সামাজিক চুক্তি তত্ত্ব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
Using {{lang}}
MerlIwBot (আলোচনা | অবদান)
বট যোগ করছে: ky:Коомдук келишим теориясы
৯৭ নং লাইন: ৯৭ নং লাইন:
[[ka:სოციალური კონტრაქტი]]
[[ka:სოციალური კონტრაქტი]]
[[ko:사회계약론]]
[[ko:사회계약론]]
[[ky:Коомдук келишим теориясы]]
[[la:Contractus socialis]]
[[la:Contractus socialis]]
[[lt:Visuomenės sutartis]]
[[lt:Visuomenės sutartis]]

০৬:৪৯, ৮ জুলাই ২০১২ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

জন লকের সামাজিক চুক্তির উপর লেখা যা আমেরিকা প্রতিষ্ঠার জনকদের প্রভাবিত করেছিল।

সামাজিক চুক্তি (ইংরেজি: Social Contract) রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রিয় বিধির বিকাশ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব। যার মুল বক্তব্য হল- রাজনৈতিক সমাজ তথা রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে সামাজিক চুক্তির ফলস্বরুপ। সমাজের বিবর্তনে মানুষের সচেতন ইচ্ছার উপর গুরুত্বারোপ ও ব্যক্তিকে তার স্বাভাবিক অধিকারের দৃষ্টিকোন থেকে অবলোকন করায় এ মতবাদ অনেক চিন্তাবিদের মধ্যেই আবেদন সৃষ্টি করে। জন লক, টমাস হবস, জঁ-জাক রুসো প্রমুখ এ চিন্তাধারার অনুসারী ছিলেন। তবে এ চুক্তির কারণ বিশ্লেষনে তাদের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে। ১৭শ ও ১৮শ শতকে এ ধারনা পাশ্চাত্য দর্শন ও রাষ্ট্র চিন্তায় জনপ্রিয়তা লাভ করলেও প্রাচীন গ্রিসের সফিস্ট এবং চীনের মোজুর দর্শনেও এর আভাস পাওয়া যায়।

বিভিন্ন মতবাদসমুহ

হবসের মতবাদ

টমাস হবস তার Leviathan গ্রন্থে সামাজিক চুক্তির পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। তার মতে- আদিম সমাজ ছিল বর্ব্রোচিত, যেখানে অধিকার বা ন্যয়ের ধারনা ছিল অনুপস্থিত, এবং আইনের ভিত্তি ছিল শক্তিপ্রয়োগ ও প্রতারণা। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে মানুষের মাঝে যুক্তিশীলতার উন্মেষ ঘটায় পরষ্পরের সাথে এ মর্মে সমঝোতায় উপনীত হয় যে, একজন ঠিক যতটুকু স্বাধিনতা বা অধিকার ভোগ করবে যতটুকু স্বাধিনতা বা অধিকার সে অন্যকে দিতে প্রস্তুত আছে। এর ভিত্তিতে একত্র হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের যে চুক্তি সম্পাদিত হল তা একটি সার্বভৌম ক্ষমতার সুচনা করে। সে ক্ষমতা একজন ব্যক্তির বা গোষ্টির হতে পারে। এভাবে শান্তির নিশ্চয়তা প্রয়াসী মানুষ তাদের প্রাকৃতিক অধিকারকে একটি ক্ষমতার কাছে হস্তান্তর করে যা ব্যক্তিমানূষকে নিরাপত্তা প্রদান করে ও সমাজকে সাধারণ কল্যাণের দিকে নিয়ে যায়। যে ব্যক্তি বা দল এ ক্ষমতা লাভ করে সে এই চুক্তির কোন পক্ষ নয়, বরং চুক্তির ফল।

হবস কোন বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনায় সামাজিক চুক্তির দ্বারা রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে- তার উপর গুরুত্ব দেননি, বরং প্রাকৃতিক রাষ্ট্রকে তিনি দেখতে চেয়েছেন সমাজ রাষ্ট্রের যুক্তিপূর্ণ পূর্বাবস্থা হিসাবে।

লকের মতবাদ

জন লক সামাজিক চুক্তির বিকাশের প্রশ্নে হবসের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন, যদিও তিনি মনে করতেন রাজনৈতিক সমাজ গঠনের পূর্বে মানুষ বাস করত প্রকৃতির রাজ্যে। তবে তার মতে প্রাকৃতিক রাষ্ট্রে শান্তি ও যুক্তির সহাবস্থান ছিল, এবং মানুষেরা নিরিন্তর বিবাদে লিপ্ত ছিল না বরং স্বাভাবিক বুদ্ধি দ্বারাই পরিচালিত হত। এটা প্রাক সামাজিক নয় বরং প্রাক রাজনৈতিক। এটা আইনশুণ্যও ছিলনা কারণ মানুষ প্রাকৃতিক আইনের অধিনে বাস করত, যেখানে সকলে স্বাধিন ও সামান, স্বাধিন হলেও তারা স্বেচ্ছাচারী ছিল না। [১] কিন্তু নানা কারনে প্রকৃতির রাজ্যে স্বাভাবিক আদর্শ থেকে মানুষের বিচ্যুতি ঘটলে সমান অধিকার ভোগ করাতে বঞ্চিত হয়। ফলে ব্যক্তিগত স্বাধিনতা ও অধিকার রক্ষার জন্য তারা সুসংহত সমাজ গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। যদিও প্রত্যেকে স্বাধিন স্বনির্ভর ও সামান, তবু ব্যক্তিরা নিজেদের স্বার্থেই সেচ্ছায় সর্বসম্মতভাবে একটি চুক্তিতে আসে।

