পাখি পরিযান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Khaled0147 ব্যবহারকারী পাখি পরিযায়ন পাতাটিকে পাখি পরিযান শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন: সঠিক বাংলা...
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে; কোনো সমস্যা?
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[File:Waders in flight Roebuck Bay.jpg|thumb|পরিযায়ী পাখির ঝাঁক বেঁধে পরিযান]]
[[চিত্র:Waders in flight Roebuck Bay.jpg|thumb|পরিযায়ী পাখির ঝাঁক বেঁধে পরিযান]]
[[File:Grus grus -migrating north-6a.jpg|thumb|পরিযায়ী [[সারস]]]]
[[চিত্র:Grus grus -migrating north-6a.jpg|thumb|পরিযায়ী [[সারস]]]]


'''পাখি পরিযান''' বলতে নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু পাখির প্রতি বছর বা কয়েক বছর পর পর একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে বা সময়ে কম করে দু’টি অঞ্চলের মধ্যে আসা-যাওয়াকেই বোঝায়। জীবজন্তুর ক্ষেত্রে '''মাইগ্রেশন''' (''Migration'') এর সঠিক [[পরিভাষা]] হচ্ছে সাংবাৎসরিক পরিযান।<ref name="আলী রেজা">''বাংলাদেশের পাখি'', রেজা খান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (২০০৮), পৃ. ২৩।</ref> যে সব প্রজাতির পাখি পরিযানে অংশ নেয়, তাদেরকে '''পরিযায়ী পাখি''' বলে। এ পাখিরা প্রায় প্রতিবছর পৃথিবীর কোন এক বা একাধিক দেশ বা অঞ্চল থেকে বিশ্বের অন্য কোন অঞ্চলে চলে যায় কোন একটি বিশেষ ঋতুতে। সে ঋতু শেষে সেগুলো আবার ফিরে যায় যেখান থেকে এসেছিল সেখানে। এমন আসা যাওয়া কখনো এক বছরে সীমিত থাকে না। এ ঘটনা ঘটতে থাকে প্রতি বছর এবং কমবেশি একই সময়ে।
'''পাখি পরিযান''' বলতে নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু পাখির প্রতি বছর বা কয়েক বছর পর পর একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে বা সময়ে কম করে দু’টি অঞ্চলের মধ্যে আসা-যাওয়াকেই বোঝায়। জীবজন্তুর ক্ষেত্রে '''মাইগ্রেশন''' (''Migration'') এর সঠিক [[পরিভাষা]] হচ্ছে সাংবাৎসরিক পরিযান।<ref name="আলী রেজা">''বাংলাদেশের পাখি'', রেজা খান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (২০০৮), পৃ. ২৩।</ref> যে সব প্রজাতির পাখি পরিযানে অংশ নেয়, তাদেরকে '''পরিযায়ী পাখি''' বলে। এ পাখিরা প্রায় প্রতিবছর পৃথিবীর কোন এক বা একাধিক দেশ বা অঞ্চল থেকে বিশ্বের অন্য কোন অঞ্চলে চলে যায় কোন একটি বিশেষ ঋতুতে। সে ঋতু শেষে সেগুলো আবার ফিরে যায় যেখান থেকে এসেছিল সেখানে। এমন আসা যাওয়া কখনো এক বছরে সীমিত থাকে না। এ ঘটনা ঘটতে থাকে প্রতি বছর এবং কমবেশি একই সময়ে।
৬ নং লাইন: ৬ নং লাইন:
কিছু প্রজাতির মাছ, স্তন্যপায়ী প্রাণী এমনকি পোকামাকড়ও ফিবছর পরিযান ঘটায়। তবে পাখির মত এত ব্যাপক আর বিস্তৃতভাবে কেউই পরিযানে অংশ নেয় না। পৃথিবীর প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১৮৫৫ প্রজাতিই (প্রায় ১৯%) পরিযায়ী।<ref name="BirdLife's Flyways Programme">[http://www.birdlife.org/flyways/index.html], BirdLife International এ পাখি পরিযান বিষয়ক নিবন্ধ।</ref>
কিছু প্রজাতির মাছ, স্তন্যপায়ী প্রাণী এমনকি পোকামাকড়ও ফিবছর পরিযান ঘটায়। তবে পাখির মত এত ব্যাপক আর বিস্তৃতভাবে কেউই পরিযানে অংশ নেয় না। পৃথিবীর প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১৮৫৫ প্রজাতিই (প্রায় ১৯%) পরিযায়ী।<ref name="BirdLife's Flyways Programme">[http://www.birdlife.org/flyways/index.html], BirdLife International এ পাখি পরিযান বিষয়ক নিবন্ধ।</ref>


