নিকারাগুয়া: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
তথ্যযোগ
তথ্যযোগ
৮৩ নং লাইন: ৮৩ নং লাইন:


===আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খল===
===আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খল===
নিকারাগুয়াকে বলা হয়ে থাকে আগ্নেয়গিরির দেশ। দেশের পশ্চিম তট বরাবর একটি আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খল দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত। বস্তুত এই আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খলটি মধ্য আমেরিকার আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খলেরই অংশ বিশেষ। দেশের পশ্চিম তটে [[প্রশান্ত মহাসাগর| প্রশান্ত মহাসাগরের]] তলদেশে উপকূল থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে দুই [[টেকটনিক প্লেট]], ক্যারিবিয় প্লেট ও কোকোস প্লেটের সংযোগস্থল। এই দুই প্লেটের সংঘর্ষের ফলে এই অঞ্চল ভূতাত্বিকভাবে এখনও যথেষ্ট অস্থির। সেই কারণেই এই অঞ্চলে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল রেখা বরাবর একটি আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খল দেখতে পাওয়া যায় যেটি দক্ষিণে [[কোস্তা রিকা]] থেকে শুরু হয়ে উত্তরে [[নিকারাগুয়া]], [[হন্ডুরাস]], [[এল সালভাদোর]] ও [[গুয়াতেমালা| গুয়াতেমালার]] মধ্য দিয়ে বিস্তৃত।<ref name= ucsd/> এই মধ্য আমেরিকার আগ্নেয় মেখলার একেবারে মধ্যস্থলে নিকারাগুয়ার অবস্থানের ফলে আগ্নেয়গিরির সংখ্যা এ'দেশে এত বেশি। এগুলির মধ্যে অনেকগুলিই সুপ্ত বা জীবন্ত। মাঝেমাঝেই অগ্ন্যুৎপাত তাই এ'দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
নিকারাগুয়াকে বলা হয়ে থাকে আগ্নেয়গিরির দেশ। দেশের পশ্চিম তট বরাবর একটি আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খল দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত। বস্তুত এই আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খলটি মধ্য আমেরিকার আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খলেরই অংশ বিশেষ। দেশের পশ্চিম তটে [[প্রশান্ত মহাসাগর| প্রশান্ত মহাসাগরের]] তলদেশে উপকূল থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে দুই [[টেকটনিক প্লেট]], ক্যারিবিয় প্লেট ও কোকোস প্লেটের সংযোগস্থল। বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কোকোস প্লেটটি প্রতিবছর ক্যারিবীয় প্লেট অভিমুখে ৭০-৮৫ মিলিমিটার সরে আসছে। অন্যদিকে উত্তর আমেরিকা প্লেটটিকে স্থির ধরে নিলে, ক্যারিবীয় প্লেটটির গতি পূর্ব অভিমুখে প্রতিবছর ১৮-২০ মিলিমিটার। এই দুই প্লেটের অসম গতির কারণে সৃষ্ট সংঘর্ষের ফলে এই অঞ্চল ভূতাত্বিকভাবে এখনও যথেষ্ট অস্থির।<ref name="pendient">[http://pendientedemigracion.ucm.es/info/tectact/DOCS/Articulos/Alvarez-Gomez_FEM%20active%20tectonics%20northern%20Central%20America_Tectonics_2008.pdf Constraints from finite element modeling on the active tectonics of northern Central America and the Middle America Trench. ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮. সংগৃহীত ০৭ জুলাই, ২০১৪।]</ref> সেই কারণেই এই অঞ্চলে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল রেখা বরাবর একটি আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খল দেখতে পাওয়া যায় যেটি দক্ষিণে [[কোস্তা রিকা]] থেকে শুরু হয়ে উত্তরে [[নিকারাগুয়া]], [[হন্ডুরাস]], [[এল সালভাদোর]] ও [[গুয়াতেমালা| গুয়াতেমালার]] মধ্য দিয়ে বিস্তৃত।<ref name= ucsd/><ref name = pendient/> এই মধ্য আমেরিকার আগ্নেয় মেখলার একেবারে মধ্যস্থলে নিকারাগুয়ার অবস্থানের ফলে আগ্নেয়গিরির সংখ্যা এ'দেশে এত বেশি। এগুলির মধ্যে অনেকগুলিই সুপ্ত বা জীবন্ত। মাঝেমাঝেই অগ্ন্যুৎপাত তাই এ'দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এ'দেশের সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলির মধ্যে সেরো নেগ্রো, কনসেপসিওন, লাস পিলাস, মাথায়া, সান ক্রিস্তোবাল, তেলিসা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে কনসেপসিওন থেকে শেষ অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে ২০০৯ সালে, সান ক্রিস্তোবালে ২০১২ সালে, তেলিসায় ২০০৭ সালে ও সেরো নেগ্রো শেষবার জেগে উঠেছিল ১৯৯৯ সালে। অপরদিকে মোম্বাচো, মোমোতোম্বো, কসিথুইনা প্রভৃতি আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে গত ১০০ বছরে কোনো অগ্ন্যুৎপাত না ঘটলেও যে কোনও মুহূর্তেই সেগুলি আবার জেগে উঠতে পারে। আবার জাপাতেরা, মাদেরাস, আপোইয়েক প্রভৃতি আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে বিগত কয়েক হাজার বছরের মধ্যেও কোনও অগ্ন্যুতপাতের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি।*


