লিজে মাইটনার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Xqbot (আলোচনা | অবদান)
Robot: nl:Lise Meitner is a featured article
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৬১ নং লাইন: ৬১ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:অস্ট্রীয় পদার্থবিজ্ঞানী]]
[[বিষয়শ্রেণী:অস্ট্রীয় পদার্থবিজ্ঞানী]]
[[বিষয়শ্রেণী:সুয়েডীয় পদার্থবিজ্ঞানী]]
[[বিষয়শ্রেণী:সুয়েডীয় পদার্থবিজ্ঞানী]]
[[বিষয়শ্রেণী:মাক্স প্লাংক মেডেল বিজয়ী]]


{{Link FA|de}}
{{Link FA|de}}

১৭:৫৯, ৮ জুন ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

লিজে মাইটনার (১৮৭৮ - ১৯৬৮) একজন অস্ট্রীয়-সুয়েডীয় পদার্থবিজ্ঞানী যিনি নিউক্লীয় বিয়োজন (Nuclear Fission) প্রক্রিয়ার প্রথম সফল ব্যাখ্যাতা হিসেবে বিখ্যাত। তিনি তার ভ্রাতুষ্পুত্র অটো রবার্ট ফ্রিশ্‌চ-এর সাথে মিলে ফিশন বিক্রিয়ার নাম দেন। উল্লেখ্য ১৮৭৮-৭৯ খ্রিস্টাব্দে যখন ম্যাক্স প্লাংক মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করছিলেন তখনই পদার্থবিজ্ঞান জগতের উজ্জ্বল চার নক্ষত্রের জন্ম হয় যারা সনাতন পদার্থবিজ্ঞানের বেড়াজাল ছিন্ন করে মানুষের চিন্তার ধারাকে বদলে দিয়েছেন। এরা হলেন লিস মিটনার, অটো হান, আলবার্ট আইনস্টাইন এবং মাক্স ফন লাউয়ে। এদের মধ্যে মিটনার বাদে সবার জন্মই ১৮৭৯ সালে। মিটনার জন্মান '৭৯ সাল শুরু হবার মাত্র দেড় মাস আগে। ম্যাক্স প্লাংক মজা করে তাই বলেছিলেন:

চিত্র:Lise Meitner 1900.jpg
১৯০০ খ্রিস্টাব্দে লিজে মাইটনার

বিংশ শতাব্দীর নারী বিজ্ঞানীদের মধ্যে মেরি কুরির পরেই তার নাম উচ্চারিত হয়ে থাকে। অবশ্য নোবেল পুরস্কার লাভের সৌভাগ্য তার হয়নি যদিও তা তার প্রাপ্য ছিল। অটো হান এবং তিনি একসাথেই প্রায় সকল গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু নোবেল পান অটো হান একা। ইহুদি হওয়ার কারণে তাকে জার্মানিও ছাড়তে হয়েছিল। বিজ্ঞানের প্রতি অবদানের তুলনায় স্বীকৃত পেয়েছেন বেশ কম। অবশ্য আইইউপিএসি ১০৯ টি রাসায়নিক মৌলের একটিকে তার নামে নামাঙ্কিত করেছে: মিটনেরিয়াম

জীবনী

প্রাথমিক জীবন

লিস মিটনার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ভিয়েনাতেই তার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। একই সাথে কিছু ব্যক্তিগত পড়াশোনা শেষে তিনি ১৯০১ সালে ভিয়েনাতে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। ১৯০২ সাল থেকেই একাধারে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং গণিতশাস্ত্রের উপর বিস্তারিত পড়াশোনা শুরু করেন। এ সকল বিষয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন ভিয়েনা এবং বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে সে সময় তার সহযোগী এবং শিক্ষক ছিলেন লুডভিগ বোল্ট্‌জম্যান এবং ফ্রাঞ্জ এক্সনার। এরা দুই জনের বাসও ছিল ভিয়েনাতে। ১৯০৬ সালে মিটনার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তখন তার বয়স ছিল ২৮ বছর। তিনি দ্বিতীয় নারী যে জার্মানিতে এই ডিগ্রি অর্জন করে। প্রথম হলেন মাদাম কুরি (মেরি কুরি)। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মিটনারের শিক্ষক বোল্ট্‌জম্যান আত্মহত্যা করেন যা তার জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। তখনই প্রথম অস্ট্রিয়া ত্যাগ করে জার্মানির বার্লিনে চলে যান।

বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তার সাথে ১৯০৭ সালেরই ২৮ নভেম্বর তার সাথে জার্মান পরমাণু বিজ্ঞানী অটো হানের পরিচয় হয়। এখান থেকে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন এমিল ফিশার রাসায়নিক ইনস্টিটিউটে যোগদানের মাধ্যমে। এই প্রতিষ্ঠানে হান এবং মিটনার দীর্ঘ ৩০ বছর একসাথে একই বিষয়ের উপর গবেষণা করেছেন। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকলেও বন্ধুত্বের ঘাটতি ছিল না। রাজনৈতিক আগ্রাসনের কবলে পড়েই তারা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপটে মেয়ে হিসেবে বিজ্ঞানী মহলে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে নেয়া সহজ ছিল না। হান এক্ষেত্রে মিটনারকে সহায়তা করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা এমিল ফিশার মানসিকভাবে বিজ্ঞান জগতে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সহাবস্থানের বিষয়টিতে অভ্যস্ত না হলেও যথেষ্ট উদারতা প্রদর্শন করেছেন। আর প্লাংকের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফলেই মিটনার অটো হানের কারপেন্টারি শপে কাজ করার অনুমতি পান। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের ছাত্রদের গবেষণাগারে প্রবেশের অধিকার তার ছিল না। অবিবাহিত এবং সুন্দরী হওয়ায় কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল তার উপস্থিতি ছাত্রদের গবেষণায় ব্যাঘাত ঘটাবে। প্রকৃপক্ষে এটি ছিল পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চিরাচরিত মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। মিটনার তা মোটামুটি জয় করতে পেরেছিলেন বলা যায়।

কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউটে

১৯০৮ সালে মিটনার এবং অটো হান যৌথভাবে একটি তেজষ্ক্রিয় মৌল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেন যার নাম একটিনিয়াম। তাদের আবিষ্কৃত মৌলটি ছিল "একটিনিয়াম সি"। ১৯০৯ সালে তিনি হানের সহায়তায় জার্মান ফিজিক্যাল সোসাইটিতে তাদের কাজের বিবরণী একটি গবেষণাপত্র আকারে পেশ করেন এবং একই সাথে এমিল ফিশার ইনস্টিটিউটের সকল ক্ষেত্রের সুবিধা পাবার আবেদন জানান। ১৯১২ সালে তারা তৎকালীন কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউটের সদস্যপদ লাভ করেন এবং এখানে কাজ করা শুরু করেন। অটোহান এখানে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত কাজ করলেও দেশান্তরিত হওয়ার কারণে মিটনার ১৯৩৮ সালেই এ স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯১৪ সালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের রসায়ন বিভাগের তেজস্ক্রিয়তা শাখার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯১৫ সাল পর্যন্ত তিনি এখানে ম্যাক্স প্লাংকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। এই সাল থেকে তিনি নিজের মৌলিক কাজের ব্যাপারে আরও নিবেদিত ও সক্রিয় হয়ে উঠেন। ক্রমেই তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অস্ট্রিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন হাসপাতালে তিনি তেজস্ক্রিয়াবিদ হিসেবে কাজ করেছেন।

১৯১৭ সালে তিনি হানের সাথে মিলে আরেকটি তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক মৌল আবিষ্কার করেন যার নাম প্রোটেকটিনিয়াম (পারমানবিক সংখ্যা ৯১)। তিনি ১৯১৮ সালে কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউটের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক নিযুক্ত হন। আর ১৯১৯ সালে প্রুশিয়ার বিজ্ঞান, কলা এবং শিক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় থেকে অধ্যাপক পদ লাভ করেন। ১৯২২ সালে তিনি আলফা এবং বিটা বিকিরণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সমর্থ হন। মাক্স ফন লাউয়ে ১৯০৬, হান ১৯০৭ এবং আইনস্টাইন ১৯০৮ সালের মধ্যে তাদের সর্বশেষ একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু মিটনারের সর্বশেষ ডিগ্রি অর্জন করতে আরও বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল। এর কারণ মেয়েদের জন্য অপর্যাপ্ত বিজ্ঞানসম্মত ডিগ্রি। তখন প্রুশিয়ায় এ ধরনের উঁচু স্তরের পরীক্ষায় মেয়েদেরকে অংশ নিতে দেয়া হত না।