==পরিযানের কারণ==
== পরিযানের কারণ ==


পাখি পরিযানের অন্যতম দু’টি কারণ হচ্ছে খাদ্যের সহজলভ্যতা আর বংশবৃদ্ধি। [[উত্তর গোলার্ধ|উত্তর গোলার্ধের]] অধিকাংশ পরিযায়ী পাখি বসন্তকালে উত্তরে আসে অত্যধীক পোকামাকড় আর নতুন জন্ম নেয়া উদ্ভিদ ও উদ্ভিদাংশ খাওয়ার লোভে। এসময় খাদ্যের প্রাচুর্যের কারণে এরা বাসা করে বংশবৃদ্ধি ঘটায়। শীতকালে বা অন্য যে কোন সময়ে খাবারের অভাব দেখা দিলে এরা দক্ষিণে রওনা হয়।<ref name="migration">[http://www.birds.cornell.edu/AllAboutBirds/studying/migration/], ''Migration'', All about birds.</ref><ref name=Lincoln>{{cite book|author=Lincoln, F. C.|year=1979|title=Migration of Birds.|publisher=Fish and Wildlife Service. ''Circular 16'.|url=http://www.archive.org/details/migrationofbirds00lincrich}}</ref>
পাখি পরিযানের অন্যতম দু’টি কারণ হচ্ছে খাদ্যের সহজলভ্যতা আর বংশবৃদ্ধি। [[উত্তর গোলার্ধ|উত্তর গোলার্ধের]] অধিকাংশ পরিযায়ী পাখি বসন্তকালে উত্তরে আসে অত্যধীক পোকামাকড় আর নতুন জন্ম নেয়া উদ্ভিদ ও উদ্ভিদাংশ খাওয়ার লোভে। এসময় খাদ্যের প্রাচুর্যের কারণে এরা বাসা করে বংশবৃদ্ধি ঘটায়। শীতকালে বা অন্য যে কোন সময়ে খাবারের অভাব দেখা দিলে এরা দক্ষিণে রওনা হয়।<ref name="migration">[http://www.birds.cornell.edu/AllAboutBirds/studying/migration/], ''Migration'', All about birds.</ref><ref name=Lincoln>{{cite book|author=Lincoln, F. C.|year=1979|title=Migration of Birds.|publisher=Fish and Wildlife Service. ''Circular 16'.|url=http://www.archive.org/details/migrationofbirds00lincrich}}</ref>
১২ নং লাইন: ১২ নং লাইন:
আবহাওয়াকে পাখি পরিযানের অন্য আরেকটি কারণ হিসেবে ধরা হয়। শীতের প্রকোপে অনেক পাখিই পরিযায়ী হয়। [[হামিংবার্ড|হামিংবার্ডও]] এর ব্যতিক্রম নয়। তবে খাবারের প্রাচুর্য থাকলে প্রচণ্ড শীতেও এরা বাসস্থান ছেড়ে নড়ে না।<ref name="migration"/>
আবহাওয়াকে পাখি পরিযানের অন্য আরেকটি কারণ হিসেবে ধরা হয়। শীতের প্রকোপে অনেক পাখিই পরিযায়ী হয়। [[হামিংবার্ড|হামিংবার্ডও]] এর ব্যতিক্রম নয়। তবে খাবারের প্রাচুর্য থাকলে প্রচণ্ড শীতেও এরা বাসস্থান ছেড়ে নড়ে না।<ref name="migration"/>


