টিকটিকি
টিকটিকি | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
উপপর্ব: | মেরুদন্ডী |
শ্রেণী: | সরীসৃপ |
বর্গ: | Squamata |
পরিবার: | গেকোনিডি |
গণ: | Hemidactylus |
প্রজাতি: | H. frenatus |
দ্বিপদী নাম | |
Hemidactylus frenatus Schlegel, 1836[১] | |
টিকটিকি (বৈজ্ঞানিক নাম: Hemidactylus frenatus ভূমধ্যসাগরীয় প্রজাতিঃ Hemidactylus turcicus। এশীয় টিকটিকিকে ভূমধ্যসাগরীয় গৃহটিকটিকির সাথে উল্টাপাল্টা করা যাবে না) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্থানীয় সরীসৃপ। এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় গৃহটিকটিকি, এশীয় গৃহটিকটিকি,দেয়াল টিকটিকি,গৃহগিরগিটি,বা চন্দ্রগিরগিটি নামেও পরিচিত।
বেশিরভাগ টিকটিকিই নিশাচর, দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে এবং রাতে পোকামাকড়ের সন্ধানে বের হয়। এগুলি বারান্দার আলোর প্রতি আকৃষ্ট পোকামাকড়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে চড়ে বেড়ায় এবং বিশেষ "টিক টিক" শব্দ শুনে এদের চিহ্নিত করা যায় ।
এরা দৈর্ঘ্যে ৭৫–১৫০ মিমি (৩–৬ ইঞ্চি) হয় এবং প্রায় ৫ থেকে ১৫ বছর বেঁচে থাকে। এসব ছোট আকৃতির টিকটিকি গুলো সাধারণত বিষাক্ত নয় এবং এরা মানুষের ক্ষতি করে না। অধিকাংশ মাঝারি থেকে বৃহদাকারের টিকটিকি শান্ত প্রকৃতির হয়। কিন্ত বিপদের আভাস পেলে এরা কামড় দিতে পারে। Hemidactylus frenatus উষ্ণ ও আর্দ্র স্থানে থাকে যেখানে এরা পচা কাঠে পোকামাকড় খাওয়ার জন্য বুকে ভর দিয়ে হেঁটে বেড়ায় I এসব স্থানের পাশাপাশি শহুরে পরিবেশেও এদের দেখা যায়। প্রাণীটি খুব দ্রুত এর আশেপাশের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে । এরা পোকামাকড় ও মাকড়সা শিকার করে খায় এবং অন্যান্য টিকটিকির প্রজাতি, যারা কম শক্তিশালী বা আচরণগত ভাবে আক্রমণাত্মক নয়, তাদের বাস্তুচ্যুত করতে পারে।
আবাস এবং খাদ্যাভ্যাস
[সম্পাদনা]গৃহটিকটিকি কোন নামের ভুল প্রয়োগ নয়। এরা নিঃসন্দেহে নাগরিক পরিবেশের প্রতি অনুরক্তি প্রদর্শন করে । "সিনানথ্রপিক" টিকটিকি শহুরে আলোর কাছাকাছি জায়গায় পোকামাকড়ের শিকার করার প্রবণতা প্রদর্শন করে।[২] এগুলি ঝোপঝাড়ে পাওয়া গেছে, তবে বর্তমান প্রমাণগুলিতে মনে হয় যে এরা শহুরে পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে ।
টিকটিকি এমন সব আলোকিত অঞ্চলে থাকতে পছন্দ করে বলে মনে হয় যা কোন ফাটলের কাছাকাছি অথবা যেখান থেকে সহজে পালানো যায় । যেসব টিকটিকির সম্ভাব্য বিপদ থেকে দ্রুত পালানোর এই সুবিধাটুকু নেই তারা সাধারণত আচরণগত পরিবর্তন ঘটিয়ে রাতের শেষ দিকে খাদ্যের সন্ধানে বের হয় এবং ভোর হওয়ার আগেই নিরাপদ স্থানে চলে যায় । [৩]শহুরে পরিবেশে যারা থাকতে পারে না তারা তুলনামূলক ঘন বন অথবা ইউক্যালিপ্টাসের বনের আশেপাশে থাকতে পছন্দ করে।
শহুরে আবাস নির্বাচনের কারণে টিকটিকির পছন্দসই খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে। টিকটিকির খাদ্যতালিকার প্রধান অংশজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন অমেরুদণ্ডী প্রাণী, যা মূলত শহুরে কাঠামোর চারপাশে শিকার করা হয়। টিকটিকি প্রধানত তেলাপোকা, উইপোকা, কিছু কিছু মৌমাছি ও ভিমরূল, প্রজাপতি, পতঙ্গ, মাছি, মাকড়সা এবং বিভিন্ন ধরনের গুবরে পোকা খায়। [৪] কিছু কিছু গবেষণায় স্বজাতিভক্ষণের স্বল্পবিস্তর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। [৫]
শারীরবিদ্যা
[সম্পাদনা]টিকটিকি একটি "শীতল রক্ত" বিশিষ্ট প্রাণী। এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্যে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে।
প্রজনন জীববিজ্ঞান
