গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
গুরুদাস ব্যানার্জী
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তি
জন্ম(১৮৪৪-০১-২৬)২৬ জানুয়ারি ১৮৪৪
মৃত্যু২ ডিসেম্বর ১৯১৮(1918-12-02) (বয়স ৭৪)
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনওরিয়েন্টাল সেমিনারি
স্কটিশ চার্চ কলেজ
প্রেসিডেন্সি কলেজ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাবিচারপতি ও শিক্ষাব্রতী
পিতা-মাতারামচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের (পিতা)
সোনামণি দেবী (মাতা)

স্যার গুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (২৬ জানুয়ারি ১৮৪৪ - ২ ডিসেম্বর ১৯১৮) ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বাঙালি বিচারপতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় উপাচার্য।[১]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে জানুয়ারি কলকাতার নারকেলডাঙার এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে। পিতা রামচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি ছিলেন। মাতা সোনামণি দেবী ধর্মপ্রাণ মহিলা ছিলেন। তিন বৎসর বয়সে গুরুদাস পিতৃহীন হলে অসহায় জননীর স্নেহছায়ায় ও তত্ত্বাবধানে শিক্ষালাভ করেন। প্রথমে ভর্তি হন ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ও পরে কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুলে (হেয়ার স্কুলে)। এখান থেকে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম হন। স্কটিশ চার্চ কলেজ ও পরে প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র হিসাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত পরীক্ষায় প্রথম হয়ে স্নাতক ও ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর (এম.এ) হন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে আইন পরীক্ষাতেও সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেন। পরের বৎসরে ল'অনার্স পাশ করেন ।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

শিক্ষান্তে প্রথমে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা আরম্ভ করেন এবং গণিতের অধ্যাপক হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। এখানে কর্মরত অবস্থাতেই বহরমপুর কলেজে অধ্যাপনার সুযোগ হয়। বহরমপুরে অবস্থান কালে ওকালতিও শুরু করেন। মুর্শিদাবাদের নবাবের আইন উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। জননীর আগ্রহে অবশেষে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে ডি.এল. উপাধি পান এবং পরের বৎসরেই বিচারপতির পদ লাভ করেন। ষোল বৎসর তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি অনারারি ম্যাজিসেট্রট, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কমিশনার, বাংলার ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হয়েছিলেন। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাকুর আইন অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও আইন পরীক্ষক ও তিন বৎসর জন্য সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। এ সময় তিনি পরীক্ষা পরিচালনা ও পাঠ্যপুস্তক নির্বাচনে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদ লাভ করেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সদস্য ও ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ল' ফ্যাকাল্টির ডিন হন।

শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান[সম্পাদনা]

শিক্ষা ক্ষেত্রে পরীক্ষা পরিচালনা ও পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন ছাড়াও জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উৎসাহী কর্ম হওয়ার সুবাদে বহু অবদান রেখে গেছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজে তার প্রভূত অবদান ছিল এবং আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা'র চর্চা আবশ্যিক ও বাংলা ভাষার সকল শিক্ষা প্রচলনের প্রচেষ্টায় তার বিপুল অবদান ছিল। দেশের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনায় অগ্রণী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সাথে কায়িক শ্রমের কাজেও লিপ্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপের তিনি নিন্দা করেন, এমনকি সক্রিয়ভাবে বাধাও দেন। স্ত্রী-শিক্ষার বিষয়েও তিনি ছিলেন সমান ভাবে আগ্রহী। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও ভারতীয় বিজ্ঞান উৎকর্ষিণী সভার সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল ।

অন্যান্য[সম্পাদনা]

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় পরোক্ষভাবে তিনি রাজনীতিকদের সাহায্য করতেন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ১৬ অক্টোবর আনন্দমোহন বসুর সভাপতিত্বে ফেডারেশন হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সভায় তিনি ছিলেন প্রধান বক্তা। তার বক্তব্য রাজনীতিকদের প্রভূত সাহায্য করেছিল। গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল -

  • 'জ্ঞান ও কর্ম'
  • 'শিক্ষা'
  • 'এ পিউ থটস অন্ এডুকেশন'
  • 'দ্য এডুকেশন প্রবলেম ইন ইণ্ডিয়া'
  • 'হিন্দু ল' অব ম্যারেজ অ্যান্ড স্ত্রীধন' ( বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অধ্যাপক হিসাবে প্রদত্ত বক্তৃতা পরে প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসাবে গৃহীত)

সম্মাননা[সম্পাদনা]

বৃটিশ সরকার ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে ।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

বাংলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বাংলা ভাষার চর্চা ও প্রসার ও উন্নতিকল্পে অক্লান্তকর্মা গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ২ রা ডিসেম্বর চিরবিশ্রাম লাভ করেন ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট,২০১৬ পৃষ্ঠা ১৯১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