==জলবায়ু==
==জলবায়ু==
৯৬ নং লাইন: ৯৬ নং লাইন:
* [[Geography of Nicaragua]]
* [[Geography of Nicaragua]]
* [[List of volcanoes in Nicaragua]]
* [[List of volcanoes in Nicaragua]]
* [[Central America Volcanic Arc]]
==তথ্যসূত্র==
==তথ্যসূত্র==
<references/>
<references/>

০৬:১৪, ৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

Republic of Nicaragua

República de Nicaragua
Nicaragua জাতীয় পতাকা
পতাকা
Nicaragua জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় সঙ্গীত: Salve a ti, Nicaragua
Nicaragua অবস্থান
রাজধানী
ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি
মানাগুয়া
সরকারি ভাষাস্পেনীয়1
জাতীয়তাসূচক বিশেষণনিকারাগুয়ান
সরকারপ্রজাতন্ত্র
দানিয়েল ওর্তেগা (FSLN)
হাইমে মোরালেস কারাথো
স্বাধীন 
স্পেনের হাত থেকে
• ঘোষিত
১৫ সেপ্টেম্বর, ১৮২১
• স্বীকৃত
২৫ জুলাই, ১৮৫০
আয়তন
• মোট
১২৯.৪৯৪ কিমি (৪৯.৯৯৮ মা) (৯৭তম)
• পানি (%)
7.14
জনসংখ্যা
• জুলাই ২০০৬ আনুমানিক
৫,৬০৩,০০০ (১০৭তম)
• ২০০৫ আদমশুমারি
৫,১৪২,০৯৮
• ঘনত্ব
৪২/কিমি (১০৮.৮/বর্গমাইল) (১৩২তম)
জিডিপি (পিপিপি)২০০৬ আনুমানিক
• মোট
$২০,১৮৯ বিলিয়ন (১০৩তম)
• মাথাপিছু
$৩,১০০ (১২৮তম)
জিনি (২০০৫)40.5 [১]
ত্রুটি: জিনি সহগের মান অকার্যকর
মানব উন্নয়ন সূচক (২০০৬)বৃদ্ধি ০.৬৯৮
ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর · ১১২তম
মুদ্রাকর্ডোবা (NIO)
সময় অঞ্চলইউটিসি-6
কলিং কোড৫০৫
ইন্টারনেট টিএলডি.ni
  1. ইংরেজি এবং আরও কিছু স্থানীয় ভাষা ক্যারিবীয় উপকূল অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়।

