ইসমাইল হানিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইসমাঈল হানিয়া
ফিলিস্তিনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী (হামাস সমর্থিত গাজা সরকার এর) এবং হামাস এর প্রধান
কাজের মেয়াদ
২৯ মার্চ ২০০৬ – ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
রাষ্ট্রপতিমাহমুদ আব্বাস
আজিজ দুয়াইক
পূর্বসূরীআহমেদ কুরেই
উত্তরসূরীইয়াহিয়া সিনওয়ার
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1963-01-29) ২৯ জানুয়ারি ১৯৬৩ (বয়স ৬১)
আল-শাতি, গাজা উপত্যকা
রাজনৈতিক দলহামাস
ধর্মইসলাম

ইসমাঈল আবদুস সালাম আহমেদ হানিয়া (আরবি: إسماعيل عبد السلام أحمد هنية, Ismaʻīl Haniyya; (ইসমাইল হানিয়া বা ইসমাইল হানিয়াহ নামেও পরিচিত); জন্ম ২৯ জানুয়ারি ১৯৬৩) হামাসের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত আইন পরিষদের নির্বাচনে হামাস জয়লাভের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ফাতাহ-হামাস দ্বন্দ্বের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১৪ জুন রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস তাকে পদচ্যুত করেন। কিন্তু ইসমাইল হানিয়া আদেশ মেনে নেননি এবং গাজায় প্রধানমন্ত্রীত্ব করতে থাকেন।[১]

প্রারম্ভিক ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

ইসমাইল হানিয়া মিশর অধিকৃত গাজা উপত্যকার আল-শাতি উদ্বাস্তু শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় তার বাবা মা বর্তমান ইসরায়েলের অন্তর্গত আসকালানের নিকটস্থ বাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হন।[২] তিনি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক হন।[২][৩] বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি হামাসে যোগ দেন।[২] ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধি ছাত্র কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন।[৩] ইসলামিক এসোসিয়েশন ফুটবল দলে তিনি মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতেন।[৩] গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম ইন্তিফাদার প্রায় সমসাময়িক কালে তিনি স্নাতক হন।[২] বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে তিনি ইসরায়েলে স্বল্পকালীন কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।[২] ১৯৮৮ সালে তিনি পুনরায় ইসরায়েল কর্তৃক গ্রেপ্তার হন এবং ছয় মাস কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।[২] ১৯৮৯ সালে তিনি তিন বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।[২] ১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়ার পর আবদুল আজিজ আল-রানতিসি, মাহমুদ জাহহার ও আরো ৪০০ কর্মীর সাথে ইসরায়েল তাকে লেবানন পাঠিয়ে দেয়।[২] তারা দক্ষিণ লেবাননের মার্জ‌ আল-জহুরে এক বছর অবস্থান করেছিলেন। বিবিসির মতে এখানে হামাস যথেষ্ট পরিমাণে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে উঠে।[২] এক বছর পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন এবং ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন।[২]

হামাসে অবস্থান[সম্পাদনা]

১৯৯৭ সালে আহমেদ ইয়াসিন ইসরায়েল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর হানিয়া তার দপ্তর পরিচালনের দায়িত্ব পান।[২] ইয়াসিনের সাথে সম্পর্কের কারণে হামাসে তার খ্যতি বৃদ্ধি পায় এবং তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষে নিয়োগ পান।[২] ইয়াসিনের সাথে তার সম্পর্ক এবং ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হামাসের অনেক নেতার হত্যাকান্ডের ফলে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় হামাসে তার অবস্থান আরো মজবুত হয়। ইসরায়েলি বাহিনী তাকেও লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল। ২০০৩ সালে জেরুজালেমে আত্মঘাতি বোমা হামলার পর হামাস নেতৃত্বকে উৎখাতের উদ্দেশ্যে পরিচালিত ইসরায়েলি বোমা হামলায় তিনি হাতে আহত হন।

প্রধানমন্ত্রী[সম্পাদনা]

