মুহিউদ্দীন খান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান
জন্ম১৯ এপ্রিল ১৯৩৫
ছয়চির, পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ[১][২]
মৃত্যু২৫ জুন ২০১৬
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশী
শিক্ষাঢাকা আলিয়া
পেশাইসলামী চিন্তাবিদ, ইসলামী রাজনীতিবিদ
কর্মজীবন[২]
যুগএকবিংশ শতাব্দী
প্রতিষ্ঠানসম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
পরিচিতির কারণমাসিক মদীনার সম্পাদক
উল্লেখযোগ্য কর্ম
মাসিক মদিনা সম্পাদনা, ‘মা’রেফুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ
শৈলীইসলামী
আদি নিবাসময়মনসিংহ
আন্দোলনভারতীয় নদী আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি[৩]
সন্তান৩ ছেলে ও ২ মেয়ে
পিতা-মাতা
  • হাকীম মাওলানা আনসার উদ্দীন খান (পিতা)
  • মোছাঃ রাবেয়া খাতুন (মাতা)

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান (১৯ এপ্রিল ১৯৩৫ - ২৫ জুন ২০১৬) একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ইসলামী চিন্তাবিদ, বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও মাসিক মদীনার সম্পাদক। তাকে বাংলা ভাষায় সীরাত সাহিত্যের জনক বলা হয়।[৪] মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ১৯৩৫ সালের ১৯ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার ছয়চির গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহের ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলারআনসার নগরে। পিতা বিশিষ্ট সাধক পুরুষ, প্রবীণ শিক্ষাবিদ মৌলভী হাকিম আনছার উদ্দিন খান, মাতা মোছাঃ রাবেয়া খাতুন। ২০১৬ সালের ২৫ জুন মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাসিক মদীনার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মুফতী মুহাম্মাদ শফী উসমানীর রচিত মা’রেফুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ করেছেন তিনি।[৫][৬]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

‘পাঁচবাগ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসা’র প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন । মাতার ইন্তিকালের পর তিনি নানীর তত্ত্বাবধানে থাকায় নানাবাড়ির নিকটবর্তী তারাকান্দি মাদরাসায় ১৯৪৭ ঈসায়ীতে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে মন বসাতে না পারায় তিনি দু’বছর পর আবার পাঁচবাগ মাদরাসায় ফিরে আসেন।[২] পাঁচবাগ মাদরাসা থেকে ১৯৫১ সালে আলিম ও ১৯৫৩ সালে স্কলারশিপসহ ফাজিল পাস করেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে হাদিস বিষয়ে কামিল ও ১৯৫৬ সালে ফিকহ বিষয়ে কামিল ডিগ্রি লাভ করেন। আলিয়া ধারায় লেখাপড়া করলেও খান সাহেব কওমি ধারার সাথে বেশি সম্পর্ক রেখে চলতেন।[৭]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ছাত্রজীবনেই সাংবাদিকতাসহিত্যচর্চার দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি ১৯৬০ সালে ‘মাসিক দিশারী’, ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ‘সাপ্তাহিক নয়া জামানা’ সম্পাদনা করেন। ১৯৬১ সাল থেকে আমৃত্যু ‘মাসিক মদীনা’ সম্পাদনা করেছেন। এক সময় তার সম্পাদিত ‘আজ’ সাহিত্য মহলে সাড়া জাগায়। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ১৯৮৮ সালে সৌদিভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রাবেতায়ে আলমে ইসলামী’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। এর মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক মহলেও পরিচিত হয়ে ওঠেন। দেশের বাইরেও বাংলাভাষীরা তার গুণমুগ্ধ পাঠক। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাসহ প্রবাসে মরহুম খান নন্দিত লেখকের মর্যাদা পেয়েছেন।[৭] এছাড়াও তিনি ছিলেন মুতামার আল আলম আল ইসলামী এর বাংলাদেশ শাখার প্রেসিডেন্ট, জাতীয় সীরাত কমিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ আন্দোলন ইসলামী মোর্চার সভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের প্রধান। [৮]

কর্ম[সম্পাদনা]

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বাংলা ভাষায় ইসলামি সাহিত্য রচনা, সম্পাদনা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি প্রায় ১০৫ খানা গ্রন্থ অনুবাদ ও রচনা করেছেন। তার সম্পাদিত ‘মাসিক মদীনা’র প্রশ্নোত্তর সঙ্কলন ‘সমকালীন জিজ্ঞাসার জবাব’ ২০ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।[৭]

আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী বিরচিত ৮ খণ্ডের কালজয়ী তাফসির গ্রন্থ ‘মাআরিফুল কুরআন’ তিনি উর্দূ থেকে বাংলায় ভাষান্তর করেন। ইসলামিক ফাউণ্ডেশন থেকে এটি প্রকাশিত হয়। ১৪১৩ হিজরীতে মদীনাস্থ বাদশাহ ফাহদ কুরআন মুদ্রণ প্রকল্পের উদ্যোগে ‘মাআরিফুল কুরআন’ সংক্ষিপ্তাকারে ১ খণ্ডে বাংলায় ছেপে বাংলাভাষীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। ইমাম গাজালীর ‘ইহয়াউ উলুমিদ্দিন’ ও মাওলানা আবুল কালাম আযাদের ‘ইনসানিয়ত মওত কে দরওয়াযে পর’ ( জীবন সায়াহ্নে মানবতার রূপ) গ্রন্থের স্বার্থক অনুবাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন খান। তার প্রতিষ্ঠিত মদীনা পাবলিকেশন্স ১৯৫৭ সাল হতে এ পর্যন্ত কুরআন, হাদীস, সীরাতে রাসূল, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অভিধান বিষয়ক ৬০০ গ্রন্থ প্রকাশ করেছে।

তার অনূদিত কিছু বই হল:

  • ইসলাম ও আমাদের জীবন
  • সিরাতুল মুস্তাকীম
  • মারেফুল কোরআন সংক্ষিপ্ত বাংলা অনুবাদ সহ
  • জান্নাতের অমীয়ধারা পবিত্র যমযম
  • তজরীদুল বোখারী
  • আযাদী আন্দোলন-১৮৫৭
  • খাসায়েসুল কুবরা: নবী (সা:) জীবনের অত্যাশ্চর্য ঘটনাবলী
  • সীরাতুন নবী

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ময়মনসিংহের গফরগাঁও নির্বাচনী এলাকায় জমিয়তের প্রার্থী হিসেবে খেজুরগাছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালের সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে জমিয়তের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে তিনি নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।[৯]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

তিনি ২০১৬ সালের ২৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "স্মরণে বরণে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান"নয়া দিগন্ত। ২৯ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-০৬ 
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৬ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১৭ 
  3. http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/132255
  4. নগরী, রুহুল আমীন (৩০ ডিসেম্বর ২০১২)। "বাংলায় সীরাত সাহিত্যের জনক মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান"দৈনিক সংগ্রাম 
  5. আজাদ, মো. আলী এরশাদ হোসেন (২৮ জুন ২০১৯)। "আলেমদের জীবন ও কর্মের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই! | কালের কণ্ঠ"কালের কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৮ 
  6. "হযরত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.)"DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৩ 
  7. "স্মরণে বরণে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান"নয়া দিগন্ত। ২৯ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-০৮ 
  8. "মাওলানা মুহিউদ্দীন খান আর নেই"দৈনিক সংগ্রাম। ২৬ জুন ২০১৬। ২০১৭-১২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-০৮ 
  9. "স্মরণে বরণে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান"islamicnews24.net। ২ জুলাই ২০১৬। ২০১৭-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-০৮ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]