পাইক প্লেস ফিস মার্কেট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পাইক প্লেস ফিস মার্কেট
ধরনবেসরকারি
শিল্পসামুদ্রিক খাদ্য
প্রতিষ্ঠাকাল১৯৩০
সদরদপ্তর৮৬ পাইক প্লেস, ,
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মালিকজন ইয়োকোয়ামা
ওয়েবসাইটhttp://pikeplacefish.com
পাইক প্লেস ফিস মার্কেট।

পাইক প্লেস ফিস মার্কেট ওয়াশিংটন- এর পাইক প্লেস মার্কেট-এ (যেটি পাইক স্ট্রীট ও পাইক প্লেস -এর কোণে অবস্থিত) ১৯৩০ সালে স্থাপিত হয়। এটি ওয়াশিংটন -এর সিয়াটল-এ অবস্থিত খোলা জায়গায় একটি মাছের বাজার। এখানে ক্রেতাদের কেনা মাছ মোড়ক হবার আগে মাছ বিক্রেতাদের মাছ ছুঁড়ে দেওয়ার ঐতিহ্য আছে।[১] ১৯৮৬-তে দেউলিয়া অবস্থা নিকটতর হয়ে আসার পরে মৎস্য বাজারের মালিক ও কর্মচারীরা বিশ্ববিখ্যাত হতে চেয়ে তাদের ব্যবসা করার প্রক্রিয়াতে পরিবর্তন আনার কথা ভেবেছিল বিভিন্নভাবে যেমন- উড়ুক্কুমাছের উপস্থাপন, বিভিন্ন ধরনের খেলা চালু করা, ক্রেতাদের সামনে নানা কলাকৌশল প্রদর্শন ইত্যাদি। চার বছর পরে তাদের বারংবার জাতীয় মাধ্যমে এবং দূরদর্শনের পর্দায় দেখা গিয়েছিল।[২] এই বাজার এখন সিয়াটল-এর বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র যা প্রত্যহ প্রায় ১০০০০ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। এই স্থানটিকে প্রায়শই বিশ্ববিখ্যাত বলে মনে করা হয়।[২][৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

মৎস্য বাজারে্র প্রাক্তন কর্মচারী জন ইয়োকোয়ামা ,১৯৬৫ সালে পাইক প্লেস ফিস মার্কেট -টি কিনেছিলেন। তার কেনার উদ্দেশ্য ছিল মালিকের বেতন বাবদ যথেষ্ট টাকা অর্জন করে তার নতুন গাড়ী বুইক রিভিয়েরা-র খরচাপাতি চালানো।[৪] প্রথম প্রথম পাইক প্লেস ফিস মার্কেট সিয়েটল অঞ্চলের বাইরে অপরিচিত ছিল কিন্তু ইয়োকোয়ামা এবং তার কর্মচারীরা ১৯৮৬ সালে একজন ব্যবসায়ী প্রশিক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন।[২] সাক্ষাতের পূর্বে পাইক প্লেস ফিস মার্কেট প্রায় দেউলিয়া অবস্থায় চলে এসেছিল। কিন্তু পরামর্শদাতা ,জিম বার্গকুইস্ট -এর নতুন চিন্তা বা পরিকল্পনা মৎস্য ব্যবসাকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছিল।[২] মৎস্য বাজারের এক কর্মচারী সভায় প্রস্তাব রেখেছিলেন যে তারা শুধুমাত্র ব্যবসা রক্ষা করবে না , একে বিশ্ববিখ্যাত করে তুলবে নতুন ব্যবসায়িক চিন্তাধারা প্রয়োগ করে যেমন উড়ুক্কু ও ছুঁড়েফেলা মাছের খেলা , ক্রেতাদের সঙ্গে খেলা ,কর্মচারীদের মানসিকতার পরিবর্তন ইত্যাদি। এতে কর্মচারীরাও নিজেদের কাজে আনন্দ পাবে এবং ক্রেতারাও খুশি হবে ।[২] এক সাক্ষাৎকারে ইয়োকোয়ামা বলেছিলেন ,"আমরা জোরালোভাবে বলছি যে আমরা বিশ্বখ্যাত হতে চলেছি । আমরা যা বললাম তাই- ই হবে"।[৫]

