অ্যালান বুচার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অ্যালান বুচার
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামঅ্যালান রেমন্ড বুচার
জন্ম (1954-01-07) ৭ জানুয়ারি ১৯৫৪ (বয়স ৭০)
ক্রয়ডন, সারে, ইংল্যান্ড
উচ্চতা৫ ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৩ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনবামহাতি মিডিয়াম,
স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
সম্পর্কইয়ান বুচার (ভ্রাতা)
মার্টিন বুচার (ভ্রাতা)
মার্ক বুচার (পুত্র)
গ্যারি বুচার (পুত্র)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
একমাত্র টেস্ট
(ক্যাপ ৪৮২)
৩০ আগস্ট ১৯৭৯ বনাম ভারত
একমাত্র ওডিআই
(ক্যাপ ৫৭)
২০ আগস্ট ১৯৮০ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৭২ - ১৯৯৮সারে কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব
১৯৮৭ - ১৯৯২গ্ল্যামারগন
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৪০২ ৩৫৯
রানের সংখ্যা ৩৪ ১৪ ২২,৬৬৭ ৯,৬১৯
ব্যাটিং গড় ১৭.০০ ১৪.০০ ৩৬.৩২ ৩১.৪৩
১০০/৫০ ০/০ ০/০ ৪৬/১২৩ ৭/৫৬
সর্বোচ্চ রান ২০ ১৪ ২১৬* ১৪০
বল করেছে ১২ ১০,০০৮ ৩,৭৮৮
উইকেট ১৪১ ৭৫
বোলিং গড় ৩৮.৫৩ ৩৩.৭২
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/৪৮ ৫/১৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ০/– ০/– ১৮৫/– ৮৫/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অ্যালান রেমন্ড বুচার (ইংরেজি: Alan Butcher; জন্ম: ৭ জানুয়ারি, ১৯৫৪) সারের ক্রয়ডন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও সাবেক ইংরেজ ক্রিকেট তারকা। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারেগ্ল্যামারগনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে মিডিয়াম কিংবা স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন অ্যালান বুচার

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

সারের ক্রয়ডনে অ্যালান বুচারের জন্ম।[১] বেকেনহাম অনূর্ধ্ব-১১ দলের সদস্যরূপে খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুর দিকের খেলায় বুচার অংশ নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় তার পরিবার সাড়ে পাঁচ বছর অবস্থান করে। এ সময়েই তার খেলোয়াড়ী জীবনের গঠনকাল অতিক্রমক করছিল ও গ্লেনেগ যুব দলে খেলতে থাকেন। তার অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করে ও জুনিয়র ক্রিকেটারের পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এছাড়াও, সাউদার্ন রেডব্যাকস অনূর্ধ্ব-১৫ দলের পক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হন। অস্ট্রেলিয়ায় পিতা-মাতা অবস্থান করছিলেন। তিনি বড়দের দলে যোগ দেন ও গৃহীত দেশ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলার জন্য যোগ্যতা লাভ করেন। অন্যদিকে, তার পিতামাতা ইংল্যান্ডে ফিরে যান।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে বামহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলতে নামেন। পরবর্তীকালে বামহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে আক্রমণাত্মক ঢংয়ে পিছনের পায়ে ভর রেখে শর্ট বল খেলার দিকে ধাবিত হন।

১৯৭২ থেকে ১৯৯৮ সময়কালে সারে ও ১৯৮৭ থেকে ১৯৯২ সময়কালে গ্ল্যামারগনের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন অ্যালান বুচার। ইংল্যান্ডের পক্ষে একটিমাত্র টেস্ট খেলার সুযোগ পেলেও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দূর্দান্ত প্রতাপে রাজত্ব করেছেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৯১ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেছেন তিনি।

১৯৭২ সালে সারে দলের পক্ষে বোলার হিসেবে খেলতে নামলেও ১৯৭৫ সালে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। সারে দলের পক্ষে ১৫ বছর অতিবাহিত করেন। ১৯৭৯ সালে গ্রাহাম ক্লিনটন সারে দলে যোগ দেয়ার পর তারা দুজন সফলতার সাথে দীর্ঘদিনের উদ্বোধনী জুটি হিসেবে মাঠে নামতেন। সারে দলের পক্ষে তারা উনিশটি শতরানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। তন্মধ্যে, ১৯৮৪ সালে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ২৭৭ রানের মূল্যবান জুটি ছিল।[২] সারে দলে অবস্থানকালে প্রত্যেক মৌসুমেই গড়ে ১,৩০০ থেকে ১,৭০০ রান তুলেছেন।

টেস্ট ক্রিকেট[সম্পাদনা]

৩০ আগস্ট, ১৯৭৯ তারিখে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকসহ একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭৯ সালে ভারত দল ইংল্যান্ড গমন করে। সফরকারী দলের বিপক্ষে ওভালে খেলার জন্য মনোনীত হন অ্যালান বুচার। কিন্তু নিজ নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। উভয় ইনিংসে তিনি মাত্র ১৪ ও ২০ রান তুলেন। তৎকালীন ইংরেজ অধিনায়ক মাইক ব্রিয়ারলি’র মতামত অগ্রাহ্য করে তাকে আর কোন টেস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ব্রিয়ারলি তাকে কাউন্টি খেলায় শীর্ষস্থানীয় ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে সেরা খেলোয়াড়রূপে গণ্য করতেন।

অবসর[সম্পাদনা]

ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৯৩ সালে এসেক্স ক্লাবের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সারের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যালান বুচার।