নিকারাগুয়া (স্পেনীয় ভাষায় Nicaragua নিকারাউয়া) মধ্য আমেরিকার একটি প্রজাতন্ত্র। এর সরকারী নাম নিকারাগুয়া প্রজাতন্ত্র (República de Nicaragua রেপুব্লিকা দে নিকারাউয়া). যদিও নিকারাগুয়া মধ্য আমেরিকার বৃহত্তম রাষ্ট্র, এর জনসঙ্খ্যা কম। এর উত্তরদিকে রয়েছে হন্ডুরাস, দক্ষিণদিকে কোস্তা রিকা। নিকারাগুয়ার পশ্চিমদিকে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর, পূর্বদিকে ক্যারিবীয় সাগর। হন্ডুরাসের সাথে এ'দেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্য ৯২২ কিমি ও কোস্তা রিকার সাথে ৩০৯ কিমি। অর্থাৎ প্রতিবেশী দুই দেশের সাথে দেশটির মোট সীমান্ত দৈর্ঘ্য ১২৩১ কিমি।

নিকারাগুয়া নামের উদ্ভব

নিকারাগুয়া নামের উদ্ভব নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত আছে। তার মধ্যে তিনটি সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। অনেকের মতে এই নামটি এসেছে স্থানীয় এক উপজাতিপ্রধানের নাম থেকে। জনশ্রুতি অনুযায়ী স্পেনীয় কঙ্কুইস্তাদোর গিল গঞ্জালেস দাভিলা এই অঞ্চলে আজকের সান হোর্খে বা রিভাসে এসে উপজাতিপ্রধান নিকারাও Nicarao'এর দেখা পান। দিনটি ছিল ১৫ অক্টোবর, ১৫২৩। তাঁর নাম থেকেই দেশটির নাম হয় নিকারাগুয়া। অন্যদের মতে নিকান শব্দের অর্থ স্থানীয় নাহুতল Nahuatl ভাষায় 'এখানে', আরাহুয়াক মানে 'মানুষ'। এই দুটি শব্দ থেকেই এসেছে নিকারাগুয়া শব্দটি। [২] আরেকটি মত হল, এই অঞ্চলে স্পেনীয়দের আগমনকালে যে আমেরিন্ডিয়ান উপজাতি বাস করতো তাদেরই নাম ছিল নিকারাও। গিল গঞ্জালেস দাভিলা এই নিকারাও শব্দের সাথে স্পেনীয় শব্দ আকুয়া অর্থাৎ জল যুক্ত করে নিকারাগুয়া শব্দটি তৈরি করেন। এই অঞ্চলে দুটি বৃহৎ অন্তর্দেশীয় হ্রদ লেক মানাগুয়ালেক নিকারাগুয়া'র অবস্থানই হয়তো তাঁর এমন নামকরণের কারণ। [৩]

ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য

নিকারাগুয়া মধ্য আমেরিকা যোজকে অবস্থিত সবচেয়ে বড় দেশ। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত এই দেশটির অবস্থান ১১ ডিগ্রি উত্তর থেকে ১৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা ও ৭৯ ডিগ্রি পশ্চিম থেকে ৮৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমারেখার মধ্যে। অর্থাৎ দেশটি ক্রান্তীয় অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। দেশটির আয়তন ১,২৯,৪৯৪ বর্গ কিলোমিটার বা ৫০,১৯৩ বর্গমাইল। অর্থাৎ আয়তনের বিচারে নিকারাগুয়া পৃথিবীর ৯৭তম দেশ। এর উত্তরে হন্ডুরাস, পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণে কোস্তা রিকা ও পূর্বে ক্যারিবীয় সাগর। ভূতাত্ত্বিকভাবে দেশটির অবস্থান দু'টি মহাসাগরীয় টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলের খুব কাছে - ক্যারিবীয় প্লেটকোকোস প্লেট[৪] ফলে ভূতাত্ত্বিকভাবে অঞ্চলটি যথেষ্ট অস্থির। তাই এই অঞ্চলে প্রচূর আগ্নেয়গিরি দেখতে পাওয়া যায়। প্রশান্ত মহাসাগরের তীরের সাথে সমান্তরালে যে আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খলটি দক্ষিণপূর্বে কোস্তা রিকা থেকে উত্তর-পশ্চিমে হন্ডুরাস হয়ে আরও উত্তরে বিস্তৃত, তার একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থানের ফলে নিকারাগুয়ায় আগ্নেয়গিরির সংখ্যা মধ্য আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আরও উল্লেখযোগ্য, এইসব আগ্নেয়গিরির মধ্যে অনেকগুলিই সুপ্ত বা জীবন্ত। প্রাকৃতিকভাবে দেশটিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যায় - পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিম্নভূমি, মধ্যভাগের আর্দ্র ও ঠাণ্ডা উচ্চভূমি ও পূর্বদিকের ক্যারিবীয় নিম্নভূমি।

