিতে বর্তমানে ১১টি স্বরবর্ণ অক্ষর আছে যা ৭টি প্রধান স্বর উচ্চারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সাতটিকে মৌলিক স্বরবর্ণ বলে ৷

  • বাংলা লিপিতে ই এবং উ উচ্চারণের জন্য ২টি করে বর্ণ ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রভাবিত বলে সংস্কৃত ভাষার মতনই বাংলা লিপিতে এবং উচ্চারণের জন্য উচ্চারণের তারতম্যের ভিত্তিতে হ্রস্ব ( এবং ) এবং দীর্ঘ ( এবং ) এই দুই রকম বর্ণ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আধুনিক বাংলা উচ্চারণে হ্রস্ব আর দীর্ঘ উচ্চারণে কোনো পার্থক্য নেই।
  • যখন কোনো স্বরবর্ণ শব্দ বা শব্দাংশের প্রথমে বসে অথবা অন্য কোন স্বরবর্ণের পরে বসে, তখন তাকে আলাদা বর্ণ হিসেবে লেখা হয়। কিন্তু কোনো স্বরবর্ণ কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের পরে বসলে, তখন নির্দিষ্ট চিহ্ন (বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন) দিয়ে একে প্রকাশ করা হয়। এই চিহ্নকে কার বলা হয়। যেমন, ব্যঞ্জনবর্ণের পরে স্বরবর্ণ বসলে তখন চিহ্ন বা এ-কার ব্যবহৃত হয়ে কে লেখা হয়।
  • এই নিয়মের একমাত্র ব্যতিক্রম হল স্বরবর্ণ। এই বর্ণের কোনো চিহ্ন নেই কারণ এটি পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বরবর্ণ।
  • ব্যঞ্জনবর্ণের পরে বা কোনো স্বরবর্ণ না থাকলে ব্যঞ্জনবর্ণটির সাথে হসন্ত চিহ্ন (্) ব্যবহার করা হয়, যেমন ক্

নিম্নে আধুনিক বাংলা স্বরবর্ণের তালিকা ও উচ্চারন প্রণালী দেখানো হল। এই ১১টি স্বরবর্ণ ছাড়াও , এবং এই তিনটি স্বরবর্ণ পূর্বে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এদের ব্যবহার করা হয় না, এবং "অ" হচ্ছে সম্পূর্ণ ভাবে স্বতন্ত্র স্বরবর্ণ এবং পুরো বাংলা লিপির পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বরবর্ণ, তাই তার বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন নেই।

স্বরবর্ণ
স্বরবর্ণের
স্বতন্ত্র
আকার
স্বরবর্ণের
বৈশিষ্ট্যসূচক
চিহ্ন
-
ি
স্বরবর্ণ
স্বরবর্ণের
স্বতন্ত্র
আকার
স্বরবর্ণের
বৈশিষ্ট্যসূচক
চিহ্ন

ব্যঞ্জনবর্ণ

এলোমেলো ভাবে বাংলা লিপির অক্ষরগুলি দেখানো হয়েছে
  • আধুনিক বাংলা উচ্চারণে কিচ্ছু ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে উচ্চারণে পার্থক্য রইল না, যেমন "ন" (দন্ত্য ন), "ণ" (মূর্ধন্য ণ) আর "ঞ" (ঞীয়/ইঙ)।
  • "শ" (তালব্য শ) আর "ষ" (মূর্ধন্য ষ) আধুনিক বাংলা উচ্চারণে একই রকম উচ্চারণ করা। "স" (দন্ত্য স) -র উচ্চারণ শব্দের উপর নির্ভর করে।
  • অর্ধ-স্বরবর্ণ: "ঙ" (উঙ/উম/উঁঅ) শব্দের প্রথমে আসতে পারে না। তেমনই "য়" (অন্তঃস্থ অ) শব্দের প্রথমে আসতে পারে না।
  • "ড়" (ডএ শূন্য ড়) আর "ঢ়" (ঢএ শূন্য ঢ়), মনে করা হয় কমপক্ষে ব্যবহৃত এবং প্রায় অপ্রচলিত ব্যঞ্জনবর্ণ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
  • "য" (অন্তঃস্থ য) আর "জ" (বর্গীয় জ), -র মধ্যের উচ্চারণে পার্থক্য আছে, তা'ও অনেক বার পার্থক্য না'ও বোঝা যেতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ব্যঞ্জনবর্ণ
য় ড় ঢ়

