আফগান গার্ল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্টিভ ম্যাককারি আলোকচিত্র আফগান গার্ল; শরবত গুলা আফগান গার্ল (১৯৮৪ সালের ডিসেম্বেরে আলোকচিত্রটি ধারণ করা হয়)

শরবত গুলা (পশতু: شربت ګله‎) (উচ্চারন [ˈʃaɾbat]) (জন্ম: আনুমানিক; ১৯৭২) হলেন একজন আফগান নারী যিনি বিখ্যাত আলোকচিত্র আফগান গার্ল-এর মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসেন। আলোকচিত্রটি ধারণ করেছিলেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক স্টিভ ম্যাককারি। আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারিত্বের সময় যখন তার আলোকচিত্রটি ধারণ করা হয়েছিল তখন শরবত গুলা পাকিস্তানের একটি উদ্বাস্তু শিবিরে শরণার্থী হিসেবে ছিলেন। মূলত এই আলোকচিত্রটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের ১৯৮৫ সালের জুনের সংখ্যায় প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করার ফলে এটি বিশ্বব্যপী আলোচিত হয়ে উঠে; এ সময় শরবত গুলার বয়স ছিল আনুমানিক ১২ বছর। ২০০২ সালের প্রথম দিকে শরবত গুলাকে শনাক্ত করা হয়; এর পূর্বে তিনি আফগান গার্ল নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিলেন। আলোকচিত্রটিকে অনেকেই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসার সাথে তুলনা করেন[১][২]; আবার অনেকেই এটিকে আফগান মোনালিসা হিসেবে মনে করে থাকেন।

আলোকচিত্রের বিষয়[সম্পাদনা]

পশতুন বংশীয়[৩] গুলা আফগানিস্তানে সোভিয়েত বোমাবর্ষণের ফলে অনাথ হয়ে ১৯৮৪ সালে পাকিস্তানের নাসির বেগ শরণার্থী শিবিরে প্রেরিত হন। এর পূর্বে ১৯৮০-এর দশকে তার গ্রামে সোভিয়েত হেলিকপ্টার গানশিপ আক্রমণ করে। সোভিয়েত আক্রমণে তার পিতা-মাতা নিহত হন। এর ফলে বাধ্য হয়ে তিনি, তার ভাইবোন ও তার দাদী প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে নাসির বেগ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন।[৪]

১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে তিনি বিয়ে করেন ও ১৯৯২ সালে আফগানিস্তানে ফিরে আসেন। গুলার তিন কন্যা। তারা হলেন: রোবিনা, জাহিদা ও আলিয়া। তার চতুর্থ মেয়ে শৈশবেই মৃত্যুবরণ করেন। গুলা স্বপ্ন দেখেন তার কন্যারা শিক্ষিত হবেন যেটা তার নিজের ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি।

১৯৮৪-এর আলোকচিত্র[সম্পাদনা]

১৯৮৪ সালে নাসির বেগ শরণার্থী শিবিরে আলোকচিত্রটি ধারণ করেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি-এর আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি, তিনি তার কোডাক্রোম ৬৪ রঙ স্লাইড ফিল্মের নিক্বণ এফএম ২ ক্যামেরা ও নিক্বণ ১০৫ মিমি এআই এস এফ২.৫ লেন্স-এর মাধ্যমে ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন।[৫] মারিয়্যাটা জর্জিয়া ভিত্তিক গ্রাফিক আর্ট পরিষেবা দ্বারা ছবিটির প্রাক-মুদ্রণ সম্পন্ন হয়েছিল। গুলা শরণার্থী শিবির দ্বারা পরিচালিত একটি বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন; ম্যাককারি আফগান নারীর ছবি ধারণ করার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছিলেন কারণ আফগান নারীরা সাধারণত ইসলামের বিধানমতে অন্য পুরুষের সামনে আসে না।

আলোকচিত্র ধারণ করার সময় গুলার পরিধান করেছিলেন মলিন হয়ে যাওয়া সবুজ সালোয়ার ও মাথায় ততোধিক মলিন লাল ওড়না। ম্যাককারি গুলার বেশ কয়েকটি চিত্র ধারণ করেছিলেন কিন্তু তিনি মেয়েটির নাম জানতে চাননি। যদিও মেয়েটির নাম জানা ছিল না কিন্তু আলোকচিত্রটি আফগান গার্ল শিরোনামে ১৯৮৫ সালের জুন সংখ্যায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয়। আলোকচিত্রটি গুলার সবুজ চোখের কারণে রাতারাতি পৃথিবীব্যপী বিখ্যাত হয়ে যায় এবং তার চোখ ও চেহারই হয়ে উঠে ১৯৮০-এর দশকের যুদ্ধ বিদ্বস্থ আফগানিস্তানের শরণার্থীদের প্রতিচ্ছবি। ছবিটি ম্যাগাজিনের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবি হিসেবেও পরিচিতি পায়।[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Zoroya, Greg (২০০২-০৩-১৩)। "National Geographic tracks down Afghan girl"USA Today। Gannett Company। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-১৪ 
  2. "Hollywood movie poster at the Kabul Cinema"। ২০১২-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-০৪ 
  3. Newman, Cathy (এপ্রিল ২০০২)। "Afghan Girl: A Life Revealed"National Geographic Magazine। ২০০৮-০২-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-১৪ 
  4. Lucas, Dean। "Afghan Eyes Girl"Famous Pictures Magazine। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০১-১৪ 
  5. "Portfolio"Nikon World (Summer সংস্করণ)। Nikon4 (1): 9। ১৯৮৮। ওসিএলসি 2265134। ২০১২-১১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-১৪ 
  6. McCurry, Steve (১০ এপ্রিল ২০০১)। "National Geographic: Afghan Girl, A Life Revealed"The Washington Post। The Washington Post Company। ওসিএলসি 56914684। ২০১২-০২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-১৪