নিকারাগুয়ার প্রাকৃতিক মানচিত্র

প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিম্নভূমি

পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিম্নভূমি অঞ্চলটি মুলত চওড়া ও উর্বর সমভূমি নিয়ে গঠিত। এই অঞ্চলটিতেই দেশের বেশিরভাগ জনবসতি অবস্থিত। কিন্তু কর্ডিলেরা লস মারিবিওস পর্বতশ্রেণীর বিভিন্ন আগ্নেয় পর্বত এই সমভূমিতে প্রবেশ করে একে মাঝেমাঝেই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি উর্বর সমভূমি অঞ্চলে পরিণত করেছে। এই নিম্ন-সমভূমি অঞ্চলটি উত্তরে ফনসেকা উপসাগর'এর তীর থেকে শুরু হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের তীর বরাবর দক্ষিণে লেক নিকারাগুয়া পেরিয়ে কোস্তা রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য হল মধ্য আমেরিকার সবচেয়ে বড় দুটি অন্তর্দেশীয় হ্রদের উপস্থিতি - লেক নিকারাগুয়া (লাগো কোকিবোলকা) ও লেক মানাগুয়া। এর মধ্যে লেক নিকারাগুয়া দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ও আয়তনে অপেক্ষাকৃত বড়। এটি মধ্য আমেরিকার সবচেয়ে বড় মিষ্ট জলের হ্রদ (আয়তন ৮০০১ বর্গ কিমি, সর্বাধিক দৈর্ঘ্য ১৭৭ কিমি, সর্বাধিক গভীরতা ৭০ মিটার বা ২৩০ ফুট। আয়তনের বিচারে বিশ্বে ১৯তম।)। [৫] এই হ্রদটি থেকেই দেশের প্রধান নদী রিও সান হুয়ান নদীর উৎপত্তি, যা দেশটির দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর পূর্বমুখে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে ক্যারিবীয় উপসাগরে পড়েছে।

মধ্যভাগের উচ্চভূমি

মধ্যভাগের উচ্চভূমির সর্বোচ্চ শিখর হল পিকো মোগোটোন। দেশের উত্তরসীমায় অবস্থিত এই শিখরের উচ্চতা ২৪৩৮ মিটার। উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত এই সমগ্র অঞ্চলটির গড় উচ্চতা ৬১০ - ১৫২৪ মিটার। মধ্যভাগের এই উচ্চভূমিতে পশ্চিমের সমভূমি অঞ্চলের তুলনায় জনবসতি বেশ কম। কিন্তু এই উচ্চভূমির উত্তর-পশ্চিমের উপত্যকা অঞ্চলটি যথেষ্ট উর্বর। দেশের মোট কৃষিকার্যের এক চতুর্থাংশই এই অঞ্চলে হয়ে থাকে। পাহাড়ের উঁচু ঢালু অংশে কফি চাষ হয়। এই অঞ্চলের অরণ্যে ওক, পাইন, নানারকমের মস, ফার্ন আর অর্কিড প্রচূর পরিমানে দেখতে পাওয়া যায়।