==পরিযানের প্রকার==
== পরিযানের প্রকার ==


পাখিদের মধ্যে সাধারণত তিন ধরনের পরিযান লক্ষ্য করা যায়।<ref name="migration"/> পরিযানের প্রকারগুলো হল-
পাখিদের মধ্যে সাধারণত তিন ধরনের পরিযান লক্ষ্য করা যায়।<ref name="migration"/> পরিযানের প্রকারগুলো হল-


[[Image:Migrationroutes.svg|thumb|300px|কতিপয় দীর্ঘদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখির পরিযানপথ]]
[[চিত্র:Migrationroutes.svg|thumb|300px|কতিপয় দীর্ঘদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখির পরিযানপথ]]
# '''স্বল্পদৈর্ঘ্য পরিযান:''' এধরনের পরিযায়ী পাখিগুলো প্রধানত স্থায়ী। তবে খাদ্যাভাব দেখা দিলে এরা তাদের স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্রের আশেপাশে অন্য অঞ্চলে গমন করে। এদের পরিযান অনিয়মিত। [[চাতক]], [[পাপিয়া]], [[খয়েরি-ডানা পাপিয়া|খয়েরিডানা পাপিয়া]] স্বল্পদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখি।
# '''স্বল্পদৈর্ঘ্য পরিযান:''' এধরনের পরিযায়ী পাখিগুলো প্রধানত স্থায়ী। তবে খাদ্যাভাব দেখা দিলে এরা তাদের স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্রের আশেপাশে অন্য অঞ্চলে গমন করে। এদের পরিযান অনিয়মিত। [[চাতক]], [[পাপিয়া]], [[খয়েরি-ডানা পাপিয়া|খয়েরিডানা পাপিয়া]] স্বল্পদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখি।
# '''মধ্যদৈর্ঘ্য পরিযান:''' এ প্রজাতির পাখিরা প্রায়শ পরিযান ঘটায়, তবে পরিযানের বিস্তার স্বল্পদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখিদের তুলনায় অনেক বেশি হয়।
# '''মধ্যদৈর্ঘ্য পরিযান:''' এ প্রজাতির পাখিরা প্রায়শ পরিযান ঘটায়, তবে পরিযানের বিস্তার স্বল্পদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখিদের তুলনায় অনেক বেশি হয়।
# '''দীর্ঘদৈর্ঘ্য পরিযান:''' এ প্রজাতির পাখিদের পরিযান এক বিশাল এলাকা জুড়ে ঘটে। এ ধরনের পাখিদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে এক বা একাধিক সপ্তাহ লাগে। এসময় এরা হাজার হাজার মাইল দূরত্ব পাড়ি দেয়। [[নীলশির]], [[লালশির]], [[কালো হাঁস]], [[লেন্জা হাঁস]], [[ক্ষুদে গাংচিল]] দীর্ঘদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখি।<ref name="Migratory Patterns">[http://www.birds.cornell.edu/AllAboutBirds/studying/migration/], ''Migratory Patterns'', All about birds.</ref>
# '''দীর্ঘদৈর্ঘ্য পরিযান:''' এ প্রজাতির পাখিদের পরিযান এক বিশাল এলাকা জুড়ে ঘটে। এ ধরনের পাখিদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে এক বা একাধিক সপ্তাহ লাগে। এসময় এরা হাজার হাজার মাইল দূরত্ব পাড়ি দেয়। [[নীলশির]], [[লালশির]], [[কালো হাঁস]], [[লেন্জা হাঁস]], [[ক্ষুদে গাংচিল]] দীর্ঘদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখি।<ref name="Migratory Patterns">[http://www.birds.cornell.edu/AllAboutBirds/studying/migration/], ''Migratory Patterns'', All about birds.</ref>


