টুংকু আবদুল রহমান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
টুংকু আব্দুল রহমান

টুংকু আব্দুল রহমান পুত্রা আল-হাজ ইবনি আলমারহুম সুলতান আব্দুল হামিদ হালিম শাহ, DMN, DK, DUK, AC, CH; (৮ ফেব্রুয়ারি ১৯০৩ - ০৯ ডিসেম্বর ১৯৯০) ছিলেন একজন মালয়েশিয়ান রাষ্ট্রপ্রধান যিনি ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার সরকার প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার পরে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পূর্বে ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত মালয়েশিয়া ফেডারেশনের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৬৩ সালে সাবাহ, সারাওয়াক এবং সিঙ্গাপুর মালয়ার সাথে একত্রিত হয়ে মালয়েশিয়া গঠনের পর ১৯৭০ সালে পদত্যাগ করা পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

সাধারণত, সহজভাবে তাকে "টুংকু" (মালয়া অভিজাত পদবী) নামে ডাকা হলেও টুংকু আব্দুল রহমান যিনি এমনকি তার সমালোচকদের দৃষ্টিতেও মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা এবং মালয়েশিয়া গঠন এর স্থপতি হিসেবে ব্যাপকভাবে "প্রতিষ্ঠাতা জনক" হিসেবে বিবেচিত হন। যেমন, প্রায়ই তাকে "স্বাধীনতার জনক" অথবা "মালয়েশিয়ার জনক" হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

শৈশব জীবন[সম্পাদনা]

বাল্যকাল[সম্পাদনা]

টুংকু আব্দুল রহমান ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৩ সালে কেদাহের আলুর ছেতারে অবস্থিত ইস্তানা প্যামিন প্যালেসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কেদে সুলতানাতের ২৫ তম শাসক সুলতান আব্দুল হামিদ হালিম শাহ এর ৪৫ সন্তান-সন্তানাদির মধ্যে সপ্তম সন্তান ছিলেন। তার মা চে মাঞ্জারালা ছিল থাইল্যান্ডের অধিবাসী এবং তার বাবার ষষ্ট স্ত্রী। ওই সময়ে সমগ্র কেদাতে কলেরা এবং ম্যালেরিয়ার খুব ভয়াবহ প্রকোপ ছিল। এতে অন্ততপক্ষে তার দুই ভাই এবং বড় বোন মারা গিয়েছিল এবং তিনিও ১৯২০ সালে লন্ডনে যাওয়ার আগে মধ্যম মাত্রায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

তার প্রাথমিক শিক্ষার শুরু হয় আলুর সেতারে অবস্থিত 'মালয় প্রাইমারি স্কুলে'। তারপর, তিনি সরকারি ইংরেজি স্কুল 'সুলতান আব্দুল হামিদ কলেজে' পড়াশোনা শুরু করেন।পরবর্তীতে, তার বাবা তাকে এবং তার কয়েকজন ভাই-বোনকে  ব্যাংককে 'ডেসবিরিন স্কুলে' পাঠানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়[সম্পাদনা]

সতের বছর বয়সে টুংকু 'ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালেয়' পরবর্তী পড়াশোনা করার জন্য কেদাহ স্টেট গভার্মেন্ট কর্তৃক বৃত্তি পান। এক বছর পর টুংকু বুঝতে পারেন তিনি তার পড়াশোনায় খুব কমই উন্নতি করেছেন। ক্রাউন এজেন্ট অফিসে তার স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক মি. এজেকিয়েল সাথে দেখা করার পর মি. এজেকিয়েল ব্যাসিল অ্যাটকিনসন এর সাথে  ক্যামব্রিজে তার পড়াশোনা এবং থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। অ্যাটকিনসন ছিলেন একজন অভিজ্ঞ  গৃহ শিক্ষক এবং তিনি টুংকুকে "Little Go" নামে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে তোলেন।

পরবর্তী বছরে তিনি ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং ঐ পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ মার্ক পেয়ে পাশ করেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট ক্যাথরিন কলেজে তিনি স্নাতকে ভর্তির সুযোগ পান এবং ১৯২৫ সালে তিনি আইন ও ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