ক্যারিবীয় নিম্নভূমি

অপরদিকে পূর্ব ও দক্ষিণদিকের ক্যারিবীয় উপকূলীয় নিম্নভূমি বেশ চওড়া। প্রচূর বৃষ্টিপাতযুক্ত ও বড় নদী সম্বলিত এই অঞ্চলটি প্রায় পুরোটাই ক্রান্তীয় রেনফরস্টে ঢাকা। মেস্কিটো উপজাতির নামানুসারে এই অঞ্চলকে অনেকসময় মেস্কিটো উপকূলও বলা হয়ে থাকে। মধ্য আমেরিকার সবচেয়ে বড় নদী রিও কোকো এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নিকারাগুয়া ও হন্ডুরাসের সীমা অনেকাংশে এই নদীর গতিপথ বরাবরই চিহ্নিত হয়েছে। অপেক্ষাকৃত সরলরৈখিক প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল রেখার তুলনায় ক্যারিবীয় উপকূল রেখা অত্যন্ত ভগ্ন। এই অঞ্চলে প্রচূর ব-দ্বীপ ও লেগুনের দেখা পাওয়া যায়।
এই অঞ্চলে স্বভাবতই জনবসতিও যথেষ্টই কম। কিন্তু এর আয়তন দেশের প্রায় ৫৭ শতাংশ। এই অঞ্চলটি দেশের খনিজ সম্পদেরও মূল ভাণ্ডার। এই অঞ্চলের সিউনা, রোসিটা ও বোনানজা 'খনি ত্রিভূজ' নামে পরিচিত। এর মধ্যে বোনানজায় একটি চালু স্বর্ণ খনি খুব বিখ্যাত। সিউনা ও রোসিটায় অবশ্য এখন আর কোনো খনি চালু অবস্থায় নেই। তবে বোনানজার খনিকে কেন্দ্র করে এই দুই জায়গাতেও সোনার পাত তৈরির শিল্প যথেষ্ট বিকাশ লাভ করেছে।

নদনদী

নিকারাগুয়ার প্রধান নদী রিও সান হুয়ান। নিকারাগুয়া হ্রদ থেকে এই নদী উৎপন্ন হয়ে প্রথমে দক্ষিণবাহী ও তারপরে পুবমুখে প্রবাহিত হয়ে ক্যারিবীয় সাগরে পতিত হয়েছে। নিকারাগুয়া হ্রদ এই নদীটির দ্বারাই ক্যারিবীয় সাগরের সাথে যুক্ত হওয়ায় ১৯২ কিলোমিটার লম্বা এই নদীটি অনেকসময় এল দেসাহুয়াদেরো (নর্দমা) নামেও অভিহিত হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ নাব্য এই নদীটির এক বড় অংশ নিকারাগুয়া ও কোস্তা রিকার সীমানা দিয়ে প্রবাহিত। তথাকথিত নিকারাগুয়া হাঙর বা মিষ্ট জলের ষাঁড় হাঙ্গর ও অন্যান্য বহু জলজ প্রাণীর আবাসস্থল এই নদী।[৬][৭] হ্রদ থেকে রিও সান হুয়ান নদী যেখানে বেরিয়েছে, সেখানে এক জায়গায় নদী থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের দূরত্ব মাত্র ২৪ কিলোমিটার। তাই এই নদীকে ঘিরে পানামা খালের বিকল্প একটি আন্তর্মহাসাগরীয় খাল খননের পরিকল্পনা বারে বারে আলোচনায় উঠে এসেছে, যদিও নানা কারণে তা এখনও বাস্তবায়িত হয়ে ওঠেনি। মানাগুয়া হ্রদ অপরদিকে রিও তিপিতাপা নদী দ্বারা নিকারাগুয়া হ্রদের সাথে যুক্ত। এই নদীটি উত্তরে মানাগুয়া হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণবাহী হয়ে নিকারাগুয়া হ্রদে পড়েছে।
দেশের পূর্বদিকে ক্যারিবীয় নিম্নভূমি অঞ্চলটি অনেকগুলি নদী অধ্যুষিত। পূর্ববাহী এই নদীগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় রিও কোকো। দেশের উত্তর সীমা ধরে প্রবাহিত এই নদী মধ্য আমেরিকার বৃহত্তম নদী। এছাড়াও এই অঞ্চলের অন্য নদীগুলির মধ্যে এসকনদিদো, রিও গ্রান্দে দ্য মাতাহালপা, প্রিনসাপোলকা, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খল