==পরিযান প্রক্রিয়া==
== পরিযান প্রক্রিয়া ==


দীর্ঘ যাত্রায় পাখিরা কিভাবে পথ চেনে, সে এক রহস্য। দেখা গেছে পথ চেনাতে অভিজ্ঞ পাখিরাই ঝাঁকের সামনের দিকে থাকে। নতুনরা থাকে পেছনে। এ ক্ষেত্রে পাখিরা উপকূলরেখা, পাহাড়শ্রেণী, নদী, সূর্য, চাঁদ, তারা ইত্যাদির মাধ্যমেই পথ খুঁজে নেয় বলে ধারণা করা হয়। যেসব পাখি একা ভ্রমণ করে তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, জীবনে প্রথমবার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলেও তারা গন্তব্যে পৌঁছে যায়। এ জন্য বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রই পাখিদের পথ চেনায়।<ref name="test">[http://www.dailykalerkantho.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=09-02-2010&feature=yes&type=single&pub_no=69&cat_id=3&menu_id=22&news_type_id=1&index=0], ''পরিযায়ী পাখি'', মনিরুল খান, দৈনিক কালের কণ্ঠ।</ref>
দীর্ঘ যাত্রায় পাখিরা কিভাবে পথ চেনে, সে এক রহস্য। দেখা গেছে পথ চেনাতে অভিজ্ঞ পাখিরাই ঝাঁকের সামনের দিকে থাকে। নতুনরা থাকে পেছনে। এ ক্ষেত্রে পাখিরা উপকূলরেখা, পাহাড়শ্রেণী, নদী, সূর্য, চাঁদ, তারা ইত্যাদির মাধ্যমেই পথ খুঁজে নেয় বলে ধারণা করা হয়। যেসব পাখি একা ভ্রমণ করে তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, জীবনে প্রথমবার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলেও তারা গন্তব্যে পৌঁছে যায়। এ জন্য বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রই পাখিদের পথ চেনায়।<ref name="test">[http://www.dailykalerkantho.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=09-02-2010&feature=yes&type=single&pub_no=69&cat_id=3&menu_id=22&news_type_id=1&index=0], ''পরিযায়ী পাখি'', মনিরুল খান, দৈনিক কালের কণ্ঠ।</ref>
[[File:Phoenicopterus roseus 2 (Martin Mecnarowski).jpg|thumb|left|[[ফ্লেমিঙ্গো]]]]
[[চিত্র:Phoenicopterus roseus 2 (Martin Mecnarowski).jpg|thumb|left|[[ফ্লেমিঙ্গো]]]]


==পরিযায়ী পাখির বিভ্রান্তিমূলক নাম==
== পরিযায়ী পাখির বিভ্রান্তিমূলক নাম ==
[[File:Pied Cuckoo (Clamator jacobinus) at Hyderabad, AP W 142.jpg|thumb|left|[[চাতক]]]]
[[চিত্র:Pied Cuckoo (Clamator jacobinus) at Hyderabad, AP W 142.jpg|thumb|left|[[চাতক]]]]
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, টেলিভিশনে, বই-পুস্তকে পাখি বিষয়ক অজ্ঞ ব্যাক্তিগণ পরিযায়ী পাখিদের ''অতিথি পাখি'', ''গেস্ট বার্ড'', ''ভিনদেশী পাখি'' বা ''বিদেশী পাখি'' হিসেবে অভিহিত করেন। আবার [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশে]] পরিযায়ী পাখি বললেই ধরে নেওয়া হয় কেবল শীতকালে আসা [[হাঁস]] আর [[রাজহাঁস|রাজহাঁসকে]]। এ হিসেবে [[কালিম|কালেম]], [[ডাহুক]] বা [[ছোট সরালীকেও]] শীতের পাখি হিসেবে অভিহিত করা হয়, যদিও এরা বাংলাদেশের নির্ভেজাল স্থানীয় বাসিন্দা প্রজাতির পাখি। পরিযায়ী পাখিমাত্রই যে হাঁসজাতীয় ও [[জলচর পাখি]], এমনটা নয়। পরিযায়ী পাখির এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে [[খঞ্জন|খঞ্জনা]] (Wagtails), [[চটক]] (Flycatchers), [[মাঠচড়াই]] (Larks), [[কসাই পাখি]] (Shrikes), [[গাঙচিল]], বিভিন্ন শিকারী পাখি ইত্যাদি।<ref name="আলী রেজা"/><ref name="test"/>
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, টেলিভিশনে, বই-পুস্তকে পাখি বিষয়ক অজ্ঞ ব্যাক্তিগণ পরিযায়ী পাখিদের ''অতিথি পাখি'', ''গেস্ট বার্ড'', ''ভিনদেশী পাখি'' বা ''বিদেশী পাখি'' হিসেবে অভিহিত করেন। আবার [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশে]] পরিযায়ী পাখি বললেই ধরে নেওয়া হয় কেবল শীতকালে আসা [[হাঁস]] আর [[রাজহাঁস|রাজহাঁসকে]]। এ হিসেবে [[কালিম|কালেম]], [[ডাহুক]] বা [[ছোট সরালীকেও]] শীতের পাখি হিসেবে অভিহিত করা হয়, যদিও এরা বাংলাদেশের নির্ভেজাল স্থানীয় বাসিন্দা প্রজাতির পাখি। পরিযায়ী পাখিমাত্রই যে হাঁসজাতীয় ও [[জলচর পাখি]], এমনটা নয়। পরিযায়ী পাখির এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে [[খঞ্জন|খঞ্জনা]] (Wagtails), [[চটক]] (Flycatchers), [[মাঠচড়াই]] (Larks), [[কসাই পাখি]] (Shrikes), [[গাঙচিল]], বিভিন্ন শিকারী পাখি ইত্যাদি।<ref name="আলী রেজা"/><ref name="test"/>