সংশোধক বর্ণ

সংশোধক
চিহ্ন চিহ্নের নাম কাজ
হসন্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হলে পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বর "অ" উচ্চারিত হয় না
খণ্ড ত "ত" এর খণ্ড রূপ
অনুস্বার "ঙ" এর খণ্ড রূপ
বিসর্গ "হ্" এর আরেকটি রূপ, এছাড়া সংক্ষেপের জন্যেও ব্যবহৃত
চন্দ্রবিন্দু সানুনাসিক স্বর

সংখ্যা

সংখ্যা
বাংলা সংখ্যা পদ্ধতি

বিরামচিহ্ন ও অন্যান্য ব্যবহৃত চিহ্ন

বিরামচিহ্ন ও অন্যান্য ব্যবহৃত চিহ্ন
চিহ্ন চিহ্নের নাম
দাঁড়ি
' ঊর্ধ্বকমা
টাকা
, কমা
; যতিচিহ্নবিশেষ / সেমিকোলন
: কোলন
? প্রশ্নচিহ্ন
! বিস্ময়বোধক চিহ্ন
- ড্যাশ / হাইফেন
" উদ্ধৃতি চিহ্ন
... উপবৃত্ত
/ স্ল্যাশ চিহ্ন
[ ] ( ) { } ⟨ ⟩ বন্ধনী
° তাপাঙ্ক / ডিগ্রী
% শতাংশ চিহ্ন
~ টিল্ড চিহ্ন

যুক্তাক্ষর

কোনো স্বরবর্ণ দ্বারা পৃথক না থাকলে সর্বাধিক চারটি ব্যঞ্জনবর্ণ পরস্পর যুক্ত হয়ে যুক্তাক্ষর তৈরী করতে পারে। সাধারণতঃ প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণ যুক্তাক্ষরের ওপরের দিকে বা বাম দিকে দেখা যায়। যুক্তাক্ষরে অনেক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ব্যঞ্জনবর্ণ সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে মূল ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে তার কোনো সাদৃশ্য থাকে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধারণ অবস্থায় ব্যঞ্জনবর্ণের যা উচ্চারণ, যুক্তাক্ষরে ব্যবহৃত হলে তার উচ্চারণের পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন এবং এর মিলনের ফলে তৈরী জ্ঞ যুক্তাক্ষরের উচ্চারণ জিণ না হয়ে হয় গ্গ

ন্দ্র (ন + দ + র)

নিলীন রূপ

  • উচুনিচু: ক্ক, গ্ন, গ্ল, ন্ন, প্ন, প্প, ল্ল, ইত্যাদি...
  • বফলা: গ্ব, ণ্ব, দ্ব, ল্ব, শ্ব
  • পাশাপাশি: দ্দ, ন্দ, ব্দ, ব্জ, প্ট, শ্চ, শ্ছ, ইত্যাদি...

আনুমানিক রূপ

  • পাশাপাশি: দ্গ
  • বফলা: ধ্ব, ব্ব, হ্ব

সঙ্কুচিত রূপ

  • পাশাপাশি: ঙ্ক্ষ, ঙ্খ, ঙ্ঘ, ঙ্ম, চ্চ, চ্ছ, চ্ঞ, ড্ড, ব্ব
  • উচুনিচু: ত্ন, ত্ম, ত্ব
  • "ম", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ম্ন, ম্প, ম্ফ, ম্ব, ম্ভ, ম্ম, ম্ল
  • "ষ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ষ্ক, ষ্ট, ষ্ঠ, ষ্প, ষ্ফ, ষ্ম
  • "স", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: স্ক, স্খ, স্ট, স্ত, স্থ, স্ন, স্প, স্ফ, স্ব, স্ম, স্ল

সংক্ষিপ্ত রূপ

  • "জ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: জ্জ, জ্ঞ, জ্ব
  • "ঞ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ঞ্চ, ঞ্ছ, ঞ্জ, ঞ্ঝ
  • "ণ" ও "প", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ণ্ঠ, ণ্ড, প্ত, প্স, প্ট, ণ্ট, ণ্ঢ
  • "ত" ও , আকৃতি পরিবর্তন: ত্ত, ত্থ, ত্র, ভ্র
  • "থ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ন্থ, স্থ, ম্থ
  • "ম", উচুনিচুতে নিচে (নিজের উপরের আকার প্রায় হারিয়ে দেয়): ক্ম, গ্ম, ঙ্ম, ট্ম, ণ্ম, ত্ম, দ্ম, ন্ম, ম্ম, শ্ম, ষ্ম, স্ম
  • "স", উচুনিচুতে নিচে (নিজের উপরের আকার হারিয়ে দেয়): ক্স