নিকারাগুয়াকে বলা হয়ে থাকে আগ্নেয়গিরির দেশ। দেশের পশ্চিম তট বরাবর একটি আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খল দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত। বস্তুত এই আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খলটি মধ্য আমেরিকার আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খলেরই অংশ বিশেষ। দেশের পশ্চিম তটে প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে উপকূল থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে দুই টেকটনিক প্লেট, ক্যারিবিয় প্লেট ও কোকোস প্লেটের সংযোগস্থল। বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কোকোস প্লেটটি প্রতিবছর ক্যারিবীয় প্লেট অভিমুখে ৭০-৮৫ মিলিমিটার সরে আসছে। অন্যদিকে উত্তর আমেরিকা প্লেটটিকে স্থির ধরে নিলে, ক্যারিবীয় প্লেটটির গতি পূর্ব অভিমুখে প্রতিবছর ১৮-২০ মিলিমিটার। এই দুই প্লেটের অসম গতির কারণে সৃষ্ট সংঘর্ষের ফলে এই অঞ্চল ভূতাত্বিকভাবে এখনও যথেষ্ট অস্থির।[৮] সেই কারণেই এই অঞ্চলে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল রেখা বরাবর একটি আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খল দেখতে পাওয়া যায় যেটি দক্ষিণে কোস্তা রিকা থেকে শুরু হয়ে উত্তরে নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, এল সালভাদোর গুয়াতেমালার মধ্য দিয়ে বিস্তৃত।[৪][৮] এই মধ্য আমেরিকার আগ্নেয় মেখলার একেবারে মধ্যস্থলে নিকারাগুয়ার অবস্থানের ফলে আগ্নেয়গিরির সংখ্যা এ'দেশে এত বেশি। এগুলির মধ্যে অনেকগুলিই সুপ্ত বা জীবন্ত। মাঝেমাঝেই অগ্ন্যুৎপাত তাই এ'দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এ'দেশের সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলির মধ্যে সেরো নেগ্রো, কনসেপসিওন, লাস পিলাস, মাথায়া, সান ক্রিস্তোবাল, তেলিসা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে কনসেপসিওন থেকে শেষ অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে ২০০৯ সালে, সান ক্রিস্তোবালে ২০১২ সালে, তেলিসায় ২০০৭ সালে ও সেরো নেগ্রো শেষবার জেগে উঠেছিল ১৯৯৯ সালে। অপরদিকে মোম্বাচো, মোমোতোম্বো, কসিথুইনা প্রভৃতি আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে গত ১০০ বছরে কোনো অগ্ন্যুৎপাত না ঘটলেও যে কোনও মুহূর্তেই সেগুলি আবার জেগে উঠতে পারে। আবার জাপাতেরা, মাদেরাস, আপোইয়েক প্রভৃতি আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে বিগত কয়েক হাজার বছরের মধ্যেও কোনও অগ্ন্যুতপাতের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি।*

জলবায়ু

নিকারাগুয়ার প্রাকৃতিক মানচিত্র (উচ্চতা)