[সম্পাদনা]Hemidactylus frenatus এর জননাঙ্গের গঠন 'গেকোনিডি' পরিবারের অন্য সদস্যদের মতই। বৃহদাকারের টিকটিকি যাদের আকার ৪০ মিলিমিটারের বেশি তাদের সহজেই লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায় কারণ তাদের (পুরুষ ও স্ত্রী) পৃথক জননাঙ্গ থাকে। ক্লোয়েকার প্রবেশপথে একটি স্ফীত অংশ হিসেবে পুরুষ টিকটিকির জননাঙ্গ স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। স্ত্রীটিকটিকি একবারে সর্বোচ্চ 2 টি শক্ত আবরণ বিশিষ্ট ডিম পারতে পারে , যার প্রত্যেকটি একটিমাত্র ডিম্বকনালি হতে নেমে আসে। বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে ডিম্বাশয়ের মধ্যে 4 টি পর্যন্ত ডিম থাকতে পারে। [৬] স্ত্রীটিকটিকি প্রতি চক্রে প্রতি ডিম্বাশয়ে একটি ডিম উৎপাদন করে। এর অর্থ তারা 'মোনোঅটোক্রোনিক ডিম্বস্ফোটক' হিসেবে বিবেচিত হয়। [৭]
পুরুষ টিকটিকির শুক্রাশয়ের মধ্যে সারা বছর ধরে পরিপক্ব শুক্রাণু পাওয়া যায় এবং এগুলো স্ত্রীটিকটিকির ডিম্বকনালীর মধ্যে সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব। শুক্রাণু 36 সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব। এটি উল্লেখযোগ্যভাবে নতুন স্থানে উপনিবেশায়নের একটি বর্ধিত সুযোগ প্রদান করে, কারণ এক্ষেত্রে সম্ভাব্য সফলতার জন্যে ক্ষুদ্রসংখ্যক অধিবাসির পুনঃস্থাপন প্রয়োজন হয়। যাইহোক, শুক্রাণুর দীর্ঘ সংরক্ষণের কারণে ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার এবং অপত্যের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়, সম্ভবত শুক্রাণুর বয়সের কারণে। শুক্রাণু বিশেষভাবে ডিম্বাকনালীর জরায়ু এবং ইনফানডিবুলার উপাদানগুলির মধ্যে সংরক্ষিত হয়। শুক্রাণু সংরক্ষণের ক্ষমতা ডিম্বস্ফোটন, সঙ্গম এবং ডিম পাড়ার মধ্যে অসমনিয়তি সক্ষম করে। [৭] শুক্রাণু সংরক্ষণের ক্ষমতা কোন দ্বীপে উপনিবেশায়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যযকারী, কারণ এক্ষেত্রে স্ত্রীটিকটিকি পুরুষটিকটিকি থেকে কিছু সময়ের জন্যে পৃথক থাকলেও প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখতে পারে। [৮] পরীক্ষাগারে, একবার সঙ্গমের কারণে ৭ টির মত ডিমের গুচ্ছ তৈরি হতে পারে। যার ফলে পার্থেনোজেনেসিসের প্রয়োজনীয়তা থাকে না এবং এর মাধ্যমে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় অপত্য জন্ম নেয়। অযৌন প্রজননের এই স্বল্পপ্রয়োজনীয়তা সঙ্কর জীবনীশক্তি ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধির মাধ্যমে তরুণদের উপযুক্ততা বৃদ্ধি করে। [৭] এছাড়াও যৌন প্রজননকারী টিকটিকি অযৌনপ্রজননকারী টিকটিকিদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী এবং তাদের বেঁচে থাকার হারও বেশি বলে জানা গেছে। [৯]
প্রচলিত বিশ্বাস
[সম্পাদনা]বিশ্বের অনেক অঞ্চলেই টিকটিকিকে বিষাক্ত প্রাণী বলে মনে করা হয়।[১০] দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে টিকটিকিকে শুভলক্ষণের বাহক বলে বিশ্বাস করা হয়। ফিলিপাইনে বিশ্বাস করা হয় টিকটিকির "টিক টিক" শব্দ আসন্ন অতিথি কিংবা চিঠির ইঙ্গিত দেয়।[১১]
"টিক টিক" শব্দ, হঠাৎ ঘরের ছাদ থেকে টিকটিকির ( বিশেষ করে কারও গায়ের উপরে ) পড়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে ভারতে নানা শুভ এবং অশুভ লক্ষণের ভবিষ্যত বাণীর প্রথা শত শত বছর ধরে গড়ে উঠেছে। যেমনঃ টিকটিকি যদি কারও হাতে বা গায়ে পড়ে, তা হলে তিনি কোনও বিষয়ে খুবই সম্মানিত হতে চলেছেন। যদি কোন ব্যক্তির বাম কাঁধে টিকটিকি পড়ে, তা হলে তার আয়ু বৃদ্ধি হতে পারে। যদি ডান কাঁধে পড়ে, তা হলে নতুন জামাকাপড় পাওয়ার যোগ বোঝায়। [১২] এ রকম বিশ্বাসও প্রচলিত আছে যে কেউ কোনো কিছু সম্পর্কে কথা বলার সময় টিকটিকি ‘টিকটিক’ শব্দ করলে তা সত্যে পরিণত হতে পারে।[১৩] এছাড়াও ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে "টিক টিক" শব্দকে কারও বিবৃতির সত্যতা যাচাইকারী হিসেবে গণনা করা হয় ( কারণ "টিক টিক" শব্দ অনেকটা "ঠিক ঠিক" শব্দের মত শোনা যায় )। [১৪] [১০]