১৯৮৬ সালে সারে দল অ্যালান বুচারের সাথে চুক্তি নবায়ণে অস্বীকৃতি জানায় ও তিনি অবসরগ্রহণের কথা ভাবছিলেন। তবে, গ্ল্যামারগন থেকে প্রস্তাবনা আসলে তিনি তা গ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালে গ্ল্যামারগনের অধিনায়কত্ব করেন ও ১৯৯২ সালে খেলা থেকে অবসর নেন। ৬৮৪ ইনিংসে ২২,৬৬৭ রান তুলেন। ৪৬ সেঞ্চুরির মধ্যে সর্বোচ্চ করেন অপরাজিত ২১৬ রান। ১৯৯০ সালটি তার সেরা মৌসুম ছিল। ঐ মৌসুমে ৫৮.৭৭ গড়ে ২,১১৬ রান তুলেন। এছাড়াও, ৩৮.৫৩ গড়ে ১৪১ উইকেট লাভ করেছেন। সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ৬/৪৮।

কোচিং[সম্পাদনা]

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর এসেক্স ও সারে দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন অ্যালান বুচার। তবে, ১৯৯৮ সালে ৪৪ বছর বয়সে আকস্মিকভাবে সারে দলের পক্ষে খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন। এ সময়ে দলে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় আঘাতের কবলে পড়েছিল। ঐদিনই তার সন্তান মার্ক বুচার ইংল্যান্ডের পক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন। ১৯৯২ সালের পর প্রথম কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের খেলায় বুচার সিনিয়র ২২ ও ১২ রান তুলেছিলেন।[৩] শুরুতে সারে দলের সহকারী কোচের দায়িত্বে ছিলেন অ্যালান বুচার। ২০০৬ সালে প্রধান কোচের দায়িত্ব পান। কিন্তু, ২০০৮ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের প্রথম বিভাগ থেকে সারে দলের অবনমন ঘটলে তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বাধ্য হন।

৪ মার্চ, ২০১০ তারিখ থেকে ২০১৩ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন অ্যালান বুচার। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের উত্থান ও ঘরোয়া ক্রিকেটের উত্তরণে বুচারকে বিবেচনায় আনা হয়। তখন দলটি আত্মবিশ্বাসের তলানীতে অবস্থান করছিল। ২০১০ সালের আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতার প্রস্তুতিমূলক খেলায় অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানকে পরাজিত করেছিল জিম্বাবুয়ে দল। তবে, মূল খেলাতে আবারও বাঁধার মুখোমুখি হয়। এছাড়াও, দলটি ত্রিদেশীয় প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা ও ভারতকে দুইবার পরাজিত করে। কিন্তু, ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের কোন খেলাতেই জয় পায়নি। জিম্বাবুয়ে দলের সাথে যুক্ত থাকাকালে ‘দ্য গুড মুরুঙ্গু? এ ক্রিকেট টেল অব দি আনএক্সপেক্টেড’ শিরোনামীয় গ্রন্থ ২০১৬ সালে প্রকাশ করেন।[৪]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

ক্রিকেটের সাথে অ্যালান বুচারের পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সক্রিয় সম্পৃক্ততা রয়েছে। তার ভ্রাতৃদ্বয় - ইয়ান বুচার ও মার্টিন বুচার এবং পিতাদের পদাঙ্ক অনুসরণ পুত্রদ্বয় - মার্ক বুচার ও গ্যারি বুচার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র মার্ক বুচার ক্রিকেট খেলে বেশ সুনাম কুড়ান ও সারে দলের অধিনায়কসহ কিছুকাল ইংল্যান্ডের প্রধান ব্যাটিং মেরুদণ্ডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কনিষ্ঠ সন্তান গ্যারি বুচারও সারে এবং গ্ল্যামারগনের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৯১ সালে ওভালে সানডে লীগের খেলায় মার্ক ও অ্যালান বুচার একে-অপরের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এ পর্যায়ে মার্কের সারে দলে অভিষেক ঘটেছিল। ২০০৯ সালে ক্রিকেট থেকে মার্ক বুচার তার অবসরের কথা ঘোষণা করেন।

যমজ কন্যার একজন ব্রায়নি বুচার এসেক্স অনূর্ধ্ব-১৫, ক্লেভডন ও হনিউড কমিউনিটি সায়েন্স স্কুলের পক্ষে খেলেছেন। অপর কন্যা সেরি বুচার ক্রিকেট খেলায় অংশ নিলেও জিমন্যাস্টিক্সেই অধিকতর আগ্রহী। তন্মধ্যে, ব্রায়নি বর্ষসেরা অ্যাথলেটের পুরস্কার লাভ করে।

মূল্যায়ন[সম্পাদনা]

ক্রিকেট লেখক কলিন বেটম্যান মন্তব্য করেন যে, জনপ্রিয় ও পরিচ্ছন্ন বামহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ছিলেন। তবে, দূর্ভাগ্যবশতঃ তাকে এক ক্যাপ ক্লাবের সদস্য হিসেবে থাকতে হয়েছে। কাউন্টি ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন ও দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলারদের মোকাবেলা করলেও এক্ষেত্রে তিনি তা করতে পারেননি।

রচনাসমগ্র[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 35আইএসবিএন 1-869833-21-X 
  2. Surrey County Cricket Club First-Class Records 1846–2000, Limited Overs Records 1963–2000, compiled by The Surrey Statistics Group, published by Surrey County Cricket Club.
  3. Wisden Cricketers' Almanack 1999
  4. Daily Telegraph sports section, "Butcher's tale reveals tragedy and comedy of Zimbabwe" by Steve James, p20, 10 May 2016.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]