সাধারণভাবে নিকারাগুয়ায় তাপমাত্রা সারাবছরই প্রায় একরকম থাকে। ঋতুভেদে তাপমাত্রার পার্থক্য ঘটে কম। তবু অঞ্চলভেদে নিকারাগুয়ার জলবায়ুর মধ্যে যথেষ্ট প্রভেদ পরিলক্ষিত হয়। পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিম্নভূমি অঞ্চল ও পূর্বে আতলান্তিক উপকূলে ক্যারিবীয় নিম্নভূমি অঞ্চল সারাবছরই বেশ উষ্ণ। এই অঞ্চলের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য ক্রান্তীয় অঞ্চলের মতো। কিন্তু দেশের মধ্যভাগে আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খল ও তৎসন্নিহিত উচ্চভূমি অঞ্চলে ঋতুভেদে তাপমাত্রা যথেষ্ট ওঠানামা করে থাকে। শীতকালে এই অঞ্চলে ঠাণ্ডা পড়ে, তবে বৃষ্টিপাত ও জীবন্ত আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে মাঝেমাঝেই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে তাপমাত্রার স্থিরতা সময়ে সময়ে বিঘ্নিত হতে দেখা যায়।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিম্নভূমি অঞ্চলটি জলবায়ুর দিক থেকে তিয়েরা কালিয়েন্তে বা উষ্ণ মণ্ডল হিসেবে পরিচিত। সারা বছরই এখানে তাপমাত্রা মোটামুটি একই রকম থাকে, ২৯.৪ এবং ৩২.২ °সে (৮৫ এবং ৯০ °ফা)'এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আবহাওয়া এই অঞ্চলে মোটামুটি শুকনো থাকে। কিন্তু মে মাস থেকে বর্ষা শুরু হয়ে অক্টোবর পর্যন্ত চলতে থাকে। সারা বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০ - ৬০ মিলিমিটার। পূর্বে ক্যারিবীয় সাগর থেকে বয়ে আসা জলীয় বাস্প পূর্ণ বায়ু মধ্যভাগের উঁচু পর্বতমালায় বাধা পাওয়ার ফলে ঐ উচ্চভূমির পূর্ব ঢালের তুলনায় পশ্চিম ঢালে স্বভাবতই বৃষ্টির পরিমাণ কম। তবুও ভালো বৃষ্টিপাত, উর্বর জমি এবং অনুকূল জলবায়ুর কারণে দেশের এই পশ্চিম অঞ্চল আজ দেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এই অঞ্চলেই বাস করেন।
মধ্যভাগের উচ্চভূমি অঞ্চলটি দেশের তিয়েরা তেমপ্লাদা বা নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের জলবায়ু প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিম্নভূমি অঞ্চলের তুলনায় শীতল। এখানকার গড় উষ্ণতা ২৩.৯ থেকে ২৬.৭ °সে (৭৫ থেকে ৮০ °ফা)। বর্ষাকাল এখানে আরও দীর্ঘস্থায়ী, বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেশি। বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ী অঞ্চলে মাঝেমাঝেই ধ্বস নামে। সাধারণভাবে এই অঞ্চলে ভূমি রুক্ষ, জনঘনত্বও কম। তবে এই অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিমের ঢালে যে উপত্যকাটি দেখতে পাওয়া যায়, সেটি যথেষ্ট উর্বর। ফলে এই অঞ্চলে জনঘনত্বও অপেক্ষাকৃত বেশি।
দেশের পূর্ব উপকূলের ক্যারিবীয় নিম্নভূমির জলবায়ুও সম্পূর্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ মণ্ডলীয় জলবায়ু। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি, বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতাও যথেষ্ট বেশি। এই অঞ্চলে প্রচূর বৃষ্টিপাত হয়। বস্তুত এই অঞ্চল সমগ্র মধ্য আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল অঞ্চল। বছরে এর মোট পরিমাণ ২৫০০-৬৫০০ মিলিমিটার। অপেক্ষাকৃত কম জনবসতিপূর্ণ এই অঞ্চলের এক বড় অংশ জুড়ে ক্রান্তীয় রেনফরেস্ট দেখতে পাওয়া যায়। বর্ষাকালে পূর্বদিকের ক্যরিবীয় নিম্নভূমি অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়া বিভিন্ন নদীগুলির নিম্ন, মধ্য ও এমনকী কিছু কিছু ক্ষেত্রে উচ্চপ্রবাহ অঞ্চলেও বন্যার প্রকোপ দেখা যায়। প্রতিবছর এই বন্যার ফলে চাষবাস ও নদী অববাহিকাগুলি ঘিরে থাকা বনাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। এছাড়া মূলত জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে মাঝেমাঝেই প্রবল সামুদ্রিক ঝড় বা হ্যারিকেনের প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। এই সব ঝড়েও ক্যারিবীয় উপকূলীয় অঞ্চলের জীবনযাত্রা বহুসময়েই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে।*

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Gini Index"World Bank। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-১৮ 
  2. [১]
  3. নিকারাও'এর ঐতিহাসিকতা সম্পর্কিত ফের্নান্দো সিলভা লিখিত প্রবন্ধ
  4. মধ্য আমেরিকার আগ্নেয় মেখলা
  5. Large Lakes of the World
  6. Fresh Waters: Unexpected Haunts Bull Shark. elasmo-research.org. ২৬ জুন, ২০১৪ দেখা।
  7. Wildlife in Nicaraguya
  8. Constraints from finite element modeling on the active tectonics of northern Central America and the Middle America Trench. ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮. সংগৃহীত ০৭ জুলাই, ২০১৪।