বার্লিনে অধ্যাপনা

মিটনার তার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য এ সময় তেজস্ক্রিয়তার অন্যতম প্রধান অংশ বিটা রশ্মির বর্ণালির উপর একটি গবেষণাপত্র জমা দেন। একই সাথে লাউয়ে সুইজারল্যান্ডের শিক্ষা অনুষদে একটি সুপারিশমূলক পত্র লিখে পাঠান যাতে তিনি মিটনারকে পৃথিবীর একজন নেতৃস্থানীয় গবেষক বলে উল্লেখ করেন। তাই তার যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে তিনি সুইজারল্যান্ডীয় শিক্ষা অনুষদকে অনুরোধ জানান। অবশেষে মিটনার সেই শিক্ষা অনুষদে নিজের স্থান করে নিতে সমর্থ হন। এ সময়েই মূলত মিটনারের একাডেমিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। তিনি ১৯২৬ সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তার গবেষণাও চলতে থাকে। ১৯২৯ সালে বিটাক্ষয় ধর্মের সূক্ষ্ণ পরিমাপ করতে সমর্থ হন। এই আবিষ্কারটি বিশেষ গুরুত্বের দাবীদার, কারণ এর মাধ্যমেই তেজস্ক্রিয় নিউক্লীয় রুপান্তর চিহ্নিতকরণ সম্ভব হয়েছে।

১৯৩০ সালের ডিসেম্বর ৪ তারিখে জার্মানির টুবিঙেনে হান্‌স গেইগার এবং লিস মিটনারের যৌথ উপস্থিতিতে তেজস্ক্রিয়তার উপর একটি আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সুইজারল্যান্ডীয় পদার্থবিজ্ঞানী ভোল্‌ফগ্যাং পাউলি জুরিখ থেকে এসে আর এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন নি। কিন্তু তিনি একটি চিঠি পেরণ করেন যাতে তিনি তেজস্ক্রিয়তার জগতে নিউট্রিনো নামক একটি নতুন বস্তুকণার উপস্থিতির চমকপ্রদ অনুসিদ্ধান্ত পেশ করেছিলেন। এই চিঠিটি পড়ে মিটনার বিশেষ ঔৎসুক হয়ে উঠেন এবং চিঠিটি অনেকদিন পর্যন্ত সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন। এ সময় অটো হান বার্লিনে মিটনারের তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ে তাদের আবিস্কার এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় বসেন। নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার তাগিদে তার বেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ শুরু করেন। কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউটের লক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠিত করাও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। তারা তাদের বক্তৃতাগুলো পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করতেন না। তাদের কাজের ধারাটিকে নিজেরা খুব উপভোগ করতেন। একই সাথে মিটনার সফলভাবে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন। কিন্তু ১৯৩৩ সালে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। কারণ তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে তথা বংশের দিক দিয়ে বিশুদ্ধ আর্য ছিলেন না। আসলে এই সালেই এডল্‌ফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হয় এবং হিটলারের কট্টর জাতীয়তাবাদ ও আর্য রক্তের পূজার কারণেই মিটনারসহ আরও অনেক বিজ্ঞানী ও শিক্ষককে তাদের কাজ ছেড়ে দিতে হয়।