==রোগের বিস্তার==
== রোগের বিস্তার ==
[[File:Aythya-fuligula Tufted-Duck.jpg|thumb|[[কালো হাঁস]]]]
[[চিত্র:Aythya-fuligula Tufted-Duck.jpg|thumb|[[কালো হাঁস]]]]
পরিযায়ী পাখিরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিপজ্জনক রোগের জীবাণু বহন করার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ পাখিরা বহু বছর ধরে নির্দিষ্ট কিছু জীবাণু বহন করে বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঐ জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে। ফলে এরা অনেকটা ঐ জীবাণুর বাহক হিসেবে কাজ করে এবং অন্যত্র জীবাণু ছড়িয়ে দেয়। প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন কোন প্রজাতি পরিযায়ী প্রজাতির সংস্পর্শে আসলে সাথে সাথে আক্রান্ত হয়। [[পশ্চিম নীল ভাইরাস]] (West Nile Virus) এবং [[এভিয়ান ইন্ফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস]] (যার জন্য [[বার্ড ফ্লু]] রোগ হয়) এমনই দু’টি জীবাণু।<ref name="Migration and the spread of disease">[http://www.birds.cornell.edu/AllAboutBirds/studying/migration/disease], ''Migration and the spread of disease'', All about birds.</ref>
পরিযায়ী পাখিরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিপজ্জনক রোগের জীবাণু বহন করার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ পাখিরা বহু বছর ধরে নির্দিষ্ট কিছু জীবাণু বহন করে বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঐ জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে। ফলে এরা অনেকটা ঐ জীবাণুর বাহক হিসেবে কাজ করে এবং অন্যত্র জীবাণু ছড়িয়ে দেয়। প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন কোন প্রজাতি পরিযায়ী প্রজাতির সংস্পর্শে আসলে সাথে সাথে আক্রান্ত হয়। [[পশ্চিম নীল ভাইরাস]] (West Nile Virus) এবং [[এভিয়ান ইন্ফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস]] (যার জন্য [[বার্ড ফ্লু]] রোগ হয়) এমনই দু’টি জীবাণু।<ref name="Migration and the spread of disease">[http://www.birds.cornell.edu/AllAboutBirds/studying/migration/disease], ''Migration and the spread of disease'', All about birds.</ref>


==তথ্যসূত্র==
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{reflist}}


==আরও দেখুন==
== আরও দেখুন ==


* [[বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস]]
* [[বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস]]
৪৫ নং লাইন: ৪৫ নং লাইন:
* [[হাকালুকি হাওর]]
* [[হাকালুকি হাওর]]
* [[রবীন্দ্র সরোবর]]
* [[রবীন্দ্র সরোবর]]
*[[জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়]]
* [[জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়]]


