আর্থার মরিস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আর্থার মরিস
১৯৩৯ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে আর্থার মরিস
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামআর্থার রবার্ট মরিস
জন্ম(১৯২২-০১-১৯)১৯ জানুয়ারি ১৯২২
বন্ডি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু২২ আগস্ট ২০১৫(2015-08-22) (বয়স ৯৩)
ডাকনামমরিস
উচ্চতা১.৭৫ মিটার (৫ ফুট ৯ ইঞ্চি)
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনস্লো লেফট-আর্ম চায়নাম্যান
ভূমিকাব্যাটসম্যান, অধিনায়ক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৭১)
২৯ নভেম্বর ১৯৪৬ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১১ জুন ১৯৫৫ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৪০/৪১-১৯৫৪/৫৫নিউ সাউথ ওয়েলস
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪৬ ১৬২
রানের সংখ্যা ৩৫৩৩ ১২৬১৪
ব্যাটিং গড় ৪৬.৪৮ ৫৩.৬৭
১০০/৫০ ১২/১২ ৪৬/৪৬
সর্বোচ্চ রান ২০৬ ২৯০
বল করেছে ১১১ ৮৬০
উইকেট ১২
বোলিং গড় ২৫ ৪৯.৩৩
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ১/৫ ৩/৩৬
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৫/– ৭৩/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৮ জুলাই ২০১৭

আর্থার রবার্ট মরিস, এমবিই (ইংরেজি: Arthur Morris; জন্ম: ১৯ জানুয়ারি, ১৯২২ - মৃত্যু: ২২ আগস্ট, ২০১৫) নিউ সাউথ ওয়েলসের বন্ডি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৫ মেয়াদে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও, জাতীয় দলকে দুই টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। প্রথিতযশা ও বিখ্যাত ব্যাটসম্যান স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন ১৯৪৮ সালের ‘অপরাজেয় দলের’ অন্যতম সদস্য ছিলেন।

উদ্বোধনী বামহাতি ব্যাটসম্যান মরিসকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি স্লো লেফট-আর্ম চায়নাম্যান বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রতিনিধিত্ব করেন আর্থার মরিস[১]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

সিডনির সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা বন্ডিতে এক বিদ্যালয় শিক্ষকের সন্তান মরিস ফাস্ট বোলার হিসেবে ওয়াভার্লি ক্রিকেট ক্লাবে খেলেছেন। শৈশবকাল তার এ শহরেই কাটে। এরপর ৫ বছর বয়সে তার পরিবার ডানগগ এলাকায় স্থানান্তরিত হন। তার সিডনির বেভার্লি হিলসে স্থানান্তরিত হবার পূর্বে নিউক্যাসলে অবস্থান করেছিল। এ সময়েই তার বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে।

কৈশোরে রাগবি ইউনিয়নের পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতিও তার প্রবল অনুরাগ ছিল। এরফলে বালকদের রাজ্যদলে উভয় ক্রীড়াতেই অংশগ্রহণের সুযোগ পান। শুরুতে স্পিন বোলিংয়ের উপর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন। ১৯৪০-৪১ মৌসুমে বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট অভিষেকে উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করার বিরল কৃতিত্ব দেখান। পরবর্তীতে অবশ্য দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ভারতের নরি কন্ট্রাক্টর তার উভয় ইনিংসে জোড়া শতক হাঁকান। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার খেলোয়াড়ী জীবনে ছেদ ঘটে। এ সময়ে তিনি অস্ট্রেলীয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগ লাভ করেন ও রাগবি ইউনিয়ন দলে খেলার জন্য নির্বাচিত হন।