চার বছর পরে ১৯৯০ সালে টেড টার্নার-এর শুভেচ্ছা ক্রীড়া সিয়াটল -এ অনুষ্ঠিত হয় । সংবাদ মাধ্যম এই পাইক প্লেস মার্কেটের মাছের বাজার এবং ক্রেতাদের কাছে মৎস্য কর্মীদের নানা কলাকৌশল প্রদর্শন সম্বন্ধে অবহিত হল ,তা চিত্রায়িত করল । খুব শীঘ্রই মাছের বাজারের খবর গুড মর্নিং আমেরিকা-তে প্রকাশিত হল । যার ফলে মাছের বাজার ও কর্মীদের নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হল আর তাদের কথা বহু পত্রপত্রিকায় মুদ্রিত হল্ ।এখন গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ পর্যটক আসার মরসুমে প্রতিদিন প্রায় ১০০০০ দর্শনার্থীদের কাছে মাছবিক্রেতারা তাদের কলাকৌশল দেখায়।[২] মানবসম্পদ ও কর্মচারীদের মানসিকতার উপর এই ব্যবসার সাফল্য নির্ভর করে বলে মনে করা হয়।[৫] মৎস্য বাজারের কর্মীরা প্রায়ই বিভিন্ন স্কুল , নাগরিক সম্প্রদায় ও ব্যবসায়ীদের কাছে সফল হওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে কথা বলত এবং যে সমস্ত বই প্রেরণা যোগায় তাতে তাদের কথা স্থান পায়।[২][৬]

পাইক প্লেস ফিস মার্কেট- এর একটা জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য হল মঙ্কফিস অর্থাৎ হাঙরবিশেষ। মাঝে মাঝে একটা লুকোনো রেখার সাহায্যে এটি ক্রেতাদের চমকে দিতে ব্যবহার করা হয়।[৭] ১৯৯১ সালে সিএনএন আমেরিকার তিনটি সবচেয়ে মজার কাজের জায়গার মধ্যে পাইক প্লেস ফিস মার্কেটকে রেখেছে।[৭]

উড়ন্ত মাছ[সম্পাদনা]

উড়ন্ত স্যামন মাছ

পাইক প্লেস ফিস মার্কেট -এর সবচেয়ে বেশি পরিচিতি হল ক্রেতাদের ফরমাশ দোকানের একপাশ থেকে অন্যপাশে ছুঁড়ে দেওয়ায় । ক্রেতাদের অর্ডার দেওয়ার সময় এক বিশেষ ধরনের পরম্পরা মেনে চলা হত । ক্রেতারা কমলা রঙের রাবারের তৈরি পোশাক ও বুটজুতো পরা মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছে অর্ডার দেওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য কর্মচারীরাও জোরে চেঁচাতে থাকে , ঠিক এই সময় মূল মাছবিক্রেতা ক্রেতার মাছটি মোড়ার জন্য কাউন্টারের পেছনে ছুঁড়ে দেয়।[৭] শুরুতে, ফরমাশ করা মাছটির নাম চেঁচিয়ে পুনরাবৃত্তি করা চালু হয়েছিল একজন কর্মচারীর সাথে রসিকতা করার জন্য কিন্তু ক্রেতারা উপভোগ করায় এটা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়ায় ।[৮] কাজ করার সময় কর্মচারীবৃন্দ অনবরত চিৎকার করত বা একসাথে বিড়বিড় করত যখন তারা ফরমাশ অনুযায়ী মাছ ছুঁড়ত ।[৯] মাঝে মাঝে বাজারের মৎস্য কর্মচারীরা জনতার মধ্যে ফেনা জাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরি মাছ ছুঁড়ে দিত যাতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা ভয় পায় । আবার কখনও ভিড়ের মধ্যে একজন ক্রেতাকে পছন্দ করে এদিক ওদিক মাছ ছোঁড়াতে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ আসত ।.[১০] যে সব জায়গায় মাছ ছোঁড়া হত তার ওপরে একটা সাবধানবাক্য ঝুলিয়ে রাখা হত যাতে লেখা থাকত "সাবধান : মাছ উড়ছে নীচ দিয়ে"।[১১]