[[বিষয়শ্রেণী:পাখিবিজ্ঞান]]
[[বিষয়শ্রেণী:পাখিবিজ্ঞান]]

০৯:১৪, ৭ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

পরিযায়ী পাখির ঝাঁক বেঁধে পরিযান
পরিযায়ী সারস

পাখি পরিযান বলতে নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু পাখির প্রতি বছর বা কয়েক বছর পর পর একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে বা সময়ে কম করে দু’টি অঞ্চলের মধ্যে আসা-যাওয়াকেই বোঝায়। জীবজন্তুর ক্ষেত্রে মাইগ্রেশন (Migration) এর সঠিক পরিভাষা হচ্ছে সাংবাৎসরিক পরিযান।[১] যে সব প্রজাতির পাখি পরিযানে অংশ নেয়, তাদেরকে পরিযায়ী পাখি বলে। এ পাখিরা প্রায় প্রতিবছর পৃথিবীর কোন এক বা একাধিক দেশ বা অঞ্চল থেকে বিশ্বের অন্য কোন অঞ্চলে চলে যায় কোন একটি বিশেষ ঋতুতে। সে ঋতু শেষে সেগুলো আবার ফিরে যায় যেখান থেকে এসেছিল সেখানে। এমন আসা যাওয়া কখনো এক বছরে সীমিত থাকে না। এ ঘটনা ঘটতে থাকে প্রতি বছর এবং কমবেশি একই সময়ে।

কিছু প্রজাতির মাছ, স্তন্যপায়ী প্রাণী এমনকি পোকামাকড়ও ফিবছর পরিযান ঘটায়। তবে পাখির মত এত ব্যাপক আর বিস্তৃতভাবে কেউই পরিযানে অংশ নেয় না। পৃথিবীর প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১৮৫৫ প্রজাতিই (প্রায় ১৯%) পরিযায়ী।[২]

পরিযানের কারণ

পাখি পরিযানের অন্যতম দু’টি কারণ হচ্ছে খাদ্যের সহজলভ্যতা আর বংশবৃদ্ধি। উত্তর গোলার্ধের অধিকাংশ পরিযায়ী পাখি বসন্তকালে উত্তরে আসে অত্যধীক পোকামাকড় আর নতুন জন্ম নেয়া উদ্ভিদ ও উদ্ভিদাংশ খাওয়ার লোভে। এসময় খাদ্যের প্রাচুর্যের কারণে এরা বাসা করে বংশবৃদ্ধি ঘটায়। শীতকালে বা অন্য যে কোন সময়ে খাবারের অভাব দেখা দিলে এরা দক্ষিণে রওনা হয়।[৩][৪]

আবহাওয়াকে পাখি পরিযানের অন্য আরেকটি কারণ হিসেবে ধরা হয়। শীতের প্রকোপে অনেক পাখিই পরিযায়ী হয়। হামিংবার্ডও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে খাবারের প্রাচুর্য থাকলে প্রচণ্ড শীতেও এরা বাসস্থান ছেড়ে নড়ে না।[৩]

পরিযানের প্রকার

পাখিদের মধ্যে সাধারণত তিন ধরনের পরিযান লক্ষ্য করা যায়।[৩] পরিযানের প্রকারগুলো হল-

কতিপয় দীর্ঘদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখির পরিযানপথ
  1. স্বল্পদৈর্ঘ্য পরিযান: এধরনের পরিযায়ী পাখিগুলো প্রধানত স্থায়ী। তবে খাদ্যাভাব দেখা দিলে এরা তাদের স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্রের আশেপাশে অন্য অঞ্চলে গমন করে। এদের পরিযান অনিয়মিত। চাতক, পাপিয়া, খয়েরিডানা পাপিয়া স্বল্পদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখি।
  2. মধ্যদৈর্ঘ্য পরিযান: এ প্রজাতির পাখিরা প্রায়শ পরিযান ঘটায়, তবে পরিযানের বিস্তার স্বল্পদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখিদের তুলনায় অনেক বেশি হয়।
  3. দীর্ঘদৈর্ঘ্য পরিযান: এ প্রজাতির পাখিদের পরিযান এক বিশাল এলাকা জুড়ে ঘটে। এ ধরনের পাখিদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে এক বা একাধিক সপ্তাহ লাগে। এসময় এরা হাজার হাজার মাইল দূরত্ব পাড়ি দেয়। নীলশির, লালশির, কালো হাঁস, লেন্জা হাঁস, ক্ষুদে গাংচিল দীর্ঘদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী পাখি।[৫]

