জোহান জ্যাকব রেইস্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জোহান জ্যাকব রেইস্ক

জোহান জ্যাকব রেইস্ক (জার্মান: Johan Jakob Reiske) ছিলেন একজন জার্মান প্রাচ্যবিদ। ১৭১৭ সালে তার জন্ম। মৃত্যু ১৭৭৪ সালে। যেসব প্রাচ্যবিদের হাত ধরে জার্মানে আরবি অধ্যয়নের পথচলা শুরু তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তাকে জার্মানে আরবীচর্চার 'মুআসসিস' বা প্রতিষ্ঠাতাও বলে থাকেন অনেকে।

১৭৩৩ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানের লেইপযিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে (Leipzig University) তে অধ্যয়নকালে তিনি কোন শিক্ষকের সহায়তা ছাড়া একা একাই আরবীভাষা শিক্ষা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি হল্যান্ডের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেখানকার লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত বিপুল পরিমাণ হস্তলিখিত আরবী পান্ডুলিপি অধ্যয়ন করেন এবং আরবী সাহিত্য ও ইসলামী সভ্যতা নিয়ে খুব মনোযোগের সাথে গবেষণা চালিয়ে যান। একসময় তাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত আরবী পাণ্ডুলিপিগুলো তালিকাভুক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে তিনি সেসব বইপুস্তক আরো বেশি পরিমাণে ঘাঁটাঘাঁটি করার সুযোগ পান। তখন তিনি ইবনে কুতাইবা রাহ. এর বিখ্যাত গ্রন্থ 'আলমাআরিফ', আবুল ফিদার 'আত-তারীখ', ইবনে আবী আসীবাহ এর 'উয়ুনু্ল আমবা ফী তবাকাতিল আতিব্বা' প্রভৃতি গ্রন্থের অনুলিপি তৈরি করেন।

এর আরো অনেকগুলো গ্রন্থের অনুলিপি তৈরি করারও তার সুযোগ হয়েছিলো।

১৭৪৭ সালের আগস্ট মাসে তিনি হাজী খলীফার বিখ্যাত গ্রন্থ 'তাকওয়ীমুত তাওয়ারীখ' অনুবাদ করেন এবং সেই অনুবাদের ভূমিকাতে আরব ও ইসলামী বিষয়-আসয় বোঝানোর জন্য 'প্রাচ্য' শব্দটিকে ব্যবহার করাকে জোর গলায় প্রত্যাখান করে এর পরিবর্তে 'মুহাম্মাদী' বা 'ইসলামী' শব্দদ্বয় ব্যবহারের প্রস্তাব করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'প্রাচ্য' শব্দটা খুব বেশি অর্থবহ নয়। কেননা ইসলাম তো শুধু প্রচ্যকেন্দ্রিক কোন ধর্ম নয় বা প্রচ্যের সীমানাতে আবদ্ধ নয়। বরং প্রাচ্যকে ছাড়িয়ে এটি ছড়িয়ে গেছে পাশ্চাত্যে এবং ইউরোপের আনাচেকানাচে। এর বাইরেও আরো অনেকগুলো মূল্যবান কর্মসম্পাদন করেন তিনি। বিশেষকরে আরবী কবিতা নিয়ে তিনি সুন্দর সুন্দর কিছু কাজ করেছেন।

জোহান জ্যাকবের খুবই বিখ্যাত একটি উক্তি হলো, "নিশ্চয়ই যিনি সাহিত্যের ইতিহাস অধ্যয়ন করবেন তাকে এই ব্যাপারটি খুবই অবাক করবে যে, প্রাচ্যের বহু মানুষ সাহিত্যের সব ধরনের শাখা-প্রশাখায় বিচরণ করছেন এমন একটা সময়ে যখন কিনা ইউরোপ ডুবে আছে অজ্ঞাতা-মূর্খতা আর বর্বরতার নিকষকালো অন্ধকারের গর্তে।"

তিনি তার বইপত্রে ইসলামধর্ম ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্মোহ পর্যালোচনা করেছেন এবং অত্যন্ত ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে তার গবেষণা ও অধ্যয়ন থেকে প্রাপ্ত তথ্য-অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরেছেন। ইউরোপিয়ান পন্ডিতরা যেসব বানোয়াট অভিযোগ ও মিথ্যাচার করে আসছিলো সেগুলোর প্রতিবাদ করেন। যার ফলে তাকে খৃস্টমহলের রোষানলে পড়তে হয়েছিলো। তারা তাকে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলো। চরম আর্থিক দৈন্যদশার ভেতর দিয়ে তিনি পুরোটা জীবন অতিবাহিত করেন। তবুও মিথ্যার সামনে নিজেকে গলিয়ে দেন নি। যতো দিন বেঁচে ছিলেন মেরুদন্ড সোজা রেখেই নিজের বিশ্বাসকে সঙ্গী করে দিনাতিপাত করেছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

মওসুআতুল মুস্তাশরিকীন, আব্দুর রাহমান বাদাবী, ২৯৮ পৃ.