বৈকল্পিক রূপ

  • "ঙ", আকৃতি পরিবর্তন: ঙ্ক, ঙ্গ
  • "ধ", আকৃতি পরিবর্তন করে আর "ঝ"-র মতন রূপ নেয়: গ্ধ, দ্ধ, ন্ধ, ব্ধ
  • রেফ: র্ক, র্খ, র্গ, র্ঘ, ইত্যাদি...
  • রফলা: খ্র, গ্র, ঘ্র, ব্র, জ্র, ট্র, ঠ্র, ড্র, ম্র, স্র, ইত্যাদি...
    • রফলা যুক্ত হলে আকৃতি পরিবর্তন হয়: ক্র, ত্র, ভ্র
  • যফলা: ক্য, খ্য, গ্য, ঘ্য, দ্য, ন্য, শ্য, ষ্য, স্য, হ্য, ইত্যাদি...

ব্যতিক্রমসমূহ

  • "ক", "ত"-র মতন রূপ নেয়: ক্র, ক্ত
  • "চ", "ব"-র মতন রূপ নেয়: ঞ্চ
  • "ট"+"ট" (নিজের নিচে একটি বক্ররেখা তৈরি করে): ট্ট
  • "ষ"+"ণ" -তে "ণ" নিজেকে ২বার বক্র করে: ষ্ণ
  • "হ"+"ন" -তে "ন" নিজেকে বক্রের মতন করে নেয়: হ্ন
  • "হ"+"ম" (আকৃতি পরিবর্তন): হ্ম

ব্যতিক্রমী ব্যঞ্জনবর্ণ-স্বরবর্ণ সমন্বয়

    • "গ" আর "শ" -র সঙ্গে "উ" যুক্ত হলে "ও"- র মতন নিচে বক্র তৈরি করে: গু, শু
    • "ত"-তে "উ-কার" -র সঙ্গে যুক্তাক্ষর "প", "ন" বা "স"। তখন "তু", "ও"- র মতন নিচে বক্র তৈরি করে: ন্তু, স্তু, প্তু
    • ব্যঞ্জনের ডানে বক্র তৈরি করে: রু, গ্রু, ত্রু, থ্রু, দ্রু, ধ্রু, ব্রু, ভ্রু, শ্রু
    • "হ"-র সঙ্গে উপরে বক্র তৈরি করে: হু
    • যুক্ত হলে ডানে ঘাই তৈরি করে: রূ, গ্রূ, থ্রূ, দ্রূ, ধ্রূ, ভ্রূ, শ্রূ
    • "হ" -র সঙ্গে যুক্ত হলে ডানে ঘাই তৈরি করে: হৃ

কিচ্ছু উদাহরণ: স+ত +র=স্ত্র, ম+প+র=ম্প্র, জ+জ+ব=জ্জ্ব, ক্ষ+ম=ক্ষ্ম

  • তাত্ত্বিকভাবে, চার-ব্যঞ্জনবর্ণের যুক্তাক্ষর তৈরি করা যেতে পারে, যেমন র+স+ট+র=র্স্ট্র, কিন্তু বাস্তবীয় শব্দে পাওয়া যায় না।

লিপি বৈশিষ্ট্য

বাংলা অক্ষরগুলির উপর মাত্রা অর্থাৎ একটি আনুভূমিক রেখা দেয়া হয়। বাংলাতে মাত্রার প্রদর্শন পরিমাণ অনেক কম। , , , , ইত্যাদি বাংলা হরফে মাত্রার পরিমাণ খুব কম। বাংলাতে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু স্বতন্ত্র জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য এই প্রাক-মুদ্রণ যুগেই নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এগুলির মধ্যে নিচেরগুলি উল্লেখযোগ্য