চলচ্চিত্র, বই ও জনপ্রিয় সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

বহুদিনের কর্মচারী তাহো কাউন্টারে পরিষেবা দিচ্ছেন

১৯৯৮ সালে একটি তথ্যচিত্র ও তার সংশ্লিষ্ট বই ফিস! ফিলোজফি-এর বিষয়বস্তু ছিল পাইক প্লেস ফিস মার্কেট।[৫] এছাড়াও ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অনেক বহুবিক্রিত প্রশিক্ষণমূলক ভিডিও, পূর্বে উল্লিখিত ফিস! ও ফিস! স্টিকস্-এর ঘটনাস্থল ছিল এই স্থান। এগুলি এন্টারপ্রাইজ রেন্ট-এ-কার, স্প্রিন্ট নেক্সটেল, সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স, সেইন্সবারিস, স্যাটার্ন, স্কটিশ অ্যান্ড সাদার্ন এনার্জি প্রভৃতি সংস্থার কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।[৮] দূরদর্শনের বহু অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপনী চিত্রে দেখা গেছে পাইক প্লেস ফিস মার্কেট । এদের মধ্যে রয়েছে স্পাইক লি লেভি-র বিজ্ঞাপন; এমটিভি-র দা রিয়েল ওয়ার্ল্ড; এনবিসি-র ফ্রেজিয়ার এবং এবিসি-র গুড মর্নিং আমেরিকা[৭] ফ্রী উইলি চলচ্চিত্রে এই বাজারকে দেখা গেছে।[৮] মার্কিন হিপ হপ জুড়ি ম্যাকলমোর ও রায়ান লুইস তাদের একক "ডাউনটাউন" -এ ( যাতে এরিক ন্যালি, মেলে মেল, কুল মো ডি এবং গ্র্যান্ডমাস্টার কাজ রয়েছেন) পাইক প্লেস ফিস মার্কেট-এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Do you provide world-class service?"Reliable Plant Magazine। Noria। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৭  [অকার্যকর সংযোগ]
  2. "Caution: flying fish ahead: the 2006 general session promises insights, smiles and scales."Parks & Recreation। National Recreation and Park Association। ২০০৬-০৯-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৭ 
  3. "Delicious ways to explore Seattle's foodie paradise"The San Diego Union-Tribune। অক্টোবর ১৭, ২০১০। 
  4. "Our Humble Beginnings"। Pike Place Fish Market। ২০০৮-০১-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৭ 
  5. "HR philosophy goes fishing for positive work attitudes"Seattle Times। ২০০৮। ২০১১-০৭-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৭ 
  6. Fish, Peter (২০০৭-০৬-০১)। "Seattle to market"Sunset। Sunset Publishing Corp.। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৭  [অকার্যকর সংযোগ]
  7. Bauman, Margaret (২০০৬-১১-২৬)। "Good times means good business at Pike Place"Alaska Journal of Commerce। ২০০৯-০১-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৭ 
  8. Lelyveld, Nita (২০০০-০৮-০৪)। "Pike Place fishmongers showing up as examples of fun at work"Philadelphia Inquirer। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৭ 
  9. Pfeiffer, Cristina (২০০৬-০৩-২২)। "Seattle highlights"The Age। Melbourne। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৭ 
  10. "Fishy tale could cause indigestion"Europe Intelligence Wire। Financial Times Ltd.। ২০০৫-১১-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৭ 
  11. Landro, Laura (২০০৬-০৮-১৯)। "How I Got Hooked on Seattle"Wall Street Journal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৭ 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

পর্যটকরা চলে গেছে এখন পরিষ্কার-পরিছন্ন করা শুরু হবে
  • When Fish Fly: Lessons for Creating a Vital and Energized Workplace — From the Word Famous Pike Place Fish Market, Yokoyama, John and Joseph Michelli. New York: Hyperion, 2004.
  • "Catch: A Fishmonger's Guide to Greatness", Crother, Cyndi and the crew of Pike Place Fish. Berrett-Koehler Publishers (January 1, 2005)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Pike Place Market