অ্যান্ডার্স সেলসিয়াস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এন্ডার্স সেলসিয়াস
এন্ডার্স সেলসিয়াস
জন্ম(১৭০১-১১-২৭)২৭ নভেম্বর ১৭০১
মৃত্যু২৫ এপ্রিল ১৭৪৪(1744-04-25) (বয়স ৪২)
জাতীয়তাসুইডিশ
মাতৃশিক্ষায়তনআপসালা বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণসেলসিয়াস
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রজ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, ভূ-তত্ত্ব
স্বাক্ষর

এন্ডার্স সেলসিয়াস (ইংরেজি: Anders Celsius; জন্ম: ২৭ নভেম্বর, ১৭০১ - মৃত্যু: ২৫ এপ্রিল, ১৭৭৪) সুইডেনের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। পাশাপাশি তিনি পদার্থবিজ্ঞান, গণিত এবং ভূ-তত্ত্ব বিষয়েও পারদর্শী ছিলেন। ১৭৪২ সালে তিনিই প্রথম সেলসিয়াস তাপমান যন্ত্রের ধারণা সম্বন্ধে আলোকপাত করেছেন; যা পরবর্তীকালে তার নামে নামাঙ্কিত করা হয় সেলসিয়াস থার্মোমিটাররূপে। এ থার্মোমিটারে ১০০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় স্ফুটনাঙ্ক এবং হিমাঙ্কের পৃথক নির্দেশনামা তুলে ধরা হয়েছে। যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার পর কার্ল লিনিয়াস এ তাপমান যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেন। সেলসিয়াসই প্রথম পৃথিবীপৃৃষ্ঠে চুম্বকীয় প্রভাব তুলে ধরেন । আপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭৩০ থেকে ১৭৪৪ সাল পর্যন্ত জোতির্বিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চাকুরীরত অবস্থায় ১৭৪১ সালে সেখানে তিনি একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন ও এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। ১৭৩৩ সালে অরোরা বোরিয়ালিজ নামে ৩১৬টি পর্যবেক্ষণের সংগ্রহশালাকে একত্রিত করে প্রকাশ করেন। এছাড়াও ১৭৩৭ সালে ফরাসি অভিযানে অংশগ্রহণ করেন যাতে মেরু প্রদেশের মধ্যরেখা নিরূপণের মানদণ্ড প্রণয়ন সংক্রান্ত ছিল। ১৭৩২ থেকে ১৭৩৫ সালের মধ্যে জার্মানি, ইতালি এবং ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।১৭৩৯ সালে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়ে‌নসেস গঠনে বিজ্ঞানী লিনিয়াসসহ আরও পাঁচজনের সাথে বিজ্ঞানী সেলসিয়াসেরও উল্লেখযোগ্য অবদান আছে।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

২৭ নভেম্বর, ১৭০১ সালে এন্ডার্স সেলসিয়াস সুইডেনের আপসালায় জন্মগ্রহণ করেন। হালসিংল্যান্ড প্রদেশের ওভানাকার এলাকা থেকে তাদের পরিবার উদ্ভূত। ডোমা বা হোজেনে তাদের পারিবারিক জমি-জমা ছিল। ল্যাটিন শব্দ সেলসিয়াস বা ঢিপি থেকে সেলসিয়াস নামের উৎপত্তি হয়েছে।

নিলস সেলসিয়াস নামীয় জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপকের পুত্র এবং ম্যাগণাস সেলসিয়াস ও জ্যোতির্বিদ এন্ডার্স স্পোলের নাতি এন্ডার্স সেলসিয়াস বিজ্ঞানকে উপজীব্য করে জীবিকা নির্ধারণ করেন। শৈশবকালেই তিনি গণিতে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন ও দক্ষতার পরিচয় দেন। আপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই তার বাবা শিক্ষকতা করতেন। ১৭৩০ সালে তিনিও জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৭৩০ সালে তিনি Nova Methodus distantiam solis a terra determinandi (সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ববিষয়ক নতুন পদ্ধতির নির্দেশনা) প্রকাশ করেন। তিনিই প্রথম অরোরা বোরেলিজ এবং পৃথিবী পৃষ্ঠে চুম্বকীয় প্রভাবের মধ্যেকার সম্পর্ক তুলে ধরেন।[১] ১৭৩৩ সালে ন্যুরেমবার্গে অরোরা বোরেলিজ নিয়ে ১৭১৬-১৭৩২ পর্যন্ত সময়কালের ৩১৬টি পর্যবেক্ষণ নিয়ে বই প্রকাশ করেন।[২]

১৭৩০-এর দশকে তিনি নিয়মিতভাবে জার্মানি, ইতালি এবং ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। প্যারিসে অবস্থানকালে ল্যাপল্যান্ডে মধ্যরেখার বৃত্তচাপ নির্ণয়ে পরামর্শ দেন। ১৭৩৬ সালে ফরাসি গণিতবিদ পিঁয়েরে লুই মপারতুইসের পরিচালনায় ও ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমি'র নির্দেশনায় ফরাসি অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মধ্যরেখায় দৈর্ঘ্য নিরূপণ, মেরুর সাথে সম্পর্ক এবং ইকুয়েডরের বিষুবরেখার কাছাকাছি পেরুতে একই অভিযান পরিচালনা করা। এ অভিযানের ফলাফলে স্যার আইজাক নিউটনের মেরুরেখায় পৃথিবীর চ্যাপ্টা হওয়া সংক্রান্ত মতবাদের প্রমাণ পাওয়া যায়।[৩]

১৭২৫ সালে আপসালার রয়্যাল সোসাইটি অব সায়েন্সেসের সেক্রেটারী হয়েছিলেন। ১৭৪৪ সালে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ পদেই তিনি বহাল ছিলেন। ১৭৩৯ সালে গঠিত রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস গঠনে লিনিয়াসসহ আরও পাঁচজনের সাথে সেলসিয়াসও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। একাডেমির প্রথম সভায় তাকে সদস্যরূপে নির্বাচিত করা হয়। সবিশেষ উল্লেখযোগ্য যে, সেলসিয়াস নতুন প্রতিষ্ঠিত এ একাডেমীর নামকরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Anders Celsius"। notablebiographies.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-২৪ 
  2. Encyclopædia Britannica, Retrieved on 24 June 2008
  3. "Anders Celsius"। Uppsala Astronomical Observatory। ২০০৮-০৬-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-২৪ 
  4. Nordisk familjebok, volume 32 (1921): Vetenskapsakademin (সুয়েডীয়)