  • অনুভূমিক মাত্রা এবং বিভিন্ন হরফে এর পরিমাণ
  • বেশির ভাগ বাংলা হরফে ব্যবহৃত উল্লম্ব রেখাকৃতি অংশটি।
  • , , , , , ইত্যদি হরফে ব্যবহৃত ত্রিভুজাকৃতি রূপটি। একই ত্রিভুজটির খানিকটা বিকৃত রূপ , , , , , , ইত্যাদিতে দেখতে পাওয়া যায়।
  • লেখার দিকের সাথে অর্ধ-সমকোণে অংকিত বিভিন্ন রেখাংশ বিভিন্ন হরফে দেখতে পাওয়া যায়। , , , ইত্যাদির নিচের অংশে, এবং , , , ইত্যাদিতে উল্লম্ব রেখার সাথে সংযুক্ত অবস্থায় এরকম রেখাংশ দেখতে পাওয়া যায়।

উপরের সবগুলিই বাংলা হরফকে নিজস্ব জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে এবং অন্যান্য লিপি থেকে আলাদা করেছে।

এসময়কার বাংলা হরফে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল, যেগুলি বর্তমান বাংলা হরফে অনুপস্থিত। যেমন -

  • "" হরফটিকে ""-এর পেটে দাগ কেটে দেখানো যেত। অর্থাৎ পেট-কাটা "ব" (ৰ) দিয়ে এটি নির্দেশ করা হত। বর্তমানে এটি অসমীয়া ভাষাতে প্রচলিত হলেও বাংলায় আর প্রচলিত নেই।
  • বর্তমান বাংলা বেশ কিছু হরফের নীচে ফুটকি বা বিন্দু দেয়া হয়। এই ফুটকিগুলি এই যুগে প্রচলিত ছিল না। ""-কে পেটকাটা ব দিয়ে নির্দেশ করা হয়। "য়"-এর নিচে কোন বিন্দু ছিল না; এটি শব্দে অবস্থানভেদে ভিন্ন ভাবে উচ্চারিত হত। আবার "ড়" এবং "ঢ়"-এরও কোন অস্তিত্ব ছিল না। "" এবং "" শব্দের মাঝে বসলে "ড়" এবং "ঢ়"-এর মতো উচ্চারিত হত।
  • ত+উ ব্যঞ্জন-স্বর সমবায়টি "ত্ত" দিয়ে প্রকাশ করা হত। আজও কোন কোন আধুনিক বাংলা যুক্তাক্ষরে, যেমন স+ত+উ = "স্তু" (যেমন- বস্তু) এবং ন+ত+উ = "ন্তু" (যেমন- কিন্তু) --- এই দুইটি যুক্তাক্ষরের ত+উ অংশে এর ফসিল দেখতে পাওয়া যায়।

এ সময় বাংলা ছাপা বইও বের হয়েছে। এগুলিতে বইয়ের একটি পাতা প্রথমে হাতে লেখা হত। তারপর সেই পুরো পাতার একটি প্রতিলিপি কাঠে বা ধাতুতে খোদাই করে নেওয়া হত। শেষে এই কাঠ বা ধাতুর ফলকে কালি লাগিয়ে একই পাতার অনেক কপি ছাপানো হত। একই লোকের হাতের লেখাতে যে বৈচিত্র্য থাকতে পারে, সেগুলি এই ছাপায় শুধরানো যেত না।

বাংলা মুদ্রিত হরফের জ্যামিতিক গড়ন

প্রতিটি মুদ্রিত বাংলা হরফ একটি অদৃশ্য চতুর্ভুজের মধ্যে বসানো থাকে। হরফের এই অদৃশ্য নকশাতে অনুভূমিক বরাবর প্রসারিত বেশ কিছু রেখা বাংলা হরফের জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছে।

মাত্রা বরাবর যে রেখাটি চলে গেছে, যা থেকে বেশিরভাগ হরফ ঝুলে থাকে বলে মনে হয়, তাকে মাত্রারেখা বলে। বেশির ভাগ হরফের নিচ যেখানে ঠেকে যায়, সেই বরাবর কল্পিত অনুভূমিক রেখাটিকে ভূমিরেখা বলে। রোমান হরফগুলির মূল অংশ সর্বদা একটি অদৃশ্য ভূমিরেখার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে বাংলা হরফগুলি মাত্রা নামের একটি দৃশ্যমান রেখা থেকে নিচে ঝুলে থাকে। ফিওনা রস তাই বাংলা হরফের ভূমিরেখাকে "ধারণাগত ভূমিরেখা" আখ্যা দিয়েছেন। মাত্রারেখা থেকে ভূমিরেখার ব্যবধানকে "হরফের মূল উচ্চতা" বলে।