জার্মানিতে শেষ দিনগুলি

অধ্যাপনা করতে না পারলেও গবেষণা কর্মে তিনি ছিলেন অটল। ১৯৩৪ সালে হানের সাথে মিলে ইউরেনিয়াম-উত্তর মৌল পৃথকীকরণের উপর কাজ করেন। এছাড়া কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউটের রসায়ন বিভাগেরও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অস্ট্রীয় হওয়ার কারণেও তাকে ভুগতে হয়েছে। সমাজবিদদের সাম্প্রদায়িক নীতিই ছিল এর কারণ। তার ওপর তিনি ছিলেন নারী। সব মিলিয়ে মাঝে মধ্যেই তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়েপড়তেন। ১৯৩৬ সালে ফণ লাউয়ে, মিটনার ও অটো হানকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার প্রদাণের জন্য নোবেল কিমিটির কাছে প্রস্তাব করেন। ম্যাক্স প্লাঙ্কও এ প্রস্তাবের সাথে সম্মত হয়েছিলেন। লাউয়ের বিশ্বাস ছিল নোবেল পুরস্কার মিটনারের জীবনে ভালো ফল বয়ে আনবে এবং তার চারদিকে নিরাপত্তার একটি বেষ্টনী তৈরি করবে। নোবেল বিজয়ী মিটনার হয়তো তার জীবনকে নতুনভাবে আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করতে পারবে। মিটনারও তার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকিই পরীশ্রম করতে চেষ্টা করেছেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যাতাকলে পড়ে অনেক কিছুই তার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। ১৯৩৭ সালে কাইজার ভিলহেল্‌মের নতুন সভাপতি এবং কর্মকর্তাদের সাথেও মিটনারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। একা নারী হয়েও সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছেন। কিন্তু অবশেষে তাকে নোবেল পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হয়। একই সময়ে তাকে জার্মানি ত্যাগেও বাধ্য করা হয়। তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তার ছিল না। তিনি তাই নতুন আবাসনের চিন্তা শুরু করেন। ১৯৩৮ সালে কমনওয়েল্‌থ অভ্যন্তরীন সচিবের কাছে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন পত্র প্রেরণ করেন। দীর্ঘ এক মাস পর পত্রের না-বোধক উত্তর আসে। এ কারণে দেশ ত্যাগ করে অন্য কোথাও স্থায়ী হতেও তার কষ্ট হয়। অনেক কষ্টে পরিশেষে দেশ ত্যাগ করেন। দেশত্যাগী মিটনার প্রথমে নেদারল্যান্ড ও পরে সুইডেনে যান। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে অধ্যাপনা শুরু করার মাধ্যমে আবার কিছুটা স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করেন।

শেষ জীবন

স্টকহোমে অধ্যাপনায় নিযুক্ত থাকার পাশাপাশি তিনি স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরমাণু বিষয়ে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। গবেষণা শেষে ১৯৩৯ সালে তিনি তার ভ্রাতুষ্পুত্র ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী অটো রবার্ট ফ্রিশ্‌চের সাথে মিলে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্রটিই প্রথম পরমাণুর বিভাজন বিষয়ে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রদানে সক্ষম হয়েছিল। মিটনার এবং ফ্রিশ্‌চ পরমাণুর এই বিভাজন প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছিলেন নিউক্লীয় বিযোজন বা নিউক্লীয় বিভাজন (nuclear fission)। এই আবিষ্কার পারমানবিক শক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিউক্লীয় বিভাজন প্রক্রিয়াটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন অটো হানফ্রিট্‌জ স্ট্রাসম্যান

১৯৪৬ সালের অর্ধেক সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। এ সময় টেকনিক্যাল কলেজে নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন। এর আগে যে নোবেল ইনস্টিটিউটে যোগ দিয়েছিলেন তাও ত্যাগ করেন। অব্যবহিত পরেই সুয়েডীয় পরমাণু শক্তি কমিশনের সাহায্যে একটি ছোট আকারের ব্যক্তিগত গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এই গবেষণাগারে প্রকৌশল বিজ্ঞানের কাজ করেই বাকি সময়টা কাটিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একটি পরীক্ষণমূলক পারমাণবিক চুল্লী স্থাপন করেছিলেন। শেষ জীবনে এসে ১৯৬৩ সালে ভিয়েনাতে অবস্থিত ইউরেনিয়া শিক্ষা ইনস্টিটিউটের পদার্থবিজ্ঞানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বিখ্যাত বক্তৃতা দিয়েছিলেন। জীবনের শেষ কটা দিন ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ শহরে ভ্রাতুষ্পুত্র ফ্রিশ্‌চের সাথে নির্জন পরিবেশে অবস্থিত একটি বাসায় বসবাস করতেন। ১৯৬৮ সালের ২৭ অক্টোবর এই মহীয়সী বিজ্ঞানী ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ শহরে মৃত্যুবরণ করেন। এর মাত্র চার মাস আগে জুলাই ২৮ তারিখে অটো হানের মৃত্যু হয়েছিল। ইংল্যান্ডের এক গির্জার পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে। তার সমাধি ফলকে পাথরে খোদাই করে লেখা আছে:

গবেষণা কর্ম

রাসায়নিক মৌল আবিষ্কার

তেজস্ক্রিয়তা

নিউক্লীয় বিয়োজন

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:Link FA টেমপ্লেট:Link FA