খেলোয়াড়ী জীবন[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৫ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৪৬ টেস্টে অংশ নিয়েছেন। ৪৬.৪৮ গড়ে ৩,৫৩৩ রান তোলেন তিনি। ক্রিকেটের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। খুব দ্রুত নিজেকে দলের প্রধান সদস্য হিসেবে গড়ে তোলেন। নিজস্ব তৃতীয় টেস্টে সেঞ্চুরিসহ পরবর্তী টেস্টের উভয় ইনিংসে জোড়া শতক তোলেন। এরফলে অ্যাশেজ টেস্টে দ্বিতীয় অস্ট্রেলীয় হিসেবে এ রেকর্ড গড়েন। তার এ সাফল্যের প্রেক্ষিতে মাত্র ১৮ মাস পর দল নির্বাচকমণ্ডলী তাকে অপরাজেয় দলের ইংল্যান্ড সফরের জন্য মনোনীত করে। বামহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মরিস ১৯৪৮ সালে অপরাজিত থাকা অ্যাশেজ সিরিজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সফল অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি ব্র্যাডম্যানের সাথে তিনিও ঐ সফরে তার ১২ সেঞ্চুরির মধ্যে তিনটি হাঁকিয়েছিলেন।

১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ড সফরে ডন ব্র্যাডম্যানের অপরাজেয় দলের সদস্য হিসেবে অন্যতম ভূমিকা গ্রহণের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। ঐ সফরের টেস্ট সিরিজে তিনটি সেঞ্চুরিসহ দলের শীর্ষ রান সংগ্রহকারী ছিলেন তিনি। তার প্রাণান্তকর চেষ্টায় হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টেস্টের পঞ্চম দিনে ৪০৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে অস্ট্রেলিয়া দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ সিরিজটি ব্র্যাডম্যানের বিদায়ী সিরিজ ছিল। অস্ট্রেলীয়রা ৪০৪/৩ তুলে ইংল্যান্ডকে ৭ উইকেটে পরাভূত করেছিল। আর্থার মরিস ১৮২ ও ডন ব্র্যাডম্যান ১৭৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।

৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পর তিনি অস্ট্রেলিয়া দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালনসহ শীর্ষ ব্যাটসম্যান ছিলেন। ব্র্যাডম্যান পরবর্তী যুগে অস্ট্রেলিয়া দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রথম সিরিজে দু’টি সেঞ্চুরি করেন। ঐ সিরিজে তাঁর দল ৪-০ ব্যবধানে জয়ী হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে মরিস আরও নয়বার তিন অঙ্কের কোঠায় পৌঁছেন। তখন তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৬৫-এর ঊর্ধ্বে। কিন্তু তারপর থেকেই তাঁর খেলার মান কমতে থাকে ও অস্ট্রেলিয়া দল কঠিন সময় অতিক্রম করে। তাঁকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়নি ও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দল থেকে উপেক্ষিত হন।

অধিনায়কত্ব[সম্পাদনা]

অপরাজেয় দলীয় সঙ্গী কলিন ম্যাককুলের সাথে আর্থার মরিস (ডানে)

১৯৫১-৫২ মৌসুমে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে একটি টেস্টে নেতৃত্ব দেন। নিয়মিত অধিনায়ক লিন্ডসে হ্যাসেটের উরুতে টান পড়ায় তিনি এ দায়িত্ব পান।[২] এছাড়াও, ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক টেস্টে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মরিস। সিডনিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর পূর্বে ইয়ান জনসনকিথ মিলারের আঘাতের কারণে মরিস দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।[৩][৪] কিন্তু উভয় টেস্টেই তাঁর দল পরাজিত হয়েছিল।

সম্মাননা[সম্পাদনা]

১৯৪৯ সালের শুরুতে মরিসকে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত করা হয়। ১৯৪৮ সালের সাফল্যের প্রেক্ষিতে তাঁকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।[৫] এ প্রসঙ্গে উইজডেন মন্তব্য করে যে, ‘তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা বামহাতি ব্যাটসম্যানরূপে বিবেচিত।’[৬][৭]

২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের শতাব্দীর সেরা দলের সদস্য হিসেবে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৮] এছাড়াও, ২০০১ সালে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয় মরিসকে।

