কার্ল গুস্তাভ হেমপেল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কার্ল গুস্তাভ হেমপেল
জন্ম(১৯০৫-০১-০৮)৮ জানুয়ারি ১৯০৫
মৃত্যুনভেম্বর ৯, ১৯৯৭(১৯৯৭-১১-০৯)
যুগবিংশ-শতাব্দীর দর্শন
অঞ্চলপাশ্চাত্য দর্শন
ধারাবিশ্লেষণী দর্শন
প্রধান আগ্রহ
উল্লেখযোগ্য অবদান
ভাবগুরু
ভাবশিষ্য

কার্ল গুস্তাভ হেমপেল (জার্মান : Karl Gustav Hempel : জানুয়ারি ৮, ১৯০৫ – নভেম্বর ৯, ১৯৯৭) একজন জার্মান লেখক ও দার্শনিক। দর্শনের ইতিহাসে তিনি যৌক্তিক ইতিবাদী দার্শনিক হিসেবে পরিচিত। বিজ্ঞানের দর্শনের বিংশ শতাব্দির আন্দোলন যৌক্তিক অভিজ্ঞতাবাদের প্রধান ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অবরোহী-নমোলজিক্যাল নমুনার স্পষ্ট উচ্চারণের জন্য তিনি সুপরিচিত। তিনি আরোহের সমস্যা চিহ্নায়ক রেভেন কূটাভাসের (Raven Paradox, একে হেমপেলের কূটাভাসও বলা হয়ে থাকে) জন্যও সুপরিচিত। যুক্তিবিদ্যা, গাণিতিক দর্শন, পদ্ধতিবাদ ও বিজ্ঞানের দর্শনের উপর তার অগাধ পাণ্ডিত্য।

জীবনচরিত[সম্পাদনা]

হেমপেল গোটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Göttingen) গণিত, পদার্থবিদ্যা ও দর্শন অধ্যয়ন করেছেন। পরে বার্লিন ও হিদেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। গোটিনজেনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে দেভিদ হিলবার্তের (David Hilbert) সম্মুখীন হন এবং স্বতঃসিদ্ধের সসীম সংখ্যা থেকে উৎপন্ন কঠিন যৌক্তিক ভিত্তির উপর সকল গণিতকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে যে প্রোগ্রাম হিলবার্ত হাতে নিয়েছেন, তা দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত হন। পরে বার্লিনে এসে ১৯২৯ সালে হেমপেল বৈজ্ঞানিক দর্শনের উপর আয়াজিত এক সভায় অংশ গ্রহণ করেন। এখানে তিনি রুডলফ কারনাপের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং ভিয়েনা চক্রের সাথে সংশ্লিষ্ট বার্লিন চক্রের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। ১৯৩৪ সালে তিনি সম্ভাব্যতা তত্ত্বের (Probability theory) উপর কৃত থিসিসসহ বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়(University of Berlin) হতে ডক্টরাল ডিগ্রি লাভ করেন।

ডক্টরেট ডিগ্রি শেষ করার একবছরের মধ্যে জার্মানির নাৎসি বাহিনির ক্রমবর্ধিতভাবে দমনমূলক ও সেমিটিকবিরোধী আচরণ হেমপেলকে বেলজিয়ামে নির্বাসিত হতে বাধ্য করেছিল (কারণ, তার স্ত্রী ছিলেন ইহুদি)। এখানে তিনি বিজ্ঞানী পল ওপেনহেইম (Paul Oppenheim) কর্তৃক সাহায্যপ্রাপ্ত হন এবং তার সাথে সহ-লেখক হয়ে টিপোলজি ও লজিকের উপর Der Typusbegriff im Lichte der neuen Logik বইটি প্রকাশ করতে পেরেছেন। হেমপেল নির্বাসিত হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে, এখানে তিনি সিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কারনাপের সহকারী পদ গ্রহণ করেছেন। পরে তিনি স্থান পান সিটি কলেজ অব নিউ ইয়র্ক-এ (১৯৩৯ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত), ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৪৮-১৯৫৫) এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রিন্সটনে তিনি থমাস কুনের (Thomas Kuhn) সাথে শিক্ষকতা করেছেন এবং এখানে ১৯৭৩ সাল বা এমিরিটাস না হওয়া পর্যন্ত থেকেছেন। তিনি ১৯৭৪ ও ১৯৭৬ সালের মধ্যে জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে এমিরিটাস হয়েছিলেন। তারপর তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত পিটসবার্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন।

যৌক্তিক ইতিবাদে তার অবদান[সম্পাদনা]

হেমপেল প্রদত্ত যৌক্তিক ইতিবাদ অনেকটা উদার। তিনি অর্থের যাচাইকরণ নীতি সম্পর্কীয় বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যের বিচারমূলক আলোচনা করেন এবং অনুবাদযোগ্যতা মানদণ্ডের সুপারিশ করেন। এই মানদণ্ড অনুযায়ী একটা বচন তখনই অর্থপূর্ণ হবে যখন তা একটা অভিজ্ঞতাভিত্তিক বচনের অনুবাদযোগ্য হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, জ্ঞানজ অর্থপূর্ণতা এবং অর্থহীনতার মধ্যকার তীব্র দ্বি-কোটিক বিভাগকে ক্রমাগত পার্থকরণ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করতে হবে এবং ঐ-ধরনের বচনমণ্ডলিকে অর্থপূর্ণতার চরম একক বলে গ্রহণ করতে হবে।

হেমপেল যৌক্তিক ইতিবাদের ‘শারীরবাদ’(physicalism) এবং কার্যবাদ (Operationalism) সম্পর্কীয় চিন্তাধারাকে খণ্ডন করে ব্যাখ্যামূলক পদ্ধতি (Interpretative system) প্রবর্তন করেন। তিনি সাধারণভাবে পরিচিত নমুনার (Model) ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অত্যন্ত নিখুঁত বিশ্লেষণ দেনতিনিঁ পরিসংখ্যান সংক্রান্ত বা সম্ভাবনামূলক ব্যাখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ‘কভারিং-ল-মডেল’ (Covering Law-model)-এর সার্বিকীকরণ করেন। অনিশ্চয়তার আওতায় সিদ্ধান্তগ্রহণের নমুনার উপর ‘প্রকল্প গ্রহণ’-এর ধারণার ব্যাখ্যা করতে জ্ঞানীয় উপযোগিতার (epistemic utility) ধারণার প্রস্তাব দেন।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মো. আবদুল হালিম, দার্শনিক প্রবন্ধাবলি: তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ২০০৩

রচনা তালিকা[সম্পাদনা]

মৌলিক কাজ[সম্পাদনা]

  • 1936: "Über den Gehalt von Wahrscheinlichkeitsaussagen" and, with Paul Oppenheim, "Der Typusbegriff im Licht der neuen Logik"
  • 1942: The Function of General Laws in History
  • 1943: Studies in the Logic of Confirmation
  • 1959: The Logic of Functional Analysis
  • 1965: Aspects of Scientific Explanation
  • 1966: Philosophy of Natural Science
  • 1967: Scientific Explanation

গদ্য সংগ্রহ[সম্পাদনা]

প্রবন্ধাবলি[সম্পাদনা]

  • ″On the Nature of Mathematical Truth″ and ″Geometry and Empirical Science″ (1945), American Mathematical Monthly, issue 52.
  • Articles in Readings in Philosophical Analysis (pp. 222–249), edited by Herbert Feigl and Wilfrid Sellars (Appleton-Century-Crofts, Inc., 1949).

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]