সিঙ্গাপুর থেকে রওয়ানা হয়ে পাঁচ বছর পর ২৩ বছর বয়সে তিনি জাহাজে করে দেশে এসে পৌঁছান। টুংকু পেনাং এ পৌঁছার সময় যাত্রীবাহী জাহাজে ক্রাউন্ড এজেন্টরা তাকে নিরাপত্তা দিয়েছিল। শাসক এবং তার বড় ভাই  টুংকু ইব্রাহিম তার ডিগ্রী পছন্দে খুব একটা খুশি ছিলেন না। তাই তিনি তাকে ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে ইংরেজ বারে ভর্তি হতে আদেশ দিলেন। টুংকুর প্রচেষ্টায় মালয় গ্রেট ব্রিটেন সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নেজেরি সেম্বিলান এর টুংকু আব্দুর রহমান এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এবং কেদাহের টুংকু আব্দুর রহমান হয়েছিলেন এর সম্মানীসূচক সচিব এবং চালিকা শক্তি। মে ১৯৩০ সালে টুংকু বার পরীক্ষার প্রথম পার্টে অংশগ্রহণ করেন। যদিও তিনি তিনটি পেপারে পাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তবে একটি পেপার এ ফেল করার কারণে প্রথম পার্টের সমগ্র পরীক্ষায় তিনি অনুর্ত্তীণ হয়েছিলেন । ১৯৩১ সালের জানুয়ারি মাসে টুংকু পেনাং এর উদ্দেশ্যে জাহাজে যাত্রা করেন। যেহেতু টুংকু রাষ্ট্রীয় বৃত্তিতে ছিলেন দেশে ফেরার পর স্বাভাবিকভাবেই তিনি রাষ্ট্রেীর কর্মকর্তা হলেন। টুংকু ইব্রাহিম তখনো শাসক ছিলেন এবং টুংকুকে বলেছিলেন লন্ডন বার পরীক্ষায় তার ফেল করার কারণে তার সম্মানহানি হয়েছিল।

কেদাহে পেশা জীবন[সম্পাদনা]

কুলিম[সম্পাদনা]

১৯৩১ সালের জানুয়ারী মাসে টুংকু কেদাহের সিভিল সার্ভিস হিসাবে ক্যাডেট পান। পরে কুলিমে তিনি এসিস্ট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অফিসার হিসেবে স্থানান্তরিত হন। কুলিমে গিয়ে তুমকো তার অধিকাংশ সময়ই ডিস্ট্রিক্ট ভ্রমণে ব্যস্ত থাকেন এবং কৃষকদের সমস্যা সম্পর্কে জানতে থাকেন যারা ছিলেন সমগ্র জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ। তিনি প্রমোশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য ক্যাডেট পরীক্ষার জন্যও প্রস্তুতি নেওয়ায় মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং প্রথম বারের চেষ্টায় পাস করেন।

পাদাং টেরাপ[সম্পাদনা]

প্রায় এক বছর পর টুংকু পাদাং টেরাপে ডিস্ট্রিক্ট অফিসার হিসেবে পদোন্নতি পান। কউলা নেরাং এ ম্যালেরিয়া থাকায় পাদাং টেরাপে ডিসটিক অফিসারের পদটি অজনপ্রিয় ছিল। যখন টুংকু ঐ ডিস্ট্রিক্ট এর ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন তিনি ওই শহরের চতুর্দিকের জলাভূমি নিয়ে একটি ছার্ভে করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন এবং উক্ত জলাভূমিতে খাল খনন করার জন্য পর্যাপ্ত টাকার জন্য রাষ্ট্রীয় সেক্রেটারির কাছে প্রয়োজনীয় ফান্ডের জন্য আবেদন করেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, টুংকুর আর্থিক আবেদন নাকচ হয়। তিনি পুনরায় স্টেট সেক্রেটারি কাছে যথাযথ পরিমাণ আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করেন যাতে করে  কউলা নেরাং এর ম্যালেরিয়ার বাহকদের বংশবিস্তারের স্থান জলাভূমি খাল খননের মাধ্যমে দূর করতে পারেন। এইবার কাজ হলো, তিনি অর্থ পেলেন এবং তার তত্ত্বাবধানে উক্ত কাজ সম্পন্ন হলো।

লাংকাউই[সম্পাদনা]

তখনকার শাসক টুংকু ইব্রাহিম যেহেতু তীব্রভাবে মিশ্র বিবাহের বিরোধিতা করতেন এবং কেদাহে এ ব্যাপারে একটা আইন ছিল যে রাজকীয় ফ্যামিলির মেম্বারদের কেউ অমালয় কাউকে বিবাহ করতে গেলে রাজার পূর্ব অনুমতি লাগতো। এবং টুংকু পেনাং এর ভায়োলেট কুলসনকে বিবাহ করেছিলেন। ১৯৪ সালে রাজা টুংকু ইব্রাহিম অপ্রত্যাশিত ভাবে মারা গেলেন এবং তার রাজত্ব দখল করলেন সুলতানের ছোট ভাই টুংকু মাহমুদ  যিনি কিনা ছিলেন প্রশস্থ মনের অধিকারী এবং টুংকুর বিয়েতে তিনি সম্মতি দিয়েছিলেন। আর এতে কুয়েলা নেরাং শহরে তীব্র বিক্ষোভ তৈরি হয় এবং সরকার টুংকুকে লাংকাউই এর ডিস্ট্রিক্ট অফিসার হিসেবে ট্রান্সফার করতে বাধ্য হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]