টিকটিকি ক্ষতিকর প্রাণী না হলেও ছোট বড় বিভিন্ন বয়সের অনেকেই টিকটিকি ভয় পান। টিকটিকিভীতি মূলত সরীসৃপভীতির একটি অংশ যাকে বলা হয় Herpetophobia। এক্ষেত্রে জটিলতা হালকা থেকে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আতঙ্ক প্যানিক এটাকের কারণ হতে পারে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "ITIS Standard Report Page: Hemidactylus frenatus"। ITIS Report। ITIS-North America। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-২৯।
- ↑ "Pest or Guest: The Zoology of Overabundance"; Royal Zoological Society of New South Wales. pp. 59–65. Newbery, Brock; Jones, Darryl N. (2007). Lunney, Daniel (ed.) https://research-repository.griffith.edu.au/handle/10072/18554 https://publications.rzsnsw.org.au/doi/10.7882/FS.2007.009
- ↑ Marcellini, Dale L. (১৯৭১)। "Activity Patterns of the Gecko Hemidactylus frenatus"। Copeia। 1971 (4): 631–635। আইএসএসএন 0045-8511। ডিওআই:10.2307/1442631।
- ↑ Newbery, Brock; Jones, Darryl (২০০৭)। Pest or Guest: The Zoology of Overabundance (English ভাষায়)। Royal Zoological Society of NSW। পৃষ্ঠা 59–65। আইএসবিএন 978-0-9803272-1-2।
- ↑ Galina-Tessaro, Patricia; Ortega-Rubio, Alfredo; Alvarez-Cárdenas, Sergio; Arnaud, Gustavo (জুন ১৯৯৯)। "Colonization of Socorro Island (Mexico), by the tropical house gecko Hemidactylus frenatus (Squamata: Gekkonidae)"। Revista de Biología Tropical (ইংরেজি ভাষায়)। ৪৭ (১-২): ২৩৭–২৩৮। আইএসএসএন 0034-7744। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Church, Gilbert (১৯৬২)। "The Reproductive Cycles of the Javanese House Geckos, Cosymbotus platyurus, Hemidactylus frenatus, and Peropus mutilatus"। Copeia। 1962 (2): 262–269। আইএসএসএন 0045-8511। ডিওআই:10.2307/1440888।
- ↑ ক খ গ Murphy-Walker, S.; Haley, Samuel (১৯৯৬-০৯-০১)। "Functional sperm storage duration in female Hemidactylus frenatus (Family Gekkonidae)"। Herpetologica। 52: 365–373।
- ↑ Yamamoto, Yurie; Ota, Hidetoshi (জুন ২০০৬)। "Long-term Functional Sperm Storage by a Female Common House Gecko, Hemidactylus frenatus, from the Ryukyu Archipelago, Japan"। Current Herpetology। 25 (1): 39–40। আইএসএসএন 1345-5834। ডিওআই:10.3105/1345-5834(2006)25[39:LFSSBA]2.0.CO;2। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২০।
- ↑ Rödder, Dennis; Solé, Micro;, Böhme, Wolfgang (ডিসেম্বর ২০০৮)। ""Predicting the potential distributions of two alien invasive Housegeckos (Gekkonidae: Hemidactylus frenatus, Hemidactylus mabouia)"" (পিডিএফ)। North-Western Journal of Zoology। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২০।
- ↑ ক খ "The Folklore of Geckos: Ethnographic Date from South and West Asia"। Nirc.nanzan-u.ac.jp। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২০।
- ↑ "MGA HAYOP"। www.seasite.niu.edu। ২০২০-০৯-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৯।
- ↑ সংবাদদাতা, নিজস্ব। "টিকটিকি কী ভাবে ভাগ্যের শুভ বা অশুভ বার্তা বয়ে আনে"। anandabazar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৯।
- ↑ "খনার বিজ্ঞান-দর্শন"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৯।
- ↑ Desk, Bangla (২০১৮-০২-১৩)। "'টিকটিকি ডাকলে কথা ফলে যায়', কেন এমন বলা হয় জানেন?"। Kolkata24x7 | (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৪-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৯।