আবেগবাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদ নামে যে মতবাদটি দার্শনিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার অনুকূলে অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, নীতিদর্শনের ক্ষেত্রে নৈতিক পদের যৌক্তিক বিশ্লেষণের পক্ষে অনুরূপ সাড়া জাগিয়েছিল আবেগবাদ (Emotivism) নামের নৈতিক মতবাদটি। আবেগবাদকে তাই যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদের নৈতিক রূপান্তর হিসেবে গণ্য করা হয়। আবেগবাদী নৈতিক মতবাদের সূচনা করেন হাছিসন(Hutcheson) ও ডেভিড হিউম। কিন্তু আবেগবাদের মূল প্রবক্তা হচ্ছেন যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী মরিজ শ্লিক(Moritz Schlick), রুডলফ কারণাপ(Rudolf Carnap), এ.জে. এয়ার(A.J. Ayer) এবং আমেরিকান নীতি-দার্শনিক সি.এল. স্টিভেনসন(C.L. Stevenson) ও পল এডওয়ার্ডস(Paul Edwards)। তবে, ১৯২৩ সালে প্রকাশিত আই.এ. রিচার্ডস(I.A. Richards) ও সি.কে. ওডেন(C.K. Ogden)-এর The Meaning of Meaning গ্রন্থে আবেগবাদের সর্বপ্রথম পরিচয় ঘটে। আবেগবাদ নামক নৈতিক মতবাদে অনেকেই অবধান রাখলেও এয়ার, স্টিভেনসন এবং পল এডওয়ার্ডস বিখ্যাত।

আবেগবাদী মতবাদ অনুসারে নৈতিক অবধারণ হচ্ছে বক্তার আবেগ, অনুভূতি, ক্ষোভ ও উষ্মা(excitement) ইত্যাদির প্রকাশ মাত্র। নৈতিক বচনের মূখ্য উদ্দেশ্য বক্তার আবেগ, অনুভূতি ও মনোভাবকে প্রকাশ করা। আমরা যখন কোন কিছুকে নৈতিক গুণসম্পন্ন বলে অভিহিত করি তখন তার মাধ্যমে আমরা শুধু আমাদের অনুভূতিকেই প্রকাশ করি। নৈতিক অবধারণ বস্তু বা ঘটনার বর্ণনার উপর নির্ভরশীল নয়; বরং ব্যক্তি বা বক্তার আবেগ-অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল। আর যেহেতু নৈতিক অবধারণ অনুভূতির প্রকাশ মাত্র, সেহেতু এ ধরনের অবধারণে সত্য বা মিথ্যা বলতে কোন কিছুর প্রমাণ করা যায় না। অতএব, আবেগবাদীদের মতে, বিষয়গত বা সার্বজনীন নৈতিক আদর্শ বলতে কিছুই নেই। আবেগবাদ সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে, “Emotivism is a meta-ethical view that claims that ethical sentences do not express propositions but emotional attitudes.”১ যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী এয়ারের মতে, “নৈতিক মূল্যবোধ বা মান আমাদের মানসিক উচ্ছাসের বহিঃপ্রকাশ।“২ নৈতিক বাক্য বা উক্তি, তার কাছে ছদ্ম-ধারণা (Pseudo-concepts) মাত্র এবং তাই অর্থহীন। স্টিভেনসনের মতে, “নৈতিকতা ব্যক্তির মানসিক মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। একই বস্তু এক ব্যক্তির কাছে ভাল এবং অন্য ব্যক্তির কাছে মন্দ হতে পারে এবং তা নির্ভর করছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর।“৩ অতএব, আবেগবাদীদের মতে, নৈতিক বিষয়ে কোন বিষয়গত ও সার্বজনীন ধারণা ও বাক্যসমূহের যৌক্তিক বিশ্লেষণ এবং নৈতিক বাক্যের সাথে নৈতিক সিদ্ধান্তের যৌক্তিক সম্পর্ক নিরূপণই নীতি দর্শনের মূল কাজ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]