২৭ জুলাই, ২০১৬ তারিখে সতীর্থ অস্ট্রেলীয় ও সাবেক সাউদার্ন স্টার্সের অধিনায়ক কারেন রোল্টনসহ শ্রীলঙ্কান স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন ও ইংল্যান্ডের জর্জ লোহম্যানের সাথে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। রোল্টন ও মরিসের পরিবারের প্রতিনিধি এ বছরের শেষদিকে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।[৯]

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড মরিস ও রোল্টনের প্রাপ্তিতে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

খুব কমসংখ্যক সম্মাননাই আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমের তুলনায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। তারা দু’জন তাদের খেলোয়াড়ী জীবনে এ পুরস্কারের চেয়ে বেশি অর্জন করেছেন। আর্থার মরিস অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অন্যতম এবং ১৯৪৮ সালের স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের খ্যাতনামা অপরাজেয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তাঁর ধ্রুপদী, চমকপ্রদ ও বড় ধরনের রান সংগ্রহের দৃঢ় প্রত্যয় অস্ট্রেলিয়াকে প্রায়শঃই জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।

আর্থার মরিসের স্থিরচিত্র

দেহাবসান[সম্পাদনা]

১৯৫৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। তার প্রথম স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। পরবর্তীকালে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ট্রাস্টি হিসেবে বিশ বছরের অধিককাল দায়িত্ব পালন করেন। ৯৩ বছর বয়সে ২২ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে মরিসের দেহাবসান ঘটে।[১০] তার সাবেক অস্ট্রেলীয় দলীয় সঙ্গী নীল হার্ভে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনকালে বলেন যে, তিনি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। তাঁর সমতুল্য ক্রিকেটার বিশ্বে দুর্লভ।[১১]

টেস্টে অবদান[সম্পাদনা]

  ব্যাটিং[১২] বোলিং[১৩]
প্রতিপক্ষ খেলা রান গড় সর্বোচ্চ ১০০ / ৫০ রান উইকেট গড় সেরা (ইনিংসে)
ইংল্যান্ড ২৪ ২০৮০ ৫০.৭৩ ২০৬ ৮/৮ ৩৯ ৩৯.০০ ১/৫
ভারত ২০৯ ৫২.২৫ ১০০* ১/০
দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ ৭৯২ ৪৬.৫৮ ১৫৭ ২/৩ ১১ ১১.০০ ১/১১
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৫২ ৩২.২৮ ১১১ ১/১
সর্বমোট ৪৬ ৩৫৩৩ ৪৬.৪৮ ২০৬ ১২/১২ ৫০ ২৫.০০ ১/৫

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "List of Players who have played for New South Wales". www.cricketarchive.com. Retrieved 28 July, 2017
  2. Pollard, p. 52.
  3. Robinson, p. 217.
  4. McHarg, p. 133.
  5. "Wisden Cricketers of the Year"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-২১ 
  6. "Wisden 1949 – Arthur Morris". Wisden. 1949. Archived from the original on 6 January 2016. Retrieved 21 May 2007.
  7. "Statsguru – AR Morris – Tests – Innings by innings list". Cricinfo. Archived from the original on 6 January 2016. Retrieved 16 July 2007.
  8. "Panel selects cricket team of the century"Australian Broadcasting Corporation। ২০০০-০১-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-০৬ 
  9. "Arthur Morris into cricket hall of fame"। AAP। ২০১৬-০৭-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৬ 
  10. ABC Australia, Arthur Morris dies at 93
  11. Brydon Coverdale (২২ আগস্ট ২০১৫)। "'A better bloke you couldn't find' - Harvey"ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১৫ 
  12. "Statsguru – AR Morris – Test Batting – Career summary"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০০৭ 
  13. "Statsguru – AR Morris – Test Bowling – Career summary"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০০৭ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী
লিন্ডসে হ্যাসেট
অস্ট্রেলীয় টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৫১-৫২
উত্তরসূরী
লিন্ডসে হ্যাসেট
পূর্বসূরী
ইয়ান জনসন
অস্ট্রেলীয় টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৫৪-৫৫
উত্তরসূরী
ইয়ান জনসন