লক ঐতিহাসিক ঘটনা হিসাবেই চুক্তিকে দেখতে প্রয়াসী ছিলেন। তার মতে, যদিও নথিপত্রে এমন চুক্তির হদিস পাওয়া যায় না তবু নথিতে নেই এমন অনেক ঘটনাই বাস্তব। এ চুক্তিকে এরূপ একটা ঘটনা বলে মনে করা যেতে পারে।[২]

রুসোর মতবাদ

জঁ-জাক রুসো তার ‘সমাজ চুক্তি’ (১৭৬২) (Du contrat social) গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। রুসোর মতবাদ প্রাকৃতিক সাম্য ধারনার উপর নির্ভরশীল, যেখানে মানুষ মাত্রই সমান, স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং তৃপ্ত। মানবিক জ্ঞানের উন্নতি এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের ফলে শ্রমের শ্রেণীবিভক্তি সুচিত হয় এবং মানব জাতির প্রাকৃতিক সুখকর অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে ধনী-দরিদ্র বিভাজন সৃষ্টিকরে, পরিনতিতে রাষ্ট্রিয় সমাজ অত্যাবশ্যক হয়ে যায়।

রুশো বলেন,

সমাজ গঠনের এমন একটা আদর্শ থাকতে হবে যাতে সমাজভুক্ত সকল ব্যক্তির জীবন ও সম্পদ সমাবেত শক্তির সাহায্যে নিরাপদ অ সুরক্ষিত থাকবে এবং প্রত্যেকে পরস্পরের সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় আপন আদেশই পালন করবে ও আগের মতই স্বাধিন থাকবে

[৩]

ফলত সামাজিক চুক্তি বিকশিত হয়। এ চুক্তি কেনো নিরঙ্কুশ শাসক তৈরি করে না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার সমস্ত অধিকারকে সামাজিক চুক্তির দ্বারা সমষ্টির নিকট সমুদয় ভাবে সমর্পণ করে। আবার সকল নাগরিক একটা সার্বভৌম কাঠামোর সমান অধিকারী হিসাবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার অধীনে তা পূনরায় লাভ করে। প্রত্যেকে নিজেদেরকে সমার্পন করবে অথচ ব্যক্তিগত ভাবে কারো কাছে নত হবে না। ক্ষমতা এখানে ব্যক্তিবিশেষের নয় পরস্পরের।

প্রভাব

রাজতন্ত্রসামন্তবাদের বিপরীতে রেনেসাস উত্তর সময়কালে ইউরোপের বুর্জোয়া শ্রেণী সামাজিক চুক্তির তত্ত্বকে একটি আদর্শগত ব্যাখ্যা হিসাবে দাড় করায়। কারণ একদিকে এটা ছিল ধর্মতাত্ত্বিক স্বর্গীয় অধিকারের যুক্তিসংগত বিকল্প এবং মানবীয় দৃষ্টিকোন থেকে শাসন বাবস্থাকে আলোচনা সমালোচনা করার একটা যুতসই হাতিয়ার। অপরদিকে গনতন্ত্রের বাতাবরনে রাজার সার্বভৌম কতৃত্ব খর্বকরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্ষমতায়নের তাত্ত্বিক ভিত্তি। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স সহ ইউরোপীয় দেশগুলিতে এ চিন্তাধারার প্রভাব বিদ্রোহের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে এবং আধুনিক গনতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধিনতার উন্মেষ ঘটায়।

সমালোচনা

সমালোচকগন সামাজিক চুক্তি মতবাদের বিরুদ্ধে প্রথমত যে অভিযোগ উত্থাপন করেন তা হল, এ মতবাদের পক্ষে কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। দ্বিতীয়ত কোন একটি বিশেষ সময়ে কিছু মানুষ চুক্তি করে সমাজ গঠন করলেও পরবর্তি প্রজন্ম যে সেটা অনুসরন করছে সেটারও কোন যুক্তি নেই।
ডেভিড হিউম সামাজিক চুক্তি মতবাদের বিপরীতে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তার মতে, পরিবার ধারনার মধ্য দিয়েই সমাজ গড়ে উঠে ছিল। স্বাভাবিক জৈবপ্রবৃত্তি বশত নারী-পুরূষ একত্রিত হয়েছে, আর তাতেই সমাজের আদি কারন। পরিবার সমাজের ক্ষুদ্রতম একক। পারিবারিক একত্রে থাকার সুবিধা মানুষকে বৃহত্তর পরিসরে সমাজের চিন্তা বিকাশে সাহায্য করেছে। এমনি করে অনুভূত প্রয়োজনের ভিত্তিতে সমাজ গড়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সমাজ, সামাজিক চুক্তি প্রভৃতি কল্পনা মাত্র, যার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। [১] সমাজের মত সরকার ব্যবস্থার ভিত্তিও প্রয়োজনের অনুভুতি। ন্যায়পরায়নতা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার প্রয়োজনেই সরকার।সরকারের উদ্ভব। [৪]

পাদটীকা

  1. Lock, John (১৬৮৯)। Second Treatise on Government  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Treatise" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  2. Lock, John (১৬৮৯)। Second Treatise on Government 
  3. Rousseau, Jean Jacques (১৭৬২)। Du contrat social: Book One Chapter Six the social compact 
  4. Hume, David (১৭৪৮)। Essays Moral and Political: Of the Origin of Government 

অন্যান্য তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