মাত্রারেখার কিছু উপরে আরেকটি অনুভূমিক রেখা কল্পনা করা যায়, যাতে ই-কার, ঈ-কার, ঐ-কার, রেফ ইত্যাদির মাথা গিয়ে ছুঁয়েছে; এটিকে শিরোরেখা বলে। একইভাবে ভূমিরেখার খানিকটা নিচে আরেকটি অনুভূমিক রেখা কল্পনা করা যায়, যেখানে উ-কার, ঊ-কার, ঋ-কার, ইত্যাদির নিচের প্রান্ত গিয়ে ঠেকেছে; একে পাদরেখা বলে। পাদরেখা থেকে শিরোরেখার ব্যবধানকে "হরফের উচ্চতা" হিসেবে ধরা যায়। মাত্রারেখার খানিকটা নিচে আরেকটি রেখা কল্পনা করা যায়, যেখানে বহু হরফের অংশবিশেষ দিক পরিবর্তন করে; একে মধ্যরেখা বলে।

প্রতিটি হরফ যে অদৃশ্য চতুর্ভুজাকৃতি স্থানে বসে, তার দুইপাশে খানিকটা খালি জায়গা থাকে, একে পার্শ্বস্থান বলে। দুপাশের পার্শ্বস্থান বাদ দিলে হরফের মূল প্রস্থ পাওয়া যায়। আর পাশাপাশি দুইটি হরফের প্রতিটির পার্শ্বস্থান যোগ করলে পাওয়া যায় ঐ দুই হরফের মধ্যে ফাঁক। [৩][৪]

রোমানীকরণ

বাংলার রোমানীকরণ হল বাংলা লিপিটিকে রোমান লিপিতে উচ্চারণ মতে অনুবাদ করা। বাংলা ভাষার জন্যে অনেক রকম রোমানীকরণ পদ্ধতি প্রস্তাবিত করা আছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনোটাই সরকারি ভাবে স্বীকৃত নয় বা ব্যবহারে কোনো উর্দি নেই।

ইউনিকোড

১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ডে বাংলা লিপিকে যোগ করা হয়। ইউনিকোডে বাংলা লিপির অবস্থান U+0980 থেকে U+09FF পর্যন্ত।

বাংলা[১][২]
অফিসিয়াল ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম কোড চার্ট (পিডিএফ)
  0 1 2 3 4 5 6 7 8 9 A B C D E F
U+098x
U+099x
U+09Ax
U+09Bx ি
U+09Cx
U+09Dx
U+09Ex
U+09Fx
টীকা
১.^ ইউনিকোড সংস্করণ ১৪.০ অনুসারে
২.^ ধূসর এলাকা অনির্ধারিত জায়গা ইঙ্গিত করে।

আরো দেখুন

গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি

বাংলা

  • পলাশ বরন পাল। বাংলা হরফের পাঁচ পর্ব। স্বপন চক্রবর্তী সম্পাদিত মুদ্রণের সংস্কৃতি ও বাংলা বই গ্রন্থে। অবভাস। কলকাতা। ২০০৭।
  • পলাশ বরন পাল। ধ্বনিমালা বর্ণমালা। প্যাপিরাস। কলকাতা। ২০০১।
  • চিত্তরঞ্জন বন্দোপাধ্যায়। দুই শতকের বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশন। আনন্দ পাবলিশার্স। কলকাতা। ১৯৮১।
  • অতুল সুর। বাংলা মুদ্রণের দুশো বছর। জিজ্ঞাসা। কলকাতা। ১৯৮৬।
  • শ্রীপান্থ। যখন ছাপাখানা এল। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি। কলকাতা। ১৯৯৬।

ইংরেজি

  • Ross, Fiona. The Printed Bengali Character and Its Evolution (1999). London. Curzon.

তথ্যসূত্র

  1. প্রাচীন লিপিগুলি (ইংরেজি'তে)
  2. Ross পৃষ্ঠা ১৩৮
  3. আবু জার মোঃ আককাস। হরফের রেখা আর চতুষ্কোণ (ব্লগ ভুক্তি)। ১১ মার্চ ২০০৮।
  4. Ross

বহিঃসংযোগ