পরিযান প্রক্রিয়া

দীর্ঘ যাত্রায় পাখিরা কিভাবে পথ চেনে, সে এক রহস্য। দেখা গেছে পথ চেনাতে অভিজ্ঞ পাখিরাই ঝাঁকের সামনের দিকে থাকে। নতুনরা থাকে পেছনে। এ ক্ষেত্রে পাখিরা উপকূলরেখা, পাহাড়শ্রেণী, নদী, সূর্য, চাঁদ, তারা ইত্যাদির মাধ্যমেই পথ খুঁজে নেয় বলে ধারণা করা হয়। যেসব পাখি একা ভ্রমণ করে তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, জীবনে প্রথমবার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলেও তারা গন্তব্যে পৌঁছে যায়। এ জন্য বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রই পাখিদের পথ চেনায়।[৬]

ফ্লেমিঙ্গো

পরিযায়ী পাখির বিভ্রান্তিমূলক নাম

চাতক

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, টেলিভিশনে, বই-পুস্তকে পাখি বিষয়ক অজ্ঞ ব্যাক্তিগণ পরিযায়ী পাখিদের অতিথি পাখি, গেস্ট বার্ড, ভিনদেশী পাখি বা বিদেশী পাখি হিসেবে অভিহিত করেন। আবার বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখি বললেই ধরে নেওয়া হয় কেবল শীতকালে আসা হাঁস আর রাজহাঁসকে। এ হিসেবে কালেম, ডাহুক বা ছোট সরালীকেও শীতের পাখি হিসেবে অভিহিত করা হয়, যদিও এরা বাংলাদেশের নির্ভেজাল স্থানীয় বাসিন্দা প্রজাতির পাখি। পরিযায়ী পাখিমাত্রই যে হাঁসজাতীয় ও জলচর পাখি, এমনটা নয়। পরিযায়ী পাখির এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে খঞ্জনা (Wagtails), চটক (Flycatchers), মাঠচড়াই (Larks), কসাই পাখি (Shrikes), গাঙচিল, বিভিন্ন শিকারী পাখি ইত্যাদি।[১][৬]

রোগের বিস্তার

কালো হাঁস

পরিযায়ী পাখিরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিপজ্জনক রোগের জীবাণু বহন করার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ পাখিরা বহু বছর ধরে নির্দিষ্ট কিছু জীবাণু বহন করে বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঐ জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে। ফলে এরা অনেকটা ঐ জীবাণুর বাহক হিসেবে কাজ করে এবং অন্যত্র জীবাণু ছড়িয়ে দেয়। প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন কোন প্রজাতি পরিযায়ী প্রজাতির সংস্পর্শে আসলে সাথে সাথে আক্রান্ত হয়। পশ্চিম নীল ভাইরাস (West Nile Virus) এবং এভিয়ান ইন্ফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (যার জন্য বার্ড ফ্লু রোগ হয়) এমনই দু’টি জীবাণু।[৭]

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশের পাখি, রেজা খান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (২০০৮), পৃ. ২৩।
  2. [১], BirdLife International এ পাখি পরিযান বিষয়ক নিবন্ধ।
  3. [২], Migration, All about birds.
  4. Lincoln, F. C. (১৯৭৯)। Migration of Birds.। Fish and Wildlife Service. Circular 16'.। 
  5. [৩], Migratory Patterns, All about birds.
  6. [৪], পরিযায়ী পাখি, মনিরুল খান, দৈনিক কালের কণ্ঠ।
  7. [৫], Migration and the spread of disease, All about birds.

আরও দেখুন