২০০৬ সালের ২৫ জানুয়ারি হামাস নির্বাচনে জয়ী পয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন। ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মাহমুদ আব্বাসের সাথে সাক্ষাত করেন এবং ২৯ মার্চ শপথ নেন।

পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

নির্বাচনের পর ইসরায়েল অর্থনৈতিক অবরোধসহ ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক কিছু পদক্ষেপ নেয়। ইসরায়েলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট‌ এরপর ঘোষণা দেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পক্ষে ইসরায়েল কর্তৃক সংগৃহিত প্রায় ৫০মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাসিক কর ইসরায়েল হস্তান্তর করবে না। হানিয়া অবরোধ উপেক্ষা করে বলেন যে হামাস নিজেকে নিরস্ত্র করবে না এবং ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না। তিনি এসকল পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেন যে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রদর্শিত গণতান্ত্রিক মতামতের প্রতি ইসরায়েলের ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত ছিল।

৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের উদ্বৃত্ত বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায়। ফিলিস্তিনি অর্থমন্ত্রী মাজেন সুনুকরুত এই দাবি মেনে নেন।[৪] যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে বৈদেশিক সাহায্য হারানোর পর হানিয়া মন্তব্য করেন যে পশ্চিমারা ফিলিস্তিনি জনগণের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য সবসময় অনুদানকে ব্যবহার করছে।[৫]

২০০৬ সালের নির্বাচনের কয়েক মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশকে লেখা একটি চিঠিতে হানিয়া নির্বাচিত সরকারের সরাসরি আলোচনার জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান করেন। তিনি ইসরায়েলের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সন্ধির প্রস্তাব করেন এবং ১৯৬৭ সালের পূর্বের ফিলিস্তিনি সীমানা মেনে নেন এবং আন্তর্জাতিক বয়কট প্রত্যাহারের আবেদন করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি এবং বয়কট বহাল রাখে।[৬]

বিতর্কিত পদচ্যুতি[সম্পাদনা]

২০০৭ সালের ১৪ জুন মাহমুদ আব্বাস হানিয়াকে পদচ্যুত করে সালাম ফাইয়াদকে নিয়োগ দেন। এর ফলে হামাসের সামরিক শাখা ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে। ইতিপূর্বে তা ফাতাহ ফাতাহর মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে ছিল।[৭] এই নিয়োগকে বেআইনি হিসেবে ধরা হয়েছিল কারণ ফিলিস্তিনি মৌলিক আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কোনো প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করতে পারলে আইন পরিষদের সম্মতি ব্যতীত নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন না। আইন অনুযায়ী নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ফাইয়াদের নিয়োগ আইন পরিষদে অনুমোদিত না হওয়ায় হানিয়া গাজায় প্রধানমন্ত্রীত্ব করতে থাকেন। সেসাথে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি তাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গণ্য করতে থাকে। ফাইয়াদের অনুমোদনকে প্রকাশ্যে অবৈধ ঘোষণা দানকারীদের মধ্যে মৌলিক আইনের খসড়া প্রণয়নকারী ফিলিস্তিনি আইনজীবী আনিস আল-কাসিম অন্যতম।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Abbas sacks Hamas-led government"BBC News। ১৪ জুন ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০০৭ 
  2. "Profile: Hamas PM Ismail Haniya"BBC। ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬। 
  3. Donald Macintyre (৩ জানুয়ারি ২০০৯)। "Hamas PM Ismail Haniyeh at war with Israel – and his own rivals"The Belfast Telegraph 
  4. "PNA agrees to return 50-million-dollar fund to US", Xinhua, 19 February 2006
  5. "Hamas dismisses Israeli sanctions", BBC, 20 February 2006
  6. "In 2006 letter to Bush, Haniyeh offered compromise with Israel"Haaretz। ১৪ নভেম্বর ২০০৮। 
  7. David Rose, The Gaza Bombshell, Vanity Fair, April 2008
  8. Opinion of lawyer who drafted Palestinian law ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, Reuters, 8 July 2007

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
আহমেদ কুরেই
ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী
২০০৬–২০১৪
উত্তরসূরী
রামি হামদাল্লাহ